হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-২২+২৩

0
716

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ২২

দরজা দিয়ে দুটো লোক একজন মধ্যবয়সী মহিলাকে নিয়ে ঢুকল।ওই মহিলাকে দেখে সবাই অবাক।মহিলাটি দিগ্বিজয় বাবুর দিকে ছলছল নয়নে হাসিমাখা বদনে তাকিয়ে আছে।
বর্ষণ অস্ফুটস্বরে বলে উঠলঃ মা..মাম্মা।
দিগ্বিজয়ঃ মে..মে..ঘ..নায়ায়া।
দিগ্বিজয় বাবু দৌঁড়ে মেঘনাদেবীর কাছে গেলেন।বর্ষণ ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।সামনে যাওয়ার শক্তি টুকু পাচ্ছে না।নিজের মাকে জীবিত দেখবে কখনো ভাবে নি।এতদিন নিজেকে অনাথ মেনে এসেছে কিন্তু আজ ওর মা.. আর কিছু ভাবতে পারছে না।শরীর কেমন অবশ হয়ে আসছে।মাথায় সবকিছু তালগুল পাকিয়ে গেছে।আজ একটার পর একটা অবিশ্বাস্য সত্যির মুখোমুখি হবে তা জানা ছিল না।মেঘলা এসে বর্ষণের পাশে দাঁড়াল।ও বোঝতে পারছে ওর দাভাইয়ের মনের অবস্থা এখন কেমন।প্রথম যখন এই সত্যটা জেনে ছিল ওর নিজেরও তো এই অবস্থা হয়েছিল।নিজের মাকে এক পলক দেখার জন্য কত ছটফট করেছে।কত কাঠখড় পুড়িয়ে মাকে সন্ধান যোগার করেছে তা ওই জানে।
জন্মের পরপরই বোধয় একপলক মাকে দেখেছিল।তারপর ফুলের মালা জড়ানো ছবি ফ্রেমেই দেখে এসেছে।লাল শাড়ি পরা টুকটুকে লজ্জারাঙ্গা বউ রূপে।অবুঝ অবস্থায় কতবার যে মালা ছিঁড়ে কুটিকুটি করেছে তার হিসেব নেই।তখন ঠাম্মা কত বকতেন।ইশ তখন যদি একবার বলত “আমার মা বেঁচে আছে ছবিতে মালা দিও না” তাহলে হয়ত ছবিটা জীবিত মানুষটাকে মৃত ঘোষণা করত না।
ছোটবেলায় মায়ের কাছে যাওয়ার কত কান্না করেছে।নাইয়া দেবী একবারও কাছে এসে কোলে তুলেও নেন নি।নিবেন কেন উনি মা নাকি।ওর মা থাকলে হয়ত মা-ই কোলে নিতেন।আদর করে কান্না থামাতেন।
এসব ভেবেই চোখের কার্ণিশে অশ্রুকণা চিকচিক করছে।
বর্ষণ প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকাল।ও মাথা নাড়িয়ে বোঝাল “এটা স্বপ্ন না দাভাই সত্যি।আমাদের মা বেঁচে আছেন।আমাদের সামনেই আছেন।দেখবি একটু পরই আমাদের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে আদর করবেন।বুকে টেনে নেবেন।”

দিগ্বিজয়ঃ মে..মেঘনা ত.তুমি ঠিক আছো তো?ওই টিপি তোমার কোনো ক্ষতি করে নি তো?তুমি এখানে কি করে এলে?
মেঘনাঃ আমাকে এই ছেলেদুটি সাথে ওই পোড়াবাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে।অবশ্য সাথে আরো কয়েকজন ছিল।আমি তো ভেবেছিলাম ওরা আমাকে অন্যত্র স্থানান্তর করবে কিন্তু ওরা তো আমাকে আবার এই বাড়িতে নিয়ে এলো।জানো আমি কোনোদিনও ভাবি তোমার সাথে আমার আবার দেখা হবে।আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে আবার আসতে পারব না।আ..মার সন্তানরা কোথায়।আমার বর্ষণ আমার বর্ষণ কোথায় আর আমার মেয়ে?
