Divorce Part-6+7

0
5280

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part : 6

অন্তরাঃ(আমার কথার কোন দাম উনার কাছে নেই। উনি উনার কাজে ব্যস্ত আর আমি চোখের পানিতে বালিশ ভেজাতে,,,)

★বর্তমান★

রোজঃ কী বলবো বুঝতে পারছি না,,,,??

অন্তরাঃ (মিসেস রোজের কথা শুনে মৃদু হাসলাম,,,) আমাকে সান্তনা দিতে কিছু বলতে হবে না। তবে এটা বলুন ৪ টা বছর তাদের এমন অত্যাচার সয্য করেও সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি,,, এখনো আমার ডিভোর্স নেওয়ার আগে একবার ভাবা উচিত?? একবার নয় হাজার বার ভেবেছি,,, আবার চেষ্টা করবো,,, কিন্তু নিজের কাছেই হেরে গেছি,,,,, আর পারবো না,,,,।

রোজঃ ৪ বছরে কোন পরিবর্তন হয়নি,,,??

অন্তরাঃ হয়েছে,,,,, তবে ভালোর বদলে খারাপ,,,দিনদিন তাদের আচরণ আরো খারাপ হতে থাকে,,,,,। যে আমি নিজের হাতে খায়নি,,,সে আমি একটা পুরো পরিবারের রান্না করেছি,,,,, যে আমি কখনো নিজের কাপড় ধুয়ে দেখেনি,,,, সে আমি একা হাতে তাদের সবার কাপড় ধুয়ে আইরন করেছি। নিজের রুম পরিষ্কার করিনি কখনো আর পুরো বাড়ি পরিষ্কার করেছি প্রতিদিন। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো বলে কখনো কিছু করিনি,,,, শুধু পড়াশোনা নিয়েই থাকতাম ,,, বলার আগেই মা সব করে দিতো,,,,,। আর এই বাড়িতে আমি ছিলাম সবার প্রয়োজন মেটানোর মেশিন,,,,, সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যা হলেই চোখে ঘুম নেমে আসতো,,,, তখন আবার রাত ১১টা পর্যন্ত আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে হতো। উনি এলে খাবার দিলাম,,,, কখনো খেতো আবার কখনো বাইরে থেকেই খেয়ে আসতো,,,। আর আমি রোজ তার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করতাম,,,, কখনো এটাও জিজ্ঞেস করতো না খেয়েছি কিনা,,,,। রাতে না খেতে খেতে রাতে খাওয়ার অভ্যাসই চলে গেলো। ঘুমাতে যেতে বেশিরভাগ সময় রাত ১২টা বেজে যেতো,,,, তখন আবার আরিয়ানের চাহিদা মেটানোর খোরাক হয়ে যেতাম। কখনো যদি বলতাম আজ আমি ক্লান্ত সেটা তার কানেই কোনদিন পৌঁছায়নি,,,,। মানিয়ে নিতে শুরু করলাম এসবের সাথে,,,,। বিয়ের একমাস পর এসএসসির রেজাল্ট দিলো,,, গোল্ডেন এপ্লাস পেয়েছিলাম। আরিয়ানের কাছে বললাম আমি আরো পড়তে চাই। সে সাফ না করে দিলো,,,, শাশুড়ি মা বললেন বাড়ির বউ কলেজে যাবে তাহলে বাড়ির কাজ কে করবে,,,?? বাবার বাড়ি যাওয়ার নাম করে ভাইয়ার সাহায্যে কলেজে ভর্তি হলাম। কলেজের সব খবর জ্যোতির সাহায্যে পেয়ে যেতাম,,,,। আরিয়ানের জন্য রাতে যখন অপেক্ষা করতাম তখন বসে বসে পড়তাম,,, আরিয়ান আসার সময় হলেই বই লুকিয়ে রাখতাম। একমাস যেতেই আরিয়ানের কাছে ধরা খেয়ে যাই,,,,,সেদিনের কথা মনে হলে আজও ভয়ে আত্মা কেঁপে ওঠে,,,,

রোজঃ কেন,,,,,

অন্তরাঃ সেদিন খেয়ালই করিনি আরিয়ানের আসার সময় হয়েছে,,,, আমি একটা অংক করার চেষ্টা করছি,,,

