হ-য-ব-র-ল পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
5539

#গল্পের_নাম:|| হ-য-ব-র-ল ||
#লেখনীতে:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_______০৮ (শেষ পর্ব)

লুৎফর রহমানের এক ধমকে রোদ্দুর ঝড়ের বেগে অহির হাত ছেড়ে দিল।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আড়চোখে এক পলক অহির দিকে তাকালো।অহি ধীরপায়ে এগিয়ে এসে বলল,

‘বাবা,তোমার হাতে সিগারেট কেন?আজ টোটাল কয়টা খেলে?’

লুৎফর রহমান ধপ করে নিভে গেলেন।হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে পায়ের জুতার সাহায্যে নিভিয়ে ফেললেন।তিনি শরীরে কেমন দুলুনি অনুভব করছেন।মেয়ের ধমকে নাকি ট্রেন বাঁক নেয়ার কারণে বুঝতে পারছেন না।গলা ঝেরে তিনি বললেন,

‘অহি মা!রোদ্দুর নামক ছেলেটা কি জোরপূর্বক তোমার হাত ধরেছিল?’

‘হাত ধরেছিল বাবা।কিন্তু জোরপূর্বক নয়!’

‘মানে?’

‘মানে হাত ধরার ব্যাপারটা মিউচুয়াল ছিল।আমিও ধরেছিলাম বাবা!’

‘সে কি!কেন?জার্নিতে আধা পরিচিত হওয়া একটা ছেলের হাত কেন ধরবে তুমি?’

অহি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।লুৎফর রহমান আর উসমান আলী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উত্তরের অপেক্ষা করছে।অহি এক পলক রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুরের মুখ রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

অহি স্পষ্ট সুর তুলে বলল,

‘বাবা,আমি আধা পরিচিত এই ছেলের হাতটা সারাজীবনের জন্য ধরতে চাই।’

আর কেউ মুখ খুলল না।কোনো কথা হলো না।ট্রেনের হুইসেল বাদে চারিদিক নিস্তব্ধ!অহি ভয়ে ভয়ে বাবার মুখের দিকে তাকাতে তিনি ফিক করে হেসে দিলেন।পাশ থেকে তার হাসিতে সামিল হলেন উসমান আলী!

অহি আর রোদ্দুর সন্দেহ নিয়ে তাকাতে উসমান আলী হাসতে হাসতে বললেন,

‘আমরা তোমাদের এই প্রস্তাবে ভীষণ খুশি হয়েছি গো মা!জীবনে প্রথমবার হিম একটা ভালো কাজ করলো।আসলে আমি নিজেই তোমার বাবাকে প্রস্তাব করেছিলাম তোমাকে বাড়ির ছোট বৌ করার জন্য।তোমার বাবা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছিল।আশা করি সব দ্বিধা কেটে গেছে।তাই না ভাইসাহেব?’

লুৎফর রহমান হেসে বললেন,

‘জ্বি বেয়াই সাহেব!’

তারপর আর কথা হলো না।লুৎফর রহমান এগিয়ে গিয়ে মুচকি হেসে রোদ্দুরের পিঠ চাপড়ে দিল।উসমান আলীকে ইশারা করে দুজন ১৯ নাম্বার কেবিনে ঢুকলো।

অহি বাবার গমনপথের দিকে চেয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো।ঘুরে দাঁড়িয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুরের মুখোভঙ্গি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।অহি এগিয়ে গিয়ে বলল,

‘এভাবে আর দাঁড়িয়ে থাকবেন?’

‘অজান্তা,ওনারা যা বললো তা কি সত্য?আমি কী জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি?’

রোদ্দুরের বিস্ফারিত দৃষ্টি দেখে অহি মাথা নাড়লো।রোদ্দুরের হাতে এক টান মেরে বলল,

‘এবার ”ছ” বগিতে আমার পাশে বসে স্বপ্নের বাকি অংশটা দেখবেন।চলুন!’

৯.