দিগ্বিজয়বাবু মেঘনাদেবীর হাত ধরে বর্ষণ আর মেঘলার সামনে যান।
দিগ্বিজয়ঃ ওই দেখ আমাদের সন্তান।আমাদের বর্ষণ আর ও আমাদের মেয়ে,আমাদের মেঘলা।আমার এঞ্জেল।
মেঘলা একবার বাবার দিকে তাকাল।আজ প্রথম বার হয়ত বাবার চোখে নিজের জন্য স্নেহ ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।এতদিনও তো ছিল।কিন্তু ও দেখতে পায় নি।পাবে কি করে এতদিন যে চোখে অভিমানের পর্দা দেওয়া ছিল।তাই বাবার লুকানো ভালোবাসা টুকু দেখতে পায় নি।সারাজীবন ভুল বোঝেই এলো।
মেঘনাঃ আ..আম.আর ব..র্ষণ।আ..মার ছে..লে।(বর্ষণের মুখে হাত বুলিয়ে)কত বড় হয়ে গেছে আমার ছেলেটা।আমার সোনাটা।
(মেঘলার মুখে হাত বুলিয়ে)আ..মার মে.য়ে আমার মে..ঘলায়া।
আম..আর ছেলেমেয়ে আমার।সামনে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।ভাবি নি রে তোদের কখনো দেখতে পাবো।(শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে)
মেঘনাদেবী ছেলেমেয়েকে বুকে টেনে হুহু করে কেঁদে দিলেন।বর্ষণ আর মেঘলাও মাকে শক্ত করে ঝাপটে ধরল।ছেড়ে দিলে যেন আবার হারিয়ে যাবেন।দুজনেরই চোখে জল।মেঘনাদেবী ছেলেমেয়েকে চুমুতে ভরিয়ে দিলেন।এত বছরের জমিয়ে রাখা ভালোবাসা সব উজার করে দিচ্ছেন।
আর মা-সন্তানের এই মিলন দেখে সবার চোখে জল।আনন্দের জল।
মেঘলাঃ এবার তো কেউ আমাকে অপয়া বলবে না তাই না।কেউ বলবে না আমার জন্য তুমি সবাইকে ছেড়ে চলে গেছ।(কেঁদে কেঁদে)
বর্ষণঃ হুঁশ (মেঘলার চুল টেনে)তুই আবার কখন থেকে নিজেকে অপয়া ভাবতে শুরু করলি?লোকের কথা গায়ে মাখাতে শুরু করলি?তুই অপয়া নস।আমার মতে পৃথিবীতে সবচেয়ে পয়মন্তী মেয়ে,বোন আর বউও।(মৃদু হেসে)
মেঘলাঃ পাপা ইউ ক্যান জয়েন আস(মুচকি হেসে)
দিগ্বিজয়বাবুও ছেলেমেয়েকে আঁকড়ে ধরলেন।বর্ষণ চোখ দিয়ে ইশারায় রিয়া-টিয়াকে ডাকল।ওরা কাছে আসলে বর্ষণ এক হাত দিয়ে ওদেরও আগলে রাখল।হ্যাপি ফ্যামিলি।
মেঘনাঃ ওরা..
মেঘলাঃ তোমার আরো দুটো মেয়ে।আমার লিটল প্রিন্সেস।
বর্ষণঃ হ্যাঁ ওরা আমার দুই প্রিন্সেস বোন আর ও(মেঘলা) আমার গ্যাংস্টার বোন(হেসে হেসে)
মেঘলার কথা শুনে মেঘনাদেবী ওদেরও বুকে নিলেন।
রিয়া-টিয়াও স্বাচ্ছন্দ্যে ওনার কাছে গেল।
রিয়া-টিয়াঃ জানো তোমার গায়ে না মা মা গন্ধ পাচ্ছি।যেমনটা দিভাইয়ের গায়ে পেতাম।কিন্তু ওই বজ্জাত মহিলার গায়ে কোনোদিনও পাইনি।
বলে আরো গভিরভাবে মেঘনাদেবীকে জড়িয়ে ধরল।
এদিকে এখানে মেঘনা দেবীকে দেখে টিপি আর এনপির অবস্থা খারাপ।তাদের শেষ অস্ত্রটাও যে এভাবে হাত ছাড়া হয়ে যাবে ভাবতেও পারেন নি।মনে মনে নেক্সট প্ল্যান সাজাচ্ছে।সবার ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে পালানোর ধান্দায় আছেন।
মেঘলাঃ (মায়ের বুকে মুখ গুজে রাখা অবস্থায়) পালানোর চেষ্টা করে লাভ নেই মি. এন্ড মিসেস. পাওয়েল।বাড়ির বাইরে পুলিশ ফোর্স আপনাদের শশুড়বাড়ি নিয়ে যাওয়া জন্য অপেক্ষা করছে।(বাঁকা হেসে)
মেঘলার কথা শুনে দুজনের পা থমকে যায়।ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
বর্ষণঃ (সবাইকে ছেড়ে) মেঘু মাম্মা বেঁচে আছেন কিভাবে?আর এসব কি হচ্ছে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
মেঘলাঃ বুঝতে পারবি একটু সবুর কর।মি.পাওয়েল আপনিই নিজের কীর্তি কলাপ বলুন।