★অতীত★

অন্তরাঃ(একটা অংক কিছুতেই মেলাতে পারছি না,,, কলিংবেল বাজার শব্দে চমকে উঠলাম। উনার আসার সময় হয়েছে খেয়ালই করিনি। বই না লুকিয়েই দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম,,,, দরজা খুলতে একটু দেরি হলে আমার খবর আছে,,,) চলে এসেছেন,,,, আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি,,,

আরিয়ানঃ আমি খাবো না,,,,, বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি,,,,

অন্তরাঃ ওহ্ ,,,,,, ঠিক আছে আপনি রুমে জান আমি সব গুছিয়ে আসছি,,,,(উনি রুমে চলে গেলেন আমি খাবার গুছিয়ে রাখছি,,,,)

আরিয়ানঃ (রুমে এসে দেখি বেডে অনেক বই খাতা এলেমেলো হয়ে পরে আছে,,,, কিসের বই এগুলো,,,,?? হাতে নিয়ে দেখি ইন্টার ১ম বর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বই,,,, এগুলো,,,?? অন্তরা,,,,) অন্তরা,,,,,,

অন্তরাঃ( উনার ডাকে ভয় পেয়ে গেলাম। বইপত্র সব ওভাবেই রেখে এসেছি একটুও মনে নেই। এখন কী হবে?? কোনরকমে সব গুছিয়ে উপরে গেলাম,,) ক,,,কী হয়েছে??

আরিয়ানঃ বুঝতে পারছো না তুমি কী হয়েছে?? What is this,,,??(হাতের বই অন্তরার দিকে ঢিল ছুড়ে।) তোকে আমি বলেছিলাম আর পড়তে হবে না,,, তুই আমার অনুমতি ছাড়া কোন সাহসে ভর্তি হয়েছিস?? আমার কথা অমান্য করার সাহস হয় কী করে??? How,,,,??

অন্তরাঃ আমি আসলে,,,,,,

ঠাসসসস

আরিয়ানঃ তুই আবার কথা বলছিস কোন সাহসে,,,?? কলেজে নতুন নতুন ছেলে পারি তার জন্য ভর্তি হয়েছিস,,,?? তোর রুপ দেখাতে কলেজ যেতে চাস,,,,, আমাকে দিয়ে তোর হচ্ছে না,,,,,

অন্তরাঃ আপনি কী বলছেন এসব,,,,?? (জোরে চিৎকার করে বললাম। মুহূর্তেই উনি আমার গলা চেপে ধরলেন,,,,)

আরিয়ানঃ তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি,,,(দাঁত কিটিমিটি করে) আজ তোকে এমন শিক্ষা দেবো আমার সাথে উচু গলায় কথা বলাতো দূর,, আমার দিকে তাকাতে তোর আত্মা কেঁপে ওঠবে,,,

অন্তরাঃ ক,,কী করবেন,,, (আমার কথা শেষ হতেই ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলেন। কোমরের বেল্ট খুলে আঘাত করলেন পিঠে।) মা গো,,,,,

আরিয়ানঃ (ওর মুখ চেপে ধরলাম) চুপ,,,,, সবাই ঘুমাচ্ছে,,,, তোর চিৎকারে যদি একজন মানুষেরও ঘুম ভেঙে যায় একদম খুন করে ফেলবো,,,

অন্তরাঃ( আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে ওড়না দিয়ে মুখ বেধে দিলেন,,,, আমি শুধু ইশারায় না করে যাচ্ছি কিন্তু উনার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। মুখ বেধে ইচ্ছে মতো মারছেন আর আমি গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছি,,,, এই যন্ত্রণার থেকে মৃত্যু মনে হয় সহজ,,,, মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে থেকে গেলেন উনি,,,, তারপর আমার মুখ খোলে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেন,,)

আরিয়ানঃ এই গলা দিয়ে আমার সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলার আগে আজকের কথা হাজার বার ভাববি,,,,

অন্তরাঃ(কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি,,,। একবিন্দু নড়াচড়া করার শক্তি আমার নেই,,,,। শুধু চোখ দিয়ে বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে)

আরিয়ানঃ আর তোর পড়াশোনা না,,?? ওকে সারাবছর যত পারিস পড়,,,, যখন বছর শেষে পরিক্ষা দিতে না পারবি সেটাই হবে আমার কথা অমান্য করার শাস্তি।

