Divorce Part-16+17

0
5015

💔#Divorce💔
Writer:Tahmina Toma
Part:16

ঠাসসসস

(থাপ্পড়ের শব্দে অন্তরা আর জ্যোতি পেছনে তাকালো,,,,ছেলেগুলোকে এলোপাতাড়ি মারছে হৃদয়,,,)

হৃদয়ঃ জানোয়ারের বাচ্চারা,,,, বাড়িতে মা বোন নেই তোদের,,, আর একদিন যদি কোন মেয়েকে বাজে কথা বলতে শুনি,,, কেঁটে টুকরো টুকরো করে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো,,, তোদের বাপ-মা হাড়ও খোঁজে পাবে না,,,

অন্তরাঃ আরে মরে যাবে তো,,, যেভাবে মারছে মরে যাবে,,, (উনার এতো ভয়ংকর রুপ আমি কল্পনাও করতে পারছি না,,, বেশিরভাগ সময় হাসিখুশী দেখি উনাকে,,,, আজ কেমন ভয়ংকর লাগছে,,, রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে,,,,)

জ্যোতিঃ মরতে দে শালাদের,,,। কুকুরের মতো পিছনে পড়ে ছিলো এতদিন,,,, শিক্ষা হয়েছে জানোয়ারগুলোর,,,।

হৃদয়ঃ কুত্তার বাচ্চা,,, সময় থাকতে ভালো হয়ে যা,,, নাহলে কুত্তার মতো মরে রাস্তায় পরে থাকবি,,,,

অন্তরাঃ আরে এবার ছেড়ে দিন,,,, মরে যাবে তো,,,

হৃদয়ঃ আর কোনদিন যেন কোন মেয়ের আশেপাশে তোদের না দেখি,,,

(অন্তরা হৃদয়ের হাত ধরে টানছে আর হৃদয় পা দিয়ে লাথি মেরেই যাচ্ছে,,,)

আরিয়ানঃ না খেয়ে অফিস যেতে হচ্ছে,,,, মা অসুস্থ আর নীলা এখনো ঘুমিয়ে আছে,,, মা অসুস্থ থাকলে তখন ঠিকমতো খাবারও জোটে না কপালে,,, অফিসের যাওয়ার সময় অন্তরা সব গুছিয়ে দিতো,,, একটা কিছু দিতে লেট হলে ওর গায়ে হাত তুলতাম,,, আর এখন অফিসে আসার আগে কফিটা পর্যন্ত নিজে করে খেতে হয়,,,, অফিস থেকে ফেরার পর এক গ্লাস পানি চাওয়ার জন্যও নীলাকে পাওয়া যায় না,,, দিনদিন জীবনটা যেনো নরকে পরিণত হচ্ছে,, আচ্ছা এখন কী আবার সব আগের মতো করা সম্ভব নয়,,,??

(আরিয়ান এসব কথা ভাবতে ভাবতে অফিসে যাচ্ছিলো,,, বাসস্টপে কিছু দেখে আরিয়ানের গাড়ি যেন অটোমেটিক থেমে গেলো,,,)

আরিয়ানঃ অন্তরা,,,,,,,,??? হ্যাঁ অন্তরাই তো,,,, সাথে জ্যোতিও আছে,,,, কিন্তু অন্তরা এটা কার হাত ধরে টানছে,,,

অন্তরাঃ আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন,,,??

হৃদয়ঃ হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি,,,, তোমাকে বাজে কথা বলার সাহস হয় কী করে ওদের,,,??

অন্তরাঃ আমাকে যে যায় বলুক তাতে আপনার কী,,,?? আপনার প্রবলেম কোথায়,,??

