অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-১৯

0
445

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনিতে)
#পর্ব-১৯
||
নিজের বোকামির জন্য নিজেই নিজের মাথায় চাটি মারলাম।আমার মনের সবটুকু জায়গা অনুরাগ দখল করে আছে তাকে কীভাবে এত সহজে ভুলবো।নিজের হাতটা সামনে এনে যেখানে অনুরাগের নাম লেখা সেখানে কিছুক্ষন চেয়ে রইলাম।তারপর বললাম,আজকে আপনি আমার সাথে এরকম না করলে আমাদের গল্পটা ও অন্যরকম হতো।খুব কি ক্ষতি হতো যদি আমরা “অনুরাগের ছোঁয়া “হয়ে থাকতাম।কথাটা বলে সামনের দিক তাকাতেই আমি যাস্ট অবাক হয়ে গেলাম–

সবুজ রঙের পাঞ্জাবী পরে ভেতরে আসছে অনুরাগ।সবুজ রঙের পাঞ্জাবীর সাথে সাদা পায়জামা আর গলায় গোল্ডেন কালার একটা ছোট ওরনা ঝুলানো,সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে পরছে সব মিলিয়ে সে একদম পারফেক্ট লুকে এসেছে।

ছোঁয়া তো এখনো মুখটা হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সে তো ভেবেছিলো তার বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর শোনারর পর সে দেবদাস হয়ে যাবে।কিন্তু এখানে তো উলটোটা হচ্ছে,অনুরাগ তো বেশ সেজেগুজেই তার মেহেদীতে চলে এসেছে।আর সে মনে মনে অনুরাগকে নিয়ে কত কষ্ট পাচ্ছে।তার মানে আমার বিয়েতে তার কিছু যায় আসে না।ঐ দিন যে আমাকে ভালোবাসি বলেছিলো, সে নাকি আমাকে ছাড়া বাঁচবে না এটা তাহলে মিথ্যা ছিলো।আমি মনে মনে এসব কথাই আওড়াছিলাম।ঠিক তখনই কেউ একজন আমার মুখের ভিতর একটা ফুচকা পুরে দিলো।হঠাৎ এরকম হওয়াতে আমি বিস্ময়ে সামনের দিকে তাকালাম।সামনে তাকিয়ে অনুরাগকে দেখে আমার রাগ উঠে গেলো গেলো।মুখের ভিতর ফুচকা থাকায় আমি কিছু বলতে গিয়ে ও পারলাম না।আমি রাগী চোখে তার দিকে তাকালাম।সে আমার রাগী চোখকে উপেক্ষা করে আমার কানের কাছে তার মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

–এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে নাকি।

কোনরকম ফুচকাটা আধ চিবিয়েই গিলে ফেললাম।তারপর তাকে রাগী ভাবে বললাম,

–একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি কখন আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

–আমি নিজে দেখলাম তুমি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলা।তাই তো তোমার মুখে ফুচকা ডুকিয়ে দিলাম।কী ব্যপার বলতো, আমাকে আবার নিজের বর ভেবে ফেলেছো নাকি।

ছোঁয়া আমতা আমতা করে বলল,

–মোটেও আমি আপনার দিকে তাকায়নি।আমি ভেবেছি আমার বর আবির এসেছে তাই ওভাবে তাকিয়ে ছিলাম।।

আবিরের নামটা কানে যাওয়া মাত্র অনুরাগের চেহারার রঙটা পাল্টে গেলো।বাদামি চোখ জোরা সাথে সাথে লাল বর্ন ধারন করল।কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।সে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাগ কন্টোল করার চেষ্টা করছে।সে চায়না এখানে কোন সিনক্রিয়েট করতে।হাত মুষ্ঠীবদ্ধ করে ও রাগ নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হলো না। সে ছোঁয়ার বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে তাকে টানতে টানতে স্ট্রজের পেছনে নিয়ে গেলো।অনুরাগ ছোঁয়াকে শক্ত করে ধরে রাখায় ছোঁয়া অনেক ব্যথা পাচ্ছে। সে চোখ মুখ কু্ঁচকে অনুরাগের হাত থেকে ছোটার জন্য মুচড়ামুচড়ি করছে।ছোঁয়াকে মুচড়ামুচরি করতে দেখে সে আরও শক্ত করে তাকে ধরল।ব্যথায় তার চোখে পানি চলে আসল।ছোঁয়ার চোখে পানি দেখে অনুরাগ তাকে ছেড়ে দিলো।অনুরাগের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে ছোঁয়া চিৎকার করে উঠল।মিউজিক বাজার কারনে কেউ তার চিৎকার শুনতে পেলো না।সে অনুরাগকে বলছে..

