#বৃষ্টিবিলাস
৮+৯
#writer_Mousumi_Akter
“কখনো বৃষ্টিবিলাস করেছেন মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”
“আপনি করেছেন? ”
“উহু!তবে অনেকগুলো প্রহর গুনেছি তারসাথে বৃষ্টিবিলাস করবো বলে।”
রোজার খুব জানতে ইচ্ছা করলো শুভর জীবনে কি কেউ আছে।বিশেষ কেউ আছে যার জন্য প্রহর গুনেছিলো।প্রশ্নটা কিভাবে করবে ভাবতে ভাবতে রোজা প্রশ্ন টা করেই ফেললো,
”যার জন্য অপেক্ষা করছেন তাকে পেয়েছেন খুজে।”রোজা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো শুভর উত্তর শোনার জন্য।উত্তর টা যেনো এমন হয় হ্যাঁ আপনাকে দেখার পরেই আমার মনে হয়েছে আপনি সেই নারী মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।কিন্তু শুভ কি সেটা বলবে।
”হ্যাঁ, সে আছে হৃদয় জুড়ে।”
রোজার বুকটে বাথায় হাহাকার করে উঠলো।আবার ক্লিয়ার হওয়ার জন্য প্রশ্ন করলো,
“রিলেশন এ আছেন নাকি ম্যারেড।”
“No more questions Miss Irham Ahmed Roja.”
রোজা এবার থেমে গেলো, কারো ব্যাক্তিগত ব্যাপারে এতটা আগ্রহ থাকা উচিত নয়।এমন সুন্দর বৃষ্টিস্নাত রাতে কারো সাথে বৃষ্টিবিলাস করার স্বপ্ন রোজা পুষে রেখেছিলো মনের গহীনে আর দীর্ঘদিন ধরে।কিন্তু সেই মানুষ টায় তার জীবনে এলো না।বৃষ্টি একটু কমে গেলো।রাজ, রোজা, শুভ তিনজনেই বাসের দিকে রওনা হলো।কিন্তু ততক্ষণে বাস ছেড়ে দিয়েছে।
বাস ছেড়ে গেছে দেখেই শুভ বিরক্ত ভাবে হাত ঝাড়ি দিয়ে উচ্চারণ করলো বেশ জোরের সাথে, “ওহ শীট!ড্যমেড।”
রোজা আবার সম্পূর্ণ দোষ দিয়ে দিলো শুভর ঘাড়ে। রোজা ভীষণ রেগে শুভকে বললো,
“এই অশুভর জন্য আমি আসতে পারিনি।যাওয়ার সময় যাবো না। আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে।এখন আমি কিভাবে যাবো।সব দোষ এই অশুভর।”
শুভ ভয়ানক অগ্নিচোখে রোজার দিকে তাকালো আর বললো,
“মেয়ে মানুষ মানেই প্রব্লেম। যেখানে যাবে প্রব্লেম ক্রিয়েট করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।এখন ভ্যা ভ্যা করে কাঁন্না জুড়ে দিয়েছেন কেনো?আপনার প্রব্লেম হতে পারে বলেই তো আপনাকে নিয়ে গেছিলাম।এখন তো তাও আমি আছি।প্রব্লেম এ পড়লে কে দেখতো আপনাকে ড্যামেড।একদম কাঁদবেন না।মেয়ে মানুষের ক্যান ক্যানানি মোটেও ভালো লাগেনা জাস্ট বিরক্তিকর। ”