টিপিঃ হ্যাঁ আমিই এতদিন মেঘনাকে আটকে রেখেছিলাম।শুধুমাত্র দিগ্বিজয়কে ব্ল্যাকমেইল করে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য।আশিসকে মেরে আমি বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছিলাম।কিন্তু প্রশ্ন ছিল থাকব কোথাও।আমি যতদুর জানতাম আশিস নিজের পৈত্রিক ভিটা অনেক আগেই বিক্রি করে ফেলেছে।আশিসের থেকে আমি একবার শুনেছিলাম দিবাকর সেন(মেঘলার দাদু) নামে একজন আছেন যে ওকে নিজের ছেলের মতো স্নেহ করে।কোনোদিনও বিডি ব্যাক করলে উনার বাড়িতে থাকতে পারবে।তাই আমি লোক লাগিয়ে খুঁজ লাগাই উনার ব্যাপারে।তখন উনার অঢেল সম্পত্তির উপর আমার লোভ জেগে যায়।যেভাবেই হোক ওই সম্পত্তি আমার চাই।আমি আরো জানতে পেরেছিলাম দিবাকর সেনের ছেলে দিগ্বিজয় সেন এক ছেলের বাবা আর উনার স্ত্রী গর্ভবতী।খুব শীঘ্রই সম্পত্তির আরেক মালিক আসতে চলেছে।তাই আমি নাইয়াকে দেশে পাঠাই।কোনোভাবে মেঘনার গর্ভেই সেই উত্তরাধিকারীকে মেরে ফেলতে।কিন্তু ও ব্যর্থ হয়।মেঘলার জন্মের পরই ও মেঘলাকে মারতে যায়।কিন্তু ও যাওয়ার আগেই একজন নার্স মেঘলাকে বাইরে বাড়ির লোকেদের কাছে দিয়ে যায়।তাই ও উপায়ন্তর না পেয়ে ডাক্তারকে হাত করে।ডাক্তার সবাইকে জানান মেঘনা মৃত।এটা শুনে দিগ্বিজয় খুব ভেঙে পড়ে।ওর মা-বাবা ছোট্ট মেঘলাকে আর মেঘের মা-বাবা বর্ষণকে সামলে যখন ব্যস্ত তখন ও মেঘনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসে।
তারপর আমার লোকেরা দিগ্বিজয়কে কিছু একটা বলে সবার থেকে আলাদা করে।তারা ওকে মেঘনার একটা ভিডিও দেখায়।যেখানে স্পষ্ট মেঘনাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।মেঘনাকে বাঁচাতে চাইলে আমাদের কথা মতো চলতে হবে।তাই ও আমাদের কথামতো অন্য একটা লাশকে দাহ করে।আর মেঘনাকে শেষ বারের মতোও কাউকে দেখতে দেয় না।সবাই ভাবে মেঘনা সত্যিই মারা গেছে।মেঘনার মৃত্যু সংবাদে ওর বাড়ির সবাই ভেঙে পড়েছিল।তার উপর দুধের শিশু মেঘলাকে সামলানো নিয়ে আরো বড় প্রশ্ন ছিল।বর্ষণও ছোট ছিল।তাই কেউ মেঘনার হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে দাহের ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় নি।
আমার কথামতোই দিগ্বিজয় মেঘলার কাছে ঘেঁষত না।অবহেলা করত।বর্ষণের থেকেও দুরে থাকত।এভাবে ২মাস কাটার পর আমি আছি।আমি ভেবেছিলাম দিগ্বিজয়কে ওর বাবা-মায়ের সামনে খারাপ বানিয়ে ওদের কোনো রকমে বশ করে সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নেব।আর যদি এটা না হয় উনারা সব সম্পত্তি দিগ্বিজয়ের নামে করেন তবেও সমস্যা নেই কারণ দিগ্বিজয় মেঘনাকে বাঁচাতে সব সম্পত্তি আমার নামে করতে বাধ্য।আমিই দিগ্বিজয়কে এনপিকে বিয়ের নাটক করে এবাড়তে নিয়ে আসতে বলি।সব আমার প্ল্যান মাফিকই চলছি।দিগ্বিজয় নিজের সন্তানদের থেকে দুরে সরে যাচ্ছিল।আর ওর প্রতি দিনকে দিন ওর মা-বাবা বিরক্ত হচ্ছিল আর আমাতে আসক্ত।
দিগ্বিজয়ঃ কিন্তু বাদ সাজল তখন বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর যখন জানতে পারলি সব সম্পত্তি মেঘলা আর বর্ষণের নামে।
টিপিঃ হ্যাঁ আগে যদি জানতাম ওরা এরকম করবে তবে ওই বুড়া-বুড়িকে অনেক আগেই যমের দুয়ারে পাঠাতাম।
রাগে দিগ্বিজয়,মেঘলা আর বর্ষণের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
দিগ্বিজয়ঃ তাতেও লাভ হতো না।সম্পত্তি তোরা পেতি না।
টিপিঃ মানে??
