বৃষ্টিবিলাস পর্ব-২০+২১

0
438

#বৃষ্টিবিলাস
২০.২১
#writer_Mousumi_Akter

রোজার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে মূল্যবান জিনিস তার জীবনের সব থেকে অমূল্য কোনো সম্পদ রাজের হাতে রয়েছে আর রাজ সেটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ফুলটা এত দামী রোজার কাছে যেনো এর থেকে মূল্যবান কিছু রোজার জীবনে নেই। এই ফুলটা কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফুল বলে মনে হচ্ছে রোজার কাছে।আসলে যে মানুষ টা গুরুত্বপূর্ণ তার দেওয়া সামান্য জিনিস ও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এটা একমাত্র যে ভালবাসে সেই বুঝতে পারে।এত গভীর ভাবে রোজা কাউকে ভালবাসবে সেটা শুভর সাথে দেখা না হলে বুঝতো না।রাজ ফুলটা একবার উপরে তুলছে আর একবার নিচে নামাচ্ছে আর রোজা বার বার বলছে প্লিজ ভাইয়া ফুলটা দিন।আপনি অন্য যা কিছু আছে নিয়ে নিন তবুও এই ফুলটা দিয়ে দিন।
রাজ রোজাকে ক্ষেপাতে বলে যাচ্ছে,উহু দেওয়া যাবে না কি আছে এই ফুলে।এর রহস্য না জেনে ফুলটা দিবোনা।
রোজা দুঃখী দুঃখী মুখে বলছে,দেখুন এটা কিন্তু ঠিক না।এই ফুলটা আমার প্রাণের থেকেও প্রিয় রাজ ভাইয়া।রাজ আরো সন্দীহান ভাবে প্রশ্ন করছে,প্রাণের থেকেও প্রিয় যখন তখন তো এটা নিয়ে একটু বেশী গবেষণা করতে হচ্ছে রোজা।ঠিক কি কারণে এই ফুলটা প্রাণের থেকে প্রিয়।
রোজার মুখের কাঁদো কাঁদো অবস্থা খুব।ভীষণ কাকুতি মিনতি করে বলছে রিকুয়েষ্ট করছি প্লিজ রাজ ভাইয়া ফুলটা দিন না।রাজ এ হাত থেকে ও হাতে ছুড়ছে ফুলটা।এটা দেখে রোজার বুকে যেনো র*ক্তক্ষরণ হচ্ছে।প্রিয় জিনিস অন্যর হাতে থেকে নষ্ট হতে দেখা খুব একটা সহজ কথা নয়।
শুভ রাজ কে বললো,ভাই বাচ্চা মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে দিয়ে দে না।শুধু শুধু পেইন দিচ্ছিস কেনো?রাজ বললো,নো ভাই এই ফুল আমি দিবোই না, এই ফুলের রহস্য কী আমি জানতে চাই।শুভ বললো,ভাই রোজা কিন্তু এবার কেঁদে দিবে, তার চোখের পানি সহ্য করতে পারবো না।রাজ শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,এত দয়ালু কবে হলি যে কারো চোখের পানি সহ্য করতে পারবি না বলেই রাজ ছাদের দিকে ছুটে গেলো।রোজা ও পিছে পিছে ছুটে গেলো।শুভ বাধ্য হয়ে নিজেও গেলো তাদের সাথে।রাজ ছাদের এদিক থেকে ওদিক থেকে ছুটছে আর রোজা ও ছুটছে।শুভ ছাদের ওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের ছোটাছুটি দেখছে।ছাদ দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ছোটাছুটির পর রাজ নিচে নেমে এলো। শুভ অসহায় এর মতো তাদের দৌড়াদৌড়ি দেখছে।রাজ নিচে গেলে রোজা নেচে নামতে গিয়ে পায়ের তালুতে জিনেরি ফুটে গেলো।রাজ এতক্ষণে নিচে চলে গিয়েছে।ছাদের কাজ চলছে বলে জিনেরি ইট বালু এদিক সেদিক ছড়ানো ছিটানো রয়েছে।তাড়াহুড়ো তে রোজা খালি পায়ে ছুটে এসেছিলো ছাদে।রোজা ব্যাথায় আতকে উঠলো সাথে সাথে।প্রচন্ড ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে বসে পড়লো।শুভ দ্রুত এসে রোজাকে ধরলো।রোজা ছাদে বসে পড়লো।শুভ ও রোজাকে ধরে বসে পড়লো।চোখ মুখ বন্ধ করে ছটফট করছে রোজা।শুভ দ্রুত রোজার পা দেখে বললো ওহ মাই গড।মনের সব থেকে কাছাকাছি থাকা মানুষ যে পুরা মনের রাজত্ব করে সে কোনো ব্যাথা পেলে অপরপাশে থাকা মানুষটা বোধহয় বেশী ব্যাথা অনুভব করে।শুভর মনের অবস্থা সেইম।কি বলবে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।শুভর হাতের উপর রোজা যন্ত্রনায় নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিয়েছে।শুভ রোজাকে বলছে প্লিজ একটু সহ্য করো আমি এক্ষুণি এটা বের করে দিচ্ছি।শুভ রোজার পা থেকে জিনেরী টা এক টানে বের করলো।র*ক্ত গড়িয়ে পড়লো সাথে সাথে।রোজার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ব্যাথায় স্হির থাকতে পারছে না রোজা।পা ভীষণ ছটফট করছে তার