–হাউ ডিয়াট ইউ,আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এখানে নিয়ে আসার।

অনুরাগ সোজাসাপটা উত্তর দেয়,

–তুমি আমার সাহসের কী দেখছো এখন তো শুরু।তোমার কী করে সাহস হয় আমার সামনে আবিরকে নিজের বর বলার।

–আশ্চর্য! কাল বাদে পরশু আমার আবিরের সাথে বিয়ে তাহলে আবিরকে বর বলতে প্রবলেম কোথায়।

–বিয়ে তো এখনো হয়নি।

–হয়নি তো কি হয়েছে পরশু দিন হবে।আর আপনি কি ভুলে গেছেন আজকে আমার মেহেদী।

–তুমি আমার সামনে আবিরের নাম নিতে পারবে না।

–একশো বার নিবো তাতে আপনার কী।

–আমারী তো সব।তুমি কি ভেবেছো তুমি বিয়ে করবে আর আমি ভদ্র ছেলের মতো সব মেনে নেবো।উহু আমি অতটা ও ভালো নই যে,নিজের ভালোবাসাকে অন্যের বউ হতে দেবো।

–কী -কী করবেন কী আপনি

–তোমাকে কেন বলবে আমি।

–আমার সামনে একদম নাটক করবেন না বলে দিলাম।এত যদি ভালোবাসতেন তাহলে আমার বিয়েটা এত সজযে মেনে নিতেন না।কোন কিছু করে হলে ও আমার বিয়েটাকে আটকানোর চেষ্টা করতেন।তা না করে আমার বিয়ে খেতে ঢেং ঢেং করে চলে এসেছেন।এত সেজে গুজে বুজি মেয়েদের ইমপ্রেস করতে এসেছেন

–হুম মেয়েদের ইমপ্রেস করতে এসেছি। কেন তুমি কি জেলাস ফিল করছো।

–আমি কেন জেলাস ফিল করোব।আপনার যা ইচ্চা তাই করুন।আমি তো আপনাকে ঘৃনা করি।

–কি বললে তুমি আরেকবার বল।

–একসময় আমার মনে আপনার জন্য পাহাড় সমান ভালোবাসা ছিলো কিন্তু এখনো শুধু আমি আপনাকে ঘৃনা করি

কথাটা বলার সাথে সাথে অনুরাগ একটান দিয়ে ছোঁয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।তারপর সে ছোঁয়ার ঠোঁটে তার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।এরকম আকস্মিক ঘটনায় ছোঁয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।যকন ঘটনাটা বোধগম হলো তখন সে ছোটার জন্য মুচরামুচরি শুরু করল।কিন্তু অনুরাগের সাথে সে পেরে উঠল না। তাই সে শান্ত হয়ে গেলো।প্রায় পাঁচ মিনিট পর অনুরাগ তাকে ছেরে দিলো।ছেড়ে দিয়েই সে ছোঁয়ার দু গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,

–আমি জানি আমি ভুল করেছি।আর ভুল করে আমি তোমার কাছে ক্ষমা ও চেয়েছি।ফাঁসির আসামীকেও তার শেষ ইচ্ছা পুরনের জন্য সুযোগ দেয়া হয়।আর আমি তো ফাঁসির আসামী ও না।তুমি আমাকে একটা সুযোগ ও দিলা না।সত্যি কি আমি এতোটা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।একটা কথা কান খুলে শোনে রাখ তুমি কবুল বলারর সাথে সাথে হবে আমার শেষ দিন এটা বলে সে গটগট করে চলে গেলো।

অনুরাগের কথাগুলো দাড়িয়ে দাঁরিয়ে ছোঁয়া ভাবছে।তার কী অনুরাগকে এক বার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিলো।আর সে যাওয়ার আগে কী বলে গেলো যে তার কবুল বলার সাথে তার শেষ দিন। শেষ দিন মানে এসব ভাবতে ভাবতেই তার কাজিন রিতা এসে তাকে ডাক দিলো।রিতার ডাক শোনে ছোঁয়া হকচকিয়ে গেলো।রিতা তার কাছে এসে বলল..

