হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-২০+২১

0
684

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ২০+২১

নাক বরাবর একটা ঘুষি দেওয়ার আগেই মেঘলা হাত ধরে ফেলে।
মেঘলাঃ না দাভাই এভাবে না।ছুছু মেরে হাত গন্ধ করার কোনো মানে হয় না।উনার সাথে আমাকে ডিল করতে দে।
আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে মেঘলাঃ নীলা যে তোমাকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করল,আমাকে তোমার থেকে আলাদা করল ওর সাথে তোমার কি করতে ইচ্ছা করছে?
আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে নীলার দিকে তাকিয়েঃ ওকে এমন শাস্তি দিতে যাতে আর কেউ কখনো এরকম কাজ করার কথা কল্পনাও না করে।ওকে ডিবোর্স দিয়ে ওর থেকে অনেক দুরে চলে যেতে।ও আমাকে ভালোবাসে তাই না আমার থেকে দুরে থাকলেই ও সবোর্চ্চ শাস্তি পাবে।শুধু আমার থেকে কেন ওকে তো আমাদের সবার থেকে দুরে রাখা উচিত।বর্ষণ,বর্ষা,বৃষ্টি,শ্রাবণ,তোর আমার সবার থেকে।
মেঘলা মুচকি হাসল।শ্রাবণ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
মেঘলাঃ তো তোমারও কি সেইম শাস্তি প্রযোজ্য?না, আমার তো মনে হয় তোমার এর থেকেও বড় শাস্তি পাওয়া উচিত।আর নীলা..ও তো কোনো অন্যায় করে নি তাহলে ও কেন শাস্তি পাবে।ও তো শুধু কাটা দিয়ে কাটা তুলেছে।তোমাকে তোমার যোগ্য শাস্তি দিয়েছে আমার থেকে আলাদা করে।তোমার আর বৃষ্টির তো আরো বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত।
মি. সাহা আমার সাথে এরকম কেন করলে?(করুণ সুরে)
আকাশ মাথা নত করেঃতোকে ভালোবাসি বলে।
মেঘলা তাচ্ছিল্যের সুরেঃ ভালোবাসে?? হাহ ভালোবাসো বলেই ১৪টা বছর আমাকে কষ্ট দিয়েছ?প্রেমের অনলে আহুতি দিয়েছ?আমার থেকে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছ? তোমার ভাষ্যমতে তুমি আমাকে ভালোবাসো তো ভালোবাসার মানুষটির কষ্ট কি একটুও উপলব্ধি করতে পারো নি?এই ১৪টা বছরে এমন একটা মুহূর্তও যায় নি যখন আমি মেঘদার জন্য কষ্ট পাই নি,তোমার কি কোনো একটা মুহূর্তেও মনে হয় নি আমি কষ্টে আছি?তুমি কি বোঝতে পারো নি মেঘদার থেকে দুরে থেকে আমি মেঘদাকে তো ভুলতে পারিই নি বরং এই বিরহের অনলে পোড়ে আমার ভালোবাসাটা আরো বেড়েছে?নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করতে।আমাকে বিরহের আগুনের পুড়িয়ে তুমি কি একটুও অনুতপ্ত নও?তুমি তো সবটাই জানতে তাও কেন এমন করলে?যখন বুঝতে পারলে আমি তোমাকে কোনোদিনও ভালোবাসতে পারব না সবসময় মেঘদাই আমার মনে থাকবে তখন একটা বারও কি আমাকে সত্যিটা জানাতে পারতে না?
আর বৃষ্টি তুই তো আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলি তুই কি করে এমনটা করতে পারলি?বিশ্বাসঘাতকতা করলি??
বৃষ্টি মাথা নিচু করে ফেলে।
মেঘলা দীর্ঘশ্বাস ফেলেঃ তোর বিয়ের দিন নিশ্চয়ই বোঝতে পেরেছিস একজনকে ভালোবেসে যদি আরেকজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয় তবে কেমন লাগে।এটা তোর প্রাপ্ত ছিলো।এটা দ্বারা অন্তত কিছুটা হলেও আমার কষ্টটা উপলব্ধি পেরেছিস।তাই না?তোর ভাগ্য ভালো বিয়েটা শ্রাবণদার সাথেই হয়েছে।কিন্তু যদি না হতো?
