Divorce Part-10+11

0
4180

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part:10

হৃদয়ের মাঃ অন্তরা,,,,,

(অন্তরা আর সিয়ামের সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠলো আবার মিসেস সেলিনার “”হৃদয়ের মা””)

হৃদয়ের মাঃ ঠিক আছে তুমি খেয়ে নাও তোমার মাকে তোমার কাছে আনার ব্যবস্থা করছি,,,।

সিয়ামঃ পমিস(প্রমিস,,)??

হৃদয়ের মাঃ প্রমিস,,,,

সিয়ামঃ গড পমিস,,,,

হৃদয়ের মাঃ গড প্রমিস,,,, এবার খাও,,,

সিয়ামঃ থিক আতে,,,(ঠিক আছে,,,)
,,,,,

,,,,,কী রে অন্তরা শুনলাম তোর নাকি ডিভোর্স হয়ে গেছে।

জ্যোতিঃ সেটা দিয়ে তোর কী দরকার,,,??

,,,দেখ জ্যোতি আমি তোর সাথে কথা বলছি না,,,, তাই তুই চুপ করে থাক,,,,,

জ্যোতিঃ অন্তরা তোর সাথে কথা বলবে না,,,।

,,,,,ডিভোর্সি মাল তার আবার এ-তো দেমাক,,,,,,

অন্তরাঃ দেখ রনি তোর সাথে,,,,না আগে কখনো কথা বলার রুচি ছিলো,,,,আর না এখন আছে,,,,। আমার থেকে দূরে থাক,,,।

রনিঃ প্রপোজ করেছিলাম বলে তোর ভাইয়ের হাতে মার খাইয়েছিলি এখন রিজেক্ট হয়ে কেমন লাগছে বলনা একটু,,,(শয়তানি হাসি দিয়ে,,,)

অন্তরাঃ তোর মতো জানোয়ারদের সাথে কথাই বলার ইচ্ছে নেই আমার,,,,

রনিঃ আরে যা যা তোর মতো ডিভোর্সি মালের সাথে কথা বলার জন্য আমি যেন মরে যাচ্ছি,,,।

জ্যোতিঃ চলতো অন্তরা এখান থেকে,,,

অন্তরাঃ হুম,,,,

রনিঃ ইস,,,,মালটা সেই,,,,বাট ডিভোর্সি,,,,আহারে,,,,, আমাকে রিজেক্ট করেছিলি এখন দেখ কেমন লাগে
(শয়তানি হাসি দিয়ে)

অন্তরাঃ(ক্লাস নাইনে থেকে এই রনি আমার পেছনে পড়ে ছিলো,,,একবার হাত টেনে ধরেছিলো তাই ভাইয়াকে বলে দিয়েছিলাম,,,, পড়ে ভাইয়া ওকে মেরেছিলো,,,,)

জ্যোতিঃ আসছি,,,কাল দেখা হচ্ছে,,, আল্লাহ হাফেজ,,।

অন্তরাঃ আল্লাহ হাফেজ,,,, (বাড়িতে চলে এলাম) মা,,,,

মাঃ এসে পড়েছিস,,,।

অন্তরাঃ হ্যা,,,, ফ্রেস হয়ে আসছি খাবার দাও,,,

মাঃ আচ্ছা,,,,

অন্তরাঃ ভাবি কোথায়,,??

মাঃ খেয়ে একটু ঘুমাচ্ছে,,,, তুই ফ্রেস হয়ে আয়,,

অন্তরাঃ আচ্ছা,,,,
,,,,
★রাতে★

আরাভঃ সব কমপ্লিট হয়ে গেছে অন্তরা,,,??

অন্তরাঃ হ্যা ভাইয়া,,,, আজ সব কমপ্লিট হয়ে গেছে।

বাবাঃ এখন কী করবি ভাবছিস আরাভ,,,,??

আরাভঃ কী আবার করবো,,,?? তোমরা তো কেসও করতে দিলে না,,,,, এভাবেই ছেড়ে দিলে পশু গুলোকে,,,।

বাবাঃ আমি সেটা বলতে চাইছি না,,,, বলছি অন্তরাকে নিয়ে কী ভাবলি,,,??

আরাভঃ ভাবাভাবির কী আছে,,,?? ও এখন পড়াশোনা করবে,,,, ভালো চাকরি করবে,,, তারপর যদি আবার বিয়ে করতে চায় করবে,,,।

মাঃ এটা কেমন কথা,,,,?? করতে চাইলে করবে,,,,

আরাভঃ বাবা তুমি উনাকে চুপ করতে বলো,,,, আজ শুধু মাত্র উনার জন্য অন্তরার জীবন এমন এলোমেলো হয়ে গেছে,,,,। সেদিন যদি আমার কথার মূল্য দেওয়া হতো তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না,,,,। তাই তাকে বলো এই বিষয়ে সে যেন আর কথা বলতে না আছে,,,,

আরাভের বউ মিমিঃ আরাভ তুমি মায়ের সাথে কীভাবে কথা বলছো,,,??

আরাভঃ তুমি চুপ করো,,,, যেটা জানো না সেটা নিয়ে কথা বলতে এসো না,,,,।

মিমিঃ কিন্তু,,,,,

আরাভঃ তোমাকে কিছু বলতে মানা করেছি আমি,,,,

অন্তরাঃ আমার খাওয়া শেষ আমি ওঠছি,,,,

মাঃ একি কিছুই তো খেলি না,,,,

অন্তরাঃ পেট ভরে গেছে,,,

(ওঠে চলে এলাম,,,, রুমে এসে চুপ করে বসে আছি,,,,, চোখ দিয়ে টপ টপ পানি পড়ছে,,,, আজ শুধু আমার জন্য এই বাড়িতে অশান্তি,,,, ভাইয়া মায়ের সাথে কথা বলে না আজ ৪ বছরের বেশি,,,,, শুধু আমি এই সব কিছুর কারণ,,,,, আমি নিজেই একটা অশান্তি,,,, যেখানে যাই সেখানেই অশান্তি হয়,,,, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে নিজেকে শেষ করে দেই,,,, তাহলে হয়তো এসব থেকে মুক্তি পাবো,,,, কিন্তু আত্মহত্যা যে মহাপাপ,,,, ইহকালে সুখ পেলাম না আত্মহত্যা করে পরকালের শান্তিও নষ্ট করতে চাই না,,,, তাই বাধ্য হয়ে শ্বাস নিচ্ছি,,,,)
,,,,,,

আরিয়ানের মাঃ আরিয়ান বিয়েটা এবার সেরে ফেল,,,

আরিয়ানঃ মা তুমিও শুরু করেছো,,,,

মাঃ কী শুরু করলাম,,,?? মেয়েটা কবে থেকে অপেক্ষা করছে তোর জন্য,,,

আরিয়ানঃ তো আমি কী করবো,,,,???

মাঃ কী করবি মানে,,,?? বিয়ে করবি,,,, নিলার বাবা আমাকে কল দিয়েছিলো,,,, ফার্নিচার, টাকা আর নিলাকে গহনা দিয়ে একদম সাজিয়ে দেবে,,,,

আরিয়ানঃ তুমি কী আমার জন্য বউ আনতে চাইছো নাকি টাকা,,,??

মাঃ দুটোই,,,,

আরিয়ানঃ মা,,,,

মাঃ চুপ থাক,,, আর একটা কথাও বলবি না,,,, আমি আর নিলার বাবা বিয়ের তারিখ ঠিক করছি,,,

আরিয়ানঃ যা ইচ্ছে করো,,,,,

(রুমে চলে এলাম,,,,, কিছু ভালো লাগছে না,,, এটাই তো চেয়েছিলাম,,,,,তাহলে খুশি কেন হতে পারছি না,,,,?? চেঞ্জ করার জন্য আলমারি খুলে দেখলাম সব কাপড় এলোমেলো হয়ে আছে,,,,, একটা টাউজার বের করতেই কিছু একটা নিচে পড়লো,,,, তুলে দেখি অন্তরার একটা ওড়না,,,, নাকের কাছে নিতেই অন্তরার মিষ্টি ঘ্রাণ সোজা হৃদয়ে ধাক্কা লাগলো,,,,,চেঞ্জ না করেই ওড়নাটা নিয়ে বেলকনিতে গেলাম,,,,, চেয়ারে বসে পড়লাম,,, কত রাত অন্তরা এই বেলকনিতে কাটিয়েছে,,,, আজকাল অন্তরার স্মৃতি খুব বেশি মনে পড়ে,,,,, এতো অন্যায় করলাম ওর সাথে কিন্তু পুলিশে যাওয়াতো দূর,,, মুখেও কিছু বলেনি,,,,,,, অন্তরার সাথে যে অন্যায় করেছি তার শাস্তি আমাকে হয়তো পেতেই হবে,,,,,)
,,,,,,

জ্যোতির বাবাঃ আগামীকাল জ্যোতিকে দেখতে আসবে,,,,, সব ঠিকঠাক আছে তো,,,,??

জ্যোতির মাঃ জী,,,,

জ্যোতিঃ এসবের মানে কী মা,,,??

জ্যোতির মাঃ তোকে আগেই জানানো হয়েছিলো,,,,

জ্যোতিঃ আমিও সময় চেয়েছিলাম দু’বছর,,,।

জ্যোতির বাবাঃ এতো ভালো ছেলে সবসময় পাওয়া যাবে না,,,,

জ্যোতিঃ ওকে ছ’মাস সময় দাও,,,, আমার সামনে পরীক্ষা,,,,

জ্যোতির বাবাঃ ঠিক আছে,,, আমি ওদের সাথে কথা বলবো,,,,

জ্যোতিঃ(ভাগ্যে হয়তো আপনি নেই,,,)
,,,,,

হৃদয়ের মাঃ রিয়াদ,,,,

(অফিস থেকে এসে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো রিয়াদ,,,।মায়ের ডাকে দাঁড়িয়ে পড়লো,,,।)

রিয়াদঃ জি মা,,, ঘুমাও নি কেন এখনো,,,??

হৃদয়ের মাঃ তোমার সাথে কথা বলার জন্য ওয়েট করছি,,,, এমনিতে তো তোমাকে পাওয়া যায় না,,, ফ্রেস হয়ে এসো খাবার দিচ্ছি তারপর কথা বলছি,,,

রিয়াদঃ আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি,,, তুমি বলো একেবারে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেবো,,,

মাঃ ঠিক আছে,,,,বসো আমার সামনে,,,।

(রিয়াদ গিয়ে তার মায়ের সামনে সোফায় বসে পড়লো,,,)

মাঃ সিয়া চলে গেছে দু’বছর হয়ে গেছে,,,। রিয়াদ জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,,,,। তোমার মনে হয় না সিয়ামের একটা মায়ের প্রয়োজন আছে??

রিয়াদঃ মা,,,, প্লিজ তুমি যদি এসব বলার জন্য আমাকে ডেকে থাকো তাহলে আমি আসছি,,,,। সিয়ার জায়গা আমি আর কাউকে দিতে পারবো না,
ও তোমাদের কাছে মরে গেলেও আমার কাছে আগের মতোই আছে,,,, আর থাকবেও,,,।

মাঃ দেখো রিয়াদ,,, সিয়াকে আমরাও অনেক ভালোবাসি,,,,কিন্তু একটা কথা বুঝার চেষ্টা করো আবেগ দিয়ে জীবন চলে না,,,,। নিজের জন্য না হলেও সিয়ামের জন্য তুমি বিয়ে করে নাও,,,,।

রিয়াদঃ সিয়ামের জন্য তুমি আছো,,, হৃদয় আছে,,।

মাঃ রিয়াদ অবুঝের মতো কথা বলো না,,,,, আমি আর কয়দিন,,, আর হৃদয়ের নিজের জীবন আছে,,
আজ বাদে কাল ওকেও বিয়ে করাতে হবে,,, ওর নিজের সংসার হবে,,,, তখন সিয়ামের কী হবে,,,?? তুমি সারাদিন অফিসে পরে থাকো ছেলেটার সামান্যতম খোঁজ তুমি নাও না,,,।

রিয়াদঃ আবার বিয়ে করলে সে সিয়ামকে ভালোবাসবে তার কী গ্যারান্টি আছে বলো তুমি,,,,। সৎমা কখনো মা হয়ে ওঠতে পারে না। তখন দেখবে যে ছেলের জন্য বিয়ে করতে বলছো সেই ছেলেই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হবে। তার থেকে আমাকে আমার মতো ছেড়ে দাও,,,,, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছি আবার ভেঙে দিয়ো না মা,, প্লিজ,,,,,আর সিয়ামের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে,,,। যে ছেলে জন্মের সময় নিজের মাকে হারায় তার ভাগ্য আর কতো ভালো হবে।

