#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনীতে)
#পর্ব-১৮
||
ডায়রীটার প্রথম পাতায় বড় করে লাভ স্প্রেস দিয়ে তার ভেতর লেখা “আবিরের রিয়া”। লেখাটা দেখে আবির চমকে উঠল।সে বুঝতে পারছে না রিয়া তার ডায়রির ভেতর লাভ স্প্রেস দিয়ে কেন তার আর রিয়ার নাম লিখে রেখেছে।”আবিরের রিয়া” লেখাটা পরে বুকটা ধুক করে উঠল।তার শরীর দিয়ে অজানা এক শিহরণ বয়ে গেলো।
সে তড়িগড়ি করে ডায়রির পরের পাতা উলটালো।উলটিয়ে দেখলে যে তাতে অনেক কিছু লেখা।সে মনোযোগ দিয়ে পরতে লাগল।ডায়রীতে লেখা, আজকে কলেজ থেকে ফেরার পথে একটা ছেলেকে দেখে আমার চোখ আটকে যায়।আমি না চাইতে বার বার ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছিলাম।ছেলেটার গাড়ি হুট করে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছেলেটা চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে আছে।আর আমি মুগ্ধ হয়ে ছেলেটাকে দেখছি।ছেলেটার পরনে কালো জিন্স পেন্ট, হোয়াইট শার্ট,হাতে কালো ওয়াচ, সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে পরছে সব মিলিয়ে আমি সেই লেভেলের ক্রাশ খাই।হটাৎ তার সামনে এসে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো। ছেলেটা গাড়িতে উঠে চলে গেলো।ছেলেটা চলে যাওয়ায় আমি মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে গেলো।তারপর থেকে আমি সব সময় ছেলেটাকে নিয়ে ভাবতাম।একসময় বুঝতে পারি ছেলেটাকে আমি মনের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছি।তারপর থেকে আমি ছেলেটাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোন জায়গায় না পেয়ে হতাশ হই।কিন্তু আমি মনে মনে ঠিক করি যে, যে করেই হোক আমি তাকে খুঁজে বের করবই।এভাবেই দিন চলতে থাকে আমার ভালোবাসা ও বাড়তে থাকে।দু বছর হলো কলেজ লাইফ শেষ করেছি।একদিন মাকে নিয়ে হসপিটালে ডক্টর দেখাতে আসি।ডক্টর এর কেবিনে গিয়ে আমি আমি অনেক অবাক হই।কারন যাকে এতদিন করে খুঁজছি আজকে তার সামনে দাড়িয়ে আছি।আমি মনে মনে অনেক খুশি হই যে আমার ভালোবাসাকে আমি পেয়ে গেছি।তারপর আমি তার নাম জানতে পারি।তার নাম ছিলো আবির।আমি অনেক কষ্ট করে তার এসিস্টেন হই যে এই কারনে,যে আমি তার পাশে সব সময় তার পাশে থাকতে পারবে।তার সাথে সবসময় কথা বলতে পারবে।এভাবেই দিন চলতে লাগল।একদিন আমি ভেবেছি যে তাকে আমার মনের কথা বলবো তাই তারাতারি হসপিটালে চলে আসি।কিন্তু ঐ দিন আমার হৃদয়টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়।কারন আবির স্যার আমাকে বলেছে যে তিনি ছোঁয়া নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসে।আমি সেদিন দৌড়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসি।
এতটুকু পরেই আবিরের চোখ থেকে টপটপ পানি পরতে লাগল।সে ঝাপসা চোখে পুরোটা ডায়রি পরে শেষ করল।তাকে নিয়ে সবকিছু লেখা ডায়রিটার ভেতর।একজন মেয়ে কতটুকু ভালোবাসলে তার জন্য দুবছর অপেক্ষা করতে পারে তা আবিরের জানা নেই।ডায়রির শেষ লেখাটা ছিল,আবির স্যারের খুশিতেই আমার খুশি।স্যার যদি ছোঁয়াকে নিয়ে ভালো থাকে তাহলেই আমি হেপি।ভালোবাসলেই যে পূর্নতা পেতে হবে তার কোন মানে নেই।দূর থেকে ও ভালোবাসা যায়।আমি না হয় দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো।ভালো থাকুক আমার ভালোবাসা। শেষটুকু পরেই আবির একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে।তার এই পরিস্হতি কি করা উচিত তার জানা নেই।সে ও তো ছোঁয়াকে ভালোবাসে তারই বা কী করার। এখন চাইলে ও সে বিয়ে ভাঙতে পারবে না।এমনিতেই ছোঁয়া একবার বিয়ের আসরে অপমানিত হয়েছে আবার যদি সকলের সামনে অপমানিত হয় তাহলে মেয়েটা সহ্য করতে পারবে না। কিছু না কিছু ঘটিয়ে ফেলবে এসব ভেবেই সে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল।
____________________________
দেখতে দেখতে ছোঁয়ার বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। আজকে সন্ধ্যায় ছোঁয়ার মেহেন্দী।একটা সবুজ রঙের ঘাগরা চুলি পরে বসে আছে ছোঁয়া।সবুজ রঙের পাড় দেওয়া আর ভারী পাথরের কাজ।একটু পর পার্লারের মেয়েরা সাজাতে আসবে। তারপর মেহেদী পরানো হবে।এতে করে ছোঁয়ার কোন ভাবান্তর নেই।সে মোমের পুতুলের ন্যায় বসে আছে।সে তার ভাগ্যকে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছে।তার ভাগ্যে যা আছে তাই সে মেনে নিবে।তাই সে আর এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে না বলে ঠিক করেছে।আমার পাশে আমার কাজিনরা মিলে গল্প করছে, আমাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করছে।তাদের সাথে কথা বলার মাঝেই পার্লারের মেয়েরা চলে আসল। আমার মুখে একটার পর একটা লেয়ার লাগিয়েই যাচ্ছে।অতপর আমাকে একটা ভুত বানিয়ে ছেড়ে দিলো তারা।আয়নায় তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে নিজেকে দেখলাম আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে না,সুন্দরীই লাগছে।আমার কাজিন রিতা আমাকে নিয়ে ছাদে আসল।ছাদে খুব সুন্দর করে মরিচা বাতি আর হ্যাজাক বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে একটা ঝাড় বাতি প্যান্ডেলে ঝুলছে।ডেকোরেশন এর কোন কমতি রাখা হয়নি।আগে থেকেই পার্লারের মেয়েরা এসে এখানে বসে আছে, এরা মেহেদী পরাবে।
সব মেহেমানরা এক এক করে আসতে লাগল।বিয়ে বাড়িতে এমন সব মেহেমানরা আসে যাদের আমি জন্মের পরে ও দেখি নাই।একটু আগে একটা আন্টি এসে আমারর সাথে ছবি তুলে গেলো।আন্টি আমার বাবার দূর সর্ম্পকের কাজিন হয়।এর মধ্যে আরিফ আংকেলরা ও কিছুক্ষন আগে চলে এসেছে।তাদের দেখে আমার মনটা নিমিষেই আবার কালো মেঘে ঢেকে গেলো।কারন তাদের সাথে নিশ্চয়ই অনুরাগ আসবে।তাকে দেখলেই আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না।আন্টি আংকেল এসে আমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলল।আমি ও তাদের সাথে মুখে হাসি টেনে কথা বললাম।আমার বেহায়া চোখ জোড়া খালি অনুরাগকে এক পলক দেখার জন্য ছটপট করছে।মন খালি বলছে এখন তুই অনুরাগকে দেখে নে পরে আর চাইলেও দেখতে পারবি না কারন তুই অন্যের অর্ধাঙ্গনী হয়ে যাবি মনে মনে কথাটা বলতেই চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গরিয়ে পরল।আমি সবার অগোচরে জলটুকু মুছে নিলাম।
বাড়িতে আসা মেহেমানদের মধ্যে সব পিচ্চিরা হাতে মেহেদী পরেছে।তাদের হাতে ছোট করে একধরনের ডিজাইন করে দিয়েছে পার্লারের মেয়েরা।বাচ্চা গুলোকে মেহেদী পরানো শেষ হলে আমাকে বসানো হলো।আমার ইচ্ছা ছিলো না এসব দেওয়ার।বাবা মার মন রাখতে এসব করতে হচ্ছে।আমার হাতের কনুই থেকো আঙ্গুল পর্যন্ত ডিজাইন করে দিলো তারা।আমার এক হাতে তারা আমার নিজের নাম লিখে দিলো।তারপর তারা আমাকে আমার বরের নাম বলতে বলল।আমি ও আনমনে অনুরাগের নাম বলে দিলাম।তারপর তারা আমার অন্য হাতে অনুরাগের নাম লিখে দিলো।মেহেদী দেওয়া শেষ হলে আমি পুরোহাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম।একটা জায়গায় আমার চোখ আটকে গেলো। আমি রাগে পার্লারের মেয়েদের বললাম..
–আপনারা আমার হাতে অনুরাগ লিখেচেন কেন? আমার বরের নাম তো আবির।
–ম্যাম আপনিই তো অনুরাগ লিখতে বললেন।
–কি আমি বলেছি।
–হুম।আপনাকে জিজ্ঞেস করতেই আপনি তো এই নামটাই বললেন।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
নিজের বোকামির জন্য নিজের মাথাই চাটি মারলাম।আমার মনে সবটুকু জায়গা অনুরাগ দখল করে আছে
। তাকে এতো সহজে কীভাবে ভুলবো। নিজের হাতটা সামনে এনে অনুরাগের নামটা যেখানে লেখা সেখানে কিছুক্ষন চেয়ে রইলাম।তারপর বললাম,আপনি আজকে এরকম না করলে আমাদের গল্পটা ও অন্যরকম হতো।খুব কী ক্ষতি হতো যদি আমরা “অনুরাগের ছোয়া ” হয়ে থাকতাম। কতাটা বলে সামনের দিকে তাকাকেই আমি যাস্ট অবাক হয়ে গেলাম–
।
।
।
#চলবে?