“যদি না হতো” শুনেই বৃষ্টির বুকটা ধক করে উঠল।শ্রাবণ ছাড়া অন্যকাউকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে কি?না পারবে না।বর্ষণের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর মনে হচ্ছিল এর থেকে আত্মহত্যাও বুঝি সহজ।বৃষ্টির মনপ্রাণ সবটুকু জুড়ে যে শ্রাবণের বাস।যদি শ্রাবণের সাথে বিয়ে না হয়ে বর্ষণের সাথে হতো তাহলে কি হতো ভেবেই বৃষ্টির মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম।কোনো মতে নিজেকে ধাতস্থ করে মেঘলার দিকে করুণ চোখে তাকাল।
মেঘলাঃ যদি দাভাই আর বর্ষা একে অপরকে ভালো না বাসত তবে আমি কখনোই তোর সাথে শ্রাবণদার বিয়ে হতে দিতাম না কিন্তু কি বল তো তোকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজের ভাইয়ের খুশিটা কেড়ে নিতে পারলাম না।(কঠোর গলায়)কিন্তু তোর শাস্তি তুই পাবিই(রক্তচোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে)আমি নিজে হয়ত দেব না কিন্তু কেউ একজন দেবে যে শাস্তিটা দিলে তুই ভেতর থেকে ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে যাবি।তেমনটা আমি হয়েছি।
মেঘলার রক্তচোখ দেখে বৃষ্টি আতকে উঠে।ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায়।কে শাস্তি দেবে?
আকাশঃ বৃষ্টির কোনো দোষ নেই।ও শুধুমাত্র আমার খুশির কথা ভেবেই..
মেঘলাঃ আমি কারো এক্সপ্লেনেশন চাই নি(কাঠকাঠ গলায়)।তোমাদের এক্সপ্লেনেশনে আমি আমার জীবনের সেই হারিয়ে যাওয়া ১৪টা বছর ফিরে পাব না।আমি ১৪টা বছর নিজের ভালোবাসা হারানোর যে কষ্টটা উপলব্ধি করেছি তা তোমরা কেউ বোঝতে পারবে না।তোমরা শুধু স্বার্থপরের মতো আমাকে কষ্ট দিতেই পারবে।
আকাশঃ বাস মেঘলা অনেক বলেছিস আর না।তুই এতক্ষণ ধরে ভালোবাসার কথা বলছিলি না?তুই নাকি মেঘকে ভালোবাসতিস?কিন্তু মেঘকে ভালোবাসতিস না।যদি বাসতিস তাহলে এমএসকে বিয়ে করতি না।জানি না আমাকে কেন মেনে নিতে পারিস নি।কিন্তু মেঘকে ভুলে ঠিকই এমএসকে স্বামীর আসনে বসিয়েছিস।তাহলে বারবার কেন বলছিস মেঘকে ভালোবাসতিস?
বিনিময়ে রহস্যময়ী হাসল।
মেঘলাঃ আর যদি আমি বলি আমি মেঘদাকেই বিয়ে করেছি(বাঁকা হেসে)
উপস্থিত হতভম্ব শুধু(৫জন ছাড়া)
আকাশঃ কিন্তু তুই তো এমএসকে..
মেঘলাঃ হ্যাঁ আমি এমএসকে বিয়ে করেছি।আমি আমার মেঘদাকেই বিয়ে করেছি।MS=Megh Sharma.Am I right mr. Sharma?(এমএসের দিকে তাকিয়ে)
এবার বাকিদের সাথে সাথে এমএস,নীলা,বর্ষা,বর্ষার মা-বাবা অবাক হয়ে গেলেন।
নীলাঃ তুই জানিস??
