অপেক্ষিত প্রহর পর্ব-০৯

0
310

#অপেক্ষিত_প্রহর
#আফসানা_মিমি
|৯ম পর্ব |

অপেক্ষা মৃত্যুর চেয়েও কষ্টকর। অপেক্ষা এমন একটা জিনিস যে অপেক্ষা করে সে বুঝে। অপেক্ষা করতে করতে প্রভাতী, রজনী পার হয়ে যাবে কিন্তু অপেক্ষার পালা শেষ হবে না।
আমি এই অপেক্ষাটা করেছি, অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে এত বেলা পার করেছি। আজ তুমি অপেক্ষা করবে, আমার জন্য ছটফট করবে, আমার ভালবাসা পাবার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকবে, আমার মুখশ্রী হতে ম্যাজিক্যাল কিছু শোনার জন্য আবেদন জানাবে। কিন্তু আমি চুপ থাকব, একদম চুপ। চুপ থেকে তোমার অস্থিরতা দেখবো।

কাঠের সিঁড়ি বেয়ে অর্ধেক পেরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কাঠের অর্ধেক সিঁড়ি দাঁড়াতেই ইফাজের ঘরের পুরো অংশ দেখা যায়। মধ্যরাতে ইফাজ সারাঘরে পায়চারি করছে। একবার গিটার বাজাতে যাচ্ছে তো একবার তবলা বাজাচ্ছে। এই বিছানায় শুয়ে যাচ্ছে তো এই জানালার বাহিরে উঁকি দিয়ে কি যেন দেখে যাচ্ছে। আমার ব্যাপক হাসি পাচ্ছে ইফাজের কান্ড কারখানা দেখে।
আমি যদি এতক্ষণ ঘরে ঘুমে থাকতাম তো নিশ্চয়ই ইফাজের এহেন ধুপধাপ আওয়াজে আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতো। কিন্তু আমি তো এখন সজাগ, আমার ইফকে দেখছি। মন ভরে দেখছি। ইশ আমার ইফুই ইফাজ আমার ইফাজ, আমার বর, আমার সব।

ইফাজের এমন অস্থিরতা দেখে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। চেহারায় ঘুমের কিছুটা ভাব ধরে সিঁড়ির অর্ধেক অংশে দাঁড়িয়ে-ই বলতে শুরু করলাম,

– এই যে শিল্পী সাহেব, নিজে ঘুমাবেন না আমাকে ঘুমাতে দেবেন না। এমন ধুপ ধাপ আওয়াজ করছেন কেন? ঘুমাতে দেবেন নাকি! কাল সকালে আমার ছোটবেলার খেলার সাথীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা, আপনার জন্য মনে হচ্ছে দেখাও করতে পারব না। আপনি নিজে শান্তিতে থাকছেন না আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না। ঘুমাবেন আপনি? না ঘুমালে বাহিরে বের হয়ে যান তো! আর আমাকে ঘুমাতে দিন।

আমার কথা বলতে দেরি কিন্তু ইফাজের আমার কাছে আসতে দিরে না। হাত দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল দোতলায়। এত ফাস্ট ইফাজ এমন একটা কান্ড করে বসবে তা ভাবতে পারিনি আমি।

রাগে ইফাজের শরীর থরথর করে কাঁপছে। ইফাজের রাগ দেখে আমার তো ব্যাপক হাসি পাচ্ছে। এবার বুঝো চান্দু কষ্ট কাকে বলে, অস্থিরতা কাকে বলে? মুখে কিছুটা রাগান্বিত চেহারার ভাব এনে ইফাজের উদ্দেশ্যে বললাম,

– কি হচ্ছেটা কি এই রজনীতে! আপনি আমাকে এখানে টেনে নিয়ে আসলেন কেন? আপনার লজ্জা করছে না, এভাবে একজন মেয়েকে একান্তভাবে নিজের কক্ষে নিয়ে আসতে?

