💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part:18
(অন্তরা হৃদয়ের হাত থেকে ফুলগুলো নিলো,,, রিয়াদ ওঠে দাঁড়ালো,,,,,,)
হৃদয়ঃ চলো,,,,
অন্তরাঃ কোথায় যাবো,,,??
হৃদয়ঃ গেলেই দেখতে পাবে,,,
অন্তরাঃ আমি কোথাও যাবো না আপনার সাথে,,,
হৃদয়ঃ তুমি কী আমাকে বিশ্বাস করো না,,,,??
অন্তরাঃ তেমন কিছু না,,,,,
হৃদয়ঃ তাহলে,,,যাবে নাকি কোলে তোলে নিবো,,,,
অন্তরাঃ কী,,,,??? পাগল হয়ে গেছেন,,,??
হৃদয়ঃ যাবে নাকি,,,,,,(চোখ গরম করে,,)
অন্তরাঃ য,,যাচ্ছি,,,,,,,
(অন্তরা চুপচাপ হৃদয়ের গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো,,,)
অন্তরাঃ (কোথায় নিয়েই যাবে আল্লাহ জানে,,??)
(এদিকে অন্তরা আর হৃদয়ের করা সব কাহিনি মুহূর্তের মধ্যে হৃদয়ের মায়ের কাছে চলে গেছে,,, ছেলের এমন রুপের কথা শুনে হৃদয়ের মা থম মেরে গেছে,,, উনি বিশ্বাসই করতে পারছে না তার ছেলে এসব করেছে,,, কারণ এসব তার ছেলের স্বভাবের সাথে একদমই যায় না,,,, উনি অন্তরার সব খবর নেওয়ার জন্য লোক ঠিক করলেন,,,,)
,,,,,
হৃদয়ঃ নামো,,,,
(দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো,,,)
অন্তরাঃ এটা তো রেস্টুরেন্ট,,, আমরা এখানে কেন এসেছি,,,,
হৃদয়ঃ সিনেমা দেখতে,,,,
অন্তরাঃ ফাজলামি করেন আমার সাথে,,,(হালকা রাগ দেখিয়ে,,,) এটা কী সিনেমা হল যে সিনেমা দেখবেন,,,,
হৃদয়ঃ তাহলে জিজ্ঞেস কেন করছো,,,?? যেহেতু এটা রেস্টুরেন্ট,,,, তাহলে খাওয়া ছাড়া আর কিসের জন্য আসবো,,,
অন্তরাঃ সেটা ভালো করে বললেই হতো,,,
হৃদয়ঃ তুমি যেমন প্রশ্ন করেছো,,, আমিও তেমন উত্তর দিয়েছি,,,
অন্তরাঃ আমি কিছু খাবো না,,,
হৃদয়ঃ খেতে হবে না,,, আমি খাবো তুমি বসে বসে দেখবে তাই হবে,,,
অন্তরাঃ আপনি খাবেন ভালো কথা,,, আমাকে কেন সাথে নিয়ে এসেছেন,,,,??
হৃদয়ঃ বকবক অফ করে চলো তো,,,
অন্তরাঃ আরে,,,
(হৃদয় অন্তরার উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে গেলো,,,, অন্তরাও বাধ্য হয়ে পেছন পেছন গেলো,,, কারণ হৃদয় আগেই গাড়ি লক করে দিয়েছে,,। হৃদয় দুজনের জন্য খাবার অর্ডার করে টেবিলে বসলো,,,)
অন্তরাঃ(এখানে রাতের মতো অন্ধকার কেন,,,??আর কোন মানুষ নেই,,,, অনেক ভয় করছে এখানে,,,)
হৃদয়ঃ দাঁড়িয়ে আছো কেন,,,??
অন্তরাঃ আমি বাড়ি যাবো,,,,
হৃদয়ঃ চুপচাপ বসো,,,,(চোখ গরম করে,,,)
অন্তরাঃ(এমনিতেই ভয় করছে,,, তাই আর কথা বাড়ালাম না,,, জড়সড় হয়ে বসে পড়লাম,,,)
হৃদয়ঃ খাবার আসলে তুমি এখানে বসে খাও আর আমি ঐ(একটু দূরে) টেবিলে বসছি,,, আর এখানে কেউ আসবে না তাই আনইজি ফিল করার কারণ নেই,,,,
অন্তরাঃ ব,,বললাম তো আমি খাবো না,,,।
হৃদয়ঃ ভয় নেই আমি তোমার মুখ দেখবো না,,,, আমি ঐ টেবিলে যাচ্ছি,,, আর ম্যানেজারকে বলা আছে কেউ আসবে না,,,
অন্তরাঃ আমি,,,,
(হৃদয় অন্তরার কথা না শুনেই একটু দূরের টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো,,,,। অন্তরা হৃদয়কে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু হৃদয় অন্তরাকে দেখছে না,,, অনেকগুলো খাবার দিয়ে ওয়েটার চলে গেলো,,,)
অন্তরাঃ এগুলো আবার কেমন খাবার,,,?? শুধু নুডলস ছাড়া আর একটারও নাম জানি না,,, বাইরের খাবার সম্পর্কে আমার ধারণা একদমই কম,,,, তেমন একটা খাওয়া হয় না,,, আর আমি বাইরের খাবার বেশি একটা পছন্দও করি না,,,। ধূর এতো ভেবে কাজ নেই,,, এখন আমার ক্ষিদে পেয়েছে,,, আগে খেয়ে নেই,,,,
(খাওয়া শেষে অন্তরা আর হৃদয় বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো আবার,,, অন্তরা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে মনে হয় হাফ ছেড়ে বাঁচলো,,,)
অন্তরাঃ(বাপ রে কেমন ভুতুড়ে জায়গা,,,,)
(গাড়ি আবার আপন গতির ছুটে চলেছে,,,,,,)
অন্তরাঃ আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিন প্লিজ,,,
হৃদয়ঃ আমরা এখন বাড়ি যাচ্ছি না,,,
অন্তরাঃ তাহলে কোথায় যাচ্ছি আমরা,,,?? বাড়িতে মা টেনশন করবে,,,
হৃদয়ঃ,,,,,,,,
অন্তরাঃ কী হলো আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না,,??
হৃদয়ঃ বললাম তো গেলেই দেখতে পাবে,,,,
অন্তরাঃ আজব লোক তো আপনি,,,,
হৃদয়ঃ আমি জানি আমি আজব লোক,,,, অভ্যাস করে নাও,,,, বাকি জীবন এই আজব লোকের সাথেই কাটাতে হবে,,,
অন্তরাঃ শখ দেখে বাঁচি না,,,(বিরবির করে,,)
হৃদয়ঃ কিছু বললে,,,,
অন্তরাঃ কই না তো,,,,,
হৃদয়ঃ না বললেই ভালো,,,,
অন্তরাঃ আর কতদূর,,,,
হৃদয়ঃ এই তো চলে এসেছি আর একটু,,,
অন্তরাঃ আচ্ছা আপনার কী আমার মুখ দেখতে,,,,
হৃদয়ঃ করে,,,, তবে বিয়ের পরই দেখবো,,, সবুরের ফল মিষ্টি হয়,,,
অন্তরাঃ যদি দেখেন আপনি যেমন কল্পনা করেছেন তার পুরো বিপরীত,,,, বিশ্রী দেখতে,,,
হৃদয়ঃ তুমি যেমনই হও আমার চোখে বিশ্ব সুন্দরী। কারণ আমি তোমার চেহারা না তোমার মনকে ভালোবাসি,,,,
অন্তরাঃ এসব কথা গল্প,,, উপন্যাস,,,, নাটক,,, সিনেমায় ভালো মানায়,,, বাস্তব জীবনে নয়,,,।
হৃদয়ঃ গল্প,,, উপন্যাস,,,, নাটক,,,,, সিনেমা এসব কিছু কিন্তু মানুষের জীবন থেকেই নেওয়া,,,। চরিত্রগুলো হয়তো কাল্পনিক হয়,,, কিন্তু প্রতিটা কাহিনী কারো না কারো জীবনের সাথে অবশ্যই মিলে যায়,,,,৷ আমার জীবন নাহয় তেমনি একটা উপন্যাসের মতো হোক,,,,
অন্তরাঃ আমি সত্যি বুঝতে পারছি না আপনি এতটা অবুঝ কী করে হতে পারেন,,,, নিজের ভালো পাগলেও বুঝে,,,,
হৃদয়ঃ আমিও আমার ভালো বুঝি,,,, তাইতো সারাজীবন ভালো থাকার জন্য,,,, ভালো থাকার উৎস খোঁজে নিয়েছি,,, সেটা পাওয়ার জন্য যা যা করতে হয় তাই তাই করবো,,,
অন্তরাঃ আপনার সাথে কথা বলাই বেকার,,,,
হৃদয়ঃ তুমি এমনভাবে আমাকে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছো,,, মনে হচ্ছে আমি ক্লাস ওয়ানের বাচ্চা আর তুমি টিচার,,,, আমি তোমার কম করে হলেও পাঁচ বছরের বড়,,,, তাই আমার জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা তোমার থেকে আমি বেশি ভালো বুঝি,,,,
অন্তরাঃ আপনি আমার বয়সে বড় হতে পারেন কিন্তু জীবনের উপর অভিজ্ঞতা আপনার থেকে আমার কিছু কম নেই বরং বেশিই হবে,,,,
হৃদয়ঃ জীবনের অভিজ্ঞতা আমারও কিছু কম নেই,,,, সাফার কিছু কম করিনি,,,
অন্তরাঃ মানে,,,,??
হৃদয়ঃ কিছু না,,,, চলে এসেছি,,,, নামো,,
অন্তরাঃ(আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলাম এটা একটা নদীর পাড়,,,, কিন্তু জায়গাটা আমি চিনি না,,, আর চিনবই বা কী করে,,,, এই জীবনে চার দেয়ালের বাইরে দেখেছি বা কী,,,, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নেমে এলাম গাড়ি থেকে,,,)
হৃদয়ঃ তোমার একটা ইচ্ছে পূরণ করেছি আর এখন আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করলাম,,,, এটা আমার খুব প্রিয় জায়গা,,, ইচ্ছে ছিলো ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে নদীর তীরে হাটবো,,, পুরোপুরি তো পূরণ করতে পারবো না তাই যেটুকু করা যায় করলাম,,,।
অন্তরাঃ( জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর,,,,, শহর থেকে অনেকটা দূরে,,,, শহরের যান্ত্রিক পরিবেশের বাইরে,,, বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া মতো একটা জায়গা,,, রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে দু’একটা গাড়ি শু করে চলে যাচ্ছে)
হৃদয়ঃ জায়গাটা ভালো লাগে নি,,,??