রোজা তাকিয়ে আছে শুভর বিরক্তকর মুখের দিকে।ভয়ানক বিরক্তি সে চোখে মুখে।এই বিরক্তির মাঝে ভীষণ এক দায়িত্ববোধ,আমার যদি কিছু হয়ে যায় সেই ভয়।সব বকুনিতে খারাপ লাগেনা।কিছু বকুনিতে অধিকারবোধ ও থাকে।এই বকুনিটা আমাকে সেইফ রাখার জন্য।এই মানুষ টা তো আমারও হতে পারতো।তাহলে সারাজীবন আগলে রাখতো।বাবা কি টাকা ছাড়া কিছুই বুঝলো না।কেনো এমন কেয়ারিং একজন মানুষ আমার জন্য খুজে এনে দিলোনা।এটা কি হচ্ছে আমার সাথে।এমন হলে ছটফট করে মা*রা যাবো আমি।রোজা এবার মিহি কন্ঠে বললো,
“আপনার সেই প্রহর গোনা মেয়ে হলে এইভাবে বকতে পারতেন।”
শুভ কয়েক সেকেন্ড রোজার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।ভয়ানক মায়া মাখা সুরে কথাটা বললো রোজা।এই মায়া কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।শুভ এবার অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“প্রয়োজন পড়লে এর থেকে বেশী বকতাম বাট সেটা আমার অধিকার এর জন্য বকতাম।যখন ই সে গাল ফোলাতো বুকের খুব কাছে টেনে নিয়ে আসতাম একদম হৃদয় যেখানে সেখানে এনে হৃদয়ের হার্টবিট শোনাতাম।হৃদয়ের হার্টবিট শুনলে সে বুজতে পারতো তাকে ঠিক কতটা ভালবাসি।”
“হার্টবিট শুনে যদি সে কিছু না বুঝতো।”
“যে প্রেমিকা প্রেমিকের হৃদয়ের স্পন্দন শুনে ভালবাসা বুঝতে না পারে,হৃদয়ের অনুভূতি অনুভব করতে না পারে সে তাহলে প্রেমিকা নয়।”
“তাহলে তো আপনার প্রেমিকা হতে গেলে বেশ কেয়ারিং হতে হবে ভালবাসা সম্পর্কে।”
“অভিয়াসলি!আই নো সবাই এটা বুঝে না দীর্ঘঃনিশ্বাস ছাড়লো শুভ।এইজন্য ভালবাসাটা অপ্রকাশিত ই থেকে গেলো।”
রাজ এতক্ষণ এদিক ওদিক দেখছিলো কিছু ব্যবস্থা করা যায় কিনা।রাজ বললো,ভাই ওই ছাউনির নিচে চল।দূরে রাস্তার সাথেই টিনের ছাউনি মতো।
“রোজা বললো,ওখানে কিসের ছাউনি রাজ ভাইয়া।”
“ওখানে পুলিশরা থাকে রোজা।তারা গাড়ি চেক করে।ওটাকে পুলিশ চেক পোস্ট বলে।এখন সবাই ঘুমোতে গিয়েছে চলো আমরা বাকি রাত ওখানেই পার করে দেই।”
বেশ কয়েক টা বেঞ্চ রাখা আছে ওখানে।রাজ বললো আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমোলাম গাইস।মাথার নিচে ব্যাগ দিয়ে রাজ একটা বেঞ্চে ঘুমিয়ে পড়লো।রোজা আরেকটায় ঘুমিয়ে পড়লো।শুভ দাঁড়িয়ে আছে।রাজ আর রোজা ঘুমোলেও শুভর চোখে ঘুম নেই।শুভ পাহারা দিচ্ছে রোজাকে।ঘুমিয়ে পড়লে যদি রোজা হারিয়ে যায়।এই অচেনা শহরে রোজা হারিয়ে যেতে পারে,কেউ ওকে তুলে নিতে পারে অনেক কিছুই হতে পারে বিভিন্ন জিনিস ভেবে শুভ ঘুমোতে পারছে না।রোজা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন শুভ রোজার মাথার কাছে বসে রোজার মাথা নিজের কোলের উপর রাখলো।যাতে রোজা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে।রোজা শুভর একটা হাত জড়িয়ে ধরে আরামে ঘুমোচ্ছে।পৃথিবীতে এর থেকে সুন্দর মুহুর্ত কি আর আছে নিশ্চুপ রাতের নিরবতায় প্রেমিকা মানবী প্রেমিক মানবের কোলে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।অথচ একটাবার ও খারাপ চিন্তা মাথায় আসছে না।শুভর রোজার শরীর ছোঁয়ার থেকে মন ছোঁয়ার চিন্তায় মগ্ন।এমন ভালবাসা হয়তো স্বয়ং বিধাতা ই দেওয়া যেখানে শরীর ছোঁয়ার থেকে মন ছোঁয়ার চিন্তা প্রেমিক হৃদয় কে ব্যাকুল করে তোলে।
শুভ তাকিয়ে আছে ঘুমন্ত রোজার মুখের দিকে।প্রেয়সীর ঘুমন্ত চেহারার থেকে সুন্দর কিছু কি আর এই দুনিয়াতে আছে।
পরেরদিন খুব ভোরে রোজার ঘুম ভাঙলো।ঘুম ভাঙতেই রোজা দেখলো সে শুভর কোলে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।আর শুভ পূর্ণ দৃষ্টিতে ফোন গুঁতাচ্ছে।রোজা খুব দ্রুত নিচে নামলো।আর উত্তেজিত হয়ে বললো,
“এ কি আপনি, জেগে আছেন ঘুমোন নি কেনো?”
“ফ্রি চাকরি পেয়েছি তাই?”
“কি চাকরি।”
“আপনাকে পাহারা দেওয়া।”
“মানে।”
“গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন তাই পাহারা দিচ্ছিলাম।”
“পড়তাম আপনাকে কি বলেছিলা আপনার কোলে মাথা রেখে ঘুমোবো।”
শুভ ফোন প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রোজার দিকে তাকালো আর ভ্রু কুচকে বললো,
“বলেন নি।”
“না।”
“তাহলে কি আমি নিজে থেকে আপনাকে কোলে নিয়েছি।”
“একদম বাজে কথা বলবেন না।আমাকে কোলে নিবেন কেনো?আমার মাথা আপনার কোলে দিয়ে রেখেছেন।”
“মিস ইরহাম আহমেদ রোজা গতকাল রাতে আপনি স্বয়ং আমার হাত ধরে বলেছেন শুভ আমি তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে চাই।প্লিজ না করো না।এই একটা চাওয়া পূরণ করো প্লিজ।”
“রোজা যেনো আকাশ থেকে পড়ে বললো,হোয়াট?আমি এসব বলেছি।”
“হুম আরো অনেক কিছু বলেছেন।”
“কি বলেছি।”
“ঘুমের মাঝে বিড় বিড় করছিলেন।শুভ জানো আমার মনে হচ্ছে প্রচুর বৃষ্টিহচ্ছে।আমরা বৃষ্টিবিলাস করতে মন চাইছে।তুমি কি বৃষ্টিবিলাস করবে আমার সাথে।এসব বলেই তো আপনি আমার হাত টেনে চুমু দিলেন।শুধু কি হাতে ছিঃআমার লিপ অপবিত্র করেছেন।এইভাবে একটা ছেলেকে নিরীহ পেয়ে অত্যাচার করতে বিবেকে বাঁধলো না।আমার ফিউচার বউ এর হক ছিলো।কেনো এমন করলেন?হুয়াই মিস ইরহাম আহমেদ রোজা হুয়াই?”
শুভ এমন আবেগ ঢেলে দিলো যেনো রোজা সত্যি এসব করেছে।কি নিঁখুত অভিনয় ভাবা যায়।
“বাজে কথা,আপনি মিথ্যা বলছেন?”
“আমার কাছে প্রুভ আছে?ভিডিও করে রেখেছি।জানতাম বিলিভ করবেন না।দেখবেন মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”
“কই দেখান তো?”
“দেখাতে পারি একটা শর্ত আছে।”
“কি?”
