বৃষ্টিবিলাস পর্ব-০৬

0
553

#বৃষ্টিবিলাস

#Writer_Mousumi_Akter

“আজ একটা দুরন্ত কিছু হোক
বৃষ্টি হোক, ঝড় তছনছ করে দিক
অথবা সুখের মতো সে চোখে চোখ রাখুক।

আজ একটা ভাঙচুর কিছু হোক
জাহাজ ভাঙুক, জল ডুবিয়ে নিক
অথবা নাবিকের মতো এসে সে হাত ধরুক।

আজ বুকের ভেতরে একটা লণ্ডভণ্ড কিছু হোক
গা কাঁপুক, দম বন্ধ হয়ে যাক
অথবা ফিঙের মতো শিস দিয়ে সে বলুক
ভালোবাসবি?”

রাজ আনমনে বিড়বিড় করে প্রেমের কবিতা পড়ছে রোজার দিকে তাকিয়ে।

শুভ রাজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে রোজার দিকে তাকিয়ে আছে।এই মুহুর্তে শুভর মনে হচ্ছে সে অজ্ঞান হয়ে যাক।মানুষ সিরিয়াস মুহুর্তে যে কিভাবে ফানি হতে পারে সেটা রাজ কে না দেখলে শুভ কখনো বুঝতো না।একদিকে শুভর প্রচন্ড হাসি পেয়েছে অন্য দিকে জেলাস। শুভ তাকিয়ে দেখে রাজ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে সার্চ করে রোমান্টিক কবিতা।আর সেখান থেকেই দু -লাইন দেখছে আর রোজার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করছে।যদিও এটা রাজের প্রথমবার করা কোনো কাজ নয়।এর আগেও মেয়ে দেখেছে আর এমন ই আজব কান্ড করেছে।তবে জীবনে কোনো মেয়ে নিয়ে সে সিরিয়াস না।মুখে সারাদিন প্রেম প্রেম করলেও প্রেম নিয়ে সে অতটা সিরিয়াস নয়।ফ্রেন্ডদের মাঝে চিল করতে সে খুব ভালবাসে।

শুভ রাজের পায়ের পাতায় খুব জোরে একটা গুতা মেরে বললো,

“শালা ডাফার এটা তোর বানী না এটা .. রুদ্র গোস্বামী এর লেখা।অন্যর লেখা অন্যর ফিওন্সির উপর চাপিয়ে দিলে সম্পূর্ণটায় ভুল জায়গা প্রয়োগ হলোনা।শুভ ভ্রু বাঁকিয়ে কথাটা বলে যেনো ভীষণ আনন্দ পেলো।”

“রাজ অত্যান্ত দুঃখী দুঃখী মুখে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,কার ফিওন্সি ভাই।এই মেয়ে কারো সাথে এনগেজড।”

“শুভ কপাল টান টান করে বললো,ইয়েস।”

“বাট হুয়াই ভাই হুয়াই।”

“বিকজ অন্যর বউ তোর কপালে নেই তাই।”

“রাজ কলার ঝাকিয়ে হিরোদের মতো বললো,সো হোয়াট বিয়ে তো আর হয়নি।গোলকিপার থাকবে মাঠে তা বলে কি আর গোল দিবো না।চেষ্টা করবো যদি লেগে যায়।আর সাথে তুই আছিস না।”

“আমি এমন কোনো পাপ করতে পারবো না ভাই।যে পাপে কারো হৃদয় ভাঙে সারাজীবন আভিশাপ কুড়াতে হয়।তুই বরং এক কাজ কর ওই মেয়ের কাজিন আছে নাম অহনা ভীষণ সুন্দরী। তুই এই মেয়েটাকে বলে কয়ে দেখ তার সাথে লাইন মারতে পারিস কিনা।হুদাই এই প্রায় বিবাহিত মহিলার সাথে খেটে খুটে লাইন মারার বৃথা চেষ্টা করে লাভ কী?আমি চাইনা আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড অহেতুক একটা স্যাকা খাক।যতই হোক ভালবাসি তোকে তোর খারাপ চাইবো না আমি।”

