অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-১৫

0
448

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনীতে)
#পর্ব-১৫
||
পরের দিন,

ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁইছুঁই।বিছানার উপর চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে ছোঁয়া।এক ঘন্টা আগে তার মা এসে শাড়ি গহনা দিয়ে গেছে। শাড়ি গহনাগুলো বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।এতে করে ছোঁয়ার কোন হেলদুল নাই সে আগের মতোই বিছানায় বসে আছে।একটু পর তার মা আবার রুমে আসল।তারপর তাকে দেখে বলল…

–এখনো তৈরি হসনি কেন তুই?

ছোঁয়া মুখটাকে কালো করে বলল,

–মা আমার এসব ভালো লাগছে না।

ছোঁয়ার মাথায় হাত রেখে তার মা বলল,

–এসব কথা বললে এখন চলবে না।তোর বাবা তোর মত নিয়েই ওদেরকে আসতে বলেছে।তাই তোর বাবার মাথা হেট হোক এরকম কোন কাজ তুই করবি না এটা আমার বিশ্বাস।শাড়ি গহনা গুলো পরে তারাতারি নিচে আয় ওনারা চলে এসেছে।
______________________

শাড়ি গহনা গুলো পরে নিল ছোঁয়া।তারপর আয়নার সামনে দাড়িয়ে চোখে একটু কাজল আর ঠোঁটে বেবী পিংক কালার লিপস্টিক দিয়ে নিল।তারপর আয়নায় নিজেকে দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিজে নিজেই বলতে লাগল..

–একদিন অনুরাগের জন্য নিজেকে আমি আনন্দের সাথে সাজিয়েছিলাম কিন্তু আমার ভাগ্য এতটা খারাপ যে যাকে ছোট থেকে ভালোবেসে এলাম তাকে পেলাম না। কিন্তু আজকে অন্যের জন্য নিজেকে সাজাতে হচ্ছে।অনুরাগ আমাকে কত অপমান করল তবুও আমি তাকে মন থেকে মুছতে পারছি না।আমি কি করে ওদের সামনে গিয়ে আজকে দাড়াব। আমার যে কোন কিছু ভালোই লাগছে না কথাগুলো বলতেই ছোঁয়ার চোখ থেকে শ্রাবণ ধারা নামতে শুরু করল।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে ছোঁয়া। ড্রয়ংরুমে আসতেই তার বাবা তাকে দেখে বলে উঠে…

–ঐ তো ছোঁয়া মা চলে এসেছে।

ছোঁয়া নিচে নামতেই এক জোড়া চোখ গভীর দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।শাড়িতে ছোঁয়াকে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রমনী লাগছে তার কাছে।তার ঐ মায়াবী চোখের কাজল যেন তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।সে এতোক্ষন ছোঁয়াকে দেখায় এতই ব্যস্ত ছিলো যে আশে পাশে কী ঘটছে তার তাতে কোন খেয়লাই নেই।তার ধ্যান ভাঙে ছোঁয়ার গলার আওয়াজ পেয়ে।

তারপর আমি ড্রয়িংরুমের সবার উদ্দেশ্যে সালাম দিলেন।তারা ও সালামের উত্তর নিয়ে আমাকে তাদের পাশে বসালো।আমি এখনো তাদের দিকে তাকায়নি।ছেলের মা আমাকে জিজ্ঞেস করল..

–কেমন আছো মামনি।

মহিলার কথা শোনে আমি চোখ তুলে তার দিকে তাকালাম। মহিলাটি দেখতে অনেক সুন্দর।আমি হাসি মুখে তাদেরকে বললাম..

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনারা কেমন আছেন আংকেল আন্টি।

আমার কথায় তারা দুজনে হেসে বলে উঠে,

–আমরা খুব ভালো আছি মা।

তারপর তারা আমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলল।তাদের কথা শোনে বুঝলাম তারা আসলেই অনেক ভালো মানুষ।আমি এতক্ষন ধরে এখানে এসে বসেছি অথচ পাত্রের মুখ এখনো পর্যন্ত দেখি নাই।আমার দেখার ইচ্ছা ও নাই।তারা বাবা মার সাথে কিছুক্ষন কথা বলল। তারপর বাবার উদ্দেশ্যে বল উঠে..

