#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_8.
কড়া রোদ্দ। তার উপরে গরমও পড়েছে আজ। জ্যামের কারনে হোটেলে এসে পৌঁছাতে অনেকটা সময় লেগে যায় নিধি ও সিমির। এর মধ্যে রাফিদের সাথে ওদের আর কথা হয়নি। রিমিও ওর কর্মস্থলে এসে বসে রয়। আজ তেমন একটা কাজ নেই। চেয়ারে বসে গালে হাত রেখে ঝিমোচ্ছে। ভাবছে মানুষদের কী বিয়ে-টিয়ে করা বন্ধ হয়ে গেল নাকি । ইদানিং দেখছি বিয়ের চেয়ে খুৎবার অনুষ্ঠান টাই বেশি হচ্ছে । গালে হাত দিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই রিমির ফোনটা বেজে ওঠে। ঝিমোনিটা কমে আসে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে সিমি কল দিয়েছে। কানে দিয়ে হাই তুলে বলে,
-“হুম বল সিম?”
-“তুই আজকে কী তাড়াতারি বাসায় যেতে পারবি?”
-“কেন?”
-“আমাদের আজ বের হতে লেট হবে । তাই বলছিলাম,তুই যদি তাড়াতারি বের হতি।”
-“চাপা-চাপি নিস না! তাড়াতারি বের হমু নে। রান্না আমিই করে রাখব নে।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে! এই জন্যই কল দিছিলাম। রাখি তাহলে।”
-“আইচ্ছা ।”
ফোন কেটে দেয়। রিমি আবারও আগের মতো গালে হাত দিয়ে ঝিমোতে শুরু করে।
থ্রি গ্যাংস্টার হাউস…..
ফাহিম সাব্বিরের ডায়েরীটা নিয়ে কী যেনো লিখছে। আর সাব্বির ড্রইংরুমের সোফায় বসে আলতাফ চৌধুরীর পা মালিশ করে দিচ্ছে। ওরা তিন জন অফিসে। কিছুক্ষণ পর সাব্বির চিল্লিয়ে ফাহিমকে ডাকতে লাগলো। ফাহিম রুমে বসেই হু,হা জবাব দিয়ে আবার আঁকি-বকিতে মন দেয়।
সাব্বির ডাকতে ডাকতে এক পর্যায় রেগেমেগে রুমে আসে। ফাহিমের মাথায় ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“ওই ফাহিম্মা! তুই কী এই জাগায় খুঁটি কুপছস? ডাকতাছি শুনস না।”
-“ভাই মুই বাজি আছি! তাই সেনা উত্তর দিতাছিনা।”
সাব্বির চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বলে,
-“বাজি?”
পরক্ষণেই মাথা এদিক,সেদিন দুলিয়ে বলে,
-“বাজি নারে! বিজি,বিজি হবে।”
-“ওই বিজি আর বাজি একি!”
-“এক না গাঁধা।”
-“ভাই মোরে ডিসটাপিং কইরেন না । আঁকতে দেন।”
সাব্বির সরু রাগ দেখিয়ে বলে,
-“ওই তুই ইংলিশ কবি না।”
-“ক্যা?”
-“ডিসটাপিং কী হ্যাঁ! ওটা ডিস্টার্ব হবে।”
-“ওই একি! তুমি এহন যাও ভাই। মোরে আঁকতে দেও ।”
-“আঁকিস কোন মাথা?” বিরক্তি নিয়ে বলে সাব্বির ।
-“ঠিক ধরছো ভাই। আজকে মুই তোমাগো কল্লা(মাথা) আঁকমু। কালকে বডি আঁকমু। এক দিনে কী সব আঁকা যায় কও।”
-“দেখি,দেখি!”
-“না ভাই এহন না। কালকে দেহামুনে।”
সাব্বির চলে যেতে নিলে ফাহিম বলে,
-“ভাই গোয়িং কাহা?”
ভ্রু কুঁচকে বলে সাব্বির,
-“গোয়িং কাহা মানে?”
-“আরে তুমি কই যাইতাসো?”
