বৃষ্টিবিলাস পর্ব-১০

0
472

#বৃষ্টিবিলাস
১০.
#Writer_Mousumi_Akter

‘মিস ইরহাম আহমেদ রোজা এখানে কি আপনি ঝি_গিরি করতে এসেছেন।যদি এতই কাজ পারেন আমাকে বলতেন আমার বাসায় ঝি এর চাকরিটা ইন্টারভিউ ছাড়ায় দিয়ে দিতাম।তাছাড়া এটা কি আপনার বাবার বাড়ির দক্ষিণ ঘরের বারান্দা যে বসে হো হো করে হাসছেন।শুভর চোখে মুখে বেশ গম্ভীর ভাব।’

রোজা ব্যাগ গুলো হাতে ধরে বোকা বনে দাঁড়িয়ে আছে।কি করবে আর কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এই মানুষটার আসলে সমস্যা কি?এতগুলো কথা শুনালো সব গুলোর উত্তর কিভাবে দিবো।একটা করে শুরু করি।প্রথমে কি বললো আমাকে ঝিঁ এর চাকরি দিবে।আমি হলাম এক বাপের এক মেয়ে আমাকে কি তার কাজের মহিলার মতো মনে হচ্ছে।কি ভাবের কথা যেনো উনার বাবা কয়েকটা কোম্পানির মালিক।সেখানে ঝি এর চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দেওয়া লাগে।আমাকে যদি আর একটা বাজে কথা বলে উনার খবর আছে।বুঝলাম না উনার এত অসহ্য কথা আমি শুনতে যাবো কেনো?কে উনি?মিনিমাম ভদ্রতা নেই না উনার।আমি উনার কিছুই হই না তা সত্ত্বেও আমাকে নিয়ে পড়েই আছেন বিরক্তিকর লোক।রোজা মনে মনে ঝগড়া করে চলেছে শুভর মুখের দিকে তাকিয়ে।

‘শুভ রোজার মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,ওহ হ্যালো!সেই বুইড়ার সাথে রোমান্টিক ভাবনায় হারিয়ে গিয়েছেন নাকি।এমন ভাবে ভাবনায় বিভোর আছেন দেখে তাই মনে হচ্ছে।’

‘রোজা এবার বেশ থমথমে কন্ঠে বললো,আমি এখানে ঝি গিরি করতে এসছি এটা কেনো মনে হলো আপনার।আপনার আমাকে আসলে কি মনে হচ্ছে একটু বলবেন মিষ্টার আয়ান আহমেদ অশুভ।’

‘শুভ বুকে হাত বেধে রোজার দিকে তাকিয়ে বললো,কারণ কোমরে শাড়ি গুজে ছাই দিয়ে মাছ কাটছিলেন।এজ লাইক রিয়েল ঝি।’

‘রোজা বললো, দেখুন আমি মাছ টাচ আগে কাটিনি কখনো। আমি জাস্ট শখ করে করছিলাম সোহানা আপুদের সাথে।আমার উনাদের সাথে কাজ করতে খুব ই শখ করছিলো।’

‘শুভ বেশ চিন্তিত মুডে বললো,যদি হাত কেটে যেতো তো?’

‘রোজা বেশ ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললো,কাটলে আমার হাত কাটতো আপনার কি তাতে।আপনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে কত চিন্তিত আপনি।’

‘তো আপনার কি মনে হচ্ছে আমি চিন্তিত নই।’

‘আপনি চিন্তিত রিয়েলি।’

‘জাস্ট সাট আপ মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।’

রোজার শুভর এসব বিরক্তিকর কথায় গা জ্বলে যাচ্ছে।রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম রোজার।রোজা এবার নিজেকে একটু কন্ট্রোল করে নিয়ে বললো,

‘আমাকে আপনার বাসায় ঝি এর কাজ করতে বললেন কোন সাহসে।’

‘শুভ ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে বললো,এতে সাহসের কি আছে মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।এখানে আপনি ঘুরতে এসছেন মাইন্ড ইট কাজ করতে নয়।কেনো কাজ করবেন আপনি?প্রয়োজনে এরা কাজের মানুষ রেখে নিবে তবুও আপনি কোনো কাজ করবেন না।আপনি যে মাছ ভালো ভাবে কাটতে পারেন না আপনার হাতের দিকে তাকিয়েই বুঝেছিলাম।হাত কেটে গেলে ব্যাথা পেতেন না।র*ক্ত বের হতো।আর আমি রক্ত দেখলে মাথা ঠিক রাখতে পারিনা।অসুস্থ হয়ে পড়ি।’

আসলেই কি শুভ র*ক্ত দেখতে পারেনা।নাকি রোজার হাত কাটা নিয়ে চিন্তিত।অপ্রকাশিত ভালোবাসাগুলো কি সুন্দর তাইনা?প্রকাশের আগে মনের মাঝে ছটফট করা ভালবাসা গুলো বাইরে বেরোনোর জন্য ভীষণ ছটফট করে।প্রেমে পড়ার মুহুর্তের থেকে সুন্দর মুহুর্ত কি এই পৃথিবীতে কোথাও আছে।একজন বিরক্ত করছে কথা বলার জন্য।অন্য জন বিরক্ত হয়েও ভালো লাগছে কথা বাড়ানোর জন্য।

‘রোজা আবার বললো,আর আমার হাসি নিয়ে সমস্যা কি আপনার?’