রোজার ফর্সা নরম পায়ে জিনেরি ফুটাতে মনে হচ্ছে শুভর হৃদয়ে ফুটেছে।শুভ রোজার পা চেপে ধরে বললো সামান্য একটা ফুলের জন্য নিজের ক্ষতি করতে চাও।কি এমন ছিলো ফুলে আমি তোমার জন্য এমন হাজার টা ফুল এনে দিতাম রোজা।ব্যাথা তুমি পেয়েছো তার থেকে ভীষণ বেশী ব্যাথা আমার অনুভব হচ্ছে।
রোজা ব্যাথা দমিয়ে সহ্য করার চেষ্টা করে চোখ বন্ধ করে বললো,ওটা সামান্য নয়,আপনি এবং আপনার দেওয়া জিনিস দুটোই ভীষণ মূল্যবান আমার কাছে।প্লিজ কখনো কোনো জিনিস সামান্য বলবেন না।রোজা চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে বললো,আপনাকে ভালবাসি আমি শুভ,ভীষণ ভালবাসি কেনো জানিনা?ব্যাথায় ছটফট করা একটা মেয়ের মুখে ভালবাসি শুনে শুভর চোখে ও পানি চলে এলো।ছেলেরা সহজে কাঁদে না।তবে তারাও যে ইমোশনাল হয়না এটা ভুল কথা।ছেলেরা প্রকাশ করতে পারেনা তবে তাদের ভালবাসা অনেক গভীর হয়।শুভ রোজাকে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো,এক হাতে রোজাকে আগলে ধরে বললো, ভালবাসি পাগলি টা,কেঁদোনা প্লিজ। আমি আছিতো,কোনো যদি সিস্টেম থাকতো তোমার সব ব্যাথা নিজের ভেতরে নিয়ে নিতাম।শুভ রোজার ওড়নার এক সাইড ছিড়ে রোজার পা বেঁধে দিলো।রোজা বললো,নতুন ওড়না কিনে দিয়েছেন ছিড়ে ফেললেন।শুভ বললো,এমন হাজার টা ওড়না দিবো তোমায় আমার শুধু তুমি চাই রোজা।পৃথিবীর কোনো কিছু তোমার থেকে মূল্যবান নয়।বেশ কিছুক্ষণ পরে রোজা পা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।শুভ এক ঝটকায় রোজাকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে গেলো।রাজের আম্মা সহ সবাই ভীষণ অবাক।রাজ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।শুভর কোলে রোজা কিন্তু কেনো?রাজের আম্মা বসে একটা ইসলামিক বই পড়ছিলেন। হঠাত এমন দৃশ্য থমকে গেলেন।রাজের চোখ রোজার পায়ের দিকে গেলো।রাজ বললো কি হয়েছে রোজার পায়ে।শুভ বললো,তোর সাথে ছোটাছুটি করে পায়ে জিনেরি ফুটে গিয়েছে।রাজ মাথায় হাত দিয়ে বললো ওহ শিট!রাজের আম্মা অতি ব্যাস্ত হয়ে বললেন, এখানে বসিয়ে দাও বাবা।সোহানা শিঘরি এদিকে এসো।শুভ রোজাকে সোফাতে বসিয়ে দিলো।রাজ পাশের বাসায় একজন ছোট খাটো ডাক্তার এর কাছে গেলো,রোজার পায়ের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য।কিছুক্ষণের মাঝে ডাক্তার এসে রোজার পা স্যাভলন লাগিয়ে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে চলে গেলো।রাজ কে একটু তার আম্মা বকা ঝকা করলো।শুভ বললো,আন্টি ব্যাপার নাহ এতে রাজের দোষ নেই।শুভ রাজ কে ভীষণ ভালবাসে যেনো তার ভাই। রাজের জন্য এক জীবনের অনেক কিছুই স্যাক্রিফাইস করতে পারবে।রাজ এর মন খারাপ বা কেউ বকলে মেনে নিতে পারেনা।রাজের নিজের কাছে ভীষণ খারাপ লাগছে তার জন্য রোজার এমন অবস্থা হলো।শুভ রাজের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,ডোন্ট ওরি ইয়ার।এটা জাস্ট এক্সি*ডেন্ট ছিলো আর কিছুই না।রাজ ভীষণ লজ্জিত ভাবে রোজার হাতে ফুলটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,সরি রোজা আমি বুঝতে পারিনি যে একটা ফুল এতটা সিরিয়াস হতে পারে কারো জীবনে।আমার জন্য তোমার এতটা কষ্ট হচ্ছে।রোজা হেসে বললো প্লিজ ভাইয়া আপনি কষ্ট পাবেন না।আমার এখন একটুও ব্যাথা লাগছেনা।আমি একদম ঠিক আছে।রাজের আম্মা বললো,কেমন একটা কাজ হলো মা।আমাদের বাড়িতে এসে তোমার এমন একটা ক্ষতি হলো।আমার ঘুম হবেনা আজ।সোহানা বললো ভাববেন নাতো মা আপনি।রোজা সকালেই ঠিক হয়ে যাবে।

