হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-১০

0
238

পর্ব১০
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

সোহা আস্তে আস্তে ধীর পায়ে সামাদের দিকে এগিয়ে সামাদের কলার চেপে ধরে বললো,

–“তোমার জন্য এতোকিছু করেছিলাম আমি আর দিনশেষে কি হলো? তুমিই আমাকে ঠকালে! আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিবারকে বলেছো আদৌ তুমি এখন বিয়েই করতে চাও না! অথচ এই তুমিই আমাকে বলেছিলে তুমি অতী শ্রীঘই আমাকে বিয়ে করতে চাও তাই এতোকিছু! লজ্জা করলো না তোমার আমাকে ঠকাতে?”

সামাদ সোহার দিকে চক্ষু লাল করে তাকালো! এক ঝটকায় সোহার হাত তার কলার থেকে সরিয়ে নিলো! রাগান্বিত স্বরে বলে ওঠলো,

-“তো আর কি করবো আমি? তুমি আমার লজ্জার কথা বলছো সিরিয়াসলি? বরং তোমার বোন যা করেছে তার থেকে কমই করেছি আমি। তোমার বোনতো আমাকে পাবলিকভাবে হ্যারাস করেছে, অপমানিতোও করেছে আমি তোমাকে পাবলিকলি কিছু করেছি? বরং যা করেছি সেটা কেউই জানে না।”

সামাদের কথা শুনে উপস্থিত সবার মুখে যেনো আর কোনো বাক্য নেই। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে সোহা! তার এখন মনে একটা কথাই বাজছে তার আপুর প্রতি প্রতিশোধ নিতেই সামাদের এই বেইমানি সোহার সাথে! ছোঁয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারছে না সামাদ কোন দিকে তাকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বললো? তাহলে সেদিন রাত্রের ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাদ এগুলো বলছে? যদি তাইই হয় তাহলে তো ওইদিন এর ঘটনায় ছোঁয়া ভুল কিছু করেনি তাহলে আজকে সামাতের এসবের বলার কারন? ছোঁয়ার কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করে হৃদয় ছোঁয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

–“ছোঁয়া এসব ব্যাপার কোনো কিছুই জানি না আমি। ভাইয়া আজকে এগুলো কি বলছে হঠাৎ করে? তুমি চুপ করে না থেকে প্রশ্নের উত্তর দাও।”

ছোঁয়া নিচের দিকে তাকিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। হৃদয়ের প্রশ্নের জবাব দিতে ছোঁয়া বলে ওঠলো,

–“তাহলে শোনো, দেড় বছর আগের ঘটনা, সেদিন রাত্রেবেলা ভার্সিটিতে একটা অনুষ্ঠান ছিলো সোহা সেদিন যায়নি কারন ওর জ্বর ছিলো। আমি ভার্সিটিতে যাই একা একা। ওখানে আমি দায়িত্বে ছিলাম বলে অনুষ্ঠান শেষ হবার পরেও সবকিছু গুছিয়ে আসতে আমার বাড়ি আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে যায়। ঘড়ির কাটা যখন ঠিক ছয়টার ঘরে পৌঁছলো তখন আমি ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলাম। কিছুদূর হাঁটতেই দেখলাম আমার ফোনটা খুঁজে পাচ্ছি না তখন ফোন খুঁজতে আমি উল্টোদিকে আবার হাটা ধরি তারপর কিছুক্ষণ খোঁজার পর ফোনটা পেয়েও যাই। কিন্তু ফোন খুঁজতে খুঁজতে সময় গড়িয়ে গেছিলো। তার উপর আবার গাড়ি পাচ্ছিলাম না। প্রতিদিন হেঁটেই যেতাম ভার্সিটিতে থেকে বাসায় কিন্তু ওইদিন রাত হওয়ায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু প্রতিটি গাড়িই যাত্রী ভরে আসতো এভাবে কিছু সময় পার হয়ে যায়। তখন দেখলাম ঘড়িতে ন’টা বেজে গেছে এবার আর গাড়ির আশা না করে তড়িঘড়ি করে হাটা লাগালাম বাড়ির উদ্দেশ্য। কিন্তু ওইদিন সবকিছুই যেনো ছিলো আমার বিপরীতে মুহুর্তের মধ্যেই ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামে যার ফলে আমি রাস্তা দিয়ে যাবার সময় যেই নির্জন একটা বাড়ি পরে না? ওই বাড়িটায় আশ্রয় নিই আমি বাধ্য হয়ে। কিছুসময় সবকিছুই ঠিক ছিলো কিন্তু হঠাৎই কেউ মুখ জোরে চেপে ধরে আমাকে জোর করে ভেতরে নিয়ে যায়। একজন পুরুষের শক্তির সাথে একটা মেয়ের শক্তি নিছকই! আমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। আমার শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করছিলো লোকটি কিন্তু আমি তার চোখে গুঁতো দিই যার ফলে সে কিছু মুহুর্তের জন্য দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে আমি লোকজনকে ডাকতে থাকি। কিছু সময় এর ভিতরে লোকজনও এসে পড়ে লোকজনদের হাতে থাকা টর্চের আলোয় সেই লোকটির মুখ আমি খুব ভালো করেই দেখতে পেয়েছিলাম আমার চিৎকারের আওয়াজ এবং আমার কথা শুনে লোকজন ওই লোকটাকে মারতে থাকে আরো বিভিন্ন রকম কটু কথা শোনায়। আমি খুব ভালো করেই বুঝেছিলাম লোকটি একা ছিলো না। ওর সাথে ওর বন্ধুরাও ছিলো কারন যখনি ও’ই লোকটিকে মানা হচ্ছিলো তখনি ওনার মতন কিছু ছেলেরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো এবং তাদের মুখ বাধাঁ ছিলো রুমাল দ্বাড়া যার ফলে আমার সন্দেহ বিশ্বাসে পরিনত হয়। তারপরে লোকজন কি করেছিলো আমি জানি না আমি তারপর বাড়িতে এসে পড়ি। আর কাউকে কিছু জানায়নি ভয় পেয়ে। আর ঘটনা এর পর থেকেই ধামাচাপা দিয়ে ফেলি আমি। আর ওই লোকটি কে ছিলো জানো? আর অন্য কেউ সেটা তোমার ভাই সামাদই ছিলো! বিয়ের দিন তাকে দেখে চিনতে একটুও অসুবিধা হয়নি আমার। এবার তুমিই বলো আমার ভূল কি এতে?”