রাজ বেশ সন্দিহান হয়ে শুভর কাঁধে হাত রেখে বললো,

“কি ব্যাপার বস।তুমি এত ভালো ব্যাবহার করছো এটা তো সুবিধার লাগছে না।ঘোর সন্দেহের ব্যাপার,কাহিনী কী ভ্রু নাচিয়ে বললো রাজ।এই শুভ তুই আবার বাসে ওর সাথে ভাব করতে করতে আসিস নিতো।”

ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে শুভ বললো,

“আরে নাহ!আমার খেয়ে কাজ আছে এমন কি আছে মেয়েটার মাঝে যে এক নজর দেখেই ফিদা হতে হবে।ওসব আমার পক্ষে সম্ভব নয়।মেয়েটা এত আহামরি ও নয়।”

“বাট ব্রো তোমার চোখ কিন্ত অন্য কথা বলছে।সিরিয়াসলি ইউ লাইক হার।”

“আরে ইয়ার এমন কিছুই না।”

“এত্তেরি এমন কিছুই না যখন তখন আমাকে বলিস নি কেনো ওটা আন্টি নয় আন্টির মেয়ে ছিলো।”

“আমি কিভাবে জানবো আমি কি ওর মুখ দেখেছিলাম নাকি।”

“এই দোষ তাহলে কিন্তু এই মেয়ের।ইস বহুকাল অপেক্ষা করেছি বাসে আমার পাশে একটা মেয়ে বসুক প্রেমের মহাযাত্রা করতে পারতাম।এই মেয়ে কেনো বললো না যে সে মহিলা নয় একটা ফুটন্ত গোলাপ।আহা আমি কি জিনিস মিস করলাম।নিজের মাথায় নিজের বাড়ি দিতে মন চাইছে।এই মেয়েকে জরিমানা দিতে হবে। ”

“ওইযে বললাম না অহনা আছে ওর ফ্রেন্ড। ”

“তুই দেখেছিস তাকে?”

“না ওর কাছে শুনেছি।”

“তুই বার বার ও ও করছিস কেনো?ও কি তোর বউ।”

“আমার বউ ভেবে ভাবি ডাকা শুরু কর। যেহেতু সে আনম্যারেড আমিও আনম্যারেড হলে তো দোষের কিছু নেই।”

“তুই আনম্যারেড আর আমার মনে হচ্ছে বাড়িতে পাঁচ দশটা বউ আছে।সব কি তোর একার লাগবে।”

“একার লাগবে বলে কি বুঝাচ্ছিস। আমার কি এক হালি বউ আছে।”

“দেখ শুভ এই মেয়ের সাথে ভাব নিতে গেলে কিন্তু তোর সিক্রেট ফাঁস করে দিবো।”

“কোন সিক্রেট।”

“আয় কানে কানে বলি।”

“কানে কানে কিছু বলাতে শুভ বললো এটা যেনো ওই মেয়েটা না জানে মাইন্ড ইট।”

ওইপাশ থেকে রোজা ডাকছে,

“এই অশুভ এইদিকে আসুন।”

রাজ হা করে তাকিয়ে আছে মেয়েটা তার মানে শুভর সাথে ভালোই মিশেছে না হলে অশুভ বলে ডাকছে।

রাজ আর শুভ এগিয়ে গেলো।শুভ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“এক্সকিউজ মি!এভাবে লোকজনের মাঝে ছাগলের মতো চিল্লাচ্ছেন কেনো?আমার নাম কি অশুভ।ক্লিয়ার ভাবে বলে দিচ্ছি আমার নাম শুভ। ”

“ওকে অশুভ। বলেই রোজা হেসে দিলো।”

“রাজ এগিয়ে এসে বললো, হাই আমি রাজ।”

“হাই কিউট ভাইয়া। থ্যাংক ইউ সো মাচ।আপনার সিট টা না দিলে আমাকে অনেক কষ্ট করে আসতে হতো।”

“এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কি আছে।তোমার মতো মিষ্টি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আসবে আর আমি বসে আসবো এটা কি শোভনীয় বলো।আমি সব সময় ই এমন পথে মানুষ দেখলে সিট ছেড়ে দেই।কিন্তু শুভ এমন না কিন্তু দেখলে নিজে বসে ছিলো কিন্তু আমি সিট ছেড়ে দিলাম।”

শুভ রাজের পায়ে লাথি মেরে ফিসফিস করে বললো,

“একটু বেশী বলছিস না। এত তেল দিলে মেয়েটা বুঝে যাবে কিন্তু তুই তেলবাজ।একটু কম কম বল।”

রোজা বললো,

“রাজ ভাইয়া আসলে আপনার নাম টা শুভ হলেই ভালো হতো।আর উনার নাম অশুভতেই ভালো মানায়।আপনি সব শুভ কাজ করেন কিন্তু ওই যে উনি আপনার খিটখিটে মেজাজের বন্ধু উনি কিন্তু অশুভ কাজের উৎস।”

“যাক প্রথম কোনো নারী বুঝেছে ও অশুভ।অন্য মেয়েরা কিন্তু সে বলতে বেশ অজ্ঞান। ”

“রোজা মুখ বাঁকালো।”

“রাজ হাত এগিয়ে দিলো হাত মেলানোর জন্য আর বললো, হাই রোজা চলো ফ্রেন্ডশীপ করি।”

“রোজা খুশি মনে রাজের সাথে হাত মেলাতে গেলেই শুভ রোজার হাতের সাথে হাত মিলিয়ে একটু জোরে চেপে ধরে বললো,রাজের হাতে চুলকানি আছে।খুব ছোঁয়াচে রোগ কিন্তু।”

“রাজ এবং রোজা দুজন ই ভীষণ অবাক।রাজ বললো,দেখলে কি বাটপারি করলো।আচ্ছা তোমার নাম টা যেনো কি?”

“ইরহাম আহমেদ রোজা।”

“ওয়াও সুন্দর নাম তোমার।তুমি চাইলে আমাকে রাজ বা যেকোনো নামে ডাকতে পারো।”

“শুভ এক অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো হাঁস,ওর নাম রাজ হাঁস বুঝলেন।ও খুব খুশি হবে ওকে রাজহাঁস বলে ডাকলে।ওর খুব আফসোস ওর নাম সার্টিফিকেট এ রাজহাঁস দেওয়া হলে ভালো হতো।”

এই দুই বন্ধুর খুনসুটি রোজার ভীষণ ভালো লাগলো।কত নিঁখুত তাদের বন্ধুত্ব। রোজার ভীষণ ভালো লাগলো তাদের সাথে পরিচয় হওয়াতে।এমন মজার মানুষ আছে যারা ম্যাজিকের মতো মন ভালো করতে পারে।বাইরে এখনো বৃষ্টি পড়ছে খুব।একটা টেবিলে রাজ, শুভ আর রোজা বসলো।শুভ ফোনটা টেবিলের উপর রাখলো।খাবারের অর্ডার দিলো।মধ্যরাতে অর্ডার দিলে তারপর ওরা খাবার বানিয়ে দেয়।শুভ খাবার অর্ডার দিতে গেলো।এই ফাঁকে রোজা শুভর বদনাম শুরু করলো।

“আপনার এই ফেন্ড ভীষণ বিদঘুটে বুঝেছেন।উনার মেজাজ খুব খিটখিট টাইপের।আপনাদের ফ্রেন্ডদের মাঝে সব থেকে খারাপ এ তাইনা?”