সাব্বির রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-“তুই ইংলিশ কবি না। তোর ইংলিশ হয় না।”
-“এহহহ! মুই যেই সুন্দর ইংলিশ কই। ওই ছকিনার মায়েও এত সুন্দর ইংলিশ কয় না ।”
-“ছকিনার মা?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। সাব্বির ।
-“তুমি চিনতা না।”
সাব্বির কিছু বলল না। যাওয়ার আগে বলে যায়,
-“ডায়েরীটা জাগা মতো রেখে দিস।”
-“অক্কে!”
-“তোরে!”
-“মোরে কী ভাই? একছের ভাল্লাগে?” দাঁত বের করে বলে।
-“হয় জম্মের!” দাঁত কটমট করে বলেই চলে যায় সাব্বির ।”
.
.
.
সন্ধ্যার দিকে রিমি,সিমি,নিধি এক সাথে বাড়ি ফিরছিল। রিমি কাজ নেই বলার পর পরি একটি বিয়ে ডেকোরেশনের কাজ আসে। তারপর সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাসায় যেতে পারে না। আর গলির মধ্যে রিকশারও আজ অভাব দেখছে রিমি রা। রিকশা ছাড়াই হেঁটে হেঁটে বাড়ির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। মাথায় টেনশন! বাসায় গিয়ে রান্না করতে হবে । তিন জনিই একি সাথে পা চালিয়ে হাঁটছে। হঠাৎ-ই কোথা থেকে একজন লোক হুড়মুড় করে ওদের তিনজনার মাঝখান দিয়ে ঢুকে পায়ের সামনে লুটিয়ে পড়ে। চমকে ওঠে ওরা দূরে সরে যায়। লোকটির ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় । চেহারার অনেক অংশ কেঁটেই রক্ত বের হচ্ছে । রিমি,সিমি,নিধি লোকটির কাছ থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে বিস্ময় । লোকটির এই অবস্থা কে করলো? কেনই বা লোক টিকে এভাবে মেরেছে? ভাবছে ওরা তিনজন। লোকটি মাঠিতে শুয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল। ওদের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে কিছু একটা বলতে লাগলো। আর তখনি লম্বা, মোটাসোটা তিন জন কালো পোশাক পড়া লোক এসে লোকটির সামনে দাঁড়ায়। লোকটি তাদের তিন জন কে দেখেই আৎকে ওঠে। চেহারায় স্পষ্ট ভয় দেখতে পাচ্ছে লোকটির । লোক তিন জনের মধ্যে একজন নিধি,সিমির,দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর লোকটির শার্টের কলার ধরে টেনে হিচড়ে লোকটিকে নিয়ে যেতে লাগলো। লোকটি জোরে জোরে চিৎকার করছে। বার বার তাকে ছেড়ে দিতে বলছে। কিন্তু লোকটির চিৎকার মনে হয়না তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছেছে । সাদা রঙের একটি মাইক্রোতে উঠিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিমিষেই সেখান থেকে আড়াল হয়ে যায়। রিমি,সিমি,নিধির ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। কাঁপারি কথা! একজন মানুষকে চোখের সামনে এভাবে মেরে রক্তাত করেছে। দেখে যে কারো কষ্ট,ভয় লাগবেই। আশে পাশের মানুষ রা স্বাভাবিক ভাবেই হাঁটা চলা করছে। যেনো দেখে মনে হচ্ছে এখানে কিছুই হইনি। সিমি কাপা কাপা কন্ঠে বলে,
-“রি…রি..রিমি! নি…নিধি! চল ।”
রিমি উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“তোরা দেখেছিস ওই লোক গুলোর পরনের কোটটায় থ্রি,জি লেখা ছিল।”
-“হ্যাঁ! কিন্তু এটার মানে কী? এরা কারা?” নিধি প্রশ্ন করে ভয়ে ভয়ে ।
-“থ্রি,জি মানে থ্রি গ্যাংস্টার । এরা #Three_Gangster এর লোক।” রিমি বলে।
মুখ কিছুটা হা হয়ে সিমি,নিধির। ভয় জড়িত কন্ঠে সিমি বলে,
-“তু…তুই কী করে বুঝলি রিমি?”
-“সেদিন আমি যখন হোটের থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন ওই তিন জন লোককেই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি । পরনে এই একি পোশাক ছিল । আর পাশে থ্রি,জি লেখাটাও ছিল। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মাথায় জোর খাটাই। থ্রি,জি মানে কী? পরক্ষণেই মনে পড়ে #Three_Gangster দের কথা। থ্রি,জি’র মানে এটাই হবে।” এই টুকু বলে রিমি থেমে যায়।
-“চল,চল। এখান থেকে চল।” ভয়ে তাড়া দিয়ে বলে নিধি।
-“হ্যাঁ! চল হাঁটতে থাকি। খুব ভয় করছে আমার। তারা এতটা ভয়ংকর তা যানা ছিল না।” সিমি বলে।
তিন জনে হাঁটছে আর কথা বলছে।
-“কিভাবে মারলো লোকটিকে দেখেছিস।” রিমি বলে।
-“ভয় করছে আমার। ভালো হয়েছে সেদিন তাদের রুম থেকে পালিয়ে এসেছি। আর নয়তো মেরেই দিত।” নিধি গলায় হাত রেখে বল।
-“আচ্ছা,এসব কথা এখন এক পাশে রাখ। কালকের কথা মনে আছে তো?” নিধি বলে।
-“কালকে! ও হ্যাঁ! ওই বলদ তিন জনের সাথে দেখা করার দিন।” এক গাল হেসে বলে রিমি ।
-“আচ্ছা,তোদের কী পছন্দ হয়েছে ওদের?” সিমি প্রশ্ন করে।
-“সেটা পরে কমু নে। এখন বাসায় চল তাড়াতারি ।” বলেই আরো জোরে জোরে হাঁটতে লাগলো রিমি ।
___________________________
একটি স্ট্রেচারের উপর শুয়ে আছে পলাশ হাসান। কারেন্টের তার হাতে-পায়ে প্যাঁচানো। সেই তিন জন বডিগার্ড দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে। পলাশ হাসানের মুখ বাঁধাছিল। শুধু গোঙ্গানির আওয়াজ বের হচ্ছে মুখ থেকে। হয়তো বলতে চাইছে ‘আমাগে ছেড়ে দেও’। রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল রুদ্র,শুভ্র,অভ্র। চোখে,মুখে রাগের আভা। প্রচন্ড রেগে আছে তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে । তিন জন একে একে সোফায় বসে পড়ে। রুদ্র তীক্ষ্ণস্বরে বলে,
-“স্টার্ট! ”
বলার সাথে সাথে কারেন্টের সুইচ চাপ দিল একজন বডিগার্ড । পলাশ হাসান হাত মুঠ করে জোরে জোরে দুলতে লাগলো। পুরো শরীর তার কেঁপে ওঠছে। পা এদিক,সেদিক নড়াচরা করছে। মুখ থেকে গোঙ্গানির আওয়াজ আরো জোরে জোরে বের হচ্ছে ।
অভ্র গম্ভীরস্বরে বলে,
-“স্টপ!”
সুইচ বন্ধ করে দেয় বডিগার্ড । গোঙ্গানির আওয়াজ কমে যায়। শরীরের ঝাকুনিও কমে আসে পলাশ হাসানের।
শুভ্র ওর হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
-“স্টার্ট!”
বডিগার্ড আবার সুইচ চালিয়ে দেয়। আবারও শরীর জোরে জোরে ঝাকতে শুরু করে পলাশ হাসানের। কিছুক্ষণ পর আবার বন্ধ করতে বলে। পরে আবার চালাতে বলে। পলাশ হাসানের শরীর দূর্বল হয়ে গেছে। এখন মুখ থেকে শব্দও আসছে না। এরকম আরো দু বার করার পর রুদ্র সোফা থেকে ওঠে দাঁড়ায়। বডিগার্ড তিনজন পাশে সরে যায়। হেঁটে পলাশ হাসানের চেহারার সামনে ঝুঁকে। পলাশ হাসান মিটমিট করে চোখ মেলে তাকায় । চোখ জোড়া তার ক্রমশে বন্ধ হয়ে আসছে । রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে তীক্ষ্ণস্বরে বলে,
-“হাউ ডু ইউ ফিল মি.পলাশ হাসান?”
চোখ জোড়া মেলতেও যেনো কষ্ট হচ্ছে তার। কোনো রকম চোখের পাতা খোলা রেখে রুদ্রের দিকে তাকায়। রুদ্র আবার বলে,
-“যখন তুই ওই নিরিহ মানুষের ধরে নিয়ে এসে এমন ভাবে টর্চার করে মিথ্যে কেস ফাইল করিস তাদের নামে। বড় বড় নেতাদের বাঁচানোর জন্য। তখন তাদেরও তোর চেয়ে আরো দ্বিগুন কষ্ট হয়। এটা তো কিছুই না। তোকে আরো সহ্য করতে হবে। তিলে তিলে! একটু একটু করে মরবি তুই।” কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
অভ্র বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে যায় “ক্যারি অন” । আগের মতো কারেন্টের শট দিতে শুরু করে বডিগার্ড রা।
থ্রি গ্যাংস্টার হাউস…….
আলতাফ চৌধুরী,সাব্বির ড্রইংরুমে বসে আছে। তখনি রুদ্র,অভ্র,শুভ্র রা ড্রইংরুমে প্রবেশ করে। রাত তখন নয়টা । রুদ্র ওর গায়ের কোট খুলে সোফার উপর রেখে মাথাটা হেলান দেয়। অভ্র পায়ের জুতো খুলছে। শুভ্র শার্টের বোতাম তিনটি খুলে সোফায় হেলান দেয়। আলতাফ চৌধুরী ওদের উদ্দেশ্যে বলে,
-“নিজেদের রুমে গিয়ে রেস্ট নেও। তোমরা অনেক টায়ার্ড।”
রুদ্র ছোট করে বলে,
-“হু।”
-“এ,সি,পি’র কী খবর?” আলতাফ চৌধুরী প্রশ্ন করে।
-“মারিনি এখনো। জীবিত আছে।”অভ্র উত্তর দেয়।
-“এত সহজে ও’কে মারবে না। কষ্ট দিয়ে মারবে ও’কে।”
-“হুম। বাট দাদু আমার মনে হয়। ওদের চেয়েও আমাদের আরো একজন বড় শত্রু আছে। কে? সেটা বুঝতে পারছি না।” কিছুটা কনফিউজড হয়ে বলে শুভ্র।
-“যদি থাকে। তাহলে নিশ্চয় সে তোমাদের সামনে আসবে! ধৈর্য ধরো।” আলতাফ চৌধুরী বলে ।
-“দেখা যাক।” রুদ্র বলে।
-“এসব কথা ছাড়ো! কাল কিন্তু তোমাদের রমনা পার্কে যেতে হবে ওদের সাথে দেখা করতে।”
মুহূর্তেই চেহারায় বিরক্তি এসে পড়ে ওদের তিন জনের। কথা বলার রুচি যেনো নষ্ট হয়ে গেছে।
-“কিছু বলছো না কেন?” আলতাফ চৌধুরী প্রশ্ন করে ।
-“আমার কিছু বলার নেই!” বলেই চলে যায় রুদ্র।
-“আমারও।” শুভ্র বলে সোফা থেকে ওঠে দাঁড়ায়।
-“সেম!” অভ্রও চলে আসে ওর রুমে।
সাব্বির দাঁত কেলিয়ে বলে,
-“ভাইরা মনে হয় নিধি,সিম,ডিম গো পছন্দ করেনি। আমি বলিকি তাদের কে বাদ দিয়ে অন্য মাইয়া দেখো দাদু।”
-“চুপ শালা।” হাতের লাঠিটা দিয়ে সাব্বিরকে খোঁচা দিয়ে বলে ।
-“ওক্কে দুলাভাই।” বলেই সাব্বির হেসে দেয়। আলতাফ চৌধুরীও হাসে।
তখনি ফাহিম ড্রইংরুমে এসে তাদের হাসি দেখে বলে,
-“ভাই হাসো ক্যা? কী হইছে? মোরে কও।”
-“হি হি হি….কমু না।” বলেই ভাটালি হাসি দিয়ে চলে যায় সাব্বির ।
ফাহিম বেকুব হয়ে যায়।
.
রুদ্র শাওয়ার সেরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়।আয়নায় চোখ পড়তেই তখনি ওর চোখের সামনে সেদিনের রিমিকে দেখার দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠে। আরো মনে পড়ে সেদিনের সেই ক্যাফেতে কথা বলার দৃশ্য । আনমনে হেসে দেয়।
অভ্র মাথার চুল ভেজা গুলো হাত দিয়ে নাড়ছিল। বিছানায় বসতেই নিধির কথা মনে পড়ে। কিভাবে সেদিন ও’কে বোকা বানাল। তাও আবার তেলাপোকার কথা বলে। মুখে হাসি ফুটে ওঠে অভ্রের।
হেয়ার ড্রাই মেসিং দিয়ে চুল শুখাচ্ছিল শুভ্র। মেসিংটা রেখে চুলে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতেই সিমির কথা মনে পড়ে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে হঠাৎ চোখ পড়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে। একটি মেয়ে মুড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। শুভ্র এটা দেখে ধীরে পায়ে ওর পিছনে এসে দাঁড়ায়। তখনো মেয়েটির খেয়াল ছিল না ওর পিছনে কেউ আছে। পিছনে ঘুরতেই ওর সাথে ধাক্কা লাগে । তখনকার মেয়েটির চেহারার কথা মনে পড়তেই হেসে দেয় শুভ্র।
.
.
.
বিছানা ঠিক করে শুয়ে শুয়ে কথা বলছে তিন বান্ধবি। কথা বলার এক পর্যায় ওরা ঘুমিয়ে যায়।
সকালে এক সাথে কাজে বের হয়। তারপর তিনটের দিকে রমনা পার্কের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। দুপুরের খাবার বাহিরে খেয়ে নেয়। বাসায় গিয়ে পার্কে আসতে দেরি হবে বিধায় সেখান থেকেই রওনা হয়। পার্কে ঢুকতেই দেখে বট গাছের নিচে ওমর,রাফি,নীল দাঁড়িয়ে আছে। সেই একি গেটআপে।
-“দেখ বলদ তিনটি এসে পড়েছে।” রিমি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে।
-“দেখলাম। আজ একটু জ্বালাবো ও’কে।” সিমি বলে।
-“জ্বালাইস।” নিধি মৃদ হেসে বলে।
কথা বলতে বলতে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় ওরা। ওরা তিন জন ওদের কে দেখে হাসার চেষ্টা করে ।
রিমি তখন রাফির উদ্দেশ্যে বলে,
-“আপনি আসুন আমার সাথে।”
রাফি প্রশ্ন করে,
-“কোথায় যাব?”
-“বিয়ে করতে।”
-“মানে?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে রাফি।
-“আসুন বলছি।” কিছুটা ধমকের স্বরে বলেই রিমি হাঁটা ধরলো । রাফিও ওর পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো।
সিমি মেকি হেসে বলে,
-“আপনিও আসুন আমার সাথে।”
ওমর ‘কোথায়’ বলতে গিয়েও থেমে বলে ‘চলুন’। ওরা চলে যায় নিধিদের কাছ থেকে একটু দূরে।
নিধি বলে,
-“আমি কোথাও যাব না। চলুন এখানেই বসি আমরা । ”
নীল মৃদু হেসে গাছের নিচে নিধির থেকে তিন হাত দূরে বসে। এটা দেখে নিধির রাগ হয়। বলে,
-“আচ্ছা আপনি আমাকে চিনেন?”
নীল আস্তে করে বলে,
-“জি!”
-“আমরা এখানে কেন এসেছি?”
-“জি,কথা বলতে। একে অপরকে চিনতে। একে অপরের বিষয় জানতে।”
-“হুম,বাট আপনি যদি ওই দূরে গিয়ে বসেন তাহলে আমরা কথা বলবো কী করে? চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে? ” কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে।
নীল কথাটা শুনেই ওঠে সিমির থেকে এক হাত দূরে এসে বসল। সিমি একবার নীলের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
.
.
-“বলদ কাকে বলে জানেন?”
রিমির প্রশ্নে রাফি কিছুটা অবাক হয়। তাই কঁপাল বাজ করে রিমির দিকে তাকিয়ে আছে ।
রিমি আবারও বলছে।
-“কী চিনেন কিনা বলুন?”
-“না মানে,আমি চিনি না।”
রিমি ওর ব্যাগ থেকে ছোট একটি আয়না বের করে রাফির চেহারার দিকে তাক করে ধরে। রাফি ভ্রু কুঁচকে আয়নাটার দিকে তাকায়।
রিমি তখন বলে,
-“কিছু দেখতে পাচ্ছেন?”
-“হ্যাঁ! নিজেকে ।” নরম স্বরে বলে রাফি ।
রিমি আয়না সরিয়ে বলে,
-“এটাকেই বলদ বলে। ” বলেই হাঁটতে লাগলো ।
রাফি কথাটা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে যায় । মন চাইছে রিমির গলাটা চেপে ধরতে। রিমি পিছনে ফিরে দেখে রাফি দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে এসে মুচকি হেসে বলে,
-“আরে আমি তো মজা করছিলাম বলদ মশাই।”
এটা শুনে আরো রাগ হয় রাফির। কিন্তু যখন রিমির ঠোঁটে হাসি দেখে, তখনি রাগ পানিতে পরিনত হয়।
.
.
.
-“আচ্ছা আপনাকে যে একটি ক্রিম দিয়েছিলাম । সেটা কী আছে নাকি দিয়ে সব শেষ করে ফেলেছেন?” সিমির প্রশ্নে ওমর কিছুটা অবাক হয়। আস্তে করে বলে,
-“আছে এখনো।”
-“প্রতিদিন দিচ্ছেন তো?”
দাঁত কটমট করে বলে,
-“জি।”
-“হ্যাঁ! রোজ দিবেন। তাহলে আপনি ধলা হয়ে যাবেন।”
-“ধলা?”
-“আরে ফর্সা,ফর্সা।”
রাগে গা গিজগিজ করছে ওমরের । চুপ করে হাঁটছে। মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সিমি ফট করেই ওমরের পেটে কনই দিয়ে খোঁচা মেরে বলে,
-“কিছু বলছেন না কেন পল বাবু?”
-“পল!”
-“মানে জানেন?”
-“নাহ!”
-“পল মানে ভালো।” বলেই সিমি উল্ট দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
-“ও!”
-“আমি এখন থেকে আপনাকে পল বাবু বলে ডাকবো। কোনো সমস্যা আছে আপনার? ”
-“না।”
কথাটা শুনে আবারও মুখ টিপে হাসলো সিমি।”
অনেকক্ষন ওরা পার্কে সময় কাঁটায়। কিন্তু ওদের তিন জনের অদ্ভুত অদ্ভুত কথায় ওদের মেজাজ বিঘড়ে যায়। আর কিছুক্ষণ থাকলে ওদেরকে খুন করতে মন চাইবে। তাই দেরি না করে কোনো কাজের বাহানা দিয়ে ওরা চলে যায়। ওরা চলে যাওয়ার পর তিন জন কী কী বলেছে ওদের এটা বলে হাসা হাসি করতে লাগলো পার্কে বসে। ওদের হাসি কে দেখে? পেয়েছে তিনটি বলদ। হাসা-হাসি তো করবেই।
এদিকে হাতে-পায়ে তালি দিয়ে হাসছে সাব্বির,ফাহিম । এদের হাসিই বা কে দেখে? আলতাফ চৌধুরী মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। হ্যাঁ! একটু আগে তিনিও খুব হেসেছেন। কিন্তু এখন ভাবছে যখন ওরা জানতে পারবে ওদের আসল পরিচয় তখন ওরা কী করবে?
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……