“আমি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড রাজ কে দেখাবো।আপনি দেখলে রাজ কেও দেখাবো।”
“নো প্লিজ!কাউকে দেখবেন না।মনে মনে রোজা বলছে আমার চরিত্র এত খারাপ কিভাবে হলো।আমি তো প্রায় বৃষ্টিবিলাস নিয়ে ভবি।উনি যখন বৃষ্টিবিলাস এর কথা বলছে তাহলে এটা নিশ্চয়ই সত্য।”
“রোজা খুব অনুনয় এর সাথে বললো,দেখুন প্লিজ ডিলিট করে দিন।কাউকে দেখাবেন না প্লিজ।”
“ডিলিট করবো তবে এত সহযে না।”
রোজার মাথায় অন্যচিন্তা ঘুরছে সে যখন এত কিছু করেছে তাহলে কি শুভ ও কিছু করেছে।রোজা শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,
“ঘুমের মাঝে কিছু করেন নিতো।”
শুভ নিমিষেই রেগে গিয়ে ভয়ানক বিরক্তি নিয়ে রোজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“হাউ ডার্টি মাইন্ড।কি করবো?”
“ওইযে?”
“হুম কি ওইযে?”
শুভ আস্তে করে এক পা দু পা ফেলে রোজার দিকে এগোচ্ছে।রোজা পিছিয়ে যাচ্ছে।
“মিস ইরহাম আহমেদ রোজা কি ব্যাপার বলুন ওইযে কি?”
“না মানে।”
“ক্লিয়ার করে বলুন।হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ওইযে।”
শুভ ধীরে পায়ে এগোচ্ছে আর রোজা ধীর পায়ে পেছোচ্ছে।রোজা এবার জড়ানো গলায় বললো,
“কি.. কি ব্যাপার এগিয়ে আসছেন কেনো?”
“আপনি জানেন না ক্যানো?”
“নাহ।”
“রাতের না হওয়া ডিল টা কমপ্লিট করতে।”
“হোয়াট,কোন ডিল।”
“যেটা বললেন।”
“দেখুন আর এগোবেন না কিন্তু।”
“কাছে আসতে বাধ্য করছো,কাছে তো আসতেই হবে মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”
শুভ এগিয়ে গিয়ে রোজার হাত চেপে ধরলো খুব শক্ত ভাবে।রোজা আর একটু হলেই পড়ে যেতো।
“সাবধান মিস ইরহাম আহমেদ রোজা। আমি না ধরলেই তো পড়ে যেতেন।”
“রোজা শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।”
“ভয় পাচ্ছিলেন কেনো?”
“এমনি?”
“এত ভয়,ভয় পাওয়ার নিড নেই আমি আপনার কোমর ধরতে আসিনি।নেক্সট টাইম যদি আমাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা ভাবেন কি হবে ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া।”
–কিছুক্ষণ পরেই রাজের ঘুম ভাঙলো।খুব ভোরেই তারা একটা গাড়ি ও পেয়ে গেলো।
তাদের জার্নি শেষ হলে সকাল দশ টায় নড়াইল এসে পৌছালো তারা তিনজন।এখানের যে ফেরিঘাট ছিলো সেখানেই বড় একটা ব্রিজ হয়েছে।ব্রিজে উঠতেই সুন্দর একটা জিনিস শুভর চোখে পড়লো আর সেটা হলো,ব্রিজে বড় করে ক্যাপ্টেন মাসরাফির ছবি টাঙানো।শুধু একটা ছবি নয় দশ হাত দূরে দূরেই মাসরাফির ছবি।ব্রিজের এদিক দিয়ে আসতে গেলেও দেখা যায় ওদিক দিয়ে আসতে গেলেও দেখা যায়।এপাস ওপাস দুপাশেই ছবি।অতি সুন্দর সে দৃশ্য।মাসরাফির এত বড় ফ্যান শুভ নড়াইলে পা রাখতেই তার মনে হলো যেনো তার স্বপ্নের শহরে প্রবেশ করেছে।
–রাজ রোজাকে বললো কোথায় যাবে রোজা তুমি।এটা আমার শহর সব জায়গা ই চিনি।আমি তোমাকে এগিয়ে দেই।
–বয়েজ স্কুলের পাশেই নাকি তাই বললো।
–উমম বয়েজ স্কুলের কোন পাশে।
–বয়েজ স্কুলের পাশে নাকি হামিদ মেনশন আছে ওখানেই।
–ওখানেই তো আমার বাসা।
–তাই!তাহলে চলুন।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সোহানা,রোজার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।রোজা শুভর ফোন থেকে সোহানা কে ফোন করেছিলো।রোজা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সোহানাকে আরে আপু।সোহানা রোজাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আরে রোজু। এরই মাঝে নজর গেলো রাজের দিকে।রাজ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।রাজের ভাবি হলো সোহানা,বড় ভাই এর বউ।
–সোহানা রাজকে বললো,তুমিও এসছো, এত লেট হলো কেনো?