–উপস্থিত সবার যেনো এবার দৃষ্টি শুধু সামাদ এর দিকেই আবদ্ধ হয়ে আছে! সোহা ঘৃনার দৃষ্টি নিয়ে সামাদের দিকে তাকিয়ে আছে! ছোঁয়ার মুখ থেকে কিয়ৎপূর্বে শোনা চরম সত্যি টি যেনো হৃদয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না! হৃদয় সামাদের দিকে তাকালো এক পলক। সামাদ ও বিস্ময় নিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদয় সামাদের দিকে তাকিয়ে বললো,

–“তুই এতোটা নিচে কি করে নামতে পারলি রে? এগুলো করার আগে একবারো তোর আমাদের ছোটো বোনের কথা মনে পড়লো না? মিতু যেমন আমাদের বোন তেমনি ছোঁয়াও তো কারো আদরেরই বোন বা মেয়ে ছিলো তাহলে কি করে করতে পারলি তুই ওর সাথে এরকম? এখন তো তোকে আমার বড়ো ভাই ভাবতেও ঘৃনা লাগছে ছিহঃ কতোটা নিচ তুই?”

হৃদয়ের কথা শেষ না হতেই সোহা বলে ওঠলো,

–” ছিহঃ আমার নিজেকেই ঘৃনা লাগছে এখন কার সাথে রইলাম আমি এতোদিন? এতো মাসেও বুঝতে পারলাম না তোমার কুৎসিত চেহারা! ভাগ্যিস আপু আজকে আমায় এখানে এনেছিলো নইলে তে সবই অজানা থাকতো আমার। একটা মুখোশের আড়ালে থাকা মানুষকে চিনতে পারি নি আমো। কতোটা বোকা ছিলাম যে তোমার মতন মানুষের কথায় বোকা বনে নিজের বোনের ক্ষতি করতে গেছিলাম! এইবার বুঝেছি তাহলে এই কারন? এই অপমানিতোর কথা বলছিলে তুমি আমায়? আমি তো মনে করি আপু যা করেছে একদম ঠিক কাজ করেছে কোনো ভূল নেই এতে। বরং আমি হলে তো তোমাকে পুলিশে দিতাম।”

–সোহার কথা শেষ হতে না হতেই সামাদ চিৎকার করে বলে ওঠলো,

–“হ্যাঁ তো? পুলিশেও ধরে ছিলো আমায়। তোমার আপুর মনের আশা ও পূরন হয়েছিলো। কম লজ্জিত বা অপমানিতো হই নি আমি। সবটা না জেনে কেনো আমাকে দোষী করছো? তোমার আপু যা বলেছে তা অর্ধেক সত্যি। অনেক কথা এখনো লুকিয়ে রেখেছে সে।”

এবার ছোঁয়া হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে সামাদকে বললো,

–“আমি এক বিন্দুও মিথ্যে বলিনি না কোনো কথা লুকিয়েছি তোমাদের কাছ থেকে।”

–“অবশ্যই লুকিয়েছো। সেদিন যে ওটা আমিই ছিলাম সেটা তুমি দেখেছিলে একবারো? যখন তোমার শ্লীলতাহানি করেছিলো তখন তার মুখ দেখেছিলে? একবারো তখন আমাকে দেখতে পেয়েছিলে তুমি? জবাব দাও তারপর বলছি আমি তুমি ঠিক কি লুকিয়েছো!”

#চলবে?
#বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।