হৃদয়ঃ(ওর কথা শুনে রাগ ওঠে গেলো,,, হাত ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে এলাম,,,, দুগালে হাত রেখে মুখোমুখি হয়ে চোখের দিকে তাকালাম,,) আমার প্রবলেম কোথায় জানো না তুমি,,,?? ভালোবাসি সেটা কী বুঝতে পারো না,,,??
,,,,

আরিয়ানঃ আর দেখতে পাচ্ছি না,,,, অন্তরা এখন অন্যকারো,,,??গাড়ি নিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে,,, একটা নিরিবিলি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে সিটে মাথা রাখলাম,,,, এতটা কষ্ট কেন হচ্ছে,,?? ও কী সারাজীবন আমার দেওয়া কষ্ট বুকে নিয়ে বসে থাকবে,,,,?? ওরও নতুন করে বাঁচার অধিকার আছে,,,। তাহলে আমি কেন ওর পাশে অন্যকাউকে মানতে পারছি না,,,??কেন,,,??? Why,,,,,?????)
,,,

অন্তরাঃ ভালোবাসেন,,,,??(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,,,,)

হৃদয়ঃ হ্যাঁ ভালোবাসি,,,(দৃঢ় গলায়,,,)

অন্তরাঃ আমার অতীত জানেন,,,??

হৃদয়ঃ জানি,,,,,

অন্তরাঃ জানেন,,,,???(অবাক হয়ে)

হৃদয়ঃ হ্যাঁ সব জানি আমি,,,,

অন্তরাঃ জ্যোতি,,,,,??(জ্যোতির দিকে তাকিয়ে)

জ্যোতিঃ হুম,,,,,(মাথা নিচু করে)

হৃদয়ঃ(অন্তরার দুগাল ধরে আবার নিজের দিকে করলাম,,,) আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি,,,,, তোমার অতীত কী আছে সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই,,,, আর সন্তান,, সে তো আমার আছে,,, এখন শুধু তার একটা মা চাই,,,

অন্তরাঃ না,,,, এটা হতে পারে না,,,, আমি চাই না আমার জন্য কেউ অসম্পূর্ণ থাকুক,,, আমি মা হতে পারবো না,,,, আর আমার জন্য কেউ বাবা হতে পারবে না সেটা আমি চাই না,,,, আর সমাজ,,, সমাজ আপনার পাশে আমাকে মেনে নিবে না কখনো,,, কোন বিবাহিত,,,, কোন বাচ্চার বাবা,, এমন কাউকে আমার পাশে মানতে পারে কিন্তু আপনার মতো কাউকে সমাজ মেনে নিবে না,,, আর কারো কথা আমি শুনতে পারবো না,,,

হৃদয়ঃ সমাজের ধার,, এই হৃদয় ধারে না,,,, সমাজ তখন কোথায় ছিলো,,,?? যখন দিনের পর দিন ঐ জানোয়ারগুলো তোমার ওপর নির্যাতন করেছিলো,,,, এখন যখন তুমি নিজের মুক্তির পথ বেছে নিয়েছো তখন সমাজ এসেছে তোমাকে ডিভোর্সি বলতে,,,,। সমাজ তখন কোথায় ছিলো,,,, যখন মাত্র ১৬ বছরের নাবালিকাকে তার থেকে ১৩ বছরের বড় লোকের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো,,,, আমি মানি না এমন সমাজকে,,,, কে কী বললো আমার তাতে কিছু আসে যায় না,,,,??

অন্তরাঃ আমার আসে যায়,,,, কারণ আপনাকে কেউ কিছু বলবে না,,,, বলবে আমাকে,,, ছেলেরা যায় করুক না কেন,,, তাদের দোষ হয় না,,,সব সময় কথা মেয়েদেরই শুনতে হয়,,, হয়তো আপনার মা’ই বলবে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে,,,

হৃদয়ঃ আমি তোমার পাশে থাকলে কেউ কিছু বলতে পারবে না অন্তরা,,,

অন্তরাঃ আমি এতো কিছু জানি না,,,, জ্যোতি আমি আসছি,,,

জ্যোতিঃ কোথায় যাবি,,,?? ভার্সিটি যাবি না,,,

অন্তরাঃ হুম,,,, আমি একাই চলে যেতে পারবো,,,

জ্যোতিঃ আরে কথা শুন,,,,

(অন্তরা হনহনিয়ে চলে গেলো,,,, হৃদয় চুপচাপ তাকিয়ে দেখছে,,,)

জ্যোতিঃ এসব বলার কী দরকার ছিলো ভাইয়া,,,??

