#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 21
🍁🍁🍁
দশদিন পর ভার্সিটি আসায় স্যার মেম ক্লাসমেট দের উত্তর দিতে দিতে নীর বোর হয়ে গেছে বর্তমানে ক্যাম্পাসে বড় বট তলায় গাল ফুলিয়ে বসে আছে পাশে শ্রাবণী মিটিমিটি হাসছে সামনে ইভা সিনথিয়া পৃথিবীর নবম আশ্চর্য কিছু দেখার মতো বিস্ময় ভরাট দৃষ্টিতে নীরের দিকে তাকিয়ে আছে শেষমেশ নীর বিরক্তি নিয়ে বলে
নীরঃ বইন তোরা মুখের হা অফ কর নয়তো ডাস্টবিন ভেবে বিশ্বশুদ্ধ মানুষ তোদের মুখের ভেতর আবর্জনা ফেলে দিয়ে যাবে আর তোরা ঢোক গিলতে গিয়ে গলাধঃকরণ করে ফেলবি
ইভা থতমত খেয়ে বলে
ইভাঃ নীর আমি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছি তোর সাথে পুরো ফিল্মি কাহিমী হয়ে গেলো আর আমরাই মিস করে গেলাম
নীরঃ যাসনি কেনো বলেছিলি তো যাবি বিয়েতে ( বিরক্তি নিয়ে)
সিনথিয়া আমতা আমতা করে বলে
সিনথিয়াঃ আসলে আমরা ফ্যামিলি পিকনিকে গিয়েছিলাম
নীরঃ ভালো করেছিস এখন চুপ থাক নয়তো কি যে করবো জাস্ট ভাবতে পারছি না
ইভাঃ ধ্যাত আমি ভাবলাম নীরের শুভ ভাইয়ার সাথে বিয়ে হলে আমি একটু আদিত্য ভাইয়ার সাথে ইয়ে করবো
শ্রাবনীঃ ইয়ে টা কি
সিনথিয়াঃ আরে বুঝিস না লুচু মাইয়া আদওত্য ভাইয়ার উপর ক্রাশ খাইছে
শ্রাবনীঃ বইন তুই কি প্রতিদিন ক্রাশ খাস না মানে এতো এনার্জি পাস কোথায়
ইভাঃ আমি কি করবো আদিত্য ভাইয়া কে দেখলেই আমি ক্রাশ খায়
নীরঃ ক্রাশ খাওয়ার এতো রুচি কোথায় পাস রুচি চানাচুর খাস নাকি প্রতিদিন দশ-বারো টা
ইভাঃ জ্বি না তোরা কি বুঝবি এসবের ইহা একটা বিগ বড় ট্যালেন্ট যা সবার থাকে না
নীরঃ কারো থাক আর না থাক তোর আছে আর শ্রাবনী ওর কথা না হয় বাদই দিলাম হিস্ট্রি শুরু হলে যুগ-যুগান্তর পাড় হয়ে যাবে তবু শেষ হবে না
সিনথিয়াঃ আচ্ছা তার মানে তুই এখন সায়ন ভাইয়া হাফ হওয়া বউ আর হাফ না হওয়া বউ তাই না
সিনথিয়ার কথা শুনে তিনজনই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় নীর কটমট দৃষ্টিতে সিনথিয়া কে ঝাড়ি দিয়ে বলে
নীরঃ ওই হিটলারের নাম নিলে তোকে আমি জাস্ট কাঁচা খে*য়ে ফেলবো
নীর হনহনিয়ে চলে যায় শ্রাবণী হাসতে হাসতে নীরের পেছন দৌড় লাগায় ইভা সিনথিয়া মুখ লটকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
কিছুদূর আসতেই হঠাৎ কোথ থেকে একটা মেয়ে এসে নীরকে ঝাপটে ধরে নীর পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নেয় অতঃপর বিস্ময় ভরাট কন্ঠে বলে
নীরঃ কে বইন তুমি এভাবে আইসা ধরলা
নীরের কথায় মেয়েটা মুখ তুলে নীরের দিকে তাকিয়ে টুপ করে গালে একটা চুমু খেয়ে শ্রাবণী কে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খায় শ্রাবণী গদগদ হয়ে বলে
শ্রাবনীঃ রাহাপি তুমি
রাহাঃ ইয়াহ
নীরঃ এতো খুশি কেনো ব্যাপার কি গুড নিউজ নাকি
মাহিরঃ ইয়েসস
নীরঃ বলো বোন বলো দশদিনে আমি এতো এতো সারপ্রাইজ পেয়েছি এখন তোমার টা ও শুনি
রাহাঃ থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ
নীরঃ কেনো
শুভঃ সেদিন যদি তুমি না যেতে তাহলে রাহাকে আমি পেতাম না কখনো নিজের করে
শ্রাবনীঃ মানে
রাহাঃ মানে সেদিন নীরদের বাড়ি থেকে আসার পরই শুভ’র বাবা আমার মা-বাবা কে ডেকে পাঠায় দ্যান ওরা আলাপ-আলোচনা করে সেদিন রাতেই আমাদের বিয়ে দেয় আর এসব কিছুর ক্রেডিট নীর আর সায়ন ভাইয়ার সায়ন ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে আর এখন আসলাম নীরের সাথে দেখা করতে + ধন্যবাদ জানাতে
নীরঃ এই অপদার্থ কে তুমি বিয়ে করেছো ছিহ জীবন টা শেষ করলে
