#বৃষ্টিবিলাস
৭.
#writer_Mousumi_Akter
গভীর রাত, নিশ্চুপ প্রকৃতির মাঝে কোথাও কেউ নেই শুধু ঝুম ঝুম বৃষ্টির শব্দ কানে ভেষে আসছে রোজার।অচেনা জায়গা, অচেনা মানুষ, সেই অচেনা মানুষকে নিয়ে শুরু হয়েছে ভীষণ অচেনা অজানা ভয়ানক অনুভূতি। এই অনুভূতির সাথে এই প্রথমবার পরিচিত রোজা।দুটো অজানা অনুভূতির সাথে পরিচিত রোজা এক প্রথম ভালোলাগার অনুভূতি, দুই তার সম্পূর্ণ বিপরিতমুখী অনুভূতি যে অনুভূতিতে বিষাদের যন্ত্রণা হচ্ছে।রোজার ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে শুভ কেনো তাকে ভালবাসবে না।কি অপরাধ তার,শুধু ভাললাগাতেই সীমাবদ্ধ কেনো থাকবে।কিন্তু চাইলেই কি আর সব প্রশ্ন করা যায়।এত অধিকার তো তার নেই।এই যাত্রা শেষ হলে হয়তো তাদের আর দেখাই হবে না।এই একদিনের পরিচয় কি আর শুভ মনে রাখবে।নিজের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছে রোজার। এটা একেবারেই যা তা একটা ব্যাপার হলো না।বাসে তার পাশে একটা ছেলে বসেছে মাত্র কয়েকঘন্টার পরিচয় ছেলেটা কখনো তার ভীষণ কেয়ার করেছে তো কখনো কয়েক টা গা জ্বলানো কথা বলেছে।এতে ছেলেটাকে নিয়ে ভাবা শুরু করেছে।সেই ভাবনা মনের মাঝে গভীর ভাবে জায়গা করে নিয়ে মন কে পোড়াচ্ছে। হুট করে কারো মায়ায় আটকে যাওয়াকি কোনো ভালো কথা।চেনা নেই জানা নেই বিবাহিত নাকি অবিবাহিত তার ও ঠিক নেই। হঠাত রোজা ভীষণ চুপ হয়ে গেলো।কোনো কথা বলার শক্তি খুজে পাচ্ছে না।একদম চুপ হয়ে বসে আছে।মন খারাপের রেখা চোখে মুখে স্পষ্ট হয়ে আছে।বাইরে খয়েরী ফ্রেমের চশমা, কালো জিন্স,কালো শার্ট পরে বুকে হাত বেঁধে বৃষ্টি উপভোগ করছে শুভ।হঠাত শুভর খেয়াল হলো পৃথিবীর সব মায়া রোজার মুখে ভার করেছে।কিন্তু মন খারাপ কেনো ওর।শুভর ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে তোমার মন খারাপ কেনো?তুমিও কি আমার মতোই নিঃসঙ্গতায় পুড়ছো,যেমন আমি পুড়ছি তোমার জন্য।তোমার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে আদর করলে কি মেডিসিন এর মতো কাজ করবে, তোমার মন কি ভালো হয়ে যাবে।দেখেছো কত খারাপ হয়ে গেছি আমি।তোমাকে দেখেই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে সব কিছু।এই শান্ত শিষ্ট ছেলেটা কিনা কপালে ঠোঁটে ছোঁয়ানোর কথা ভাবছে।ভালোবাসা কি এতটায় নির্লজ্জ করে ফেলে মানুষকে।
মিস ইরহাম আহমেদ রোজা আমার ভীষণ বলতে ইচ্ছা করছে, তুমি খুব সুন্দর, শুধু সুন্দর নও ভয়ংকর রকমের সুন্দর।পৃথিবীর সব মায়া তোমার চোখ আছে। এত সুন্দর,এত মায়াবী কেনো হতে গেলে বলোতো।তোমাকে যে দেখবে সেই তোমার রুপে মুগ্ধ হবে এটা ভেবেই এক অসহ্যকর যন্ত্রণা হচ্ছে আমার।ঠিক এই কারণেই বোধহয় তোমার একটু কম সুন্দর হওয়া উচিত ছিলো।এই বৃষ্টি তারাও তোমাকে ছুঁয়ে দিলে আমার হিংসে হচ্ছে।