নোলক পর্ব-০৬

0
84

#নোলক
পর্ব ৬
#তানিয়া_মেধা

শুভ্র আর পদ্ম কাঁচা রাস্তায় হাটছে। এইতো শুভ্রকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। শুভ্র পদ্মকে দেখে যাচ্ছে কি অদ্ভুত মেয়েটা নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে না কিন্তু বিপদ এলে ঠিক বাঁচিয়ে নেয়। শুভ্রকে এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পদ্ম বলে,’ কি এভাবে তাকিয়ে কি দেখেন। ‘

শুভ্র হাটতে হাটতে বলেই,’ পদ্ম তুমি ঐ পরিবারের অহংকার ভেঙ্গে নাকে নোলক তুলতে পারবে না। ‘

পদ্ম একটা গাছ তলায় দাড়িয়ে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আল্লাহ দিলে অবশ্যি পারবো।’

শুভ্র এগিয়ে গিয়ে পদ্মর গালে হাত দিয়ে বলে, ‘ লড়াই চালিয়ে যাও জয় তোমারই হবে।’

পদ্ম আর কিছু বলে নাহ একটা মিষ্টি হাসি দেয় শুভ্রর দিকে তাকিয়ে। শুভ্র এগিয়ে এসে পদ্মকে জড়িয়ে ধরে। পদ্ম চোখ বন্ধ করে নেয় এই স্থানটা যে তার ভীষণ শান্তির।

*****
চোখ খুলে দেখে পদ্ম বিছানায় শুয়ে আছে। তার সামনে বসে আছে শুভ্র। পদ্ম বুঝতে পারছে নাহ গাছ তলা থেকে পদ্ম বাড়ি আসলো কি করে। পদ্মকে চোখ খুলতে দেখে শুভ্র বলে,’ ঘুম হয়েছে আপনার? আপনি তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন মিসেস।’

পদ্ম বুঝতে না পেরে বলে, ‘মানে?’

শুভ্র গিয়ে পদ্মর খুলে শুয়ে পদ্মর গাল টেনে দিয়ে বলে, ‘ আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে আপনি ঘুমিয়ে গেছিলেন মহারানী। প্রথমে তো ভেবেছিলাম অজ্ঞান হয়ে গেছেন। পরে আপনার কিছু কথা শুনে বুঝলাম ঘুমিয়ে গেছো তুমি।’

পদ্ম চোখ বন্ধ করে নেয়। ইশ! কি লজ্জা! লোকটা কি ভাবলো তাকে। এমন অবিশ্বাস্য কাজ সে করেছে বিশ্বাসই হচ্ছে নাহ। পদ্মকে জ্বালাতন করতে পদ্ম দুষ্টু হেসে বলে, ‘ এখন তো আমার তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ভয় লাগে যদি আবার ঘুমিয়ে যাও।’

পদ্ম এবার চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় মুখ কুচকে ফেলে। লোকটা ইচ্ছে করে তাকে জ্বালাচ্ছে। পদ্মর মুখের অবস্থা দেখে শুভ্র হাসতে থাকে। আরেকটু জ্বালাতন করতে ইচ্ছে হলো তার। তাই আবারও বলতে শুরু করলো, ‘ জানো ঘুমের মাঝে কি বলেছো আমায়। ‘

পদ্ম ঝট করে চোখ খুলে তাকায় শুভ্রর দিকে। শুভ্র পদ্মর দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হেসে বলে,’ আমি নাকি তোমায় আদর করি নাহ সবসময় দূরে দূরে থাকি।’

এবার পদ্মর মুখ লাল হয়ে গেছে কান গরম হয়ে গেছে। অসভ্য লোকটা কি শুরু করেছে তার সাথে। শুভ্র আর জ্বালায় নাহ শুধু পদ্মকে দেখে জোরে জোরে হাসতে থাকে।

******
মুখ ফুলিয়ে বসে আছেন মুনিরা। কোনো ভাবেই তিনি পদ্মকে তাড়াতে পারছে নাহ। পাশেই দিলোয়ার আড় চোখে একবার স্ত্রীকে দেখছেন তো আরেকবার খবরের কাগজ দেখছে। মুনিরা স্বামীর দিকে এক নজর তাকিয়ে তেজি গলায় বলেন, ‘ ঐ মেয়েকে তুমি তাড়াবে নাকি আমি পদক্ষেপ নিবো।’

