LoVe Effect Part-10

0
474

#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 10

🍁🍁🍁

মাহিরঃ ডাফার গার্ল জীবনের ফাস্ট মনে হয় কাউকে লাভ লেটার দিয়েছো তাই না আর এটা লাভ লেটার নাকি ফাজলামো করার মানুষ পাও না রিডিকিউলাস একটা ( রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে)

কিছুক্ষণের মধ্যেই উৎসবমুখর পরিবেশ শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ রূপান্তরিত হয় ভার্সিটির উপস্থিত সব স্টুডেন্ট সাইলেন্ট মুডে দাঁড়িয়ে আছে মাহির রাগে ফুঁসছে আর সামনে থাকা মেয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমণী মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে মাহিরের দিকে তাকায় সঙ্গে সঙ্গে মাহির’রা শকড হয়ে যায় সাজ্জাদ দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,,,

সাজ্জাদঃ ভাই উনি এই লেটার টা দেয়নি

সাজ্জাদের কথায় মাহিরের মাথায় বজ্রপাতের ন্যায় শব্দ হয় মাহির সাজ্জাদের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় সাজ্জাদ মাথা নিচু করে নেয়। পুনরায় মাহির অনুশোচনার দৃষ্টিতে শ্রাবনীর দিকে তাকায় শ্রাবণী এখনো গালে হাত দিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে পাশেই নীর অগ্নি দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে মাহির অনুশোচনাপূর্ণ কন্ঠে বলে উঠে,,,,,,

মাহিরঃ আম সরি শ্রাবনী আসলে

মাহির কে মাঝপথে শ্রাবণী থামিয়ে দেয় শ্রাবনী অশ্রুসিক্ত দৃষ্টি লুকিয়ে নিচু কন্ঠে নীরকে বলে,,,

শ্রাবনীঃ বেস্টু বাড়ি চল

শুভ চট করে বলে উঠে,,,

শুভঃ শ্রাবনী নীর আমরা সত্যিই সরি আসলে মাহিরকে কে যেনো একটা আজাইরা লেটার দিয়েছে এতে মাহির প্রচন্ড রেগে যায় আর সাজ্জাদ আমাদের নীল ড্রেস পরিহিত একজনকে দেখিয়ে বলেছিলো ও লেটার টা দিয়েছে একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে

শ্রাবনী কে কিছু বলার না দিয়ে নীর রুক্ষ কন্ঠে বলে,,,

নীরঃ আপনাকে ভার্সিটি শুদ্ধ মানুষের সামনে থাপ্পড় দিয়ে বলি মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে সরি তাহলে কি করবেন

নীরের কথায় তিনজনই মাথা নিচু করে নেয় সত্যি বলতে দোষটা তো ওদেরই ওরাই ফেস না দেখে থাপ্পড় দিলো কেনো

মাহিরঃ আমি জানি দোষটা আমাদের কিন্তু রাগের মাথায় তো মানুষ কত কিছুই করে বাট আম রিয়েলি সরি

প্রতিত্তোরে নীর তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দেয়। শ্রাবণী কিছু না বলে নীরকে নিয়ে চলে যায় পেছন থেকে মাহির ডাকলেও শ্রাবণী নীর একবারো পেছন তাকায়নি যদি তাকাতো তাহলে হয়তো অনুশোচনায় পূর্ণ একজোড়া চোখে আটকে যেতো।

শুভঃ এখন কি করবি

মাহিরঃ সাজ্জাদ মেয়েটার ফেস মনে আছে তোমার

সাজ্জাদঃ হুমমম

মাহিরঃ কালকের মধ্যে ওকে আমার সামনে হাজির করবে ওর ভালোবাসার রিভেঞ্জ দেবো

মাহিরের কথায় সাজ্জাদ একটা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে দ্রুত পায়ে কেটে পড়ে।