(কথাগুলো বলে রিয়াদ ওঠে হনহনিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো,,,।)

মাঃ রিয়াদ আমার কথা শুনো,,,,,(চলে গেলো,,,) এমন মেয়ে আছে রিয়াদ যে সিয়ামকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে,,,

রিয়াদঃ(রুমে এসে ধুপ করে বসে পড়লাম বেডে,,,, এই রুমের প্রতিটা কোণে এখনো সিয়ার ঘ্রাণ পাই আমি,,,, অন্যকারো ঘ্রাণে সেই ঘ্রাণ কখনো হারিয়ে যেতে দেবো না আমি,,,। আলমারি ভর্তি সিয়ার শাড়ি আর গহনা রাখা এখনো,,, যেগুলো দেখলে এখনো মনে হয় সিয়া আমার সাথেই আছে,,,। সেখানে অন্যকারো জিনিস কখনো ঠাঁই পাবে না,,,, এই রুমে এখনো সিয়ার হাসির প্রতিধ্বনি শুনি আমি,,, অন্যকারো হাসির মাঝে হারিয়ে যেতে দেবো না সেটা,,,, দেয়ালে টানানো ফ্রেমে বাঁধা হাসিমাখা মুখটার দিকে তাকালাম,,,, কত জীবন্ত মনে হয়,,, ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। অনেক ভালো আছো তাই না সিয়া,,?? তুমি তোমার কথা রাখনি,,,, একা ফেলে চলে গেছো,,, কিন্তু আমি আমার কথা রাখবো,,,, যতদিন বেঁচে আছি শুধু তোমার হয়েই থাকবো,,,,,যে বুকে মাথা রেখে তুমি ঘুমিয়েছো সেখানে তার কারো জায়গা হবে না,,, প্রমিস,,,, ছেলেটার দিকে তাকালে তোমাকে খুব বেশি মিস করি তাই ওর থেকে দূরেই থাকি,,,, দেখতে যে একদম তোমার মতো হয়েছে,,, সবার কাছে আমি না-হয় স্বার্থপর হয়েই রইলাম,,,। ধীরপায়ে মায়ের রুমে গেলাম। আমার কলিজাটা ঘুমিয়ে আছে,,,, একদম আমার মতো করে ঘুমিয়েছে,,,,কপালে একটা চুমু একে দিলাম,,, তারপর রুম থেকে বের হয়ে আসলাম,,,,,।)
,,,,

হৃদয়ঃ তোমাকে এখনো দেখিইনি,,,, তবু এক মুহুর্তের জন্য তোমার সেই চোখ ভুলতে পারছি না আমি,,,, কী বলবো এটাকে ভালোবাসা,,,?? নাকি
শুধু কিছু সময়ের মোহ,,,,??

চলবে,,,,

💔Divorce💔
Writer: Tahmima Toma
Part: 11

হৃদয়ঃ তোমাকে এখনো দেখিইনি,,,, তবু এক মুহুর্তের জন্য তোমার সেই চোখ ভুলতে পারছি না আমি,,,, কী বলবো এটাকে ভালোবাসা,,,?? নাকি
শুধু কিছু সময়ের মোহ,,,,??

★কয়েকদিন পর★

(আজ আরিয়ান আর নিলার বিয়ে,,,,,। আজ আরিয়ানের বাড়ি দেখে মনে হচ্ছে এ বাড়িতে বিয়ে,,
আরিয়ানের পরিবারের সবাই আজ অনেক খুশি,,, কারণ এবার গহনা, টাকা, ফার্নিচার সব দিচ্ছে নিলার বাবা,,,, শুধু বিথীর মুখটা মলিন,,,, অন্তরাকে সে খুব ভালোবাসতো,,,,, তাই নিলাকে সে মেনে নিতে পারছে না,,,, কিন্তু তার আর কী করার আছে, আরিয়ান সবার সামনে নিজেকে খুশি প্রমাণ করার চেষ্টায় নেমেছে,,,,)

তিথিঃ ভাবি চলে এসেছে,,,,,। মা তাড়াতাড়ি এসো,,,,,

মাঃ কই দেখি দেখি,,,,,, মাশাআল্লাহ কী সুন্দর,,,,??

(আরিয়ানের মায়ের চোখে নিলার গায়ের গহনা চকচক করছে,,,)

,,,যাই বলো আরিয়ানের মা তোমার আগের বৌমার সামনে এ কিছুই না,,,, তোমার আগের বৌমার মতো বউ সারা মহল্লায় ছিলো না,,,,,

মাঃ তুমি চুপ করো ভাবি,,,,, শুধু রুপ থাকলে হয়না,,,,

,,,,,সে শুধু রুপ না গুনেও কম ছিলো না,,,,

নিলাঃ এখন কী এখানে দাঁড়িয়ে তোমার আগের বউয়ের গুনগান শুনতে হবে,,,(আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিটমিট করে বললাম,,,)

আরিয়ানঃ তো আমি কী করবো,,,,??(ফিসফিস করে)

নিলাঃ What,,,, তুমি কী আদোও পুরুষ মানুষ,,,??

আরিয়ানঃ how dare you,,,??? What do you mean,,,,??

নিলাঃ বউয়ের গায়ে হাত তুলতে পারলেই সে পুরুষ হয়ে যায় না,,,। তোমার বউকে এতোগুলা মানুষ মিলে অপমান করছে আর তুমি দাঁড়িয়ে দেখছো,,,,?? তুমি কিছু না বললে এবার খুব খারাপ হয়ে যাবে,,,,, আমি কিন্তু তোমার টিপি কাল বউ অন্তরার মতো নই,,,,, কে কী মনে করলো আমার কিছু আসে যায় না,,,,

আরিয়ানঃ তুমি,,,,,,

মাঃ তোমরা দাঁড়িয়ে আসো কেন??? ভেতরে চলো,,,, তিথি বউমাকে সোফায় নিয়ে বসা,,,

নিলাঃ এখানে কেন বসবো,,,?? তিথি তুমি আমাকে রুমে নিয়ে চলো আমি ফ্রেস হবো,,,,,, তোমাদের বাসাটা অনেক ছোট,,, কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,।

(তিথি একবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ভাবির দিকে তাকাচ্ছে,,,। আরিয়ানের মা একবার আরিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার তার বৌমার দিকে,,,, আরিয়ান কিছুই বলছে না)

মাঃ ঠ,,,ঠিক আছে তিথি তুই বরং বৌমাকে রুমেই দিয়ে আয়,,,, অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে,,, একটু ফ্রেস হয়ে নেক,,,

নিলাঃ মা আমার জন্য একটা ব্লাক কফি পাঠিয়ে দিন,,,, মাথাটা ভিষণ ধরেছে,,,।

মাঃ ঠ,,,ঠিক আছে,,,,,

(বাড়ির আত্নীয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি কানাঘুষা করছে এ আবার কেমন বউ,,,,)

(নিলা রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে এলো,,,একটা নাইটি পড়ে নিলো,,, রুমে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে বসতেই আরিয়ান রুমে এলো)

আরিয়ানঃ(নতুন বউ এভাবে দেখবো কল্পনাও করতে পারিনি,,,, হাটু পর্যন্ত একটা নাইটি পড়ে বসে আছে নিলা,,,) নিলা,,,

নিলাঃ ওহ্ তুমি এসে পড়েছো,,,কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি,,,

আরিয়ানঃ তুমি,,,

নিলাঃ হুসসস,,,,, আজ আমাদের কত অপেক্ষার রাত,,,।

আরিয়ানঃ হুম,,,, তোমার সাথে যখন প্রথম রিলেশন ছিলো,,,, স্বপ্ন ছিলো এই রাতে চাঁদ দেখবো আর অনেক গল্প করবো,,,, রাতটা সারাজীবন উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে থাকবে,,,কিন্তু,,,,,

নিলাঃ ভুলে যাও না পুরনো কথা,,,, যাই হোক আমাদের ভালোবাসা তো পূর্ণতা পেয়েছে,,,

আরিয়ানঃ(হুম,,, আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছো,,,, আজ আমার সবচেয়ে খুশির দিন হওয়ার কথা তাহলে সেটা কেন হতে পারছি না,,,, এই রুম দেখে মনে পড়ছে অন্তরার সাথে প্রথম রাতেই করা অন্যায়ের কথা,,,, চোখের সামনে ভেসে ওঠছে বারবার,,,, এই সাজানো রুমে নিলাকে নয় অন্তরাকেই যেন প্রত্যাশা করছে মন,,,, কিন্তু সেটা তো আর এই জীবনে সম্ভব নয়,,,, সেই সম্পর্কটাকে নিজের হাতে কবর দিয়ে দিয়েছি,,,)

নিলাঃ কী ভাবছো,,,,, আবার,,??

আরিয়ানঃ কিছু না,,,, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো,,,।

নিলাঃ ঘুমিয়ে পড়বো মানে,,,, আরিয়ান,,,আজ আমাদের বাসর রাত,,,, কত প্রতিক্ষার রাত,,,,

আরিয়ানঃ কিন্তু নিলা,,,,,।

নিলাঃ হুস,,,,(আরিয়ানের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দিয়ে) আজ রাত শুধু তোমার আর আমার,,,, দেখো তোমার জন্য কত সুন্দর করে সেজেছি,,,,

(আরিয়ানকে আর কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে আরিয়ানের ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো নিলা,,,,)
,,,,

আরাভঃ আজ আরিয়ান আর নিলার বিয়ে ছিলো,,,।

মিমিঃ আরাভ ডিভোর্স হয়েছে একমাস এখনো হয়নি,,,,, এখনি বিয়ে,,,,।

আরাভঃ হয়তো অন্তরার চলে আসার অপেক্ষায় বসে ছিলো,,,, জানোয়ার একটা,,, আমার বোনের জীবনটা একেবারে তছনছ করে দিলো,,,,

মিমিঃ শুধু তার দোষ কোথায়,,,?? তোমাদের দোষ কী কম ছিলো,,,??

আরাভঃ কী বলতে চাও তুমি,,,??

মিমিঃ ছেলে ভালো চাকরি করে,,,মোটা বেতন পায়,,,পাকা বাড়ি,,,দেখতে ভালো,,, এসব হলে আর কিছু জানার প্রয়োজন মনে করো তোমরা,,,,?? ছেলের চরিত্র কেমন,,,?? ফ্যামিলি কেমন,,,?? ছেলের লাইফস্টাইল কেমন,,,?? জানতে চাও কখনো,,,?? আমাদের দেশের মেয়ের ফ্যামিলির এই একটা সমস্যা ছেলের পজিশন ভালো হলে,,, টাকা থাকলে আর কিছু জানার প্রয়োজন মনে করে না,,,। এটা ভাবে না আমাদের মেয়ে তাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে কি না,,,, ছেলে বা তার ফ্যামিলির মানুষ কেমন,,,??

আরাভঃ ভুল কিছু বলোনি তুমি,,,,। সত্যি এটাই আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন,,,,। বাবা-মা বা ফ্যামেলি মনে করে ছেলের টাকা থাকলেই মেয়ে সুখী হবে,,,,। এটাই সবচেয়ে বড় ভুল,,,, এখন দিনদিন ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েই চলেছে,,,

মিমিঃ আমার বাবা-মা তোমার টাকার আগে তোমাকে দেখেছে,,,,, তোমার পরিবার দেখেছে,,, তারপর অন্যকিছু,,,,,, নিজের পরিবারের উপর আমার গর্ব হয়,,,,।

আরাভঃ আমার তখন একটা চাকরি থাকলে অন্তরাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতাম দরকার হলে,,, তবু এই বিয়ে হতে দিতাম না,,,

মিমিঃ বাদ দাও,,,, অন্তরার ভাগ্যে ছিলো,,,, তুমি কীভাবে আটকাতে বলো,,,,??

আরাভঃ তবু নিজেকে অপরাধী মনে হয় এখন,,,,।

মিমিঃ আমি বলি কী অন্তরার আবার বিয়ে দাও,,,।

আরাভঃ মিমি,,,,,,??

মিমিঃ হ্যা বলছি,,,, দেখো আজ বাদে কাল মানুষ কথা শুনাতে শুরু করবে,,, আমাদের সমাজের মানুষ এমন,,,একবেলা কেউ খাবার না খেলে কেউ খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে না,,,, কিন্তু কেউ কিছু করলে দিনরাত তা নিয়ে গবেষণা করবে,,,,।

আরাভঃ ও যখন বিয়ে করতে চাইবে তখনই হবে,,,,

মিমিঃ জীবনে যে ধাক্কা ও পেয়েছে আবার কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না আরাভ,,,

আরাভঃ যেদিন কেউ ওর বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে সেদিনই নাহয় দেখা যাবে,,,।

মিমিঃ কিন্তু,,,,,

আরাভঃ এসব বাদ দাও মিমি,,, ভালো লাগছে না,,,।

মিমিঃ ঠিক আছে,,,, ঘুমাবে,,,??

আরাভঃ তুমি ঘুমিয়ে পড়ো,,, আমার অফিসের কিছু কাজ আছে,,,

মিমিঃ আচ্ছা,,,,।
,,,,,,

(অন্তরা বেলকনিতে বসে আছে,,,, বাইরে কিছু দেখা যাচ্ছে না শুধু অন্ধকার ছাড়া,,, তবু বাইরে তাকিয়ে আছে,,,,)

অন্তরাঃ(অন্ধকারের সাথে নিজের জীবনের মিল খোঁজে পাই এখন,,,। আমার জীবনও এখন এমনই অন্ধকার,,,, কোথাও আলোর কোন ছিটেফোঁটাও নেই,,,,। ডিভোর্স পেপারে সাইন করার সময়ও এতটা কষ্ট হয়নি,,,,কিন্তু আজ কেন হচ্ছে,,,?? চাঁরটা বছর যে সবকিছু আমার ছিলো আজ থেকে সেসব অন্যকারো,,,। আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি,,,?? সেসব আদোও কোনদিন কী আমার ছিলো,,,?? ভাইয়ের রুমের সামনে দিয়ে আসার সময় কানে এলো আজ আরিয়ান আর নিলার বিয়ে,,,। নিলাকে অন্তত আমার মতো মৃত্যু যন্ত্রণা দিয়েন না,, আমি চাই না আমার কোন শত্রুও আমার মতো যন্ত্রণা ভোগ করুক,,,। ওঠে রুমে চলে এলাম,,,,)
,,,,

হৃদয়ঃ(অন্তরার সাথে সিয়ামের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে,,,। অন্তরাকে মা বলে,,, তাতেও কিছু মনে করে না,,,। সিয়াম যখন অন্তরাকে মা বলে ডাকে শুধু অদ্ভুতভাবে তাকায় সিয়ামের দিকে,,,, মেয়েটা বড্ড চাপা স্বভাবের,,,, খুব সুন্দর করে এড়িয়ে চলে আমাকে,,,,কিছু বলার সুযোগই দেয় না,,,। কিন্তু কেন এমন করে,,,?? ওর ব্যাপারে না জেনেই দিনদিন ওর প্রতি আমার দূর্বলতা বেড়ে চলেছে,,, আর ও আমাকে এড়িয়ে চলেছে,,,,। কী করে বলবো ওকে,,,,??)
,,,,,,

জ্যোতিঃ (এক একটা দিন যাচ্ছে আর বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে,,,, । আর রিয়াদ ভাইয়াকে ভালোবাসার কথা বলাতো দূর উনি হয়তো আমার নামই ভুলে গেছে,,,,। কী করবো আমি,,,?? নিয়তিকে মেনে নিবো,,,??)
,,,,,
★সকালে★

নিলাঃ তিথি আমার কফিটা দিয়ে যাও,,,,।

তিথিঃ বেলা নয়টায় ওঠে উনি জমিদারের মতো হুকুম করছে কফি দিয়ে যেতে,,,তোমার ছেলের বউ কী আমাকে কাজের লোক মনে করে,,,,,।

মাঃ রাগ করিস না,,,,, নিয়ে যা,,,,

(তিথি বিরবির করে কফি নিয়ে নিলার রুমে চলে গেলো,,,)

তিথিঃ এই নাও তোমার কফি,,,,??

নিলাঃ থ্যাংক ইউ,,,, (কফি মুখে দিয়ে) থু থু এটা কোন কফি হলো,,,,,

তিথিঃ ভালো না লাগলে নিজে বানিয়ে খাও,,,,

নিলাঃ হোয়াট,,, সামান্য এক কাপ কফি চেয়েছি বলে কথা শুনতে হবে,,,,

ঠাসসসসস,,,,

চলবে,,,,