হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-০৭

0
236

#পর্ব৭
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

শীতের সকালো উষ্ণ গরম ছেড়ে সকালবেলা ওঠতে মন চায় না ঘুম থেকে ওবুও ওঠতে হলো সোহাকে ভার্সিটিতে যাবার জন্য। চারিদিকে বেশি যানবাহন নেই বললেই চলে রাস্তা পুরো ফাঁকা প্রায়। রৌদ্রের আভাস পাওয়া যায়নি এখনো। হালকা হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে আছে চারিদিকের পরিবেশ। মানুষজনও রাস্তা ঘাটে বেরোয়নি ভালো করে। সোহা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। বারবার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে চোখ বোলাচ্ছে ভার্সিটিতে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে না তো আবার? সোহা বিরক্তি নিয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে! গাড়ি আসতে দেরি হওয়ায় বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে! সোহা আনমনে মাথাখানি নিচের দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির অপেক্ষায়। ছোঁয়ার ধ্যান ভাঙলো গাড়ির হর্নের আওয়াজে। বিরক্তিতে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখতে পেলো সুমন মোটরসাইকেলে করে তার দিকে তাকিয়ে গাড়ির হর্ন বাজিয়েই যাচ্ছে! একটানা হর্ন বাজানোয় সোহার বিরক্তি ধরে গেলো। চোখে মুখে বিরক্তিকর ছাপ ফুটিয়ে সুমনকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“কি হচ্ছে টা কি? কানের কাছে গাড়ি নিয়ে এসে এভাবে সমানতালে হর্ন বাজাচ্ছেন কেনো আপনি?”

–“হর্ন বাজানোর আগে যে পরপর দু’বার তোমার নাম ধরে ডেকেছি সেটা যদি শুনতে পেতে তাহলে নিশ্চয়ই আমি এতোবার তোমার কানের কাছে এসে হর্ন বাজাতাম না সোহা?”

সুমনের কথায় সোহার বিরক্তি যেনো আরো বেড়ে গেলো! ভ্রু জোরা কিঞ্চিৎ পরিমান বাঁকিয়ে বলে ওঠলো,

–“আমার সাথে কি দরকার আপনার? কেনো ডেকেছিলেন বলুন দেখি?”

সুমন করুন দৃষ্টি নিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বললো,

–” বলতে তো তোমাকে কতো কিছুই চাই কিন্তু তুমি তা শুনলে তো? তুমি সবসময়ই আমাকে এড়িয়ে চলো সোহা। কতোবার কতোভাবে বোঝালাম তোমাকে যে আমি তোমায় নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। সেই ছোটোবেলা থেকেই তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে আংকেল। ছোটো থেকে বড় হতে দেখেছি তোমায় তারপর আস্তে আস্তে তোমার প্রতি ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছে। তোমাকে নিজের ভালোবাসার কথা বলার পরেও তুমি কিছুই বুঝতে চাইছো না। খোলসা করে কিছু বলছোও না।”

সুমনের কথা শুনে সোহার ললাটজুড়ে ভাজ পড়লো! সোহা ভ্রুখানি কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে সুমনকে বললো,

–“আপনাকে আমি আগেই বলেছি আমার আশায় বসে থাকবেন না। আমি ভালোবাসি না আপনাকে। আগে বন্ধুর মতন মিশতাম আপনার সাথে হ্যাঁ তবে সেটা ছোটোবেলায়। এখন না আমি ছোটো আছি আর না আপনি ছোটো আছেন! তাই এখন আপনার থেকে দূরে সরে যাওয়াই শ্রেয়। আপনি যাকে ভালো মনে করেন তার সাথে সংসার করুন। আর এসব কথা বলা বন্ধ করুন। আর কোনোদিনও বলবেন না এসব কথা।”

সোহার রুক্ষ গলায় কঠিন কঠিন কথাগুলো শুনে সুমনের কান্না যেনো দলা পাকিয়ে বের হতে চাইছে ভেতর থেকে! কিন্তু পারছে না! সোহার দিকে দৃষ্টিপাত করে মলিন কন্ঠে বলে ওঠলো,

–“যদি তুমি বুঝতে যে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি তাহলে হয়তো এসব কথা বলতে না। আমাতের দু’জনেরই ফ্যামিলিও চায় আমাদের বিয়ে হউক। কিন্তু নিয়তির কি নিষ্ঠুরতম পরিহাস তুমি আমাকে ভালোইবাসো না! তবুও বলবো যদি মনে হয় কখনো আমাকে দরকার তোমার জীবনে তুমি সানন্দে আমার কাছে আসতে পারো। আমার মনের সুপ্ত কুঠুরিতে শুধু তোমারই বসবাস থাকবে।”

সোহা বিরক্তিকর মুখ করে সুমনের সব কথাই শুনে গেলো। সুমনের কথাগুলো শুনতে যে তার বিরক্তিকর লাগছে এটা তার চোখমুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সুমন সোহার বিরক্তিকরতা বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ পাল্টে বললো,

–“এতো সকালে কোনো গাড়ি পাবে না। তোমার ভার্সিটি যেতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে তুমি বরং পিছনে বসো আমি তোমাকে ভার্সিটি পৌঁছে দিই?”