ইফাজ এবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। আমাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে দাঁতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

– তোমার লজ্জা করে না, বিবাহিত হয়েও অন্য পুরুষের সাথে ঢলাঢলি করতে! তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী, তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আমি বেঁচে থাকতে এটা মানতে পারব না যে, তুমি অন্য কারো সাথে দেখা করতে যাবে, হাসাহাসি করবে। তা আমি মানতে পারব না।

ইফাজের কথা শুনে চমকালাম। এত সিরিয়াস আমাকে নিয়ে ইফাজ?

– এই যে শিল্পী সাহেব, আপনি কিন্তু একদম বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনি আমাকে প্রমিস করেছেন ডিভোর্স দিয়ে দিবেন। এই কয়েক দিন শহরে থেকে এসেছেন, ডিভোর্সের জন্য আবেদন করে আসেন নি? ডিভোর্স না দিলে কিন্তু আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। আমি আমার ছোটবেলার সাথীকে বিয়ে করবো। আমার খেলার সাথী, আমার ভালোবাসা।

আমার কথা শেষ হবার সাথে সাথেই ইফাজ একটা কান্ড করে বসলো। ভয়ঙ্কর কান্ড! যে কান্ডে জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

আচমকাই ইফাজ আমার অধরে আক্রমন করে বসলো। নিজের এক হাত দিয়ে আমার কোমরে এত জোরে আঁচর কেঁটে দিলো যে সঙ্গে সঙ্গে আমার আঁখি যুগল পানি চলে অসে। কিছুক্ষণ পর ইফাজ আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি কান্না শুরু করলাম। ইফাজকে দেখে মনে মনে বলতে লাগলাম,” আমার এই ইফুকে চাইনা। আমার চাই আমার ছোটবেলার ইফুকে। যে কখনো আমাকে কষ্ট দিত না।” আমার কান্না দেখে ইফাজ আমার কাছে এসে বলল,

_তুই আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাবি, তাই না! এত কিছুর পর তোকে আমি কাছে পেয়েছি দূরে সরিয়ে দেবার জন্য?তোকে আমি ডিভোর্স দিব না। তুই কখনো আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবি না। আমিও দেখবো তুই কি করিস। চব্বিশ ঘণ্টা, শুধুমাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তোকে আমি তোর জায়গা চিনিয়ে দিবো। আমাকে রাগানো তাই না! এই ইফদজকে রাগানোর শাস্তি ক্ষণে ক্ষণে তুই পাবি। যা আমার চোখের সামনে থেকে, সর! এখন তুই আমার চোখের সামনে থাকলে আমি ভুল কিছু করে বসবো।

ইফাজ আমাকে তুই তোকারি করছে। আমি তো সবসময় এমন দুষ্টুমি করি, ইফাজকে জ্বালাতন করার জন্য আজকে একটু বেশি করে ফেলেছি। তাই বলে এইভাবে অত্যাচার করবে! না এটা মানা যায় না। এ মানুষটির সাথে আমি কথাই বলব না। ইশ আমার কোমড় ছিলে ফেলেছে, খচ্চর ইন্দুর টা। না এক মুহূর্ত থাকব না এই বদ শিল্পটার কাছে। ব্যাটা তুই আমাকে কি চব্বিশ ঘন্টার সময় দিলি! আমি নিজেই তোর কাছ থেকে দূরে সরে যাবো এক সপ্তাহের জন্য। তখন বুঝবি কত ধানে কত চাল!

দুঃখে, কষ্টে,অভিমানে চোখের পানি মুছতে মুছতে নিজের ঘরে চলে আসলাম। ইফাজকে তো একটা শাস্তি দিতেই হবে। আমি স্বপ্নেও ভাবি নি এই বদ ছেলেটা আমার অনুমতি ছাড়া আমার সাথে ইয়ে করবে। কখনো ক্ষমা করব না ইফুর বাচ্চার বাপ! তুই আমাকে কি শাস্তি দিবি তোর ব্যবস্থা করছি আমি।
————-
সকাল আটটা বেজে চল্লিশ মিনিট। গতকাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি ইফাজের ;তাই সকালে উঠতেও দেরী হয়ে গেল। একেবারে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসলো। আশেপাশে নজর ঘুরিয়ে হিবারানীকে খোঁজ করতে লাগলো। হিবারাণীকে যে সরি বলতে হবে! প্রায় বিশ মিনিট চারপাশে নজর ঘুরিয়েও দেখা মিলল না হিবারাণীর। তবে কি গতকালের ব্যবহারের কারণে অভিমান করেছে!
ইফুর যে এখন তার হিবারাণীর সাথে কথা বলতেই হবে। কেমন অস্থিরতা কাজ করছে ইফাজের। মনে হচ্ছে, এখন হিবারাণীকে না দেখলে পাগল হয়ে যাবে! নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ইফাজের হিবারাণীর কন্ঠস্বর না শুনে।