★বর্তমান★

রোজঃ একটা মানুষ কিভাবে পারে একটা মানুষকে এভাবে আঘাত করতে,,?? তোমার শুধু ডিভোর্স নয় আরিয়ানের নামে কেস করা উচিত,,,,।

অন্তরাঃ কিছু অন্যায়ের শাস্তি প্রকৃতি দেয়,,,,। আমার বিচার আমি উপর ওয়ালার কাছে দিয়েছি,,,।

রোজঃ এসব জানোয়ারদের ছেড়ে দেওয়া মানে তাদের কাজকে সমর্থন করা,,,,

অন্তরাঃ আমি ওর কিছুই করতে পারবো না,,,, আমাদের দেশের আইন ব্যবস্থা টাকার গোলাম,,,,,। মানছি এখন আমার ভাইয়ার অবস্থা ভালো কিন্তু একটা কেস চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমি চাই না আমার জন্য আমার ভাইয়া সব শেষ করুক। ওর জীবন নষ্ট হোক। ভাইয়া এসবের অনেক কিছুই জানে না,,, জানলে আরিয়ানাকে খুন করে ফেলবে,,,,। তাইতো আপনার কাছে একা এসেছি,,,

রোজঃ এভাবে ছেড়ে দেবে এই জানোয়ার কে??

অন্তরাঃ আমি ছাড়লেও আমার উপর ওয়ালা ছাড়বে না,,,, তার কাছে সব অন্যায়ের বিচার সঠিক সময়েই হয়,,।

রোজঃ ওকে,,,,,তারপর কী করলে বলো,,,??

অন্তরাঃ সেদিন রাতেই আমার প্রচন্ড জ্বর হলো। আমার দেখাশোনা করার সময় ও বাড়িতে কারো নেই,,,, আর আমি কোন কাজও ঠিকমতো করতে পারছি না,,,, তাই আমাকে রেখে তারা কী করবে?? মার কাছে পাঠিয়ে দিলো,,, সবাই জানলো আমি ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। কিন্তু ঔষধ লাগাতে গিয়ে মা বুঝতে পারলো কী হয়েছে আমার সাথে?? মা জিজ্ঞেস করতেই হাও মাও করে কেঁদে ওঠলাম মাকে জড়িয়ে। মাও কেঁদে যাচ্ছেন,,,, যে মেয়েকে কখনো ফুলের টোকা দেয়নি সে মেয়ের এই অবস্থা দেখে বাবাও কান্না করে দিলো। ভাইয়াকে কিছু জানানো হলো না তাহলে আরিয়ানাকে খুনই করে ফেলবে,,,,,,,

রোজঃ তোমার বাবা-মা কিছু বললেন না,,??

অন্তরাঃ বললেন ধৈর্য্য রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের বাড়িতে ১৫-২০ হয়ে গেলেও কেউ নিতে আসে না ও বাড়ি থেকে। মানুষও খারাপ বলতে শুরু করেছে,,,বউ অসুস্থ অথচ কেউ একদিন দেখতেও এলো না,,,। জামাই আছে কী করে?? বাধ্য হয়ে বাবা নিজেই দিয়ে এলেন। আবার শুরু হলো সেই নরকের জীবন,,,,। কলেজের সব খবর নিতাম জ্যোতির থেকে,,,ও প্রাইভেট পরতো সেইসব নোট আমাকে দিতো,,,,। দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে এলো,,,,, আরিয়ান ততদিনে ভুলেই গেছে প্রায়,, আমার পড়াশোনার কথা। উনি ভেবেছে মার খেয়ে আর পড়াশোনা করার সাহস করিনি। আমি অসুস্থ হলেই আমাকে বাবা-মার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হতো,,,, বাবা দিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত না কেউ খোঁজ নিতো আর না আনতে যেতো। এবার তারই ফায়দা তুললাম। ইচ্ছে করে নানা অনিয়ম করায় অসুস্থ হয়ে পড়লাম আর আমাকে বাবা-মার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। আমিও সেই অসুস্থ শরীর নিয়েই পরীক্ষা দিলাম। এভাবেই চলতে থাকে দিন। একটু এদিক ওদিক হলেই মার খেতে হতো আরিয়ানের হাতে। মাঝে মাঝে আমার শাশুড়ী মা মিথ্যা বলেও মার খাওয়াতেন। সব মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছিলাম। বিয়ের এক বছর হতেই সবাই বাচ্চার জন্য চাপ দিতে শুরু করলো।)

রোজঃ এত কম বয়সে,,,??