–“না তার কোনো দরকার হবে না। গাড়ি এসে পড়বে কিছুক্ষণের ভিতরে। আপনাকে কোনো দরকার হবে না। আপনি নিজের মতন করে চলে যান।”

–“ভেবে দেখো লাস্টবারের মতন আমি চলে গেলে হয়তো তোমার ভার্সিটিতে যাওয়াই হবে না।”

সুমনের বাক্য কানে শ্রবণ করে সোহা হাতে থাকা ঘড়িটির দিকে চোখ বুলালো। হাতে থাকা ঘরির সময়টি জানান দিচ্ছে খুব বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে। সোহা কোনো উপায় না পেয়ে চুপচাপ সুমনের পিছনে ওঠে বসলো! সুমনের চোখে মুখে আনন্দের রেশ দেখা গেলো সোহা তার মোটরসাইকেলে বসায় যে সে খুশি হয়েছে সেটা তার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে! সুমন হলো সোহার বাবার বন্ধুর ছেলে। পড়াশোনা শেষ করে সুমন একটা জব করছে প্রাইভেট কোম্পানিতে। সুমন এর বাবা আর সোহার বাবার ইচ্ছে ছিলো তাদের বন্ধুত্বটাকে দৃঢ় করে তোলার জন্য সোহাকে তার ছেলের পুত্রবধূ বানাবে। কিন্তু বাড়িতে যখনিই এসব বিষয়ে কথা হতো সোহা তা খুব সুন্দরভাবে এড়িয়ে যেতো। যখন সুমন সোহাকে তার ভালোবাসার কথা বলে তখন থেকেই সোহা সুমনকে এড়িয়ে চলে। সুমন সোহাকে তার মনের কথা বলেছে বড়োজোর ছ’মাস হবে। আর সামাদের সাথে সোহার সম্পর্কের মেয়াদ প্রায় আটমাস। সামাদের সাথে সম্পর্কটা শুধু নাম মাত্র ই কারন সামাদ শুধু সোহাকে ব্যবহার করছে ছোঁয়ার ক্ষতির জন্য।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। সূর্য মাথার উপরে তার কিরন সবত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে। রোদ্রের উত্তাপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সকালবেলা প্রচুর ঠান্ডা তো দুপুরবেলা খা খা রোদ্দুর! রোদ্রের চোটে চোখ মেলে তাকিয়ে কিছু দেখা যাচ্ছে না ভালো করে। চোখ ঝলসে যাচ্ছে একেবারে রোদ্রের উত্তাপে। ভার্সিটি শেষ করে সোহা বাসার উদ্দেশ্য হাঁটছে। গলির রাস্তা খানি চিকন হওয়ায় এদিক দিয়ে হেঁটেই যেতে হয়। গলির পাশের দোকানগুলো এখন বন্ধ। হয়তো দোকানের মানুষগুলো দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রামে নিমজ্জিত হয়ে আছে। সোহা হেটে যাচ্ছে গলির মোড় পার করবে এর আগেই দেয়ালের পাশ ঘেঁসে সোহাকে কেউ টান মেরে একটা দোকানের ভেতর নিয়ে যায়! গলির পাশ ঘেঁসে দোকান হওয়ায় এক টানেই সোহা দোকানের ভেতর ঢুকে পড়েছে! ভেতরে কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার আলো জালানো হয়নি ভালো করে। দিনের আলো পৌঁছবে তারও কোনো উপায় নেই একটা জানলা বা দরজাও খোলা নেই। একটি মাত্র দরজা খোলা ছিলো তাও সোহাকে ভেতরে নিয়েই ঠাস করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোহা হতভম্ব হয়ে রয়েছে! কি হয়েছে ঘটনা টুকু বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় পার করে দেয় সোহা! যখনি বোধগম্য হলো তখনি জোরে বলে ওঠলো -“কে এখানে? আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?”

অন্ধকার রুমে থাকা মানুষ কেবল সোহাই নয় আরো দু’জন মানুষ রয়েছে ভেতরে তা সোহা ভালো করেই টের পেয়ে গেলো! একজন পুরুষ তাকে দোকানের ভেতর নিয়ে এসেই সাথে সাথে হাত পা বেঁধে দেয়! হাত পা বাঁধা অবস্থায়ই সোহার নাকে মিষ্টি একটা ঘ্রান ভেসে আসছে! এই ঘরে যে পুরুষ অবয়বটি ছাড়াও একজন মহিলা আছে তা জানান দিচ্ছে মেয়েলি পারফিউমের ঘ্রানে। পারফিউম এর ঘ্রানটি অতি পরিচিতো লাগছে সোহার কাছে! মনে হয় আগেও এরকম ঘ্রান সে পেয়েছে। সোহার হাত পা বাঁধা কিন্তু মুখ বাঁধা নয়। সে অন্ধকারে থাকা মানবীর উদ্দেশ্য বলে ওঠলো,

–“আপনি কে? সামনে আসুন। আপনাকে খুব পরিচিতো মনে হচ্ছে আমার। কিছু তো বলুন?”

–“হ্যাঁ বলার জন্যই তো তোমাকে এখানে এনেছি। আর হাত পা বেঁধেছি মুখ বেঁধে রাখিনি শুধু মাত্র তোমার সাথে কথা বলবো বলে।”

–অন্ধকারে থাকা মানুষটির কন্ঠস্বর অতি পরিচিতো লাগছে সোহার! তবে কি সোহা যা ভাবছে তাই সঠিক?

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন।