অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-১৪

0
476

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী(লেখনীতে)
#পর্ব-১৪
||
কয়েক দিন ধরে আবির খেয়াল করছে রিয়া তার সাথে বেশী একটা কথা বলে না।কোন কিছু জিজ্ঞেস করলে হ্যা না উত্তর দেয়।সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকে।আবির আজকে মনে মনে ঠিক করেছে রিয়া তার কেবিনে আসলে জিজ্ঞেস করবে তার কি হয়েছে।এসব কথা মনে মনে ভেবে সে রোগীদের রির্পোট দেখায় মনোযোগ দিলো।

কিছুক্ষন পর রিয়া তার কেবিনে নক করল।আবির রিয়াকে ভেতরে আসতে বলল।রিয়া ভেতরে আসতেই আবির তাকে বসতে বলল।আবিরের কথামতো রিয়া একটা চেয়ার টেনে বসল।তারপর আবির রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল…

–মিস রিয়া আপনার কি কোন কারনে মুড অফ।

আবিরের কথায় রিয়া অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল

–কেন স্যার।

–আপনাকে কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি আপনি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছেন।আগের মতো কোন কথা বার্তা বলছেন না।কোন সমস্যা থাকলে আপনি আমাকে বলতে পারেন।

আপনি যে আমার ব্যবহার খেয়াল করেছেন এতেই আমি অনেক খুশি।আমি তো ভাবতাম আপনি আমার কোন কিছু খেয়ালই করেন না কথাটা রিয়া মনে মনে বলল।তারপর মিথ্যা হাসি ঠোঁটে ঝুঁলিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল..

–স্যার আসলে আমার শরীরটা কয়েকদিন ধরে খারাপ লাগছে তাই আরকি।

–তাহলে আপনি কয়েকদিন ছুটি নিতেন।এই অবস্হায় হসপিটালে এসেছেন কেন।

–স্যার আপনি টেনশন করবেন না।আমি এখন ঠিক আছি।

–ওহ আচ্ছা তাহলে আপনি এখানে বসেই কিছুক্ষন জিরিয়ে নিন।আমি একজন পেশেন্টকে দেখে আসছি এটা বলে আবির চলে গেলো।

আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিয়া বলতে লাগল স্যার আমার তো শরীরের অসুখ হয় নাই।আমার তো মনের অসুখ হয়েছে।আমি কি করে বোঝাবো আপনাকে,আমি কাউকে আপনার পাশে সহ্য করতে পারি না। আর আপনি তো আমার সামনে ছোঁয়ার ছবি সারাদিন দেখেন, তাকে নিয়ে সারাদিন ভাবেন।এসব দেখে আমার ভীতরে কতটা কষ্ট হয় আমি কাউকে বোঝাকে পারছি না।আমার ভীতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।কথাগুলো বলার সময় রিয়ার চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।তারপর সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার ব্যাগ থেকে একটা ডায়রী বের করে লিখতে শুরু করল।রিয়া এখানে জয়েন করার পর যেদিন আবিরে সাথে দেখে তখনি তার আবিরকে ভালো লাগে।তারপর থেকেই সে আবিরকে নিয়ে তার হৃদয়ের অনুভূতি সব ডায়রীতে লিখতে শুরু করে।

_____________________

সেদিন সেখান থেকে আসার পর অনুরাগ কারো সাথে কোন কথা বলে না। নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।তার পর সে রুমে এসে ভাংচুর করে। ভাংচুর করে ক্লান্ত হয়ে সে এক সময় ফ্লোরেই শুয়ে পরে।তারপর সে তার রুম থেকে বের হয় না।এর মধ্যে তার বাবা মা রুমে এসে দরজা ধাক্কা দিছে অনেকবার।প্রথমে অনুরাগ কোন উওর দেয় নাই।তার উত্তর না পেয়ে তার মা ভয় পেয়ে কান্না কাটি শুরু করে দেয়।তার বাবা ও অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।তার বাবা তার বন্ধুদের কল করে দ্রুত আসতে বলে।তার বন্ধুরা এসে তার রুমের দরজা ভেঙে পেলে।দরজা ভেঙে দেখে অনুরাগ ফ্লোরে শোয়ে আছে আর রুমের সব জিনিসপত্র ভাঙা।তার মাতো তার এই অবস্হা দেখে জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে।তার বন্ধু আকাশ আর রবিন মিলে তাকে ফ্লোর থেকে তুলে খাটে নিয়ে শোয়িয়ে দেয়।তারপর তার বাবা ডাক্তারকে কল করে।কিছুক্ষন পর ডাক্টার এসে তাকে দেখে বলে শরীর দুর্বল থাকায় আর সারাদিন না খাওয়ার ফলে সে সেন্সলেস হয়ে যায়।ডাক্টার তাকে একটা ইন্জেকশন দিয়ে বলে কিছুক্ষন এর মধ্যে তার জ্ঞান ফিরে আসবে।জ্ঞান ফিরার পর তাকে প্রেসক্রিপশন ঔষদটা খায়িয়ে দিবেন এটা বলে তিনি চলো যান।

একটু পর সে পিটপিট করে চোখ খুলে।চোখ খুলে সে তার চারপাশে অনেক লোকজন দেখতে পায়।তাকে চোখ খুলতে দেখে তার মা এসে তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।সে ও তার মাকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগে…

–মা যান তো ছোঁয়াকে নাকি কালকে দেখতে আসবে।আমি ছোঁয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছি যে আমার জীবনে ফিরে আসতে।কিন্তু সে আমাকে স্ট্রেটলি বলে দিয়েছে সে আমার জীবনে আর ফিরে আসবে না।সে নাকি অন্য কাউকে বিয়ে করবে।আমি ছোঁয়াকে ছাড়া মরে যাব না।প্লিজ তুমি বাবাকে বলো আমার জন্য আরেক বার ছোঁয়ার বাবা মাকে বলতে কাঁদতে কাঁদতে সে কথাগুলো বলল।

সবাই অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ছোট বাচ্চারা যেমন খেলনার জন্য বাবা মার কাছপ বায়না করে অনুরাগ ও তার মার কাছে সেভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো বায়না করছে।তার কথাগুলো শোনে সবার চোখে জল এসে গেছে।তার বাবা তার কাছে এসে তার হাত দুটো ধরে বলে তুই এরকম করিস না বাবা।আমি তোর জন্য আবার আমার বন্ধুর সাথে কথা বলব।বলে দেখি তারা কি বলে।এটা বলতেই অনুরাগ তার বাবাকে খুশিতে জরিয়ে ধরে।তার বাবা তাকে বলে এবার তাহলে খাবার খেয়ে নে,ওষুধ টা ও তো খেতে হবে।তারপর তার মা খাবার এনে তাকে খায়িয়ে দিয়ে চলে যায়।এরপর অনুরাগ তার বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে।তার বন্ধুরা ও তাকে অনেক বুঝায়।তারপর তারা তাকে আশ্বাস দেয় যে ছোঁয়া তারই হবে।দরকার হলে বিয়ের আসর থেকে ছোঁয়াকে তুলে আনব।তারপর আর কিছুক্ষন থেকে তারা চলে যায়।তারা যেতেই অনুরাগ কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে।

__________________

রাতের আকাশে অসংখ্য তারার মেলা।দোলনায় গিটার হাতে বসে আছে অনুরাগ।পাশের বাগান থেকে বেলী ফুলের কড়া ঘ্রান ভেসে আসছে।দমকা হাওয়ায় এলোমেলো করে দিচ্ছে তার কপালে থাকা সিল্কি চুলগুলো।সেই সাথে ঝড় বইছে তার মনে।ছোঁয়ার একটা ছবি হাতে নিয়ে সে অভিমানী কন্ঠ বলতে লাগে,
–“আমাকে কি একবার ক্ষমা করা যায় না। আমি জানি আমার ভুল হয়েছে তাই বলেকি আমি তোমার কাছে ক্ষমা পাওয়ায় যোগ্য না।”

ওপাশ থেকে কোন উত্তর আসে না।অনুরাগ করুন দৃষ্টিতে ছোঁয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশে থাকা দোলনার পাশ থেকে গিটারটা হাতে তুলে নেয়।তারপর সে গাইতে থাকে…

‘একা দিন ফাঁকা রাত
নিভেছে আলোয়
তুই নেই কেউ নেই
লাগছে না ভালো…(২)

‘তোর নাম না জানা অভিমানে
কত দূরে ভাসা যায়
আমি চাইছি তবু পারছি না তো
থামাতে আমায়…

‘একা দিন ফাঁকা রাত
নিভেছে আলোয়
তুই নেই কেউ নেই
লাগছে না ভালো

‘ যতবার
আমি তোর ভাষাতে বলছি কথা
ততবার
তুই ভাবলি বুঝি তা আলাদা….(২)

‘একা দিন ফাঁকা রাত নিভেছে আলোয়
তুই নেই কেউ নেই লাগছে না ভালো..




#চলবে?

(ভুলত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।)