___________________

আজ চার দিন হলো নীর শ্রাবনী কেউই ভার্সিটি আসে না ওদের দু’জনের এভাবে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার কারণ কারোরই অজানা নয় মাহিরের এবার নিজের উপর প্রচন্ড মাত্রায় রাগ হচ্ছে কেনো সেদিন ফেস না দেখে থাপ্পড় দিতে গেলো। অন্যদিকে বেচারী নীর পড়েছে মহা ঝামেলায় তার কারণ টা হলো মাহিরের সেদিনকার ভুলবশত থাপ্পড় কেননা থাপ্পড় টা মাহির দিয়েছে এটা শ্রাবনীদের বাড়ির কেউই জানে না সবাই জানে থাপ্পড় নীর দিয়েছে যার ফলস্বরূপ নীর শ্রাবনীর বাড়ির ত্রিসীমানায় ভুলেও যাচ্ছে না আর না শ্রাবনীর সাথে দেখা করতে পারছে। অভিরা কেউ ভাবতেও পারেনি নীর শ্রাবনীকে এভাবে মারবে এই নিয়ে শ্রাবনীর বাড়ির সবাই নীরের উপর বেজায় অসন্তুষ্ট। শ্রাবণী না পারছে নীর কে নির্দোষ বলতে আর না পারছে নীরের সাথে দেখা না করে থাকতে। নীরের অবস্থা এখন কিছুটা এমন ” দোষ না করেও দোষী ”

নীর ফোন হাতে নিয়ে নিউজফিডে গিয়ে দেখে ওদের ভার্সিটির এফবি গ্রুপে ওদের পরীক্ষার কিছু ইম্পর্ট্যান্ট নোটস পাবলিশ করা হয়েছে নীর স্কিনশর্ট দিয়ে রেখে শ্রাবনীকে জানাতে ফোন দেয় কিন্তু ওদিক থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে নীর আবার ফোন দেয় কিন্তু এবারো সেইম পরপর কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরও ফোন না রিসিভ করায় নীর খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠে,,,,,

নীরঃ আমাকে ফাঁসিয়ে এখন ফোন ধরছে না এখন না পারবো বাড়িতে গিয়ে নোটস দিয়ে আসতে আর না পারবো এমনি এমনি নোটসগুলো দিতে ধ্যাত না দিলে আমাকে আবার বকবে এখন কি করি

প্রায় কিছুক্ষণ ভেবে নীর নোটস ফোন টা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শ্রাবনীদের বাড়ির উদ্দেশ্য রিকশা থেকে নেমে বুকে থু থু দিয়ে চারপাশ একবার দেখে নেয় না কেউ নেই নীর দোয়া – দরুদ পড়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় সদর দরজা সামনে এসে চারদিকে ভালো করে দেখে নেয় কেউ আছে কি না কাউকে না পেয়ে নীর পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে সোজা শ্রাবনীর রুমে চলে যায় দরজা খট করে খুলে নীর ভেতরে ডুকে দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। নীরকে নিজের রুমে দেখে শ্রাবণী আতঙ্কিত কন্ঠে হালকা চেঁচিয়ে বলে,,,,

শ্রাবনীঃ বেস্টু তুইইইই

নীরঃ চুপ চুপ একদম চুপ কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ফোন কোথায় তোর

শ্রাবনীঃ সরি ফোন টা সাইলেন্ট মুডে ছিলো তাই বুঝতে পারিনি

নীরঃ হুমম রাখ রাখ আরো সাইলেন্ট রাখ আচ্ছা এই নে নোটস গুলো পরীক্ষার

শ্রাবনীঃ তুই এগুলোর জন্য এতো রিস্ক নিয়ে কেনো আসলি জানিস তো সবাই তোর উপর কতটা রেগে আছে

নীরঃ হুমম কিন্তু আমার কি দোষ 😒

শ্রাবনীঃ আমি জানি বেস্টু কিন্তু তুই এখন কয়েকদিন আমার থেকে দূরে থাক ছোড়দা প্রচুর রেগে আছে তোর উপর

নীরঃ হুমম হুমম আমাকে সামনে পেলে মনে হয় মেরেই ফেলবে

শ্রাবনীঃ আরে না আচ্ছা যা এখন কেউ দেখে ফেললে খারাপ হবে যা যা

নীরঃ যাচ্ছি যাচ্ছি তাড়িয়ে দিচ্ছিস কেনো

শ্রাবনীঃ ভুল বুঝে জান্টুস যা বাই

নীর আবার দরজা খুলে চারদিকে চোখ বুলিয়ে কাউকে না পেয়ে বেড়িয়ে যায় আবার পা টিপে টিপে দরজার কাছ পর্যন্ত আসতেই কারো কথায় পা জমে যায় নীর ভয়ে ভয়ে মাথা ঘুরিয়ে সায়নকে দেখে নীরের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। অন্যদিকে নীর কে বাড়িতে দেখে সায়নের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত ঝরছে সায়ন কোনো কথা না বলে নীরের সামনে গিয়ে বিনাশব্দে ঠাসসস করে এক থাপ্পড় দেয় নীর গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকায় সায়ন রাগে চিল্লিয়ে বলে,,,,