দিলোয়ার খবরের কাগজে দৃষ্টি স্থির রেখে বলেন,’ আমি পারবো নাহ।’

মুনিরা চোখ পাকিয়ে দিলোয়ারের দিকে তাকায়। কত বড় সাহস তার মুখের উপর না করে দিল। মুনিরা উঠে চলে যান । দিলোয়ার সেদিক তাকিয়ে হাসে।

এগুলো উপর থেকে সাবিনা দেখছিল। সতীনের সাথে স্বামীর হাস্যজ্জল মুখ দেখে বুকের পাশে চিন চিন ব্যথা অনুভব করে। এই হাসি মুখটা তো তার সাথেও হতে পারতো। দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে ভিতর থেকে।

*******
সবাই ঘুমাচ্ছে ঘুম নেই শুধু পদ্মর চোখে। কারণ তার স্বামীর যে অনেক বিপদ। সবার আগে তাকে তার স্বামীকে বাচাতে হবে তবেই তো সে এই বাড়ির ছেলের মর্যাদা পাবে আর নিজের শখের পুরুষের সাথে একটা সুখের সংসার গড়বে।

এগুলো ভাবতেই ভাবতেই পদ্মর ঘুমে চোখ লেগে যায়। ঘুম ভাঙে তার বারান্দায় কিছু পড়ার আওয়াজে । পদ্ম বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখে চাঁদের আলোতে কিসের ছায়া যেন। কোনো মহিলা হয়তো।

পদ্ম ঘুমের নাটক করে শুয়ে পড়ে। তাকে যে করেই হোক ধরতে হবে ঐ মহিলাকে তাকে জানতে হবে কে সেই ব্যক্তি যে তার স্বামীর ক্ষতি করতে চায়। কি শত্রুতা শুভ্রর সাথে।

অবয়বটা শুভ্রর মাথর দিকে গিয়ে যেই বুকে চুরি চালাতে যাবে তখনই পদ্ম হাতটা ধরে ফেলে। চিৎকার করে বলে, ‘ কে আপনি?’

অবয়বটা বরকে যায়। পদ্মর হাতটা ঝামটা মেরে ছাড়িয়ে পালায় পদ্ম বাহিরে বেরিয়ে সারা বাড়ি খোঁজে। খুজতে খুঁজতে সে সাবিনার রুমের সামনে চলে আসে।

পদ্ম সাবিনার রুমের সামনে আসতেই সাবিনা ঘর থেকে বের হয়। পদ্মকে দেখে বলে,’ কি হয়েছে চিৎকার করলে যে?’

পদ্ম চমকায় সাবিনা জানলো কি করে পদ্ম চিৎকার করেছে। পদ্ম পাত্তা নি দিয়ে বলল,’ শুভ্রর উপর এটাক হয়েছিল।’

সাবিনা চমকায় পদ্মর হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। পদ্ম ভ্রু কুচকে বলে, ‘ আমাকে রুমে আনলেন কেন আমাকে শুভ্রর কাছে যেতে হবে।’

সাবিনা পদ্মর কথায় বলে,’ আমি জানি। আমি তোমাকে শুভ্রর আসল পরিচয় সম্পর্কেই বলতে এসেছি।’

পদ্ম চমকে বলে,’ কি পরিচয় বলেন?’

সাবিনা বলতে শুরু করে,

দ্বিতীয় বিয়ে কবে সাবিনাকে ঘরে আনার পর বাড়িতে সন্তানের সুখবর আসে। সাবিনা মা হতে চলছে সাথে মুনিরাও। বাড়িতে ডাবল খুশির কারণে দিলোয়ার সারা গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করে।

দিলোয়ার দুই স্ত্রীকে ভালোভাবে দেখাশোনা করতে শুরু করেন। তাদের সেবার কোন কমতি তিনি রাখেন নাহ। ৮ মাস খুব ভালোভাবেই কেটে যায় কিন্তু একদিন রাতে

রাত তখন ১২ টা বাজে সাবিনার ঘুম আসছিল নাহ। সাবিনা উঠে বাহিরে যান। বাহিরে যেতেই মুনিরার মতো কাউকে দেখে সদর দরজা দিয়ে বাহিরে যেতে। সাবিনা কৌতূহল বশত পিছু নেন। সদর দরজা দিয়ে বাহির হয়েই দেখতে পান মুনিরা ডাক্তারকে টাকা দিচ্ছে। সাবিনা এগিয়ে এসে বলে,’ আপা তুমি ডাক্তারকে টাকা কেন দিলে?’

মুনিরা চমকে তাকান সাবিনার দিকে। সাবিনাকে দেখে রাগি গলায় বলে,’ তুই এখানে কি করছিস?’

মুনিরার কথা পাত্তা দেন নাহ আরও চেপে ধরে বলে, ‘ তুমি কি গর্ভবতী নাহ?’

মুনিরা বড় বড় চোখ করে তাকায়। নিজেকে বাঁচাতে মুনিরা সাবিনাকে সজোরে ধাক্কা মারে। সাবিনা জোরে চিৎকার সাথে মুনিরাও চিৎকার করে পড়ে যাওয়ার নাটক করে।

এতটুকু বলে কেঁদে উঠেন সাবিনা। পদ্ম কৌতুহল নিয়ে বলে,’ তারপর কি হলো।’

সাবিনা চোখের পানি মুছে বলেন,’ তারপর আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আমার জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি আমার মৃত সন্তান হয়েছে আর মুনিরার ছেলে। ‘

পদ্ম জিজ্ঞেস করলো,’ শুভ্র উনার ছেলে?’

সাবিনা তেজি গলায় বলে,’ না ও আমার ছেলে। পরে জানতে পারি আমার জমজ ছেলে হয়েছিল উনি আমার ছেলেকে চুরি করেছে। কাউকে কিছু বলতে পারি নি কারণ সে আমি ধমকি দিয়েছে যে যদি কেউ এই ব্যাপারে জানে তাহলে শুভ্রর ক্ষতি করে দিবে।’

পদ্ম অবাক নয়নে তাকায় সাবিনার দিকে। পদ্ম সাবিনার হাতে হাত রেখে বলে,’ চিন্তা করবেন নাহ আমি আপনার ছেলেকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিবো।’

পদ্ম এ কথা বলতেই দিলোয়ার দরজা টেলে রুমে প্রবেশ করে। সাবিনার দিকে এগিয়ে এসে বলেন,’ শুভ্র তোমার সন্তান?’

সাবিনা চোখে অশ্রু নিয়ে বলে,’ হ্যা আমাদের আরেক সন্তানকে খুন করেছে মুনিরা সেদিন ধাক্কা দিয়ে।’

সাবিনার কথায় দিলোয়ারের চোখে যেন আগুন জ্বলতে শুরু করলো। পদ্ম চলে গেল সেখান থেকে। দিলোয়ার ছুটলো মুনিরার রুমের দিকে।

******
মুনিরার সাথে সবাই দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে। শুভ্র এক যে কিনা মুনিরা বলতে পাগল ছিল সেই ছেলের চোখে যখন তার জন্য ঘৃণা দেখে তখন মরে যেতে ইচ্ছে করে তার। মুনিরা নিজের রুমে একা বসে ছিল তখন দিলোয়ার প্রবেশ করে রুমে। দিলোয়ার মুনিরার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ কি একা থাকতে কেমন স্বাদ লাগছে? বুঝতে পারছো তো এত বছর সাবিনাকে একা করে রাখতে কত কষ্ট হয়েছে ওর।’

মুনিরা একটু হাসে দিলোয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আপনি কখনো আমাকে ভালোবাসেন নি আর না কখনো বোঝার চেষ্টা করেছেন।’

মুনিরার কথায় দিলোয়ার উপহাস করে বলে,’ ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই।’

দিলেয়ারের কথা তীরের মতো বুকে লাগলেও মুনিরা হেসে উড়িয়ে দেয়। এটা হয়তো তার পাওনা ছিল। যে ভুল করেছিল তার শাস্তি পাচ্ছে এ ছাড়া আর কিছু নাহ। আজ তার দোষই তার পরিবার তার থেকে দূরে সরে গেছে

চলবে