মেঘলাঃ আমার পিঠপিছে তোরা এত প্ল্যান করবি আর আমি জানতে পারব না?১৪বছর আগে নাহয় ছোট ছিলাম তাই আকাশদা আর বৃষ্টির নো নো মিসেস নাইয়ার জালে ফেঁসে গেছিলাম কিন্তু এবার না।
নাইয়াদেবীর ঘাম ছুটে গেল।ভাবছে এবার কি বাহানা দেবে।
মেঘলাঃ এত অবাক হচ্ছ কেন?এমএস নামের মাঝেই কতকিছু লুকিয়ে ছিল তা তোমরা বুঝতে পারো নি?বৃষ্টি,আকাশদা আর দাভাই তোমরা তো জানতেই আমি মেঘদাকে ভালোবাসি।তো অন্যকাউকে বিয়ে করব সেটা ভাবলে কি করে?আর আমাদের বিয়ের দিন যে মাম্মাম আমাকে নীলা কিংবা বৃষ্টিকে না এমনকি বর্ষাকেও না,আমাকেই আশীর্বাদ করে নিজের হাতের বালা পড়িয়ে দিলেন তাও তোমাদের সন্দেহ হয় নি?একজন শাশুড়িই তো তার পুত্রবধূকে এভাবে আশীর্বাদ করেন তাইনা?
বর্ষণ বর্ষার দিকে তাকাল।বর্ষা মাথা নত করে ফেলে।
আকাশ,শ্রাবণ আর বর্ষণ এমএসের দিকে তাকিয়ে ১৪বছরি মেঘ আর এই এমএসকে মিলানোর চেষ্টা করছে।বলতে গেলে উপস্থিত সবার দৃষ্টিই এমএসের দিকে।এমএস সবার দৃষ্টি দেখে ঢুক গিলল।
বর্ষণঃ কিন্তু মেঘ এখানে কিভাবে?
মেঘলাঃ সেটা তো নীলাই ভালো বলতে পারবে তাই না নিলু?
নীলা মেঘলার দিকে বিস্মিত নয়নে তাকাল।
নীলাঃ এটাও জানিস?(করুনণ চোখে তাকিয়ে)
বিনিময়ে মেঘলা হাসল।সে হাসিতে অনেক রহস্য লুকিয়ে ছিল।
নীলাঃ (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) সেদিন যখন আমি বৃষ্টি আর আকাশের কথা শুনে ফেলার পর আমি ভাবতে লাগি কি করে আবার মেঘদা আর মেঘুকে এক করা যায়।সেই জন্য আগে মেঘদাকে দেশে আনতে হবে।তাই আমি বর্ষার বাড়ি যাই।আন্টি,আংকেল আর বর্ষা এবাড়িতে ছিল তাই এক্সটা কি দিয়ে বাড়িতে ঢুকে আমি যে ওদের বাড়ির তল্লাশি নিয়েছি সেটা তারা কেউ বুঝে নি।ওবাড়ি থেকে আমি মেঘদার ফোন নং কালেক্ট করি।মেঘদাকে ফোন করে সবটা জানাই।মেঘদাও মেঘু থেকে দুরে থেকেও মেঘুকে ভুলতে পারে নি বরং মেঘুর প্রতি উনার ভালোবাসা আরো বেড়েছি।সবটা জানার পর মেঘদা দেশে আসার প্রস্তুতি নেন।আমার আর আকাশদার বিয়ের পরের দিন আমি হসপিটালে যাই নি মেঘদাকে রিসিভ করতে গেছিলাম।তারপর বাকি প্ল্যান টুকু মেঘদারই আমাকে কিছু জানায় নি।
মেঘলাঃ বাহ একদম সিক্রেট অফিসারের মতো কাজ করেছিস।
নীলা চমকে মেঘলার দিকে তাকাল।ঢোক গিলে
নীলাঃ কিন্তু তুই জানলি কি করে মেঘদার কথা?(প্রসঙ্গ পাল্টাতে)
মেঘলাঃ মেঘলার চোখকে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ না।আমি তোদের ক্যাফেতে দেখা করতে দেখে ফেলি।যখন তোরা দ্বিতীয় আর লাস্ট বারের মতো দেখা করিস।
মেঘঃ অসম্ভব এটা কি করে হতে পারে।আমি যেদিন নীলার সাথে দেখা করি সেদিন তো তুই অফিসেই ছিলি।আমি তোর লোকেশন ট্র্যাক করেছিলাম পুরোটা সময়।
মেঘলাঃ তুমি আমার না তোমার দেওয়া ওই পেন্ডেন্টের লোকেশন ট্র্যাক করেছিলে যা আমি তোমাকে বিভ্রান্ত করার জন্য অফিসেই রেখেছিলাম।
নীলাঃ পেন্ডেন্ট??
