Three Gangsters Love Part-06

0
3608

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_6.

আজকের সূর্যের তাপ মাত্রা একটু বেশিই বলে মনে হচ্ছে । ভ্যাপসা গরম চালিয়েছে।
আজ শুক্রবার বলে বন্ধের দিন দেখে রিমি,নিধি,সিমি তিন জনেই বাজার করতে এসেছে। গতকাল ওরা তিন জন স্যালারি পেয়েছে । তাই এই মাসের বাজার করতে বের হয়। শাক-সবজি কিনার পর মাছ বাজারে ঢুকতেই দেখা হয় সেদিনের মেলাতে দেখা হওয়া দাদুর সাথে। আজকে আলতাফ চৌধুরীর গেট আপ দেখে ওদের চিনতে একটু সময় লাগে। তারপর যখন ভালো করে পরিচয় দিল। তখন ওরা চিনতে পারে। সাথে সাব্বির,ফাহিমও ছিল। সাব্বিরকে দেখে ওরা আরো অবাক হয়। সব কথা খুলে বলতে চায় আলতাফ চৌধুরী । তাই ওদের কে একটি ক্যাফেতে নিয়ে আসে। আলতাফ চৌধুরী, সাব্বির, ফাহিম এক পাশে বসেছে,রিমি,নিধি,সিমি আরেক পাশে বসেছে। ফাহিম এদিক,সেদিক তাকাচ্ছে। আর সাব্বির সরু রাগ নিয়ে ওদের তিন জনের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আলতাফ চৌধুরী চুপ করে বসে নিরবতা পালন করছেন। কী দিয়ে প্রথম শুরু করবে বুঝতে পারছে না। রিমি,সিমি,নিধি ওদের বিরক্ত লাগছে। ডেকে এনে এবাবে চুপ করে বসে থাকার কোনো মানে হয় না। ওদের মাথায় প্যারা আছে বাসায় গিয়ে রান্না করতে হবে । তখন ঘড়িতে ১১ টা ছুঁই ছুঁই । কিছুক্ষণ পর আলতাফ চৌধুরী নিরবতা ভেঙ্গে বলে,
-“আসলে ব্যাপারটা হয়েছে কী? আমি আমার তিন নাতির জন্য মেয়ে খুঁজছিলাম। কিন্তু ভালো মেয়ে পাচ্ছিলাম না। তাই আমি ও আমার নাতি সাব্বির ছদ্মবেশে মেলায় গিয়েছিলাম । তারপর…. ।”

রিমি আলতাফ চৌধুরীকে থামিয়ে বলে,
-“ওয়েট দাদু! আপনারা আপনাদের গেট আপ কেন চেঞ্জ করেছিলেন? আর মেলাতেই বা মেয়ে খুঁজতে কেন গিয়েছিলন?”

আলতাফ চৌধুরী রিমির কথাটা শুনে কিছুটা বিব্রত হয়। তারপর বলে,
-“না আসলে কিছু কারণ ছিল,সেটা না হয় নাই বললাম। আর মেলায় তো মেয়ে খুঁজতে যাই নি। আমি আর সাব্বির মেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপর তোমাদের সাথে দেখা হয়।”

রিমি,সিমি,নিধি কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না। সিমি কিছুটা কুর্নিশ করে জিজ্ঞেস করে,
-“এতে ছদ্মবেশ নেওয়ার কী আছে দাদু?”

-“সেটা বাদ দেও। এখন মেইন কথায় আসি। তোমাদের প্রথম দিন দেখেই আমার ভালো লাগে। তাই আজ তোমাদের সাথে দেখা করতে আসি আমি।”

আলতাফ চৌধুরীর কথার মাঝে রিমি বলে,
-“দাদু আপনি কী করে জানলেন আমরা বাজারে আছি?”

এমন প্রশ্নে আলতাফ চৌধুরী সহ সাব্বির কিছুটা থমথম খেয়ে যায়। কাল রাতেই বডিগার্ড রা আলতাফ চৌধুরীকে রিমি,সিমি,নিধি দের বিষয় সব ডিটেইলস দেয়। ওদের বিষয় ভালো মন্তব্য করেন বডিগার্ড রা। যেটা শুনে আলতাফ চৌধুরী খুশি হয়। মনে মনে ডিসিশন নেয় ওদের তিন জনকে রুদ্র,শুভ্র,অভ্রর বউ বানাবে। কিন্তু তার আগে ওদের সাথে কথা বলতে হবে। তিনি বডিগার্ড দের বলে দেয় কাল ওদের সাথে দেখা করতে যাবে। সকালে অফিস বন্ধ থাকা শর্তেও রুদ্র,অভ্র,শুভ্র নতুন প্রজেক্টের বিষয় কথা বলার জন্য স্টাফ মিটিং ডাকে। তাই নয়টার দিকেই অফিসে চলে যায়। এই সুযোগে আলতাফ চৌধুরী বডিগার্ড দের সাথে নিয়ে ওদের বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ে। সাব্বিরকে যখন ওই মেয়ে তিন জনের কথা বলেছিল তখন সাব্বির কিছুটা রাগ দেখিয়ে ওদের বিষয় অনেক কথাই বলেছিল । কারণ,সাব্বির চায় না এই মেয়ে তিন জনকে ওর ভাইয়ের বউ বানাক। প্রথম দেখায় কেলানি খাইয়েছে। পরে কী করবে বুঝতেই পারছে সাব্বির । না আসতে চাইলে এক প্রকার জোরপূর্বক আলতাফ চৌধুরী নিয়ে আসে। সাব্বির যাওয়ার জন্য রাজি হওয়ার পর ফাহিমকেও সাথে নিয়ে নেয়। ওদের বাসায় এসে বাড়িয়ালার কাছে জানতে পারে ওরা বাজারে গিয়েছে । তাই সরাসরি বাজারে চলে আসে।

-“দাদু! কী হলো বলো?” সিমি কিছুটা জোরে কথাটা বললো।

আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরের দিকে তাকাল। সাব্বির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাহিরের দিকে তাকায়। আলতাফ চৌধুরী মনে মনে এঁকে নেয় কী বলবে,
-“আ..আমি ওদের নিয়ে বাজার করতে এসেছিলাম। তখনি দেখি তোমরাও বাজার করছো। তাই ভাবলাম এই সুযোগে আমার মনের কথাটি তোমাদের বলি। তার জন্য ক্যাফেতে নিয়ে আসলাম তোমাদের।”

সন্দেহ কাটেনি ওদের মনে। দাদুর কথা গুলো কেমন সন্দেহজনক লাগছে।

-“তোমার বাজারের ব্যাগ কোথায় দাদু?”

-“আ..আরে ব্যাগ তো নিয়ে আসি না। বাজারে এসে তারপর নতুন ব্যাগ কিনি।”মিনমিন করে বললো আলতাফ চৌধুরী ।

-“ওওও,আচ্ছা দাদু তোমার তিন নাতি কী করে? আর এরা দু’জন কে?” নিধি প্রশ্ন করে।

-“আমার তিন নাতি,আমার তিন নাতি..।” বলেই ভাবতে লাগলেন আলতাফ চৌধুরী ।

কপাল কুঁচকে তাকায় আলতাফ চৌধুরীর দিকে ওরা তিন জন। ফট করেই বললেন,
-“প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে। আর ওরা দু’জনও আমার নাতি। মোট পাঁচ জন নাতি আমার। কিন্তু ওরা দু’জন ওদের তিন জনের চেয়ে ছোট । ওদের বাবা-নেই। কোনো এক দুর্ঘটনায় তারা সবাই মারা গেছে। শুধু আমি ও আমার পাঁচ নাতি বেঁচে আছি।” কিছুটা মন খারাপ করে বললো।

-“থাক দাদু মন খারাপ কোরো না।” সান্তনা দিয়ে বলে সিমি।

-“আমরা আগেই ধারনা করেছিলাম এই সাব্বির কাকু বয়সে ছোট হবে।”রিমি বলে।

কথাটা শুনেই সাব্বির তেলেবেগুনে রেগে উঠে বলল,
-“সাব্বির কাকু কী? আমারে দেইখা কী সাব্বির কাকু মনে হয়?”

-“বলেছি পরেই রেগে ওঠেছেন তার মানে আপনি মেনে নিলেন যে আপনিই সত্যিই কাকু।” সিমি কথাটা বলেই মিটমিটিয়ে হাসছে । ওর সাথে রিমি,নিধিও হাসছে।

-“দেহেন,ভালো হইবো না কিন্তু যদি আরেকবার কাকু কন তো।” নাক ফুলিয়ে বলে সাব্বির ।

রিমি বলার আগেই আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ঝগড়া থামা সাব্বির।”তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি তোমাদের তিন জন কে আমার তিন নাতির নাতবউ করে নিতে চাই । প্লিজ তোমরা না কোরো না।”

কথাটা শুনেই রিতিমত সকড রিমি,সিমি,নিধি। মুখ কিছুটা হা হয়ে গেছে। ওদের মতো এতিমকে তার নাতবউ করে নিয়ে যাবে এটা শুনেই ওরা অবাক। ভাবতেই পারেনি এমনটা হবে। তাকে কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না।

আলতাফ চৌধুরী বুঝের মাধ্যমে আবার বলে,
-“আমি জানি তোমরা অবাক হচ্ছো । কিন্তু আমি সত্যিই বলছি। আমার তিন নাতির বউ করতে চাই তোমাদের। তোমরা আমাকে ফিরিয়ে দিও না । হ্যাঁ! আমি জানি অনেক মেয়েই আছে। কিন্তু আমার তোমাদের তিন জনকে ভালো লেগেছে । তাই আমি তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দিলাম।”

রিমি চোখ পিট পিট করে এদিক,সেদিক তাকিয়ে পরিস্থিতি সামলিয়ে বলে,
-“আমরা তিন জনে একটু একা কথা বলতে চাই।”

বলেই সিমি,নিধির হাত ধরে দূরে নিয়ে এলো।

-“এটা কী হচ্ছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না।” নিধি কিছুটা অবাক হয়ে বলে।

-“সেম,সেম।” সিমি বলে।

-“দেখ! দাদুকে দেখে মনে হয় কোনো বড়লোক ঘরের মানুষ। আমরা কিন্তু আগেই বলে রেখে ছিলাম বড়লোকের কোনো ছেলেকে বিয়ে করব না। তাই না করে দিলেই ভালো হয়।” রিমি বলে ।

-“না করে দিবো ঠিক আছে। তবে,তার আগে দাদুর তিন জন নাতিকে দেখে নিলে সমস্যা কী? আর আমরা কতদিনই বা এমন ভাবে নিজেরা কাজ করে খরচ বহন করবো। কোনো একটা ব্যবস্থা করতে তো হবে তাই না।” সিমি বলে।

-“তুই কী বলতে চাস সিমি?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে রিমি।

-“বলতে চাই! আগে সব কিছু দেখি,জানি খারাপ হলে না করে দেবো।”

-“তোর কথার মানে বুঝতে পেরেছি ।” নিধি বলে।

-“কী ভাবছিস রিমি? আমি কী ভুল বলেছি নাকি?” সিমি বলে।

-“না,আচ্ছা চল তাহলে। হুট করে হ্যাঁ বলবো না। আগে তাদের নাতিদের সাথে কথা+দেখা সাক্ষাত করবো তারপর ভালো লাগলে হ্যাঁ! বলবো।” রিমি বলে।

-“ওকে।”

ওরা তিন জন ফিরে এলো। চেয়ারে বসে আলতাফ চৌধুরীকে বলে,
-“তোমার কথায় রাজি আছি। কি……..।”

বাকিটা বলার আগেই রিমির কথার মাঝেই আলতাফ চৌধুরী ‘আলহাদুলিলাহ’ বলে। সাব্বিরের চেহারার রং পাল্টে যায়। ভাবতে পারেনি ওরা রাজি হয়ে যাবে।

-“তাহলে বলো। বিয়ে তারিক কবে ঠিক করবো? আমি যে শুভ কাজে দেরি করতে চাই না।” আলতাফ চৌধুরী খুশি মুডে বলে।

সাব্বির আলতাফ চৌধুরীর দিকে ট্যারা চোখে তাকায়। আর ফাহিম বোকার মতো তাদের কথা গিলছে।

-“দাঁড়াও দাদু,তার আগে আমাদের একটু সময় দেও। মানে আমি বলতে চাইছে যে আগে তোমাদের নাতিদের সাথে দু তিন দিন সয়ম কাঁটাই দেখি তারা কেমন তারপর না হয় বিয়ের তারিক ঠিক করবে।” রিমি বলে।

-“হ্যাঁ! এটা ঠিক বলেছো তুমি। ওয়েট আমি আমার নাতিদের ছবি দেখাচ্ছি।” কথাটা বলেই‌ তিনি তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি সাদা কাগজ বের করল। এটির মধ্যে যে ছবি আছে সেটা বুঝা যাচ্ছে । ওদের কছে এগিয়ে দিল।

ওরা প্রথমে লজ্জাবোধ করলেও পরক্ষণেই রিমি টেবিল থেকে কাগজটি হাতে উঠিয়ে নিয়ে ভেতর থেকে ছবি বের করতেই ‘আল্লাহ্’ বলেই ছবি টি টেবিলের উপর ফেলে দেয়। সমান তালে তিন জন কাপছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস টানছে। ওদের এমন অবস্থা দেখে সাব্বির তো খুশি। কিন্তু আলতাফ চৌধুরী কপাল কুঁচকে বলে,
-“কী হয়েছে? এমন করছো কেন তোমরা?”

-“দ,,দাদু এরা তো #Three_Gangsters এরা আপনার নাতি?আ…আমরা বিয়ে করতে পারবো না এদের।” কিছুটা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে রিমি।

-“আমরা তাদের প্রচণ্ড ভয় পাই। বিয়ে তো দূর ছায়াও আমরা ঢেঙাতে চাই না।” ভয় নিয়ে বলে সিমি।

-“এই বিয়ে আমরা করব না দাদু। তুমি তোমাদের নাতিদের জন্য অন্য মেয়ে দেখো।” সোজা ভাবে বলে দেয় নিধি।

আলতাফ চৌধুরী টেবিল থেকে ছবিটা হাতে উঠিয়ে একবার তাকিয়ে ‘ঠাসস’ করে সাব্বিরের গালে থাপ্পর মেরে রাগ দেখিয়ে বলে,
-“হারামজাদা,তোরে কত বার বলেছি আমার নাতি তিন জনের ছবি নিয়ে আসতে। আর তুই কি না এই গ্যাংস্টার দের ছবি নিয়ে আইছিস।”

একে তো থাপ্পড় খেয়ে সাব্বির আহম্মক হয়ে গেছে। তার উপর এখন আবার এমন কথা শুনে পুরাই বেকুপ হয়ে গেছে। আলতাফ চৌধুরীর কথা ঠিক বুঝতে পারছে না।

আলতাফ চৌধুরী জোর করে মুখে হাসির রেখা টেনে ছবিটা ছিড়ে ফেলে বলে,
-“এরা আমার নাতি না। আমার নাতি তো অন্য তিন জন। এই সাব্বির গাঁধায় ভুল করে আমার নাতিদের জাগায় এদের তিন জনের ছবি নিয়ে এসেছে।”

সাব্বির গালে হাত দিয়েই চোখ জোড়া বড়ো বড়ো করে আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকায়। শুধু সাব্বির না ফাহিমও এখন রিতিমত অবাক। আলতাফ চৌধুরী সাব্বির ও ফাহিমের চেহারার দেখে বুঝতে পারে ধরা পড়তে সময় নেই। তাই ওদের উদ্দেশ্যে বলে,
-“সাব্বির,ফাহিম তোরা গিয়ে খাবার অর্ডার করে আয় যা।” ওদের আগোচড়ে সাব্বিরকে চোখ টিপ দিয়ে বলে।

সাব্বির বুঝতে পেরে ফাহিমকে নিয়ে ওঠে যায়।

আলতাফ চৌধুরী হালকা কেশে বলে,
-“আসলে সাব্বির ছোট্ট থেকেই ওদের মানে ওই থ্রি গ্যাংস্টার দের বড় ফ্যান। ওর কাছে তাদের অনেক ছবি আছে। সাব্বির তো ওর তিন ভাইকে তিন গ্যাংস্টার মনে করে। কারণ,তাদের দেখতে কিছুটা আমার নাতি দের মতোই। তাই।”

রিমি,সিমি,নিধি কথাটা শুনে স্বাভাবিক হয়। এতক্ষন কলিজা বের হয়ে আসার উপক্রম হয়েছিল। সরু নিঃশ্বাস টেনে রিমি বলে,
-“তাদের নাম কী দাদু?”

-“কাদের?”

-“তোমার তিন নাতি তিন জনের।”

আলতাফ চৌধুরী কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। এখন কী নাম বলবে? মাথায় আসছে না কোনো নাম। উপরে পাখা চলার শর্তেও ঘামছেন তিনি।

-“কী হলো দাদু?” প্রশ্ন করে সিমি।

আলতাফ চৌধুরী মুখে হাসির রেখা টেনে উত্তর দেয়,
-“না কিছু না।”

-“শরীর খারাপ লাগছে দাদু?” রিমি বলে।

-“নাহ! ও হ্যাঁ! তোমরা নাম জিজ্ঞেস করছিলে। ওদের নাম হচ্ছে ওমর আহমেদ,নীল আহমেদ, রাফি আহমেদ ।”

রিমি,নিধি,সিমি মনে মনে নাম গুলো আওড়াচ্ছে,ওমর,নীল,রাফি।

কিছুক্ষণ পর সাব্বির হালকা নাস্তা নিয়ে আসে। খেতে খেতে আরো অনেক কথা হয় ওমর,রাফি,নীল এর বিষয় । ওদের সাথে কথা বলে আলতাফ চৌধুরী এই টুকু বুঝতে পারে ওরা বড়লোক ঘরের ছেলেদের পছন্দ করে না। তাদের ঘরের বউ হবারও কোনো ইচ্ছে ওদের নেই। আর পাঁচ-দশ মিনিট কথা বলে ওরা ওদের বাসায় চলে আসে। আলতাফ চৌধুরী তিনিও বাসায় চলে আসেন। আলতাফ চৌধুরী আসার আগে ওদের বলে দেয় পরশুদিন ওদের সাথে এই ক্যাফেতে বিকের তিনটের দিকে দেখা করতে আসবে ওনার তিন নাতি। ওরাও হ্যাঁ! বলে দেয়।

থ্রি গ্যাংস্টার হাউস…….

এগারোটা ত্রিশ মিনিটে রুদ্র,শুভ্র,অভ্র বাসায় চলে আসে। এসে আলতাফ চৌধুরী,সাব্বির,ফাহিম দের দেখতে পায় না। ওদের না বলে যাওয়ার কারণে রাগ হয় কিছুটা। বাসায় প্রবেশ করার সাথে সাথেই ওরা প্রশ্ন করে কোথায় গিয়েছিল?
আলতাফ চৌধুরী আরাম করে সোফায় বসে পড়েন। ওদের প্রশ্ন শুনেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করলেন না। চেহারায় ছিল খুশির জলক।

-“দাদু,কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে।” রুদ্র কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে।

-“বোস,সব বলছি তোদের।” আলতাফ চৌধুরীর কথায় ওরা তিন জন বসে পড়ে ।

আলতাফ চৌধুরী খুশি মাখা মুডে বলেন,
-“তোদের জন্য মেয়ে ঠিক করেছি।”

কথাটা শুনে ওরা বেশ বিরক্ত হলো। চেহারায় ফুটে ওঠে বিরক্ত ভাব।
আলতাফ চৌধুরী বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে এটা। বলে,
-“ওদের সাথে কথা বলার জন্যই বাহিরে গিয়েছিলাম ।”

-“দাদু তুমি যানো বাহিরের পরিস্থিতি ভালো না। কেন বাহিরে যাও?” কিছুটা রাগ নিয়ে বলে অভ্র।

-“জানি এখন আমার কথা শোন মন দিয়ে।”

-“বলো।” শুভ্র বিরক্তি নিয়ে বলে।

আলতাফ চৌধুরী তার ফোন থেকে নিধি,রিমি, সিমি ওদের ছবি বের করে রুদ্রের হাতে দিয়ে বলে,
-“মেয়ের ছবি দেখো। আমি শিওর তোমাদের পছন্দ হবে।”

রুদ্র,অভ্র,শুভ্র এক রাশ বিরক্ত নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। ওদের কাছে মুখ গুলো কেমন চেনা চেনা লাগছে। মাথায় জোর দিতেই মনে পড়ে যায় সেদিনের হোটেলের কথা। তবে তখন কার আর এখন কার ছবির মধ্যে পার্থক্য আছে । হিজাব বাঁধা ছিল মাথায়। একি রঙের থ্রিপিস । হালকা সাজে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল ওদের। রুদ্র ছবিটা জুম করে রিমির ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এই মেয়েটাকে আমি চিনি।”

রুদ্রের কথা শুনে শভ্র বলে,
-“আমিও ওর পাশের মেয়েটিকে চিনি।”

অভ্র ওদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে বলে,
-“ওদের পাশের মেয়েটিকে আমিও চিনি।”

আলতাফ চৌধুরী এবার অনেকটায় অবাক হয়। তার সাথে সাব্বির ও ফাহিম। আলতাফ চৌধুরী কঁপাল বাজ করে বলে,
-“কিভাবে চিনো? কোথায় দেখেছো ওদের? আগে কী ওদের সাথে দেখা হয়েছিল তোমাদের? ”

-“দেখা বলতে….।” রুদ্র সেদিনের হোটেলের ঘটনা বলে। রুদ্রের বলা শেষ হলে অভ্র বলে। অভ্রের বলা শেষে শুভ্র বলে। আলতাফ চৌধুরী হেসে দিলেন ওদের কথা শুনে। মুখে হাসি রেখে বলে,
-“মেয়ে তিন জন দেখছি বারি দুষ্ট। যাক ভালো হয়েছে । এখন আমার কথা তোমরা মন নিয়ে শোনো।”

-“বলো।” বলেই রুদ্র সোফায় হেলান দিল।

-“ওদের সাথে তোমরা পরশুদিন দেখা করতে যাবে।”

-“হোয়াট?” কিছুটা অবাক হয়ে বলে রুদ্র।

-“হোয়াই দাদু?” শুভ্র বলে।

-“কথা আমার শেষ হয়নি। কথা শেষ করি তারপর তোমরা কথা বলবে।” কিছুটা কটু স্বরে বলে।

-“আচ্ছা বলো ।” অভ্র বলে।

-“ওরা তোমাদের তিন জন কে যমের মতো ভয় পায়। ওদের যখন আমি তোমাদের ছবি দেখিয়েছি তখন ওরা অনেক ভয় পেয়েছে। কারণ,‌ওরা জানে তোমরা #Three_Gangsters‌.তোমাদের আসল নামটাও জানে ওরা। তাই আমি চাই ওদের কাছে তোমাদের পরিচয়টা গোপন থাক।”

আলতাফ চৌধুরীর কথার মাঝেই অভ্র বলে,
-“ওয়েট দাদু,তুমি বলতে চাইছো যে আমরা তিন জন ওদের কে বিয়ে করি,তাও আবার আমাদের আসল পরিচয় গোপন করে।”

-“রাইট!”

-“বাট কেন দাদু? ওরা আমাদের ভয় পায় তো ভয় পেতে দেও না। ওদেরকে বিয়ে করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই?” শুভ্র স্থির হয়ে বলে।

-“ওদেরকেই বিয়ে করতে হবে। কারণ,না আমি ওদের মাঝে কোনো হিংসা,রাগ,অহংকার দেখেছি। না লোভ। কোনোটাই ওদের মাঝে নেই। মেয়ে তিন জন এতিম।”

-“দাদু,দাদু এটা কিভাবে হয় বলো? পরিচয় গোপন করে বিয়ে। হাউ ইট’স পসিবল?” রুদ্র বলে।

-“পসিবল! বিয়ের পর আমি নিজে ওদের কে সব সত্যিই টা খুলে বলবো।”

-“বুঝতে পারছি না মেয়ের কী অভাব পড়েছে নাকি? তুমি ওদের সাথেই কেন বিয়ে দিতে চাইছো?” শুভ্র বলে।

-“হ্যাঁ! অভাব পড়েছে। ওদের মতো মেয়ের অনেক অভাব। এমন মেয়ে খুঁজে পাবে না । ওদের বিষয় আমি খোঁজ লাগিয়েছি। অনেক ভালো ওরা।”

-“এই বিয়ে করতে পারবো না আমরা।” রুদ্র কড়া গলায় বলে।

-“অন্য মেয়ে দেখো তুমি। ওদের কে আমরা বিয়ে করতে পারব না।”

নিমিষেই আলতাফ চৌধুরীর মন খারাপ হয়ে যায়। মনিল মুখে বলেন,
-“আমার কথা কেন শুনবি? আমি তোদের কে হই! সামান্য দাদু। মম-ড্যাড হলে যদি বলতো । তাহলে তাদের কথা ঠিকিই শুনতি।”

-“শুরু হইছে বুড়োর ইমোশনাল ব্লাকমেইল।” মনে মনে বলে সাব্বির ।

-“দাদু! এভাবে বলছো কেন? ” কিছুটা রাগ নিয়ে বলে অভ্র।

-“ঠিকিই বলেছি আমি । বিয়ে করতে হবে না তোদের। এবাবেই থাক তোরা।” কথাটা বলেই লাঠি ভর দিয়ে ওঠে চলে যেতে নিলে শুভ্র বলে,
-“দাদু আমরা বিয়েতে রাজি আছি। আমরা ওদের কে বিয়ে করব।”

-“হ্যাঁ! দাদু আমরা বিয়েতে রাজি আছি।”অভ্র বলে।

আলতাফ চৌধুরী খুশি হয়ে আগের ন্যায় সোফায় বসে পড়লেন। মুখে হাসি এঁকে বলেন,
-“সত্যিই বলছিস?”

শুভ্র উত্তর দেয়,
-“হ্যাঁ ।”

-“কিন্তু দাদু ওরা আমাদের দেখেছে। আমাদের বিষয় জানে! আমরা কিভাবে ওদের সাথে দেখা করব?” রুদ্র বলে।

-“ওরা আমাদের কে চিনে ফেলবে ।” অভ্র বলে।

আলতাফ চৌধুরী হাসে। বলে,
-“তার ব্যবস্থা আমি করব। যাতে ওরা তোমাদের চিনতে না পারে। ”

-“কী করবে তুমি দাদু?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে রুদ্র।

-“সেটা পরশু দিনই দেখতে পারবে।” মুচকি হেসে বলে আলতাফ চৌধুরী । সাব্বির চোখ ছোট ছোট করে আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকায় । হয়তো সাব্বির বুঝতে পেরেছে আলতাফ চৌধুরী কী করতে চাইছে বা বলতে!
__________________________

-“আচ্ছা নিধি আমরা কী ঠিক করেছি?” রিমি চুলায় তরকারি নাড়তে নাড়তে বলে।

-“কোনটার কথা বলছিস!” পিয়াজ কাঁটতে কাঁটতে উত্তর দেয় সিমি।

-“মেবি বিয়ের,আই মিন দেখা করার কথা বলছে রিমি ।” মাছ ধুতে ধুতে বলে নিধি ।

-“হ্যাঁ! দেখা করার কথাই বলছি আমি।”

-“দেখি না,আমাদের কপালে কী আছে।” সিমি বলে।

-“আমাদের লাইফ! ডিসিশন তো আমাদেরি নিতে হবে তাই না।”নিধি বলে।

-“হুম,আচ্ছা পশশু দিন কী ছুটি নিবি?” রিমি বলে।

-“নিলে ভালো হয়,কী বলিস নিধি? ”

-“হুম।”

-“তাহলে আমিও ছুটি নেবো।”

-“হ্যাঁ তাই করিস রিমি।”
.
.
.
বিপলপ তালুকদার তার ছেলের মৃত্যুর শোকে পাথর হয়ে আছেন। তার উপর এখন আবার তার লোকদের কাছ থেকে বলা খবরটা শুনে ভীষন রেগে আছেন। রুদ্রদের পিছনে লোক ঠিক করার জন্য সিলেট থেকে ১০ জন লোক পাঠিয়েছিল ঢাকার উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ আগেই‌ ১০ জনের মৃত দেহ সিলেটে ফেরৎ আসে। ওরা চ্যালেঞ্জ করছে, ঢাকায় পা রাখা মানেই মৃত্যুকে ডেকে আনা। পলাশ হাসার সবটা জানার শর্তেও কোনো প্রকার একশন নিতে পারছে না। আর নিবেই বা কী করে? তাদের পাওয়ার সম্পর্কে সব কিছুই তার জানা। বসে বসে বিপলপ তালুকদার কে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় তার কাছে নেই।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……

আগের ওমর,রাফি,নীল কে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। তো কেমন লাগলো?