–রাজ উত্তর না দিয়ে বললো,ভাবি রোজা তোমার কি হয়।
–কাজিন,আমার খালাতো বোন হয়।
–আপণ।
–খালাতো বোনের আপণ কাকার মেয়ে।
–মানে আমাদের বিয়াইন হয়।
–দেখুন আমাকে ওসব বলবেন না রাজ ভাইয়া।
–সোহানা শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,শুভ রাইট।
–শুভ স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে সোহানার সাথে কথা বললো।
রাজ হাসলো,মানে রাজের ভীষণ ভালো লাগলো রোজা তার ই বাসায় উঠবে।
শুভর ভেতর ভীষণ অনন্দের বন্যা বইছে।
রাজের বাসায় তার ভাইয়া -ভাবি আর মা থাকে আর রাজ থাকে ঢাকায়।ভীষণ জার্নি করে তারা সবাই ক্লান্ত ছিলো।বাসায় পৌছে জমিয়ে আড্ডা দিলো সবাই।রাজের মা শুভ কে আগে থেকেই চিনতো। ছেলের মতোই ভালবাসে শুভ কে।সেদিন দুপুরে খেয়ে গোসল করে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।সন্ধ্যার খানিক টা পরে রোজা ঘুম থেকে উঠলো।পরনে গাড় লাল একটা শাড়ি।ঘুম থেকে উঠে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো।বাড়িটা দো’তলা বিশিষ্ট, তিনতলার কাজ চলছে।তিনতলার ছাদ দেওয়া হয়নি এখনো দু’পাশের দুইটা দেওয়াল গাথা হয়েছে শুধু।নিচতলার পুরাটাই ভাড়া দেওয়া কিন্তু দো’তলা ভাড়া দেওয়া নেই।থাকার জন্য কোনো সমস্যা নেই।রোজাকে লাল শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নড়াইল শহরের সন্ধ্যার আকাশ দেখছে।সন্ধ্যাতারা টা নীল আকাশে মাত্রই উঁকি দিয়েছে।শুভ আরো এক ঘন্টা আগেই ঘুম থেকে উঠেছে।বাড়ির সামনে ছোট্ট ইটের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে শুভ পরণে সাদা গেঞ্জি,ব্লু জিন্স।হঠাৎ শুভর চোখ বেলকনিতে গিয়ে আটকে গেলো।ঘর্নায়মান সন্ধ্যার সব থেকে সুন্দর দৃশ্য ছিলো রোজার ফোলা চোখে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকা।কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকলে বোধহয় সে বুঝতে পারে।রোজা আড়চোখে দেখছে শুভ অনেক্ষণ ধরে তাকে দেখছে।রোজা বারবার নিজের শাড়ি ঠিক করছে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে তার।কেউ এভাবে কিভাবে তাকিয়ে থাকতে পারে।কি দেখছেন ওই অশুভ টা।কি নির্লজ্জ কিভাবে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ পরেই দুজনের চোখ দুজনের চোখ পড়লো।শুভ দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।শুভর পাশে একটা বিবাহিত ছেলে রোজার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলো।শুভ ব্যাপার টা নোটিস করলো। শুভ সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠলো।বেলকনিতে গিয়ে রোজা কে বললো,