মেঘঃ এটাও জানিস(ঢুক গিলে)
মেঘলাঃ ইয়াহ মিস্টার সিক্রেট চিঠিওয়ালা লাভার(মেঘের কানে কানে)
মেঘঃ আর কি কি জানিস?
মেঘলাঃ যতটা তুমি জানো?
আশিসঃ কিন্তু মেঘ এখানে আসার পর নকল পরিচয়ে আমাদের সামনে এলো কেন?সবাইকে বললে কি হতো ওই যে মেঘ?
মেঘলাঃ যদি বলি আপনার জন্য?(তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আশিসের দিকে তাকিয়ে)
আশিসঃ মানে??
মেঘলাঃ একজন মাফিয়া কিংয়ের সামনে কোনো সিক্রেট অফিসার কি নিজের আসল পরিচয়ে আসে?
এটা শুনে উপস্থিত অনেকেই হতভম্ব আবার কেউ কেউ স্বাভাবিক।আশিসবাবুর ঘাম ছুটে গেছে।চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
আকাশঃ মেঘলায়ায়া তুই এসব কি বলছিস।মানছি আম আর বৃষ্টি ভুল না অন্যায় করেছি তাই বলে তুই আমাদের ডেড মাফিয়া কিং বলে অপমান করতে পারিস না।(রেগে)
বৃষ্টিঃ প্লিজ মেঘু ডেডকে নিয়ে কিছু বলিস না(অনুরোধের সুরে)
মেঘলাঃ কিন্তু আমি তো তোদের ডেডকে নিয়ে কিছু বলিই নি।আমি তো মাফিয়া কিং TP কে নিয়ে কথা বলছি যাকে তোমরাই এদিন ধরে খুঁজছ।বাট অন্ধকার রাতটাকে দেখতে পেলেও প্রদীপের নিচেই আঁধার দেখতে পাও নি। আমি কি কিছু ভুল বলছি টিম হামহাম?
বৃষ্টি,আকাশ,শ্রাবণ,নীলা অবাক চোখে একে অপরের দিকে তাকাল।বর্ষা,বর্ষণও একটু অবাক হলো
মেঘলাঃ এত অবাক হওয়ার এখনো কিছু হয় নি।
রিয়াঃ দিভাই তোমরা একের পর কিসব বলে যাচ্ছ।আমি একটার পর একটা ঝটকা খাচ্ছি?
টিয়াঃ ইজ সামহাও আজ ঝাটকা দিবস?