সায়নঃ আমাদের বাড়িতে তুমি কি করছো লজ্জা করে না এমন একটা কাজ করে এই বাড়িতে পা রাখার সাহস তোমাকে কে দিলো

নীরঃ ______

সায়নঃ কি হলো চুপ করে আছো কেনো এই বাড়িতে তুমি কি করছো

ততক্ষণে বাড়ির সবাই চলে এসেছে নীরকে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কারোরই কিছু বুঝার বাকি নেই। সায়ন পুনরায় চিল্লিয়ে বলে,,,,,

সায়নঃ যদি লজ্জা থাকে তাহলে আজকের পর থেকে এই বাড়িতে তো দূর থাক বাড়ির চারপাশে ও তোমার ছায়া যেনো না দেখি দ্বিতীয়ত তুমি নেক্সট টাইম আমার চোখের সামনে আর আসবে না তাহলে পুরো খু*ন করে দেবো আর তৃতীয়ত আজকের পর থেকে তুমি শ্রাবনীর সাথে কোনোরকম যোগাযোগ রাখবে না ওকে

সায়নের কথায় নীর অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকিয়ে শুকনো হেসে বলে,,,

নীরঃ আপনার প্ প্রথম কথা টা আমি রাখতে পারবো এই বাড়িতে আর আসবো না দ্বিতীয় কথা টা ও রাখতে পারবো আপনার সামনে আর কখনো আসবো না বাট সরি টু সে তৃতীয় কথাটা আমি রাখতে পারবো না সরি এবার আমি আসছি

নীর সন্তপর্ণে চলে যায় সায়ন রাগে গজগজ করতে করতে পেছনে ফিরে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

সায়নঃ ওর ছায়া ও যেনো আমি না দেখি

অভিঃ সায়ন শান্ত হ সেদিনের কাহিনী টা নিয়ে আমরা ও নীরের উপর যথেষ্ট অসন্তুষ্ট কিন্তু তাই বলে থাপ্পড় দিবি

সায়নঃ বেশ করেছি ইচ্ছে করছিলো ওকে মেরে ফেলতে

শ্রাবনীঃ ছোড়দা

শ্রাবনীর কন্ঠস্বর শুনে সবাই শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণী কাঁদছে শ্রাবনীকে কাঁদতে দেখে অভি আয়াত আর সায়ন তাড়াতাড়ি শ্রাবনীর কাছে যায়।

সায়নঃ বনু কাঁদছিস কেনো কি হয়েছে

শ্রাবনীঃ ______

অভিঃ কি হলো বুড়ি কথা বলছিস না কেনো

শ্রাবনীঃ বড়দা বেস্টুর কোনো দোষ নেই বেস্টু আমাকে মারেনি ( কাঁদতে কাঁদতে)

আয়াতঃ মানে

শ্রাবনীঃ বেস্টু সম্পূর্ণ নির্দোষ

সায়নঃ কিসব বলছিস তুই তো সেদিন বললি নীর তোকে মেরেছে

সায়নের উত্তর না দিয়েই শ্রাবনী কাঁদতে কাঁদতে উপরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় সায়ন রা পেছন পেছন যায় অনেকবার ডাকে কিন্তু শ্রাবনীর উত্তর না পেয়ে সবাই নিরুপায় হয়ে ফিরে আসে।

নীর বাড়িতে গিয়ে ডিরেক্টলি রুমে ঢুকে ডুকরে কেঁদে উঠে। গাল ফুলে পুরো লাল হয়ে গেছে পাঁচ আঙ্গুলের চাপ বসে গেছে সায়নের কথাগুলো মনে পড়তেই নীর আবার কেঁদে দেয়।

নিষক কৃষ্ণ রজনী শব্দহীন ধরনী বর্তমানে আঁধারে নিমজ্জিত চারিপাশে বিরাজমান নীরবতার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ অজানা থেকে বেওয়ারিশ কুকুরের ডাক ভেসে আসছে আকাশ কালো মেঘহীন। ঘড়ির কাঁটায় রাত দশ টা বেজে পঁচিশ মিনিট শ্রাবনী এখনো রুমের দরজা খুলেনি এদিকে সায়নদের অবস্থা নাজেহাল। অপেক্ষাকৃত আর না থেকে উঠে শ্রাবনীর রুমের কাছে গিয়ে দরজায় টুকা দেয়,,,,

সায়নঃ বনু দরজা খোল আর কতক্ষণ এভাবে রুমে থাকবি আমাদের খিদে পেয়েছে তো

ভেতর থেকে নীরবতা

সায়নঃ বনু আচ্ছা যা আমি সরি এবার খোল আমি নীরকে ও সরি বলবো

ভেতর থাকতে খট করে দরজা খুলে শ্রাবণী আবার রুমে ডুকে যায় দরজা খুলতে দেখে সায়ন হুড়মুড়িয়ে রুমে ডুকে পড়ে সায়নকে দেখে শ্রাবণী মুখ ফিরিয়ে নেয়

সায়নঃ কথা বলছিস না কেনো

শ্রাবনী কিছু না বলে নিচে চলে যায় পেছন পেছন সায়ন ও যায় শ্রাবণী কে আসতে দেখে অভিদের প্রাণ ফিরে পায় শ্রাবনীর সবার সামনে গিয়ে গাম্ভীর্যতা নিয়ে বলে,,,,

শ্রাবনীঃ আমার কিছু বলার আছে

সায়নঃ হুমম বল

শ্রাবনীঃ প্রথমত তুই বেস্টুকে থাপ্পড় দিয়ে কাজ টা ঠিক করিসনি বেচারী কোনো দোষ না করেও সবার চোখে অপরাধী হলো

আয়াতঃ মানে

সায়নঃ এখন ওকে বাঁচাতে চাইছিস

শ্রাবনীঃ আশ্চর্য ওকে বাঁচানোর কি আছে ও নির্দোষ সেদিন আমাকে বেস্টু মারেনি অন্য একজন মেরেছিলো বিলিভ না করলে ভার্সিটি গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারিস ওর কোনো দোষই নেই ও তো অন্যের দোষ নিজের উপর নিলো আর তোরা ভাবলি কি করে বেস্টু আমাকে মারবে এতোবছরে বেস্টু কখনো আমার গায়ে হাত তুলেনি। তোরা বেস্টুকে এই চিনিস আমারই ভুল হয়েছে কেনো বললাম নীর আমাকে মেরেছে এই মিথ্যে না বললে আজ অকারণে ওকে এভাবে অপমানিত হতে হতো না।

সায়নঃ মিথ্যা বলছিস

শ্রাবনীঃ নাহ আমি সত্যি বলছি তুই তো বেস্টু কে খুব ভালো করে জানিস চিনিস তাহলে ও এমন একটা কাজ করবে এটা ভাবলি কিভাবে

অভিঃ তোর সবসময় মাথা গরম তখন মেয়েটা কে না বুঝে এভাবে মারলি এখন আমরা মেয়েটার কাছে কতটা ছোট হলাম

সায়নঃ তাহলে তোকে কে মেরেছে

শ্রাবনীঃ এটা জিজ্ঞেস করিস না আমি বলতে পারবো না কিন্তু এটা মাথায় রাখিস নীর আর কোনোদিন ও এই বাড়ি তোর সামনে আসবে না এবার তুই খুশি তো সবসময় ওর পেছনে লেগে থাকতি এখন আর ও তোর চোখের সামনে আসবে না

সায়নঃ আমি কি জানতাম নাকি

শ্রাবনী কিছু না বলে আবার উপরে চলে যায় সায়নরা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সায়নের মনে মনে এখন অনুশোচনা হচ্ছে বার বার নীরের অশ্রুসিক্ত নেত্রদ্বয় মনের গহীনে ভেসে উঠছে।

( আর লিখবার পারুম না)

চলবে,,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ)