#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋
#পর্ব_০৪
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
মৌ তার বাড়িতে এসে সোফায় বসে রাগে ফুসছে।অয়ন সাহেব এসে মৌয়ের পাশে বসলো।মৌয়ের মাথায় হাত রেখে বললো,
“কি হয়েছে মিথি মা?”
মৌ অয়ন সাহেবের দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“কিছু নাহ্ বাবা।”
“কিছু একটা তো হয়েছে তোর!”
“নাহ্ বাবা কিছুই হয়নি।”
মিতা বেগম এসে বসে বললেন,
“আরে দেখো আজকে গিয়ে হয়তো আবার কারো সাথে ঝামেলা করেছে।”
“দেখছো বাবা….আম্মু আমার সাথে কেমন করে।”
“তা তোকে কি আদর দিয়ে দিয়ে বাদর বানাবো।”
মৌ কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে বসে রইলো।
“তুমি কি জানো নাকি মিথির কি হয়েছে?”
মিতা বেগম মৃদু হেসে বললেন,
“তোমার মেয়ে চশমা পড়ে না চলে রাস্তাঘাটে মানুষের গাড়ির উপর গিয়ে পড়ে।”
অয়ন সাহেব মৌয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাড়ির গাড়ি থাকতে কেনো তুই রাস্তায় স্কুটি,সিএনজি-তে করে চলবি?”
মৌ চশমাটা চোখ থেকে খুলে টেবিলে রেখে বললো,
“বাবা আমি শপিং করতে লাইক করি।এটা বলতে পারো আমার হবি।তবে কিন্তু আমি সাধারণ জীবনযাপন করতেই পছন্দ করি।এইসব গাড়ি করে চলা আমার ঠিক পোষায় নাহ্।স্কুটি,সিএনজি-তে ঘুরে যেই মজা আছে সেটা গাড়িতে পাওয়া যায় নাহ্।”
কথাগুলো বলে চশমাটা হাতে নিয়ে মৌ তার রুমের দিকে চলে গেলো।মৌ যাওয়ার পরে অয়ন সাহেব মৃদু হেসে বললেন,
“আমার মেয়ে একটু পাগলি হলেও অহংকারী নাহ্।”
_🌻_
আরশ গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমিন সাহেব একটু আগেই ল্যান্ড করেছেন।আরশ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাবি ঘোরাচ্ছে।আমিন সাহেব এসে আরশের কাঁধে হাত দিলো।আরশ পিছনে ফিরে আমিন সাহেবকে দেখে জড়িয়ে চললো।তারপরে গাড়িতে উঠে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।
আরশ বাড়িতে এসে দেখে আমেনা বেগম সোফায় বসে আছে।আরশ গিয়ে তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।
“দিদুন মাথাটা খুব ব্যথা করছে একটু হাত বুলিয়ে দেও তো।”
“হয় এই কামের লিগ্গা তুমি আমারেই পাও।”
আরশ হাসি দিয়ে বললো,
“হয় তোমারে ছাড়া আর কারে পামু!”
আরশের কথায় আমেনা বেগমও হেসে দিলো।
—🌿—
রাইতা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজছে আর বলছেন,
“ওফ!কালকে হানিমুনে যাবো।আমি যে কতটা এক্সাইটেড।”
রাজ বিরক্তি নিয়ে মোবাইল টিপায় মন দিলো।
“তোমার কপালে যে কি আছে তা তো তুমি জানোই না রাই বেবি।”
রাজ মনে মনে কথাটা বলে হাসি দিলো।রাইতা এসে রাজের পাশে বসতেই রাজ রাইতার দিকে তাকালো
“কেমন লাগছে আমাকে রাজ?”
“তোমাকে কি আবার অসুন্দর লাগতে পারে!”
রাজ কথাটা বলে হাসি দিয়ে মোবাইল টিপায় মন দিলো।রাইতার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কারণ রাজ তার দিকে ভালোভাবে না তাকিয়ে কথাটা বলেছে।রাইতা ভাবতে লাগলো।আরশকে যখন এই কথা জিজ্ঞেস করতো আরশ তখন তার রূপের কত প্রশংসা করতো।রাইতা পরক্ষণে ভাবলো।
“আমি কেনো ওই ছেলেকে নিয়ে ভাববো!আমার রাজই ভালো।”
রাইতা মনে মনে কথাটা বলে রাজের কাঁধে মাথা রাখলো।রাজ একবার রাইতার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
/🦋\
মিতা বেগম এসে দেখে মৌ মুখে প্যাক লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।মিতা বেগম এসে মৌয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“মৌ এই সন্ধ্যাবেলা কেউ এইসব মুখে মাখে নাকি?”
মৌ চোখ বন্ধ রেখেই বললো,
“আম্মু কালকে পিকনিকে যাবো।কত হ্যান্ডসাম ছেলে আসবে।আমাকে যদি সুন্দর না লাগে তাহলে কি চলবে!”
মিতা বেগম হাসি দিয়ে আস্তে করে মৌয়ের কান টেনে বললো,
“তুই নাকি বিয়ে করবি নাহ্।আর আবার ছেলেদের কথা বলিস।”
“আউ লাগছে তো।আর শোনো ওটা তো আমি কথার কথা বলি।দেখো আম্মু আমি তো অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।আমার কিন্তু বিয়ের বয়স হয়েছে।”
কথাটা বলে মৌ মিটিমিটি হাসছে।মিতা বেগম মৃদু হেসে মৌয়ের কান ছেড়ে দিয়ে বললো,
“বিয়ের পরে আমাকে আর তোর বাবাকে রেখে থাকতে পারবি?”
মিতা বেগমের কথায় মৌ চোখ খুলে ফেললো।
“আম্মু তুমি আবার এগুলো বলছো কেনো?আমি কখনোই বিয়ে করবো নাহ্।আমি জাস্ট এইসব মজা করে বলেছি।”
মৌ চোখে চশমাটা পড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
মিতা বেগম মুচকি হেসে বললেন,
“অনেকেই এমন বলে।তবে বিয়ে তো একদিন করাই লাগে।”
/🌼/
সকালবেলা আয়াতের ডাকে ঘুম ভাঙলো আরশের।
আরশ চোখ ডলতে ডলতে বললো,
“আমি বুঝি না।আমার ঘুম ভাঙাতে কি তোর খুব ভালো লাগে।”
“ভাইয়া আজকে যে পিকনিকে যাবো তোর মনে আছে?”
আরশ ঠিকভাবে বসে বললো,
“আরে আমি তো ব্যাগপত্রও গুছাইনি।আমি যাবো না।”
“আম্মু সব গুছিয়ে রেখেছে।আপনি দয়া করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে এসে আমাদের উদ্ধার করেন।”
আয়াত মুখ বেঁকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
“শাঁকচুন্নি কোথাকার!”
আরশ ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো।নিচে নেমে গাড়িতে এসে বসলো।
আরশ ড্রাইভিং সিটের গ্লাস খুলে আমিন সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“বাবা আমি ড্রাইভ করতেছি।”
“গাড়ি তো আরেকটাও নিতে হবে।”
“কেনো বাবা আমাদের ফুল ফ্যামেলি তো এই গাড়িতেই বসতে পারবে।”
“আরে আমি আর তোর মা সামনের গাড়িতে উঠবো।কারণ সামনে আমার বন্ধু শাহেদের বাড়ি।তুই তো জানিস ওদের অবস্থা একটু খারাপ।তাই আমি ভেবেছি ওরাও আমাদের সাথে যাবে।”
“ওকে সমস্যা নেই তো।তোমরা এই গাড়িতে উঠো।ওরা না হয় সামনের গাড়িতে উঠে পড়বে।”
“নাহ্।আমি আর তোর মা সামনের গাড়িতে উঠবো।তোরা দুই ভাই-বোন তোদের দিদুনকে নিয়ে যা।সামনে থেকে শাহেদের মেয়ে আর ছেলে উঠবে নে তোদের গাড়িতে।”
আয়াত বললো,
“আর আঙ্কেল আন্টি কোথায় উঠবে?”
নিপা বেগম বললো,
“আমাদের গাড়িতে।”
“আরে ভাইয়া বুঝছিস নাহ্।তারা বন্ধু-বান্ধবরা একটু আলাদা আড্ডা দিবে।”
আয়াতের কথায় আরশ মুচকি হাসলো।তারপরে গাড়ি স্টার্ট করলো।আমিন সাহেবের গাড়ি যেখানে থেমেছে সেখানে আরশও গাড়ি থামালো।গাড়িতে একটা মেয়ে আর ছেলে উঠে বসলো।ছেলেটাকে আরশ চিনে।কারণ ছেলেটা শাহেদ সাহেবের ছোট ছেলে আর সে শাহেদ সাহেবের সাথে তাদের বাড়িতে গিয়েছে।তবে মেয়েটাকে দেখে আরশ বেশ অবাক হলো।কারণ এই মেয়েটা হলো তার নতুন পি.এ।তবে আরশ তার পোস্টিং পাল্টে দিয়েছে।
আরশ আবার গাড়ি চালানো শুরু করলো।তার পাশে বসে আছে রাত।মানে শাহেদ সাহেবের ছেলে।
“রাত তোর দিন কাল কেমন চলছে?”
“এই তো চলছে কোনো রকম।”
রাত আরশের সাথে কথা বললেও তার চোখ লুকিং গ্লাসের দিকে।লুকিং গ্লাস দিয়ে আয়াতকে ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে।রাত আয়াতকে অনেক পছন্দ করে।তবে আয়াত কখনো এইসবে সায় দেয় নাহ্।
আয়াত রিয়াকে বললো,
“নতুন চাকরি কেমন লাগছে তোমার রিয়া আপু?”
“ভালোই তো লাগছে।তবে তোমার ভাইয়ার পি.এ হতে পারলে আরও ভালো লাগতো।”
রিয়ার কথা শুনে আরশ এক ঝলক পিছনে তাকালো।কোনো কথা না বলে গাড়ি চালানোতে মন দিলো।
/✨/
“ড্রাইভার আঙ্কেল এসিটা কমাও তো।এমনি শীত পড়েছে।আর তুমি এসি বাড়িয়ে রেখেছো।”
মৌ একটা চাদর প্যাঁচিয়ে গুটি দিয়ে বসে আছে।
“মৌ এখনও তেমন ঠান্ডা পড়েনি।তোর গায়ে তো একটুও মাংস নেই তাই তোর এতো শীত লাগে।”
মিতা বেগমের কথায় মৌ ভ্রু কুচকে তাকালো,
“সবসময় আমাকে অপমান করা বন্ধ করো মিতাবতী।”
মৌয়ের মুখে এই নাম শুনে অয়ন সাহেব হালকা কেশে উঠলেন।অয়ন সাহেবের এই কান্ডে মৌ আর মিতা বেগম হেসে দিলো।
“বাবা তুমি যা বলে ডাকো আমিও কিন্তু তাই বলেই ডাকলাম।”
অয়ন সাহেব হাসি দিয়ে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“রিজু সামনের রেস্তোরাঁয় গাড়িটা থামাও।ওখানে আমার সব বন্ধুরা আছে।”
/🥀/
আয়াত আরশকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“ভাইয়া বাবা কল করেছিলো।সামনে একটা রেস্তোরাঁ আছে।ওখানে গাড়ি থামাতে বললো।”
“ওকে।”
আরশ রেস্তোরাঁর সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।রেস্তরাঁর ভিতরে গিয়ে দেখলো অনেক ভিড়।আমিন সাহেবের অনেক বন্ধু প্লাস তাদের ফ্যামিলি এসে হাজির হয়েছে।তবে আরশের চোখ আটকে গেলো একটা টেবিলে।যেখানে মৌ বসে বসে জুস খাচ্ছে।
“এই মেয়ে এখানেও চলে এসেছে।যাক সমস্যা নেই। শিশপ্রিয়াকে ক্ষ্যাপাতে ভালোই লাগে।”
আরশ মুচকি হেসে মৌয়ের সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলো।মৌ চশমা ঠিক করে সামনে তাকিয়ে আরশকে দেখে বিশুম খেলো।মিতা বেগম তাড়াতাড়ি গিয়ে মৌয়ের পিঠ ডোলে তাকে স্বাভাবিক করলো।
“কি রে মৌ হঠাৎ এমন হলো কেনো?”
আরশ মিতা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আন্টি আপনার মেয়ে মেইবি ভয় পেয়ে গেছে।”
মিতা বেগম আরশকে দেখে বললো,
“তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম নাহ্ বাবা।”
তুর এসে মিতা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“আন্টি ও হলো আমিন আঙ্কেলের ছেলে আরশ।”
“ওহ্ আচ্ছা।আমিন ভাইকে তো ভালো করেই চিনি।কারণ আমিন ভাই আর নিপা ভাবি আমাদের বাড়িতে এসেছিলো।কিন্তু বাবা তোমাকে কখনো দেখিনি।”
মৌ পাশে থেকে বললো,
“এমন একটা উল্লুকে না চেনাই ভালো আম্মু।”
“চুপ কর তুই।আরশ কতো ভালো ছেলে তুই জানিস নাকি!”
“হ্যাঁ উনি যে ভালো এটা তো উনার গায়ে লেখা আছে তাই-না!”
আরশ পাশে থেকে বললো,
“গায়ে কেনো লেখা থাকবে!ব্যবহারে তো প্রমাণ পাওয়া যায় তাই-না।”
“এই মি. কি জানি নাম!ইয়েস আরশ সাহেব একদম আমাকে জ্ঞান দিবেন নাহ্।”
“আপনি আপনার মুখটা বন্ধ রাখলে আমিও জ্ঞান দিবো নাহ্।”
মৌ কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।মিতা বেগম অবাক হয়ে এতোক্ষণ সবটা শুনছিলো।মৌকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তুই কি আরশকে চিনিস?”
“চিনবো না কেনো?খুব ভালো করেই চিনি।”
মৌ দাঁতে দাঁত চেপে বললো।মৌয়ের কথায় কান না দিয়ে মিতা বেগম বললো,
“বাবা আমি শুনেছিলাম তোমার বিয়ে হয়েছে।তোমার বউ কি আসেনি?”
মিতা বেগমের কথায় আরশের হাসি মুখ নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো।
#চলবে…………………….
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]