আদিত্যঃ মানে ( অবাক হয়ে)
নীরঃ এখানে মানে’র কি আছে আমি যদি রাহাপির জায়গায় থাকতাম আর আমার বয়ফ্রেন্ড তার বাবাকে আমাদের রিলেশনের কথা বলতে না পারতো সেদিনই ওইটাকে রামধোলাই দিয়ে অনয একজনকে বিয়ে করে নিতাম নয়তো সারাজীবন অবিবাহিত থাকতাম তবুও এমন বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করতাম না
শুভঃ আমি কি করতাম আমি আব্বুকে ভয় পায়
নীরঃ হুহহ চরিত্রে ভীতু আসছে প্রেম করতে শুধুমাত্র আপনার জন্য এখন আমাকে ওই হিটলার টা কে বিয়ে করতে হবে
শুভঃ আমার জন্য মানে
নীরঃ কেনো আপনি যদি সায়ন বায়ন কায়ন নামক ওই হিটলার ভয়ংকর পুরুষের কাছে হেল্প না চাইলে বিয়ের দিন এমন টা হতো না আপনি বলেছেন আপনাকে হেল্প করতে তাইতো উনি আমাকে এভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে আপনাকে হেল্প করলো
নীরের কথায় শুভ আদিত্য মাহির তিনজনই অবাক হয় শুভ অবাক মিশ্রিত কন্ঠে বলে
শুভঃ আমি কখন সায়ন ভাইয়ার কাছে হেল্প চাইলাম
নীরঃ এখন নাটক করবেন না
শুভঃ বিলিভ মি নীর আমি সায়ন ভাইয়ার কাছে হেল্প চাইছি কসম লাগে
শুভ’র কথায় নীরের মনে খটকা লাগে নীর বলে
নীরঃ কিন্তু আমাদের তো বললো আপনি হেল্প চেয়েছেন উনি ইচ্ছে করে করেন নি হেনতেন আরো চারশো বিশ
মাহিরঃ হয়তো এমনি বলেছে বাট আমরা হেল্প চাইনি
শুভঃ সায়ন ভাইয়ার হঠাৎ এমন এন্ট্রি দেখে তো আমরাই অবাক হয়েছি
নীরঃ সত্যি বলছেন আপনারা কিছুই জানতেন না
শুভঃ হুম
নীরঃ দেখলি বেস্টু তোর ভাই কত্তো বড় মিথ্যেবাদী পরপর দুইটা বড় বড় ডাহা মিথ্যে বললো প্রথমত শুভ ভাইয়া বলেইনি হেল্প করতে লাভগুরু নিজ দায়িত্বে বিয়ে ভেঙেছে দ্বিতীয়ত আমাদের বিয়েই হয়নি তবুও উনি বলেছেন আমাদের বিয়ে হয়েছে তোর ভাইকে আমি এই জন্মে বুঝলাম
মাহিরঃ তা নীর এখন তোমার বিয়ে কার সাথে
শ্রাবনীঃ আমার ছোড়দা’র সাথে কারণ ছোড়দা আর বেস্টুর একবার বিয়ে হয়ে গেছে
মাহিরঃ সত্যি 😳
নীরঃ নাহহহহ ( চেঁচিয়ে)
হঠাৎ নীরের চেঁচানো তে সবাই ভড়কে যায় নীর দাঁত কটমট করে বলে
নীরঃ তোর ভাইয়ের বিয়ে করার খুউব শখ না আমি উনার শখ জন্মের মতো ছুটিয়ে দেবো
শ্রাবনীঃ কি করবি
নীরঃ মাহিরের বউ জাস্ট চুপপ
নীরের কথায় সবাই তব্দা খেয়ে যায় মাহির কাশতে কাশতে নীরের দিকে তাকায় শুভ আদিত্য ঠোঁট চেপে মাহিরের কাঁধে হাত রেখে সুর টেনে বলে
শুভ&আদিত্যঃ শ্রাবনীর জামাইইইই
শ্রাবনী কটমট দৃষ্টিতে নীরের দিকে তাকায় নীর দাঁত দিয়ে জিভ কেটে শ্রাবনীর দিকে তাকায় শ্রাবণী নীরের পিঠে ধুরুমম করে কয়েক টা কিল বসিয়ে দেয় নীর ব্যথায় আহ করে উঠে
নীরঃ রা*ক্ষসী ছাড় কি করেছি আমি হারামি
শ্রাবনীঃ তুই বান্ধবী নাকি দুষমন কুত্তী
নীরঃ যেটা ভাবিস মাহির ভাইয়া আপনার বউকে থামান
মাহিরঃ আ আমার বউ কি বলছো
শুভঃ ভাই কবে বিয়া করলি আমাদের বললি ও না
মাহির চোখ গরম করে শুভর দিকে তাকায় শ্রাবণী ঠোঁট ফুলিয়ে নীরকে ছেড়ে দৌড়ে চলে যায় শ্রাবণী যেতেই মাহির ও মাথা চুলকে বিড়বিড়িয়ে কেটে পড়ে সবাই শব্দ করে হেঁসে দেয়।
_____________________
পৃথিবীর সর্বত্র জুড়ে নিয়মের রাজত্ব সেখানে সবকিছুই সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত নিয়মের বেড়াজাল তৈরি প্রত্যেকের জীবন এমনকি প্রকৃতি নিজেও শৃঙ্খলার এই নিয়মের উপর ভিত্তি করেই প্রতিদিন সকালে পূর্ব গগনে সূর্য তার আলোর কিরণ ছড়িয়ে দেয় আর সন্ধ্যায় পশ্চিমে সূর্য অস্ত নেমে পৃথিবীকে আঁধারে নিমজ্জিত করে আবার রাতের আকাশে উঁকি দেয় চাঁদ তাঁরা দিবারাত্রির এই সুনির্দিষ্ট নিয়মের আবর্তনেই প্রকৃতির ঋতুবদল হয় মাসের পর মাস যায় দিন পেরিয়ে নতুন দিনের আগমন ঘটে ধরণীর বুকে এই নিয়মের উপরই প্রকৃতির মতো মানুষের জীবন ও এক সুতোয় গাঁথা।