রাতে খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।রোজার ঘুম আসছে না।আজ ই তার পায়ে এমন হতে হলো।শুভর দেওয়া সারপ্রাইজ টা তাকে দেখতেই হবে।কিন্তু কিভাবে যাবে সে।হাঁটতেই পারছে না।রোজা জানে শুভ এখনো ঘুমোয় নি।তার পায়ের এ অবস্থায় শুভ ঘুমোবেনা।রোজা আস্তে করে বেরিয়ে এলো এক পায়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। রোজার রুমের দরজা খোলার শব্দ শুনেই শুভ বেরিয়ে এলো।শুভ কে দেখেই রোজা বললো সারপ্রাইজ টা।শুভ বললো,রোজা প্লিজ তুমি ঘুমিয়ে যাও।তোমার পায়ের অবস্থা ভালোনা।পায়ে চাপ দেওয়া যাবেনা।তোমাকে প্রতিদিন ই সারপ্রাইজ দিবো আমি।আজ ঘুমিয়ে যাও।রোজা খুব অভিমানি সুরে বললো,না আমি এক্ষুণি দেখতে চাই।প্রেমিকার এমন আবদারে শুভ রোজাকে কোলে তুলে বললো চলো কোলে করেই নিয়ে যায়।হেঁটে তো যেতে পারবেনা।

চলবে,,
#বৃষ্টিবিলাস
২১.
#Writer_Mousumi_Akter

–ভালবাসার মানুষের জন্য পৃথিবীর সব কষ্টই তুচ্ছ মনে হয়।রোজার পায়ের ভয়ানক ব্যাথা ও রোজার কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছিলো রোজার কাছে।শুভ তাকে কি বলতে চায়, কি সারপ্রাইজ দিতে চায় সেটা জানতে না পারলে পায়ের ব্যাথার থেকে হাজারগুন বেশী ব্যাথা রোজার ভেতরে প্রলয় এর মতো শুরু হতো।শরীরের আঘাত ভালবাসার মানুষের থেকে দূরে থাকার আঘাতের কাছে ভীষণ তুচ্ছ।প্রেমিকার মিষ্টি আবদার রাখতে প্রেমিক তার সব কষ্ট ভুলে প্রেমিকাকে কোলে তুলে নিলো।লাভ পাওয়ার ইজ দ্যা বেষ্ট পাওয়ার এটাই আরেকবার প্রমানিত হলো এই দুজন ভালবাসার মানুষের কাছে।পাজা কোলে শুভর গলা জড়িয়ে ধরে আছে রোজা।রোজার মুখে মিষ্টি হাসি।শুভ রোজাকে কোলে তুলে সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠলো।ছাদে উঠে স্নিগ্ধ আকাশের দিকে তাকালো শুভ।আকাশ টা সম্পূর্ণ নীল।মাঝে মাঝে দুই এক খন্ড সাদা মেঘ ভেষে বেড়াচ্ছে।আকাশ জুড়ে তারার মেলা।ক্ষয় হয়ে যাওয়া চাঁদ টা সোনালি আলো ছড়িয়েছে ধরণীর বুকে।