হৃদয়ঃ ছিলো,,,

জ্যোতিঃ কী দরকার শুনি,,,,??

হৃদয়ঃ ওর মনে প্রবেশ করার একটা উপায় দরকার ছিলো,,,,। আমার সেদিনের কথা ও মনেই রাখেনি,,,, সিয়াম না থাকলে হয়তো ভুলেই যেতো হৃদয় নামে কেউ আছে,,,, এখন ও সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে ভাববে,,,, এসব ভুলার আগেই আবার নতুন করে কিছু করবো,,,,। যাতে আমাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয় ও,,,

জ্যোতিঃ এসব করে কী লাভ,,,?? আপনি যাচ্ছেন কানাডা,,, আর ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য আবার ছেলে দেখছে ওর পরিবার,,,,। ধরে নিলাম ও আপনাকে নিয়ে ভাবতে লাগলো,,, আর ভালোও বাসলো,,, তাতে ওর কষ্ট কমবে না,,,, বরং আরো বাড়বে,,, ভালো যদি বাসতেন তাহলে পালিয়ে যেতেন না,,, বিয়ে করতেন,,,।

হৃদয়ঃ হ্যাঁ,,,, আমি চাইলেই ওকে বিয়ে করে নিতে পারি,,,, আমার মা কখনো আমাকে বাঁধাও দেবে না,,,। কারণ সে অন্তরার কষ্ট ভালো করেই বুঝে,,,

জ্যোতিঃ মানে,,,,

হৃদয়ঃ কিছু না,,,, তোমার লেট হচ্ছে চলো,,,, ভাইয়া লেট লতিফ একদম সয্য করতে পারে না,,,।

জ্যোতিঃ ও,,ওহ্ ,,,, (ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে,,, লেট অলরেডি অনেকটা হয়ে গেছে,,, ন’টায় যেতে বলেছিলো,,, এখন বাজে ৯ঃ৩০,,,,,)

(হৃদয় আর জ্যোতি গাড়িতে ওঠে বসলো,,,, গাড়ি চলতে শুরু করেছে,,,)

জ্যোতিঃ একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না,,,, আপনি যদি চাইলেই বিয়েটা করতে পারেন,,, তাহলে করছেন না কেন,,??

হৃদয়ঃ চাইলেই বিয়ে করতে পারবো,,, কিন্তু অন্তরাকে পাবো না,,, জীবন ওকে যে আঘাত দিয়েছে,,,, সহজে ও কাউকে মেনে নিতে পারবে না,,,, বিশ্বাস করতে পারবে না কাউকে,,, তাই আমি আগে ওর বিশ্বাস অর্জন করতে চাই,,,, তারপর বিয়ে করবো,,,,,

জ্যোতিঃ তাহলে কানাডা কেন যাচ্ছেন,,,?? যদি ওর বিয়ে হয়ে যায়,,??

হৃদয়ঃ কানাডা যাচ্ছি আমার কেরিয়ার গড়ার জন্য,,,,

জ্যোতিঃ কেরিয়ার গড়তে গিয়ে যদি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেন,,,,??

হৃদয়ঃ তার কোন সম্ভাবনায় রাখবো না,,,, আর দূরে গিয়েই আমার ভালোবাসার উপলব্ধি করাবো অন্তরাকে,,, মাত্র তিন বছর সময়,,,, আর যেতে এখানো দুমাস বাকি,,, যা করার তার মধ্যেই করতে হবে,,,,

জ্যোতিঃ আপনার এতো ঝামেলা আমার মাথায় ঢুকবে না,,,,

হৃদয়ঃ চলে এসেছি,,,, নামুন ভাবি সাহেবা,,,

জ্যোতিঃ এ্যা,,,,,??