ট্রেন ছুটে চলেছে অবিরাম গতিতে।একের পর এক স্টেশন পেরুতে পেরুতে ক্লান্ত এখন সে।আর কিছুটা পথ পেরুলেই শেষ স্টেশন।ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা,নতুন অভিজ্ঞতা,ভালো লাগা,খারাপ লাগা,সুখস্মৃতি, দুঃখস্মৃতি সহ অসংখ্য টুকরো টুকরো ঘটনার সাক্ষী হয়ে সবাই শেষ গন্তব্যে নেমে যাবে।এই গন্তব্যে দীর্ঘ সময়ের ট্রেন ভ্রমণের সমাপ্তি ঘটবে।শুরু হবে নতুন গন্তব্য।জীবন থেমে থাকে না।এ যে ফরএভার ট্রেন!এর শেষ গন্তব্য মৃত্যু।মৃত্যুতে এই ছুটে চলা ট্রেনের চিরসমাপ্তি ঘটবে।

ছুটন্ত এই ট্রেনে পরিচয় হওয়া দুজন মানব-মানবী ছুটে চলেছে নিজ গন্তব্যে।রাতের আঁধারে “ছ” বগির জানালার ধারে বসে দুজন নিশ্চুপ অন্ধকার অবলোকন করছে।কাঁধে মাথা রেখে ট্রেন ছুটে চলার শব্দের সাথে একে অপরের নিঃস্তব্ধতাকে গুণে চলেছে যেন।একে অপরের শ্বাস প্রশ্বাস গুণে চলেছে।একে অপরের হাতের ভাঁজে থাকা হাত তারা ছাড়বে না।এই হাত ধরেই তারা ট্রেনের শেষ স্টেশন পেরিয়ে ভালোবাসা নামক নতুন স্টেশনে পা রাখবে।

১০.

#পরিশিষ্ট:

টানা সাতবারের মতো অহিকে ফোন করে পেল না রোদ্দুর।অহি তার ফোন তুলছে না।বেলকনি থেকে রুমে ঢুকে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো সে।এই মেয়ে তাকে ভেবেছে কি?এত অবহেলা কেন করবে?সবসময় নিজের মর্জি মতো কেন চলবে?

সে চেঁচিয়ে তার পিএ ইউনুসকে ডাকলো।অল্প বয়স্ক এক ছেলে তৎক্ষনাৎ রুমে ঢুকে বলল,

‘ইয়েস স্যার!’

‘তোমাদের ম্যাডাম এখন কোথায় থাকতে পারে কোনো আইডিয়া আছে?’

‘স্যার,হসপিটালে থাকার সম্ভাবনা বেশি।’

‘কি!এত রাতে হসপিটালে কেন থাকবে?’

‘ম্যাডামের প্রতি বুধবার রাতে হসপিটালে ডিউটি থাকে।আজ তো বুধবার!ভুলে গেছেন নিশ্চয়ই।তবে বাসাতেও থাকতে পারে।কেন স্যার?আপনি যাবেন?’

রোদ্দুর দেয়ালঘড়ির দিকে তাকালো।দশটার উপরে বাজে।রাত বেশি না হলেও তাকে শাওয়ার নিতে হবে।বাইরে থেকে মাত্র সে ফ্ল্যাটে ফিরেছে।নিজের দিকে এক পলক চেয়ে সে হুকুমের স্বরে বলল,

‘ইউনুস,এক কাজ করো!আমি শাওয়ারে ঢুকবো।মোটামুটি দু ঘন্টার মতো সময় লাগবে।এর মধ্যে তুমি আর ড্রাইভার গিয়ে অহিকে নিয়ে আসবে।আসতে রাজি না হলে ভয় দেখিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে আসবে।’

ইউনুস চমকে বলে উঠলো,

‘স্যার, এত রাতে ম্যাডামকে তুলে নিয়ে আসবো?’