–মেয়ে তো আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে।আপনাদের কোন আপত্তি না থাকলে আজকেই ওদের দুজনের আংটি বদলের কাজটা সেড়ে ফেলতে চাই।

ছোঁয়ার বাবা হেসে বলে উঠে,

–আমাদের তরফ থেকে কোন আপত্তি নেই।

তবুও আমি ছোঁয়া মামনিকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে তার কোন আপত্তি আছে কিনা।তারপর আন্টি আমার থেকে জানতে চাইলো..

–তোমার কোন আপত্তি আছে মামনি।থাকলে তুমি নিশ্চিন্তে বলতে পারো।

ছোঁয়ার তার বাবা মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল তার বাবার মুখে একটা তৃপ্তির হাসি লেগে আছে।তাই সে তার মনে থাকা কষ্টকে মনেই রেখে মিনমিনে গলায় বলল..

–আমার এই বিয়েতে কোন আপত্তি নেই।

তার উত্তর শোনে সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠল।আন্টি আমার হাতে এক জোরা বালা পড়িয়ে দিয়ে বলে উঠল..

–আমার আবিরের পছন্দ আছে বলতে হবে।বেছে বেছে একটা হিরের টুকরো মেয়ে পছন্দ করেছে।

আবির নামটা কানে শ্রবণ হতেই ছোঁয়া অবাক চোখে সামনের দিকে তাকালো।সামনের দিকে তাকিয়েই ছোঁয়া বড় রকমের একটা ঝটকা খেলো।কেননা আবির তার সামনে বসে আছে।ছোঁয়া আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখল আবির মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ছোঁয়া ভাবতেই পারছে না যে,তার বাবার পছন্দের ছেলে আবির হবে।তার ভেতরে সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।ছোঁয়া মনে মনে বিরবির করতে থাকে।হঠাৎ আবিরের মা বলে…

–এবার তাহলে এংগেজমেন্টা সেরে ফেলি।

ছোঁয়ার বাবা বলে,

–অবশ্যই।

প্রথমে আবির নিজের পকেট থেকে একটা রিং ছোঁয়াকে পরিয়ে দেয়।তারপর ছোঁয়ার বাবা ছোয়ার হাতে একটা রিং দিয়ে বলল…

–এটা তুমি আবিরকে পরিয়ে দেও।

ছোঁয়া আংটি টা হাতে নিল।আংটি টা হাতে নিতেই তার হাত থরথর করে কাঁপতে লাগল।সে তার হাত সামনের দিকে যত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তত বেশী তার হাত কাঁপছে।কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎ করে তার হাত থেকে আংটি টা পরে গেলো।আংটি টা পরতেই সবাই ছোঁয়ার দিকে তাকালো।সবাই এভাবে তাকানো দেখে সে মনে মনে গিলটি ফিল করল।আবির নিচ থেকে আংটি টা নিয়ে নিজেই হাতে পরে নিল।এতে সবাই কিছুটা অবাক হলেও পরে আবির সবটা ম্যানেজ করে নিল।

_______________

ছাঁদের রেলিং ধরে পাশাপাশি দাঁরিয়ে আছে আবির আর ছোঁয়া।কিছুক্ষন আগে ছোঁয়া আবিরকে তার জীবনের সব ঘটনা খুলে বলেছে।এমনকি অনুরাগকে যে সে একসময় ভালো বাসত, এখন তার জন্য ফিলিংস আছে। আবির তাকে বিয়ে করলে আবিরকে তার মনে জায়গা দেওয়ার জন্য তার কিছুদিন সময় লাগবে।আবিরের প্রথমে একটু কষ্ট হয়েছিল।সবকিছু শোনার পর তার মনে হয়েছে এখানে ছোঁয়ার কোন দোষ নেই।সে হাসি মুখে বলে তোমাকে আমি কোন কিছুর উপর জোর করবো না।তুমি যেদিন আমাকে তোমার মনের মাঝে জায়গা দিতে পারবে সেদিনই আমরা কাছাকাছি আসব।তোমার মনে আমার জন্য জায়গা না হওয়া অবদি আমরা বন্ধু হয়ে থাকবো।জান, যেদিন তোমায়র প্রথম দেখেছি সেদিনই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।প্রত্যেক রাত আমি তোমাকে নিয়ে ভেবে কাটিয়েছি।তুমি আমাকে তোমার পাশে থাকতে দিলেই চলবে এটা বলে সে থামল।

ছোঁয়া মুগ্ধ হয়ে আবিরের কথা গুলো শোনল। আবিরের প্রতি কথায় ছোঁয়া বুজতে পেরেছে যে আবির ছোঁয়াকে ভালোবাসে।কিন্তু সে তো অনুরাগকে ভালোবাসে।সে ককখনোই কি তার মনে আবিরকে জায়গা দিতে পারবে এটা ভেবে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর সে আবিরের কাছে গিয়ে বলল..