জীবনের আয়ুস্কাল থেকে বিয়োগ পড়লো আরো একটা মাস বসন্ত ফেরিয়ে প্রকৃতিতে ঘটলো গ্রীষ্মের আগমন মানুষ যখন ব্যস্ত তার ব্যস্ত জীবন নিয়ে গগনের তেজস্ক্রিয় সূর্য তখন মত্তো তার তেজের খেলায় গ্রীষ্মের প্রখর রোদে মানুষের জীবন হয়েছে উঠেছে জরাজীর্ণ কোথাও একদন্ড বসার উপায় নেই সূর্য তার সব তেজ প্রকৃতি তে উজাড় করে দিয়েছে। আর দুই সপ্তাহে পরই নীর সায়নের বিয়ে আর বিয়ে মানেই হাজারো কাজ ফাংশন ব্লা ব্লা দুই বাড়িই ব্যস্ত নিজের একমাত্র মেয়ে আর ছোট ছেলের বিয়ের আয়োজনে যেখানে মেয়ে রাজি নয় বিয়ের আসরে বসতে সেখানে তাকে নিরুপায় হয়ে বসতেই হবে অন্যদিকে সায়ন এর ভাবগতি বোঝার জোঁ নেই বাপু ছেলে মানুষ মানেই মাথার নিউ*রন ছেঁড়া । সূর্যের প্রচন্ড তাপে নীর ভার্সিটির মাঠে দাঁড়িয়ে আছে আর একটা ক্লাসটেস্ট ছিলো মাত্রই টেস্ট শেষ করে মাঠে আসতেই নীরকে দাঁড় করিয়ে শ্রাবনী ওয়াশরুম গিয়েছে নীর কপালে হাত দিয়ে সূর্য আড়াল করে এদিক ওদিক তাকিয়ে শ্রাবনী আসছে কিনা দেখছে গায়ের সাদা ড্রেস ঘেমে পুরো একাকার অবস্থা ফর্সা মুখশ্রী সূর্যের তাপে লাল হয়ে গেছে নাকে ডগা লাল হয়ে যাওয়ায় একটু বেশিই ভালো লাগছে কপালের কাছে ছোট ছোট চুল গুলো ঘামে সিক্ত হয়ে কপালের সাথে লেপ্টে আছে কানের পাশ বেয়ে পড়ছে সরু ঘামের কণা কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্রাবণী ও আসে শ্রাবনীর অবস্থা ও নীরের মতো ড্রেস ঘেমে একাকার অবস্থা শ্যামবর্ণার মুখশ্রী সূর্যের তাপে লাল হয়ে আছে নীর শ্রাবনী কে তাড়া দিয়ে বলে
নীরঃ বেস্টু তাড়াতাড়ি চল আর একমিনিট দাঁড়ালে সূর্য তার তেজে আমাদের আজ শেষ করে দেবে
শ্রাবনীঃ ঠিক বলেছিস চল আজ প্রচন্ড গরম
মাহিরঃ আমার না হওয়া বেয়াইনসাব কেমন আছেন
মাহিরের কথা শুনে শ্রাবণী বিরক্তি নিয়ে মাহিরের দিকে তাকায় কালো শার্ট ঘামে ভিজে গায়ের সাদা লেপ্টে আছে মুখ পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে হাতা ফোল্ড থাকায় উন্মুক্ত অংশের লোমহর্ষক হাত হালকা ঘেমে আছে মাহির হালকা কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে
মাহিরঃ এহেম এহেম নীর আমাকে কি আজ বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে তোমার বেস্টু চোখই সরাতে চাইছে না
নীরঃ আমি জানি না ভাই আমি কিচ্ছু জানি না
আদিত্যঃ কি ব্যাওার লিটল সিস তোমার নাক মুখ লাল হয়ে আছে কেনো কেঁদেছো
শুভঃ তুই যে বলদ তার পরিচয় আর না দিলেও হবে ভাই
আদিত্যঃ মানে
শুভঃ আজকের গরমে যেখানে সবার জীবন যায় অবস্থা সেখানে তুই ওকে জিজ্ঞেস করছিস ওর ফেস লাল হয়ে আছে কেনো ইন্টারেস্টিং
নীরঃ ঝগড়া কম করেন ভাই আপনারা আমি আর একমিনিট থাকলে এখানে সমাহিত হয়ে যাবো বেস্টু চললললল
মাহিরঃ আরে দাঁড়াও এতো তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছো
নীরঃ মানে বাড়ি যাবো না
শ্রাবনীঃ শুনুন
মাহিরঃ বলুন
শ্রাবনীঃ আমার জানামতে আপনি এতো দয়ালু ব্যক্তি না তাহলে
মাহিরঃ কি
শ্রাবনীঃ আপনার হাতে এতো লোম কেনো আমি শুনেছি যাদের গায়ে লোম বেশি থাকে তারা দয়ালু হয়
মাহিরঃ হাতে তো অনেক কম তুমি চাইলে আমার বুক দেখাতে পারি দেখবে বডি দেখে চোখ সরাতেই ভুলে গেছো ( দুষ্টু হেসে )
মাহির লাগামহীন কথা শুনে শ্রাবণীর গাল গরম হয়ে যায় কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে মনে মনে নিজেকেই শ’খানেক গালি দেয় এমন নির্লজ্জ ছেলে এমন বোকার মতো প্রশ্ন করার জন্য প্রসঙ্গ পাল্টাতে শ্রাবনী বলে
শ্রাবনীঃ আ আজ গরম প্রচুর আমরা আসি বেস্টু চল
মাহিরঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি যাও নয়তে রাস্তায় কোন বখাটে পেছনে লাগবে কে জানে
শ্রাবনীঃ সবাই আপনার মতো না ওকে
মাহিরঃ মানে আমি বখাটে
শ্রাবনীঃ কিছুটা বাইইই
নীরকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায় মাহির শ্রাবনীর যাওয়ার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।
রাস্তায় কোনো রিকশা না পেয়ে অগত্যা রোদের মধ্যেই দুজন হাঁটতে শুরু করে একেতেই গরম তার মধ্যে রিকশা পায়নি দুজনই রেগে মুখ থেকে কিছু বাজে গালি বেরিয়ে আসে। ভার্সিটি থেকে কিছুদূর আসতেই রাস্তার ওপর পাশের রেস্টুরেন্টে র বাইরে সায়ন সহ ওর বন্ধু মহল কে চোখে পড়তেই শ্রাবনী লাফিয়ে বলে
শ্রাবনীঃ বেস্টু ওই তো ছোড়দা
নীরঃ কোথায়
শ্রাবনীঃ ওই যে ওদিকে ( আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে)
নীর পাশ ফিরে তাকায় সায়নসহ সবাই দেখে জোড়ালো শ্বাস ছেড়ে বলে
নীরঃ তাহলে তুই সায়ন ভাইয়ার সাথেই চলে যা আমি ও চলে যায়
শ্রাবনীঃ সিউর যেতে পারবি
নীরঃ তুই যা পাকামি করিস না
শ্রাবনী হেসে দৌড়ে চলে যায় নীর পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে সাবধানে যেতে কিন্তু কে শুনে কার কথা শ্রাবনী রাস্তার মাঝখান থেকেই চেচিয়ে সায়নকে ডাকে শ্রাবনীর ডাক শুনে সায়ন চারপাশে তাকিয়ে রাস্তার মধ্যে তাকিয়ে শ্রাবনীকে আসতে দেখে মুচকি হাসে কিন্তু অেপর পাশে তাকাতেই সায়নের মাথা ঘুরিয়ে যায় সায়ন শ্রাবনী কে হাত দিয়ে ইশারায় সরে যেতে বলে চেচিয়ে কিন্তু শ্রাবনী কোনো কথা না শুনে দৌড়াতেই থাকে। নীর যেতে যেতে পেছনে ফিরে শ্রাবনী রাস্তা পাড় হয়েছে কি না দেখতে কিন্তু অপর পাশ থেকে ট্রাক আসতে দেখে রাস্তার মধ্যখানে চোখ দেয় শ্রাবনী এখনো রাস্তা পাড় হয় নীর চেচিয়ে শ্রাবনীকে সরে যেতে বলে নীরের কন্ঠস্বর শুনে সায়নরা ওপর পাশে তাকিয়ে নীরের ভয়ার্ত ফেস দেখে জানভিরা সবাই সরে যেতে বলছে কিন্তু শ্রাবনী এদিকেই আসছে সায়ন ভয়ার্ত চোখে একবার শ্রাবণীর দিকে তাকায় আবার এগিয়ে আসা ট্রাকের দিকে তাকায় ট্রাক আর শ্রাবনীর মধ্যে দূরত্ব বেশ কম শ্রাবনী তো সায়নের দিকে তাকিয়েই হাঁটছে সায়ন চোখ বন্ধ করে শ্রাবনী বলে চেঁচিয়ে উঠে। হঠাৎ পেছন থেকে জোরে ধাক্কা দেওয়ায় শ্রাবণী টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে সায়নের উপর পড়ে সায়ন চোখ খুলে শ্রাবনীকে সুস্থ অবস্থায় দেখে জড়িয়ে ধরে ট্রাক টা দ্রুতগতিতে সাই করে চলে যায় ট্রাক টা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ট্রাকের ব্রেক কাজ করছে না হয়তো ব্রেকফেইল করেছে ট্রাক চলে যেতেই রাস্তায় একটা রক্তাক্ত দেহ লুটিয়ে পড়ে তিয়াস চেচিয়ে বলে
তিয়াসঃ নীরররররর
তিয়াসের চিৎকারে সবাই শ্রাবনীর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তিয়াসের দিকে তাকায় অতঃপর তিয়াসের দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই সবাই স্তব্ধ হয়ে যায় শ্রাবণী বেস্টু বলে চেঁচিয়ে উঠে চারদিকে সব চলমান গাড়ি মুহুর্তেই থেমে গেছে রাস্তার একাংশজুড়ে শুধু লাল রক্ত আর রক্ত মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে কান দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে সবাই দৌড়ে রাস্তায় পড়ে থাকা অবচেতন দেহের কাছে এগিয়ে যায়।
চলবে,,,,
#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 22
❤️❤️❤️
হসপিটালের করিডোর জুড়ে মানুষের আনাগোনা কারো কারো প্রিয়জন হারানোর আর্তনাদে মেদিনী চৌচির হয়ে যাচ্ছে আবার কারো পরিবারে একরাশ আশার আলো নিয়ে সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট্ট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ডক্টরা ছোটাছুটি করছে থিয়েটারের বাইরেই অপেক্ষা করছে নিজেদের প্রিয়জনের জন্য কিছুক্ষণ আগেই নীরের রক্তাক্ত দেহ পাঁজকোলে নিয়ে সায়ন হসপিটালে আসে নীরের রক্তে সবার ড্রেসের যা তা অবস্থা নীরকে রাস্তায় রক্তপাত অবস্থায় দেখার পর থেকে শ্রাবনীর কান্না শুরু হয়েছে এখনো থামার নাম নেই কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে জানভি রিয়া শ্রাবনীকে কান্না করতে বারণ করছে কিন্তু নেত্র যুগল কি কারো কথা শুনে এক যুবকের কোলে এক রক্তাক্ত যুবতী কে দেখে নার্স ক্রেচার নিয়ে আসে সায়ন সন্তপর্ণে নীরকে ক্র্যাচারে শুইয়ে দেয় নার্স চটজলদি ডক্টরকে ডাকতে যায় শ্রাবণী নীরের গালে চাপড় দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নীরকে ডাকতে শুরু করে
শ্রাবনীঃ ব্ বেস্টু এ্ এই বেস্টু উঠ না প্লিজ কথা বল আম সরি আমি আর কখনো রাস্তায় এভাবে বেখেয়ালি চলবো না প্লিজ উঠ না আর কতক্ষণ এভাবে থাকবি আম আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ছোড়দা তোর বউ কে বল না উঠতে
সায়ন শ্রাবনী’র নিকট অসহায় দৃষ্টি তাঁক করে একদিকে শ্রাবনীর চোখের পানি অন্যদিকে নীরের এই অবস্থা সায়নের মনের উপর দিয়ে বর্তমানে বিশাল গতির ঝড় প্রবাহিত হচ্ছে সায়ন নিজেকে ধাতস্থ করে শ্রাবনীর গালে আলতো হাতের পরশ বুলিয়ে শান্ত গলায় বলে
সায়নঃ বনু একটু শান্ত হ ডক্টর আসছে তো নীরের কিচ্ছু হবে না তুই কাঁদিস না তোর রাগিনী বেস্টু যদি জানে তুই এভাবে কাঁদছিস তাহলে দেখবি আমাকে সাড়ে দশ হাত কব’রের নিচে গেঁথে দেবে কাঁদে না লক্ষ্মী বনু আমরা
শ্রাবনীঃ ডক্টর কোথায় আসছে না কেনো কি করছে ওরা দরকারের সময় কাউকে পাওয়া যায় তিয়াস ভাইয়া বিহান ভাইয়া যাও না একটা ডক্টর নিয়ে আসো
শ্রাবনীর কথায় তিয়াস বিহান একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে ডক্টর আনতে অগ্রসর হলেই সেখানে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ এসে হাজির হয় গলায় গায়ে এপ্রোন পরিহিত দেখে সবাই বুঝতে পারলো ইনিই ডক্টর শ্রাবনী ডক্টরের কাছে গিয়ে হাতজোড় করে মিনতির স্বরে বলে
শ্রাবনীঃ ডক্টর আঙ্কেল প্লিজ আমার বেস্টু কে ঠিক করে দেন ওর যেনো কিছু না হয় ওর কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাবো প্লিজ আঙ্কেল ওকে ঠিক করে দেন
সামনে থাকা ডক্টর ক্র্যাচারে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি মাথা থেকে এখনো চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে ডক্টর হালকা চেঁচিয়ে বলে
ডক্টরঃ নার্স জলদি ওটি রেডি করুন এমন একজন পেশেন্ট কে কিভাবে এখানে ফেলে রাখতে পারলেন আপনারা
ডক্টরের কথায় নার্স মাথা নিচু করে সরি বলে দ্রুত পায়ে চলে যায় ওটির দিকে ডক্টর ও ওটিতে ঢুকে পড়ে নার্স আর ওয়ার্ড বয় মিলে নীরের ক্র্যাচার নিয়ে যায় শ্রাবণী ছলছল চোখে ওটির দিকে তাকায়। ওটির লাল লাইট জ্বলে মানেই ভেতরে অপারেশন শুরু হয়ে গেছে সায়ন ফোন বের করে অভিদের ইনফর্ম করে নীরের বাবাকে ফোন দেয় ভুলবশত ফোন নীরের বাবা না ধরে নীরের মা ধরে সায়নের মুখে নিজের একমাত্র মেয়ের এক্সিডেন্টের কথা শুনে নীরের মা হাউমাউ করে কেঁদে দেয় ফোনের ওপাশ থেকে মহিলা কন্ঠের ক্রদনের সুর ভেসে আসতেই সায়ন হাত দেওয়ালে পাঞ্চ করে ” ওহ শিট ” বলে উঠে।
নীরকে ওটি তে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০ মিনিট ছুঁই ছুঁই অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন রা কিছুক্ষণ আগেই আয়াত আর ওর বানা এসেছে তার মিনিট পাঁচেক পর নীরের মা-বাবা আসে নীরের মা’র তো কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা শ্রাবনী বেঞ্চি তে বসে কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে ব্রেইম করতে থাক
শ্রাবনীঃ আমার জন্য আজ এমন টা হয়েছে কোনো আমি এভাবে রাস্তা দিয়ে চললাম নয়তো এমন টা হতোই না সব দোষ আমার বেস্টুর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না ইয়া মাবুদ আমার বেস্টুকে তুমি বাঁচিয়ে দাও প্লিজ হেল্প মি আমার বেস্টুকে প্লিজ আমার কাছে ফিরিয়ে দাও
আয়াত ধীর পায়ে এসে শ্রাবণীর পাশে বসে শ্রাবনীর কাঁধে হাত দেয় কাঁধে চেনা স্পর্শে শ্রাবণী পাশ ফিরে আয়াতকে দেখে এবার শব্দ করে কেঁদে দেয় শ্রাবনী আয়াতকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে কাঁদতে জোরে জোরে বলে
শ্রাবনীঃ ভাইয়া সব আমার জন্য হলো সব দোষ আমার কিন্তু বেস্টু কেনো আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে এভাবে বিপদে ফেললো এখন ওর কিছু হলে আমি কি করবো ভাইয়া প্লিজ বেস্টুকে ঠিক করে দে না প্লিজ
আয়াতঃ কাঁদিস না উপরওয়ালাকে ডাক দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে
শ্রাবনী আয়াতের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে আয়াত শ্রাবনীকে নিজের হাত দিয়ে আলিঙ্গন করে নেয়।
রিয়ারা ধীর পায়ে সায়নের দিকে অগ্রসর হয় সায়ন রিসেপশনের পাশেই বড় খোলা বেলজনিতে দাঁড়িয়ে আছে গায়ে এখনো সেই নীরের রক্তে ভেজা শার্ট ইতিমধ্যে রক্ত শুকিয়ে কালশিটে রঙ ধারণ করতে শুরু করে আকাশি শার্টে রক্তের কালার পুরো ঝলঝল করছে সায়ন রেলিঙে হাত দিয়ে দূর পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে চোখের সাদা অংশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে ইতোমধ্যে। তিয়াস বিহান ধীর পায়ে সায়নের একপাশে গিয়ে দাঁড়ায় জানভি রিয়া অন্যপাশে দাঁড়ায় সায়নের মাঝে ওদের উপস্থিতিতে কোনোরূপ পরিবর্তন নেই আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে তিয়াস গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে উঠে
তিয়াসঃ বাড়িতে গিয়ে শার্ট টা চেঞ্জ করে আয়
উত্তরে সায়ন মৌন জানভি ওর চিকন ফ্রেমের চশমার তলা দিয়ে ভালো করে সায়নকে পর্যবেক্ষণ করে না এই ছেলে ভাবগতি বুঝা তার সাধ্যির বাইরে মানুষ বলে মনোবিজ্ঞানী রা নাকি সূত্র প্রয়োগ করে সব বলে দিতে পারে কিন্তু জানভি একজন মনোবিজ্ঞানী হয়ে ও সায়নের মন পড়ার ক্ষমতা ওর মধ্যে আসেনি বন্ধু মহলের কাছে সায়ন মানেই রহস্য যার কথার মারপেঁচে কলেজ স্কুল লাইফে হাজারো মানুষ নাস্তানাবুদ হতো জানভি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
জানভিঃ এভাবে আর কতক্ষণ থাকবি পরে নিজে অসুস্থ হয়ে থাকবি দ্যান জামাই-বউ এক হসপিটালে এডমিট হয়ে পাশাপাশি বেডে শুইয়ে রোমান্স করার ফন্দি আঁটছিস নাকি
