অভিমানি প্রেয়সী পর্ব-০১

0
433

#অভিমানি প্রেয়সী
#মিশকাতুল
পর্ব:১

ঝিলের চুল ধরে নিচে নামিয়ে আনলেন তন্ময় এর মা।আজ যে করেই হোক এই মেয়েকে বাসা থেকে বের করতেই হবে। নিচে ঝিলের মা-বাবা বসে আছেন। এই মেয়ে কিছুতেই নিজের মা-বাবার সাথে থাকতে চায় না। এখন তন্ময় বাসায় নেই এই সুযোগ মেয়েটাকে বিদায় করার। তন্ময়ের ফুফির এক মাত্র মেয়ে ঝিলমিল আহসান ঝিল। তাদের আর কোন সন্তান নেই।আর তন্ময় ঝিলের বড়োমামার এক মাত্র ছেলে।ঝিলের ছোট মামার দুই মেয়ে আর একটা ছেলে আছে দ্বিপ, নিশি, নেহা।দ্বিপ আর তন্ময় সমবয়সী হলেও ঝিল সব সময় তন্ম্যের সাথে লেগে থাকে।তন্ময় ও ছোটবেলা থেকেই ঝিলকে খুব আদর করে।যা তন্ময় এর মা মেনে নিতে পারেন না।তার এক মাত্র ছেলে যে ভাবে ঝিলের খেয়াল রাখেন তাতে তিনি মনে করেন তার ছেলেকে খুব শিঘ্রই ঝিল নিজের করে নিবে আর এই বাড়ির বউ হয়ে থেকে যাবে।তাই কিছু হওয়ার আগেই এই মেয়েকে বাসা থেকে বের করতে হবে।এমনিতেই ঝিলের মা প্রেম করে বিয়ে করেছেন । তাই তার মেয়েকে বিশ্বাস করে বাসায় রাখা যাবে না।এখন তন্ময়।স্কুলে। এবার ক্লাস টেনে আর অন্যদিকে ঝিল এইবার ক্লাস সেভেন এ। ঝিল সেই ছোট বেলা থেকেই এখানের স্কুলে পড়াশোনা করেছে।আজ ঝিল যায় নি স্কুলে রেডি হচ্ছিল যাওয়ার জন্য কিন্তু তন্ময়ের একটা শার্ট ঝিল গায়ে জরিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিল তা দেখে অন্তরের মা ভুলভাল ভেবে নিয়ে ঝিলের মা বাবা কে আসতে বলেন।আর এখনই তিনি এই মেয়েকে বাসা থেকে সরিয়ে দিবে।

ঝিলের মা: কি হয়েছে ভাবি?ঝিলকে এভাবে টেনে আনছেন কেন?

তন্ময়ের মা আমেনা: কেন? তোমার মেয়ে যে ভাবে আমার ছেলের পিছু লেগে থাকে এভাবে থাকলে দেখা যাবে এক সময় এই মেয়ে আমার ছেলের বউ হয়ে যাবে।আর যা আমি কখনো মেনে নেব না।তাই এই মেয়েকে তুমি তোমার সাথে নিয়ে যাও ঝিনুক।এই মেয়ের চাল চলন ভালো না।এই মেয়েকে তোমাদের সাথে রাখো এখানে আর ঝিলের থাকা আমি পছন্দ করছিনা।আর তাছাড়াও ঝিল তোমাদের এক মাত্র সন্তান তাকে নিজেদের কাছে না রেখে এখানে কেন রাখবে? নিয়ে যাও এই মেয়েকে এমনিতেই এখন তন্ময় বাসায় নেইও থাকলে যেতে দিবেনা ঝিলকে তার থেকে তুমি এখন এই মুহূর্তে নিয়ে যাও তোমার মেয়েকে।

তন্ময়ের বাবা আকাশ: আহ আমেনা কি হচ্ছে কি? থাকনা এখানে! মেয়েটা সারা দিন সামনে থাকে আমার ভালোই লাগে। তন্ময়ের কাপড় জরিয়েছে তা কি হয়েছে?

আমেনা:আবার বলে কি হয়েছে? শুধু কি এই কাজ করেই বাদ রেখেছে? কত বড় হয়েছে এখন পর্যন্ত আমার ছেলের রুমেই পরে থাকে কেন? বুদ্ধি হয়নি?

আকাশ: আরে ঝিল এত সব ভেবে কি থেকেছে নাকি? বুঝলে কি আর তন্ময়ের সাথে থাকবে? ঝিল মা তুই উপরে যা।

ঝিনুক: না ভাইজান। ঝিলকে আমি আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই।এখন পরিস্থিতি সাভাবিক। এর থেকে বড় কিছু না হওয়ার আগেই ঝিলকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। ঝিল হয়তো এখন কিছু বুঝছে না তাই কিন্তু সকলের নজরে এটা সাভাবিক নয়।অনেক কথা হয়ে যেতে পারে।

রায়হান: ঝিলের মা আমি ঝিলকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি তুমি কথা শেষ করে এসো। আমি রাস্তার ফকির নই যে আমার মেয়েকে আমার নিজের কাছে রাখতে পারবো না।আজকের এই অপমান আমি মেনে নিতে পারছিনা।তুমি কথা বলে এসো আমি যাচ্ছি। ঝিল মা……বাবার সাথে চলে এসো। আজকের পর তুমি আর কখনো এ বাসায় আসবে না।

ঝিল: না বাবাই আমি যাব না।আগে তন্ময় ভাইয়া আসুক।তারপর যাবো।

রায়হান: আবার সেই তন্ময়?? আজকে যে ভাবেই হোক তমাকে এই বাসা থেকে যেতেই হবে।চলো।
ঠাসসসসসস

ঝিইইইইলল তুই খুব পাকনামি শিখে গেছিস চল আমাদ সাথে।

ঝিল:আম্মু আমি…………

রায়হান: চলো মামনি এখানে আর নয়।

ঝিলকে নিয়ে নিজেদের বাসায় ফিরে এসেছে ঝিনুক আর রায়হান।
।।
।।
।।
স্কুল শেষ করে তন্ময় বাসায় এসেছে।রুমে গিয়ে দেখে ঝিল নেই।তাই তার আম্মুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে,আম্মু ঝিলের কি হয়েছে? ও আজ স্কুলে কেন যায়নি??আবার রুমেও নেই।

আমেনা: ওকে ওর আব্বু আম্মু এসে সকালে নিয়ে গেছে?

তন্ময় : নিয়ে গেছে মানে?

দ্বিপ : ঝিল আর এখানে থাকবে না।

তন্ময় : কেন? আর তুই কখন এলি?

দ্বিপ :একটু আগে আমরা এসেছি।আর ঝিল চলে গেছে তা মুন্নি খালার কাছ থেকে জেনেই কল করেছিলাম।ফুফি মনি বললেন, ঝিল নাকি আর এখানে থাকতে চায় না।তাই নিয়ে গেছে।এখন তুই যা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খাবার খেয়ে তারপর ঝিলের বাসায় যাবো দেখি মহারানী কেন থাকতে চাইছেনা।বই -খাতা,জামা-কাপড় কিছুই নিয়ে যায় নি।চল তারাতাড়ি চলে আয়।আমি ওয়েট করছি।

তন্ময়: ওকে আমি আসছি।

আমেনা: না তন্ময় তোর যাবার দরকার নেই।ও আর আসবে না।আর দ্বিপ তুই যা গিয়ে দেখ তোর চাচা আজ খাবে কি খাবেন না?

দ্বিপ :ওকে আমি দেখছি কিন্তু বড় মা আজ বড় আব্বুর এমন কি হয়েছে? যার কারনে খাবার খেতে চাইছে না?

দ্বিপালি: কেন? আবার? গিয়ে দেখ তোর বড়মা নিশ্চয়ই কিছু গোলমাল পাকিয়েছে।তা না হলে খাবার ছেড়ে থাকার মানুষ ভাইজান নয়। যাই হোক তুই গিয়ে খাবার দিয়ে আয় রুমে।আর নিশি নেহা তোরা রুমে গিয়ে ঝিলের সব বই খাতা গুছিয়ে দে দ্বিপ গিয়ে দিয়ে আসবে।তন্ময় এর যাওয়ার দরকার নেই।

তন্ময় : কেন?

দ্বিপালি: জানিনা তবে তুমি যাবে না।কারন আমি বলতে পারবনা।দ্বিপ জলদি খাবার দিয়ে আয়।আর ঝিলের জামা কাপড় গুলিও গুছিয়ে দিস নেহা।

নেহা: আম্মু ঝিল কি আর আসবে না?

দ্বিপালি: চলে গেলে ফিরে আসে। কিন্তু ফিরিয়ে দিলে আর ফেরত আসে না।তুই যা গুছিয়ে দে।

নিশি: ওকে মামুনি।নেহা আয় আমার সাথে তুই ল্যাগেজ গুলি নিয়ে আয়।

দ্বিপ একাই এসেছে ঝিলের বাসায়।আসার সময় তন্ময় আসতে চেয়েছিল কিন্তু আকাশ রহমান না করে দিয়েছে।আজ তন্ময়ের কারনেই তার প্রিয় মেয়ের মতো ঝিল বাসা ছেড়ে চলে গেছে।তাই তন্ময়ের পাশাপাশি না থাকাই ভালো ঝিলের। কারন এ বাসার সকলেই ঝিলকে পছন্দ করলেও আমেনা পছন্দ করেন না।দ্বিপালি নিজের বড় জা এর সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন না।তাকে যথেষ্ট সন্মান দিয়ে চলেন তাই তিনি সব মুন্নির থেকে শুনেও চুপ করে আছেন। তিনি ছেলে মেয়েদের সামনে এই কথা গুলি বলতে পছন্দ করছেন না।

এদিকে দ্বিপ ঝিলের পাশেই বসে আছে,
দ্বিপ : ঝিল তোর কি হয়েছে? তুই নাকি ওখানে থাকতে পছন্দ করছিস না?এত দিন আমাদের সাথে থেকে আজ কি করে একাই থাকবি?

ঝিল:ভাইয়া আমিইইই…..

ঝিনুক: ও একা কোথায়?? আমরা নেই??

দ্বিপ : না সেই কথা নয় ফুফি মনি আমি বলতে চাইছি আমাদের সাথে ছিল ও এখানে আমাদের ছাড়া থাকতে পারবে ঝিল??

ঝিনুক:ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওকি তোমাদের সাথেই থাকবে?? নাকি অন্য অচেনা পরিবারের সাথে!! যাই হোক দ্বিপ তুই বস আমি খাবার নিয়ে আসছি আর ঝিল তুই ল্যাগেজ গুলি উপরে নিয়ে যা।আর হ্যা কাপড় গুলি আমার রুমে নিয়ে আয়। আমি এসব তোকে আর পরতে দিব না।আজকেই সপিং করতে নিয়ে যাব।

ঝিল:কিন্তু মাম্মা এগুলি সব তন্ময় ভাইয়ের পছন্দের কেনা।

ঝিনুক: আমি বলেছি! তুমি কাপড় এর ব্যাগ আমার রুমে রেখে আসবে ব্যাস।

দ্বিপ : ফুফি মনি কি হয়েছে কি? তন্ময়ের কেনা জামা কেন ওকে ব্যাবহার করতে দিবে না?

রায়হান: আমার এক মাত্র মেয়ে ঝিল নিশ্চয়ই আমার টাকার অভাব নেই তাই আমি সব কিনে দিতেই পারি অন্যর টাকার বস্ত্র আমার মেয়ের ব্যাবহার করার দরকার নেই।

দ্বিপ :আংকেল………

ঝিল: ভাইয়া তুই কই যাচ্ছিস আমাকে সাথে করে নিয়ে চল আমিও যাবো।

ঝিনুক: ঝিইইইল।
চলবে।