#বৃষ্টিবিলাস
২২.
#Writer_Mousumi_Akter
পায়ে ভীষণ ব্যাথা না হলে রোজা হয়তো এক লাফে ছাদ থেকে নেমে যেতো না হলে কোনদিকে দৌড় দিতো তার ঠিক নেই।কি লজ্জাজনক ব্যাপার। রোজা একটা মেয়ে হয়ে নিজে থেকে প্রেমিকের কপালের ঠোঁট ছোঁয়াতে এগিয়ে গেলো।ইস কি ভয়ংকর রকমের লজ্জা ছিলো সেটা।হঠাত করে ব্যাপার টা ভেবে রোজা যেনো লজ্জায় ম*রেই যাচ্ছে।হাতের মধ্য কত গুলো ফুল কচলিয়ে তার অবস্থা ভয়াবহ করে ফেলেছে।রোজা যত লজ্জা পাচ্ছে শুভ ততটায় মুগ্ধ হচ্ছে,মুগ্ধ হয়ে দেখছে রোজাকে।একটা মানুষ যখন মুগ্ধ হয় পৃথিবীর সব মুগ্ধতা যেনো তার উপর উপচে পড়ে।এত মুগ্ধতা কোনো ছেলের মাঝে থাকে রোজা আগে কখনো দেখেনি।রোজা সব লজ্জা বিসর্জন দিয়ে তাকিয়ে আছে শুভর মুখের দিকে।শুভ পকেট থেকে সিম্পল একটা রিং বের করে রোজার হাতের আঙুলে পরিয়ে দিলো।আলতো ভাবে ধরে রেখেছে রোজার হাত।শুভর ইচ্ছা করছে এই সুন্দর আঙুলে ঠোঁট ছুইয়ে দিতে।দেওয়া টা কি ঠিক হবে।যদিও এটা ভালবেসে দেওয়া হবে কিন্তু রোজা কি সেটা পজিটিভ মাইন্ডে নিবে।না না এই অচেন জায়গা অচেনা শহরে মেয়েটা তাকে ভরসা করেছে অন্ধের মতো।তার বিশ্বাসের সামান্যটুকু অসম্মান করা যাবে নাহ।রোজার চোখে একটুও খারাপ হতে চাই না শুভ।
রোজার দুই হাত শক্ত ভাবে ধরে বললো,রোজা এই শক্ত বাঁধন অটুট থাকবে চিরদিন।আমি তোমার সেই প্রেমিক হতে চাইনা রোজা যেখানে ভালবাসা প্রকাশ করতে চুমু দিতে হয়,হাগ দিতে হয় বা শরীরের খুব কাছাকাছি যেতে হয়।আমি মনের কাছাকাছি একটা ঘর বাঁধতে চাই আমাদের দুজনের জন্য যেখানে থাকবে পবিত্রতা।রোজা এবার আরো ভীষন ভাবে শুভর মায়ায় আটকে গেলো।রোজা ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে।আজ নিশ্চয় তার বাবা তাকে মেনে নিবে।শুভ কে দেখলে তার বাবা আর রাগ অভিমান করে থাকতে পারবে না।এক্ষুণি ছুটে গিয়ে বাবাকে বলতে ইচ্ছা করছে বাবা আমি আমার জন্য যোগ্য ছেলে খুজে পেয়েছি।তুমি চাইলে পরখ করে দেখতে পারো।রোজার হঠাত মন খারাপ ভালো করতে শুভ বললো,
“বাট তুমি চাইলে আমি আপত্তি করবো না।তুমি চাইলে আমাকে কিস দিতেই পারো।এটা ভেবোনা আমি খুব আনরোমান্টিক। এমন রোমান্টিক মোমেন্ট এ কিস দিতে মন চাইছে না এমন কিন্তু নয়।আমার আরো অনেক কিছুই ইচ্ছা করছে।তবে সেসব বিয়ের পরে আনলিমিটেড পাবে।তখন না না এখন না তখন না করলে কাজ হবেনা।তখন হবে আনলিনিটেড আদর মিস ইরহাম আহমেদ রোজা বেবি।এখন চুমু দিলে আমার চরিত্র নিয়ে তোমার সন্দেহ হতে পারে।”
“রোজা ভীষন লজ্জা পেয়ে বললো,দেখুন আর কিছু বললে কিন্তু… ”
“আরো লজ্জা পাও।শুধু আজ নয় রোজ ই লজ্জা পাবে আমার সামনে।লজ্জা ছাড়া আমার সামনে না আসলে তোমাকে আদর করতে ভালো লাগবে না।”
“ধ্যাত আমাকে এক্ষুণি নিয়ে যান এখান থেকে।”
“কাল ই রাজ কে বলবো তোমার আর আমার কথা।রাজ হবে আমাদের বিয়ের সাক্ষী।তোমার আর আমার বিয়ে কাল মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।আজ যে চুমু টা দিতে চাইছিলে কাল যেনো চাওয়া না লাগে।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাল ই বিয়ে করবো আমরা।”
“কাল ই বিয়ে।”
“সময় চাও?..”
“না মানে।”
“আজ রাত ভেবে দেখো কিন্তু।আমার মতো এই গরীব কে বিয়ে করলে কিন্তু বড়লোকদের মতো হানিমুন প্যাকেজ পাবে না।”
“আমার লাগবে না সেসব।”
“ভরসা রেখো রোজা।একদিন তোমাকে নিয়ে বিশাল লম্বা ট্যুর দিবো। বিশ্ব ঘুরে দেখবো এটা বলতে পারছি না তবে কখনো বড়লোক হলে ভিন্ন কথা ।তবে এই বাংলাদেশের ই তোমার দুই একটা পছন্দের জায়গা আর আমার দুই একটা পছন্দের জায়গা ঘুরে দেখবো।সেটা কি বিশ্ব ঘোরার থেকে কম কিছু হবে।প্রিয়জনের সাথে প্রিয়জনের প্রিয় কিছু জায়গা তার হাত ধরে ভ্রমন কি বিশ্বভ্রমনের থেকে কম আনন্দের হবে।ইস ভাবতেই কি ভালো লাগে তাইনা।রোজা।”
“রোজা বললো,আপনি আমার কাছে এই বিশ্ব। ”
“আমাকে এইভাবে আপনি আপনি করলে কি কখনো আমার সাথে ইজি হতে পারবে।তোমাকে ফ্রি হতে হবে আমার সাথে।আমাকে তুমি করো বলো।”
“বলবো বিয়ের পর।”
“না এখনি বলো। ”
“তুমি হয়েছে।”
“এটা কেমন তুমি সম্মোধন।সুন্দর ভাবে কিছু বলো।”
“এত্ত জিদ করেন কেনো হুম।সরি করো কেনো?আমাকে এইবার নিয়ে চলো তাহলে?”
“শুভ আবার রোজাকে কোলে তুলে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো।”
এইদিকে রাজ ভেবে রেখেছে সে কাল রোজাকে তার ভাললাগার কথা জানাবে।ভালবাসার কথা জানাবে।রোজার উত্তর টা শুনে সে শুভ কে জানাবে।রোজার জন্য একটা সারপ্রাইজ ভেবে রেখেছে।অপেক্ষা করছে পরেরদিন সকালের।পরেরদিন সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে সোফায় বসে চা খাচ্ছে।
“রাজ বললো,শুভ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে করবো।”
“বাহ ভালো তো!মারাত্মক একটা খাওয়া পাচ্ছি তাইতো।”
“ইয়েস ব্রো।তবে আমাদের হানিমুন প্যাকেজ টা তোর দিতে হবে।”
“রোজা বললো,উনি বড়লোক হলে নিশ্চয়ই দিবে।”
“রাজ বললো,বড়লোকের বেটাকে বলছো বড়লোক হলে দিবে।”
“কে বড়লোক?”
“আমাদের আয়ান কোম্পানির মালিক কে কি বড়লোক ছাড়া অন্য কিছু বলে। সে হলো কোটিপতি রোজা।”
“শুভ বললো একটু বেশী বলা হচ্ছে না রাজ। এত বাড়তি কথা বললে কিন্তু হানিমুন প্যাকেজ দিবো না। ”
“রোজা বললো সোহানা আপু এইবার আমাকে ফিরতে হবে।অনেকদিন ই তো রইলাম।এইবার বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।তাছাড়া অহনা টার বিয়ে।আমি ছাড়া বেচারি বিয়ে করবে না। ”
“সোহানা বললো আঙ্কেল এর মাথা থেকে সে ভূত নেমেছে।সেই বুইড়া।”
“হুম খবর নিয়েছি বিয়ে ভেঙে গিয়েছে।এখন নিশ্চিন্তে যেতে পারবো।”
“তাহলে আর সাতদিন লেট কর।এক সাথেই যাবো।”
“ওকে আপু ডান।”
সেদিন দুপুরে শুভ ঘুমিয়েছিলো।বাড়ির বাকি সবাই ও ঘুমিয়েছিলো।রোজা একা একা বসে টিভি দেখছিলো।তখন রাজ এসে পাশে বসলো রোজার।রাজ কিছুক্ষণ রোজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ইয়ে রোজা কাউকে ভালোলাগে তোমার।
আই মিন বিশেষ কেউ।যাকে ভালবাসতে পারবে।”
“রাজ ভাইয়া আই এম ইন লাভ। আপনাকে আজ ই বলতাম।”
“আই নো রোজা।বাট তুমি নিজে বলো।”
“শুভ আমাকে ভালবাসে। ”
“রাজ হো হো করে হেসে বললো শুভ। ”
“রোজা বেশ অবাক হয়ে বললো,হাসছেন কেনো?হাসির কি বললাম।আমি তো একটা সিরিয়াস কথা বললাম ভাইয়া।”
“বিকজ ও তেমন কিছু বললেও সেটা ফ্লার্ট করেছে।”
“নো ও আমাকে ভালবাসে।”
কথাটা রোজা কনফিডেন্স এর সাথে বললো।তখন রাজের মন ভীন্ন কথা বললো।রাজের পরাণ কাঁপছে কিছু হারানোর ভয়ে।চোখ মুখ ফ্যাকাসে করে বললো,
“আর তুমি?”
“আমি শুভকে ছাড়া বাঁচবো না রাজ ভাইয়া।আমার জীবনের প্রথম প্রেম শুভ।আমি ভালবাসার মানে বুঝেছি শুভর থেকে।শুভ আমায় ভীষণ ভালবাসে।”
রাজের ভেতরে এক তুফান শুরু হলো।অনেক কিছু ভেবে এসেছিলো রাজ।জীবনে প্রথমবার সে এত বেশী সিরিয়াস ছিলো।চোখে পানি চলে এসছে কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো রাজ।বারবার চোখের পলক ফেলে পানি আড়াল এর চেষ্টা করে বললো,
“শুভর ফিওন্সি আছে রোজা।ও আমার সামনেই ওর বাবার সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলে।দেখো শুভ অনেক ভালো ছেলে।তোমার জন্য শুভ বেষ্ট ছেলে হলো যদিনা ওর ফিওন্সি না থাকতো।একটা ভরসা থাকতো যদি এটা ওর ফ্যামিলির ঠিক করা পাত্রী হতো।এই মেয়েকে শুভ নিজের জীবনের থেকে বেশী ভালবাসে।সেই ছোটবেলা থেকেই ভালবাসে।একটু বড় হয়েই ওর আম্মুকে বলেছে।ওর আম্মু ওর বাবাকে বলেছে।ওর বাবা সেই মেয়ের বাবার সাথে কথা বলে বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।শুভ সেই মেয়ের জন্য কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি পর্যন্ত।ভীষণ ভালবাসে শুভ সেই মেয়েকে।সেই মেয়েকে বিয়ে করা শুভর স্বপ্ন।কোটিপতি বাবার একমাত্র ছেলে।ছেলে যা দাবি করে এনে দেয়।তুমি যখন শুভকে ভালবাসো আমি কথা বলে দেখবো ওর সাথে।ডোন্ট ওরি রোজা।সব ঠিক হয়ে যাবে আমি আছিতো।”
এটুকু বলেই নিজের যন্ত্রণা আড়াল করতে রাজ উঠে চলে গেলো।
পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে রোজার।ভীষণ ভূমিকম্প হচ্ছে মনের ভেতর।এত বড় বেঈমানি,এত বড় ধোঁকা শুভ তাকে কিভাবে দিলো।মাথার ভিতর ঘুরাচ্ছে রোজার।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে রোজার।টপ টপ করে চোখের পানি পড়ছে।এখানে ভালো ভাবে কাঁন্না করার ও উপায় নেই তার।এটা পরের বাড়ি।আজ তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো শুভর সাথে।কিভাবে ঠকে গেলো ভেবেই কষ্টে বুক ফেঁটে যাচ্ছে রোজার।এক সেকেন্ড দেরি না করে নিজের বাবার কাছে রওনা দিলো।
চলবে,,