সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-০২

0
335

#সম্পর্কের বাঁধন
#_Writer_মারিয়া_
#_Part : 2

–” আবির! আবির! আবির একটু উঠুন প্লিজ।”
কবিতা আবিরকে ডাকছে। আবির চোখ মুখ কুচকে হালকা একটু চোখ খুলেই কবিতাকে দেখে চেচিয়ে উঠে বলে ওঠে,
–” এই মেয়ে, এইটা তুমি কি অবস্থায় আছো? মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার?”

–” আসলে আমি শাড়ি পরতে পারি নাহ। একটু পরিয়ে দিন নাহ প্লিজ।”
কবিতা সকালে শাওয়ার নিয়ে একটা পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে, শরীরে কোনো রকম ভাবে শাড়ি পেচিয়ে রেখেছে। কবিতা শাড়ি পরতে জানে নাহ, তাই আবিরকে ডাকছে। আবির উল্টো দিকে ঘুরে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” দেখো আমি এই সব পারবো নাহ।”

–” কেনো পারবেন নাহ। আমি শুনেছি, আপনি নাকি শাড়ি পরাতে জানেন। তুলি আপু ছোট থাকতে নাকি আপনি শাড়ি পরিয়ে দিতেন। তাহলে?”

–” তাহলে, কিছু নাহ। আমি তোমাকে শাড়ি পরাতে পারবো নাহ। যাও এইখান থেকে।”

–” পরিয়ে দিবেন নাহ তাই তোহ?”

–” একবার তোহ বললামই, পারবো নাহ।”

–” আচ্ছা, তাহলে এখন আমি এই অবস্থায় আপনার বাবা মানে আমার শ্বশুর মশাইয়ের কাছে যেয়ে বলবো, বাবা আপনার ছেলেকে শাড়ি পরিয়ে দিতে বললাম, অথচ আপনার ছেলে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে নাহ।”
কথাটা বলেই কবিতা দরজার দিকে যেতেই আবির কবিতা কে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” পাগল হয়ে গেছো নাকি তুমি? বাবার সামনে তুমি এই অবস্থায় যাবে? আর ঐসব বলবে?”

–” হ্যা বলবো। যদি এখন আপনি আমাকে শাড়ি নাহ পরিয়ে দেন তোহ আমি এই কাজ করবো।”

–” যাহ পরতে পারো নাহ তাহ পরার কি দরকার? অন্য কিছু পরো।”

–” প্রথম কথা এই মুহুর্তে শাড়ি ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নাই। আর দ্বিতীয় কথা মামনি আমাকে বলেছে শাড়ি পরতে।”

–” মামনি? মামনি কে?”

–” মামনি হলো আপনার আম্মু মানে আমার শাশুড়ী আম্মা, আমাকে বলেছে, আমি যেনো তাকে মামনি বলে ডাকি।”

–” ওহ!”

–” সে যাই হোক এখন আমাকে শাড়ি পরিয়ে দেন।”

–” পারবো নাহ।”

–” ওকে তাহলে আমি বাবাকে বলতে গেলাম।”

–” উফ! ওকে পরাই দিচ্ছি। শাড়ি তোহ পুরা পেচিয়ে রাখছো। খুলো!”

–” আমি কেনো খুলবো আপনি খুলেন।”

–” কি? এইটাও আমাকে করতে হবে?”

–” হুম!”
আবিরের প্রচন্ড রাগ উঠতেছে। তাও কি আর করার? বিপদে পড়ছে বাজে ভাবে। তাই সব মেনে নিতে হচ্ছে। এই কারনে পিচ্চিদের বিয়ে করতে নেয়, আস্ত প্যারা। আবির চোখ বন্ধ করে কবিতার শরীর থেকে আস্তে আস্তে শাড়ি খুলতে শুরু করে। কবিতা এতো সময় কথা গুলো বললেও আবিরের ছোয়া পেতেই কেঁপে উঠছে। আবির কবিতার কেঁপে উঠা অনুভব করছে, আবিরেরও কেমন যেনো নেশা নেশা লাগছে। আবিরের মন চাচ্ছে চোখ খুলতে, কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে রেখেছে। আবির কবিতা কে আবার শাড়ি পরিয়ে দিয়ে, কুচির জন্য নিচে বসে চোখ খুলে তাকাতেই, কবিতার পেটের দিকে চোখ যায়। নিশ্বাস নেওয়ার জন্য কবিতার পেট ওঠা নামা করছে, মাঝে মাঝে কেঁপে ও উঠছে, কবিতার ফর্সা পেটের একপাশে একটা কালো কুচকুচে তিল আছে, সব মিলিয়ে আবিরের কাছে খুব আকর্ষনীয় লাগছে। আবির কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কবিতা বলে ওঠে,
–” আবির?”

