11+12part
first love….
Samira Afrin Samia (nipa)
part: 11
এদিকে তানভীরের বাবা মা ও নানান ধরনের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে তানভীরকে বিয়েতে রাজি করিয়ে নেয়।
এক সপ্তাহ পর………
আজ বিয়ে। সকাল থেকে বাসায় অনেক আয়োজন চলছে। আমার সব ফ্রেন্ড আসছে। অনেক আত্মীয়রা আসছে। বাবাই আম্মু নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। বাবাই কিছুক্ষণ পর পর আমাকে এসে দেখে যায়।
দুপুরে পার্লারের কিছু মহিলা আসছে। ওনারা এসেই আমাকে সাজাতে বসিয়ে দিলো। এত রাগ হচ্ছে। যেমন রাগ হচ্ছে তেমন কষ্ট ও হচ্ছে। বিয়েতে রাজি না থাকলে ও বাবাইয়ের সম্মানের কথা ভেবে বিয়েটা করতে হচ্ছে।
মহিলা গুলো সেই কখন থেকে আমার চুল গুলোকে নিয়ে কি করছে আল্লাহই জানে।
আটা ময়দা যা কিছু আছে সব আমার মুখে লাগিয়ে দিল।
নিজেকে কেমন জুকার জুকার মনে হচ্ছে।
এত ময়দা কোনো মানুষের মুখে লাগায় নাকি?
আর এতো বারী বারী গহনা পরিয়ে দিল।
গহনা তো আছেই তার সাথে এমন এক বেনারসি পরালো এখন তো মনে হয় আমি দাঁড়াতেই পারবো না। মাটিতে ঝুকে যাবো।
আল্লাহ এই ছিল আমার কপালে। এইসব পড়ানোর জন্যই কি আমাকে বাঁচিয়ে রাখছিলা।
আর এমন একটা ইংরেজের বংশধর উল্লুক কে ই আমার জন্য দুনিয়াতে পাঠাইলা।আমি মাছুম বাচ্চা কি এমন পাপ করছিলাম যার জন্য আমাকে এই উল্লুকের গলায় ঝুলাইছ?
তানভীরঃ সিয়াত দোস্ত আমি এই বিয়ে করবো না।
সিয়াতঃ কেন ভাই কি হয়ছে?
তানভীরঃকি হয় নাই তা বল।এই মেয়েকে বিয়ে করে আমি নিজের জীবন নিজেই ধ্বংস করতে পারবো না।
প্লিজ তুই কিছু একটা করে এই বিয়েটা ভেঙ্গে দে।
প্লিজ ভাই।।।।
সিয়াতঃ আরে এমন করে বলিস কেন। সামিহা মেয়ে হিসেবে খারাপ না।
তানভীরঃ খারাপ না?
ওর মধ্যে এক বিন্দু ভালো ও নেই।
ও একটা ফাজিল মেয়ে। আমি ওকে বিয়ে করবো না।
সিয়াতঃ আরে তর বাবা ছোট বেলায় সামিহার সাথে তর বিয়ে ঠিক করে রাখছে।
আজ তর বিয়ে আর আজ তুই বলছিস তুই এই বিয়ে করবি না।
এই কথা তর বাবা জানতে পারলে হার্ট এর্টাক করে মারা যাবে।
তানভীরঃ তুই ও এমন বলছিস?
সিয়াতঃ আরে সামিহা শুধু একটু বেশি দুষ্টামী করে। কিন্তু ও অনেক ভালো মনের মেয়ে।
আখিঃকিরে আজ তর বিয়ে। আর তুই মুখটাকে এমন পেত্নীর মতো করে রাখছস কেন?
জান্নাতঃ আরে দোস্ত ভয় পাস না। তর বর কে আমরা নিয়ে নিব না।
আমিঃ নিয়ে নে। প্লিজ দোস্ত আমার এমন বর লাগবে না। তোদের কারো ওই উল্লুকটাকে পছন্দ হলে তোরাই এই বিয়েটা করে নে।
স্বর্না:পাগল হয়ে গেলি নাকি?
আমিঃ এখনও পাগল হয়নি তবে এই উল্লুকের সাথে বিয়ে হলে ঠিকই পাগল হয়ে যাবো।
কনিকঃঢং করস কেন।এত উল্লুক উল্লুক করছিস তাহলে উল্লুকটাকে বিয়ে করতে রাজি হলি কেন?