দিগ্বিজয়ঃ সম্পত্তি আমার নামেই ছিল।যেটা তোরা জানতি না।যখন তোরা মেঘনাকে কিডন্যাপ করিস।আর সম্পত্তির কথা তুলিস তখনই আমি আসন্ন বিপদ বুঝে সব সম্পত্তি বর্ষণ আর মেঘলার নামে করে দিই।আর এমনভাবে উইল করি যাতে তোরা মেঘলা আর বর্ষণের কোনো ক্ষতি করতে না পারিস।কারণ আমি জানতাম সব সম্পত্তি পেয়ে গেলে তোরা মেঘনা,মেঘলা,বর্ষণ কাউকে বাঁচিয়ে রাখতি না।তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন।মেঘনা হয়ত আমাদের থেকে দুরে থাকবে আর মেঘলা-বর্ষণ আমার অবহেলা পাবে কিন্তু বেঁচে তো থাকবে।
টিপিঃ শু*..বাচ্চা তুই আমাদের সাথে এতবড় চালাকি করলি।সেদিন কেন তকেই মেরে দিলাম না।
মেঘলাঃ তোর দুর্ভাগ্য।এবার আগে বাড়।যতক্ষণ বলতে থাকবি ততক্ষণ এখানে থাকবি বলা শেষ পুলিশ হাজির।
টিপিঃ যখন জানতে পারলাম সব সম্পত্তি মেঘলা আর বর্ষণের নামে।তখন প্ল্যান করলাম আকাশের সাথে মেঘলার আর বর্ষণের সাথে বৃষ্টির বিয়ে দিয়ে সব সম্পত্তি আমার দখলে আনব।তাই ছোট বেলা থেকেই আকাশের মাথায় মেঘলার ভুত ঢুকিয়ে দিই।আকাশ মেঘলাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে শুরু করে।
নাইয়াঃ কিন্তু এতে বাদ সাজে মেঘ।আমি জানতে পারি মেঘ আর মেঘলা একে অপরকে ভালোবাসে।তাই আকাশ আর বৃষ্টিকে ওদের পিছনে লেলিয়ে দিই।মেঘ-মেঘলাকে আলাদা করার উপায় বলি।সাকসেসফুলও হই।সব ঠিক চলছিল।আকাশ আর মেঘলার বিয়েও হতে যাচ্ছিল কিন্তু মাঝখান থেকে নীলা এসে সব বাঞ্চাল করে দিল।তাই ওকে মারার পরিকল্পনা করি।কিন্তু ব্যর্থ হই।ওর পিছনে বডিগার্ড লাগানো ছিল।যার কারণে নীলাকে কোনো মতেই ভাগে আনা যাচ্ছিল না।
এটা শুনে নীলা স্তব্ধ।ওকেও মারার প্ল্যান চলছিল।কিন্তু বডিগার্ড??নিশ্চয়ই মেঘদা বা মেঘলা লাগিয়েছে।শ্রাবণ আর শ্রাবণের মা-বাবাও স্তব্ধ।এতদিন মেয়েকে ভুল বোঝেই আসছিল।কিন্তু মেয়ে যে এতদিন মৃত্যু পুরিতে ছিল তা ধারণার বাইরে।
টিপিঃ নেক্সট প্ল্যান করি বর্ষণ আর বৃষ্টির বিয়ে।ঠিক হয় একইদিনে বর্ষণ-বৃষ্টি,মেঘ-মেঘলা,আকাশ-নীলা আর শ্রাবণ-বর্ষার বিয়ে হবে।মেঘ-মেঘলা আর নীলাকাশের আবার বিয়ে দিতে চাইছিলাম কারণ ওদের বিয়ের দিন ওদের ডিবোর্স করিয়ে বর বদলে মেঘলার সাথে আকাশের আর নীলার সাথে মেঘের বিয়ে দেব ভেবে।প্ল্যান মোতাবেক সব হচ্ছিল। মেঘ_মেঘলা আর নীলাকাশ ডিবোর্স পেপারেও সাইন করে দেয়।
সবাই স্তব্ধ।এতকিছু কখন হলো।
মেঘলাঃ বাট এই বারও নাইয়াজি সবার চোখে ধুলো দিয়ে মেঘদা আর আকাশদাকে বদলানোর জায়গায় ভুল করে দাভাই আর শ্রাবণদাকে বদলে ফেলে আর এতে বর্ষার সাথে দাভাইয়ের আর বৃষ্টির সাথে শ্রাবণদার বিয়ে হয়ে যায়।এতে আপনার দুই প্ল্যানই ভেস্তে যায়।না পান আমার সম্পত্তি না দাভাইয়ের।
টিপিঃ (অবাক হয়ে) তুমি আমাদের প্ল্যান সম্পর্কে জানতে?
মেঘলাঃ অবশ্যই।পাপাকে যখন ফোর্স করছিলে আমাকে দিয়ে ডিবোর্স পেপার সাইন করানোর জন্য তখন শুনে ফেলি।এন্ড ফর ইয়র কাইন্ড ইনফরমেশন আমাদের ডিবোর্স হয় নি কারণ আমি আপনার পেন বদলে এমন একটা পেন রেখেছি যে একটু পর লেখা অর্থাৎ সাইন আপনাপনিই মুছে গেছে(বাঁকা হেসে)আর নাইয়াদেবীর চোখে আমিই ধুলো দিয়েছিলাম তাই উনি এই ভুলটা করেন।
টিপি+নাইয়াঃ হোয়াট??
মেঘঃ এগুলো কখন হলো?(বিড়বিড় করে)
মেঘলাঃ হাহ আপনার দুর্ভাগ্য সম্পত্তি আপনি পেলেন না।যে সম্পত্তির জন্য এতকিছু করলেন তাই আপনার হাতছাড়া হলো।এজ ওয়েল এজ আপনাকে এর জন্য কারাগারে বন্দী হতে হবে।
টিপিঃ (রেগে)তোমরা সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করে আমার সব প্ল্যান বাঞ্চাল করেছ।তোমাদের তো আমি..
বলে পকেট থেকে গান বের করে কাউকে গুলি করার আগেই মেঘলা উনার হাতে শুট করে দেয়।
মেঘলাঃ নট সো ইজি।(বাঁকা হেসে)
কিন্তু তার আগেই নাইয়াদেবী কখন মেঘকে গুলি করলেন কেউ টেরই পেল না।

(চলবে)

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ২৩

মেঘঃ আহ..