অন্তরাঃ হুম,,,,আরিয়ানও চায় বাচ্চা নিতে। তখন আমার বয়স ১৭ বছর। এত কম বয়সে বাচ্চা নিলে মা ও শিশু দুজনেরই নানা ঝুঁকি থাকে তাই আমি রাজি হচ্ছিলাম না। সে জন্যেও আরিয়ান অনেক মেরেছিলো,,,,। বলেছিলো তুই মরলে মরলি তো কী হয়েছে?? আবার বিয়ে করে নিবো,,,, কিন্তু আমার বাচ্চা চাই,,,

রোজঃ যে স্বামী হওয়ারই যোগ্য না সে আবার বাবা হতে চায় (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

অন্তরাঃ (মিসেস রোজের কথা শুনে মৃদু হাসলাম) তারা চাইলেও আমি তখন বাচ্চা নিবো না বলে ঠিক করি,, তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করি। তারপর চেষ্টা করেও যখন বাচ্চা হচ্ছিল না তারা আমার প্রতি আরো ক্ষেপে গেলো। অনেক চিকিৎসাও করালো,,,যেখানে আমি বাচ্চা নিচ্ছি না সেখানে ডাক্তার কী করবে?? একবছর অনেক চেষ্টা করে তারা হাল ছেড়ে দিলো। কিন্তু আমার সাথে আরো খারাপ ব্যবহার করা শুরু করলো,,,, কথায় কথায় আরিয়ান গায়ে হাত তুলতো। নরক যন্ত্রণায় দিনগুলো কাটছিলো আমার। আরো তিনটা বছর পার হয়ে গেলো। তাদের কথা আর সয্য করতে না পেরে ভাবলাম এবার বাচ্চা নিতেই হবে। আরিয়ান আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো, গায়ে হাত তুলতো দিন শেষে আবার আমার কাছেই তাকে আসতে হতো নিজের চাহিদা মেটাতে। উনি যখন আমার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিতে ঘুমাতেন,,,,আমি মনে মনে বললাম যে বুকে মাথা রেখে ঘুমান তার ঠিক ৬ ইঞ্চি ভেতরে একটা হার্ট আছে মন আছে সেটা কী আপনি কোনদিন বুঝবেন না?? সত্যি সে তা কোনদিন বুঝেনি। দিন দিন আরিয়ান আরো পরিবর্তন হয়ে গেলো। এখন সে চাহিদা মেটাতেও আমার কাছে আসে না। কারণ যে রুপ দেখে মুগ্ধতায় পাগল হয়ে বিয়ে করেছিলো তা তো এই সংসারের কাজের ভীড়ে হারিয়ে গেছে। এখন আর আমার দিকে তাকিয়ে তার মুগ্ধতা জাগে না,,,মুখে ফোটে ওঠে বিরক্তির ছাপ। আরিয়ানের অগোচরে তখনো আমি পড়াশোনা করেই যাচ্ছি। পড়াশোনার খরচ সব দিচ্ছে ভাইয়া। ভাইয়াও তখন বিয়ে করেছে চার বা পাঁচ মাস হবে। তখন আমি বাবার বাড়ি আছি। হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে পড়ে যাই। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় বাবা,,। জানতে পারি মা হতে চলেছি আমি। প্রেগনেন্সির ২ মাস তখন। সেই অনুভূতির কথা বলে বুঝাতে পারবো না আমি। সব কষ্ট এক নিমিষে ভুলে গেলাম আনন্দে। বাবা-মা আরিয়ানকে ফোনে জানাতে চাইলে আমি না করি,, বলি আমি নিজে গিয়ে জানাবো। চলে যাই ও বাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকি কখন আসবে উনি। কিন্তু উনি এসেই আমাকে থাপ্পড় মেরে বসলেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

চলবে

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 7

অন্তরাঃ আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি উনি কখন আসবেন। কিন্তু উনি এসে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে বসলেন,,,

★অতীত★

আরিয়ানঃ তোর ভাইয়ের সাহস কীভাবে হয় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার। মাত্র কয়মাস হয়েছে চাকরির আর আমার উপর আঙ্গুল তুলছে।

