Marriage With Benefits 2 Part-04

0
2704

#Marriage_With_Benefits_2
#Part_4
Writer:: Sanjida Nahar Shaanj
.
.
আমি অনেক কষ্টে ওয়েট্রেস হবার প্ল্যান সফল করেছি।তবে এই প্ল্যানে খুব রিস্ক আছে।একটু ভুল হলেই নির্ঘাত জেলে ঢুকে যাবো।খুব ভয় হচ্ছে।তবুও কেনো যেনো মন বলছে করতে।যে করেই হোক আজ ঢুকবোই চৌধূরী বাড়িতে।যা করছে উপরওয়ালা।
ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলাম।
অবশেষে এইসব ভাবতে ভাবতে চৌধূরী বাড়িতে পৌঁছলাম।আমি আর ছায়া ওয়েট্রেস ড্রেস পরে গাড়িতে বসে আছি।গাড়িটা চৌধূরী বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমরা এখনও নামি নি।কারণ আমরা যখন আসল ওয়েট্রেস আসবে তখন যাবো একদম তাদের সাথে মিশে।তাই তাদের ড্রেস কোড অনুযায়ী সাদা শাড়ি পড়েছি।সাথে ছায়াকেও পড়িয়েছি।কিন্তু ও ওয়েট্রেস ড্রেস পড়ার সাথেই কেমন যেনো মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।
কি হলো?এইভাবে তাকিয়ে দেখছো কেনো?(ছায়া মুখ ফুলিয়ে)

কি হলো?এইভাবে মুখ ফুলিয়ে আসিস কেনো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

ওয়েট্রেস হতেই হবে?আবু অন্য কোনো উপায় নেই?(ছায়া কাদো কাদো হয়ে)

না।নেই যখন থেকে তোকে ওয়েট্রেস হওয়ার কথা হয়েছে।তখন থেকে দেখছি তুই মুখ ফুলিয়ে আছিস!কেসটা কি? ছাগল।(আমি রেগে গিয়ে)

কিছু না।আমার দুঃখ তুমি বুঝবে না!(ছায়া মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে আছে)

আমিও ওর সাথে তর্ক না করে গাড়িতে বসে চৌধূরী বাড়ির দিকে তাকালাম। এতো ক্ষন ওইটা খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করলাম।সব কিছুর মতই এই বাড়ির সব কিছুই আমার চেনা লাগছে।কিন্তু কেনো চেনা চেনা লাগছে তাই বুঝা দায় হয়ে উঠছে আমার!কিছু আফসা জিনিস গুলো আমার মনে পড়ছে একটা মেয়ে যে বিয়ে করে এই বাড়িয়ে কারো হাত দূরে এই বাড়িতে গেলো।বউ সাজে কে ছিলো তা আমি জানি না?কিন্তু সব ধোঁয়াশা জিনিস গুলো কেমন যেনো আপন লাগলো।
ও আমার আবু!কি দেখছো বসে বসে?ওয়েট্রেসরা এসে পড়েছে।এখন কি বসে বসে বাড়ি দেখবে?নাকি ভিতরে যাবে?(ছায়া নেকামি করে)

আমার কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে গাড়ি থেকে নামলাম।পরেই আমি আর ছায়া ওয়েট্রেসদের সাথে মিলিয়ে গেলাম।ঢুকার সময় একজন লোক(আরিফ) আমাদের খেয়াল রাখছিলো।কিন্তু খুব সহজেই তার চোখে ফাঁকি দিয়ে দিলাম।তারপর সদর দরজাতে একটা মহিলা ছিলো(মিস সাবিনা)।ভেবেছিলাম ওই মহিলাকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকা অনেক কষ্ট হবে।কিন্তু না ওই মহিলাকেও চমক দিয়ে চলে আসলাম।

নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব করছি।কি করে সব কয়টাকে ফাঁকি দিলাম।(আমি মনে মনে ভাব নিতে শুরু করলাম)

বাড়িতে খুব স্বাভাবিকভাবেই ঢুকে গেলাম।কিন্তু এখন কি হবে?কি হবে! কিছু তো চিনি না?(ছায়া ফিসফিস করে)

আরে কি করবো? তা পরেই দেখতে পারবো।আগে সব কিছু ভালো করে দেখি নেই।(আমি চারপাশে তাকিয়ে আছে)

তখনই কেউ একজন বললো।বাড়ির সবাই নাকি তৈরি হতে গেছে একটু পরেই নাকি পার্টি শুরু হবে।

আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখি সব গুলো জায়গাই আমার খুব চেনা?কিন্তু কি করে সম্ভব?(আমি অবাক হয়ে)

কি হলো আবু?কিছু কর এখন কি করবি?(ছায়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে)

এখন কাপড় চেঞ্জ করবো! চল তুই আমার সাথে।
বলেই আমি ছায়াকে নিয়ে একটা স্টোর রুমে ঢুকলাম। তাও আবার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে।অথচ এই বাড়ির কিছুই আমি চিনি না।এই বাড়িতে এই প্রথম আমার আসা।তবুও কেনো যেনো এই বাড়ির সব কিছু আমার পরিচিত লাগছে।কি করে?

আবু?তুমি কি করে জানলে এইখানে স্টোর রুম?(ছায়া অবাক হয়ে)

জানি না।আর তা এখন জানার সময়ও নেই।তাই তোকে যা বলছি তাই কর।এখানে ওয়েট্রেস এর ড্রেস চেঞ্জ করে সাধারণ পার্টি ড্রেস পরে নে।পড়ে না হয় দেখা যাবে কি হচ্ছে?(আমি কোনো রকম নিজেকে সামলে)

পরেই আমি আর ছায়া কাপড় চেঞ্জ করে সাধারণ ড্রেস পরে হিজাব আর মুখ বেধে একদম পার্টির মানুষদের সাথে মিশে গেছি।

ছায়া।বাবাকে খোজ দেখ বাবা কোথায়?তারপর বাবার সাথে দেখা করে চলে যাবো।(আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে)

আচ্ছা।আমি খুঁজে বের করছি।(ছায়াও এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো)

পরেই আমি আর ছায়া আলাদা হয়ে বাবাকে খুঁজতে লাগলাম।মোটামুটি সবাই চলে এসেছে।কিন্তু আমারই বাবার খবর নেই।কোথায় বাবা কোথায়?তখনই দেখলাম বাবাকে।
বাবা?বাবাকে দেখে তো ঠিকই মনে হচ্ছে?কিন্তু উনি উপরে যাচ্ছে কেনো?উনি কি সত্যি বাবাই?(আমি মনে মনে)

পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম।হা উনি বাবাই।তাই গেলাম বাবার পিছু পিছু আমিও উপরে।দেখলাম বাবার সাথে আর কেউই নেই।তাই ভাবলাম সেই ফাঁকে বাবার সাথে কথা বলে নেই।
বাবা বাবা?(আমি)

আবনী?তুই এখানে কি করছিস?(জিসান অবাক হয়ে)

আমার কথা বাদ দাও।আগে একটা নিরাপদ জায়গা খোঁজো।যেখানে মা আমাকে দেখতে পারবে না।(আমি বাবার ফিসফিস করে)

তোর মা আসে নেই।শুধু আমিই এসেছি।(জিসান)

ও কিন্তু মা আসে নাই কেনো?(আমি অবাক হয়ে)

তোকে কি করে বলবো?তোর মা তোকে আর আভিকে আলাদা করার জন্য যেই নোংরা চাল চেলেছে।আর তারপরেই এই বাড়িতে এসে আভির মুখোমুখি দাড়াতে ওর সাহস হবে না।তাহলে কি করে আসবে ও আভির বাড়িতে?(জিসান মনে মনে)

কি হলো বলো?(আমি বাবার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

কিছু না।তুই জানস না তোর মা কেমন?উনার মন চায়নি তাই উনি আসে!কিন্তু তুই কেনো আসলি?(জিসান)

আমি কেনো আসছি তা তোমাকে পরে বলবো।এখন এখান থেকে নিরাপদ জায়গা তে চলো।(আমি)

আচ্ছা চল।
বলেই আমি আর বাবা ছাদে গেলাম।


অন্যদিকে
আমার আবুকে ছাড়া আমার একদম ঠিক হয় নি!ওই মেয়ে তো এই বাড়িতে না এসেই কি সুন্দর এই বাড়ির সব কিছু জানে আর আমি হচ্ছি যে এই বাড়ির কিছুই চিনি না।এখন কোথায় বলদের মত ঘুরবো।দূর ভালো লাগছে না। আবু কোথায় তুমি?তোমাকে না পেলে আমি এখনই কেঁদে দিবো।

ছায়া কান্না কান্না ভাব নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরছে আর আবনিকে খুঁজছে কিন্তু আবনীকে তো আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

হটাৎ ছায়া খুঁজতে খুঁজতে উপরের উঠে গেলো। উপরে উঠেই ও একটা রুমে গেলো।

দূর এইটা আমি কোথায় এসে পরলাম?আবনী তো মনে হয় না এইখানে আছে অযথাই চলে আসলাম।কেউ দেখার আগেই বের হয়ে যাই।বলেই ছায়া বের হতে লাগলো ঠিক তখনই ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে আয়ুশ বের হলো।

আর ওদের চোখে চোখ পড়লো।
তুমি কে?(আয়ুশ সন্দেহর দৃষ্টিতে)

আমি,,,আমি কেউ না।(ছায়া ভয়ে ভয়ে)

এইবার কি হবে তোর ছায়া? আবার এই বাঘের সামনে এসে পড়তে হলো আমায়?এখন যদি উনি জানে আমি ওই মেয়ে তাহলে আমার আর রক্ষে নেই।এই হবে এবার আমার? আবু আমাকে বাঁচাও প্লিজ।(ছায়া মনে মনে)

কি হলো?কে তুমি?আর আমার রুমে কি করছো?মুখ খোলো তোমার।হিজাব খুলো।আমি তোমার চেহারা দেখবো।কি হলো খোলো?
বলেই আয়ুশ এগুতে লাগলো।

না।আমি হিজাব খুলতে পারবো না।(ছায়া)

তোমার গলাটা আমার খুব চেনা চেনা লাগছে।কে তুমি? মুখ খোলো।না হলে তোমার খবর আছে।
বলেই আয়ুশ একদম ছায়ার কাছে চলে আসলো।

ছায়া পিছিয়ে যেতে যেতে একদম বেডের কাছে চলে আসলো।তবুও আয়ুশ এগুচ্ছেই।এক সময় ছায়া থপ করে বিছানায় বসে পড়লো।

এই সুযোগে আয়ুশ ওর হিজাব ধরে ফেললো।যেই আয়ুশ হিজাব ধরলো সেই ছায়া ছটফট করতে লাগলো।ছায়া আয়ুশ এর হাত থেকে ছুটার প্রাণ পন চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।অবশেষে আয়ুশ ছায়ার হিজাব টেনে খুলে ফেললো।

তুমি?এখানেও?(আয়ুশ ছায়াকে চেপে ধরে)

ছাড়ুন না লাগছে।(ছায়া কাদো কাদো হয়ে)

না ছাড়বো না।আগে বলো তোমার মতলব কি?তখনই তুমি আমার দলের পার্টি খারাপ করতে এসেছিলে।এখন আমার বাড়ির পার্টি খারাপ করতে আসছো।(আয়ুশ আরো জোড়ে ছায়াকে ধরে)

আমি ইচ্ছে করে কিছু করে নি ওই দিন বিশ্বাস করুন।আর আমি জানতাম ও না যে এইটা আপনার বাড়ি তাহলে কখনও আসতাম না।(ছায়া ছুটার চেষ্টা করে)

তোমার মত মেয়ে আমি অনেক দেখিছি।
বলেই আয়ুশ ওকে আস্টেপিস্টে ধরলো।
ছায়াও ছুটার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।এমন অবস্থায় ওরা দুজনই বেডে শুয়ে পড়লো।এক পর্যায় বাঁচার জন্য ছায়া আয়ুশ এর কানে কামড় দিয়ে বসলো।
আয়ুশ কানে হাত দিতেই ছায়া ওকে হাত মেরে খাটের নিচে ফেলে ওমনি দৌড়।


