#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_9.
বেশি টর্চার করার ফলে পলাশ হাসান মারা যায়। এতে ওদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। লাশ পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিলেটে । ধামা চাপা দেওয়া হয় পলাশ হাসানের মৃত্যুর রহস্য ।
.
সাব্বির মাথা নিচে দিয়ে পা উপরে তুলে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। কবিতার লাইন ভাবছে। কী অদ্ভুত তরিকা!
আর এদিকে রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ড্রইংরুমের সোফায় বসে আলতাফ চৌধুরীর সাথে কথা বলেছিল।
রুদ্র বলে,
-“দাদু! এভাবে আর কতদিন? এখন ওদের বিয়ের কথা বলো।”
অভ্র বলে,
-” আমি আর পারব না ক্ষেত সাজতে।”
আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“আহা! তোমরা এত অস্থির হচ্ছো কেন? সবে তো দুইদিন হলো। আর কয়েকটা দিন যাক না! তারপর না হয় ওদের সাথে কথা বলব।”
-“ইউ মিন! তুমি আমাদেরকে আরো কয়দিন ক্ষেত সাজতে বলছো! ও গড!” বিরক্ত মুডে বললো শুভ্র।
-“সাজবে! সমস্যা কি?”
-“দাদু!” রুদ্র বিরক্তি স্বরে বলে।
-“এমন করছো কেন আমি বুঝতে পারছি না। আরে একজন মানুষকে হুট-হাট করে চেনা যায় না। চিনতে হলে সময়,দিন,মাস আবার বছরও লেগে যায়। আর তোমরা তো মাত্র দুই দিন ওদের সাথে দেখা করেছো। এতেই এত অস্থির হয়ে পড়েছো?”
শুভ্র একটু নড়েচড়ে বসে বলে,
-“কালকে কী হয়েছে তুমি জানো দাদু? সিমি আমাকে ওমর মনে করে অভ্রর কাছে চলে গেছে।”
-“আর নিধি ওর কাছে চলে গেছে। ও ভেবেছে ওই ওমর ।” অভ্র বলে।
আলতাফ চৌধুরী মুচকি হাসলেন। তার সাথে রুদ্রও হাসে। মুখে হাসি রেখে আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“এটা তো দারুন কাণ্ড হয়েছে দেখছি। তোমাদের দু’জনকে চিনতে পারল না কেন?”
-“চিনবে কিভাবে বলো? এক সাজ,এক গেটআপ । কিভাবে চিনবে বলো?” শুভ্র বলে।
-“বাট! রিমি ঠিক চিনেছে। ওর মিস্টেক হয়নি।” রুদ্র মুচকি হেসে বলে।
-“হ্যাঁ! দাদু রুদ্রকে রিমি চিনতে পেরেছে। শুধু আমাদের বেলায় উল্টো হয়ে গেল।” অভ্র বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে।
-“তা! শুভ্র তুমি কী সিমিকে? অভ্র তুমি নিধিকে আর রুদ্র তুমি রিমিকে পছন্দ করেছো তাই তো?”
-“বলতে পারো হ্যাঁ! ” অন্য ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলে রুদ্র ।
-“যাক ভালো হয়েছে । আর দু’দিন ডেটে যাও। তারপর আমিই তোমাদের বিয়ে ঠিক করব।”
-“তোমার ইচ্ছা দাদু।” বলেই অভ্র উঠে দাঁড়াল।
ওর সাথে শুভ্র,রুদ্র ওঠে দাঁড়ায় । উপরে চলে আসে ওরা।
ওরা চলে যাওয়ার পর ফাহিম আসে ড্রইংরুমে । এতক্ষণ ওর রুমে বসে ছিল। এসেই ঠুস করে ইংলিশে বলে,
-“হোয়াট ইজ দ্য হেল আর ইউ দাদু?”
আলতাফ চৌধুরী ফাহিমের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ।
ফাহিম মুড নিয়ে বলে,
-“কবা না দাদু কী হরো(করো)?”
-“এই ইংলিশ টার মানে কী? যেটা একটু আগে তুই বললি?”
-“এইডা তুমি জানো না! ফাউ ফানি।” ভাব দেখিয়ে এক হাত সামনে জাগিয়ে বলে ফাহিম ।
-“হারামজাদা! ফাউ ফানি না হাউ ফানি হবে। আর একটু আগে যেই ইংলিশ টা বললি না ওটা হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? হবে।”
-“ওই হইলো আর কী।”
-“ওই হইলো আর কী বললে হবে না হারামজাদা । ইংলিশ ঠিক করে বলবি। আর নয়তো বলার দরকার নেই।”
-“ওয়া কও কী দাদু। মই ইংলিশ কমু। মোরে না হরবা(করবা) না। মুই কত ভালো ইংলিশ কই। তোমরা কী বোঝবা মোর ইংলিশ ।” মুখে কথা আওড়াতে আওড়াতে ওর রুমে চলে যায়।
আলতাফ চৌধুরী কিছুটা বিরক্ত হয়।
.
.
.
.
বালিশের কবার লাগতে লাগাতে সিমি বলে,
-“রিমি,নিধি এই মাসে যা টাকা পেয়েছি তা তো শেষ হয়ে আসলো প্রায়। কী করা যায় বলতো?”
-“কেন আমার কাছে টাকা আছে তো।” রিমি বলে।
-“কিন্তু আমার কাছে নেই রে। মাত্র দু হাজার টাকা আছে ।” নিধি বলে।
-“তাহলে তো তো হয়েই গেল। এই মাসটা কোনো রকম চলা যাবে নে।” সিমি বলে।
-“হ্যাঁ! টেনশন করিস না। আর শোন কালকে ওদের তিন জনকে এতিম খানায় আসতে বলবো । কালতো আমরা এতিম খানায় যাচ্ছি তাই না।” রিমি বলে।
-“মন্দ হয়না। এটাই করিস তাহলে।” সিমি বলে।
-“আচ্ছা এখন ঘুমাতে আয়।”
-“হুম চল।”
.
.
.
সকালে….
বিপলপ তালুকদার গাড়ি নিয়ে বড় একটি বাংলর সামনে এসে থামলো। গাড়ি থেকে নেমেই এদিক, সেদিন না তাকিয়ে হনহন করে বাংলর ভেতরে চলে গেল। দূর থেকে দাঁড়িয়ে তিন জোড়া চোখ তাঁর উপর নজর রাখছিল। তাকে ভেতরে ঢুকতে দেখে তারা আড়ালে লুকিয়ে পড়ে এবং তাঁর বাহিরে আসার অপেক্ষা করছিল। অনেকক্ষণ পর বিপলপ তালুকদার বেড়িয়ে আসলেন। সেখান থেকে চলে যান তিনি। তিনি চলে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে একজন রুদ্রকে ফোন দিল। রিং হতেই ফোন তুলে রিসিভ করে রুদ্র। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেঁটে দেয় রুদ্র। লোক তিনজন চলে যায় সেখান থেকে ।
সিমি,নিধি কাজে চলে আসে । আর রিমি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আসে। ওদের কাজ শেষ হতে হতে প্রায় পাঁচটা বেজে যায়। তারপরও এতিম খানায় যাওয়ার সিদান্ত নেয় ওরা । রুদ্র,শুভ্র,অভ্রকে কল দিয়ে এতিম খানার সামনের রাস্তায় আসতে বলে। ওরা দেরি না করে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে ।
রিমি বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“ধ্যাৎ! এখনো আসে না কেন?”
-“পাঁচটা বিশ বাজে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে।” সিমি বলে।
নিধি বলে,
-“বলদ কয়টায় কোথায় আটকে বসেছে কে যানে।”
-“ওই দেখ! হায়াত ভালো আছে। এসে গেছে।” সামনের দিকে তাকিয়ে বলে সিমি।
-“হুম।”
রিকশা থেকে নেমে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। আজ আর মিস্টেক না করে এই জন্য শুভ্র অভ্রকে বলে,
-“ওমর আমার ফোনটা এনেছিস? আমি তো নিয়ে আসতে ভুলে গেছি।”
-“সমস্যা নাই নীল। আমরা তো আছিই এখানে।” ওমর বলে।
-“ঠিক আছে।”
রাফি রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“হ্যাঁ! বলুন আমাদেরকে এখানে কেন ডেকেছেন?”
-“ডুগডুগি বাজাতে।” রিমি এক রাশ বিরক্ত নিয়ে বলে।
-“ডুগডু্গি?” ভ্রু কুঁচকে বলে রাফি।
-“হ্যাঁ! আসুন আমাদের সাথে।” রিমি বলেই হাঁটা ধরলো । ওর সাথে সিমি,নিধিও হাঁটছে। ওরা ওদের পিছু পিছু হাঁটছে।
এতিম খানার ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে কিছু বাচ্চারা দৌঁড়ে ওদের কাছে আসে। রিমি,সিমি,নিধি ওদের কাঁধের ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে ওদেরকে দিচ্ছে। সব বাচ্চারা খুশি হয়ে গেছে চকলেট পেয়ে। দূরে দাঁড়িয়ে ওরা এটা দেখছে। ওদের কাছেও ভালো লাগছে। কিছুক্ষণ পর ওরা ফিরে আসে ওদের কাছে। এদিকে মাগরিবের আজান দিল বলে।
রিমি বলে,
-“এবার চলুন যাওয়া যাক।”
-“কোথায় যাবেন এখন?” রাফি প্রশ্ন করে।
-“বাসায় যাব।”রিমি রাফির দিকে তাকিয়ে বলে।
রাফি রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“রিকশা করে দিচ্ছি আপনাদের জন্য ওয়েট করুন।” বলেই চলে যায়। ওর সাথে নীল,ওমর ও চলে যায় ।
তিনটি রিকশা ঠিক করে ওরা ভাড়াও দিয়ে দেয়। রিমি,সিমি,নিধি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।
.
.
থ্রি গ্যাংস্টার হাউস…..
রুদ্র ওর রুমে বসে ল্যাপটপ ঘাটছিল। তখনি রিমির সেই হাসি মুুখটা ভেসে ওঠে ওর চোখের সামনে। ল্যাপটপ দেখে ধ্যান সরিয়ে নেয়। মাথায় জুটি করা চুল। ঠোঁটের পাশে ছোট্ট তিলটা খুব সুন্দর লাগছিল ও’কে । চেহারার সুন্দর্য আরো দ্বিগুন ভাড়িয়ে দেয় রিমির ঠোঁটের ওই তিলটা। কিছুক্ষনের জন্য রিমির কল্পনায় হারিয়ে যায় রুদ্র। যখন হুশ ফিরে তখন মুচকি হেসে আগের ন্যায় ল্যাপটপ ঘাটতে শুরু করে ।
শুভ্র বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে ফোন টিপছিল। হঠাৎ সিমির হাসির কথা মনে পড়ে। সিমি হাসলেই গালের দু পাশে টোল পড়ে। দেখতে খুব মায়াবী লাগে। সিমির খেয়ালে হারিয়ে যায় শুভ্র। ঠোঁটে মুচকি হাসি । চট করে ফোনে একটি এসএমএস আসে। শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে শুভ্রর। মৃদু মুচকি হেসে আগের ন্যায় ফোন টিপতে শুরু করে।
অভ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়। মাথার চুলের মধ্যে হাত বুলাতে বুলাতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় । নিজের দিকে চোখ পড়তে, চুলের দিকে তাকাতেই নিধির লম্বা চুলের কথা মনে পড়ে। নিধির ঘন কালো লম্বা চুল গুলো কোমড় পর্যন্ত ছেয়ে থাকে । অভ্রর দুর্বলতা নিধির চুল গুলো। মন চায় একবার চুল গুলো ছুঁয়ে দেখতে। পরক্ষণে ভাবে যদি কিছু মনে করে। বা রাগ করে বকা,ঝকা করে। করলে করবে? তারপরও একবার ছুঁয়ে দেখতে চায়। ফিক করে হেসে দেয় অভ্র । আয়ানার সামনে থেকে সরে এসে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে।
বেশুরা গলায় গান খাইছে ফাহিম । যা শুনে সাব্বিরের রাগ ওঠে যায়। সাব্বির ও ফাহিমের রুম পাশা-পাশি। তাই ওর রুমের গানের শব্দ অনায়াসে সাব্বিরের রুমে চলে আসে। রুম থেকে বেরিয়ে তেড়ে ফাহিমের রুমে আসে। তখনো ফাহিম একা ধারে গান গেয়ে যাচ্ছে।
-“গ্রামের বাচ্চা-লেন্ডা,বড়রা মোরা। মিলিয়া পরের গাছে ডিল মারিতাম,হাইরে,মিলিয়া পরের গাছে ডিল মারিতাম। আগে কী সুন্দর চুরি করিতাম! আগে কী সুন্দর চুরি…..।”
-“ওই,ওই থাম! তোর বালের গান বন্ধ কর।” ধমক দিয়ে বলে সাব্বির ।
-“কিল্লাই ভাই? মোর গান কী ভালো লাগে নাই আপনের কাছে?”
-“এইটাকে গান কয়না। কি গান গাস বুঝি না। বালের গান গাস তুই।”
-“আমার গানের ইনসাট করতে পারলা তুমি ।” করুন কন্ঠে বলে ফাহিম।
-“চুপ! গাধার ঘরে গাধা। ইনসাট না ইন্সাল্ট হবে।” চিল্লিয়ে বলে সাব্বির ।
-“ওই…….।”
-“হইলো কবি থাপরামু! ঠিক মতো ইংলিশ কবি । আর নাইলে বলার দরকার নাই।একবার কইছি না তোরে।” রাগী কন্ঠে বলে।
-“তুমি কিন্তু মোরে বেদনা দিয়ে কথা কইতাছো ভাই।”
-“ঠিকিই করছি। তোর গান বন্ধ কর। আমি ঠিক মতো কবিতা লিখতে পারতাছি না।”
-“আইছে বদনাসাগর।” আস্তে করে বলে ফাহিম।
-“কী কইলি?”
-“কইছি যাও লেখো গা। আর গামু না।”
-“মনে থাকে যেনো।” বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় সাব্বির ।
-“ঠিক মতো গানও গাইতেও পারি না। ধুৎ!” ফাহিম বিরক্তি নিয়ে বলে।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To…..