‘এত অবাক কেন হচ্ছো?আমার বউকেই তো তুলে নিয়ে আসতে বলছি।অন্য কেউ তো নয়!বিয়ে করা বউ আমার।যদিও পারিবারিক ভাবে মিডিয়া থেকে লুকিয়ে বিয়ে করেছি তবুও তুমি তো জানো।তাহলে সমস্যা কোথায়?পারবে না?’

রোদ্দুরের বিরক্তি ঝরা কন্ঠে ইউনুস ভড়কে গেল।বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বলল,

‘পারবো স্যার!আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।’

ইউনুস ঝড়ের বেগে রুম ত্যাগ করলো।রোদ্দুর দরজার দিকে এক পলক চেয়ে ঝপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।আর্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার পর থেকে সবসময় তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়।ওদিকে অহি তার ডাক্তারি পেশা নিয়ে ব্যস্ত।বিগত দেড় বছরে তাদের দুজনের কদাচিৎ দেখা হতো।

অথচ রোদ্দুর অহিকে না দেখতে পেয়ে সারাক্ষণ হাঁসফাঁস করতো।চোখের সামনে অহির চেহারা ভাসতো সবসময়।কোনো কাজ মন বসে না,শ্যুটিং এ মনোযোগ নেই!এসব থেকে রক্ষার জন্য আজ সতেরো দিন হলো সে অহিকে বিয়ে করেছে।কিন্তু বিয়ের পর থেকে অহি তাকে আরো বেশি করে ইগনোর করা শুরু করেছে।কাছে বসছে না,দুটো কথা বলছে না, একটু ছুঁয়ে দিচ্ছে না!আবার বিয়ের দুদিন পরেই সে নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেছে।

অহি তার বাবা-মাসহ এখন হসপিটালের কাছাকাছি একটা ফ্ল্যাটে থাকে।রোদ্দুর দুদিন শ্যুটিংয়ের ফাঁকে সে ফ্ল্যাটে গেছে।হসপিটালে গেছে দুদিন।সব জায়গা গিয়ে দেখে অহি লাপাত্তা।অহি যেন তার সাথে লুকোচুরি খেলছে।ধরা দিব দিব করে কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না!

গায়ের ঘর্মাক্ত শার্টটা একবার নাকে শুঁকে রোদ্দুর বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো।ওয়াশরুমে ঢুকে মন কিছুটা হালকা হলো।শাওয়ারের সবকিছু একদম রেডি!

শাওয়ার শেষ করে শুধু টাওয়াল পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো রোদ্দুর।মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে অনেকটা!মাথার ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়া দিয়ে সামনে এগোতে অহিকে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় দেখে চমকে উঠলো।পরক্ষণে নিজের উদাম গায়ের দিকে নজর পড়তে লজ্জায় কুঁকড়ে গেল।একটানে টাওয়াল খুলে গায়ে পেঁচিয়ে বলল,

‘অজান্তা,তুমি কিছু দেখোনি, রাইট?’

অহির ভ্রু কুঁচকে গেল।এই ছেলে গাধাদের কোন স্তরে পড়ে?কোমড় থেকে টাওয়াল খুলে গায়ে পেঁচাচ্ছে?এদিকে নিচে যে পুরাতন ঢাকার সদরঘাট!সে চোখ সরিয়ে চেঁচিয়ে বলল,

‘কিছুু কাপড় অন্তত পড়ুন!নাকি আর্টিস্টদের রাতের বেলা উন্মুক্ত শরীরে থাকতে হয়?’

রোদ্দুর নিচের দিকে তাকিয়ে অস্ফুট শব্দ করলো।’প্রেম প্রেম পাগলামি’ ছবির শুটিংয়ের সময় ভিলেনকে যে গালিটা দিয়েছিল,মনে মনে নিজেকে সেই জঘন্য গালিটা দিল।অতঃপর মিনমিন করে বলল,

‘অজান্তা তুমি যা ভাবছ বিষয়টা তেমন নয়।এই দেখো,আমি আন্ডারওয়্যার পড়েছি।’

অহি চোখ বন্ধ করে ফেলল।একে বলা আর না বলা সমান কথা।তার জাস্ট চিন্তাতে আসে না এমন একটা হাঁদারাম টাইপের ছেলে কি করে সিনেমার হিরো হয়!সে চোখ তুলে দেখলো রোদ্দুর তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকেছে।খুব তাড়াতাড়ি সে ওয়াশরুম থেকে বের হলো এবং অহি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে রোদ্দুর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের সাথে উল্টো করে ফতুয়া পড়েছে।সে ঘাটতে গেল না।হতাশ সুরে বলল,

‘হাত পায়ের বাঁধন খুলুন।ব্যথা পাচ্ছি।’

রোদ্দুরের খেয়ালে এলো অহি চেয়ারে বাঁধা।সে একছুটে এগিয়ে গিয়ে অহির হাত পায়ের বাঁধন খোলার চেষ্টা করলো।পায়ের রশিটা খুব তাড়াতাড়ি খুলতে পারলো। কিন্তু হাতের গিঁট খুলতে পারলো না।অসহায় চোখে অহির দিকে চাইতে বুকের বাঁ পাশে ব্যথা শুরু হলো তার।নিজেকে সামলে মুখটা নিচু করে দাঁত দিয়ে গিঁট খোলা শুরু করল।অহি মুখ ঘুরিয়ে বলল,

‘গিঁট খুলতে বলেছি।হাতে চুমু খাওয়ার পারমিশন দেইনি!’

রোদ্দুরের ছটফটানি ভাব আরো বেড়ে গেল।গিঁট খুলতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে সে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে গিঁট দিয়ে ফেলল।অপরাধীর মতো মুখটা কাঁচুমাচু করে অহির দিকে তাকাল।অহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘সিনেমার নায়িকাদের যখন ভিলেন আটকে রাখে তখন তো দুই সেকেন্ডে সব বাঁধন খুলে তাকে রক্ষা করেন।আমার বেলা সব অগোছালো কেন?’

রোদ্দুর রশি খুলতে সক্ষম হলো না।দ্রুত উঠে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে কেচি নিয়ে এলো।রশি কেটে অহিকে মুক্ত করে বলল,

‘ইয়ে মানে ডক্টর অজান্তা অহি।ভেরি স্যরি।আমার এসিস্ট্যান্টকে শুধু বলেছিলাম,শাওয়ার শেষ করে যেন আমি অজান্তাকে দেখতে পাই।আসতে না চাইলে প্রয়োজনে তুলে আনবে।আমি ধারণা করিনি তারা আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।সত্যি সত্যি তোমায় জোর করে তুলে নিয়ে আসবে।খুবই দুঃখীত।’

‘যদিও না আসতে না চাওয়ার অভিনয় করেছি,তবুও আমি স্বইচ্ছায় না এলে কারো ক্ষমতা ছিল না নিয়ে আসার!তা এই মাঝরাতে আমায় তুলে নিয়ে আসার কারণ কি?কি করবেন আমাকে দিয়ে?’

রোদ্দুরের বুকের ভেতর ১০ নাম্বার বিপদ সংকেত দেখা দিল।হার্ট বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।ডান হাতটা বুকের বাঁ পাশে চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলল,

‘ও মাই গড!এতরাতে অজান্তা আর আমি একঘরে!কি হবে এবার?কি করবো ওকে দিয়ে?’

অহির কপালে ফুটে উঠা সূক্ষ্ম ভাঁজের দিকে চোখ পড়তে সে ফ্যাকাসে ভাবে হেসে বলল,

‘হে হে হে!ইয়ে মানে কফি!তোমার হাতের এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য তুলে নিয়ে এসেছি।’

অহি একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।রোদ্দুরের মিথ্যা গুলো এতো খাপছাড়া হয় যে বুঝতে দু সেকেন্ড সময় লাগে না।সে চেয়ার ছেড়ে উঠে রোদ্দুরের রুমের সর্বত্র নজর বুলাল।এই ফ্ল্যাটে সে এর আগে আরো কয়েক বার এসেছে।দিনে, রাতে নয়!রোদ্দুর আর্টিস্ট হওয়ার পর থেকে আলাদা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে।এখানে ডিরেক্টর, স্টাফের লোকজন প্রায়ই নানারকম চুক্তি নামা নিয়ে আসে।তার কর্মজীবনের সবকিছু এই ফ্ল্যাটে।সময়, সুযোগ পেলেই রোদ্দুর তাদের নিজস্ব ফ্ল্যাটে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে থাকে।

পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরতে অহির ঘোর কাটে।ঘোর কাটতে পেটের কাছে রোদ্দুরের কম্পমান হাতদুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করল।কিন্তু রোদ্দুর ছাড়লো না।অহি রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো,

‘আপনি আমায় আর আগের মতো ভালোবাসেন না।’

‘কে বলেছে ভালোবাসি না?এই দেখো অজান্তা।তোমায় ছাড়া আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না।দম বন্ধ হয়ে আসে।সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগে।একমাত্র তোমার কাছে এলে বুকে সুখের ব্যথা শুরু হয়,নিজেকে বড্ড বেশি অগোছালো মনে হয়।একমাত্র তোমায় ছুঁয়ে দিলে অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যাই,অজানা ভয় আর লজ্জায় কুঁকড়ে যাই।আমার সব অনুভূতি যে অজান্তা অহি নামক মেয়েটির জন্য।’

চোখের পানিতে অহির গাল ভিজে উঠলো।রোদ্দুর তাকে ঘুরিয়ে স্বযত্নে গাল মুছে দিল।বাইরে থেকে বন্ধ করা দরজার দিকে এক পলক চেয়ে অহির গায়ের সাদা এপ্রোণ খুলে ফেলল।ওড়নায় হাত দিতেই অহি খপ করে হাত ধরে ফেলল।চমকে বলে উঠলো,

‘কি করছেন?’

‘তোমার গরম লেগেছে নিশ্চয়ই।সেজন্য সরিয়ে ফেলছি!’

‘এত ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম কেন লাগবে?তাছাড়া এসি চলছে।আমার তো শীতে জবুথবু অবস্থা।’

রোদ্দুর কেঁদে দিয়েছে প্রায়!এই মেয়েকে আর কি করে বুঝাবে সে!এর বেশি বুঝানো তার পক্ষে সম্ভব নয়!সে অসহায় মুখ করে ঘুরে দাঁড়াতে অহি একটানে ফের নিজের দিকে ঘুরাল।মুচকি হেসে উঁচু হয়ে রোদ্দুরের মুখের সর্বত্র এলোপাথাড়ি চুমু খেল!

মাঝরাতে অহিকে বুকে জড়িয়ে রোদ্দুর তার পিএ ইউনুসকে লম্বা একটা মেসেজ লিখলো।যার সারমর্ম এই যে,সে আর সিনেমা জগতে কাজ করবে না।শখের বশে তিনটে ছবি করেছে।তার চতুর্থ ছবি “হ-য-ব-র-ল” এর টিজার বের হয়েছে।ইতোমধ্যে সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।অনেক টাকাও ইনকাম করেছে।আর মুভি টুভিতে কাজ করবে না।এখন সে বউ নিয়ে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াবে।ঘোরাঘুরি শেষ হলে ফুড ব্লগিং দিয়ে শুরু করে বাবার বিজনেসে হাত দিবে।তার জীবনের এখন একটাই লক্ষ্য।সেটা হলো সুযোগ পেলেই বউয়ের আঁচল ধরে পেছন পেছন ঘুরঘুর করা আর ডাক্তার বউয়ের কাছে নানাবিধ রোগের চিকিৎসা নেয়া!অজান্তা অহি আর তার পরিবারকে ঘিরে বেড়ে উঠা তার একান্ত ছোট্ট পৃথিবী ভয়ানক সুন্দর যে!এর বাইরে তার কিছু চাই না!চাই না!

*সমাপ্ত*