হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-০৯

0
222

#পর্ব৯
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

সারা ঘরময় নিস্তব্ধতার গহীনে ছেয়ে গেছে। সবাই নিস্তব্ধতা কারো মুখে কোনো বাক্য নেই। সোহার বলা কথাগুলো প্রত্যেকের কর্নকুহুরে যেতেই বিস্মিত নয়নে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। উপস্থিত সবাই কেউ ভাবতে পারেনি সামাদই সোহাকে দিয়ে এসব করাবে? সব চেয়ে বেশি অবাক তো হৃদয় হয়েছে সবকিছুর পিছনে সামাদকে জানতে পেরে! তার নিজের বড়ো ভাই তার সাথে এরকম কেনো করলো? প্রশ্ন করলো সোহাকে সোহা কান্না বন্ধ করে বলে ওঠলো,

–“তোমাদের দু’জনের মতন আমার মনেও একই প্রশ্ন জেগেছিলো সামাদ কেনো আমাকে কনে সাজতে বলেছিলো। এই কথাগুলো যখন আমি সামাদকে জিগেস করি তখন সামাদ আমাকে বলে যে হৃদয় ভাইয়ার বাবা নাকি সামাদকে আট মাসের জন্য দূরে পাঠাবে আপনাদের ব্যবসায়ের জন্য। আর সামাদ নাকি এতোদিন আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। ও এখনি চেয়েছিলো আমাকে বিয়ে করতে। যখন আমি বললাম যে আপনার বাবাকে বলুন আমাদের বিয়ের কথা তখন সামাদ বললো যে বাবা তাকে এখন ব্যবসার কাজে বাইরেই পাঠাবে তারপর এসে বিয়ে হবে। কিন্তু সামাদের নাকি এতোদিন আমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে তাই সে এখনি বিয়ে করতে চায় আমাকে। আর আংকেল যেহেতু মানা করে দিয়েছে তাই সামাদ প্ল্যান করে যে আপুকে কিডন্যাপ করিয়ে ওর জায়গায় আমি বউ সেজে বসতাম আর যখনি কাজী কবুল বলতে বলবে আমায় তখনি আমি যেনো বলি আপু পালিয়ে গেছে আর আমাকে তার জায়গায় বসিয়ে রেখে গেছে। ব্যস এই মতন করলে তো তখন হৃদয় ভাইয়া আর আপুর বিয়েটা ভেঙে যেতো আর মাঝখানে সবার সামনে অপমানিতো হতাম আমি। আর আমাকে অপমানিতো হবার হাত থেকে বাচাঁতেই তখন সামাদ আমাকে বিয়ের কথা বলবে আর আমার আব্বু আম্মু বাধ্য হয়েই আমার সম্মান রক্ষায় সামাদের সাথে বিয়ে দিবে। আর তারপরে আপুকে ছেড়ে দেওয়া হতো ব্যস ও সম্ভব হলে ওইদিনই আপুর সাথে হৃদয় ভাইয়ার বিয়ে হতো। ঠিক এমনটা বুঝিয়েছে আমাকে সামাদ।”

এতোক্ষন ধরে এক নাগাড়ে সব কথাগুলো বলে দম নিলো সোহা! বোঝাই যাচ্ছে সে একনাগাড়ে এতোগুলো কথা বলার কারনে হাঁপিয়ে গেছে। ওদিকে হৃদয় আর ছোঁয়া মেনে নিতে পারছে না কিয়ৎক্ষন আগে সোহার বলা কঠিন বাক্যগুলো! ছোঁয়ার মনে সন্দেহের বীজ দেখা দিলো! সে মেনে নিতে পারছে না সামাদ শুধুমাত্র সোহাকে পাবার জন্য এতোকিছু করেছে? এগুলো কি আদৌও সত্যি কথা নাকি মিথ্যা? হৃদয় ভেবে ওঠতে পারছে না সামাদ তো তাদের কারোর সাথেই কোনো বিয়ের আলোচনা করেনি তাহলে এসব মিথ্যা বলার কারন? হৃদয় নিজের মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ না করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো সোহার দিকে।

–“সত্যিই যদি সামাদ ভাই তোমাকে ভালোবেসে তোমাকে বিয়ে করার জন্য এতোকিছু করেছে বলছো তাহলে সে কেনো একবারো আব্বুকে তোমাদের বিয়ের কথা বলেনি? উল্টে আব্বু ভাইয়াকে বলছিলো বিগত কয়েকদিন যাবত আমার বিয়ের আগে ভাইয়া যেনো বিয়ে করে ফেলে কিন্তু ভাইয়া স্পষ্ট ভাবে তখন আমাদের সকলকে জানিয়ে দিয়েছিলো সে এখন বিয়ে করতে চায় না। তার যখন সময় হবে তখনি সে বিয়ে করবে আমরা কেউ যেনো এখন কার বিয়ের ব্যাপারে কোন নাক না গলাই। আর আজ তুমি বলছো যে সামাদ ভাইয়া এসব বলেছে তোমাকে বিয়ের জন্য? কিন্তু ভাইয়ার কথামতন তো এটা ডাহা মিথ্যা কথা কারন তুমি বললে তোমাদের সম্পর্কের বয়স আট মাস আর ভাইয়াকে বিয়ের কথা আব্বু বলেছিলো আজ থেকে এক মাস আগে। তাহলে হিসেব মতন তো তখনও তোমার আর ভাইয়ার মধ্যে সম্পর্ক ছিলো তাহলে ভাইয়া আব্বুকে তখন এসব বললো কেনো? তোমাকে বিয়ের জন্যই যখন এতোকিছু তখন সেদিনইতো বিয়ের কথা বলতে পারতো। কিন্তু উল্টে আরো মানা করে দিয়েছে সবাইকে। এখন কি দাঁড়াচ্ছে এর মানে?”

–সোহা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো হৃদয়ের দিকে। হৃদয়ের বলা কথাগুলো যদি সত্যিই হয় তাহলে সামাদ কেনো এসব মিথ্যা বললো? কেনো এভাবে সবার সামনে তাকে অপমানিতো করলো? হৃদয়ের বলা কথাগুলো যদি সত্যিই হয় তাহলে তো সামাদের বলা কথা সবকিছুই মিথ্যা দিয়ে ঢাকা! তার মানে সামাদ প্রতারণা করলো সোহার সাথে? সেহার সামাদ এর বিশ্বাসঘাতকতার কথা ভাবতেই চোখ বেয়ে অঝোড় ধারায় অশ্রুরা তার গাল বেয়ে চুইয়ে পড়ছে! সোহা ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো। মাথাখানি নিচের দিকে তাকিয়ে নিরবে অশ্রু নিক্ষেপ করছে! ওদিকে ছোঁয়া হৃদয়কে বলতে লাগলো,

–“তুমি নিশ্চিত তো সামাদ ভাইয়াকে আব্বু বিয়ের কথা বলছিলো আর সামাদ ভাই না করে দিয়েছিলো?”

–“আরে হ্যাঁ এটা ষোলোআনাই সত্যি। শুধু মানা করেনি জানো যখন আব্বু জিগেস করেছিলো তোর কোনো পছন্দ আছে কিনা? তখন সামাদ ভাই এক কথায় উত্তর দিয়েছিলো না! কোনো পছন্দ বা এখন বিয়ে করতেও চায় না। আমাদের পরিবারের সবার সামনে বলেছিলো ভাইয়া কথাগুলো।”

–“তার মানে তো একই দাঁড়ালো সামাদই প্রতারণা করলো সোহার সাথে! দীর্ঘ আট মাস সম্পর্কে থাকাকালীন ও পরিবারের কাছে সোহার কথা বলতে অস্বীকার করলো এবং সোহার কাছে এসে বললো যে সে সোহাকে বিয়ে করবার জন্য এসব করছে! নিশ্চয়ই সামাদ কোনো গন্ডগোল পাকিয়েছে বলো?”