সদর দরজা দিয়ে আবার মা ঘরে প্রবেশ করতেই এ ফার্মের উদ্দেশ্যে বলল,

– ও শাশুড়ি মা! তোমার অভিমানী মেয়েটা কোথায় গেল? দেখছি না যে!

– একদম পিটানি দিবো, অভদ্র ছেলে কোথাকার! আমার মেয়েকে কি করছিস তুই? যার কারনে মেয়েটা সকালে না খেয়েই বেড়িয়েছে! এখন তোর পিঠে কাঁঠাল গাছের ডাল ভাঙবো আমি। মেয়েটা অভিমান করে সকালে কোথায় চলে গিয়েছে কে জানে! আজ আমি তোকে বলবোই না যে আহিবা কোথায় গিয়েছে। কি করেছিস তুই মেয়েটার সাথে! যার কারনে আমার মেয়েটা কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে!

– ও শাশুড়ি আম্মু, তুমি তোমার একমাত্র মেয়ে আর মেয়ের জামাই এর মাঝখানে কেন আসতে চাচ্ছো!তোমার মেয়ে বেশি তিড়িংবিড়িং করে তাই শাস্তি দিয়েছি। এখন বলো, কোথায় গিয়েছে?

ইফাজ আর আহিবার মায়ের কথার মাঝেই আইবার বাবা চলে আসেন।

– এই ছেলে! তুমি আমাকে কি বলেছো? মেয়েটা আমার অভিমান করে কোথায় চলে গিয়েছে। একদম ঠিক করেছে! আমাদের না জানিয়ে একে তো বিয়ে করেছো আমার মেয়েকে তার উপর আমার মেয়েকে কষ্ট দিচ্ছো নিজের পরিচয় গোপন করে। এখন আবার আমাদেরও নিষেধ করেছো যেন আমরা আমাদের মেয়েকে না জানাই যে আমরা তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে সব জানি। একদম ঠিক করেছে আহিবা। আমাকে বলল, সাতদিন পর চলে আসবে।

– এই তোমরা দুজন আমার কোন জনমের শত্রু বলো তো! আমার বউ আমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে, কোথায় আমাকে একটু সাপোর্ট করবে! তা না করে আমাকে বকা শুরু করছো। আমি জানি তোমরা দু’জনেই জানো আমার হিবারাণী কোথায় গিয়েছে। ভালোই ভালোই বলে দাও না হলে কিন্তু তোমাদের দুজনের সাথে আর কথা বলবো না।

ইফাজের কথা শুনে আহিবার বাবা বলে উঠলেন,

– তোমরা ছেলে মেয়েরা তো এটাই করতে পারো। আমার এক মেয়ে যে কিনা আমাকে বলে,” খবরদার বাবা কাউকে বলবে না আমি কোথায় যাচ্ছি।” আর এদিকে তুমি বলছো!,” না বললে কথা নেই” আমি কোথায় যাবো এখন ?

– ও শ্বশুর আব্বু বলে দাও না! দেখো আমি তোমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র মেয়ে জামাই লাগি। তোমাকে কত কষ্টে রাজি করিয়েছি এই বাড়িতে আসার জন্য। আমি তো আর ঐসব মেয়ের জামাইয়ের মত না যে, লুকিয়ে বিয়ে করে পরিবার থেকে গোপন করে রেখেছি। আমি তো প্রথম থেকে তোমাদের বলে দিয়েছি! তোমাদের সেই ছোট্ট ইফু আর তোমাদের একমাত্র জামাতা আমি।

– হ্যাঁ হ্যাঁ তার জন্য আপনি কম ঘোরাঘুরি করেন নাই। এই আহিবার মা! আমি গেলাম বাজারে, দোকান নাকি সমস্যা হয়েছে দেখে আসি। তুমি তোমার মেয়ের জামাইকে সামলাও।

আহিবার বাবা চলে যেতেই ইফাজ আহিবার মায়ের পানে করুন চোখে তাকায়। আহিবার মা’ও আজকে ইফাজের চাহনি দেখে মুখ সরিয়ে নেয়। ব্যস্ততার মধ্যেই ইফাজের উদ্দেশ্যে বলেন,

– মেয়ে আমার বড্ড অভিমানিনী। কষ্ট পেলে বা রাগ করলে, হয়তো তার বুড়ি মার কাছে চলে যায় নয়তো চলে যায় নানু বাড়িতে। তুমি খোঁজ করে দেখতে পারো। আরেকটা কথা, এই যে সাবধান ছেলে! আমি কিন্তু কিছুই বলিনি। যদি পরবর্তীতে শুনতে পাই আমার নাম বলেছো! তাহলে কিন্তু কাঁঠাল গাছের ডাল দিয়ে তোমাকে পিটাবো।

আহবার মায়ের কথায় ইফাজ খুশি হয়ে যায়। শ্বাশুড়ি মাকে দুইবার সালাম করে ওপরে চলে আসে তৈরি হওয়ার জন্য।

———–

মাটির ভাঙা-চোড়া রাস্তায় ভ্যানে চড়ে এগিয়ে যাচ্ছি নানুবাড়ির উদ্দেশ্যে। এই রাস্তায় গাড়ি চলাচল দুষ্কর। আমি জানি, বদ শিল্পীটা যেভাবেই হোক এখানের ঠিকানা পেয়ে যাবে। কিন্তু বদ শিল্পীটা গাড়ি ছাড়া কীভাবে আসবে? আগে তো গ্রামে থাকতো, তখন এখানে সেখানে চলাচল করার অভ্যাস ছিল। কিন্তু এখন! এখন তো সে শহরে গিয়ে বড়বাবু হয়ে গিয়েছে। যাকে বলে বড়লোক। এখন কি সে গাড়ি ছাড়া চলাফেরা করতে পারবে? যাইহোক ঐ বদ শিল্পীটা আসলে আমি যাব না। একদম যাব না। কত বড়ো সাহস! আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছে? আমাকে রাগ দেখিয়েছে! আমাকে তুই বলে সম্বোধন করেছে? যাবনা যাবনা যাবনা যাবনা আমি বদ শিল্পীটার কাছে যাব না।

– আরে কি হয়েছে মামা তোমার! সেই কখন থেকে একা একাই বকবক করে যাচ্ছো, বাসা থেকে রাগ করে চলে এসেছো নাকি?

– আহ আকবর মামা! কথা বলবেন না। এমনিতে মন ভালো নেই। আপনি তাড়াতাড়ি পা চালান।

– আচ্ছা মামা।

নানুবাড়ি কাছে আসতেই ভেন থেকে নেমে পড়লাম। পঞ্চাশ টাকা আকবর মামাকে দিয়ে হাতের ব্যাগ কাঁধে তুলে চললাম নানু বাড়ির উদ্দেশ্যে। নানুর বাড়িতে আমার নানু, পারভীন খালামণি ছাড়া আর কেউ নেই। পারভীন খালামণি প্রতিবন্ধী, এক পা ছোট আরেকটা লম্বা। খালামনির এই অবস্থার জন্য খালামনির বিয়ে হয় না। খালামণি বয়স এখন থেকে পঁয়ত্রিশ। এ বয়সে বৃদ্ধ মায়ের সেবা করেন আর স্কুলে চাকরি করেন। আমার নানা ছিলেন খুবই শিক্ষিত মানুষ। মেয়ে যতই প্রতিবন্ধী হোক না কেন স্কুলে পাঠাতে ভুলেন নি। স্কুল, কলেজ পর্যন্ত পড়িয়েছেন যেন ভবিষ্যতে কিছু করে খেতে পারে কারো কাছে যেন হাত পাততে না হয়।

নানু বাড়ি আসতে মনটা খুশিতে ভরে উঠল। আমাদের গ্রাম থেকে নানুর বাড়ির গ্রাম বেশি সুন্দর। আর নানু বাড়ী তো আরো বেশি সুন্দর। সব ধরনের ফল ফুলের গাছ এখানে পাওয়া যায়।

নানু বাড়িতে ঢুকতেই খালামনির সামনে পড়ি আমি। খালামণি আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। এই প্রথম কাউকে না জানিয়ে খালামনির বাসায় চলে এসেছি।খালামনি আমাকে দেখে বলে উঠলো,

– আরে পরী, তুই এখন এই সময়ে আমাদের বাসায়! সবাই ঠিক আছে তো? আমাদের না বলে চলে এসেছিস কেন?

– তোমাদের কথা খুব মনে পড়েছিল। আর কলেজ থেকেও ছুটি পেয়েছি তাই চলে এসেছি।

– ভালো করেছিস। মার সাথে গিয়ে দেখা কর মা এইমাত্র নামাজ পড়ে তসবি পড়তে বসেছে।

খালামনির সাথে নানুমনির কাছে চলে গেলাম। নানুমনির কাছে যেতেই নানুমনি আমাকে দেখে কান্না শুরু করে দিল।এটা সবসময় করে, আমাকে দেখলেই কিছুক্ষণ ধরে কান্না করবে তারপর দোয়া দুরুদ পড়ে আমাকে মাথায় ফুঁ দিবে।

দুপুরে খাওয়ার পর শেষ বিকেলে খালামনির সাথে বের হয়েছি নদীর পাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আকবর মামার গাড়ি করে আমাদের নদীর পাড়ে নিয়ে গেলেন।
নানুমনি আবদার করেছেন, কলমি শাক খাবে। তাই নদীর পাড় থেকে কলমি শাক তুলতে যাচ্ছি মূলত।

এত কিছুর মাঝেই ইফাজের কথা ঠিকই মনে পড়েছে আমার। কিন্তু আমি এবারে খুব শক্ত হয়ে আছি ইফাজ কোনভাবে আমার অভিমান ভাঙাতে পারবে না।

আকবর মামার ভেনে করে সন্ধ্যা নামতেই আমি আর খালামনি বাসায় চলে আসলাম। বাড়িতে প্রবেশ করতেই নানুমনিকে উঠোনে দেখতে পেলাম। নানুমনি উঠোনে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছে। আমাদেরকে দেখে নানুমণি বলতে শুরু করল,

– হ্যাঁরে নানু মা, বাড়িতে সবকিছু ঠিক আছে তো? কারো সাথে রাগারাগি করে আসিস নি তো?

– না নানুমনি, সব ঠিক আছে। কারো সাথে রাগ করিনি।

নানুমনি আর কিছু বললেন না আমাকে। শুধু এতোটুকুই বললেন,
– যা নিজের ঘরে যা। আর পারভিন আমার সাথে আমার ঘরে আয় তো!

নানুমনির এমন গম্ভীরতা আমাকে খুবই ভাবাচ্ছে। নানুমণি সচরাচর কখনো আমার সাথে এমন গম্ভীর কণ্ঠস্বরে কথা বলেন না। আজকে নানুমানির কণ্ঠস্বর শুনে খুব খারাপ লাগছে।
যাই হোক আর এত কিছু না ভেবে নিজের ঘরে চলে আসার জন্য উদ্যোগ নিলাম।

আমার ঘরে প্রবেশ করতেই কে যেন আমাকে টেনে দরজার সাথে চেপে ধরল। ভয়ে আমার শরীর কাঁপাকাপি অবস্থা।
আমার সামনের মানুষটির স্পর্শ অনুভব করে আমি ভাবছি,
– আমি যাকে ভাবছি ইনি সে নয়তো? আমার ভাবনার মানুষটা যদি হয়, তাহলে আমি কান্না করে দিবো।

চলবে………