Marriage With Benefits 2 Part-02

0
2976

#Marriage_With_Benefits_2
#Part_2
Writer::Sanjida Nahar Shaanj
.
.
বাংলাদেশ
আবু আমরা তো এসে পরলাম। এখন কোথায় যাবো?নানুর বাসায় তো যেতে পারবো না ওই খানে গেলে নির্ঘাত দুই বোনের কপালে শনি আছে।(ছায়া নখ কামড়াতে কামড়াতে)

কে বলেছে আমরা দাদু বাড়ি যাবো?ঐখানে ওইসব বুড়োদের থাকতে দাও।আমি তো ভাবছি আমি এখন ঘুরবো পুরো বাংলাদেশ(বলেই হিহি করে হেসে উঠলাম)

কিন্তু তুমি না বলেছো মামুকে দেখতে যাবে?(ছায়া অবাক হয়ে)

হ্যা।যাবো।কিন্তু এখন না পরে।এখন হোটেলে যাবো।রেস্ট নিব।তারপর দেখি কি করা যায়।সো লেটস গো।
বলেই একটা ছায়াকে নিয়ে গাড়ি করে হোটেলের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।


গাড়িতে
খুব চেনা পরিচিত লাগছে শহরটাকে।কিন্তু মা বাবা বলেছে আমি কখনো বাংলাদেশে যাই নি।তাহলে কেনো এইসব আমার এতো পরিচিত লাগছে?এই রাস্তা আমার এতো পরিচিত কেনো?(আমি গাড়ির জানালা দিয়ে অবাক)

কি হয়েছে আবু?কি এমন গভীরভাবে দেখছ?(ছায়া আমার কাধে হাত রেখে)

ছায়া।আমি কি কোনো দিন বাংলাদেশে এসেছিলাম?(আমি কৌতূহলী হয়ে)

না।আমার জানামতে তো না।কিন্তু এই প্রশ্ন করছো কেনো?(ছায়া অবাক হয়ে)

আমার কেনো জানি সব চেনা পরিচিত লাগছে?(আমি আশেপাশের জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে)

এমন মাঝে মাঝে হয়।তুমি চিন্তা করো না।(ছায়া মুচকি হাসি দিয়ে)

মাঝে মধ্যে হয় ঠিক বুঝলাম কিন্তুএইতোটা সত্যিই হয় কি করে?এতো পরিচিত কেমন করে সম্ভব?(আমি মনে মনে)

কাকা এই দিকে দিয়ে না সামনে একটা রাস্তা আছে ওই রাস্তা দিয়ে যান।এই দিকে অনেক জ্যাম পড়বে।ঐদিকে কোনো সিগনাল নেই তাই বেশিক্ষণ লাগবে না।(আমি বলেই অবাক হয়ে গেলাম)

ম্যাম।আপনি তো নতুন কিন্তু কি করে জানেন যে এইদিকে গেলে লেট হবে?(ড্রাইভার অবাক হয়ে)

আমি,,আমি জানি না।আমি কি করে জানবো ওইদিক দিয়ে গেলে সহজ হবে?আহ্।আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।(আমি মাথা চেপে ধরে)

আবু।মাথায় চাপ পড়বে।মাথায় প্রেসার দিও না।(ছায়া আমাকে ধরে)

হুম।
আমি স্থির চোখে তাকিয়ে আছি।কি হয়ে গেল একটু আগে।ভাবতে গেলে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।
অবশেষে আমরা ঠিক মত হোটেলে পৌঁছলাম।হোটেলে গিয়ে আমি না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।সারা রাস্তায় অনেক ক্লান্ত ছিলাম আর আসার সময় প্রচন্ড মাথায় প্রেসার পড়লো।তাই ফ্রেশ হয়েই একটা ঘুম।


অন্যদিকে ছায়া
আবু।ঘুমাচ্ছে আমি কি করবো?আমি তো ফ্লাইটে নাক ডেকে ঘুমিয়ে এসেছি।এখন ঘুম তো একটুও ধরবে না।তার চেয়ে বরং আমি চারপাশটা একটু ঘুরে দেখি। আবু ঘুমাক।
বলেই ছায়া বেরিয়ে পড়লো ঘুরতে।
কিন্তু এখন কথা হচ্ছে আমি যাবো কোথায়?আমি তো এখানের কিছুই চিনি না।জীবনে আসাও পরে নাই।এখন কি করা যায়?দূর ঘুরতে গেলে চিনতে হয় নাকি?
বলেই একটা হল রুমের দিকে চললো ছায়া।তখনই কেউ একজন ওকে আটকে ধরে বললো
এই তোমাকে কাজের জন্য আনা হয়েছে আর তুমি ঘুরছ?আজকে তোমাকে কোনো পেমেন্ট দেয়া হবে না।(ইভেন্ট ম্যানেজার)