মেঘলাঃ ধরে নে?তবে এখনো অনেক ঝটকা বাকি।
আশিসঃ মেঘলামা তুমি এসব কি বলছ।আমি মাফিয়া কিং টিপি(একটু তুতলিয়ে)
মেঘলাঃ আমি ভুলটা কি বলেছি সেটা বলুন মি.টলেন পাওয়েল।ওরফ টিপি।
নাইয়াঃ এই মেয়ে এই কি তখন থেকে কি বলে যাচ্ছো।
মেঘলাঃ যা সত্য তাই।এন্ড আমার প্রতিটা কথা যে সত্য তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তো আপনিই মিসেস নাইয়া পাওয়েল ওরফ মাফিয়া কুইন এনপি।
কি আর কমু,সবাই একটার পর একটা ঝটকা খাচ্ছে।তাদের ফেস রিয়েকশন আপনারাই কল্পনা করে নিন।
মেঘলাঃ বাকিটা তুমিই বল মেঘদা।
মেঘঃ মেঘলা ঠিক কথাই বলছে।আমি এতদিন যাবৎ লন্ডনে একজন সিক্রেট অফিসার হিসেবে কাজ করেছি।একটা কেসের সুবাদে আমি ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়া কিং টিপি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি।এটাও জানতে পারি উনি এখন বিডিতেই আছেন।তাই আমি বিডি ব্যাক করার কথা ভাবি।কিন্তু রাতে নীলা এসব জানানোর পর আমি বিডি ব্যাক করার ব্যবস্থা করি।নীলাদের বিয়ের পরেরদিন আমি বিডি ব্যাক করি।বর্ষারা কেউ সেটা জানত না।আমি বাড়িতেও যাই না।মেঘলাকে আমার কাছে আনার পরিকল্পনা করি।আমি বিডিতেই সিক্রেট অফিসার হিসেবে জয়েন করি।এবং টিম মাধবকুণ্ডের একজন মেম্বার হই।আমি আগে থেকেই জানতাম বর্ষা,বর্ষণ আর মেঘলা টিম মাধবকুণ্ডের মেম্বার।বর্ষা বলেছিল।আমি হেডকে রিকুয়েষ্ট করি এখনই যেন আমার ব্যাপারে ওদের জানানো না হয়।তাই হয়।
তারপর আমি টিম মাধবকুণ্ড এর মেম্বার হয়ে মেঘলার সাথে যোগাযোগ করি।ওকে জানাই সানফ্লাওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ একটা বেআইনি কাজের সাথে জড়িত।বর্তমানে লন্ডন থেকে আসা মালিক এমএস একটা দুর্নীতি চক্রের মাথা।তাই সানফ্লাওয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে এমএসের বিরুদ্ধে প্রমাণ আনে।
মেঘলা তাই করল।পিএ পোস্টে সানফ্লাওয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে জয়েন করল।আমি তোমাদের সবার উপর গোপনে নজর রাখছিলাম তাই ইজিলি জানতে পারি আকাশ,নীলা,বৃষ্টি আর শ্রাবণ যে টিম হামহামের সিক্রেট অফিসার।
কয়েকদিন পর যখন বর্ষণ আর বর্ষা চট্টগ্রাম গেল টিপির একটা টিমকে ধরতে তখন আমি মেঘলাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করি।এমনিতে তো ও কখনোই এমএসকে বিয়ে করত না।ওকে বিয়ে করে এবাড়িতে আসি টিপি আর এনপির উপর নজর রাখার জন্য।আস্তে আস্তে প্রমাণ কালেক্ট করতে থাকি।ভেবেছিলাম সব প্রমাণ কালেক্ট করার পর এদের মুখোশ খুলব।কিন্তু আকাশ এই নকল রিপোর্টের কথা জানতে পেরে সব খেলা উল্টে দিয়েছে।আমি আগেই জানতে পেরেছিলাম আশিস বাবু আর নাইয়া দেবী যে বর্ষা-শ্রাবণ আর বৃষটি-বর্ষণের বিয়ের দেওয়ার প্ল্যান করছে।তাই আমি বাড়ি গিয়ে মাম্মাম-পাপাই আর বর্ষার সাথে দেখা করি।ওদের শুধু এটুকুই বলি যা হচ্ছেহতে দিতে।কাউকে আমার সম্পর্কে কিছু না জানাতে।সবার সামনে এমন ভাব ধরতে যেন আমাকে তারা চিনে না।বাকিটা পরে জানাব।তাই রিসোর্টে আমাকে দেখে মাম্মাম-পাপাই আর বর্ষ কোনো রিয়েশকন দেখায় নি।