–আপনি আসলেই খুব ভালো একজন মানুষ।

ছোঁয়ার কথার প্রতি উত্তরে আবির কিছু বলল না।শুধু একটা মুচকি হাসি দিলো।এই হাসির পেছনে আবিরের অনেকটা কষ্ট লুকিয়ে আছে।সে আদৌ জানে না যে,বিয়েটা হবে কিনা।

_______________

দুপুরে ছোয়াদের সাথে এক সাথে লান্চ করল আবিররা।তারপর বড়রা মিলে বিয়ের ডেট ফিক্স করল। আগামী মাসের ১তারিখে বিয়ের দিন ধার্য করা হলো।আর মাএ দশ দিন বাকী আছে।এসব আলোচনা শেষ করে সবাই কিছুক্ষন গল্প করে বিকেলের মধ্যে তারা চলে গেলো।ছোঁয়া মা বাবাকে বলে নিজের রুমে চলে এলো।শরীর ক্লান্ত থাকায় সে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসল।আধশোয়া অবস্হায় সে সেখানেই ঘুমিয়ে পরল।

হঠাৎ করে জোরে শব্দ করে ছোয়ার বাবার মোবাইলটা বেজে উঠল।সে সবে মাএ বিছানায় গাঁ এলিয়ে ছিলেন।চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে সে মোবাইলটার দিকে তাকালেন।মোবাইলয়ের স্কিনে তাকিয়ে তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।কারন তার প্রিয় বন্ধু তাকে কল করেছে।অনুরাগের কারনে তাদের মাঝে কয়েকটা দিন এত যোগাযোগ ছিলো না।সে আজকে ভেবে ছিলো যে ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক হলে সে তার বন্ধুকে কল করে জানাবে।ছোঁয়ার বাবা কলটা রিসিপ করে।ওপাশ থেকে আরিফ চৌধুরী বলে উঠে..

–কিরে কেমন আছিস।

–এই তো ভালো।তুই?

–আআলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুই তো আমাকে ভুলেই গেছিস।

–কি যে বলিস, তুই আমার একমাত্র জানের জান দোস্ত তোকে কখনো ভুলতে পারি।

–এ জন্যই তো আমাকে এই কয়দিনে একবার ও কল করিস নাই। শোন তোর কাছে আমার একটা লাস্ট আবদার আছে।

–আমি তোকে আজই কল করতাম।তোকে আমারও একটা খুশির খবর দেওয়ার আছে।

–তাহলে খুশির খবরটা আগে শোনি বল।

–আগামী ১ তারিখ ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।আমি তোদের বাড়ি গিয়ে ভাবিদের কে বল আসবনি।

ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে শোনে আরিফ চোধুরীর হাসিমুখ নিমিষে কালো হয়ে গেলো।তবুও সে নিজেকে স্বাবিক করে বলল

–ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর তুই আজকে শোনালি।

–আজই তো ঠিক হলো।

–ছেলে কী করে।

–সে একজন ডক্টর।তারপর সে আজকের সব কিছু আরিফ চৌধুরীকে বলল।তারপর বলল তুই না আমার কাছে কী আবদার করবি বল তাহলে।

–তেমন কিছু না।এমনি তোকে বললাম।আমি এখন একটু কলটা রাখি তোকে পরে কল করবনি।

–আচ্ছা ঠিক আছে।

ওপাশ থেকে কল কাটতেই আরিফ চৌধুরী সোফায় বসে পরে।তার টেনশনে মাাতা কাজ করছে না।অনুরাগ জানলে কি কররবে এসব ভেবেই সে সোফায় মাতা এলিয়ে নিলো।



#চলবে?

(রিচেক দেয়নি।ভুলত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর হ্যাপি রিডিং)