“শুভ রোজার দিকে তাকিয়ে বললো,সৃষ্টিকর্তার কী নিঁখুত সৃষ্টি তাইনা রোজা?”

“রোজা বললো,কিসের কথা বলছেন।?”

“এইযে চাঁদকেই দেখোনা।ক্ষয় হয়ে যাওয়া চাঁদটা একাই কীরণ ছড়াচ্ছে পুরো পৃথিবী আলোকিত করে ফেলছে।এমন নিঁখুত সৃষ্টিকারী আবার নারীকে সৃষ্টি করেছেন।নারীকে ভাবলে আমি ভীষণ অবাক হয়ে যায়।আমাদের সৃষ্টিকর্তা কি সুন্দর আর নিঁখুত কারীগর।এই নারীর মাঝে সৃষ্টিকর্তা এমন কিছু দিয়েছেন যা পৃথিবীতে আর কারো মাঝে দেন নি।একটা পুরুষ সব জায়গা হুংকার ছাড়লেও কোন না কোন নারীর কাছে দূর্বল ভীষণ দূর্বল।কোন না কোন নারীর জন্য তার ভালবাসার পাওয়ার জন্য মাথা নোয়াতে বাধ্য। এই নারীর প্রেমে আমি জীবনে প্রথমবার পড়েছি।এটাকে প্রেম বলবো নাকি মায়া বলবো সেটাও জানিনা।কাউকে কেয়ার না করা কারো কাছে বাধ্য না থাকা এই ছেলেটা কেমন যেনো আটকে গিয়েছে একটা নারীর মায়ায়।এই আমার প্রথম সর্বনাশ আমি তোমার চোখে দেখেছিলাম।আমার জীবনের সব কিছু তুমি ছাড়া এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো।সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো সব কিছু আবার গোছাতে মনের কাছাকাছি তোমাকে প্রয়োজন।কেননা তোমাকে দেখার পর থেকেই সব এলোমেলো হয়েছে আমার।আমি যে তোমার কথা ভাববো না সেটা হচ্ছেনা।আমার মন আমার কথা শুনছেনা।সে তোমার কথায় বারেবার ভেবে যাচ্ছে।আমার মন হারিয়েছে রোজা তোমার ভালবাসায়।আসলে এটা কি প্রেম নাকি মায়া।আমার মনে হয় এটা মায়া।প্রেম ক্ষণিকের জিনিস আর মায়া চিরস্হায়ী জিনিস।কারো প্রেম থেকে বেরোনো যায় মায়া থেকে তো বের হওয়া যায় না।এই মায়ায় ভালবাসা রোজা।”

রোজা মুগ্ধ হয়ে শুভর কথা শুনে বললো,

“জীবনে ভালবাসার এত সুন্দর ব্যাখ্যা আমি শুনিনি শুভ।আমি বুঝেছি এটাই সারপ্রাইজ ছিলো। এবার নামিয়ে দিন আমায়।হাতে ব্যাথা পাচ্ছেন তো।”

শুভ মৃদু হেসে বললো,

“ব্যাথা পাচ্ছি এটা কে বললো হুম।কিছু ব্যাথা বরং আরো কমেছে তোমার কাছে আসাতে।এইযে তোমাকে কোলে তুলতে না পারলে বোধহয় ভীষণ এক কষ্ট থেকে যেতো আর থেকে যেতো আফসোস।”

রোজা শুভর শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললো,

“সেটা তো বুঝেছি মিষ্টার প্রেমিক।কিন্তু এই তিপ্পান্ন কেজি ওজনের এই আমাকে কোলে তুলে এতক্ষণ ধরে রাখা সহজ কথা নয়।”