অন্যদিকে
বাবা তুমি না অসুস্থ ছিলে?(আমি)

আমি অসুস্থ ছিলাম।কিন্তু এখন আর নেই তোকে দেখেছে।আর কি লাগে আমার?(বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)

কিন্তু বাবা।তবুও তোমার একটু খেয়াল রাখা উচিত।(আমি)

আমার কথা রাখ তুই যে আমার জন্য।বিদেশ থেকে চলে আসলি এইটা শুনেই আমি ভালো হয়ে গেছি।(বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে)

কেনো জানি বাবার চেহারাটায় অনেক অনুতপ্ত লাগছে।হয়তো উনি উনার করা কোনো অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত।(আমি বাবার দিকে একাধারে তাকিয়ে)

হটাৎ বাহিরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলাম।পরেই ছাদ থেকে দেখলাম ছায়া দৌড়ে গেট দিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে গেছে।
বাবা।সবাই মনে হয় জেনে গেছে।আমরা নকল ওয়েট্রেস সেজে এসেছি এখন কি হবে?(আমি ভয় পেয়ে)

কিছু হবে না চল।আমি তোকে দেখিয়ে দিচ্ছি।কি করে বের হবি।
বলেই বাবা আমার ধরলো।
আমিও বাবার হাত ধরে নামতে লাগলাম।কিন্তু হটাৎ বাবা আমাকে একটা রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে কোথায় কেনো চলে গেলো।
বাবা?(আমি)

আবনী।তুই এই রুমে থাক।আমি বাহিরে দিক দেখে তোকে নিয়ে যাচ্ছি।(জিসান)

কিন্তু বাবা?(আমি)

কোনো কিন্তু না।
বলেই বাবা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো।

আমি অনেক ভিতরে বসে আছি।বাবা তো দূরে থাক কেউ আসে নাই।
হঠাৎ একটা লোক ঘরে প্রবেশ করলো।ঘরটা অন্ধকার শুধু বাহিরের লাইটের কৃতিম আলোতে দেখলাম একটা ভদ্র লোক।সাদা রঙের টিশার্ট আর তারপর ব্লু কোর্ট।আর একটা ব্লু জিন্স পড়েছে।কিন্তু চেহারা অন্ধকারে ঢাকা।তাই বুঝা যাচ্ছে না।
আপনি কে?(আভি)

গলা শুনেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। এত পরিচিত আমার লাগলো।আবার সেই আগের অনুভূতি হতে শুরু করলো।


আমি তোর মাকে করা একটা কথার দেয়ার জন্য তোকে আর আভিকে আলাদা করার পাপ করেছি।আর জন্য অনেক অনুতপ্ত আমি মা।মাফ করে দিস আমাকে।তোর মাকে কথা দেওয়া জন্য আমি তোকে সত্যিই বলতে পারবো না আর না আভিকে তোর বেচেঁ থাকার কথা বলতে পারবো। কিন্তু বিশ্বাস কর তোদের এক হওয়ার জন্য যা করার আমিই করব।যখন তোর দাদুর বাড়িতে ওই ছোট্ট দুটি পিচ্ছিকে দেখি তখন আমি বুঝতে পড়লাম।ওই নিষ্পাপ বাচ্চাগুলো থেকে তোকে আলাদা করে আমি কি পাপ কাজ টাই না করছি।কিন্তু এখন তা আমি শুধরে নেবো।এইজন্যই তো মিথ্যে অসুস্থতা বলে তোকে দেশে এনেছি।আর এই বাড়িতে আমি এই জন্য এসেছি যাতে তুই আমার পিছু পিছু এই বাড়িতে আসতে পারিস।আর তোর আর আভির দেখা হয়।হয়তো এইসব করলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো।হয়তো তোর সব কিছু মনে পড়ার পর তুই আমাকে ক্ষমা করতে পারবি।আভি আস্থাকে ফিরিয়ে নাও।তোমার আস্থাকে তুমি ফিরিয়ে নাও।তোমার বাচ্চাদের কাছে ফিরিয়ে দাও তাদের মাকে।


চলবে,,,,