‘বিকজ একটু বেশী ড্যাস ড্যাস আপনার হাসি।’

‘ড্যাস ড্যাস কি।’

‘একটা ছেলে একটা মেয়ের হাসি নিয়ে নিয়ে কি বলতে চাই আপনি কি রিয়েলি বুঝেন না মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।আপনি কি এতটায় ছোট।আই থিংক বোঝার বয়স হয়েছে।’

রোজার মন মুহুর্তের মধ্য অন্যরকম ভালোলাগার দোলা দিলো।শুভ কি বলতে চাইছে সে অনুমান করতে পারলো।তবুও শুভর মুখে শোনার জন্য মরিয়ে হয়ে উঠলো।

‘আমি বুঝিনা আপনি বলুন।’

‘ওখানে ফাকা জায়গা রেখেছি,যেকোনো একটা বসিয়ে দিবো।’

‘একটু বেশী কী সেটা আগে বলুন।’

শুভ রোজার দিকে দু’পা এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘একটু বেশী বিশ্রী।হ্যাপি আপনি।’

‘রোজার সব আশা নিরাশায় পরিণত হলো।খুব আত্মসম্মানে লাগলো রোজার।একটা ছেলে তার হাসি নিয়ে এত বাজে কথা কিভাবে বলতে পারলো।এর দেওয়া এসব পোশাক আমি নিবো কেনো।এসব ভেবে রোজা শুভর হাতে তার হাতের শপিং এর ব্যাগ গুলা ধরিয়ে দিয়ে বললো ধরুন আপনার পোশাক।এসব আমি নিবোনা।আমাকে দুলাভাই এনে দিবে।আর আপনি মিথ্যা বলেছেন কেনো আমি আপনাকে টাকা দিয়েছি।’

‘পর পুরুষের থেকে নিবেন সেটা কি খুব ভালো দেখাতো।’

‘উনি মোটেও আমার পর পুরুষ নন, দুলাভাই।’

‘আমগাছ তালগাছ জোড়ানো দুলাভাই তাইতো?’

‘উনি পরপুরুষ আর আপনি কি আপণ পুরুষ। ‘

‘আমি তো ফ্রিতে দিচ্ছিনা।এর মূল্য পরে নিয়ে নিবো।’

‘ওহ বাবা আমি ভবলাম গিফট করছেন।ভালোই কিপটা আছেন।’

‘গিফট চাই আপনার সেটা বললেই তো হতো।আপনার বিয়েতে স্বয়ং আমাকেই গিফট করবো।’

‘আপনাকে দিয়ে কি গায়ে মাখবো।’

‘আমাকে গায়ে মাখলে তারপর কি হবে বুঝতে পারছেন তো।পারবেন আমাকে সামলাতে মিস ইরহাম আহমেদ রোজায়ায়ায়া।’

‘আপনি এত বেহায়া কেনো হ্যাঁ মিষ্টার অশুভ।আমাকে রাগাচ্ছেন আবার বেহায়ার মতো কথা বলছেন।’

‘শুভ ঝুঁকে এসে বললো,মানুষ কখন বেহায়া হয় জানেন।’

‘কিভাবে জানবো।আপনাকে না দেখলে বেহায়া কি চিনতাম ই না।’

‘মানুষ জীবনে একটা জায়গা বারবার বেহায়া হয়।যেহেতু আপনি এখনো তার উত্তর জানেন না।প্রশ্ন টা তোলা রইলো উত্তর খুজে পেলে জানাবেন।’

‘এসব বেহায়া কথার মানে খোজার দরকার নেই।আপনার এসব আমি নিবো না,কেনো এনেছেন আপনি।তাছাড়া আপনি আমার কিছুই হন না।’

‘আমি কিছুই না সিওর আপনি?’