ছোঁয়ার কথা শেষ হতে না হতেই সোহা ওঠে দাঁড়ালো। হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা কান্না মুছে কঠর গলায় বলে ওঠলো,

–“এখনো তোরা বুঝতে পারছিস না কিছু? ঠকিয়েছে সামাদ আমায়! প্রতারণা করে গেছে আমার সাথে এতোদিন! যদি প্রতারণা না হতো তাহলে আমার কাছে একরকম ফ্যামিলির কাছে আরেক রকম কথা কেনো বলতো বল আপু? নিশ্চয়ই ও আমাকে ভালোবাসে না তাই এসব বলেছে। আর দেখ আমিই বা কেমন বোকা মেয়ে ওর কথায় বিশ্বাস করে তোর বিয়ে বন্ধ করতে যাচ্ছিলাম। এখন তো নিজেরই নিজেকে দেখে ঘৃনা হচ্ছে রে! আমি কতোটা খারাপ। নিজের ভালবাসার জন্য তোর বিয়ে আটকাতে চাইছিলাম। দেখ আমার পাপের পরিনাম পেয়ে গেছি আমি। যার জন্য এতোকিছু করেছি সেই প্রতারণা করেছে আমার সাথে। কেনো ঠকালো সামাদ আমাকে? কেনো ঠকালো? আমি তো ওর সব কথাই শুনেছি তাও কেনো ঠকালো আমায়? বল কেনো?”

সোহার প্রশ্নের উত্তর না আছে হৃদয়ের কাছে আর না আছে সামাদ এর কাছে। দু’জনই নিশ্চুপ। সোহা নির্বিকার ভাবে তার দু চোখের অশ্রু বির্সজন দিচ্ছে। হঠাৎই দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সবাই ওদিকে তাকালো। দরজা খুলে আগন্তুককে দেখে সবাই অবাকের সপ্তম পর্যায় চরে গিয়েছে এরুপ অবস্থা! সকলের মনে একই প্রশ্ন দরজা তো বন্ধ ছিলো তাহলে ভেতে আসলো কি করে? সোহা মাথা উঁচু করে এগিয়ে আসা মানুষটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। কোনো কিছু না ভেবেই পরপর দু’টো থাপ্পড় মেরে দিলো সামাদের গালে! থাপ্পড় খেয়ে সামাদ সোজা হয়েই মুখে হাসির রেখা টেনে দাঁড়িয়ে আছে আগের ন্যায় যেনো কিছুই হয়নি এরকম ভাব! সোহা কিছু বলবে এর আগেই হৃদয় বলে ওঠলো,

–“তুই ভেতরে আসলি কি করে? আর তুই জানলিই বা কি করে আমরা সবাই ভেতরে আছি?”

ঠোঁটে বাকা হাসির রেখা টেনে ছোঁয়ার দিকে বাকা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

–“তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস এই দোকানটার মালিক আমি! হ্যাঁ কালকে এই দোকানটা আগের দোকানীর কাছ থেকে চড়া মুল্যে আমি কিনে নিয়েছিলাম বাবার কথায়। তুই তো বিয়ে নিয়েই ব্যস্ত আছিস তাই কিছু জানিস না বোধহয়। তো এবার বল আমার দোকানে তো আমিই থাকবো না?”

–“হ্যাঁ অবশ্যই তুইই থাকবি। কিন্তু তুই জানলি কি করে আমরা এখানে সোহাকে নিয়ে এসেছি?”

–“সোহার উপর নজর আমার চব্বিশ ঘন্টা থাকে বুঝলি? তোরা যখনই ওকে ধরে এখানে এনেছিস তখনই আমার গুপ্তচর আমাকে ইনফর্ম করে আর সঙ্গে সঙ্গে আমি এসে পড়ি এখানে। এবার বল এতো কষ্টে বিয়ে করেছিস তোর ভালোবাসার মানুষটিকে তাকে নিয়ে ঘুড়বি, আনন্দ করবি তা না করে খামোখা সোহাকে কেনো বিরক্ত করছিস বলতো?”

সামাদ এর কথায় সোহা গিয়ে সামাদের……

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।