#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part-4.
-“আপনেরা সেই মেয়ে তিন জন না।”
কথাটা শুনেও ওরা তিন জন চুপ করে আছে । আলতাফ চৌধুরী বলে,
-“তুই ওদের কে চিনিস?”
-“চিনমু না আবার,আমারে পেদানি থুক্কু কেলানি খাউয়াইছে। এত তাড়াতারি ভুইলা যামু।”
-“কেলানি খাইয়েছে মানে?”
সাব্বির বলার আগেই রিমি বলে,
-“দাদু ওনার মাথাটা বোধ হয় নষ্ট হয়ে গেছে। সেই তখন থেকে আমরা তিন জন আপনার সাথে আছি। আর এই কাকু লোকটা বলছে কিনা আমরা তাকে কেলানি খাইয়েছি।”
-“হ্যাঁ! ওরা তো আমার সাথেই ছিল। তোর বোধ হয় ভুল হচ্ছে সাব্বির ।”
-“না,দাদু আমি ঠিক কইতাছি। ঐ দোকানে বসে আমার হাতে একটি ভাঙ্গা পুতুল ধরিয়ে দিয়ে তিন জন কেঁটে পড়ে। তখনো আমি জানতাম না ঐ পুতুলটি ভাঙ্গাছিল। টেবিলের উপর রাখতেই পুতুলটির কল্লা(মাথা) গা থেকে আলাদা হয়ে গেছে। এটা দেখে দোকানদার আমাকে ধরে । আমি নাকি পুতুলটি ভাঙ্গছি। তাদের টাকা দেবো বলে মানি ব্যাগ বের করতে যাব,দেখি পকেটে মানি ব্যাগ নাই। হেরপর ঐ শালারা আমায় ইচ্ছা মতো ধুইয়া দিল। দেহো দাদু আমার চেহারা,জামার নকশা পালটাইয়া দিছে।” কিছুটা কান্নার অভিনয় করে বললো।”
রিমি,সিমি,নিধির খুব হাসি পাচ্ছে সাব্বিরের কথা শুনে কিন্তু হাসতে পারছে না।
রিমি কিছুটা করুন স্বরে বলে,
-“দাদু,আমরাও জানতাম না যে পুতুলটি ভাঙ্গাছিল। এতে আমাদের কী দোষ বলো।”
সাব্বির ঢং দেখিয়ে বলে,
-“ওলে,লে,লে,লে,,,এহন কত মিচা(মিথ্যা) কথা কবা। তিন চুন্নি কোথাকার। ”
নিধি আল্লাদি কন্ঠে বলে,
-“দাদু দেখছো?এই কাকু লোকটা কী বলে।”
-“ঐ নেমাকি বন্ধ করেন। দাদু দেখছো? কী দেখবো আয়! দাদু কী কইবো? দাদু আমার দলে।” অভিনয় করে দেখিয়ে বলে।
-“দাদু।”
-“আহা! থাম সাব্বির । ওরা জানতো না সত্যিই ঐ পুতুলটি ভাঙ্গা ছিল নাকি ভালো।”
-“হ্যাঁ! দাদু জানতাম না।” নিধি বলে।
-“না,দাদু ওরা….।” বাকিটা বলার আগেই রিমি,সিমি,নিধির দিকে তাকিয়ে সাব্বির হা হয়ে যায়। কারণ,আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরের দিকে তাকিয়েছে এরি মধ্যে ওরা তিনজন সাব্বির কে ভেংচি কাঁটতে শুরু করেছে।
-“দেহো দাদু,দেহো? ওরা আমারে ভেঙ্গাইতাছে।”
আলতাফ চৌধুরী ওদের দিকে তাকাবার সাথে সাথে ফেস চেঞ্জ করে ফেলে ওরা । রিমি বলে,
-“দেখেছো দাদু কী মিথ্যে কথা বলে তিনি।”
-“না দাদু, একটু আগে আমাকে ভেঙ্গাইতাছিল ওরা।”
-“সাব্বির চুপ কর। আর কত মিথ্যে কথা বলবি।”
-“দাদু,,,,।” এবাও সাব্বির থেমে যায়। আলতাফ চৌধুরীর আড়ালে ওরা তিন জন আবারো ও’কে ভেংচাতে শুরু করে।
-“দাদু…তাদের কে এহান থিকা যাইতে কও,আমি কিন্তু টিপ(চাপ) দিয়া মাইরালামু,টিপ(চাপ) দিয়া।” কিছুটা রাগ নিয়ে বলে সাব্বির ।
-“এহহ্! আইছে টিপ দিয়া মাইরালাবো। দাদু শোনো। এই কাকু লোকটাকে ভালো একটা ডাক্তার দেখাবে। আমরা যাই।” রিমি বলে।
-“হ দাদু ডাক্তার দেখাবে তাকে।”সিমি বলে ।
-“যাই দাদু বাই।” নিধি বলে হাঁটা ধরলো ওরা।
-“তোমরা ভালো থেকো।”কথাটা বলে আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরের দিকে ঘুরে তাকাল ।
সাব্বির রাগে যাতী সাপের মতো ফোস ফোস করছে। কারণ,রিমি,নিধি,সিমি কিছুটা দূর গিয়েও সাব্বির কে ভেংচাচ্ছে।
আলতাফ চৌধুরী বলে,
-“মেয়ে তিনটি কত ভালো।”
-“কেডা কইছে! শয়তানের বোইন একেক টায়।”ঝাঁড়ি দিয়ে বলে।
-“ঐ তুই চুপ কর। চল বাসায় যাই। সন্ধ্যার আজান দিয়ে দিবে। ওরা আবার ফোন দিতে পারে ।”
-“হ চলো । তয় দাঁড়াও । ওদের লগে তোমার দেখা হইলো কেমতে? ”
-“গাড়িতে যেতে যেতে বলছি।”
.
.
.
রিমি,নিধি,সিমি ওরা বাসায় এসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাব্বিরের কথা মনে পড়তেই প্রচুর হাসি পাচ্ছে ওদের ।
-“সত্যিই সেই ভাবে মেরেছে সাব্বির কাকু লোকটিকে।” রিমি বলে হাসতে হাসতে ।
-“হ্যাঁ! তবে ছেলেটিকে দেখে বয়ষ্ক,বয়ষ্ক বলে মনে হয় না।” সিমি বলে।
-“যেভাবে আমাদের সাথে ঝগড়া করল । তাতে তো মনে হয় আমাদের চেয়ে ছোট হবে। যাই হোক,সেই ছিল আজকের দিনটা।” নিধি বলে।
-“এবার চল রান্নার কাজে যাই।”
-“রান্না করতে ইচ্ছে করে না রে।”
-“তাহলে না খেয়ে ঘুমাতে হবে।”
-“তাই করি,না খেয়ে ঘুমাই।”
.
.
আলতাফ চৌধুরী ও সাব্বির ফার্ম হাউসে এসে নিজেদের চেহারা,ড্রেস চেঞ্জ করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। এরি মধ্যে সাব্বিরকে ওদের তিন জনের কথা বলেছে। সাব্বির এটা শুনে তেমন কোন রিয়েক্ট করেনি। বাসায় আসার পর তিন ভাই গোয়েন্দার মতো প্রশ্ন জুড়ে দেয়। আলতাফ চৌধুরী কোন রকম এটা ওটা বলে ওদের বুঝ দেয়।
__________________________
রুমের চার দিকে তাকিয়ে নিঁখুত ভাবে পর্যবেক্ষন করছে রিদয়। পালানোর রাস্তা খুঁজছে। এই পরিত্যক্ত ঘরটিতে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। কেন ও’কে এখানে এভাবে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে ওর জানা নেই। চিৎকার করে হেল্প চাইছে। কিন্ত রিদয়ের চিৎকার কারো কান পর্যন্ত পৌঁছাল না। বার বার চিৎকার করার ফলে বাহির থেকে একজন লোক ভিতরে এসে রিদয়ের মুখ বরাবর ঘা লাগিয়ে দিল। রিদয় মাটিতে পড়ে যায়। চিৎকার থেমে যায় ওর। মাটিতে শুয়ে গোঙ্গাতে লাগলো।
.
.
বিপলপ তালুকদার মাথায় বুড়ো আঙুল ঠেকিয়ে সোফায় বসে আছে । ছেলের জন্য বেশ চিন্তা হচ্ছে তার। পলাশ হাসান পাশেই বসে রয়েছেন। হঠাৎ করে তার ছেলেকে কারা কিডন্যাপ করল ? কেনই বা কিডন্যাপ করল? হিসাব মিলাতে পারছেন না তিনি। পলাশ হাসান বলেন,
-“স্যার,এত চিন্তিত হবেন না। আমি পুলিশ লাগিয়ে দিয়েছি । আপনার ছেলেকে নিশ্চয় আমরা ফিরে পাব।”
-“সান্তনা দিচ্ছো?” সান্ত কন্ঠে বলেন বিপলপ তালুকদার।
পলাশ হাসান চুপ মেরে রয়।
-“সান্তনা দিচ্ছো আমাকে! ” রাগী কন্ঠে বলেই দাঁড়িয়ে যায়।”
পলাশ হাসান কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। বিপলপ তালুকদার ক্ষুপ্ত কন্ঠে বলেন,
-“আমার ছেলেকে আমি জীবিত চাই। ওর কিছু হলে আমি কী করতে পারি? সেটা তুমি নিশ্চয় জানো।”
-“জ.জি..স..স্যার ।”
-“তাহলে যাও?আমার ছেলেকে খুঁজে বের কর ? যাও!”ধমক দিয়ে বলেন ।
পলাশ হাসান কথাটা শুনে দ্রুত রুম ত্যাগ করেন।
রাতে….
সাব্বির ওর প্রিয় ডাইরিটা নিয়ে বসেছে লিখতে। ওর উদ্দেশ্যে একটা ঝাকা-নাকা কবিতা লিখবে। আলতাফ চৌধুরী ওর পাশে বসেই বই পড়ছে। কিছুক্ষণ পর সাব্বির খুশি মুডে বলে,
-“আমার কবিতা লেখা শেষ । আমার কবিতা লেখা শেষ। ইয়াহু! আমি কবিতা লিখছি?”
আলতাফ চৌধুরী বইয়ের মধ্যে হাত রেখে বলেন,
-“কী এমন কবিতা লিখলি যে এত খুশি?”
-“শুনবা দাদু? ”
-“হুমম,শুনা।”
-“আইচ্ছা শোনো,এহেম!এহেম!….একটি ছাগল,একটি ছাগলি। দু’জনার মধ্যে ছিল গেহরি দোস্ততি। একদিন ছাগলি গেল হারিয়া,ছাগল তার শোকে কাঁদিয়া কাঁদিয়া,দিল পাদিয়া……। কেমন লাগছে দাদু?”
আলতাফ চৌধুরী স্থির চোখে তাকিয়ে আছে সাব্বিরের দিকে । খুব রাগ হচ্ছে তাঁর। হবেই বা না কেন? এমন ঘাটিয়া কবিতা শুনলে যে কারো মেজাজ বিঘড়ে যাবেই। তাঁরও ব্যতিক্রম হলো না। বইটা আস্তে করে বন্ধ করে তার পাশে থাকা লাঠিটায় হাত রাখতেই সাব্বির বুঝে যায় ডাল মে জারুর কুচ কালা হ্যাঁ । সাব্বির ডায়েরী হাতে নিয়ে বো দৌঁড়।
-“ঐ হারামজাদা দাঁড়া। শালার কবিতার নাম ধুলয় মিশিয়ে দিয়েছে ।”
সাব্বির ওর রুমে এসে গেট লাগিয়ে বুকে ফু দেয়। বলে,
-“আমার এত সুন্দর কবিতা দাদুর কাছে ভালো লাগে নাই । হায়রে..।” কঁপালে হাত দেয় সাব্বির ।
-“খবর পেলে?”একজন বডিগার্ড কে উদ্দেশ্যে করে কথাটা বলে আলতাফ চৌধুরী ।
বডিগার্ড টি মাথা নিচু করে নরম স্বরে বলে,
-“স্যার,আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি।”
-“খোঁজার চেষ্টা করছি মানে কী? তোমাদের কে ছবি দেওয়া হয়েছে। তারপরও খোঁজতে এত সময় লাগার কথা না তো?”
-“স্যার,আমরা খুঁজছি।”
-“যাও এখান থেকে । আর দ্রুত খোঁজ কর।”
-“ওকে স্যার ।”
বডিগার্ড চলে যায়।
-“ধুর,কেন যে মেয়ে তিনটির নাম্বার সেদিন নিলাম না ।” আলতাফ চৌধুরী রাগ নিয়ে বলে।
.
.
রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওরা তিন জন রুদ্রের রুমে বসে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল দেখছে। তার সাথে গোপনিও কিছু কথা বলছে।
-” Joy গ্রুপ থেকে Email পাঠিয়েছে।” রুদ্র ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে।
-“কী পাঠিয়েছে?” অভ্র প্রশ্ন করে।
-” ডে,নাইট রেস্টুরেন্ট এন্ড হোটেল এ পরের ডিল হবে,এটা বলেছে। আর কিছু পেপারের ছবি দিয়েছে। ” রুদ্র উত্তর দেয়।
-“ঐখানে কেন? আমাদের অফিসেও তো ডিল হতে পারতো?” শুভ্র বলে।
-“সমস্যা কী! আমরা যাব কাল।”
-“ওকে।”
কিছুক্ষণ পর আলতাফ চৌধুরী সেই রুমে প্রবেশ করে। তিনি ওদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যান।
________________________
-“বসন্ত বাতাসে সখাগো,,,বসন্ত বাতাসে,বসন্ত বাসাতে সখাগো,,,বসন্ত বাতাসে। বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ,হাইরে,বন্ধুর বাড়ি ফুলের গন্ধ,,,আমার বাড়ি আসে না ক্যারে ধিমি,সিম?” রিমি লাস্টের টুকু গেয়ে সিমি ও নিধির দিকে তাকাল।
-“সেইটা তোর বন্ধুরে যাইয়া জিগা গা। আমারে জিগাস ক্যা?” সিমি ধমক দিয়ে বলে।
-“হু…।” নিধি মুখ বাকিয়ে বলে নিধি।
-“তাহলে তোরা কী আমার শত্রু?” রিমি বলে।
-“ঐ তুই কথা বলিস না তো,ঘুমামু সর।” বলেই সিমি হালকা ধাক্কা মেরে রিমিকে সরিয়ে কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।
-“আমিও ঘুমাবো। তুই একা একা এখানে বসে চিন্তা করতে থাক।তোর বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ তোর বাড়িতে কেন আসে না।” কথাটা বলে নিধিও শুয়ে পড়ে।
-“শয়তান দুইটা ।” রিমি ওদের গা থেকে কাথা টেনে নিয়ে মুড়ি দিল।
সকালে……..
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To…..