কবিতার আওয়াজে আবিরের ধ্যান ভাঙে। আবির এইসব কি করছে, ভাবতেই আবির তাড়াতাড়ি উঠে দাড়িয়ে কবিতার শাড়ির কুচি গুজে দিতেই, কবিতা কেঁপে উঠে আবিরের হাত চেপে ধরে। কবিতার হাতের নখ বড় হওয়ায় আবিরের হাতে ডেবে যায়, আবির চোখ বন্ধ করে ফেলে। আবির তাড়াতাড়ি কবিতার শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে রুফটপে চলে যায়। কবিতা আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” কি ভেবেছো আবির? আমি আসলেই এতোটাই বাচ্চা। অনেক কিছুই বুঝি নাহ, আসলে সেরকম কিছুই নাহ, সবই বুঝি। কিন্তু ইচ্ছে করেই তোমার সাথে এতো বাচ্চামি করবো আমি। যদিও সবাই বলে আমি নাকি অনেক দুষ্টু। সবার কাছের থেকে হাজার গুন বেশি দুষ্টামি আমি তোমার সাথে করতে চায়। তোমাকে নিজের #_সম্পর্কের_বাঁধন_ এ জড়াতে চাই। তুমি আমাকে ভালোবাসবে। অনেক, অনেক ভালোবাসবে। আর এইটা হলো আমার কাছে তোমার আমার #_সম্পর্কের_বাঁধন_ এর উপর বিশ্বাস।”

★★★
আবির রুফটপের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। আবির মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি হচ্ছিল তখন আমার সাথে। নিজেকে কেমন যেনো নেশাময় লাগছিলো। নাহ, এইসব কিছুইতে করতে পারি নাহ আমি। আমি তোহ জারিফা কে ভালোবাসি। জারিফার সাথে এতো বড় অন্যায় আমি কিছুতেই করতে পারবো নাহ। কিছুতেই নাহ।”

★★★
কবিতা নিচে নেমে কিচেন রুমে গিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী ( আবিরের আম্মু ) রান্না বান্না করছে। আর সার্ভেন্টরা তাকে সাহায্য করছে। কবিতা মায়া চৌধুরীর দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” মামন! সরি, আমার লেট হয়ে গেছে আসতে।”

–” এই পাকনি তোকে আমি রান্না বান্না করার জন্য এনেছি নাকি আমি, হুম? তোকে তোহ এই বাড়ির রাজরানি বানিয়ে এনেছি। তুই শুধু আমার ছেলেকে সামলিয়ে রাখলেই হবে। ছেলেটাহ তার বাবার চাপে বিয়েটাহ করেছে। ছেলেটাহ রাজি হচ্ছিল নাহ কেনো কে জানে, তোর শ্বশুর মশাই জানে ব্যাপার টাহ বুঝলি। কিন্তু কাউকে বলে নি।”

–” তুমি চিন্তা করো নাহ মামনি। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

–” হুম!”

–” আম্মু আমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ব্রেকফাস্ট দেও। আরে ভাবি, দেখি সকাল সকাল কিচেন রুমে।”
কথাটাহ বলেই মুচকি হাসি দেয় তুলি ( আবিরের একমাত্র ছোট বোন )। কবিতা তুলির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি আপু, আমি আপনাকে খাবার দেয়?”

–” হায় হায়, নাহ নাহ, তোমাকে এতো কাজ করতে হবে নাহ। সার্ভেন্ট দিয়ে দিবে। তুমি আরও আমার সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে নেও।”

–” নাহ আপু! আমি পরে খাবো।”

–” আম্মু আমি বের হচ্ছি।”
কথাটাহ শুনে সবাই তাকিয়ে দেখে আবির অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছে। মায়া চৌধুরী আবিরের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” বের হচ্ছিস মানে কি? ব্রেকফাস্ট করে যা।”

–” নাহ! এখন সময় নেই। অফিসে গিয়ে করে নিবো।”

–” কিন্তু তুই অফিসে কেনো যাচ্ছিস আজ? আজ তোহ সন্ধ্যায় তোদের রিসিপশন পার্টি আছে।”

–” পার্টির আগেই চলে আসবো। আসি।”
কথাটাহ বলে আবির একবার কবিতার দিকে তাকিয়ে চলে যায়। সবাই আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

★★★
আবির গাড়ি চালিয়ে অফিসের দিকে যাচ্ছে। ভালো লাগছে নাহ আবিরের, গতকাল থেকে জারিফার ফোনে কোনো কন্টাক্ট করতে পারছে নাহ। আবির ভাবছে অফিস শেষে আজ জারিফার বাসায় যাবে। হঠাৎ আবিরের ফোন বেজে ওঠায়, আবির ফোন টাহ হাতে নিয়ে দেখে জারিফার আম্মুর ফোন। আবির তাড়াতাড়ি গাড়ি থামিয়ে ফোন রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম আন্টি! আন্টি জারিফা কোথায়?”

–” আবির আমার মেয়ে কে বাঁচাও প্লিজ।”

–” মানে? কি হয়েছে আন্টি? জারিফা ঠিক আছে?”

–” জারিফা গতকাল রাতে সুইসাইড করতে গিয়েছিল। ব্লেড দিয়ে হাত কেটেছে। অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে।”
জারিফার আম্মুর কথা শুনে আবির পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়। যেনো নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছে নাহ আবির। কি শুনছে এইসব সে। যার কষ্ট আবির সহ্য করতে পারে নাহ, সে নাকি মরতে গিয়েছিল। যার গায়ে একটু আঁচড়ও সহ্য করতে পারে নাহ, সে নাকি হাত কেটে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। আবির কোনোভাবে বলে ওঠে,
–” এখন কেমন আছে?”

–” ভালো। হসপিটালে কেবিনে আছে। ডক্টর বলেছে, এরকম চলতে থাকলে নাকি ও মেন্টাল হয়ে যেতে পারে। কারন ওর মাথায় অনেক প্রেশার নিচ্ছে। আবির আমার মেয়েটা যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমার মেয়েটা কে বাচাও আবির। আমি জানি, তুমি এখন অন্য একজনের স্বামী। এই দাবি করাটাও অন্যায়। কিন্তু আমি কি করবো আবির? আমার যে ঐ একটাই সন্তান। জারিফার কিছু হলে, আমি বা জারিফার বাবা কেউ বাঁচতে পারবো নাহ। মেয়ের এই অবস্থা দেখে মানুষটাহ ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কি করবো আমি আবির?”

–” আন্টি! ফোন টাহ জারিফার কাছে দেওয়া যায়?”

–” হুম! দিচ্ছি।”
জারিফার আম্মু কেবিনের ভেতরে গিয়ে জারিফা কে আবিরের ফোন এসেছে বলতেই জারিফা তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিলে, তিনি কেবিন থেকে বেরিয়ে যান। আর এইদিকে জারিফা তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
–” আবির! আবির! আমি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো নাহ আবির।”

–” জারিফা শান্ত হও প্লিজ। এইসব কি পাগলামি করছো তুমি? তুমি জানো নাহ, তোমার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারি নাহ। তাও তুৃমি, এইটা কিভাবে করলে?”

–” I am sorry, Abir. কিন্তু আমি কি করতাম বলো। তুমি অন্য কারোর সাথে #_সম্পর্কের_বাঁধন_ এ আবদ্ধ হবে, সেইটা আমি কি করে মেনে নিবো? তোমার বিয়ে অন্য একজনের সাথে হয়েছে, এইটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি নাহ, আবির। আমি পারবো নাহ তোমাকে ছাড়া বাঁচতে। আমি মরে যাবো আবির।”

–” জারিফা! প্লিজ এরকম বলো নাহ, আমি তোমারই আছি। আমি আর কারো নাহ। আমি শুধু তোমার। বিশ্বাস করো, আমি শুধু তোমার।”

–” কিন্তু আবির, তুমি তোহ এখন অন্য কারো। তুমি এখন অন্য একজনের অধিকার। আমার তোহ কোনো অধিকারই নেই।”

–” চুপ করো প্লিজ। আমি নিতে পারছি নাহ, এই কথাগুলো।”

–” আবির!”

–” হুম!”

–” আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।”

–” আমি এখনি আসছি।”

–” সত্যি?”

–” হুম! একটু ওয়েট করো, আমি আসছি।”
কথাটাহ বলেই আবির ফোন কেটে দিয়ে হসপিটালের দিকে যেতে শুরু করে।

★★★
কবিতা আলমারি গুছিয়ে নিচ্ছে। আলমারি গোছাতে গোছাতে হঠাৎ চোখ যায় একটা ডাইরির উপর। কবিতা ডাইরি টাহ হাতে নিতেই দেখে ডাইরির উপর সুন্দর করে লেখা #_সম্পর্কের_বাঁধন_। কবিতা ডাইরিটা খুলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কবিতা!”

মায়া চৌধুরীর আওয়াজ পেয়ে কবিতা ডাইরিটা রেখে দিয়ে আলামারির দরজা বন্ধ করে, পেছন ফিরে দেখে মায়া চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। কবিতা মায়া চৌধুরীর দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” মামনি, এসো বসো।”

–” নাহ রে মা, এখন আমার অনেক কাজ আছে বুঝলি। যাই হোক, এইটা ধর। আর কিছুক্ষণ পর সার্ভেন্ট এসে আরও কিছু শপিং দিয়ে যাবে। সেগুলোও গুছিয়ে রাখিস।”

–” কিন্তু এইসব কি?”

–” এর ভেতরে সন্ধ্যার রিসিপশনের লেহেঙ্গা, গহনা আছে। আর সার্ভেন্ট এসে তোর পরার জন্য শাড়ি, জামা কাপড় দিয়ে যাবে। আচ্ছা! শোন, আমি এখন যাই বুঝলি, অনেক কাজ আছে।”

–” আমি তোমাকে সাহায্য করে দেয়?”

–” নাহ, তোকে বলেছি নাহ? তুই এই বাড়ির বউ নাহ শুধু, এই বাড়ির মেয়েও, বুঝলি?”

–” হুম!”
মায়া চৌধুরী চলে গেলে, কবিতা লেহেঙ্গা গহনা গুলো খুলে খুলে দেখছে। লেহেঙ্গা টাহ আসলেই অনেক সুন্দর। কবিতার খুব পছন্দ হয়েছে।

চলবে…………….🌹