অন্তরাঃ আপনি অন্যায় করছেন ভাইয়া শুধু সেটাই বলেছে।(আরিয়ান ঘুষ নিয়ে কোম্পানির ইনফরমেশন বিক্রি করে সেটা ভাইয়া জানতে পেরে অনেকবার উনাকে সাবধান করেছে। আমিও বলেছি কিন্তু উনি বিনিময়ে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। এবার ভাইয়া হয়তো এমডি স্যারের কাছে কমপ্লেইন করেছে) আমি অনেকবার আপনাকে বুঝিয়েছি কিন্তু আপনি আমার কথাই শুনেননি।

আরিয়ানঃ আজ তোর ভাইয়ের জন্য অফিস ভর্তি মানুষের সামনে এমডি স্যারের কাছে মাফ চাইতে হয়েছে আমাকে।

অন্তরাঃ ভুল করলে তার শাস্তি পেতে হবে এটাই সত্যি,,,, (উনি আমার ঘাড় ধরে উনার সামনে নিলেন)

আরিয়ানঃ এখন তোর আর তোর ভাইয়ের থেকে আমাকে ঠিক ভুল শিখতে হবে,,,,,?? তোর ভাইয়ের অনেক সাহস তাই না। আজ তোর এমন হাল করবো তোর দিকে তাকিয়ে তোর ভাইয়ের রুহ কেঁপে ওঠবে,,,,,

অন্তরাঃ (উনি ধাক্কা দিতেই টেবিলের সাথে পেটে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা লাগলো। পেট ধরে বসে পড়লাম) ও মা গো

আরিয়ানঃ আজ তোর নাটকে কাজ হবে না,,,,,তুই কী মনে করিস আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি,,,,, তুই অসুস্থতার নাটক করে বাপের বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসবি আর আমি কোনদিন জানতেও পারবো না। আমি সব জানি তাও এর শেষ দেখার জন্য চুপ করে ছিলাম। কিন্তু দিনদিন তোর সাহস বেড়েই চলেছে। কলেজে নতুন নাগর পেয়েছিস যার জন্য বাচ্চাও নিতে চাসনি।

অন্তরাঃ ম,,মা গো,,,,,, আল্লাহর দ,,,দোহাই লাগে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন,,,,,,

আরিয়ানঃ হাসপাতালে,,,,, হ্যাঁ আজকে তোকে হাসপাতালেই পাঠাবো,,,তোর আর তোর ভাইয়ের সাহস অনেক বেড়ে গেছে,,,,,

অন্তরাঃ(উনি আমার কথা না শুনে পেটে লাথি মারলেন) আল্লাহ,,,,,,,, (আস্তে আস্তে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো,,,, আর কিছু মনে নেই)

আরিয়ানঃ আরে,,,, মরে গেলো নাকি,,,?? এ,,,এতো ব্লাড এলো কিভাবে,,,,?? (রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে,,,। ভয় পেয়ে গেলাম,,, অন্তরার নাক দিয়েও রক্ত চলে এসেছে। মরে গেলে তো ফেঁসে যাবো,,,, তাড়াতাড়ি কোলে তুলে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যেতে লাগলাম। মা জিজ্ঞেস করলে বললাম স্লিপ করে পড়ে গেছে,,,,,)

★বর্তমান★

রোজঃ অন্তরা এ তো খুনি,,,,, তোমার বেবি,,??

অন্তরাঃ ন,,,নেই ( কথাটা শেষ হওয়ার আগেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিলাম) খুন করেছেন উনি,,,,, আমার সন্তানকে আর আমার মা ডাক শোনার অধিকার কে,,,,

রোজঃ মানে,,,,,,।

অন্তরাঃ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আমিতো বেঁচে গেছি কিন্তু,,,, যখন আমার জ্ঞান ফিরে চোখ খোলে দেখি মা পাশে বসে আছে,,, তার কাছে জানতে পারি চ,,,চলে গেছে আমার সন্তান আমাকে ছেড়ে। সাথে আমি হারিয়েছি মা হওয়ার ক্ষমতা,,,

রোজঃ what,,,,??

অন্তরাঃ (চোখ মুছে লাভ হচ্ছে না তাই মুছবার মিথ্যা চেষ্টা করলাম না। চোখ থেকে মুশল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে,,,) প্রথমে আরিয়ান যখন আমাকে ধাক্কা দেয় তখন আমার বেবি ন,,ষ্ট হয়ে যায়। আর লাথি মারার ফলে জরায়ু ফেটে যায় তাই আমাকে বাঁচাতে অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয় জরায়ু,,,, (গলা ধরে আসছে বলতে,,,) এসব জানার পর আমার শাশুড়ি সাফ জানিয়ে দেয় যে গাছ ফল দিতে পারবে না তার কোন দরকার নেই তাদের,,,,। তারপর থেকে বাবা-মার কাছেই আছি,,,, এসব শুধু বাবা-মা জানে ভাইয়া কিছুই জানে না। সে শুধু জানে বাচ্চা হবে না বলে তারা নিবে না আর ভাইয়াও এমন মানুষের কাছে আমাকে রাখতে চায় না যার কাছে আমার কোন মুল্য নেই। এসব ভাইয়া জানলে আরিয়ানকে খুন করতে একবারও ভাববে না। বাবা কেস করতে চেয়েছিলো আমি আটকেছি,,,
আমার সুস্থতার জন্য এতদিন অপেক্ষা করছে সবাই। আরিয়ান কিছু করার আগেই আমিই করতে চাই,,,

রোজঃ আমি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছি না মানুষ এত জঘন্য হতে পারে,,,,

অন্তরাঃ আপনি হয়তো খেয়াল করেননি,,,, আমার মত এমন অন্তরা আমাদের সামাজে হাজারটা আছে। কেউ এসব থেকে বের হতে পারে আবার কেউ সারাজীবন এমন নির্যাতন সয্য করে কাটিয়ে দেয়। আবার কেউ হেরে গিয়ে আত্মহত্যা করে নেয়। আবার কেউ প্রতিনিয়ত মানুষের কাছে ডিভোর্সি শব্দ শুনাটাই এর থেকে ভালো মনে করে। আচ্ছা এতো কিছু বললাম এসবের আসল কারণটাই বললাম না।

রোজঃ কী,,,??

অন্তরাঃ বিয়ের সময় বাবা কিছু দেয়নি এটা ছিলো তাদের প্রথম রাগ,,,,, আরিয়ানের রাগ ছিলো আমার বিয়েতে না করে দেওয়া,,,, শাশুড়ী মা অনেকবার বাবার থেকে এটা সেটা নেওয়ার কথা বলেছে,,,, না করাই মিথ্যে বলে আরিয়ানের কাছে মার খাইয়েছে। আর আস্তে আস্তে আমার সৌন্দর্য কমতে থাকে আর আমার প্রতি আরিয়ানের বিরক্তি বাড়তে থাকে। আমার ভালো কাজও তাদের খারাপ লাগতো,,,

রোজঃ আমার বলার মতো কোন ভাষা নেই। তুমি সাইন করে দাও আমি তাড়াতাড়ি করার জন্য চেষ্টা করছি,,, তবে আরিয়ানের মতো জানোয়ারদের এভাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক না,,,

অন্তরাঃ ছেড়ে কোথায় দিচ্ছি,,?? দেশের আইন হয়তো টাকার বিনিময়ে ভুল বিচার করতে পারে কিন্তু ওপরওয়ালা ঠিকই বিচার করবে,,,, আমার বিচার তার কাছে,,,, আমি ও দেখি কী বিচার করে আমার বিচারক,,,, (সাইন করে দিলাম কিন্তু কেন জানি না একটুও কষ্ট হলো না,,,)

রোজঃ একটু সময় লাগবে,,,,

অন্তরাঃ ঠিক আছে,,,, তাহলে আজ আমি আসি,,,,,,

রোজঃ ঠিক আছে,,,, এসো,,,,

অন্তরাঃ(চলে এলাম মিসেস রোজের চেম্বার থেকে। আর মাত্র কয়েকটা দিন আরিয়ান,,,তারপর আপনি স্বাধীন,,, আর আমিও,,,)

এদিকে,,,

হৃদয়ঃ জ্যোতি,,,,

জ্যোতিঃ জী ভাইয়া,,,, কিছু বলবেন,,??

হৃদয়ঃ তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি,,,

জ্যোতিঃ কেন ভাইয়া,,,,

হৃদয়ঃ তোমার ফ্রেন্ড আসেনি,,,

জ্যোতিঃ কোন ফ্রেন্ড,,,??

হৃদয়ঃ অন্তরা,,,,,!!!