আমিঃ আমার প্যারা তোরা কি বুঝবি।ধুর হ আমার চোখের সামনে থেকে।
সকাল থেকে না খেয়ে আছি। তার উপর তদের এত কথা।
আখিঃ না খেয়ে আছিস বলে এত রাগ নাকি বিয়েতে রাজি না বলে?
আমিঃ তোদেরকে এখানে কে আসতে বলছে। তোরা থাকতে আমার শত্রুর প্রয়োজন হবে না।
কে যেন এসে বলল বর এসে গেছে। আমার হারামি ফ্রেন্ড গুলা আমাকে একা রেখে চলে গেল।
অবশেষে উল্লুকের সাথে বিয়েটা হয়েই গেল।আমি বাবাইকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করলাম।
প্রতিটা মেয়েই ওর ফেমিলি কে ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়। নিজের চেনা পৃথিবী ছেড়ে অচেনা এক জনের হাত ধরে অচেনা একটা পৃথিবীতে পারি দেওয়া। আমি তো সেই অচেনা মানুষটাকে ভালো করে জানার সুযোগই পেলাম না। যাকে ভালোবাসি না তার সাথে পুরোটা জীবন কাটাব কি করে?
তানভীরঃ এখন শুরু হবে ১৯৯৯ এর সিনেমার কাহিনী। (মনে মনে…..)
বাবাইঃ আমার মেয়েটা কে দেখে রেখো বাবা।আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব তোমার। আমার মেয়েটার চোখে কোন দিন ও পানি আসতে দিও না।
আম্মুঃ ভাবি আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবেন। ও এখনও ছোট কোন ভুল করলে ক্ষমা করে দিবেন।
আমিঃ ছোট তাহলে বিয়ে দিছ কেন? (মনে মনে…)
রাবেয়া চৌধুরীঃ আপনি কোন চিন্তা করবেন না। তুহি যেমন আমার মেয়ে আজ থেকে সামিহা ও আমার মেয়ে।
তানভীরঃ আমি আর কি বলবো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাংলা ছায়া ছবির কিছু অংশ মেয়ে বিদায় দেখছি।
মেয়ের বাবা মা আত্মীয় চৌদ্দ গোষ্ঠী এমন ভাবে কান্না করছে যেন মেয়েকে শশুড়বাড়ি বাড়ি না জমালয়ে পাঠাচ্ছে।
আরে এত কান্না করার কি আছে।মেয়েকে এতোই ভালোবাসে তাহলে বিয়ে দিল কেন?
আমিঃসবাইকে ছেড়ে আসতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। গাড়িতে উল্লুকটার পাশে বসিয়ে দিল।একেতো বাবাই আম্মু কে রেখে এই প্রথম বার কোথাও যাচ্ছি তার উপর এই উল্লুকের সাথে বিয়ে হলো। আমার কান্না তো আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল।
তানভীরঃ কান্না করে কি আমার কান নষ্ট করে দিবা।এতো কান্না করার কি আছে?
একদম চুপ চাপ বসে থাকো আর একটু ও কাঁদবে না।আর একটু সাউন্ড হলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিব।
আমিঃ আপনি একদম আমার সাথে এভাবে কথা বলবেন না। আমি এ বিয়ে করতে চাইনি। শুধু বাবাইয়ের জন্য বিয়েটা করতে হয়ছে।
তানভীরঃ আমিও তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি। তোমার মত ফাজিল মেয়েকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না।
শুধু আমি কেন পৃথিবীর কোন ছেলেই তোমাকে বিয়ে করতে চাইত না।
আমিঃ একথা গুলো শুনে আমি আর কিছু বললাম না।
শুধু কারো বলা কিছু কথা মনে আসছিল। কিছু কিছু কথা আছে যা কখনও ভুলা যায় না।
তানভীরঃ কি হল। আর কিছু বলল না কেন? আর কান্নার আওয়াজ ও থেমে গেল। কিন্তু চোখের নোনা জল গুলো ঠিকই গড়িয়ে পড়ছে।
আমি কি একটু বেশিই বলে ফেললাম।
বাসায় এসে গেইটের সামনে গাড়ি থামলো। এর আগেও তুহির বার্থডেতে এক বার এ বাসায় আসছি।কিন্তু রুম গুলো দেখা হয়নি।
তুহি ও কিছু মেয়ে আমাকে একটা রুমে নিয়ে আসে।
তুহিঃ ভাবি এ হলো ভাইয়ার রুম। আজ থেকে তোমার ও।
আমাকে রুমে রেখে সবাই চলে গেল।
রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়ছে। বেড়ে গোলাপের পাঁপড়ি রাখা। বেডের সাইডে নানান ধরনের ফ্লাওয়ার ও নেট দিয়ে সাজানো হয়েছে।
ফ্লোরে ছোট ছোট কিছু মোমবাতি রাখা আছে। রুমটা অনেক সুন্দর।
আমি রুমটা গুড়ে গুড়ে দেখছিলাম। এর মধ্যেই তুহি রুমে আসলো।
চলবে………
first love….