সবাই অনেকটা অবাক বর্ষা,বর্ষণ,মেঘ-মেঘলা,নীলাকাশ আর বৃষ্টি-শ্রাবণের সিক্রেট অফিসার হওয়ার কথা জেনে।এটা তো ওদের মা-বাবাও জানতেন না।আকাশ আর বৃষ্টি অবিশ্বাস্য চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।রিয়েটিয়াও অবাক।ওদের মা খারাপ মহিলা জানত কিন্তু তাই বলে মাফিয়া কুইন।ছেলেমেয়ের ব্যাপারে একবড় একটা কথা জেনে দিগ্বিজয় বাবু অবাক হলেও টিপি আর এনপির ব্যাপারে নির্বিকার।তবে কিছু একটা নিয়ে ভীত।
বর্ষণঃ কিন্তু আংকেল কি করে টিপি বা টলেন পাওয়েল হবেন?আর এই মহিলার সাথে আংকেলের সম্পর্ক।
মেঘলাঃ আমি যদি বলি উনি আমাদের আংকেলই নন।ইনি আকাশদা আর বৃষ্টির বাবা আশিস আংকেল নন?আর এই মহিলা পাপার স্ত্রী না উনার স্ত্রী।
মেয়ের মুখে এতদিন পর পাপা ডাক শুনে দিগ্বিজয় বাবুর চোখ ছলছল করে উঠল।ওদিকে এতবড় একটা সত্যি জেনে সবার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল।বিশেষত আকাশ,বৃষ্টি আর তিয়া-রিয়ার।
টিয়াঃ দ.দিভাই এসব কি বলছ মিসেস নাইয়া পাপার না এই লোকটার স্ত্রী মানে?(কেঁদে কেঁদে)
মেঘলাঃ হ্যাঁ বনু।পাপার সাথে এই মহিলার কোনোদিনও বিয়ে হয় নি।সবার সামনে শুধু স্বামী স্ত্রীর নাটক করার জন্য পাপাকে এরা দুজন ব্ল্যাক মেইল করেন।(দুজনের চোখ মুছিয়ে)
রিয়াঃ আর আমরা??
মেঘলা নিচের দিকে তাকিয়েঃ আ..র তো..ম..রা (একটু থেমে চোখ বন্ধ করে) টিপি আর এনপির মেয়ে।
বর্ষণ,রিয়া টিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
নাইয়াঃ ক..কি ব..লছ?
আশিসঃ মামনি তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে?আম..
মেঘঃ ও জাস্ট সাট আপ।আর একটাও মিথ্যা বলেছেন তো জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব।আকাশ এই লোকটা তোর বাবা নন।সেদিন এক্সিডেন্টে আন্টির সাথে সাথে আংকেলও মারা যান।আর ওটা এক্সিডেন্ট ছিল না টিপির কষা ঘৃণ্য পরিকল্পনা ছিল।একটা সময় টিপি আর আশিস আংকেল ফ্রেন্ড ছিলেন।টিপি যে মাফিয়া তা আংকেল জানতেন না।আংকেলের সমস্ত সম্পত্তির জন্য টিপি আংকেল আর আন্টিকে খুন করে।কিন্তু তারপর জানতে পারে সম্পত্তি আংকেল আন্টির নামে না তোদের দুজনের নামে ছিল।তোদের বয়স ১৮ হলেই তোরা সম্পত্তি পাবি।ততদিন সব সম্পত্তি তোদের গার্ডিয়ানের তত্ত্বাবধানে থাকবে।আর যদি তোদের কিছু হয়ে যায় তাহলে সব সম্পত্তি গভর্নমেন্টের কাছে চলে যাবে।তাই তোদের থেকে মারতে পারেন নি।সম্পত্তির জন্য তোদের বাঁচিয়ে রাখেন।জালিয়াতি করে নিজে আশিস সাহা সাজেন।সব ডকুমেন্টে নিজেকে আশিস সাজান।তোরা তখন খুব ছোট ছিলিস বৃষ্টি তো দুগ্ধ পোষ্য শিশু তাই খুব ইজিলি তোদের কাছেও তোদের বাবা সেজে যান।লন্ডনে জালিয়াতি করে বেশিদিন টিকতে পারবেন না,অনেকেই আসল আশিস সাহাকে চিনত বলে বাংলাদেশে ব্যাক করেন।এখানে আশিস আংকেলকে কেউ চিনত না বিধায় উনার সুবিধা হয়েছে।
সবটা জেনে সবাই স্তব্ধ।আকাশ আর বৃষ্টি ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।এতদিন যাকে বাবা ভেবে এসেছে সে তাদের বাবাই নয়।বরং বাবার খুনি।একজন সিক্রেট অফিসার হয়েও মুখোশের আড়ালের জঘন্য লোকটাকে চিনতে পারল না।
মেঘঃ কিন্তু মেঘলা তুই কি করে উনাদের কথা জানতে পারলি?
