Three Gangsters Love Part-05

0
3444

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_5.

টানা তিন ঘন্টা পর হোটেলে এসে পৌঁছায় রুদ্র,অভ্র,শুদ্র। রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। ১০টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছে । ১২টায় এসে পৌঁছায় । জয় আহমেদ এখনো আসেনি। কিছুক্ষণ বসে শাওয়ার নেওয়ার জন্য তিন জনেই ওয়াশরুমে চলে যায়।
.
.
কয়েকদিন ধরে হোটেলে চুরি হচ্ছে । কখনো খাবার গায়েব হচ্ছে তো কখনো দামী দামী গ্লাস,প্লেট,বাটি গায়েব হচ্ছে । বড় লজ্জাজনক ব্যাপার এটা । হোটেলের ম্যানেজার এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে এসেছে । সে এই বিষয় জানতে পেরে স্টাফ মিটিং এ সবাইকে ডেকে কড়া কথা শুনিয়েছে আজকে।সকাল সকাল কড়া কথা শুনেছে বিধায় নিধির মেজাজ বিঘড়ে আছে। রাগ নিয়ে টেবিল পরিষ্কার করছিল। আর বিড়বিড় করে সেই চোরের গুষ্টি উদ্দার করছে। হঠাৎ করেই পিছন থেকে সিমির চিৎকার শুনতে পায় নিধি ।

-“নিধি চাদরে মুড়ানো চোরটিকে ধর। ও তোর দিকেই যাচ্ছে।”

সিমির কথা শুনে নিথি পিছনে তাকিয়ে দেখে সাদা চাদর দিয়ে মুখ ঢাকা একটি ছেলে দৌঁড়ে ওর দিকে আসছে। চোরটিকে ধরার জন্য সিমি সহ বাকি কিছু স্টাফ রাও পিছনে তাড়া করছে। নিধি কপাল কুঁচকে ওর পায়ের স্লিপার জোড়া খুলে হাতে নিলো। তখনি চোরটি ওর পাশ কাঁটিয়ে আরো জোরে দৌঁড় দেয়। নিধিও দৌঁড় দেয় চোরের পিছনে। সাদা রঙের চাদরটি পাতলা ছিল যার দরুণ চেহারা ঢেকে রাখার পরও বাহিরের সব কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল । চোরটিও তার জন্য দৌঁড়াতে পারছে ।গেটের সামনে আসতেই চোরটি কারো সাথে ধাক্কা খায় । ধাক্কা লাগা লোকটি ছিল সাব্বির। চাদরে ডাকা লোকটিকে দেখে সাব্বির রেগে বলে,
-“তামাশা হচ্ছে!চাদর সরান।”

কথাটা বলতে দেরি চোরটি ফট করেই তার গায়ের চাদর দিয়ে সাব্বিরের মুখ ঢেকে দিতে দেরি করে নি। সাব্বিরের মুখ ডেকে দিয়েই চোরটি নিচে বসে পড়ে,তারপর পিছন দিক থেকে চাদরের ভিতর থেকে বের হয়ে অন্য দিকে দৌঁড় দেয়। সাব্বির রাগ নিয়ে মুখ থেকে চাদর সরানোর চেষ্টা করছে। এরি মধ্যে নিধি,সিমি সহ বাকি স্টাফ রা এসেই উরাদুরা মারতে শুরু করেছে। সাব্বির মুখ থেকে শুধু ‘ও মা,ও বাবা,ও চাচা,ও কাকু’ বের হচ্ছে।

-“আর চুরি করতে আসবি? চোরে ঘরে চোর। তোকে…….।” বলেই সিমি ওর হাতের ফুলের ঝাড়ুর পিছন দিক থেকে মারছে।

-“চোর গিরি বের করব আজ দাঁড়া।” নিধি এটা বলে ওর জুতো দিয়ে মারছে ইচ্ছা মতো।

বাকি রাও মারছে। সাব্বিরের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে । আর সহ্য করতে না পেরে চাদর সহ ওঠে দাঁড়িয়ে সামনে থেকে স্টাফ দের ধাক্কা মেরে সরিয়ে খিচ্ছা দৌঁড় দেয়।

-“ঐ চোরের বাচ্চা কই যাস। আর চুরি করবি না? শালা পারলে আবার আসিস চুরি করতে । তোর ঠেং ভেঙ্গে বট গাছে ঝুলিয়ে দেবো ।” নিধি সাব্বিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে।

-“হ্যাঁ,পারলে আসিস আবার। কত বড় সাহস রান্না ঘরে খাপটি মেরে বসে ছিল।” সিমি বলে।

-“কী হচ্ছে এখানে?” হোটেলের ম্যানেজার ইকবাল রহমান কড়া গলায় প্রশ্ন করেন।

সবাই মাথা নিচু করে ফেলে। সিমি বলে,
-“স্যার, ঐ চোরটিকে ধরতে পেরেছি।”

-“কোথায়?” উত্তেজিত কন্ঠে বলেন ।

-“পালিয়ে গেছে স্যার। তবে,আমাদের হাতে প্রচুর কেলানি খেয়েছে। মনে হয় না আর আমাদের হোটেলে চুতি করতে আসবে।” নিধি মাথা নিচু করে বলে।

-“স্টুপিড কোথাকার! ও’কে মারলে কেন? বেঁধে রাখতে। আমি পুলিশ কে খবর দিতাম। যদি কোনো অঘটন ঘটে যেতো তাহলে দায়ী কে নিতো?”

সবাই মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।

-“যাও যে যার কাজ কর?” ধমক দিয়ে বলে ইকবাল রহমান ।

সবাই চলে যেতে নিলে ইকবাল রহমান সিমি ও নিধি কে ডাক দিয়ে বলে,
-“তোমরা দু’জন ৩০১,৩০২,৩০৩ নাম্বার রুমে যাও। খালি হাতে যেও না। সাথে করে কফি নিয়ে যেও। কফি পাঠাতে বলেছেন তারা।”

-“জ্বী,স্যার ।” সিমি বলে।

ইকবাল রহমান চলে গেলেন। নিধির মন চাইছে ওদের স্যার কে তখন কার চোরের মতো ইচ্ছা মতো ধোলাই দিতে ।

-“রাগ করিস না,এটা একটা খারুছ লোক। চল কফি নিয়ে উপরে দিয়ে আসি। নয়তো, দেরি হলে আবার চিল্লাবে।” সিমি আস্তে করে বলে নিধিকে।

নিধি কিছু বলছে না। রাগী মুড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিমি ও’কে টেনে নিয়ে গেল।

এদিকে সাব্বির দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে অনেকটা দূরে এসে পড়েছে। ওর দিকে কিছু মানুষ সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে । সাব্বির মাথার উপর থেকে চাদরটা সরিয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানছে। মাটি থাপ্পরাচ্ছে আর বলছে,
-“আমার লগেই এমন হয় ক্যা? বাল! ওরে মা গো,,,পিঠ আমার শেষ। সেদিনের মাইরের ব্যথা এখনো আছে। তার উপরে আজকের মাইর। আল্লাহ্! আল্লাহ্ গো! ওগোরে তুমি নিজ হাতে শাস্তি দিও গো।” কান্নার ভান করে উপরে দু হাত তুলে বলে। সাব্বিরের এখন অবস্থা দেখে একজন লোক পাগল ভিখানি মনে করে পাঁচ টাকার নোট ওর সামনে ফেলে চলে যায়। এটা দেখে সাব্বিরের কান্না থেমে যায়। লোকটির যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ধরতে গেলেই তখনি ওর ফোনটা বেজে ওঠে। থেমে গিয়ে ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখে রুদ্র কল দিয়েছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোন রিসিভ করে,
-“হ কন ভাই।”

-“তুই কই? এখনো আসছিস না কেন? কিছুক্ষণ পর মিটিং শুরু হয়ে যাবে।” কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে রুদ্র।

-“আইতাছি ভাই। এহনি আইতাছি।”

-“তাড়াতারি আয়।” বলেই ফোন কেটে দেয় রুদ্র।

ফোন পকেটে রেখে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে । তারপর এক দোকান থেকে একটি পানির বোতল কিনে পানি খেয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো।
.
.
-“উফ!সেই তখন থেকে সিমি,নিধিকে কল দিচ্ছি রিসিভ করছে না কেন? করছে টা কী ওরা? ধ্যাত! আজ তাড়াতারি কাজ শেষ হয়েছে বিধায় ভেবেছি এতিম খানায় গিয়ে সবার সাথে একটু দেখা করে আসব। কিন্তু এই চুন্নি দুইটায় ফোনই ধরছে না। ”
রিমি বিরক্ত হয়ে কথা বলতে বলতে হোটেলের ভেতরে প্রবেশ করল। এতক্ষণ বাহিরে দাঁড়িয়ে বক বক করছিল। ভেতরে গিয়ে একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“এই মেয়ে সিমি আর নিধি কোথায় বলতে পারো? ”

-“ওরা উপরে ৩০১,২,৩ রুমে গিয়েছে ।”

-“ও আচ্ছা,ঠিক আছে ধন্যবাদ।” বলেই রিমি হাঁটা ধরলো। লিফটে ওঠে একে বারে তৃতীয় তলায় এসে থামল। লিফট থেকে বের হয়ে ফোন চাপতে চাপতে ৩০১ নাম্বার রুমে হুরমুড় করে ঢুকে পড়ল। তারপর ধপাশ করে বিছানায় শুয়ে ফোন টিপতে টিপতে বললো,
-“সিম হারামি! তখন থেকে ফোন দিচ্ছি ধরিস নি কেন? চুন্নি ছেড়ি। আর ধিমির বাচ্চা ধামরা কই গেছে? ওই চুন্নিরেও কত বার কল দিছি……।” কথাটা বলেই ওর মুখের সামনে থেকে ফোন সরিয়ে সামনে তাকাতেই দিল এক চিৎকার । ফোন পড়ে যায় মাটিতে।

লাফ দিয়ে বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ায়। চোখ জোড়া বড়ো করে ওর সামনে খালি গায়ে শুধু টাওয়াল পড়া লোকটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দিল বৌ দৌঁড়।‌

-“এই মেয়ে……..।”

বাকিটা বলার আগেই রিমি ফিরে এসে ফোনটা মাটি থেকে উঠিয়ে নিয়ে আবার জোরে দৌঁড় দেয়।

-“এই দাঁড়াও,দাঁড়াও বলছি।” তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে রুদ্র।

কার কথা কে শুনে? দৌঁড় তো দৌঁড়ই।
রুদ্র শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে বের হবার পর দেখে কফির মগ রাখা। রুদ্র ভেবে নেয় কোনো ওয়েটার এসে রেখে গেছে।
হোটেলের রুম গুলোর দরজা ছিল হাই কোয়ালিটির,তাই গেটের লকের সামনে কালো রঙের একটি কার্ড ধরার সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। এই চাবি গুলো হোটেলের ওয়েটার ও যারা রুম বুক করে তাদের কাছে থাকে।
রুদ্র জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে সাব্বির কে ফোন করে হোটেলে আসতে বলে। আর এদিকে দরজা খোলা পেয়ে রিমি রুমে ঢুকে পড়ে। ভেবেছিল সিমি রুম পরিষ্কার করছিল,তাই হয়তো রুমে কোন লোক থাকবে না। এটা ভেড়ে ফোন টিপতে টিপতে বিছানায় শুয়ে পড়ে। যখনি কথা গুলো বলতে লাগলো তখন রুদ্র কপাল বাজ করে ঘুরে তাকায়। দেখে বিছানায় একটি মেয়ে আরামছে শুয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে একা একাই কথা গুলো বলে যাচ্ছে । রুদ্র গেটের দিকে তাকিয়ে দেখে গেট খোলা। ওর বুঝতে বাকি থাকে না গেট এতক্ষণ খোলাই ছিল। ওয়েটার দরজা ভুলে খোলা রেখে গিয়েছে। রুদ্র কফির মগ রেখে ধীরে পায়ে মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়াল। তখনো মেয়েটি কথা বলেই যাচ্ছে। তারপরই এপাশ থেকে মেয়েটির চেহারার উপর কিছুটা ঝুঁকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় । আর তখনি বাকিটা বলার আগেই রুদ্রকে দেখে চিৎকার দিকে ওঠে রিমি।

রুদ্র বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে।

-“অদ্ভুত মেয়ে তো? কেন আসলো আমার রুমে? আর কাকে কী বললো? Whatever.”
রুদ্র মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল।
.
.
অন্যদিকে…

সিমি ৩০১ নাম্বার রুমে কফি দিয়ে এসে ৩০২ নাম্বার রুমে প্রবেশ করে। কফির মগটা পাশের টেবিলের উপর রেখে রুমের চার দিক টা ভালো করে দেখতে লাগলো ।

-“ওয়াও,কত সুন্দর। ভি,আই,পি রুম বলে কথা, সুন্দর তো হবেই। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা কত বড়। আর কী সুন্দর ডিজাইন করা।” কথাটা বলতে বলতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল সিমি । নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। ওদের ঘরে এত বড় আয়না নেই। ছোট একটি ঝুলন্ত আয়না আছে তাতে শুধু চেহারাই দেখা যায়। এই আয়নাটা দেখে ওর ভালো লেগেছে। যার দরুণ নিজেকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরনের সাদা শার্ট টির কলার একটু উঁচু করে, হাতা বোল্ড করে মুড নিয়ে দাঁড়াল। কোমড়ে হাত রেখে নিজেকে কিছুক্ষণ দেখে তারপর আবার কলার নামিয়ে,হাতা ঠিক করে পিছনে ঘুরতেই কারো গায়ের সাথে ওর মাথায় ধাক্কা লাগে। চোখ,মুখ কুঁচকে দু পা পিছনে গিয়ে দেখে শুধু টাওয়াল পড়া খালি গায়ে তার খাম্বার মতো লম্বা একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা,গা থেকে তখনো টপ টপ করে পানি পড়ছিল। সিমির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। পিট পিট করে ছেলেটির দিকে তাকাল। নিজেকে দেখার এতটাই ব্যস্ত ছিল যে অন্য কারো রুমে এসেছে সেটা ভুলেই গিয়েছিল সিমি।

-“হোয়াট?” তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে শুভ্র।

সিমি ‘নাথিং’ বলেই এক দৌঁড় মারে।

শুভ্র আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছে মেয়েটির যাওয়ার দিকে । বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“রাবিশ!”
.
.
.
এই দিকে…

নিধি ৩০৩ নাম্বার রুমে এসে কফির মগ রেখেই এদিক,সেদিক তাকাচ্ছে। ওর নজর রুমের মালিকের উপর । যদি তিনি না থাকে তাহলে বারান্দায় যাবে বলে ভেবে নেয়। নেই দেখে ছোট্ট নিঃশ্বাস টেনে বারান্দার দরজা খুলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। মুখে ফুটে ওঠে এক চিতলে হাসি। ফুরফুরা বাসার এসে চেহারায় লাগছে। কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকাল। এখান থেকে নিচের দিকটা অনেকটা উপরে লাগছে। নিচের মানুষ,গাড়ি কেমন ছোট ছোট লাগছে। জোরে একটা নিঃশ্বাস টেনে নিল। ফোন বের করে নিজের কয়েকটা ছবি তুলে নিল । ফোনটা পিছন দিকে ধরার সঙ্গে সঙ্গে একটি ছেলেকে দেখতে পেল ক্যামেরায়। পরনে শুধু হলুদ টাওয়াল পড়া ছিল।নিধি ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“আরে এই আবার কোন ল্যাংটা বাবা? কোথা থেকে আসলো তিনি?” বলেই পিছনে ঘুরে তাকাল। দেখে একটি ছেলে গম্ভীর মুড নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে‌। এবার বুঝে যায় নিধি, লোকটি কে? নিধি চুপসে যায়। জোর করে হাসার চেষ্টা করে। এখন কিভাবে রুম থেকে বের হবে ভাবছে ।

-“তুমি এখানে কী করছো?” গম্ভীরস্বরে প্রশ্ন করে অভ্র।

এখন কী বলবে নিধি ভেবে পাচ্ছে না। বিনা পারমিশনে বারান্দায় আসার কারণে যদি ম্যানেজারের কাছে বিচার দেয় তাহলে চাকরি থাকবে না ওর।

-“নিধি ভাব,কী বলবি এখন?”মনে মনে বলে নিধি।

-“কথা বলছো না কেন? ড্যাম ইট!” কিছুটা ধমকের স্বরে বলে অভ্র।

-“ইয়ে মানে,মানে,,,,হায় হায় স্যার আপনার পায়ের নিচে তেলাপোকা!” আশ্চর্য হয়ে বলে নিধি।

অভ্র এটা বিশ্বাস করে লাফাতে শুরু করল।

-“হেই! কোথায় কোথায়! তাড়াতারি সরাও এটাকে। ”
লাফাতে লাফাতে বলে অভ্র।

-“নিজে সরিয়ে নিন স্যার…..।” বলেই অভ্রের পাশ কাঁটিয়ে দৌঁড় দিল। অভ্র তখনো লাফাচ্ছে।

-“হেই! এটাকে সরাও,কোথায় যাচ্ছো?” লাফাচ্ছে আর বলছে।

ছোট থেকেই অভ্র তেলাপোকা কে প্রচণ্ড ভয় পায় । রুদ্র,শুদ্র ভয় পায় না বললেই চলে।
হুট করেই অভ্র ভালো করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো, তেলাপোকা টা আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। নাহ! কোথাও দেখতে পাচ্ছে না তেলাপোকা । রাগ হয় অভ্রর।

-“ফাজিল মেয়েটি আমাকে বোকা বানাল। শিট!” কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে ।
.
.
.
আর এদিকে সাব্বির লিফট থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে রুদ্র,শুভ্র,অভ্র দের রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। পিঠে তখনো ব্যথা অনুভব করছিল। ব্যথা করারি কথা,কম তো আর মারেনি ওরা। দুই কদম সামনে যেতেই হঠাৎ-ই কারো সাথে ওর ডান পাশের বাহুতে জোরে ধাক্কা লেগে পিছন ঘুড়ে যায়। বাহুতে হাত দিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-“এই মাইয়া,কানা…….।”
বাকিটা বলার আগেই বাম পাশের বাহুরে জোরে ধাক্কা লাগে,এবার আগের ন্যায় সামনের দিকে ঘুরে যায়। ‘ওরে মা গো’ বলেই দুই কাঁধে হাত রেখে দাঁড়ায়। ওর নজর ছিল নিচের দিকে,তখনি ঠিক আবারও দ্রিম করে আরেকটা ধাক্কা খায়। এবার আর এপাশ,ওপাশ ঘুরেনি! ধুপাশ করে উপুড় হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।

ধাক্কা যাদের সাথে খেয়েছে তারা আর কেউ না রিমি,সিমি,নিধি । দৌঁড়ের গতি এতটাই দ্রুত ছিল যে এত বড় একটি লোক সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সেটা ওদের চোখে পড়েনি। তিন জনিই তিনটি আলাদা লিফটে ওঠে নিচে যেতে লাগলো । এরি মধ্যে রুদ্র দের বডিগার্ড রা লিফট থেকে বের হয়ে রুদ্র দের রুমের দিকে হাঁটা ধরলে তখনি সাব্বির কে দু পা ও হাত দু দিকে ছড়িয়ে ফ্লোরে উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থায় দেখতে পায় । তাড়াতারি করে সাব্বিরের কাছে এসে ও’কে টেনে বসায়। সাব্বিরের নাক লাল হয়ে গেছে। নাকে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে বুঝাই যাচ্ছে ।

-“আপনার এই অবস্থা কিভাবে হলো ছোট স্যার? “বডিগার্ড প্রশ্ন করে।

-” কে করেছে আপনার এই হাল?” অন্য বডিগার্ড প্রশ্ন করে।

-“আগে তোমরা আমারে একটু ওঠাও।” করুন স্বরে বলে সাব্বির ।

বডিগার্ড দু’জন সাব্বিরকে ধরে উঠিয়ে দাঁড় করালো।

-“এবার আমারে ভাইদের কাছে নিয়ে যাও।”

বডিগার্ড রা দু’জন সাব্বিরকে ধরে নিয়ে হাঁটা ধরলো। রুদ্রের রুমে প্রবেশ করে। রুদ্র তখন শার্ট পড়ছিল। সাব্বিরকে ধরে বডিগার্ড রা রুমে প্রবেশ করতে দেখে রুদ্র কপাল বাজ করে প্রশ্ন করে,
-“তোর এই কেন?”

সাব্বির কান্না ফেস বানিয়ে বলে,
-“ভাই হেইদিন থেইকা আজকের দিন হয়তে উদুম কেলানি খাইতাছি। জানি না কপালে কার পা আছে?”

-“মানে?” রুদ্র বলে।

-“মানে,মিটিং শুরু হইয়া গেছে ভাই। আপনে যান।”

-“ভালো ডাক্তার দেখিয়ে নিস।” বলেই রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

-“হ ভাই তা তো দেখাইতে হইবো।” একা একাই বলে।

-“বড় স্যার কে সত্যি কথাটি বললেন নি কেন ছোট স্যার?”

-“ওরে হারামজাদা বাকি মাইর গুলো কী তুমি খাবা? সত্য কথা কইলে যে দাদু আমারে হের হাতের ঠেঙ্গা দিয়ে পিডাইতো।” ত্যাড়া গলায় বলে সাব্বির ।

বডিগার্ড রা চুপ হয়ে যায়। কারণ,তারা জানে সেদিন তারা রুদ্রদের পারমিশন না নিয়ে ছদ্মবেশে বাহিরে গিয়েছিল।
.
.
.
সিমি,নিধি,রিমি তিন জনেই এক সাথে নিচে এসে নামে। আগে রিমির লিফট খুলেছে,তারপর সিমি, তারপর নিধি। কাউন্টারে এসে দাঁড়তেই তিন জন মুখমুখি হয়।

-“আরে হারামি এতক্ষণ কই ছিলি?” রিমি রাগী কন্ঠে বলে।

-“তুই কোথা থেকে আসলি?” নিধি বলে।

-“আগে বল তোরা কই ছিলি?”রিমি বলে।

-“আরে দাঁড়া,দাঁড়া এক সাথে এক এক করে বল।” সিমি বলে।

-“হ বল।” রিমি বলে।

নিধি ওর সাথে যা হয়েছে সেটা ওদের বললো। এটা শুনে সিমি,রিমিও ওদের সাথে যা হয়েছে সেটা বললো।

-“তোদের জন্য আজ এটা হইছে । আমি জানতাম না ওই রুমে ঐ খচ্চর লোকটা ছিল।” রিমি বলে।

-” আমিও তো একটা ছোট দৌঁড়ানি খাইছি।” নিধি বলে।

-“একটুর জন্য বেঁচে গেছি রে।”সিমি বুকে হাত দিয়ে বলে।

-“যদি আমাদের নামে নালিশ করে ম্যানেজার এর কাছে,তাহলে চাকরি যাবে শিওর।” নিধি কিছুটা করুন স্বরে বলে ।

-“হ রে।”

রিমি বলে,
-“আচ্ছা এখন বাসায় চল।”

-“আমাদের আরো কাজ আছে। এখন যেতে পারব না।” সিমি বলে।

-“কেন?”

-“আরে তিমি আজকে ম্যানেজার আমাদের বকুনি দিছি। তাও একটা চোরের জন্য। মাথা তার এমনেতেই গরম আছে। এখন যদি আবার আমরা চলে যাই, তাহলে চারকি খেয়ে নিবে ।” নিধি বলে।

-“আমি তাহলে বাসায় চলে যাই ।”

-“যা,বাসায় গিয়ে রান্না করে নিস।”

-“রি…রিমি, নিধি দেখ দেখ ওই লোকটা এদিকে আসতেছে।” অস্থির হয়ে সামনে তাকিয়ে বলে সিমি ।

ওরা দু’জন সামনে তাকিয়ে দেখে ওদের সাথে যেই দু’জন সঙ্গে উপরে দেখা হয়েছে সেই দু’জনও আছে। চট করে মাথা এদিকে ঘুরিয়ে নেয়।

-“ওদিকে তাকাস না রে,দেখতে পারলে শেষ।” রিমি বলে।

-“কেন?” সিমি বলে।

-“কারণ,ওদের মধ্যে ওই খারুস লোকটাও আছে।” নিধি বলে।

-“হাহ,,।”

-“বলিস কী? তাদের দেখে তো মনে হচ্ছে প্রচণ্ড বড়লোক । আল্লাহ্! কী করতে কী হয়ে গেল তখন ।” সিমি বলে।

-“পিছনে তাকিয়ে দেখ তো চলে গেছে কি না।” রিমি বলে ওদের দু’জন কে।

-“তুই দেখ ছেরি।”

তখনি ওদের সামনে একজন মেয়ে স্টাফ আসে। মেয়ে স্টাফটি ওই তিন জন ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে । চেহারায় খুশির জলক।

-“ওই মারিয়া, এদিকে আসো।” সিমি ওই মেয়েটিকে ডাক দেয়।

মারিয়া মেয়েটি ওদের কাছে আসে। কিন্তু তখনো ওর নজর ওই ছেলে তিন জনের উপর ছিল।
রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওরা তিন জন তখন ওখানে দাঁড়িয়ে জয় আহমেদ এর সাথে কথা বলছিল।

-“কী হয়েছে আপু?”

-“তুমি এত খুশি কেন? তাও আবার তাদের কে দেখে? ” সিমি বলে।

কথাটা শুনে মারিয়া ওদের দিকে ভ্রু কিঞ্চিৎ বাকা করে তাকায় ।

-“কী হলো? কিছু বলছ না কেন?” নিধি বলে।

মারিয়া ওদের কথার উত্তর না দিয়ে চলে যায় । যখন ফিরে আসে তখন ওর হাতে একটি ম্যাগাজিন ছিল। ম্যাগাজিন টি ওদের দিকে ঘুরিয়ে ধরল । ওদের চোখ বড় বড় হয়ে যায় । কারণ,ম্যাগাজিন এর উপরে ওই ছেলে তিন জনের ছবি। হাতে গান নেওয়া,আর উপরে বড়ো অক্ষরে #Three_Gangsters লেখা।

-“কিছু বুঝতে পারলে তোমরা? ” মারিয়া বলে।

-“গ্যা..গ্যাংস্টার!” সিমি বলে।

-“হ্যাঁ! #Three_Gangsters এবং চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক।”

মৃদ কাপা কাপি শুরু হয়ে যায় ওদের। সিমি ওর হাত থেকে ম্যাগাজিন টি ছোঁ মেরে নিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো ।

-“এই এই এই ছে..ছেলেটি….।”

সিমিকে থামিয়ে মারিয়া বলে,
-“এর নাম শুভ্র চৌধুরী । আর এর নাম অভ্র চৌধুরী । আর তার নাম রুদ্র চৌধুরী । এই তিন জন আমার ক্রাশ । দেখতে যেমনি সুন্দর তেমনি ড্যাশিং,হ্যান্ডসাম পুরাই কিলার লুক।” পুলকিত হয়ে বলে মারিয়া ।

-“খাইছে রে কী করলাম আমরা। গ্যাংস্টার……।”

রিমিকে থামিয়ে সিমি ভীত কন্ঠে বলে,
-“আর বলিস না রিমি ।”

-“তো…তোরা থাক আমি বাসায় যাই। ” রিমি ভয় জড়িত কন্ঠে বলে।

-“ওই দাঁড়া!”

-“দাঁড়াতে পারমু না,আমি গেলাম।” বলেই এক প্রকার দৌঁড়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে গেল রিমি।

-“কত খারাপ দেখছস! হারামি ছেরি গেলই গা।” সিমি বলে।

-“এই নেও তোমার ম্যাগাজিন, যাও‌ গিয়ে কাজ করো । ওদের দেখলে তো আর আমাদের কাজ চলবে না।” নিধি বলে।

-“এটাই এখন আমার বড়ো কাজ। তার তো আর প্রতিদিন আমাদের হোটেলে আসে না।”
কথাটা বলেই মারিয়া হালকা মুখ বাকিয়ে চলে যায়। সিমি,নিধি ও দেরি না করে ওদের পকেট থেকে মাক্স বের করে পড়ে কাজ করতে শুরু করে।
.
.
রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওদের ডিল ফাইনাল করে বাসায় চলে আসে। সিমি,নিধি ওরা সন্ধ্যা ৬ টার সময় বাসায় আসে। তিন জন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । যা হয়েছে দুপুরে সেটা ভুলে যেতে চায়।
.
থ্রি গ্যাংস্টার হাউস…

গভীর রাত। তখন বারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট । রান্না ঘর থেকে মৃদ পায়ে হেঁটে হেঁটে ড্রইংরুমে এসে এদিক,সেদিন উঁকিঝুঁকি মারছে একটি অচেনা ছেলে। ড্রইংরুমের লাইট বন্ধ ছিল। ডিম লাইট জ্বালান থাকায় সবটা স্পষ্ট না বুঝা গেলেই হাতিয়ে হাতিয়ে ফ্রিজের কাছে এলো।

সাব্বির ওর রুমে উপুড় হয়ে শুনে ছিল। ব্যথার মেডিসিন খেয়ে আজকে খুব তাড়াতারি ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ পানি পিপাসা পেয়েছে তাই ঘুমটা খাটো হয়ে আসে,ওঠে বসে বিছানায় । ব্যাথার কারণে ঠিক মতো বসাটাও দায় হয়ে গেছে । জগ থেকে পানি ঢেলে খেতে নিলেই তখনি ড্রইংরুম থেকে দাদুর চিৎকারের আওয়াজ ভেশে আসে। পানি খাওয়ার দফারফা হয়ে যায় ওর। গ্লাস রেখেই বিছানা থেকে নেমে নিচে যেতে লাগলো। ততক্ষনে রুদ্র,শভ্র,অভ্র চিৎকার শুনে হাতে গান নিয়ে ওদের রুম‌ থেকে বের হয়। নিচে নেমে দেখে আলতাফ চৌধুরী তার হাতের লাঠিটি দিয়ে কাকে যেন মারছে। অভ্র ড্রইংরুমের লাইট অন করে। বাহির থেকে বডিগার্ড রা এসে দরজায় নক করছে। শুভ্র দরজা খুলে দেয়। লাইট জ্বালানোর কারণে চার দিক অন্ধকার কেটে গিয়ে আলোকিত হয়ে যায়। আলতাফ চৌধুরী তখনো সাব্বিরের পিঠে,কোমড়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করছিল। সাব্বির বেচারা তখনও চিৎকার করে বলছে ‘দাদু আর মেরো না গো,আমার পাছা নাই’ ।

-“চোরের বংশদর,তোকে আজকে শেষ করেই ফেলবো।” আলতাফ চৌধুরী বলছে আর লাঠি চালাচ্ছে সাব্বিরের পিঠে।

অভ্র আলতাফ চৌধুরীর লাঠিটা ধরে বলে,
-“দাদু,দাদু ভালো করে দেখো,এটা আমাদের সাব্বির । চোর না।”

আলতাফ চৌধুরী সান্ত হন। ভালো করে তাকিয়ে দেখে হ্যাঁ! এটা সাব্বির । আলতাফ চৌধুরী জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“ঐ হারামজাদা তুই এই জাগায় কেন? আমি তো ঐ চোর বেটাকে পিটাচ্ছিলাম।”

-“হ,,,,হাই রে ক,,কপাঁল মন্দ,চোখ থা,,,থাকিতেও তুমি কানা,অন্ধ দাদু।” কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে কোন রকম ওঠে দাঁড়ায়। বসতে পারবে না । পিঠ,কোমড়,ডাবনা লাঠির আঘাত খেতে খেতে ছেচাবেছা হয়ে গেছে।

-“কী বললি? আমি অন্ধ।” রেগে বলে আলতাফ চৌধুরী ।

-“তো আর কী কইতাম,চোরডারে না মাইরা তুমি আমার পিঠেই ঠেঙ্গা চালাইছো।” কান্না জড়িত কন্ঠে বলে সাব্বির ওর পিঠ দেখিয়ে বলে।

-“চোর! কোথায় চোর?” রুদ্র বলে।

-“এহানেই আছে ভাই। একটু খুঁইজা দেখো।” সাব্বির বলে।

-“গার্ডস।” অভ্র বডিগার্ড দের দিকে তাকায় । বাকিটা বুঝে যায় বডিগার্ড রা।

-“জ্বী স্যার আমরা খুঁজে দেখছি।”

বলেই বডিগার্ড রা খুঁজতে শুরু করল । তখনি রান্না ঘর থেকে একটি ছেলের কলার ধরে টেনে নিয়ে আসে বডিগার্ড দের মধ্যে একজন। ছেলেটির গায়ের জামা কাঁপড় ময়লা মাখানো। চুল গুলো উসকোখুসকো । মনে হচ্ছে এক মাসেও গোসল করে নি। ছেলেটি চিল্লিয়ে বলে,

-“মোরে ছাইরা দেন,মুই কিছু হরি(করি) নাই।”

বডিগার্ড ছেলেটিকে রুদ্র দের সামনে দাঁড় করায়। বডিগার্ড তখনো ছেলেটির কলাপ চেপে ধরে রেখেছিল। যাতে পালাতে না পারে।

সাব্বির দাঁত কটমট করে বলে,
-“দাদু তোমার ঠেঙ্গাটা দেও তো,ওরে কিছুক্ষণ ঠেঙ্গাইয়া লই। ওর জন্যই অন্ধার-কোন্ধার তোমার হাতে ঠেঙ্গার বারি খাইছি। ওরে আগে পিডাইয়া লই। হের পর কথা….।” তেড়ে গিয়ে সাব্বির আলতাফ চৌধুরীত কাছ থেকে লাঠি নিতে গেলে অভ্র বলে,
-“স্টপ সাব্বির ।”

সাব্বির থেমে যায়। শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“তুই কে? আমারদের বাড়ির ভিতরে কী করে আসলি? তুই জানিস এটা কার বাড়ি?”

ছেলেটি চুপ করে আছে। ওদের হাতের গান দেখে ছেলেটির অবস্থা খারাপ। কথা কেমনে বলবে!

অভ্র ধমক দিয়ে বলে,
-“কথা বলছিস না কেন?”

ছেলেটি কাপা কাপা কন্ঠে বলে,
-“মু….মু…মুই ফাহিম। পেশায় চোর।”

এইটুকু বলেই থেমে যায়।

-“ওরে হারামজাদা,তুই আইছস কইথিকা? তাও আবার আমাগো বাড়ি তুই চুরি করতে আইছস?” সাব্বির ওর শার্টের হাতা বোল্ড করতে করতে রাগী কন্ঠে বলে।

-“সাব্বির চুপ! এই তুই আমাদের বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলি কী করে? এত সিকুরিটিগার্ডস থাকতে?” রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করে।

-“স্যার মুই গাড়ির পিছনের ফিক্কির ভিতরে আছিলাম।”

-“ফিক্কি না ডিক্কি হইবো।” সাব্বির জোরে বলে।

-“হ এইটায় ঢুইকাছিলাম। ভাবছিলাম গাড়ি তো কোনো বাসায় যাইবই। হেই বাসায় গেলে মুই চুরি কইরা খাইতে পারমু। পারলে কিছু জিনিস চুরি……।” বাকি টা বলতে গিয়েও থেমে যায় ফাহিম।

-“হেতপর(তারপর)।” সাব্বির বলে।

-“হেরপর(তারপর) গাড়ি আহে বাসায়,মই চুপি চুপি গাড়ির ভেতর থেইকা নাইমা জানালা দিয়া রান্দন(রান্না) ঘরে ঢুইকা পড়ি। অপেক্ষায় আছিলাম কখন আপনারা ঘুমাইবার যাইবেন। যখন দেহি আপনারা ঘুমায়তে গেছেন তহনি আমি রান্দন(রান্না) ঘর থেকা বের হই। খিদার চোড়ে আগেই হাতাইয়া ফ্রিজের কাছে আহি। আর তখনি এই বুড়া দাদায় আইসা আমারে দেইখা হালায়। পলাইতে যাই মুই……..।”

ফাহিমকে থামিয়ে সাব্বির উত্তেজিত হয়ে বলে,
-“ক,ক হেরপর(তারপর) ঠেঙ্গানিডা আমি খাই।”

-“হ,দাদু ঠেঙ্গা জাগানোর আগেই আমি সইরা রান্দন(রান্না) ঘরের দিকে দৌঁড় দেই । হেরপর (তারপর) আননে মাইর খান।” মাথা নিচু করে বলে ফাহিম ।

-“দাদু,এহন(এখন) ঠেঙ্গাডা দেও,ওরে পিডাইয়া লই।” আলতাফ চৌধুরীর লাঠিতে হাত রেখে রাগী কন্ঠে বলে সাব্বির ।

রুদ্র চোখ রাঙিয়ে বলে,
-“সাব্বির!”

সাব্বির চুপ হয়ে যায়।

-“তুই জানিস এটা কার বাড়ি? কার বাড়িতে চুরি করার কথাটা ভেবেছিস জানিস।” শুভ্র বলে কিছুটা রাগী কন্ঠে ।

ফাহিম ফট করেই শুভ্রর পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-“ভাইজান মোতে মাফ কইরা দেন ভাইজান। মুই জানি না এটা কার বাড়ি। তবে মুই এইডা(এটা) বুঝতে হারছি(পেরেছি) আপনারা গ্যাংস্টিকার(গ্যাংস্টার) । মাফ কইরা দেন মোরে।”

-“কান্না বন্ধ কর। ওঠে দাঁড়া,ওঠে দাঁড়া বলছি।” ঝাঁড়ি দিয়ে বলে শুভ্র।

ফাহিম মাথা নিচু করে ওঠে দাঁড়ায় ।

রুদ্র বলে,
-“#Three_Gangsters নাম শুনেছিস?”

-“হয়,হুনছি(শুনেছি)।” আস্তে করে বলে ফাহিম ।

-“তুই এখন তাদের বাড়িতে আসিছ।”

কথাটা শুনা মাত্রই ফাহিম আবারও শুভ্রর পা জাপটিয়ে ধরে বলে,
-“ভুল হইয়া গেছে মোর,মাফ কইরা দেন। মুই জানতাম না এটা আপনাগো বাড়ি।” কান্না করতে করতে বলে ।

-“পা ছাড় বলছি । ওঠ!” জোরে ধমক দিয়ে বলে শুভ্র।

-“না আগে কন মাফ কইরা দিছেন আমারে ।”

-“ওঠে দাঁড়াবি নাকি গুলি করে দিবো।” রেগে বলে শুভ্র।

কথাটা শুনেই ফাহিম ওঠে দাঁড়ায়। তখনো মুখ থেকে মাফ করে দেন,এই কথাটা বলেই যাচ্ছে ফাহিম ।

রুদ্র বলে,
-“চুপ কর। আর কখনো চুরি করবি না বল?”

-“না আর কখনো চুরি করমু না।”

-“মনে থাকবে?” অভ্র বলে।

-“হয় স্যার, মনে থাকবো।”

-“তুই কোথায় থাকিস বল?” রুদ্র বলে।

-“স্যার,মোর কোনো বাড়ি ঘর নাই । মুই রাস্তায় রাস্তায় থাকি জন্মের পর থেইকা।”

-“তোর মা- বাবা নেই।”

-“আছে কিনা জানি না। যহন(যখন) হইতে জ্ঞান হইছে তখন হইতে হেগো(তাদের) দেহি(দেখি) নাই ।”

কথাটা শুনে সাব্বিরের খারাপ লাগে। আলতাফ চৌধুরীর কাছেও কিছুটা খারাপ লেগেছে।

-“সাব্বির! ও’কে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দে।”রুদ্র বলে ।

-“ভাই আমি একখান কথা কমু?” সাব্বির বলে।

-“বল।”

-“ভাই ফাহিম তো এতিম। ওরে আমাগো সাথে রাখলে কেমন হয়।”

আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরের কথা শুনে বলে,
-“সাব্বির ঠিক বলেছে রুদ্র। আমিও এটাই বলতাম তোদের।”

রুদ্র,শভ্র,অভ্র ফাহিমের দিকে ভালো করে তাকাল। চেহারা দেখে মনে হয় না কোনো খারাবি আছে।

অভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“দাদু তোমার যেটা মন চায়,যেটা কর।” বলেই অভ্র উপরে যেতে লাগলো।

রুদ্র,শুভ্র ওরা দু’জনও কিছু বলল না।

সাব্বির ফাহিমের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“আজ থেকে তুই আমার লগে থাকবি।”

ফাহিম সাব্বির কে ধরে কেঁদে দেয়। বলে,
-“ভাই আপনার ঋন আমি কী করে শোদ করমু? আজ থেকা আপনে মোর আপন ভাই। আর আপনে মোর আপনা(আপন) দাদু।”

-“হইছে কান্না থামা। আইচ্ছা যা তুই আজকে থেকা আমার বন্ধু,ভাই সব।” সাব্বির বলে।

ফাহিম খুশি হয় কথাটা শুনে । আলতাফ চৌধুরী বলে,
-“সাব্বির তোর ভাষাটা এখন তো ঠিক কর। তোকে দেখলে কেউ বুঝবে না তুই শিক্ষিত। এভাবে কথা বলা বন্ধ কর।”

-“দাদু আমার এভাবেই কথা বলতে বেশি ভালো লাগে। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আর এখন ফাহিমের সাথে মিলে আরো এই ভাষায় কথা কমু।”

-“তোর ইচ্ছে । এখন যা ফাহিম কে নিয়ে তোর ঘরে যা। আর ফাহিম কে তোর জামা কাঁপড় দিস ওর পরনের জামাটা প্রচণ্ড ময়লা। আর তখকার মারের জন্য স্যরি ।”

-“আরে ঠিক আছে দাদু। তয় মাইর গুলো কিন্তু জোরে ছিল।

আলতাফ চৌধুরী মৃদ হাসে।

-” ওই ফাহিম আয় চল ।”

সাব্বির ফাহিমের কাঁধে হাত রেখে ওর রুমে নিয়ে গেল। আলতাফ চৌধুরী দেখে মুচকি হাসল। টেবিলের উপর থেকে পানি খেয়ে তিনিও তার রুমে চলে গেলেন।

সকালে……

বডিগার্ড রা রুমের দরজা খুলে রিদয়কে খাবার দিতে এসে দেখে রিদয়ের লাশ রুমের পাখার সাথে ঝুলছে। তখনি কল দেয় রুদ্র কে।

রুদ্র খবটা শুনেই তৎক্ষণাত শুভ্র,অভ্র কে বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে গোডউনের দিকে । পৌঁছে রুমে ঢুকেই দেখে রিদয়ের লাশ ঝুলছে।

রুদ্র সেখানের মেইন বডিগার্ডের গালে কষে থাপ্পড় মারে। হুংকার দিয়ে বলে,
-“কোথায় ছিলে তোমরা? তোমাদের কী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল?”

-“সব কয়টা আহম্মকের দল।” শুভ্র বলে রাগী কন্ঠে ।

-“লাশ নিচে নামাও।” অভ্র ঝাঁড়ি দিয়ে বলে।

লাশ নিয়ে নামিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেয়। গলায় শিকল দিয়ে ফাস দেওয়ার কারণে রিদয়ের জিব্বা অর্ধেক মুখের বাহিরে বের হয়ে আছে।

-“লাশটি সিলেটে তালুকদারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা কর।” রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে।

-“ওকে স্যার।”

রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওরা অফিসে চলে আসে। কেবিনে বসে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।

-“ও’কে তিলে তিলে মারতে চেয়েছিলাম ।” রুদ্র বলে।

-“নিজে নিজের জান নিয়েছে। এক দিক থেকে ভালো হয়েছে ।” অভ্র বলে ।

-“তালুকদার কিন্তু এখন আমাদের ছেড়ে দিবে না। আমাদের আরো কড়া নজর রাখার দরকার ওর উপর।” শুভ্র কথাটা বলেই ওঠে দাঁড়ায় ।

-“হুম,ইনফরমার কে ভালো করে নজর রাখতে বলতে হবে।” রুদ্র চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে।

-“নেক্সট কে?” শুভ্র প্রশ্ন করে।

-“এ,সি,পি পলাস হাসান।” রুদ্র বলে গম্ভীর স্বরে।

সিলেট…

ছেলের লাশ বুকে জড়িয়ে একাদারে কেঁদে যাচ্ছে বিপলপ তালুকদার। কিছুক্ষণ আগেই একটি কালো গাড়ি বাড়ির সামনে এসে রিদয়ের মৃত দেখ ফেলেই চলে যায়। দাড়োয়ান এটা দেখে বিপলপ তালুকদার কে খবর দেয়। তিনি এসে ছেলের লাশ দেখে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়ে। কান্না করতে থাকেন । রিদয়কে পাওয়া গেছে শুনে পলাশ হাসানও দ্রুত চলে আসে তালুকদারের বাসায়। রিদয়ের মৃত দেহ দেখে তিনিও রিতিমত শকড হয়। বিপলপ তালুকদার কান্নার এক পর্যায় চোখ যায় ছেলের হাতের দিকে। রিদয়ের হাত মুঠ করা। সাদা সাদা কাগজের মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে । তিনি রিদয়ের লাশ মাটিতে শুইয়ে দিয়ে হাতের মুঠ খুলে বাজ করা কাজটি খুলে পড়ে,
“সঠিক পথে ফিরে আয় । নয়তো তোর মৃত্যুও তোর ছেলের মতোই হবে।” “থ্রি,জি”

চিরকুট টি হাতের মুঠোই দলা পাকিয়ে নেয়। কে মেরেছে রিদয়কে সেটা বুঝতে পারে বিপলপ তালুকদার। রাগে,ক্ষোপে জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“ছাড়বো না আমি তোদের, ছাড়বো না থ্রি,জি………।”
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……