মেঘলা সাথে সাথে নাইয়ার হাতে গুলি করল আর নাইয়ার হাত থেকে বন্দুক পড়ে গেল।
মেঘলাঃ মেঘদাআয়ায়া।
বলে মেঘের কাছে এলো।আসার আগে নীলা আর শ্রাবণকে চোখ দিয়ে ইশারা করলে শ্রাবণ টিপিকে আর নীলা নাইয়াকে এরেস্ট করে।
মেঘলাঃ মেঘদা আর ইউ ওকে?তোমার গুলি..
মেঘঃ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।তুই হাইপার হোস না।গুলিটা হাতে লেগেছে।
মেঘলা একবার মেঘের গুলিলাগা হাতটা দেখল।তারপর সেখানে একটা ছুড়ি ঢুকিয়ে দিল।সাথে সাথে মেঘঃ আহহহহহহহ।বলে মেঘলার কাঁধ কামছে ধরল।
মেঘলা ছুড়ি দিয়ে মেঘের হাত থেকে গুলি বের করতে করতেঃ রিয়া ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে আয় তো।
রিয়া সাথে সাথে দৌড় দিল ফাস্ট এইড বক্স আনতে।
মেঘলা মেঘের হাত থেকে গুলি বের করে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিল।
মেঘঃ আরে বাহ মেঘলা তুই তো ভারী কিপটে হয়েছিস।হসপিটালের বিল দিতে হবে বলে নিজেই গুলি বের করে দিলি।(মজার ছলে)
মেঘলা চোখ গরম করে তাকিয়েঃ চুউপ।আমি জাস্ট প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।কে বলেছে হসপিটালে যেতে হবে না?এক্ষুনি চল।
মেঘঃ না না দরকার নেই।আমি ঠিক আছি।গুলিও বের হয়ে গেছে।হসপিটালে যেতে হবে না।(মেকি হেসে)
মেঘলাঃ (চোখ ছোট ছোট করে) এখনো ইঞ্জেকশন ভয় পাও।
মেঘঃ 😳😅
মেঘলাঃ (মেঘের হাত ধরে) চল হসপিটাল।কোনো বাহানা চলবে না(চিবিয়ে চিবিয়ে)
মেঘঃ আরে হসপিটালে যেতে হবে না।আমাদের বাড়িতেই তো একজন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট আছে।নীলাই..
মেঘলাঃ চুউউউপ।
মেঘলার ধমকে মেঘ আর কিছু না বলে লক্ষ্মী ভদ্র ছেলের মতো চলে গেল।
যেতে যেতে মেঘলাঃ বস্তা দাভাই এদের স্পেশাল জায়গায় নিয়ে যাও।আমি এসে ট্রিট করব।
বর্ষা আর বর্ষণ মাথা দুলাল।
🌿
একটি অন্ধকার রুমে টিপি আর এনপিকে বেঁধে রাখা হয়েছে।তাদের ঠিক সামনে একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে ছুরি ঘোরাতে ঘোরাতে তাদের দিকে তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘলা।ওর পিছনে বর্ষা বর্ষণ দাঁড়িয়ে আছে চোখ লাল করে।
মেঘলাঃ তো মি. এন্ড মিসেস. পাওয়েল আপনাদের কি শাস্তি দেওয়া যায়?
নাইয়াঃ মে..মেঘলা মামনি আমাদের ক্ষমা করে দাও।আমি না তোমার মায়ের ম..
বাকিটা বলার আগেই মেঘলা নাইয়াদেবীর মুখ চেপে ধরেঃ জাস্ট সাট আপ।মায়ের মতো!হাহ এই কথাটা আপনার মুখে মানায় না।আপনি আমার কেন কারোরই মা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।ফারদার নিজেকে আমার মায়ের সাথে নিজের তুলনা করবেন না।আমার মা পুণ্যাত্মা আর আপনি পাপাত্মা।
মেঘলা খুব জোরে নাইয়ার মুখ চেপে ধরার নাইয়া ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠল।ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করল।কিন্তু লাভ হলো না।একটা সময় মেঘলা নিজেই ছেড়ে দিল।নাইয়ার মুখে মেঘলা আঙুলের ছাপ দ্বারাই বোঝা যাচ্ছে মেঘলা কতটা জোরে ধরেছিল।
মেঘলা নাইয়াদেবীর হাত ধরেঃ এই নরম তুলতুলে হাত দ্বারা আপনি আমার মেঘদাকে গুলি করেছিলেন তাই না(ক্রুর হেসে)
নাইয়া ঢুক গিলল।মেঘলা কি করবে তা বুঝে উঠার আগেই মেঘলা নাইয়ার হাতে ছুরি ঢুকিয়ে দিল।
নাইয়াঃ আহহহ(চিৎকার করে)মেঘলা প্লিজ ছেড়ে দাও।আমার ভুল হয়ে গেছে।এমন ভুল আর কখনো হবে না।
মেঘলাঃ হুম এখন ভুল আপনার আর কখনো হবে না।ভুল করার অবস্থায় থাকলে তো ভুল করবেন।(বাঁকা হেসে)
নাইয়া মেঘলার কথার মর্মার্থ অনুধাবন করার আগেই মেঘলা একটা মুছনা বের করে নাইয়ার এক আঙুলের নখ উপড়ে ফেলল।তারপর একে একে সবকড়া নখ।
নাইয়ার চিৎকারে পুরো রুম কেঁপে উঠল।চোখ বেয়ে অবিরত পানি ঝড়ছে।নাইয়ার করুণ দশা দেখে টিপির কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।
বর্ষা আর বর্ষণ নির্বিকার চিত্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।ওরা এসবে অভ্যস্ত।মেঘলা কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা তারা ভালোই জানে।যখন আঘাতটা ওর কাছের কারো উপর হয় তখন তো কথাই নেই।
মেঘলাঃ বর্ষা ইওর টার্ন।
বলে টিপির দিকে তাকাল।মেঘলার চাহনি দেখে টিপির তো প্রাণ ওষ্ঠাগত।
মেঘলা ইশারা বুঝে বর্ষা বাঁকা হেসে নাইয়ার হাতে লবণ আর মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়।নাইয়া আবার চিৎকার করে উঠে।এতে বর্ষা,বর্ষণ কিংবা মেঘলার মনে একটুও মায়া উৎপন্ন হয় না।বরং নাইয়ার চিৎকারে ওদের কলিজা ঠান্ডা হয়।মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।
মেঘলাঃ তো মিস্টার পাওয়েল আপনাকে কি শাস্তি দেওয়া যায়।আচ্ছা আপনি আমার মাম্মাকে কতবছর আটকে রেখেছিলেন বলুন তো?২৪ বছর?রাইট?
টিপি মাথা নিচু করে ফেলে।
মেঘলাঃ আজ পর্যন্ত কি কি অপরাধ করেছেন?
বর্ষণঃ খুন,হিউম্যান অর্গান স্মাগলিং,হিউম্যান ট্রাফিজিং,ড্রাগ ওয়াপনস স্মাগলিং,নারী শিশু পাচার,সম্পত্তির দালালি…etc.
বর্ষাঃ তো এবার আপনার সাথে কি করা যায়?
মেঘলাঃ আপনার শরীর থেকে অর্গান বের করব?
টিপি আঁতকে উঠে।
বর্ষণঃ হু ফাস্ট এটা দিয়েই শুরু কর।
মেঘলাঃ বর্ষা তুই এই মহিলার খাতির দারি কর।আমরা এনাকে দেখছি(টিপিকে)।আচ্ছা দাভাই উনাকে অজ্ঞান না করে যদি উনার কিডনি বের করে নিই(বাঁকা হেসে)
বর্ষণঃ হ্যাঁ করা যেতেই পারে।ছয়মাস উনি একটা কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকবে।উহু মরতে দেব না।মরলে বাকি টর্চারগুলো কার উপর করব।তারপর নাহয় দ্বিতীয় কিডনি,হার্ট,লিভার ওগুলো বের করা যাবে।
বর্ষণ আর মেঘলার ভয়ংকর কথা গুলো শুনে টিপির অবস্থা খারাপ।
টিপিঃ না না প্লিজ এমন করো না।ক্ষমা করে দাও।
মেঘলাঃ ক্ষমা আর তোকে?তোকে ক্ষমা করলে আমরা নিজেদের ক্ষমা করতে পারব না।
বর্ষণঃ ওই আর একটা কথা বলেছিস তো তোর মুখ সেলাই করে দেব।থ্রেট ভাবিস না।সত্যি সত্যি করব কিন্তু।চুপচাপ চল।
বলে বর্ষণ টিপিকে টেনে ছিচড়ে অন্য একটা রুমে নিয়ে গেল।মেঘলাও পিছু পিছু গেল।
কিছুক্ষণ বাদে বাদে টিপির আর্তচিৎকার শোনা গেল।যা শুনে বর্ষা ক্রুর হাসল আর নাইয়ার কলিজা কেঁপে উঠল।
কিছুক্ষণ পর টিপির আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না।

ওদিকে মেঘলাঃ ও গড দাভাই এই টিপি তো জ্ঞান হারিয়েছে এভাবে চিকিৎসা দেওয়ার কোনো মানে হয় না।আগে এর জ্ঞান ফিরাও।
বর্ষণঃ হ্যাঁ আগে এর জ্ঞান ফিরাতে হবে।ওর আর্তনাদ না শুনলে জানে পানি আসে না।(আফসোসের সুরে)
মেঘলাঃ তো দের কিস বাত কা।আভি হুঁশ মে লাও।
কিছুক্ষণ পর আবার টিপির আর্তনাদ শুনা গেল।
🌿
গভীর রজনীতে এক রমনী দাঁড়িয়ে আছে বেলকুনিতে।চাঁদের আলোতে মুখের উজ্জ্বলতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।তারই পিছনে দাঁড়িয়ে এক যুবক তৃষ্ণার্ত নয়নে নিজের প্রাণপ্রিয়াকে দেখছে।
“প্রেমতরঙ্গী”
কারো শীতল কণ্ঠের ডাকে রমনীর হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হলো।সারা শরীরে এক তৃপ্তির হাওয়া বয়ে গেল।
মেঘলাঃ ক..কিছু বলবেন স্যার?
মেঘঃ স্যার..এখনো?
মেঘলাঃ আপনিই তো এই পরিচয়ে এসেছিলেন।
মেঘঃ এই পরিচয়ে না এলে তোকে পেতাম না।তোকে বিয়ে করতে পারতাম না।
মেঘলাঃ এখনও মনে হয় আপনার ইচ্ছায় বিয়ে হয়েছে।
মেঘঃ মানে?
মেঘলাঃ আমার ইচ্ছা ছাড়া কখনো এই বিয়েটা হতোই না।আফটার অল মেঘলা সেনকে দিয়ে জোর করিয়ে কেউ কিছু করাতে পারে না।আপনার কি মনে হয় মেঘলা সেন আপনার কবল থেকে নিজের আপনজনদের রক্ষা করতে পারবে না।আপনি ব্ল্যাক মেইল করবেন আর মেঘলা সুড়সুড় করে বিয়ের পিড়িতে বসে যাবে(তাচ্ছিল্যের সুরে)
পিটি মানে প্রেমতরঙ্গী তাই না?
জানেন ওইদিন পার্টিতে যখন আপনার স্পর্শ পেয়েছিলাম আমার মাথায় সর্বপ্রথম আপনার নামটাই এসেছিল।আপনার কি মনে হয় ১৪বছরে যখন আপনার হ্যান্ড রাইটিং চেঞ্জ হয় নি তখন আমি হ্যান্ড রাইটিং দেখেও চিনতে পারব না আপনি কে?
মেঘ ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
মেঘঃ মানে তুই প্রথম দিন থেকেই বোঝতে পেরেছিলি?তাহলে না চিনার ভান করলি যে?
মেঘলাঃ যাতে তুমি বোঝতে না পারো আমি তোমায় চিনতে পেরেছি।আপনার কি মনে হয় অফিসের প্রথম দিনের আপনার হেয়ালিপনা কথার মর্মার্থ আমি ধরতে পারব না।হাহ।আপনি হয়ত জানেন না আপনাকে আমি আপনার থেকেও বেশি ভালো করে চিনি।আপনি আমার আশেপাশে লুকিয়ে থাকলেও আমি আপনার উপস্থিতি ঠিকই টের পাই।আপনার কি মনে হয় আপনি চিঠিতে লেখবেন আমি যাতে এমএসের সাথে বেশি না মিশি আর আমিও ধরে নেব আপনি আর এমএস আলাদা মানুষ।আচ্ছা এত ভালো প্ল্যানিং করলেন অথচ পারফিউম চেঞ্জ করতে ভুলে গেলেন?আর আমি যখন আপনার বুকে বার্নিং ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছিলাম তখন যে আমি আপনার বুকের ওই আঘাতের চিহ্নটা দেখতে পাব না যেটা আমিই ছোটবেলায় দিয়েছিলাম সেটা আপনি ভাবলেন কি করে?
মেঘ তব্দা খেয়ে গেল।ভালোই বোঝতে পারছে মেঘলার মাথা সবসময় সেভেন জি স্প্রীডে চলে।
মেঘলাঃ আমি নিজ ইচ্ছাতেই আপনাকে বিয়ে করেছি।আমিও দেখতে চাইছিলাম আপনি আমাকে পাওয়ার জন্য কি কি করতে পারেন।
মেঘ মেঘলার কাছে এসেঃ তো কি দেখলি?
মেঘলাঃ সেটা নাহয় আমাএ মনেই থাক।
মেঘঃ এখন রেগে আছিস প্রেমতরঙ্গী।
মেঘলাঃ নিশ্চুপ।
মেঘঃ আমি জানি আমি তোকে না বলে চলে গেছিলাম বলে তোর অভিমান হয়েছে।আমি সরি।আমি তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য যাই নি রে জানিস তো।এখনো রেগে থাকবি?
মেঘলাঃ
“ভালবাসি বলে
প্রতিটাদিন তোমায় দিয়েই শুরু করতে চাই।
সকালে আড়মোর ভেঙ্গে প্রথমে তোমাকে খুজি।
ভালবাসি বলেই
তপ্ত রোদে অনুভব করি তোমায় ঘামে ভেজা ক্লান্ত মুখ কেউ মুছে দিচ্ছে।
ভালবাসি বলেই
প্রতিটা মুহুর্ত তোমায় দিতে চাই। যখন তুমি আড়াল হও
পাগলের মত খুজি।
তোমার উপস্থিতিতেই নিজেকে খুজে পাই।
ভালবাসি বলেই
তোমাকে এত হারাবার ভয় তাড়া করে।
ভাবলেই গা টা শিউরে উঠে।
ভালবাসি বলেইতো
দূরত্ব আর মনে সয় না।
মাঝে ইচ্ছে হয় ছুটে যাই তোমার কাছে।
জানিনা না কেন বেশিক্ষন তোমার ওপর রাগ করে থাকতে পারিনা। যেটা হয় সেটা অভিমান।
চাই আরো বেশি ভালোবাসো এই অভিমানিকে।
অভিমান তো করি ভাঙ্গানোর জন্যই।
কেনইবা এত অভিমান
ভালবাসি বলেই।
তুচ্ছ কিছু হলেও হয়ে যাই দিশেহারা
ইচ্ছা করলেও যে ছুটে যেতে পারিনা।
নিঃশ্বাস নিতেও যে কষ্ট হয়। গুলিবিদ্ধ একটা পাখির মত ছটফটাই।
এতো ভাবানা, এতো কল্পনা, এতো স্বপ্ন, এতো হারানোর ভয়, এতো অভিমান, এতো ভালবাসা।
কেন?