জানভির কথায় সায়নের ঠোঁটের কোণায় তিরস্কারের হাসি ফুটে ওঠে বরাবরের মতো বিহান রা এবার ও হতাশ হয় এই ছেলের মনের কথা বুঝা তাদের সম্ভব না তিয়াস মুখে কিছু রাগের আভাস ফুটিয়ে বলে
তিয়াসঃ আর কতদিন চলবে তোর এই হেয়ালিপনা
প্রতিবারের মতো এবারও সায়ন নিশ্চুপ তিয়াস রাগে কটমট করে বলে
তিয়াসঃ গত ৮ বছরের লাইফে তোকে বুঝতে পারলাম না এতো ঘাড়ত্যাড়া কেনো তুই এবার তো স্বীকার কর
সায়ন এবার মুখ খোলে সায়ন তিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলে
সায়নঃ অভিমান-অনুভূতি-ভালোলাগা-ভালোবাসা এই জিনিস গুলো তে তোরা এতো বিশ্বাসী কেনো আমি এটাই বুঝি না কি আছে এসবে
জানভিঃ সায়ন প্লিজ এই এক কথা শুনতে শুনতে আমরা জাস্ট বোর হয়ে গেছি তোর খোলস একজনই ছাড়াতে পারবে আর তাকে দিয়েই তোকে সাইজ যদি না করি তাহলে আমরা বন্ধু নামে ইস্তফা নেবো মনে রাখিস
সায়ন স্মিত হেসে আনমনে বলে
বুঝলে প্রেয়সী
~~~ভালো তো সবাই বাসতে পারে কেউ অভিনয় করে আবার কেউ সত্যিকারের কিন্তু অস্তিত্বে কয়জন ধারণ করতে পারে ~~~
জানভিরা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যায় সায়ন ও জানভিদের পেছন পেছন যায় তখনই ওটির দরজা খুলে একজন নার্স দ্রুত এসে বলে
নার্সঃ পেশেন্টের বাড়ির লোক কে আছেন
নার্সের কথায় সবাই নার্সের কাছে আসে নার্স বিলম্ব না করে বলে
নার্সঃ আপনাদের মাঝে O নেগেটিভ গ্রুপে কেউ আছেন প্রচুর রক্তের প্রয়োজন আমার হসপিটালের ব্লার্ডব্যাংকে মাত্র একব্যাগ রক্ত পাওয়া গেছে আপনারা দ্রুত দুই ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করুন নয়তো পেশেন্ট বাঁচানো সম্ভব না
নার্সের কথায় সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায় এখন কোথা থেকে এতো আর্জেন্টলি রক্ত পাবে আর এই ব্লাড গ্রুপ ইউনিক সহজে পাওয়া যায় না শ্রাবণী ধপ করে বসে পড়ে চোখ জলে টইটুম্বুর হয়ে যায় সায়নরা দ্রুত বেরিয়ে পড়ে রক্তের খোঁজে কারণ হসপিটালে উপস্থিত কারোরই ও নেগেটিভ রক্ত না সায়ন আয়াত বিহান তিয়াস একেক জন একেক হসপিটালের ব্লাডব্যাংকে খোঁজ করছে কিন্তু কোথাও রক্ত নেই অতঃপর ত্রিশ মিনিট পর সবাই হসপিটালে ফেরত আসে ওরা আসতেই নার্স আবার আসে
নার্সঃ কি হলো রক্তের ব্যবস্থা করতে পারলেন
তিয়াসঃ এই গ্রুপ কোথাও নেই নার্স যা করার আপনাদেরই করতে হবে
নার্সঃ আশ্চর্য রক্ত আমাদের এখানে ও নেই এখন কি রক্তের অভাবে পেশেন্টের অপারেশন অফ করে দেবো হাতে আর পনেরো মিনিট আছে কুইক ব্যবস্থা করুন
নার্স চলে যায় সায়ন মাথা চেপে বসে পড়ে রাস্তায় একজনকে পেয়েছিল এই গ্রুপের কিন্তু উনি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়তো আর কয়েকমাসের অতিথি এই পৃথিবীর শ্রাবনীর কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায় শ্রাবণী কাঁদতে কাঁদতে সায়নের কাছে এসে বলে
শ্রাবনীঃ ছোড়দা কিছু একটা কর এভাবে বসে থাকিস না তোর বোন কে বাঁচাতে গিয়ে বেডে শুয়ে থাকা মেয়ে টা আজ মৃত্যুর সাথে লড়ছে এভাবে বসে থাকিস না কিছু একটা কর
হঠাৎ সায়নের কিছু একটা মনে পড়তে সায়ন শ্রাবনীর চোখ মুছে কপালে আলতো পরশ দিয়ে বলে
সায়নঃ আমি আসছি আমাকে দশমিনিট দে তোর বেস্টুর জন্য আমি রক্ত নিয়ে আসবো
সায়ন বেরিয়ে যেতেই নার্স এসে আবার তাড়া দিতে শুরএ করে সায়ন হসপিটাল থেকে বেরিয়ে কাউকে কল দেয় কয়েকবার রিং হতেই ফোন ধরে সায়ন দ্রুত বলে
সায়নঃ আমার দুইব্যাগ ও নেগেটিভ রক্ত প্রয়োজ ৫ মিনিটে নিয়ে আসতে পারবে
সায়নের কথা শুনে ওপাশ থেকে কিছু একটা বলে উঠে সায়ন আলতো হেসে ফোন কেটে দেয় এতোক্ষণে আশার আলো দেখা গেলো
১৫ মিনিট পর
নার্সঃ কি হলো আপনারা রক্ত পেয়েছেন
তিয়াসঃ না সিস্টার
তিয়াসের কথায় নার্সে চোখে-মুখে বিরক্তি ছেয়ে যায় নীরের মা আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছে নীরের বাবা বেঞ্চে বসে আসে চোখের কার্নিশে এসে জমে থাকা পানি আপ্রাণ চেষ্টায় ঠেকিয়ে রেখেছে একমাত্র মেয়ের এমন অবস্থা কেউই সহ্য করতে পারে না সিস্টার বিরক্তি নিয়ে বলে
নার্সঃ তাহলে ডক্টর কে নলি অপারেশন অফ করে দিতে রক্তের জোগাড় হয়নি
তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠে
_ আমরা দেবো রক্ত
পুরুষালি কন্ঠে সবাই পেছনে তাকিয়ে দেখে মাহির আর আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে পেছন পেছন সায়ন শুভ আসছে মাহির আদিত্য নার্সের কাছে এসে বলে
মাহিরঃ আমাদের ও নেগেটিভ চলুন
নার্সঃ চলুন চলুন জলদি আসুন
মাহির আর আদিত্য ভেতরে চলে যায় প্রায় বেশকিছু ক্ষণ দুজন বেরিয়ে আসে সায়ন মাহিরের সামনে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞতার স্বরে বলে
সায়নঃ তোমাদের অনেক ধন্যবাদ তোমরা না থাকলে হয়তো অপারেশন টা অফই হয়ে যেতো
মাহিরঃ ইট’স ওকে ভাইয়া আর আমরা আমাদের জুনিয়র বোনের জন্য রক্ত দিয়েছি এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু হয়নি
মাহির এবার শ্রাবনীর দিকে তাকায় শ্যামবর্ণা মুখশ্রী কাঁদতে কাঁদতে বেহাল দশা চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে গেছে গালে আঙ্গুলের চাপ পড়ে গেছে মাহির সন্তপর্ণে শ্রাবনীর নিকট দাঁড়ায় শ্রাবনী মাহির কে কৃতজ্ঞতার সুরে বলে
শ্রাবনীঃ অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আমার বেস্টুকে রক্ত দিয়ে বাঁচানোর জন্য আমি সত্যি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো
মাহিরঃ ইট’স ওকে বাট আমার ধন্যবাদ না অন্য কিছু চাই
শ্রাবনীঃ কি চান
মাহির নিচের ঠোঁট কামড়ে শ্রাবনীর দিকে গভীর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে হেসে বলে
মাহিরঃ এখন না সময় হলে ঠিক চেয়ে নেবো এখন কান্না অফ করো নয়তো পেত্নী ভেবে সবাই ভয় পাবে আর রাস্তায় এতো বেখেয়ালি কেনো এখনো পিচ্চি নাকি কিছুদিন পর তো নিজেই পিচ্চির মা হবে এখন তোমাকে পিচ্চি মানাই
মাহিরের কথায় শ্রাবণীর কান্না অফ হয়ে যায় কিছুক্ষণ পর ডক্টর অপারেশন শেষ করে বেরিয়ে আসে নীরকে কেবিনে শিফট করে এখনো সেন্স ফিরেনি ৭২ ঘন্টা অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। শ্রাবনী নীরের সাথে দেখা করতে চাইলে নার্স দেয় না ডক্টরের কাছে অনেক মিনতি করে কেবিনে যায় বেডে নীর অবচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ মুখে অক্সিজেন মাক্স হাতে স্যালাইন লাগানো নীরকে দেখে শ্রাবণীর চোখে টুইটুম্বর হয়ে যায় শ্রাবণী ধীর পায়ে নীরের পাশে বসে নীরের হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে বলে
শ্রাবনীঃ বেস্টু আমি খুব লাকি তোর মতো বেস্টফেন্ড স্বরূপ বোন পেয়েছি এবার তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা আমি আর কখনো রাস্তায় বেখেয়ালি হাঁটবো না এই যে প্রমিজ করছি তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হ আর আমার বেস্টুভাবী হয়ে যা
~ বেস্টু ~
তুই আমার অবেলা রোদের
ভালো থাকার কারণ
তুই আমার অস্তিত্বের দাগ
তোর হারিয়ে যাওয়া বারণ
চলবে,,,,