‘হ্যাঁ সিওর।’

‘বাট আই এম নট সিওর।আই থিংক ইউ আর রং।যদি এগুলা এক্ষুনি গ্রহন না করেন ওইযে ভিডিও টা আছে আমাকে চুমু দেওয়ার ওটা আমি ভাইরাল করে দিবো।’

রোজা ভীষণ মসিবতে পড়লো।এই ভিডিও এর থ্রেটে আর কি কি করবে শুভ কে জানে।

–রাজ শিষ দিতে দিতে বাসায় প্রবেশ করলো।কিছুক্ষণ আগেই মাসরাফির সাথে দেখা করে ছবি তুলে এসেছে রাজ শুভ সাথে রাজের কয়েকজন ফ্রেন্ড।রাজের কয়েকজন ফ্রেন্ড ছিলো সাথে তারা রাজের বাসায় ই আসছিলো।কেননা রাজ রোজার ভীষণ প্রশংসা করেছে,রোজা দেখতে পরীর মতো।শুভর মনে হয়েছিলো রাজের গলা টি*পে ধরতে।শুভ রাস্তা থেকেই রাজের ফ্রেন্ডদের বিদায় করে বাসায় আসলো।কেননা শুভ চাইনি রোজাকে এসে এইভাবে সবাক দেখুক।হাতে আইসক্রিম নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলো রাজ আর শুভ। রোজার পরনে তখন কালো প্লাজু আর সাদা কামিজ,সাথে সাদা ওড়না।অসম্ভব সুন্দর লাগছে রোজাকে।রাজ রোজাকে দেখেই টাসকি খেয়ে গেলো।শাড়ি ছেড়ে আবার নতুন ড্রেস।রাজ বেশ সন্দিহান ভাবে বললো শুভ কে, ভাই শুভ এই মেয়েটার কত রুপ দেখলাম এই নিয়ে সব রুপেই রুপবতী।শুভ মুহুর্তে মুহুর্তে মুগ্ধ হচ্ছে রোজাকে দেখে।শুভ রাজ কে বললো অন্যর বউ হয় সে ভাই কন্ট্রোল কর না হলে পস্তাবি কিন্তু। রাজের কাছে বেশ সন্দেহ হচ্ছে শুভর ভাব ভঙ্গী।শুভর এই রোজার প্রতি অন্যরকম দৃষ্টি দেখে রাজ বলেই ফেললো শুভ তোর ভাবসাব ভালো লাগছে না কিন্তু।কাহিনী কী?শুভ বললো কাহিনী ইজ নাথিং ইয়ার।

নড়াইলে এসে কেটে গেছে তিনদিন।এই তিনদিনে অসংখ্যবার শুভ রাগিয়েছে রোজাকে।তাদের মাঝে ভালবাসার দরুণ খুনসুটি এগোচ্ছে।সোহানার ফোন থেকে রোজা কথা বলছে অহনার সাথে।অহনা মারাত্মক একটা নিউজ দিলো রোজাকে।রোজা চলে আসার দুইদিন পরেই অহনার বিয়ে ঠিক হয়েছে।ছেলেটা দেখতে নাকি মারাত্মক হ্যান্ডসাম।অহনা ভীষণ ভাবে খুশি ছেলের ছবি দেখে।অহনার খুশি দেখে রোজা বললো নিশ্চয়ই কোনো রাজপুত্রর সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে অহনা। অহনা বললো রোজা তুই দেখলে ক্রাশ খাবি পাক্কা।উফফফ কি যে হ্যান্ডসাম দেখতে।রোজা বললো,এক্ষুণি ছবি দেখা তার ফেসবুক আইডি দে আমাকে।অহনা বললো,আরে আমি জাস্ট ছবি দেখেছি রোজা ফেসবুক আইডি জানিনা।মাত্রই তো বিয়ে ঠিক হলো ধৈর্য ধর পাগলী।রোজা ভীষণ এক্সসাইটেড কখন সে অহনার হবু বরের ছবি দেখবে।সোহানা আর রোজা অহনার বিয়ে নিয়ে বিশাল প্লান করে ফেললো।বিয়েতে কে কি পরবে কে কি শপিং করবে।বেচারা রাজ আর শুভ রোজার কাছে পাত্তাই পাচ্ছেনা।সে এখন অহনার হবু বর নিয়ে চিন্তিত।এই রাজপুত্র দেখতে কেমন হবে।রোজা বারবার ভাবছে এই অশুভর থেকেও কি সুন্দর হবে দেখতে।না তা হতে পারেনা এই অশুভ টা সব থেকে সুন্দর দেখতে।শুভ কে অশুভ নামে ডেকেও ভীষণ তৃপ্তি পায় রোজা।এইদিকে শুভ সারাদিন রোজাকে দুই চার বার ভিডিওর কথা মনে করিয়ে যাচ্ছে।

সেদিন রাতে রাজ আর শুভ ঘুমিয়ে পড়েছিলো।রোজা চুপিচুপি রাজের ঘরে প্রবেশ করলো।তার উদ্দেশ্য শুভর ফোন থেকে তার ভিডিও খুজে বের করা আর ডিলিট করা।শুভর ফোন নেওয়া কি অতটাও ইজি ছিলো।

চলবে?