ভালবাসি বলেই।
হুম তোমাকেই….”
মেঘঃ আমিও তোকে ভালোবাসি।তাই তোর সব অভিমান ভাঙিয়ে দেব।
মেঘলাঃ আচ্ছা যাওয়ার আগে কি একটা বারও বলে যাওয়া যেত না?
মেঘঃ কি করে বলতাম।তোকে বললে যে আমি তোর থেকে কোনোদিনও দুরে যেতে পারতাম না।আমার মনে হয়েছিল তখন আমার দুরে যাওয়াটাই বেটার নইলে তোর সুখের পথে আমিই প্রধান বাঁধা হবো।
মেঘলাঃ কিন্তু আমার কথাটা একবারও ভাবলে না?আমি তো তোমাকে আমার ছোট হৃদয়টা দিয়েদিছিলাম।আমি কিভাবে আমার হৃদয়টা ছাড়া বাঁচতাম?
মেঘঃ সেই জন্যিই বুঝি ভয়ংকর হয়ে উঠেছিস?
মেঘলাঃ হয়ত?আমি তোমার সাথে বৃষ্টিকেও সহ্য করে নিতাম কিন্তু তোমাকে না দেখে থাকাটা আমার কাছে কতটা কষ্টের ছিল জানো।তুমি নাহয় বর্ষার থেকে আমার বড় হওয়ার প্রতিটা ছবি দেখে মনের খোরাক মিটাতে।কিন্তু আমি??
মেঘঃ তোর আমার সাথে বৃষ্টিকে সহ্য করার ক্ষমতা ছিল।কিন্তু আমার?আমার ছিল নারে।আমি যে বড্ড হিংসুটে?তোকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারি না রে।আমি তোকে আকাশের সাথে দেখতে পাররাম না।
মেঘলাঃ তাই পালিয়ে গেলে?
মেঘঃ হয়ত! নিজের প্রেমতরঙ্গীকে যে শুধু আমার সাথেই কল্পনা করে এসেছি।তাকে বেস্টফ্রেন্ডের সাথে ভাগ করা অসম্ভব।আমি আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে সব শেয়ার করতে রাজি কিন্তু তোকে না।
জানিস আমি তকে তখন থেকে ভালোবাসি যখন থেকে আমি ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও জানতাম না। তোর জন্মের পর নার্স সবার আগে তোকে আংকেলের কোলে দেন।আংকেলের কোলে গিয়েই তোর কান্না থেমে যায়।তারপর কিন্তু তোকে আমিই নিয়েছিলাম।আমি ছোট ছিলাম তাই কেউ আমার কাছে তোকে দিতে চাইছিল না।কিন্তু আমি বেবি ডলকে নিয়েই ছাড়ব।অবশেষে আমার জেদের কাছে হার মেনে তোকে আমার কাছে দিয়েছেন।তুই আমার কোলে গিয়ে তোর ছোট ছোট হাত পা নাড়িয়ে কি কান্না।বাপরে বাপ।কিন্তু যখন আমি তোকে একটু আদর করলাম সাথে সাথে তোর কান্না থেমে যায়।কত লুচ্চা ছিলি রে তুই?আদরের জন্য কাঁদতি।
মেঘলার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া উড়তে থাকে।
মেঘঃ কান্না থামিয়ে তুই যখন খিলখিলিয়ে হাসতে লাগিস তখন তোর ওই হাসির প্রেমে পড়ে যাই।হাহা ৪বছর বয়সে প্রেম?অদ্ভুদ হলেও সত্যি।তোর প্রতি আমি একটা আলাদা টান অনুভব করি।আমার মনে হতো সৃষ্টিকর্তা তোকে আমার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।তুই আমারই অংশ।তাই তো তোর নামটাও আমার নামের সাথে মিলিয়ে রাখি।মেঘের মেঘলা।
“মেঘের মেঘলা” চোখ বন্ধ করে শব্দটার গভীরতা উপলব্ধি করতে থাকে।সত্যিই মেঘের মেঘলা।মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
মেঘঃ জীবনে ফাস্ট বোধহয় তোর নামই রেখেছিলাম।তোর জন্মের কয়েক দিন পরেই বর্ষা আসে।আমার কলিজার টুকরা।কিন্তু আমি ওর নামও রাখি নি।হয়ত নাম রাখা জানতাম ন বলেও।কিন্তু তোর নাম যে কি করে রাখলাম?
মেঘলা মেঘের প্রতিটা কথা মন দিয়ে শুনে।মানুষটা কতটা ভালোবাসে।ছোটবেলা থেকেই।কি ক্ষতি হতো একবার বললে?হয়ত আলাদা হতে হতো না।বিরহের আগুনে পোড়তে হতো না।প্রেমতরঙ্গীর প্রেমোদক তার কাছেই থাকত।

(চলবে)