অন্তরাঃ অসম্ভব ভালো লেগেছে,,, (ঘোরের মাঝে,,)
হৃদয়ঃ (অন্তরার কথা শুনে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফোটে ওঠলো) আমার সব পছন্দই অসম্ভব সুন্দর,,,, ঠিক তোমার মতো,,,
অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে ঘোর কাটলো,,, প্রকৃতির মাঝে ডুবে গিয়েছিলাম,,,,, উনার কথা শুনে সরু চোখে উনার দিকে তাকালাম,,, বিনিময়ে উনি মিষ্টি একটা হাসি ফেরত দিলেন,,, আজ খেয়াল করলাম উনার হাসি অসম্ভব সুন্দর,,,, হাসলে গালে টোল পরে,,, ছেলেদের টোল পরা হাসি এতো সুন্দর হতে পারে জানা ছিলো না,,, )
হৃদয়ঃ এভাবে তাকিয়ে থেকো না প্রেমে পরে যাবে,,,
অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম,,, তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম,,,, আরিয়ানকে আমি খুব কম হাসতে দেখেছি,,,, উনার হাসিও সুন্দর ছিলো,,,, কারো সাথে কারো তুলনা করা ঠিক না,,,, সবাই নিজের মতে সুন্দর,, কিন্তু হৃদয়ের হাসিটা কেমন বুকে লাগার মতো,,, যে কোন মেয়ে ঘায়েল হয়ে যাবে এই হাসিতে,,,,)
হৃদয়ঃ সব মেয়েই ঘায়েল হয়ে যায়,,, শুধু যাকে করতে চাই সে ছাড়া,,,,
অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে অবাক হয়ে প্রশ্নবোদক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম,,)
হৃদয়ঃ সবাই বলে আমার হাসি নাকি অনেক সুন্দর,,, যে কোন মেয়ের মনে লাগার মতো,,, ইন ফ্যাক্ট আমার মা তো বলে তুই কিন্তু কোন মেয়ের সামনে হাসিস না,,, এটা জানার পর আমি আরো বেশী হাসিখুশী থাকার চেষ্টা করি,,,, তুমিও মনে মনে এখন এটাই ভাবছিলে তাই বললাম,,,
অন্তরাঃ মোটেও না,,, আমি কেন আপনাকে নিয়ে ভাবতে যাবো,,,??
হৃদয়ঃ তাহলে তখন অমন করে তাকিয়ে ছিলে কেন,,,???
অন্তরাঃ ক,,কখন,,, আমি তাকিয়ে টাকিয়ে ছিলাম না কখনো,,,
হৃদয়ঃ আচ্ছা অন্তরা,,, তুমি কী আরিয়ানকে ভালোবাসো,,,,??
অন্তরাঃ(হঠাৎ উনার এমন কথায় চমকে উঠলাম,, ভালোবাসা আর আরিয়ান,,, হয়তো দুটো বিপরীত মেরু আমার কাছে,,,, আরিয়ান নিজেই আমার মনে তার জন্য ঘৃণা তৈরি করেছে ভালোবাসা নয়,,, হৃদয়ের দিকে তাকালাম,,,, কেমন উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে উত্তরের অপেক্ষায়,,, হয়তো মনে মনে দোয়া করছে উত্তরটা যেন না হয়,, কিন্তু আমি তাকে হতাশ করে কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম,,,)
হৃদয়ঃ কী হলো বলো,,,??
অন্তরাঃ,,,,,,,,,
হৃদয়ঃ অন্তরা আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি,,,,
অন্তরাঃ যে প্রশ্নেরই কোন ভিত্তি নেই আমার কাছে তার কী উত্তর দেবো,,,??
হৃদয়ঃ মানে কী,,,,??
অন্তরাঃ বুঝে নিন,,,,
হৃদয়ঃ আমি কী তাহলে না ধরে নিবো,,,??
অন্তরাঃ আরিয়ানের মতো মানুষকে কী ভালোবাসা যায় বলে আপনার মনে হয়,,,???
হৃদয়ঃ আমাকে কী আরিয়ানের মতো মনে হয় তোমার কাছে,,,??
অন্তরাঃ কখনোই না,,, আরিয়ান আর আপনি দুটো বিপরীত চরিত্রের মানুষ,,,,,
হৃদয়ঃ তাহলে আমাকে কেন ভালোবাসা যায় না,,,,??
অন্তরাঃ আমার কাউকে ভালোবাসা মানায় না,,,, কাউকে ভালোবাসার যোগ্যতা নেই আমার,,,,
হৃদয়ঃ ভালোবাসতে যোগ্যতা নয়,,, একটা মনের প্রয়োজন হয়,,,
অন্তরাঃ মন হয়তো তাহলে মরে গেছে,,,,, তাই ভালোবাসা জন্মায় না,,,,
চলবে,,,