নোলক পর্ব-০৭ এবং সিজন ১ সমাপ্ত

0
233

#নোলক
পর্ব ৭ (সিজন ১ এর শেষ পর্ব)
#তানিয়া_মেধা

মুনিরা ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। পরিবারের এ দূরত্ব মেনে নিতে পারছে নাহ সে। এই ফ্যামিলি ছাড়া তার তো আর কেউ নেই। ভাই ওর কাছে যাবে কিন্তু কয়দিনই বা শান্তিতা থাকতে পাবে সে। সর্বোচ্চ এক মাস তারপর শুনতে পাবে এই বয়সে বাপের বাড়ি পড়ে পড়ে ভাইয়ের টাকাই খাচ্ছে।

এগুলো দাঁড়িয়ে ভাবতে ভাবতে নিজের মনটাকে স্থির করে ঝাপ দেওয়ার জন্য। একবার পিছন ফিরে তাকায়। যেই ঝাপ দিতে যাবে অমনি পিছন থেকে এসে কেউ টেনে নিয়ে যায় ছাদের মাঝখানে। তাকিয়ে দেখে শুভ্র। মুনিরা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলতে থাকে,’ ছাড় আমাকে আমি তো পাপি।’

শুভ্র মুনিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ আমি মানি নাহ। আমি জানি আমি তোমার সন্তান আর কারও নাহ।’

শুভ্র এক প্রকার কাঁদতে শুরু করে। বড় হওয়ার পর থেকে শুভ্রকে কখনো কাঁদতে দেখেন নি মুনিরা। শুভ্রর কান্না থামাতে মুনিরা নিজেকে শান্ত করে বলে,’ এবার কান্না থামা তোকে মানতে হবে না এটা সত্যি তুই আমারই সন্তান। ‘

তখনই ছাদে পদ্ম ঢুকে বলে,’ কেন মিথ্যা আশা দিচ্ছেন শুভ্রকে।’

পদ্মর কথায় শুভ্র মায়ের কাধ থেকে মাথা তুলে তার পানে তাকায়৷ শুভ্রর চোখে ভালোবাসা না রাগ দেখতে পেল পদ্ম। এতে পদ্ম পাত্তা দিলো নাহ। একবার মুনিরার দিকে তাকিয়ে চলে গেল। পদ্ম কখনোই অন্যায়ের সঙ্গ দিবে নাহ সে তার যত কাছের লোকই হোক। শুভ্র তার স্বামী নিজেকে সধবা রাখতে যে কোন মূল্যে ওকে বাঁচাবে।

**********
আজ অনেক বছর পর দিলোয়ারের সাথে সাবিনা ঘুরতে এসেছে। দিলেয়ার এখন সাবিনাকে অনেক সময় দিচ্ছে৷ তার বড্ড অনুশোচনা হচ্ছে এই বিষয়ে যে এত দিন সে মুনিরার কথায় সাবিনার কাছ থেকে দূরে রয়েছে।

সাবিনাও আজ অনেক খুশি। কোন স্ত্রী না চায় তার স্বামীর সাথে সময় কাটাতে। সাবিনা তো দিলোয়ারকে অনেক ভালোবাসে। তাকে পাওয়ার জন্যই তো এতো কিছু।

সাবিনা এগুলো ভাবছিল নদীর পাড়ে বসে। তখন দিলোয়ার তার পাশে বসে বাদাম নিয়ে। সাবিনা বেগম তার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ বাব্বাহ যৌবন ফিরে আসছে দেখা যায় আপনার।’

দিলোয়ার হাসে সাবিনার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ হ্যা সুন্দরী বউ পাশে থাকলে যৌবন ফিরে আসবেই। ‘

দিলোয়ারের কথায় হাসে সাবিনা। দিলোয়ার মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে সেই মুখের পানে। এই হাসি দেখেই সে মুগ্ধ হয়ছিল সাবিনার প্রতি। তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিলো।

**
বাঙালী মেয়েরা সব কিছুর ভাগ দিলেও স্বামীর ভাগ দিতে রাজি নাহ। এই যে মুনিরা দূর থেকে সাবিনা আর দিলোয়ারকে দেখে চোখের পানি ফেলছে। মুনিরা ছাদে এসেছিল। ছাদ থেকে নদী বেশ ভালোভাবে দেখা যায়। কারণ নদী খুব একটা দূর নয় তাদের বাড়ি। এসব দেখে বুকের ভিতর চিন চিন ব্যথা অনুভব করছে সে। মুনিরা পিছন ঘুরে যায়। এ দৃশ্য দেখার শক্তি তার নেই।

ছাদ থেকে নামতে সিড়ির কাছে যেতেই পদ্মর সাথে দেখা হয়ে যায় তার। পদ্ম তার চেহারার অবস্থা দেখে চমকে। কিন্তু কিছু বলে নাহ। বলে আর কি হবে এটা যে তার প্রাপ্য। মুনিরা পদ্মর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ মেয়ে তুমি আমার সব শেষ করে দিলে। কি পেলে এগুলো করে? আমার পরিবারকে আমার থেকে দূর করে কি পেলে? আমি তোমায় নোলক পড়িয়ে বউয়ের স্বীকৃতি না দেওয়াই এমন করলে তুমি আমার সাথে!’

পদ্ম এবার অনেক অবাক হয় কি বলছে এই মুনিরা। সে কেন সড়াবে তাকে এই পরিবারের কাছ থেকে। পদ্ম এগিয়ে আসে মুনিরার কাছে। মুনিরার হাত ধরে নিয়ে চলে তাকে ঐ রুমে যেই রুমে ঐদিন ওকে নিয়ে গিয়েছিল।

*****
শুভ্র ভীষণ ভেঙে পড়েছে। সে মেনে নিতে পারছে নাহ এই সত্য। যাকে এতদিন মা বলে জেনেছে সে তার মা না। শুভ্র নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে সজোরে লাত্তি মারে টেবিলে। ফলে পায়ে ব্যথা পায় প্রচন্ড তবু তার রাগ কমে নাহ। সে রাগী দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। কিন্তু তার রাগ কমছে নাহ।

শুভ্রর হাতে থাকা ঘড়িটা দেয়ালের দিকে ছুড়ে মেরে চিৎকার করে বলে, ‘ আমি মানি নাহ এই সত্য। আমি মানি না যে উনি আমার গর্ভধারিনী মা।’

****
পদ্ম ক্লান্ত শরীরে ঘরে ঢুকে। শুভ্রকে নিচে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে যায় তার দিকে। শুভ্রর পাশে বসে নরম গলায় বলে,’ কি হয়েছে আপনার এভাবে বসে আছেন কেন?’

শুভ্র পদ্মর দিকে তাকায়। পদ্মর কাছ থেকে দূরে সরে বসে বলে,” আমার কাছ থেকে চলে যাও তুমি আমি ঘৃণা করি তোমায়।’

পদ্ম আহত চোখে তাকায় শুভ্রর দিকে। পদ্ম এগিয়ে গিয়ে শুভ্রর দুই গালে হাত দিয়ে তার দিকে ফিরাতে নেয়। শুভ্র এক ঝটকায় হাত সড়িয়ে নেয়। বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে,’ গেট লস্ট আমার সামনে আর কখনো আসবে না আমি তোমার ঐ মুখটা দেখতে চাই নাহ। তুমি আমাকে আমার মায়ের কাছ থেকে দূরে করে দিয়েছো।’

শুভ্র চলে যায়। পদ্ম সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে। শুভ্র তাকে ভুল বুঝলো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার।
**–
অন্ধকার রুমে কালো হ্যাট পড়া এক মহিলা বসে আছে। চেহারায় তার রহস্যময় হাসি। সব কিছু যে তার প্ল্যান মতোই হচ্ছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে একবার নিজেকে দেখে বলে,’ বাহ কি দারুণ অভিনয় করিস তুই এবার চল তোর অতি আদরের ছেলে শুভ্রকে খুন করতে। ‘

এই বলে অট্টহাসি দিয়ে উঠে। চোখে তার ভয়ংকার প্রতিশোধের আগুন । এ আগুনে সে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারবে। কেউ মিটাতে পারবে নাহ এই আগুন। সে ঠান্ডা হবে শুধু মাত্র শুভ্রকে খুন করে।

****
পদ্ম একবার বাড়ির দিকে ফিরে তাকায়। এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছে জানা নেই তার। শেষবারের মতো বাড়ির দিকে তাকিয়ে চলে যায়। তাকে যেতে হবে। শুভ্রকে বাঁচাতে হলেও তাকে যেতে হবে। শুভ্রর ভুল বোঝা দূর করার থেকে শুভ্রর জান বাঁচানো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পদ্ম কয়েকফোটা পানি ফেলে চোখ থেকে। সে সত্যিই শুভ্রকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারলো নাহ। তাকে তো তার স্বামীকে বাচাতে হবে যেকোনো মূল্যে। এক অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমালো পদ্ম।

সমাপ্ত