অপ্রিয় শহরে আপনিটাই প্রিয় পর্ব-২+৩

0
270

#অপ্রিয়_শহরে_আপনিটাই_প্রিয়
#লাবিবা_আল_তাসফি

২.

‘তোমার আচরণ আমাকে বারবার হতাশ করছে। তোমার কি মনে হয়না তোমার আচরণ পরিবর্তন করা উচিত?’

‘জি মনেহয়।’

ছেলের এমন সহজ স্বীকারোক্তি হজম হতে চাইল না তারিকুল সাহেবের। এমন স্বীকারোক্তি পরে কেমন কথা বলা উচিত সেটাই ভাবছেন তিনি। আজ তিনি খুব পাকাপোক্ত ভাবেই প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন ছেলেকে কিছুটা ধমকি ধামকি দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার ছেলে খুব সুন্দর ভাবেই তার সাজানো গোছানো আয়োজে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে। ছেলের চতুরতা তাকে বরাবরের মতই হতাশ করলো। পৃথিবীর সকল বাবা যেখান একজন চতুর সন্তানের আশা করে সেখানে তরিকুল সাহেব ভাবেন এর থেকে একটা গর্ধোবকে মানুষ করা তার জন্য সহজ ছিল। অন্তত সে তার কথা মান্য করে চলত। এই ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করতে করতেই তার কিলো চুলে পাক ধরেছে। হতাশ চিত্তে তরিকুল সাহেব বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। নিজের কামরার দিকে যেতে যেতে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘ভেব না তুমি আমাকে পরাজিত করতে পেরেছ। এবার তোমার ভাগ্য তোমায় সাহায্য করেছে। পরবর্তীতে তোমার বাঁচার সব রাস্তা আমি বন্ধ করে দিব।’

তরিকুল সাহেব যেতেই শাকিলা দম ছেড়ে বাঁচলো। আজ কোনো যুদ্ধ না বেঁধে যায় এমনটা ভেবেই তিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলছিলেন। ছেলের গালে ভাত তুলে দিতে দিতে শাসনের স্বরে তিনি বললেন,

‘কতবার তোমাকে এমন করতে না করেছি? তোমাদের বাবা ছেলের যন্ত্রণায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। দ্বিতীয়বার আর আমি তোমায় ক্ষমা করবো না বলে দিলাম।’

মায়ের বাধ্য ছেলের মত আয়াজ মাথা নাড়িয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। শাকিলাও আর কিছু বলতে পারলো না। ছেলেটার সুন্দর মুখটার দিকে তাকালে সে আর রাগ করে থাকতে পারে না। এমন চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য ছেলেটা তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে। তরিকুল সাহেব ইয়াং টাইমে এমন সুদর্শন ছিলেন। শাকিলার এখনো মনে আছে যেদিন তরিকুল সাহেব তাকে দেখতে গিয়েছিল সেদিনের কথা। এত মুরব্বিদের সামনেও শাকিলা লজ্জার কথা ভুলে হা করে তাকিয়ে ছিল। পরে এ নিয়ে কত লজ্জাই না তাকে পেতে হয়েছে!
খাওয়া শেষে রুমে এসে লম্বা করে বিছানায় শুয়ে পড়ল আয়াজ। পুরো শরীর ব্যথায় টনটন করছে। আজ কলেজ মাঠে ফুটবল খেলা ছিলো। বিপক্ষ দল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে আয়াজকে আঘাত করেছে। তবে আয়াজ এর বিপরীত কোনো আঘাত তাদের দেয়নি। কারণ তার দেওয়া আঘাত তো এত অল্প হতে পারে না! তার দেওয়া আঘাত ওদের কলিজা পর্যন্ত দাগ বসিয়ে দিবে।
আয়াজ শুয়ে থেকেই ফোন স্ক্রোল করতে লাগলো। প্রিয়তার একাউন্টে যেতেই দেখলো প্রিয়তা দু ঘন্টা পূর্বে একটি পোস্ট করেছে। যেখানে তার পরনে আকাশি রঙের জামদানি শাড়ি। যেটা আজ সকালেই তার পরনে ছিল। ছবিটাযে ক্যান্ডিট তা দেখেই বুঝে ফেলার মতো। প্রিয়তা কোন ভাবনায় বিভোর এমন সময় ছবিটা ক্লিক করা হয়েছে। ক্যামেরা ম্যান যে তার দক্ষ হাতে ছবিটা ক্লাক করেছে সেটা একদম ক্লিয়ার। আয়াজের এটাও বুঝতে বাকি রইল না যে ক্যামেরা ম্যানটা কোনো এক পুরুষ। কেননা প্রিয়তার সামনে থাকা কফি মগে কোনো পুরুষালি অবয়বের প্রতিবিম্ব লক্ষ করা যাচ্ছে। আয়াজের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল,

‘অন্য পুরুষের সাথে সময় কাটানোর খুব বড় মূল্য দিতে হবে আপনাকে প্রিয়। এ ব্যাপারে আমি কখনোই বিন্দু পরিমান নরম হবো না। যতটা খুশি উড়ে নেন আর অপেক্ষা প্রহর গুনতে থাকেন। আপনার পাখা ছাঁটার আয়োজন আমি খুব শীঘ্রই করছি।’
__________

প্রিয়তা সবাইকে খাবার দিয়ে না খেয়েই রুমে চলে গেলো। কিন্তু এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সবাই যে যার মতো করে খেতে লাগলো। কাজের মেয়ে রত্না প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো প্রিয়তার জন্য। প্রিয়তা তখন তার ছোট্ট রুমের জানালা ঘেঁষে রাখা টেবিলে ডায়েরির পাতা উল্টাচ্ছিল। রত্না দরজা নক করতেই প্রিয়তা তাকে ভেতরে আসতে বলল।

‘আপা আপনে বোজলেন কেমনে আমি আসচি?’

প্রিয়তা মুচকি হেসে বলল,

‘এই অসময়ে তুই ছাড়া আর কেউ আসেনা আমার রুমে।’

প্রিয়তার কথা শেষ হতেই রত্না খাবার প্লেট প্রিয়তার সামনে রাখলো।

‘আমি নাহয় কামের মাইয়া তাই কেউ আমার দিকে খেয়াল দেয় না। কিন্তু আপনেতো তাগো পরিবারের লোক। আপনের সাথে এমন করে কেন? আপনের মতো শিক্ষিত হইলে আমি কবে এই বাড়ি ছাইড়া চইলা যাইতাম। আপনের মামির মতো দজ্জাল মহিলা আর একটা আমি দেখি নাই। তওবা তওবা।’

প্রিয়তা রত্নাকে চোখ গরম দিলো। রত্না মুখ বাকিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। কিছু একটা মনে পড়তেই বলল,

‘আপা একটা কথা বলবার ভাবছিলাম।’

‘এত ভাবার কি আছে? বলে ফেল।’

‘আপনের রুমে পাটি বিছাই ঘুমাইতে চাইছিলাম। ঐ রান্নাঘরের পাশে থাকতে কেমন যেন লাগে। মনে হয় কেডায় জেন হাঁটে বাড়ির মধ্যে। আপনের রুমে খালি রাইতে রাইতে ঘুমাইতাম।’

‘আচ্ছা।’

‘সত্যি আপা?’

‘হুম।’

‘আপা আর একটা কথা।’

‘বল।’

‘আপনের যে লাল রঙের একটা জামা আছেনা? ঐ যে লাল লাল ফুল? ঐরম একটা জামা আমারে কিইনা দিবেন? আমার বড় আপার বিয়া সামনের মাসে। আব্বায় সকালে কল কইরা বলছে। ছেলের অবস্থা ভালোই। অটো চালায়। আপার লগে নাকি মানাইব।’

‘আচ্ছা দিব।’

রত্না খুশি হলো। প্রিয়তাকে ওর ভালো লাগার অন্যতম কারণ হলো প্রিয়তা ওর সকল আবদার পূরণ করে। রত্নাকে খুশি হতে দেখে প্রিয়তার ও ভালো লাগলো। মেয়েটা মাত্র এগারো বছর বয়সে এ বাড়িতে এসেছে। এখন বয়স পনেরো। এই চার বছরে মেয়েটা একটুও পাল্টায়নি। প্রিয়তা যখন এসব ভাবছিল তখনই প্রিয়তাকে চমকে দিয়ে রত্না বলল,

‘আপা আপনে বিয়া করবেন না? আপনে তো আমার বড় আপার থেইকেও বড়। আব্বায় বলছে এরপর ভালো পোলা পাইলে আমারেও বিয়া দিয়া দিবে আর আপনে এখনো বিয়া করতে পারলেন না।’

প্রিয়তা রত্নাকে ধমক দিয়ে ঘুমাতে বলল। মেয়েটা আজকাল খুব বড় বড় কথা বলে। কবেনা এমন কিছু বলে বসে যা প্রিয়তার সম্মানকে ঢুবিয়ে দেয়।

বেডে শুয়ে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসলো না প্রিয়তার। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত একটা ছাড়িয়েছে। চারদিক বেশ নিশ্চুপ। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক পরিবেশকে গম্ভীর করে তুলেছে। দূর থেকে দু একটা গাড়ির হর্ন শোনা যাচ্ছে আবার তা মিলিয়ে যাচ্ছে। হাইওয়ে থেকে তাদের বাড়ি অনেকটা ভেতরে হওয়ায় ব্যস্ত শহরের হৈচৈ খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। প্রিয়তা বালিশের তলা থেকে হাতরে ফোন বের করে ফেসবুকিং করতে লাগলো। হঠাৎ একটা আইডি থেকে ম্যাসেজ আসলো। প্রিয়তা চেনে না এই আইডির মালিককে। কিন্তু আইডিতে অনেক সুন্দর শিক্ষামূলক পোস্ট দেখেই সে এড করেছিলো তার সাথে। কিছুটা কৌতুহল নিয়ে ম্যাসেজ ওপেন করতেই দেখলো সেখানে লেখা,

‘ রাত অনেক গভীর হয়েছে। ঘুমিয়ে পরুন। রাত জেগে অনলাইনে থাকা মোটেই ভালো কাজ নয়।’

প্রিয়তার কপাল কুঁচকে এলো। এই ব্যক্তি আসলে কে? প্রিয়তা ঝটপট টাইপ করল,

‘কে আপনি?’

প্রায় সাথে সাথেই সিন হলো। যেন ওপারের ব্যক্তি তার ম্যাসেজের অপেক্ষাই করছিল। উত্তর এলো।

‘আপনার অপ্রিয় কেউ।’

‘এটা আবার কেমন পরিচয় দেওয়ার ধরন?’

আর রিপ্লাই এলো না। প্রিয়তা এক দুই করে দশ মিনিট অপেক্ষা করলো। কিন্তু আর কোনো উত্তর এলো না। প্রিয়তা কিছুটা কৌতুহল বোধ করলো এই ব্যক্তির প্রতি। কিন্তু অনেক রাত হওয়ায় সে আর জেগে থাকতে পারলো না। তাছাড়া তাকে তার শরীরকেও কিছুটা বিশ্রাম দিতে হবে। ফোনের নেট অফ করে সে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। সকালে স্কুল আছে। আর রাত জাগা ঠিক হবে না। কিছুক্ষণের মাঝেই গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল প্রিয়তা।

চলবে………..

#অপ্রিয়_শহরে_আপনিটাই_প্রিয়
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩.

অনেকক্ষণ খুঁজে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পছন্দ করলো প্রিয়তা। শাড়িটা সত্যিই চোখে লাগার মতো। নিখিলের দিকে শাড়িটা এগিয়ে ধরতেই নিখিল বললো,

‘ম্যাডামের চয়েজ তো দেখছি সত্যিই প্রশংসনীয়।’

প্রতিউত্তরে প্রিয়তা মুচকি হাসলো মাত্র। দোকান থেকে বেরিয়ে তারা মেইন রোড ধরে হাঁটতে লাগলো। নাখিল কিছু বলার জন্য উশখুশ করতে লাগলো।

‘ম্যাডাম চলুন কোনো ক্যাফেতে বসা যাক।’

প্রিয়তা আপত্তি জানালো। নিখিলের মুখ করুণ দেখালো। সে অনুরোধ করে বলল,

‘অন্তত এক মুঠো বাদাম তো খাবেন!’

প্রিয়তা রাজী হলো। রাস্তার ওপারে বাদাম বিক্রি করছে। নিখিল সন্তুষ্ট চিত্তে বাদাম আনতে ওপারে গেছে। প্রিয়তা দাড়িয়ে রইল একা। ভাপসা গরমে তার নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।

‘আপনি অন্যপুরুষের সাথে ঘুরবেন না। কষ্ট হয় আমার।’

পাশ থেকে এমন কথা শুনে চমকে তাকায় প্রিয়তা। গম্ভীর মুখ করে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াজ। প্রিয়তার কেন যেন এই ছেলেটাকে ভয় লাগলো। ছেলেটাকি রেগে আছে? কিন্তু কেন? এত অধিকার বোধ আসছে কোথা থেকে? প্রিয়তা যথাসাধ্য নিজেকে কঠিন করে উত্তর দিলো,

‘আমি কি করছি সেটা আমি জানি। তোমাকে না ভাবলেও চলবে। আমার সামনে আর কখনো আসবে না।’

আগের থেকেও গম্ভীর হয়ে আয়াজ জবাব দিলো,

‘আপনি আমায় কঠিন হতে বাধ্য করছেন। পরে এর জন্য আফসোস না করতে হয়!’

প্রিয়তা সোজা চোখে আয়াজের দিকে তাকালো। এই ছেলেটিকে সে চেনে। তাদের এলাকাতেই থাকে। শুধু সে নয় এলাকার সকলেই চেনে তাকে। এর বাপ চাচা সকলে বিশাল রাজনীতিবিদ। সে সুত্রেই এলাকায় অন্যরকম দাপট আছে তাদের। তাছাড়া দেখতে সুদর্শন হওয়ায় এলাকার মেয়েদের মুখে মুখে আয়াজের নাম শোনা যায়। প্রিয়তা ছেলেটাকে সবসময় গম্ভীর শান্ত থাকতে দেখেছে। কখনো কোনো মেয়ের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়নি এই ছেলে এমনটাই শোনা যায় লোকমুখে। কিন্তু এই ছেলে যে এতবড় কান্ড করেছে তা কি কেউ জানে? এর বাপ চাচাদের কেউ জানতে পারলে নিশ্চিত প্রিয়তাকে নিজের প্রাণ হারাতে হবে। প্রিয়তা জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো। নাহ এভাবে হবে না। তাকে একপা সমঝোতার মাঝে আসতে হবে। ছেলেটাকে বোঝাতে হবে শান্ত নরম কন্ঠে।

‘কাল বিকেল পাঁচটায় ক্যাফেটেরিয়ায় দেখা হবে। এখন প্লিজ কোনো রিয়্যাক্ট না করে চলে যাও। প্লিজ।’

প্রিয়তার কন্ঠে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। আয়াজের প্রেমিক হৃদয় কোমল হলো। প্রেয়সীর কম্পনরত কন্ঠ তার প্রেমিক মনকে কিছুটা হলেও কাবু করেছে। তবে যাওয়ার পূর্বে শক্ত কন্ঠে প্রিয়তাকে শাসাতে ভুলল না। নিখিলকে ইশারা করে বলল,

‘আপনাকে আর কখনো এই ছেলের সাথে না দেখি প্রিয়। আমি আপনার প্রতি বারবার কোমল হব না মাথায় রাখবেন।’

কথা শেষ করে এক মুহুর্ত ও দাঁড়াল না আয়াজ। যেভাবে তুফানের মতো এসেছিল ঠিক সেভাবেই হারিয়ে গেল। প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে ক্লান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ততক্ষণে নিখিল পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

‘দুঃখিত ম্যাডাম। একটা কল এসেছিল। পিক করতেই লেট হলো।’

নিখিল কাগজের প্যাকেটটা প্রিয়তার দিকে বাড়িয়ে দিল। হাসি মুখে বলল,

‘আপনি বললে আমি বাদাম ছুলে দিতে পারি। আপনার কষ্টটা কিঞ্চিত কমবে না হয়!’

‘ইটস ওকে। আমি ছুলে নিচ্ছি।’

‘চলুন ওদিকটায় হাঁটি।’

প্রিয়তা দেখলো প্রায় সন্ধ্যা হতে চলছে। বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেছে। তাই সে নিখিলকে বিনয়ের সাথে বিদায় জানালো নিজের ব্যস্ততা দেখিয়ে। একটা রিকশা ডেকে তাতে চড়ে বসতেই নিখিল হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো। স্বভাবসুলভ প্রিয়তা অল্প হাসলো। প্রিয়তা চলে যেতেই নিখিল তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগটার দিকে তাকালো। শাড়িটা মুলত সে প্রিয়তার জন্যই কিনেছিল। শাড়িটা দিয়েই সে প্রিয়তাকে বিয়ের প্রোপোজাল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু হায়! সে আজ ও সাহস করে উঠতে পারর না। এই মেয়েটার সামনে দাঁড়ালেই কেন যেন সে দিক বেদিক হয়ে যায়। নিখিলের নিজের অবস্থা দেখে হাসি পেল। তার বন্ধুমহলে এ কথা একবার ছড়িয়ে পড়লে তাকে বুলির শিকার হতে হবে। হাসিতে ফেটে পরবে বন্ধুমহল।

____________

‘বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ। আমি তোমার বড় বোনের মতো। এক দুই নয় পাঁচ বছরের সিনিয়র আমি তোমার!’

‘এইজ ডাজেন্ট ম্যাটার।’

‘আর ইউ ম্যাড? বুঝতে পারছ না নাকি বুঝতে চাইছ না? ক্ষমতার জোরে যা চাও তাই হাসিল করতে চাও? কোনো পন্য আমি তোমার কাছে? যা পাওয়ার জন্য জেদ করছ?’

‘আপনাকে ভালোবাসি আমি।’

প্রিয়তা রাগে কাঁপতে লাগলো। এই মুহূর্তে ছেলেটাকে দুটো থাপ্পর দিয়ে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে এসব বন্ধ করে পড়াশোনায় মন দে। আর নয়ত কয়েকটা জঘন্য গালি যা সে মামির কাছ থেকে শিখেছে। ভালোবাসার জন্য দেশে মেয়ের অভাব পড়েছে? আমিই কেন? প্রিয়তা সময় নিয়ে নিজেকে সামলাল। তীক্ষ্ণ চোখে আয়াজের দিকে তাকালো। আয়াজের মুখটা ভিষণ করুন দেখালো। চোখ দুটো ইতিমধ্যে লাল হয়ে গেছে। অন্যদিনের মতো আজ চোখে মুখে কঠোরতা নেই। আয়াজের কোমল মুখটা দেখে প্রিয়তার খারাপ লাগলো। ছেলেটা কি কষ্ট পাচ্ছে? কিন্তু তার যে করার কিছু নেই। সমাজ যে এ সম্পর্ক সহজ ভাবে নিবে না। আঙুল তুললে সেটা তার দিকেই আসবে। প্রিয়তা শান্ত কন্ঠে বলল,

‘আমি আপনার পরিবারের সাথে এ ব্যপারে কন্টাক্ট করতে চাই। আমি চাই তারা যেন আপনার এই পাগলামি বন্ধ করুক। আমি চাইনা এ সামান্য ব্যাপার আমাদের কারো উপর প্রভাব ফেলুক। আপনার পরিবারকে জানানো জরুরি। আমি সত্যিই পারছি না।’

‘আপনি‌ ভিষণ পাষাণ হৃদয়ের প্রিয়। একটু কি কোমল হওয়া যায় না?’

প্রিয়তা এ কথার কোনো উত্তর দিলো না। আর না দ্বিতীয় বার আয়াজের দিকে ফিরে তাকালো। ব্যস্ত পায়ে বের হয়ে গেল ক্যাফে থেকে। আয়াজ করুণ চোখে চেয়ে থাকল প্রিয়তার যাওয়ার পানে। মানবীটা সত্যিই কঠিন হৃদয়ের। এই কঠিণতায় তার প্রিয়কে একদম মানায় না। তার প্রিয়কেতো হতে হবে কোমল। কোমলতাই যে নারীর সৌন্দর্য।

__________

আজ পড়াতে যায়নি প্রিয়তা। মামির কল পেয়ে সোজা বাসায় চলে এসেছে। শরীরের সাথে সাথে মন ও ভিষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তার। পড়নের থ্রিপিস না পাল্টেই লম্বা হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। মিনিট পাঁচেক পর সুজলা এলো রুমে। আজ সুজলার চেহারায় হাসি ধরছে না বললেই চলে। লাল রঙের একটা শাড়ি হাতে দিয়ে হাসি মুখে সুজলা বলল,

‘প্রিয়তা তোকে শাড়িটায় খুব মানাবে। যা তো পড়ে আয়। আমি নিজ হাতে তোকে সাজিয়ে দেব।’

প্রিয়তা অবাক চোখে মামির দিকে তাকালো। এমন সুন্দর কথার মানুষ তার মামি কখনোই না। নিশ্চই এর পেছনে বড় কোনো রহস্য আছে।

‘আমার শরীর ভালো নেই মামি। এখন ইচ্ছা হচ্ছে না। অন্য কোন সময় নাহয় পড়বো।’

সুজলার হাসি হাসি মুখ কঠিন হলো। শক্ত কন্ঠে বলল,

‘এখনি রেডি হয়ে নে। আমার বোন আসছে তোকে দেখতে। ওর বড় ছেলের জন্য তোকে পছন্দ করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে সবাই।’

‘আপনি কি ঐ নেশাখোর ছেলেটার কথা বলছেন?’

‘নেশা করে এ আর এমন কি? এখনকার বড়লোকের ছেলেরা ওমন একটু আধটু নেশা করে। আর কোনো কথা শুনতে চাই না।’

প্রিয়তা আর সহ্য করতে পারলো না। চেঁচিয়ে উঠে বলল,

‘আপনাদের কাছে কি আমি মানুষ না? আমার কি মন নেই? এতটাই অযোগ্য আমি যে ওমন চালচুলো হীন একটা নেশাখোর ছেলেকে বিয়ে করতে হবে?’

সুজলা ক্ষিপ্ত হলো। ঠাস করে থাপ্পর লাগালো‌ প্রিয়তার গালে। মুহূর্তে সুন্দর গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গেল। সুজলা তখনও রাগে ফুঁসছে। তার ঘরে থেকে তার উপর গলা চড়ানো সে মোটেই সহ্য করবে না। প্রিয়তা লজ্জা ঘ্রিণায় ঢুকরে কেঁদে উঠলো। দূর থেকে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে তুলি সবটা দেখলো। প্রিয়তাকে কাঁদতে দেখে সেও চোখের জল নাকের জল এক করলো। বাবা এলে আজ সে এর একটা বিচার করবেই। এসব আর সহ্য করা যায় না। এছাড়া আরো একজন আছে যে পারবে তার আপুকে সাহায্য করতে। সে কিছুতেই তার আপুকে অপন জঘন্য লোকটার সাথে বিয়ে করতে দিবে না। কখনোই না।

চলবে……..