মেঘলাঃ তোমার থেকে।
মেঘঃ মানে??
মেঘলাঃ তুমি যে মেঘ শর্মা সেটা জানার পর কি কারণে নিজের পরিচয় লুকিয়ে আছো আমি সেটা জানার চেষ্টা করি।সেখান থেকেই জানতে পারি উনারাই যে টিপি আর এনপি।তখন আমারও সন্দেহ জাগে আশিস আংকেল কিভাবে টিপি?তাই আমি উনাদের উপর নজরদারি শুরু করি।উনাদের আর আশিস আংকেলের ব্যাকগ্রাউন্ড জানার চেষ্টা সেখান থেকেই স্পষ্ট বোঝতে পারি উনি কীভাবে আশিস সাহা সেজে ভালোমানুষির মুখোশ পড়ে ঘুরছেন।উনার বর্তমান লক্ষ্য কি।আর পাপারই বা কেন নাইয়াজিকে বিয়ে করলেন।
মেঘঃ কিন্তু আমার লোকেরা তো তোর উপর নজরদারি করছিল।তুই যে এত কিছু করছিস তারা জানল না কিভাবে?
মেঘলাঃ মেঘলা সেন শর্মা গভীর জলের মাছ।আমি হঠাৎ করে কি করে বসব সেটা নিয়ে আমার দাভাই যে আমার সম্পর্কে সবটাই জানে সেই সন্দিহান তোমার লোকেরা তো চুনুপুটি।
মেঘঃ 😒
মেঘঃ যতটা চালাক শুনেছি তার থেকেও বেশি চালাক+ডেঞ্জারাস।এখন তো সবার হিসেব নিচ্ছে।একলা পেলে এতদিনের সব হিসাব আমার থেকে কড়ায়গণ্ডায় তুলবে(বিড়বিড় করে)
মেঘলাঃ যা ভাবছ তাই হবে(মেঘের কানে কানে)
মেঘ চোখ বড়বড় করে মেঘলার দিকে তাকাল।
আশিসঃ বাস অনেক হয়েছে সত্য মিথ্যার খেলা।আর না।তোমরা যখন সব জেনেই গেছ তখন ভালো মানুষির মুখোশ পড়ে কি লাভ।এখন আমার আসল চেহারাই দেখ।এখন আশিস আর বন্যার(আকাশের মা) মতো তোমরা সবাই মরবে।হ্যাঁ তোমরা সিক্রেট অফিসার হতে পারো কিন্তু আমার কিচ্ছু বিগড়াতে পারবে না।যেমনটা দিগ্বিজয় এতদিন সবটা জেনেও কিচ্ছু করতে পারে নি(ডেবিল হাসি দিয়ে)
মেঘ আর দিগ্বিজয় বাবু ঘাবড়ে গেলেন।এখন কি করবেন?ওরা কিছু করতে গেলেই যে..
তখন মেঘলার ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো।যেটা দেখে মেঘলা বাঁকা হাসল।
মেঘলাঃ হাহ।এত তাড়া কিসের পার্টি তো আবি শুরু হোয়িহে।মিস্টার এন্ড মিসেস পাওয়েল আপনাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
বলে হাত তালি দিয়েঃ নিয়ে এসো।
তারপর সবাই যা দেখল তা কল্পনার অতীত।
(চলবে)