শুভ রোজার নাকে নিজের নাকে হালকা ঘষা দিয়ে বললো,

“মিস প্রেমিকা আপনার এই প্রেমিক কে এত দূর্বল ভাবা ঠিক নয়।নিজের প্রেমিকাকে সারাজীবন কোলে তুলে দাঁড়িয়ে থাকার সামর্থ আমার আছে।”

রোজা বললো,

“সারপ্রাইজ টা তো পেয়ে গিয়েছি মিষ্টার প্রেমিক।এবার তো নামিয়ে দিন।”

“নো মিস প্রেমিকা সারপ্রাইজ সামনে বহুদূরে।”

রোজা ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে বললো,

“বহূদূর সে কোথায় মিষ্টার প্রেমিক।”

“আপনি আমার গলা জড়িয়ে ধরে রাখুন টাইট ভাবে মিস প্রেমিকা।আপনার এই প্রেমিকের ছোট্ট আয়োজন আছে তার প্রেমিকার জন্য।”

শুভ রোজাকে নিয়ে রাজদের ছাদ থেকে পাশের ছাদে গেলো।রোজা এটা দেখে ভীষণ অবাক হয়ে বললো,

” আরে এ কি করছেন।আপনার কষ্ট হচ্ছে আমি জানি।প্লিজ নামান।”

“শুভ নেশা জড়ানো কন্ঠে বললো,মিস প্রেমিকা লাভ পাওয়ার ইজ দ্যা বেষ্ট পাওয়ার।”

এক এক করে কতগুলো ছাদ পার হয়ে গেলো।রোজার জীবনে অনেক মুভি নাটক রিয়েল লাইফ কাপল দেখেছে।কিন্তু কখনো কোনো প্রেমিক কে এইভাবে প্রেমিকাকে কোলে তুলে এক ছাদ থেকে আরেক ছাদ ভ্রমন করতে দেখে নি।শুভ আসতে আসতে কত দূরে এসেছে তার ঠিক নেই।লাস্ট ছাদটায় এসে শুভ থেমে গেলো।এই অচেনা শহরে শুভ এত আয়োজন কিভাবে করলো।শুভ হাঁপিয়ে গিয়েছে।যতই মুখে বলুক কষ্ট হচ্ছে না কষ্ট কি না হয়ে যায়।তবুও এই কষ্ট যেনো তুচ্ছ শুভর কাছে।শুভ রোজাকে ছাদে রাখা একটা ডিভানে বসিয়ে দিয়ে বললো,

“মিস প্রেমিকা একটু জিরিয়ে নেই।”

“রোজা হেসে বললো,আমি তো আগেই বলেছিলাম।বাই দ্যা ওয়ে এখানে কেনো এসেছি।”

শুভ রোজাকে পশ্চিমদিকে দেখালো।সেখানে তাকিয়ে রোজা অবাক।বিশাল বড় একটা ডালিয়ার ক্ষেত।চারদিকে শুধু ফুল আর ফুল।শুধু ফুল ই তার সৌন্দর্য নয়।ফুলের ক্ষেতে লেখা উইল ইউ ম্যারি মি রোজা।রোজা খুশিতে মুখে হাত দিলো।এমন জীবন্ত সারপ্রাইজ রোজা এর আগে দেখে নি।ভীষণ বড় ফুল ক্ষেত থেকে ফুল কেটে ফাঁকা ফাঁকা করে উইল ইউ ম্যারি মি রোজা লেখা।ভীষণ বড় ফুল ক্ষেতের মাঝে কত গুলো ফুল কেটে ফাঁকা করে লেখায় দূর থেকে ফুল ক্ষেতের লেখাটা আরো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।রোজার মুখের হাসি দেখে শুভর মনে হচ্ছে তার পরিকল্পণা সাকসেস।পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মুহুর্ত প্রেমিকার মুখের হাসি।এই হাসি চাঁদের সৌন্দর্যর থেকেও সুন্দর।

“রোজা বললো,শুভ এসব কিভাবে সম্ভব।”

এরই মাঝে একজন আধাবয়সী লোক উঠে এসে বললো,ভালবাসলে সব সম্ভব ম্যাম।স্যার আপনাকে ভীষণ ভালবাসে তাই সম্ভব।এটা আমাদের ফুল ক্ষেত এখানে আরো অনেক ফুলের চাষ করি আমরা।বিভিন্ন প্রেমিক-প্রেমিকারা ঘুরতে আসে এখানে।প্রেমিকরা প্রেমিকদের ফুল উপহার দিয়ে থাকে।স্যার ও এসছিলেন আর বললেন আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।স্যার রিকুয়েষ্ট করলো আমরা যেনো মাঝ থেকে ফুল গুলো কেটে উইল ইউ ম্যারি মি লিখে দেই।স্যার কাটা ফুল গুলোর ও দাম দিয়েছেন।আর এই ছাদ টা আমার ই।এই ফুল বাগান আমার ই।অনেক অনেক শুভ কামনা ম্যাম আপনাদের জন্য।

রোজা ছাদের আরেক কর্ণারে তাকিয়ে দেখলো কয়েক’শ বেলুনের সমারোহ।ক্ষেত থেকে কেটে আনা ফুল ছাড়া বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো।প্রেতিটা মেয়েই ফুল দেখে মুগ্ধ হয়।তাইতো শুভ প্রেমিকাকে খুশি করতে অচেনা শহরে দূর অজানায় প্রেমিকাকে ভীষণ সারপ্রাইজ দিলো।এমন ভাগ্য বোধহয় কম মেয়ের জীবনেই আছে।ডিভানে বসে রোজা খুশিতে পাগল প্রায়।শুভ রোজার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,

“সেদিন তপ্ত রোদে, কড়া রোদ্দুরে ঘামে চিপচিপে শরীরে তোমাকে চেয়েছিলাম।আজ আর পুরোটায় ভীন্ন ভাবে তোমাকে চাইছি।আজ নরম চাঁদের জোসনায় তোমাকে চাইছি।কড়া রোদ্দুর হোক,স্নিগ্ধ চাঁদের আলো হোক সব কিছুতেই তোমাকে চাই রোজা।আমার জীবনের প্রথম প্রেম রোজা,প্রথম ভাল লাগা,প্রথম ভালবাসা,প্রথম চাওয়া কোনো নারী।রোজা দিন পেরিয়ে রাত, রাত পেরিয়ে ভোর,সপ্তাহ পেরিয়ে মাস,মাস পেরিয়ে বছর,বছর পেরিয়ে কয়েকটা যুগ তোমার সাথে কাটাতে চাই রোজা।এই কাঁচা চুলের রং সাদা হওয়া পর্যন্ত তোমাকে চাই রোজা,টানটান চামড়া কুকড়ে ভাজ পড়া পর্যন্ত তোমাকে চাই রোজা।আমার জীবনের সব ভালো আর খারাপ এর সঙ্গী হিসাবে তোমাকে চাই রোজা।কখনো ভীষণ বিলাসিতা হয়তো দিতে পারবো না রোজা তবে এক মুঠো প্রেম রোজ নতুন ভাবে তোমাকে দিতে পারবো।ভীষণ বিলাসিতার হয়তো অভাব হবে তবে ভীষন ভালবাসার অভাব হবেনা রোজা।এই জায়গাটা হয়তো সাজেক ভ্যালি, নীলগীরী,হিমছড়ি বা সমুদ্রের মতো সুন্দর নয়।সামর্থ থাকলে এক্ষুণি সেখানে নিয়ে প্রপোজ করতাম তোমায়।কিন্তু রোজা ভালবাসা প্রকাশের জন্য সঠিক মানুষ টা হলে ভালবাসার আলোতে সব জায়গা ই সুন্দর। আমি এলোমেলো ভাবে তোমাকেই চাইলাম তুমি না হয় শব্দ গুলো গুছিয়ে আমাকে আমার করে নাও।হবে কি আমার তুমি রোজা সারাজীবন এর মতো।”

রোজার মুখ আনন্দে চিকচিক করে উঠলো।দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁকা।ঠোঁটে মৃদু মিষ্টি হাসি রোজার।ভীষণ আনন্দে রোজা নিজেকে সামলাতে পারলো না।নিমিষেই ঠোঁট এগিয়ে নিলো শুভর কপালে ছোঁয়াতে।কিছুটা এগিয়ে গিয়েও ফিরিয়ে নিলো ঠোঁট লজ্জায়।ইস এটা করতে যাচ্ছিলাম এমন টা ভেবেই মুখে হাত দিয়ে নিজেকে লুকালো রোজা।

চলবে,,