Samira Afrin Samia (nipa)
Part: 12
তুহিঃ ভাবি মামনি এই শাড়িটা দিছে ফ্রেস হয়ে পড়ে নেও।সারা দিন অনেক ধকল গেছে তাই না?
আমিঃহুম।।।।
আমি ফ্রেস হয়ে শাড়ি পড়ে নিলাম। একটা কথা বলে রাখি আমি শাড়ি পড়তে পারি।
fbতে অনেক আপুদের গল্পে পড়েছি।
নায়িকা শাড়ি পড়তে পারে না। তাই নায়ক পড়িয়ে দেয়।
আচ্ছা নায়িকা মেয়ে হয়ে শাড়ি পড়তে পারে না। কিন্তু নায়ক ছেলে হয়ে পারে কি করে?
যাই হোক আমি তো আম্মুর কাছ থেকে শাড়ি পড়া শিখে নিছি।
আমি বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর দরজায় আওয়াজ হলো। মনে হয় উল্লুকটা আসছে।
তানভীরঃ এ মেয়ে তো দেখি আমার বেডে অধিকার জমিয়ে শুয়ে আছে। এক দিন ও হলো না এ বাসায় আসছে আর এখনই আমার বেডে অধিকার দেখাচ্ছে। (মনে মনে….)
এই মেয়ে উঠ আমি ঘুমাবো।
আমিঃএই মেয়ে এই মেয়ে কি আমার বাবাই আম্মু আমার একটা নাম দিছে।
আপনি ঘুমাবেন ভালো কথা তা আমাকে ডাকেন কেন। আমি উঠে কি করবো?
তানভীরঃ তুমি আমার বেডে শুয়ে আছো। আমি কোথায় ঘুমাবো?
আমিঃ আপনি কোথায় ঘুমাবেন তা আমাকে জিঙ্গেস করেন কেন? এত বড় বাসা যেখানে ইচ্ছে সেখানে গিয়ে ঘুমান।আমাকে বিরক্ত করবেন না। এখন জানতো এখান থেকে আমার অনেক ঘুম পাইছে। আমি ঘুমাবো।
তানভীরঃ বলে কি মেয়েটা।।। আমাকে আমার রুম থেকে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাতে বলে।
এই মেয়ে আমার মাথা গরম করো না। উঠ বলছি আমি আমার বেডেই ঘুমাবো।
ভালোই ভালোই বলছি উঠে যাও। তা না হলে মাথার উপর থেকে একটা আছাড় মারব।
আমিঃ আছাড় মারবে আমাকে?আমি শুয়া থেকে উঠে বসলাম।
আছাড় তো দূরের কথা শুধু গায়ে হাত লাগিয়ে দেখেন না। নতুন বউ নির্যাতনের মামলায় ফাঁসিয়ে দিব।
আর দাঁড়ান আমি এখনই আঙ্কেল আন্টি কে ডাকছি। আর বলব আপনি আমাকে বেডে শুতে দেন না।আমাকে মারার ভয় দেখাচ্ছেন।
তানভীরঃ কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। আমাকে বাবা মামনি কে ডাকার ভয় দেখায়। আর আমার নামে নাকি নতুন বউ নির্যাতনের মামলা করবে। নির্যাতন কখন করলাম?
এই মেয়ের সাথে পেরে উঠবো না। এ মেয়ের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। বাবা মামনি কে ডাকা শুরু করে দিতে পারে।
একটা পিলো আর ব্লাংকেট নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকালে……..
আমিঃওরে আল্লাহ গো।এই শীতের মাঝে এমন ঠান্ডা পানি এত সকাল সকাল।
আপনি আমাকে মার্ডার করার প্লেন করছেন। আমি আপনাকে মার্ডার কেসে জেলে দিব।
তানভীরঃ কখন থেকে ডাকছি উঠ না কেন। তাই তো পানি দিলাম।মার্ডার করার প্লেন করছি মানে।কখনও কাউকে পানি দিয়ে মার্ডার করতে দেখছ?
আমিঃ এত সকালে এত ঠান্ডা পানি আমার উপরে ফেললেন আমি যাতে শীতে মারা যায়। আর কেউ আপনাকে সন্দেহ না করে।আপনার সব প্লেন আমি ধরে ফেলছি।
তানভীরঃ এই মেয়ে চুপ একদম চুপ থাকো।তা না হলে থাপ্পড় দিয়ে ৩২টা দাঁত ফেলে দিব।
আমিঃ বললেই হলো আপনি আমার ৩২ দাঁত ফেলতে পারবেন না। কারন আমার এখন ও ৩২ দাঁত হয়নি।
তানভীরঃ এখন যদি আর একটা কথা বলো তাহলে দাঁত যে কয়টা আছে ও গুলো ফেলে দিব।
উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নেও।
আমিঃ আমি ফজরের নামাজ বাদ দিয়ে সব নামাজ পড়ি।
তানভীরঃ এখন থেকে ফজরের নামাজ ও পড়বে।
এই বলে ওনি রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে রুমের বাইরে গিয়ে দেখি বাসায় অনেক মানুষ।
রাবেয়া চৌধুরীঃসামিহা তুই ঘুম থেকে উঠে গেছিস। আস ব্রেকফাস্ট করে নে।
একটু পর তো তোদের বাসার সবাই এসে যাবে।
আর পার্লারের মহিলারা ও আসবে।
আমিঃআবার সেই ভারী ভারী গহনা শাড়ি আর ময়দা মাখতে হবে। (মনে মনে…)
আচ্ছা আন্টি
রাবেয়া চৌধুরীঃ আমি তোর শাশুড়ি মা বলে কি আমাকে মা ডাকবি না।আমি কি তোর মা না?
আমিঃ না মামনি এখন থেকে তো তুমি ও আমার মা। আমার তো দুইটা মা।।। একজন আমার আম্মু আর একজন তুমি। আমি তোমাকে মামনি বলব।
মামনিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যা গিয়ে দেখ তুহিটা কোথায় আছে।
আমিঃ শাশুড়ি তো অনেক ভালো। এমন ভালো শাশুড়ির ছেলেটা এমন খারুস বজ্জাত হলো কি করে? (মনে মনে…)
দুপুরে অনেক গেস্টরা আসলো। এক এক জন আমাকে দেখে এক এক রকম কথা বলছে।
একজন মহিলার কথা শুনে আমার তো সেই রাগ উঠে গেল।বাসায় থাকলে মহিলাটার সাথে অনেক ঝগড়া করতাম।
কথাটা এমন ছিল…… ।।।
মহিলাঃ আমাদের তানভীরের বউ তো তানভীরের মতো এতটা সুন্দর না। তানভীর ওর বউ থেকে একটু বেশি সুন্দর।
মহিলাটা এই কথা বলার পর অন্য মহিলারা হাসা শুরু করে দিল।
আমিঃ আমি তো আর ইংরেজের বংশধর না। তাই তো আমি এই ইংরেজের থেকে একটু কম সুন্দর।
ধলা ইঁদুর কোথাকার এত সুন্দর হলো কেন। উল্লুকটা এত সুন্দর না হলে তো মহিলা গুলো কিছু বলতে পারতো না। (মনে মনে..)
অন্য এক মহিলাঃ আমাদের তানভীর অনেক ভালো ছেলে। ও তোমাকে অনেক সুখে রাখবে।
আমিঃ উল্লুকটা ভালো হলো কবে থেকে?
আমার থেকে ভালো এই বাংলাদেশে কেউ আছে নাকি। (মনে মনে…)
আর একজন মহিলাঃ তানভীরকে কোন দিন ও কষ্ট দিও না। ওকে সুখে রেখো।ও যেন সব সময় হাসি খুশি থাকে।
আমিঃ হুম।।। হাসি খুশি তো রাখবোই।খুশির ঠেলায় নিজের নামটা ও ভুলে যাবে। খুশি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি তা দেখাবো উল্লুকটাকে (মনে মনে…)
এভাবে ইংরেজের বংশধরটাকে টর্চার করতে করতে আমার দিন ভালোই কাটতে লাগলো।
কলেজে ও যাই মাঝে মাঝে।
উল্লুকটা বাসায় থাকে না।
বেশির ভাগ সময় অফিসই থাকে। তার পর ও যতখন বাসায় থাকে ততখনই আমার টর্চার সহ্য করতে হয়।
চলবে……