হ্যা?পেমেন্ট?কিসের পেমেন্ট?আর কি কাজের পেমেন্ট?(ছায়া অবাক হয়ে)

দেখো।আজ আয়ুশ চৌধূরী তার পার্টির বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আয়োজনএর দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়েছে।(ম্যানেজার ছায়াকে ধরে)

তাতে আমার কি?আর কে এই আয়ুশ চৌধূরী?আর আপনি আমাকে যেতে দিন(ছায়া ছুটার চেষ্টা করে)

দেখো।নেকামি করো না।আয়ুশ চৌধূরী আসার পর উনাকে সার্ভ করতে যদি তোমার কোনো ভুল হলে তোমার খবর আছে।আর উনি কিন্তু ভীষণ রাগী মানুষ।কথাটা যেনো মনে থাকে।আমি কিন্তু তোমার প্রতি নজর রাখছি।
বলেই ম্যানেজার চলে গেলো।

ছায়া সেখানে বলদের মতো দাড়িয়ে রইলো
কি হলো?আমি কেনো আয়ুশ চৌধুরীকে সার্ভ করতে যাবো?আমি কি ওয়েট্রেস নাকি?আরে আয়ুশটা কোন ক্ষেতের মুলা রে?ওই হাদারাম কে ম্যানেজার রাখছে রে?বের করে দে ওকে।এক সেকেন্ড কেন আমাকে উনি ওয়েট্রেস ভাবছে?
বলেই ছায়া চারপাশে তাকিয়ে দেখে বাকি ওয়েট্রেস সবুজ রঙের কামিজ আর লাল রঙের সালোয়ার আর সাথে সাদা ওড়না পড়ছে।মনে হয় আজকের থিম এইটা।আর আমিও তো এইটাই পড়েছি।বাংলাদেশে আসার উৎসাহে দেশের পতাকার রঙের কাপড় পড়েছিলাম।কে জানত এইটা আমাকে ফাঁসিয়ে দিবে!আমিও সবুজ কামিজ,,লাল রঙের সালোয়ার আর সাদা ওড়না পড়েছি।দূর!এদেরও কি এই থিম ছাড়া অন্য কিছু মাথায় ধরলো না।এখন আমাকে ওয়েট্রেস হয়ে থাকতে হচ্ছে।ওই হাদারাম ম্যানেজারও আমার কোনো কথাই শুনলো না।দাড়া ছায়াকে ওয়েট্রেস বানানো তোকে দেখাচ্ছি মজা।আজ তোর ওই আয়ুশ চৌধুরীকে এমন সার্ভিস দিবো যে উনি আজীবন ছায়াকে নিজের ছায়ার মতো মনে রাখবে।
বলেই ছায়া ওড়না কাচা দিলো।
কিছুক্ষণ পর আয়ুশ আসলো।সাদা পাঞ্জাবি,,সাদা পায়জামা। বডি বিল্ডার টাইপের ছেলে।চোখে চশমা।চুল গুলো কি সুন্দর করে রেখেছে!! হায় এর বারোটা কি করে বাজাবো?একে দেখলেই আমার মনে ঘণ্টা বাজছে।
ছায়া আয়ুশএর রূপে হাবুডুবু খাচ্ছে এমন সময় ম্যানেজার তাড়া দিয়ে বললো ড্রিংস সার্ভ করতে।

এই ম্যানাজারের বউ নেই।আমার পিছনে পরে আছে।দাড়া দেখাচ্ছি তোর সার্ভিস।
বলেই ছায়া একটা ট্রেতে করে এক গ্লাস সরবত আয়ুশ এর কাছে নিয়ে গেলো।কিন্তু বেচারীর ভাগ্য এতই খারাপ যে পা পিছলে পুরো সরবতের গ্লাসের সব সরবত আয়ুশ এর মুখে গিয়ে পরে আর গ্লাসটা গিয়ে বারি খায় ম্যানেজারের কপালে।

হায়।আল্লাহ।আমি তো এতটাও বারোটা বাজাতে চাইনি।এখানে দেখি বারোটা বাজাতে গিয়ে নিজের তেরোটা বাজিয়ে ফেললাম(ছায়া নখ কামড়াতে কামড়াতে)

Are you mad?(আয়ুশ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে)

নো। I Am chaya।(ছায়া জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

কি?(আয়ুশ রাগী চোখে)

না।আপনিই তো বললেন আমি mad নাকি?তাই বললাম আমি mad না আমি ছায়া।কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি অনেক mad।(ছায়া ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে)

আয়ুশ খুব রাগী চোখে ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।শুধু আশেপাশে মিডিয়ার লোক দেখে চুপ করে আছে।

তোমাকে কি বিরোধী দল পাঠিয়েছে।যাতে তুমি আমার পার্টি খারাপ করো?(আয়ুশ দাত চেপে চেপে)

হ্যা?(ছায়া অবাক হয়ে)

হ্যা।(আয়ুশ রক্ত চক্ষু দিয়ে)

এই না না।আমি কোনো দলেই না।আর এখানে থাকলে মনে হয় কোনো কিছুরই থাকবো না।
বলেই ছায়া দিলো এক দৌড়।

এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছিস?(ম্যানেজার কপাল ধরে)

হাদারাম।ম্যানেজার তুই বাসায় বসে বসে গাধা পাল।যা।
বলেই ছায়া অধাও।

স্যার।এখন কি করবেন?(আয়ুশ এর একজন সাথী)

যে করেই হোক।এখানের কথা যেনো বাহিরে না যায়।আমাকে এতো গুলো লোকের সামনে অপমান করা।এই মেয়ের খোঁজ নাও।কোন বিরোধী দল ওকে আমার পার্টি খারাপ করার জন্য এনেছে খবর নাও। আই ওয়ান্ট হার।(আয়ুশ নিজের মুখ মুছতে মুছতে)


ছায়া ধুপ ধাপ করে রুমে ঢুকলো রুমে।
কিরে ছায়া?কোথায় গিয়েছিলি?আমি ঘুম থেকে উঠে তোকে পেলাম না।তুই চিনিস না জানিস না কোথায় একা ঘুরিস?কিছু হয়ে গেলে আমি তোর ভাইকে কি জবাব দিবো।(আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে)

আবুকে কিছু না বলাই ভালো।বললে ও আমাকে আর একে কোথাও যেতে দিবে না।সবাই মনে করে আমি বাচ্চা।আমি বড়ো হয়ে গেছি তা তো এদের চোখেই পরে না।(ছায়া মনে মনে)

কি হয়েছে?কি এতো মনোযোগ দিয়ে ভাবছিস?আবার কোনো গন্ডগোল করিসনি তো?(আমি সন্দেহর দৃষ্টিতে)

আরে ভুলেও না।আমি কি কিছু করতে পারি?তোমার মনে হয়?আচ্ছা।সন্ধ্যা তো হয়ে এলো কিছু খাবে না।আমার কিন্তু ক্ষুদা লাগছে।(ছায়া জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

সত্যি বলছিস তো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

হ্যা।বাবা সত্যি বলছি।আচ্ছা তুমি রেস্টুরেন্টে যাও।আমি ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি।(ছায়া)

কেনো?এই ড্রেসে থাকলে কি সমস্যা কি?(আমি সন্দেহর দৃষ্টিতে)

আমার ড্রেস চেঞ্জ করতে মন চাইছে।আমি উকিলী করছি কিন্তু তুমি উকিলের মতো জেরা করছো কেনো?যাও তো যাও।গিয়ে কিছু খেয়ে নাও আমি আসছি।
বলেই ছায়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বের করে দিলো।


আমি হোটেলের বাগানে হাঁটছি তখন খেয়াল করলাম।একটা বাচ্চা মেয়ে জানালা দিয়ে তারে ফেঁসে যাওয়া একটা পাখিকে সাহায্য করার জন্য অনেক চেষ্টা করছে।কিন্তু একটু হলেই মেয়েটা একদম তিনতলা থেকে পরে যাবে।আমি ভাবতে ভাবতেই দেখলাম মেয়েটা পরে গেলো ওমনি আমি গিয়ে ওকে ধরে ফেললাম।ও এসে আমার কোলে পড়লো।

থ্যাঙ্ক ইউ আণ্টি।তুমি না ধরলে আমি নিচে পড়ে যেতাম।আর আমার আলু ভর্তা হয়ে যেতো(মেয়েটা)

তুমি যখন জানো তুমি পরে আলু ভর্তা হয়ে যেতে পারো!তাহলে কেনো গেলে?(আমি ওকে কোলে নিয়ে)

এই ছোটো পাখিটার হেল্প করতে।(মেয়েটা পাখিটার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে)

আর পাখিটার হেল্প করতে গিয়ে যদি নিজে পরে যেতে তাহলে কি হতো?(আমি ওকে কোল থেকে নামিয়ে)

আমি জানতাম তো তুমি আসবে।তাই আমার কোনো চিন্তাই ছিলো না।(বলেই মেয়েটা খিলখিল করে হাসি দিলো)

খুব পাকা পাকা কথা জানো মনে হচ্ছে।(আমি মেয়েটা গাল টেনে)

হিহি।
করে হেসেই মেয়েটা পাখিটাকে জানালা দিয়ে বাহিরে উড়িয়ে দিল।

কেনো জানি মেয়েটার হাসিটা মনের মধ্যে এক প্রশান্তি নিয়ে আসলো।ওর হাসি কেনো জানি আমার মুখের হাসির কারণ হয়ে গেছে।ওর হাসির শব্দ শুনলে মনে হয় সারাক্ষণ শুনতে থাকি।আর চেহারা কতো মিষ্টি দেখতে।আশ্চর্য ব্যাপার হলো ওর চেহারা একদম আমার মত দেখতে।যেন আমারই ছোট বেলা হলো এই বাচ্চা মেয়েটা।কোনো ভাবে কি ও আমার,,,,না না আমি কি ভাবছি ও আমার তো কিছু লাগে না।
আমি এইসব ভাবতেই মেয়েটা আমার জামা ধরে টান দিলো।আমি ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলাম
ওমনি ও আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল
তুমি খুব ভালো আন্টি।তোমার জায়গাতে অন্য কেউ থাকলে আমাকে খুব বকা দিতো কিন্তু তুমি দেওনি।

সত্যিই আমি চেয়েছিলাম ওকে বকা দিবো কিন্তু ওর চেহারা দেখে আমি বকার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।(আমি মনে মনে)

তাই বলে সব সময় এমন করলে কিন্তু বকা খাবে।আর কখনো এমন করবে না ওকে?প্রমিজ?(আমি হাত বাড়িয়ে)

ওকে আণ্টি।প্রমিজ।(মেয়েটা আমার হাতে হাত রেখে)

আচ্ছা।তুমি এখানে কার সাথে এসেছো?(আমি)

আমার চাচুর একটা অনুষ্ঠানে এসেছি।চাচু ভিতরে।আর আমি আমার নেনির সাথে।(মেয়েটা)

ও আচ্ছা।আমি আরোও কিছু বলতে যাবো তখনই একজন মহিলা দৌড়ে আসলো।
আরাভি।তোমাকে কতো জায়গাতে খুঁজেছি মা।কোথায় ছিলি তুমি?(নেনি)

ও হো।তুমি একটু তে কেনো হাইপার হয়ে যাও বলতো তো।আমি এখানেই আছি।তোমার চিন্তা করতে হবে না।(আরাভি)

আরাভি?খুব সুন্দর নাম(আমি মনে মনে)

ওকে।এখন চলো তোমার পাকা কথা রেখে।(নেনি)

ওকে।চলো।খোদা হাফেজ আন্টি।
বলেই আরাভি আমাকে টাটা দিয়ে চলে গেলো।
আমি হাসি মুখে ওকে বিদায় দিলাম।কিন্তু বুকে কেমন জানি চিন করে উঠলো।এইটুকু পরিচয়ে কি কেউ এতো আপন হয়?


হোটেলের রেস্টুরেন্টে খাবার নিতে গেলাম তখন পাশে থেকে আওয়াজ শুনতে পেলাম।তাকিয়ে দেখি একটা পাঁচ ছয় বছরের ছেলে।

তোমার সাহস তো কম না।তুমি আমার জুতোয় সস ফেলেছো?(ছেলেটা রেগে)

কিন্তু বাবু।তুমিই তো প্রথম আমাকে ধাক্কা টা দিলে?(ওয়েটার ভয়ে ভয়ে)

আবার মুখে মুখে কথা বলছো?তুমি জানো আমি কে?তোমার আরাভ চৌধুরীর মুখের উপর কথা বলার সাহস কি করে হয়?(ছেলেটা খুব বাজে ভাবে অপমান করে)

সরি।সরি।(ওয়েটার মাথার নিচু করে)

ভালোয় ভালোয় আমার জুতো পরিস্কার করো।নাহলে তোমার এই রেস্টুরেন্ট এক্ষুনি বন্ধ করে দিবো।আর সাথে হোটেলও।(ছেলেটা রাগী গলায়)

কেনো জানি ছেলেটার সব এই স্বভাব আমার কাছে খুব পরিচিত লাগছে।কোথায় যেনো?কাকে যেনো এইরকম করতে দেখেছি? কার স্বভাব যেনো এমন ছিলো!কিন্তু মনে করতে পারছি না।আহ্।মাথাটা আবার ব্যাথা শুরু করছে।এই মাথা ব্যাথা নিয়ে আর পারছি না আমি।

ওয়েটার আর কিছু না বলে জুতো পরিস্কার করতে যাবে তখনই আমি ধরে ফেললাম।
আপনি এই বেয়াদব ছেলের জুতো পরিস্কার করবেন না।(আমি ওয়েইটার এর হাত ধরে)

এই আন্টি তোমার তো সাহস কম না।তুমি আমার কাজে নাক গলাচ্ছ?(ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে)

উনি ইচ্ছে করে ফেলায় নি।আর যদিও এটা পড়ে থাকে টিসু পেপার পেপার দিয়ে এইটা পরিস্কার করলে উঠে যাবে।আর যেহেতু ওয়েটার আঙ্কেল তোমার বড়ো সেহেতু উনার তোমার পায়ে হাত দেয়া শোভা পায় না।আর যদি উনি ভুল করে থাকে উনি তার জন্য সরি বলছে কিন্তু তুমি উনাকে এতো অপমান করছো সরি বলছো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

ছেলেটা আমার সামনে দাড়িয়ে
এখন তুমি আমাকে শিখাবে কি করবো আমি? আরাভ চৌধুরীকে তুমি চেনো না আন্টি।

আমার হাঁটুর সমান তো তোমার হাইট।কিন্তু কথার ধরন দেখো আকাশ ছুয়া।তোমাকে শিখানো আমার বা হাতের খেল এখন ভালোয় ভালোয় সরি বল।(আমি কড়া করে)

ততক্ষনে ছায়া রেস্টুরেন্টে এসে পড়েছে।
আবু।একটা বাচ্চার সাথে লেগেছ? ছাড় না ও একটা বাচ্চাই তো।(ছায়া)

আকার দিতে হলে কাদা মাটিতেই দিতে হয়।শুকনো মাটিতে আকার দিলে তা ভেঙ্গে যায়।আর ও এই বয়সে আদব কায়দা শিখবে না তো কি বুড়ো হয়ে শিখবে?এখন তুমি সরি বলবে কি না?যতক্ষণ না পর্যন্ত সরি বলছো তোমাকে এখান থেকে যেতে দিবো না।(আমি)

কিন্তু ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখলাম। ও রাগী চোখে না আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে!ওর এই অবাক চোখের ভাষা যেনো কিছু বলছে?আমি তো ওকে বকা দিয়েছি।এই ছেলের স্বভাব অনুযায়ী ওর রাগ করার কথা কিন্তু ও রাগ করছে না।বরং অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ওর চোখে বলছে আমারই অপেক্ষায় ছিলো ও।কিন্তু কেনো?

পরেই ও আমাকে অবাক করে বললো
সরি।
বলেই আরাভ বেরিয়ে গেলো।
আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

বাচ্চা ছেলেটার প্রতি এতো কঠিন না হলেও পারতে আবু।(ছায়া আমার কাধে হাত রেখে)

আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
একটা বাচ্চাকে সঠিক শিক্ষা দেয় তার মা।না জানি এই বাচ্চাটার মা একে কি শিক্ষা দিচ্ছে?তবে বাচ্চাটা দেখতে অনেক কিউট।চেহারায় অনেক মায়া আছে।শুধু নাকের ডগার একটু বেশিই রাগ।হয়তো আদরের দুলাল এই জন্য।দোয়া করি ওর সাথে আরো একবার দেখা হয় তখন ওকে আদর করে দিবো।আজ বকা দিয়েছি বলে।

আবু।মনে হচ্ছে তুমিই ওর মা।এখন বকা দিলে আবার দেখা হলে আদর করে দিবে।এইটাই তো মায়েদের ধর্ম। তাই না?শাসনের পড়ে আদর।
বলেই ছায়া চেয়ারে বসলো।
আমি ছায়ার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।আজ দুটো বাচ্চার সাথে আমার দেখা হয়েছে আর দুটো বাচ্চাকেই আমার খুব কাছের মনে হচ্ছে।কিন্তু কেনো?


চলবে,,,,