আমি ভীষণ হিংসুটে হয়ে গিয়েছি,সব তোমার ই কারণ।রোজার মুড চেঞ্জ করতেই কিছুক্ষণ পরে ফিরে এলো শুভ।শুভর চেয়ারে রাজ ব্যাগপত্র রেখেছে। হয় তাকে অন্য চেয়ারে বসতে হবে না হলে রোজার পাশে বসতে হবে।বেশ বিব্রত বোধ হচ্ছে শুভর।রোজা যদি মাইন্ড করে উঠে চলে যায় বা তাকে সস্তা ভেবে গুরুত্ব না দেয়।অন্য দিকে রোজা ভাবছে শুভ তার পাশেই বসুক।দুজন মানুষের এই চাওয়া কথা সব ই মনে মনেই আদান প্রদান হচ্ছিলো।
“রাজ শুভর দিকে তাকালো ভ্রু নাচিয়ে বললো,কি হলো বসবি না?”
শুভ ভাবছে রোজা রাগিয়ে দিলেই ওর মন খারাপ ভালো হয়ে যাবে।
“শুভ চোয়াল শক্ত করে বললো,ব্যাগ পত্র আউট কর ফটাফট।আমি ওখানে বসবো।”
“রোজার পাশের সিট তো খালি আছে ওখানে বস।”
“আমি অচেনা মেয়েদের পাশে বসি না।”
“রোজা ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো,শুভর দিকে ক্ষীপ্ত নয়নে তাকালো আর বললো বেশ সন্দিহান ভাবে,আমরা অপরিচিত?”
“তো। শুভর কথার ভাব এমন যেনো মাত্রই দেখা হলো।”
এতটা সময় কাটাবার পরেও একটা মানুষ কিভাবে রং পাল্টাতে পারে সেটাই ভাবছে রোজা।বলে দিলো কিনা অপরিচিত।মনে মনে খানিক টা ঝগড়া করে বললো,
“এটাকে অপরিচিত বলে?”
“শুভ কপাল এমন ভাবে কুচকালো কয়েক টা ভাজ পড়ে গেলো।অতঃপর বললো,এমন ভাবে বলছেন আপনি আর আমি দীর্ঘদিন সংসার করেছি।আমাদের ঘরে বাচ্চা কাচ্চা ও আছে।”
“রোজা আরো রেগে গিয়ে বললো,আমি সেটা বলেছি আপনাকে মিষ্টার অশুভ।”
“তাহলে পরিচিত হলাম কিভাবে?”
“এইযে এতটা রাস্তা একসাথে এলাম,কত কথা বললাম এটাকেও তো এক প্রকার পরিচিত বলে তাইনা মিষ্টার অশুভ সাহেব।”
“আমি এত সহজে কাউকে পরিচিত মনে করিনা।”
“রাজ বললো,ঝগড়া করিস না শুভ।বাচ্চা মেয়ে হুদাই ঝগড়া করছিস কেনো?তুই এখানে আয় আমি রোজার পাশে গিয়ে বসি।ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগবে আমার।এই সুযোগে রোজার পাশে বসার সুযোগ টা হয়ে গেলো আমার।”
“রোজা আবার অভিমানী সুরে বললো,না রাজ ভাইয়া আমি আর আপনাদের সাথে এক মিনিট ও থাকবো না?কিভাবে অপমান করলো আমাকে।কেউ আমাকে অপমান করলে আমার ভীষণ রাগ হয়।”
“শুভ এবার উপরের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,ওই রাগ টায় আছে শুধু।”
“তাতে আপনার কোনো সমস্যা আছে বুঝি।”
রাজ উঠে এলো রোজার পাশে বসবে বলে।রোজা উঠে দাঁড়ালো অন্য টেবিলে বসবে বলে।রোজা উঠে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই শুভ রোজার হাত চেপে ধরে রোজাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো।
রাজ বললো সেই তো বসলি মেয়েটাকে রাগালি কেনো।আরে রোজা শোনো শুভ এমনি তোমাকে রাগাচ্ছে।ও তো কোনো মেয়ের সাথে এমন করে না।এই প্রথম দেখছি কোনো মেয়ের সাথে অদ্ভুত ব্যবহার করছে।
“রোজা উঠে দাঁড়িয়ে শুভ কে বললো,সরুন আমি বেরোবো।”
“কোথায় যাবেন মিস ইরহাম আহমেদ রোজা?”
“বাসে যাচ্ছি।”
“এই এলাকা চিনেন?”
“চেনার নিড নেই।”
“দেখেছেন কেমন জঙ্গল। বাস কি এমনি এমনি নষ্ট হয়েছে এসব ই জ্বী*নের কাজ।এই রেস্টুরেন্টে ও রাতের বেল ভূ*তে রান্না করে।দেখছেন কেমন গম্ভীর থমথমে পরিবেশ।এটা ভৌ*তিক এরিয়া।পুরাটা জায়গা জুড়ে ভূ*তের বসবাস।যেতে চাইলে আটকাবো না।যান বেরোন সামনে সাদা থান পরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আপনার সেই বুইড়া।”
রাজ গাল টিপে হেসে যাচ্ছে।এক্ষুনি হাসতে হাসতে ম*রে যেতে মন চাইছে রাজের।
–রোজা আতকে উঠে শুভর গা ঘেষে বসলো।শুভ এই মিষ্টি মুহুর্তের জন্যই কি এত কিছু করলো।রোজাকে তার সাথে আষ্টে পিষ্টে থাকতে বাধ্য করতেই তার এত আয়োজন।সবার আড়ালে শুভর দু-ঠোঁট হাসছে।এক নিরব হাসি, যে হাসির কারণ শুধুই রোজা তার সংস্পর্শে আসা।
টেবিলের উপর ফোনের ভাইব্রেশণ ভুম ভুম করে উঠলো।ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো অহনা।
শুভ ফোন নেওয়ার আগেই রাজ হেসে দিয়ে ফোন টা রিসিভ করলো।আর সুন্দর করে ডাকলো,
“অহনা।”
“কে?”
“জামাই।”
“হোয়াট।”
“ইয়েস।”
“কার জামাই”
“তোমার। ”
“এই কে আপনি বলুন তো।রোজা কোথায়?”
“আগে আমার খোজ করুণ দেন রোজা।”
“কোন মেন্টালের ফোন থেকে রোজা ফোন করেছিলো কে জানে।”
“সেই মেন্টাল টা আমার ফ্রেন্ড শুভ।”
“শুভ গম্ভীর ভাবে রাজের দিকে তাকিয়ে বললো, দে ফোন দে।”
“রাজ বললো,দেখ তোকে মেন্টাল বলছে।”
“কে? ”
“অহনা।”
রোজ লাফিয়ে উঠে বললো,অহনা ফোন করেছে। রাজ রোজার হাতে ফোনটা দিয়ে দিলো।
‘এই রোজা তোর সাথে কে রে।কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলছে।’
‘রাজ ভাইয়া এমন ই ফানি মানুষ। তবে মানুষ টা খুব ই ভালো কিন্তু।’
‘বাহ!বেশ ভাব জমিয়েছিস দেখছি।ফোন টা কার রাজের।’
‘না অশুভ ভাইয়ার।’
‘অশুভ টা কে?’
‘যার ফোন তার নাম।’
‘হুপ এমন নাম কারো হয় নাকি।’
দুজনে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে ফোন কেটে রোজা দেখলো অহনার নাম্বার সেভ করা।
‘রোজা শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,আপনি ওর নাম সেভ করেছেন।’
‘হুঁ।’
‘বাট কিউ।’
‘আপনার লাগতে পারে তাই।’
মানুষ টা বেশ দায়িত্বশীল ভেবেই ভালো লাগলো রোজার।শুভ রোজার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো,
‘বাই দ্যা ওয়ে আমাকে নেক্সট আর ভাইয়া বলবেন না।’
‘তো কি বলবো।’
‘আমার নাম বলবেন।’
‘ভাইয়া তে সমস্যা কি?..’
‘আপনি কি আমার বোন।বোনের প্রয়োজন হলে বাবা কে বলবো বোন দত্তক নিতে।রাস্তা ঘাটে যাকে তাকে বোন বানানো পছন্দ করিনা ক্লিয়ার।’
‘কি হলো এভাবে হাত চুলকাচ্ছেন কেনো?’
ভীষণ ভাবে দুইহাত চুলকাচ্ছে রোজার।
‘রাজ বললো,শুভর সাথে হাত মিলিয়ে কি চুলকানি হলো।’
‘শুভ বললো,আপনার হাতে কি কচুর রস লেগেছিলো।’
‘হ্যাঁ’
‘একটা কাজ ঠিক ভাবে করতে পারেন না।উঠে আসুন।’
বেসিং এর সামনে গিয়ে রোজার হাতে সাবান ঘষে দিচ্ছে শুভ।রোজা তাকিয়ে আছে শুভর দিকে।কি সুন্দর তার কেয়ারিং যেমন টা নিজের কেউ করে।কি সুন্দর সেই মুহুর্ত। রোজা অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে।ওই ভ্রুর কাটা দাগ টা কিসের।এমন ভাবেই ছোট বেলা কারো ভ্রু কেটে দিয়েছিলো রোজা।আচ্ছা সে ও কি এই শুভর মতোই দেখতে হয়েছে।এতদিন বিয়ে শাদী করে ফেলেছে নিশ্চয়ই। মনে হয় রোজ আয়না দেখে আর ভাবে এই দাগ টা আমার জন্যই ছিলো।
কিছুক্ষণ পরে ওয়েটার চিকের ফ্রাই,নুডুলস , টমেটো সস, ব্লাক কফি দিয়ে গেলো।রোজা চিকেন ফ্রাই এর লেগ পিস দুই হাত দিয়ে ধরে খাচ্ছে।তার খেয়াল নেই প্রচন্ড ক্ষুদায় যে এটা রেস্টুরেন্ট।বেশ আরাম করে খেলো।কেননা এগুলো রোজার প্রিয় খাবার।খাবার শেষ করে তিনজন বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো।রোজা ছটফট করছে ভেজার জন্য।হাত বাড়িয়ে পানি ধরছে, এদিক ওদিক ছেটাচ্ছে আর রাজের সাথে গল্প করছে।আর শুভ মুগ্ধ হয়ে রোজার দিকে তাকিয়ে আছে।শুভ দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বৃষ্টি দেখছে।রাজের একটা ফোন এসছে সে এক সাইডে গেলো ফোন নিয়ে।রোজা দুই হাতে পানি নিয়ে খেলা করছে।
শুভ হঠাত ডাকলো,”মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”
রোজা শুভর এই ডাকে বিশেষ কিছু খুজে পেলো।এক ঝটকায় ফিরে তাকালো শুভর দিকে।আর শুভর ডাকের সায় দিলো।
“হ্যাঁ। ”
“বৃষ্টিবিলাসী?”
রোজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
শুভ আবার বললো,
“আপনি বৃষ্টিবিলাসী।”
“ভীষণ। ”
“কখনো বৃষ্টিবিলাস করেছেন মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”
“আপনি করেছেন? ”
“উহু!তবে অনেকগুলো প্রহর গুনেছি তারসাথে বৃষ্টিবিলাস করবো বলে।”
চলবে?