‘কি ব্যাপার শাড়ি পরেছেন যে,একবার বোরকা, একবার জিন্স,একবার শাড়ি। নড়াইল শহরের বাচ্চা ছেলেদের মাথা ঘোরাতে চান নাকি।’
‘আমি সাথে করে আর কোনো ড্রেস আনিনি। তাই সোহানা আপুর শাড়ি পরেছি।’
‘শাড়ি পরেছেন ভালো কথা,পেট পিট ঢেকে রাখুন।মানুষ অন্যভাবে তাকাবে।’
‘আসলে আমার অভ্যাস নেই তো শাড়ি পরার তাই একটু সমস্যা হচ্ছে।’
‘নিব্বিবালিকা বুঝতেই পারছি।ভেতরে যান সোহানা ভাবি ডাকছে আপনাকে।’
ডায়নিং এ মাগরিবের নামাজের পরে সোহানা,সোহানার হাজবেন্ড নোমান,শুভ,রাজের আম্মা সবাই বসে চা আর বিস্কুট খেতে খেতে গল্প করছে।রাজের আম্মা রোজাকে বলছে রোজা মা এ বাড়িতে নিজের মনে করেই থাকবে।কোনো অসুবিধা হবেনা তোমার।এটা তো তোমার বোনের বাড়ি ই।সোহানা বললো জানেন মা আমরা কাজিন হলেও কিন্তু আপণ বোনের মতো।আমি রোজা আহনা কত ঘুরেছি আড্ডা দিয়েছি।কতশত স্মৃতি আমাদের।রাজ বললো আফসোস ভাইয়ার বিয়ের সময় থাকতে পেরেছিলাম না।ইস তাহলে রোজাকে আজ বাসেই চিনে নিতাম।আচ্ছা ভাবি তোমার যে এত কিউট কিউট বোন আছে আগে বলোনি কেনো?সোহানা বললো,রোজার কথা না বললেও অহনার কথা তো বলেছি।রোজা বললো রাজ ভাইয়া অহনা যে কি মারাত্মক কিউট ভাবতে পারবেন না।রাজ রোজার দিকে তাকিয়ে বললো তোমার থেকেও সুন্দর মেয়ে আছে বুঝি।রোজা বললো,
আরে আছে মানে অহনা মানেই সুন্দরের সমাহার।নোমান বললো,রোজা অহনা আমার দুই শালিকাই ভীষণ কিউট কিন্তু।বাসের মধ্যকার সমস্ত ঘটনা বলে সবাই ভীষণ হাসছিলো।নোমান বললো,আমি কাল রোজার জন্য ড্রেস নিয়ে আসবো।
–শুভ চুপচাপ চা খাচ্ছিলো।আর রোজার হাসি দেখছিলো।হাসলে রোজাকে কত ভুবনভোলানো সুন্দরী লাগে।সোহানা বললো,শুভ তুমি চুপ আছো যে।তুমি চুপ থাকলে সে আড্ডা কিন্তু জমেনা।
–ভাবি আমি শুনছি আপনাদের কথা।
–কিছু বলো একদম ই চুপ যে।
–আর এক কাপ চা দিন ভাবি তাহলেই হবে।
–সোহানা ফ্ল্যাক্সে করে চা রেখেছিলো,শুভ কে আরেক কাপ চা ঢেলে দিলো।চা খেতে খেতে শুভ বললো নোমান ভাইয়া আপনার শালী আমাকে টাকা দিয়েছিলো তার ড্রেস কিনতে।আপনাকে ভাবতে হবে না।আমি এনে দিবো।রোজা ভীষণ অবাক হয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো আমি।শুভ বললো ভুলে গেলেন ওই যে ভিডিও মনে আছে।রোজা একদম ই চুপ হয়ে গেলো।নোমান বললো,রোজা তোমার টাকা দিয়ে ড্রেস কিনবে কেনো আমি আছিতো।বেশ অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর শুভ আর রাজ বাইরে গেলো।নোমান ও বাইরে কোথাও গেলো।সোহানা, রোজা আর রাজের আম্মা তিনজনে রান্নাঘরে বসে রান্নার আয়োজন করছে আর গল্প করছে।রাজের আম্মা অনেক ফ্রি মাইন্ড আর ভীষণ ফ্রেশ মাইন্ডের মহিলা।সোহানার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে না।অনেক হাসি ঠাট্টা করে। রোজা গল্প করছে আর হো হো করে হাসছে।বাসে কিভাবে আন্টি সাজার ভান ধরে সিট নিয়েছিলো।রোজার হাসিতে পুরা বাড়ি হাসছিলো।আধাঘন্টা পরে নোমান অনেক গুলো মাছ কিনে নিয়ে আসলো।সোহানা আর তার শ্বাশুড়ি মাছ কাটতে শুরু করলো।তাদের সাথে রোজার ও মাছ কাটতে ইচ্ছা করছিলো।রোজার জোরাজুরিতে ভাড়াটিয়াদের একটা বটি চেয়ে এনে দিলো।রোজা তাদের সাথে মাছ কাটছে আর গল্প জুড়ে দিয়েছে।কখন শুভ এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে রোজা জানেনা।রোজাকে একদম বাঙালি সাজে মারাত্মক সুন্দর লাগছিলো।কোমরে শাড়ি গুজে ছাইয়ের গাদা হাতে মাখিয়ে মাছ কাটছে।আর হো হো করে হাসছে।সামনের ছোট চুল গুলো বারবার সামনে চলে আসছে রোজার।কনুই দিয়ে বারবার চুল সরাচ্ছে, কনুই দিয়ে কি আর চুল ঠিক ঠাক ভাবে সরানো যায়।সোহানা বলছে রোজা এই মুহুর্তে যদি তোর উনি থাকতো না কি রোমান্টিক ভাবে চুল গুলো সরিয়ে দিতো।রোজা হাসছে।এবার চুল আরো বেশী করে সামনে এলো তিনজনের হাতেই ছাই কে হেল্প করবে রোজাকে।রোজা এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুজছে হঠাত দেখলো শুভ দাঁড়িয়ে আছে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে।রোজা শুভ কে ডকলো এইযে অশুভ প্লিজ হেল্প মি!শুভ এগিয়ে এসে বললো হোয়াট?দেখছেন না অসুবিধায় ভুগছি,চুল গুলো সরিয়ে দিন।শুভ এমন প্রস্তাবে ভ্যাবাচেকা খেলো রাজের আম্মার দিকে তাকালো সে কি ভাববে।রাজের আম্মা বুঝতে পারলো শুভর অস্বস্তি হচ্ছে।শুভকে একটু সহজ করে দিতেই রাজের আম্মা বললো বাবা আমাদের সবার হাতে ছাই রোজার একটু অসুবিধা হচ্ছে।শুভ বেশ লজ্জা পাচ্ছিলো তবুও রোজার চুল আলতো ভাবে কানের নিচে গুজে দিলো।আস্তে করে বললো,আর কাজ করতে হবে না একটু ভেতরে আসুন।শুভ ভেতরে চলে গেলো।রোজা কিছুক্ষণের মাঝে মাছ কাটা রেখে রোজা ভেতরে চলে গেলো।বেসিং থেকে রোজা হাত ধুয়ে শুভর কাছে গেলো।শুভ রোজার হাতে কত গুলো শপিং এর ব্যাগ ধরিয়ে দিলো।
চলবে?