হৃদয়ঃ কিছু না,,,, তাড়াতাড়ি যান,,, নাহলে কপালে দুঃখ আছে,,,

জ্যোতিঃ হ্যা,,,,,, আপনি যাবেন না,,??

হৃদয়ঃ আমি এখনো অফিসে যায়নি,,, যেদিন জয়েন করবো সেদিনই যাবো,,, তুমি রিসিপশনে যাও,,, আমি বলে দিচ্ছি,,, ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাবে,,,

জ্যোতিঃ ভয় করছে,,,,।

হৃদয়ঃ আরে কিছু হবে না,,,, best of luck,,,

(হৃদয় জ্যোতিকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো,,,, জ্যোতি ভয়ে ভয়ে ভেতরে যাচ্ছে,,, ন’টায় আসার কথা আর এখন বাজে দশটা,,)

জ্যোতিঃ(ভয়ে হাত-পা কাপছে আমার,,,, এত বড় অফিসে আমি কখনো আসিনি,,,,)

রিসেপশনিস্টঃ Assalamu alaikum,,, How can i help you,, maam,,?

জ্যোতিঃ Walaikum assalaam,,,,,,,,,,,,,,,,. Myself Jyoti,,, Mr. Hridoy Chowdhury sent me to meet Mr. Riyad Chowdhury,,,.

রিসেপশনিস্টঃ oh,,, স্যার আপনার কথা বলেছেন,,, আসুন আমার সাথে,,,।

(জ্যোতি রিসেপশনিস্টের সাথে যেতে লাগলো,,,,)

রিসেপশনিস্টঃ আপনি দাড়ান,,, আমি স্যারকে বলে দেখছি,,,

জ্যোতিঃ ওকে,,( প্রচন্ড নার্ভাস লাগছে,,, এতবড় অফিসে কাজ করবো কীভাবে,,,?? আজকে প্রথম দিনই লেট করে আসলাম,,, কপালে যে কী আছে,, ??)

,,,,তুমি এখানে,,,,??

জ্যোতিঃ আপনি (অবাক হয়ে),,,,,???

চলবে,,

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part:17

,,,,,জ্যোতি,,,, তুমি এখানে,,,??

জ্যোতিঃ আপনি,,,(অবাক হয়ে,,,),,??

আরিয়ানঃ আমি এই অফিসের একাউন্ট ম্যানেজার,,,

জ্যোতিঃ ওহ্ ,,,,,,, (এই লোকের সাথে কথা বলতে একটুও ইচ্ছে করছে না,,,,বাজে লোক একটা,,)

আরিয়ানঃ তুমি এখানে কেন,,,,??

জ্যোতিঃ এখানে নিশ্চয়ই কেউ সিনেমা দেখতে আসবে না,,,, অবশ্যই জবের জন্য এসেছি,,,

আরিয়ানঃ তুমি,,,,

রিসেপশনিস্টঃ ম্যাম,,,, আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছে স্যার,,,

জ্যোতিঃ Excuses me,,,,,

(আরিয়ানের পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে গেলো জ্যোতি,,,,)

জ্যোতিঃ May i come in,,,,,,

রিয়াদঃ yes,,,,,

জ্যোতিঃ আসসালামু আলাইকুম,,,,,,ভাইয়া

রিয়াদঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,, মিস জ্যোতি,,,এটা অফিস,,,, এখানে আমি আপনার ভাইয়া নই,,, আশা করি বুঝতে পেরেছেন,,??

জ্যোতিঃ জ,,জি স্যার,,,

রিয়াদঃ জবটা কী আপনার দরকার,,,??

জ্যোতিঃ অনেক বেশি দরকার,,,,।

রিয়াদঃ যদি সেটাই হতো,,,, তাহলে আপনি লেট করে আসতেন না,,,, আপনাকে আসতে বলা হয়েছিলো সকাল ন’টায়,,,, এখন ১০ টা বেজে ১৫ মিনিট,,,

জ্যোতিঃ আ,,আসলে স্যার,,, হৃদয় ভাইয়া,,,,,

রিয়াদঃ I don’t like making excuse,,,,

জ্যোতিঃ কিন্তু স্যার,,,,,

রিয়াদঃ Don’t do this again,,,,

জ্যোতিঃ ওকে স্যার,,,

রিয়াদঃ আপনি চাইলে আজ জয়েন করতে পারেন,,
নাহলে আগামীকাল ঠিক ন’টায় আসবেন,,,, নয়টার পাঁচ মিনিট আগে আসতে পারেন,,, বাট এক মিনিট পরেও না,,,, আমি ঠিক ন’টায় অফিসে উপস্থিত হই,,, এসে যেন আপনাকে উপস্থিত পাই,,,

জ্যোতিঃ ওকে স্যার,,, আমি আগামীকাল জয়েন করবো,,,

রিয়াদঃ take it,,,, আপনার এপয়েন্টমেন্ট লেটার,,, আগামীকাল এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন করে জয়েন করবেন,,,

জ্যোতিঃ ওকে স্যার,,,

রিয়াদঃ আজ তাহলে আপনি আসুন,,,,

জ্যোতিঃ আসসালামু আলাইকুম,,,

রিয়াদঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,,

জ্যোতিঃ(উনার কেবিন থেকে বের হয়ে আসলাম,,, আল্লাহ,,, মনে হচ্ছিলো গলায় দম আটকে আছে,,, এখন একটা বাসা খুঁজতে হবে,,,বেরিয়ে পড়লাম বাসা খোঁজার উদ্দেশ্যে,,,।)
,,,,

অন্তরাঃ (আজ একটা ক্লাসও মনোযোগ দিয়ে করতে পারিনি,, একে-তো আজ জ্যোতি নেই,,,, একা একা ভালো লাগে না,,, তার ওপর হৃদয় ভাইয়ার কথাগুলো মনে হচ্ছে বারবার কানের কাছে কেউ বলছে,,, আনমনে হেটে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় একটা ফুল বিক্রেতা পিচ্চি দৌঁড়ে এলো সামনে,,,) এই পিচ্চি,,, কিছু বলবে,,,??

,,,,,আপনি আমার ফুলগুলো নেবেন,,,??

অন্তরাঃ আমি ফুল দিয়ে কী করবো সোনা,,,?? আমার তো ফুল দেওয়ার মানুষ নেই,,,,। আর আমার কাছে এতোগুলা ফুল নেওয়ার টাকাও নেই

,,,,,,এই ফুলগুলো আপনি নিলে একটা ভাইয়া আমাকে টাকা দেবে,,,।

অন্তরাঃ কোন ভাইয়া,,,??

,,,,,, আপনি আগে ফুলগুলো নিন,,,

অন্তরাঃ(জোর করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো,,, সবগুলো তরতাজা লাল গোলাপ,,,,। আমার হাতে ফুল দিয়েই পিচ্চিটা দৌড়ে চলে গেলো,,,,) এই পিচ্চি,,,, আরে শুনেতো যাও,,, যা চলে গেলো,,, এতগুলো ফুল কেন দিলো,,,,??

,,,,,,,এই মালাগুলো আপনার,,,??

অন্তরাঃ(আরেকটা পিচ্চি এসে বেলি ফুলের মালা দিলো হাতে,,,) আরে আমি তো এগুলো কিনি নাই,,, আমাকে কেন দিচ্ছো,,,??(গেট পর্যন্ত যেতে আরো কতগুলো পিচ্চি এসে তাদের সব ফুল আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো,,,, এখন আর হাতে আঁটছে না,,,, কিন্তু বুঝতে পারছি না এসব কেন দিচ্ছে,,,??

(গেটের বাইরে এসে অন্তরার চোখ চড়কগাছ,,, এতক্ষণে সব বুঝতে পারলো,,, হাতে থাকা ফুলগুলো ফেলে দিতে গেলেই,,,)

হৃদয়ঃ এগুলোর কী দোষ,,,??

অন্তরাঃ এগুলোর দোষ হচ্ছে,,, এগুলো আপনি দিয়েছেন,,,।

হৃদয়ঃ আর আমার দোষ,,,,

অন্তরাঃ আপনার দোষ,,,,,,,,

হৃদয়ঃ হ্যাঁ বলো,,,, আমার কী দোষ,,?? তোমার সাথে কখনো বাজে বিহেভ করেছি,,,??

অন্তরাঃ না,,,

হৃদয়ঃ বাজে কথা বলেছি,,,

অন্তরাঃ না,,,,

হৃদয়ঃ বাজে প্রস্তাব দিয়েছি,,,,??

অন্তরাঃ না,,,,,,

হৃদয়ঃ তাহলে দোষটা কোথায় আমার বলো,,,,,?? তোমাকে ভালোবাসি এটাই আমার দোষ,,,??

অন্তরাঃ না,,,, আমি এমন একজনকে ভালোবেসেছেন,,, যে কিনা সমাজের চোখে মূল্যহীন,,, রিজেক্ট,,,,, এটা আপনার দোষ

হৃদয়ঃ হুস,,,,,, আগেই বলেছি,,,, তুমি সমাজের চোখে কী সেটা আমি জানতে চাই না,,,, কিন্তু আমার কাছে আমার জীবনের চাইতেও মুল্যবান,,,

অন্তরাঃ আপনি পাগল হয়ে গেছেন,,, ডক্টরের কাছে যান,,,,

হৃদয়ঃ আমার ডক্টর,,, মেডিসিন,,, সব তুমি,,,,

অন্তরাঃ ওহ্ গড,,,,, আপনি বুঝতে কেন পারছেন না,,,???(রাগে হাতে থাকা সব ফুল ছুঁড়ে ফেললাম,,,,,)

হৃদয়ঃ আমি কিন্তু বাচ্চা ছেলে নই,,,,৷ কী করছি ভালো করেই বুঝতে পারছি,,,?? আবেগের বয়স নয় আমার,,,, যে ভুল করে পস্তাবো,,।

অন্তরাঃ আপনি কেন এমন পাগলামি শুরু করেছেন,,,?? শুধু চোখ দেখে মনে করেছেন না জানি কত সুন্দরী আমি,,,, কিন্তু সেটা একদমই ভুল ধারণা আপনার,,,, আপনি আমার থেকে অনেক বেশি সুন্দরী আর শিক্ষিত মেয়ে ডিজার্ভ করেন,,,,

হৃদয়ঃ আমি না সুন্দরী চাই,,, আর না বিদ্যাসাগরের মেয়ে,,,,,আমি শুধু আর শুধুমাত্র তোমাকেই চাই,,,, (পদ্মফুল হাতে হাটু গেঁড়ে অন্তরার সামনে বসে,,,) সে দেখতে তুমি যেমনই হওনা কেন,,,

অন্তরাঃ এ,,,এই ফুল কোথায় পেলেন,,,, (পদ্মফুল আমার সবচেয়ে প্রিয় একটা ফুল,,,। স্বপ্ন ছিলো ভালোবাসার মানুষ এই ফুল দিয়ে ভালোবাসার কথা বলবে,,,, কিন্তু,,, ভালোবাসা তো দূর ভালো করে কথাও কপালে জোটেনি,,)

হৃদয়ঃ আজ থেকে তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করবো আমি,,,, এটা তার শুরু,,,,

অন্তরাঃ দেখুন,,, ??

হৃদয়ঃ তুমি চারপাশে তাকিয়ে দেখো,,,, সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে,,,,,

অন্তরাঃ(চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম সত্যি সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে,,, আমার ভিষণ আনইজি লাগছে,,) আপনি তাড়াতাড়ি উঠোন প্লিজ,,,,, আমি মানুষের তামাশার কারণ হতে চাই না,,,,

হৃদয়ঃ এই ভার্সিটির সব মেয়ের ক্রাশবয় তোমার সামনে ফুল হাতে হাটু গেঁড়ে বসে আছে,,,, আর তুমি সেটা নিতে চাইছো না,,,, অদ্ভুত বিষয় দেখেছো,,, সারাজীবন মেয়েরা আমার পিছনে ঘুরতো আর আমি তোমার পিছনে ঘুরছি,,

অন্তরাঃ ঘুরতে কে বলেছে,,?? তাদের কাউকে নিজের করে নিলেই পারেন,,,।

হৃদয়ঃ যেটা আমার চাই না সেটা আমাকে কেউ জোর করেও দিতে পারবে না,,,, আর যেটা আমার চাই সেটা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ কেড়ে নিতে পারবে না,,,, আমার হাটুঁ ব্যাথা করছে কিন্তু ,,,,

অন্তরাঃ আমি কী বসে থাকতে বলেছি,,,??

হৃদয়ঃ ফুলগুলো না নিলে ওঠবো কী করে,,??

অন্তরাঃ (ফুলগুলো নেবার জন্য আমারতো মন আঁকুপাঁকু করছে,,,, কিন্তু ফুল নেওয়ার মানে তো উনাকেও মেনে নেওয়া,,,, কিন্তু সেটা কখনো সম্ভব নয়,,,)

হৃদয়ঃ আমাকে মেনে নিতে হবে না,,,, এখন শুধু ফুলগুলো নিলেই হবে,,,, বাকিটা নাহয় পরে দেখা যাবে,,,,

অন্তরাঃ শুধু ফুল কিন্তু,,,,??

হৃদয়ঃ হুম,,, শুধু ফুল,,,(মুখ গোমড়া করে,,,)

(অন্তরা হৃদয়ের হাত থেকে ফুলগুলো নিলো,,, রিয়াদ ওঠে দাঁড়ালো,,,,,,)

রিয়াদঃ চলো,,,,

অন্তরাঃ কোথায় যাবো,,,??

রিয়াদঃ গেলেই দেখতে পাবে,,,

অন্তরাঃ আমি কোথাও যাবো না আপনার সাথে,,,

রিয়াদঃ তুমি কী আমাকে বিশ্বাস করো না,,,,??

অন্তরাঃ তেমন কিছু না,,,,,

রিয়াদঃ তাহলে,,,যাবে নাকি কোলে তোলে নিবো,,,,

অন্তরাঃ কী,,,,??? পাগল হয়ে গেছেন,,,??

রিয়াদঃ যাবে নাকি,,,,,,(চোখ গরম করে,,)

অন্তরাঃ য,,যাচ্ছি,,,,,,,

(অন্তরা চুপচাপ হৃদয়ের গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো,,,)

অন্তরাঃ (কোথায় নিয়েই যাবে আল্লাহ জানে,,??)

(এদিকে অন্তরা আর হৃদয়ের করা সব কাহিনি মুহূর্তের মধ্যে হৃদয়ের মায়ের কাছে চলে গেছে,,, ছেলের এমন রুপের কথা শুনে হৃদয়ের মা থম মেরে গেছে,,, উনি বিশ্বাসই করতে পারছে না তার ছেলে এসব করেছে,,, কারণ এসব তার ছেলের স্বভাবের সাথে একদমই যায় না,,,, উনি অন্তরার সব খবর নেওয়ার জন্য লোক ঠিক করলেন,,,,)

চলবে,,,,