জ্যোতিঃ ওহ্ অন্তরা,,,না আসেনি,,,,, আজ ওর একটু কাজ আছে,,, আগামীকাল থেকে রেগুলার আসবে মনে হয়,,,

হৃদয়ঃ ওহ্ ,,,,,,

জ্যোতিঃ কেন ভাইয়া,,, কোন সমস্যা,,,??

হৃদয়ঃ ন,,না মানে এমনি,,,। আচ্ছা তুমি বরং এখন বাসায় যাও,,,

জ্যোতিঃ ঠিক আছে ভাইয়া,,,, আসছি,,

হৃদয়ঃ(ধূর,,,, কিছুই বলতে পারলাম না,,,,। কী না কী মনে করবে,,,??)

,,,,,,,হৃদয়

হৃদয়ঃ হ্যা মা,,,,

হৃদয়ের মাঃ তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আসো কেন,,,?? তোমার ক্লাস নেই,,,,।

হৃদয়ঃ না মা আজ আর ক্লাস নেই,,,,

হৃদয়ের মাঃ ওহ্ ঠিক আছে তাহলে তুমি সিয়ামকে নিয়ে বাসায় যাও,,,, আমিও তাড়াতাড়ি আসছি,,,।

হৃদয়ঃ সিয়াম কোথায়,,??

হৃদয়ের মাঃ আমার কেবিনে আছে,,,, রুপার সাথে খেলছে,,

হৃদয়ঃ আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি,,,,,, (সিয়াম আমার বড় ভাই রিয়াদের ছেলে। বয়স কেবল দুবছর হয়েছে। ওর মা ওকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে। ভাবি মারা যাবার পর ভাইয়া কেমন রোবট হয়ে গেছে,, সারাদিন অফিসে পরে থাকে,,, ছেলেরও খোঁজ নেয় না। ভাবিকে খুব ভালোবাসতো,,,এভাবে ভাবির চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি। সিয়ামকে মা বড় করছে,,,। সাথে করে কলেজে নিয়ে আসে।) চলো বাবা,,,

সিয়ামঃ বাবা,,,,(দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে)

হৃদয়ঃ আস্তে বাবা,,,পরে যাবা,,,(ও আমাকেই বাবা ডাকে,,,,। ভাইয়াকে ও খুব একটা দেখে না। সিয়াম ঘুমে থাকতেই ভাইয়া অফিস চলে যায় আর যখন ফিরে তখনও ঘুমে। আমার সাথেই বেশি থাকে তাই মনে করে আমি ওর বাবা,,,,) রুপা,,, তুই ওর সব জিনিসপত্র গুছিয়ে গাড়িতে গিয়ে বস আমি আসছি,,,(সিয়ামকে কোলে নিয়ে ফ্রেন্ডদের কাছে গেলাম)
,,,,,,,,

অন্তরাঃ(বাড়ি এসে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম)

মাঃ কী হলো,,,,

অন্তরাঃ কিছুদিন সময় লাগবে,,,,

মাঃ ওহ্ (একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে),,,,

অন্তরাঃ সবার জীবনে সব থাকে না মা,,,, আমি মেনে নিয়েছি তুমিও মেনে নাও,,,

মাঃ প্রতিবেশীরা আমাকে বা তোর বাবাকে দেখলেই কানাঘুষা করছে,,

অন্তরাঃ(কী বলবো আমি,,,?? আমার জীবন হয়তো শুধু সয্য করার জন্যই) খাবার দাও,,,ক্ষুধা পেয়েছে,,।

মাঃ আয় দিচ্ছি,,,,
,,,,,

নিলাঃ আমরা বিয়ে কবে করছি,,,,,

আরিয়ানঃ,,,,,,,,,

নিলাঃ কী হলো,,,,,কী ভাবছো,,,,??

আরিয়ানঃ হ,,হ্যা কিছু বলছো,,,,??

নিলাঃ কী ভাবছো,,,??

আরিয়ানঃ কিছু না,,,, তুমি কী বলছিলে,,,??

নিলাঃ আমরা বিয়ে কবে করছি,,,,??

আরিয়ানঃ আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো,,,,,

নিলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,,,এখন চলো শপিংয়ে যাবো,,,,

আরিয়ানঃ চলো,,,,(জানি না কেন আজকাল কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে,,, নিলা তো সবসময় আমার সাথে আছে তাহলে কেন মনে হচ্ছে কিছু নেই,,, কেন,,,??)

চলবে,,,,,,