“নো রোজা, আমাদের ফ্রেন্ডসার্কাল দের মাঝে সব থেকে ভালো ছেলে শুভ।শুধু ভালো বললেও কম হবে।আমিও চেষ্টা করি ওর মতো হওয়ার জানি পারবো না বিকজ বস ইজ বস।শুভ আমাদের মতো মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করে না, যেকোনো মেয়ে দেখলেই হুট করেই বলবে না মেয়েটা সুন্দর।তার কথা কাকবর্ণের কালো মেয়ে বিয়ে করলেও তাকে বলবো আচ্ছা তুমি এত সুন্দর কেনো?একটু কম হলেও কিছু মনে করতাম না।বিকজ আই লাভ ইউ।”

রাজের এই কথায় আরেকবার গভীর কোনো এক ভাললাগা দোলা দিলো রোজার মনে শুভর জন্য।কোনো পূণ্যবতী ছাড়া ছাড়া এমন ছেলের ওয়াইফ কেউ হতে পারবে না।

“বাহ খুব তো বন্ধুর প্রশংসা করছেন।”

“যেটা সত্য সেটাই বলেছি কিন্তু।”

“বন্ধুকে খুব ভালবাসেন।”

“প্রচুর।”

“আচ্ছা আপনার জিএফ কে যদি আপনার বন্ধু লাইক করে কি করবেন।সিরিয়াসলি নিয়েন না যেভাবে প্রশংসা করছেন তখন ও কি এইভাবেই প্রশংসা করবেন।”

“রাজ হো হো করে হেসে বললো,সিওর তখন ও এইভাবে প্রশংসা করবো।একটা মেয়ের এত ক্ষমতা নেই যে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করে।”

“কেনো?”

“শুভ কোনো মেয়েকে ভালবাসবে না আমি জানি। তার একটা সিক্রেট আছে বলা যাবেনা।আর শুভ যাকে ভালবাসবে শুভর চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারবো।শুভ যাকে ভালবাসবে তাকে আমি মরে গেলেও ভালবাসবো না।মানে ওই ফিলিংস টা আমার আসবে না।একচুয়ালি আমি কোনো মেয়ে নিয়ে এত সিরিয়াস না।আমার জীবন না আমি সিনেমার বাপ্পারাজের মতো করে কাটিয়ে দিতে পারবো না সরি।পৃথিবীতে মেয়ের অভাব নেই।যে মেয়েকে আমার বন্ধু ভালবাসবে আমাকেও তাকে ভালবাসতে এটা কিন্তু ঠিক নয়।বাই এনি চান্স দুজনের ই যদি এক মেয়েকে ভালো লেগে যায় আমি বুঝতে পারলে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন করবো। কেননা শুভ অলওয়েজ সিরিয়াস আমি অত সিরিয়াস নই। শুভ যাকে ভালবাসবে ভীষণ ভালবাসবে মুভ অন করতে পারবে না, কিন্তু আমি অতটা সিরয়াস নই এক সেকেন্ডে মুড চেঞ্জ করতে পারি।এই যে ধরো তুমি তোমাকে যদি শুভ আর আমার দুজনের ই ভালো লেগে যায় আমি কিন্তু বুঝতে পারবো আর শুভকে প্রেমের সমস্ত সাহায্য করে তোমার বোন বা কাজিনের সাথে লাইন মারবো।কিন্তু শুভ তোমাকে লাইক করলেও ভালোবাসবে না এটা ১০০% সিওর।তাই আমি কিন্তু নিশ্চিন্তে তোমার সাথে প্রেম করতে পারি।”

রোজা ভীষণ মুগ্ধ হলো রাজের কথা শুনে।ছেলেটা কি মিশুক,আর তাদের বন্ধুত্ব কত সুন্দর।ঠিক আমি আর অহনার মতো।শুভ ছেলেটা সত্যি এত সিরিয়াস ভালবাসা নিয়ে।তবে রোজার ভীষণ মন খারাপ হলো শুভ তাকে ভালবাসবে না কেনো?রোজার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।কেনো খারাপ হলো তাও জানেনা রোজা।হুট করে এই মন খারাপের কারণ কি।

চলবে?…