–আপু তুমি এখান কি করছো। তোমাকে আমরা সবাই সারা বাড়ি খুঁজছি।

ছোঁয়া ছোঁয়া আমতা আমতা করে বলল,

–আসলে ড্রেসটার পেছনের চেইনটা খুলে গেছিলো
তাই একটা আন্টি কী দিয়ে একানে এনে লাগালাম।

–ওহ আচ্ছা তাহলে।এখন চলো সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে।

–রিতাকে যেতে বলে আমি মোবাইলের আয়নায় নিজেকে দেখে ঠিক করে স্ট্রেজে চলে আসলাম।

স্ট্রেজে আসতেই দেখলাম ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি স্ট্রেজে যাওয়া মাএ আমাকে আমাকে বিভিন্ন পোজ নিয়ে দাঁরাতে বলল।হটাৎ আমার চোখ গেলে অনুরাগের উপর।তাকে ঘিরে সব মেয়েরা দাড়িয়ে আছে।আমার কেন জানি রাগ হলো।
আমিও বিভিন্ন এংগেলে ছবি তুলতে লাগলাম।
ছবি তোলার মাঝে আমি আড় চোখে অনুরাগের দিকে তাকালাম।দুজনের চোখাচোখি হওয়ায় অনুরাগ আমাকে ঠোঁট পাউট করে চুমু দেখালো।সাথে সাথে আমি বিষম খেয়ে কাশতে লাগলাম।অনুরাগ সাথে সাথে এক গ্লাস জল এনে আমার সামনে ধরল।আমি জলটুকু তারাতারি খেয়ে নিয়ে তার দিক তাকালাম।সে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,এইটুকুতেই এই অবস্হা।আমি তার দিকে রাগী চোখে তাকালে সে সিটি বাজাতে বাজাতে সেখান থেকে চলে যায়।কিছুক্ষন পর ফিরে এসে ক্যামেরা ম্যানকে ডেকে আমার সাথে তার কয়েকটা ডুয়েট পিক তুলে।

ফটোসেশন শেষ হলে কে যেনো গান ছেড়ে দিলো “মেহেদী হে রাচনেওয়ালী”।অনুরাগ স্ট্রেজে উঠে মেয়েদের সাথে নাচতে লাগল।আমি চেয়ারে বসে নাচ দেখতে লাগলা।হঠাৎ করে অনুরাগ আমাকে টেনে স্ট্রজে নিয়ে আসলেন।তারপর সে আমার হাত তার বুকের উপর রেখে সে আমার কোমড় জরিয়ে ধরে তার সাথে সাথে আমাকে নাচাতে লাগল।তার ছো্য়া পেয়ে আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল।আমি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলি,

–আমাকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন ছারুন

–চুপচুপ আমার সাথে নাচ

এটা বলে তিনি আমাকে নাচাতে লাগলেন।আমি তার থেকে ছুটতে নিলে সে আমাকে আরও চেপে ধরে।ুউপায়ন্ত না পেয়ে আমি ও তার সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে লাগলাম।

অনুরাগ আমার হাত গুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল।আমি বিরক্ত হয়ে বলি,এমন করছেন কেন?
সে আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমার হাত দেখতে লাগল।সে আমার মেহেদী রাঙা হাতে তার নাম দেখে বা্কা হেসে হয়ে বলে,

–বাহ বাহ নিজের বরের নাম না লিখে আমার নাম লিখেছো কেন?

আমি আমতা আমতা করে বলি,

–আমি কেন লিখব পার্লারের মেয়েরা আবিরে জায়গায় অনুরাগ লিখে ফেলেছে।

–একদম মিথ্যা বলবে না।

–আমি কেন মিথ্যা বলব আজিব তো।

–যাই হোক তুমি আমার নাম লিখেছো আমি খুব খুশি হয়েছি এটা বলে তিনি আমার হাতে চুমু খেয়ে সেখানে চলে গেল।আমি নির্বাক হয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

অনেক রাত হয়ে গেলো অনুষ্টান শেষ হতে।আমি রুমে এসে দরজা আটকে ওয়াশ রুম চলে গেলাম।তারপর ফ্রেশ হয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম।



#চলবে?

(রিচেক দেয়নি।ভুলত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ)