আঁধারে আলো পর্ব-০১

0
596

#আঁধারে_আলো
[সূচনা পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ (সবুজ)

স্বামী মারা গেছে এখনো দশদিন ও হলো না, এর মধ্যে আবার নীলিমার বিয়ে ঠিক করল তার বাবা। কম বয়সে তার বিয়ে হয়েছিলো, এবং সে অকালে বিধবা হয়েছে। বিধবা মেয়েটা এখনও তার স্বামী হারানো কষ্টে পাথর হয়ে আছে। এই সময় আবার তার বিয়ে দিতে উঠেবসে লাগছে জামসেদ আলী। কি করে মেনে নিবে নীলিমা! দুমাস আগেই মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। দু-মাসের মাথায় তার স্বামী মারা যায়। নীলিমা নিজের রুমে সাদা শাড়ি পড়ে বসে আছে আর কান্না করছে । হঠাৎ করে তার রুমে প্রবেশ করল তার মা রহিমা বেগম।

নীলিমা তার মাকে দেখে চোখের পানি মুছে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল।

রহিমা বেগম নীলিমাকে বলল — মা তুই বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নে। তোর বাবা তাড়াতাড়ি তোর বিয়ে দিতে চাইছে বেশি মানুষ জানাজানি হওয়ার আগে।

— কেন মা? আমি কি তোমাদের উপরে খুব বোঝা হয়ে গেলাম! এই জন্য কি আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাইছ? মা তুমি তো মা তুমি কেন বুঝ না আমার মনের অবস্থা! তোমরা কি ভাবে ভাবলে এই সময় আমি আরেকটা স্বামীর সংসার করব? তার ছেয়ে ভালো তোমরা আমাকে মেরে পেলো।

— দেখ মা তোর বাবা তোর ভালোর জন্য করছে। তোর ভয়েস এখনো খুব কম। তোর সামনে ভবিষ্যত আছে।

— তাই বলে এখন!

রহিমা বেগম আর কোনো কথা না বলে আঁচল দিয়ে মুখ ডেকে নীলিমার রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়। নীলিমা আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

নীলিমার ব্যপার টা,ক্লিয়ার করে দেই। নীলিমার বিয়ের ২ মাসের মাথায় তার স্বামী রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। নীলিমা দেখতে অনেক সুন্দরী হওয়াতে এখন থেকেই নীলিমার বাড়িতে মানুষের ভিড় বেড়ে গিয়েছে। অনেকেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে। নীলিমা যেমন সুন্দরী তেমনি লক্ষি একটা মেয়ে। এমন মেয়ে লাখে একটা মিলে। লম্বা প্রায় ৫ফিট্ ৬ইঞ্চি। এইচএসসি শেষ করে আর পড়াশোনা করা হয়নি। গায়ের রং ফর্সা, গোলাপি রঙের ঠোঁট, লম্বা কালো চুল। নীলিমার কপাল এতোটাই পড়া যে স্বামীর মৃত্যুর পরে তার আর স্বামীর বাড়িতে যায়গা হলোনা। বাকি সব না হয় পরেই জানতে পারবেন গল্পের সাথেই থাকুন।

এবার মূল গল্পে ফিরে আসা যাক।

কান্না করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে নীলিমা। খুব সকালে নীলিমার ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে আর ঘুমালো না সে নিজের রুমেই বসে রইলো। রহিমা বেগম সকালে নীলিমাকে ডাকার জন্য আসে।

— নাস্তা খেতে আয়। তোর বাবা তোর জন্য বসে আছে।

— তুমি যাও আমি আসছি।

নীলিমার কথা শুনে রহিমা বেগম চলে যায়। তার কিচ্ছুক্ষণ পরেই নীলিমা নাস্তা কর‍তে গিয়ে দেখে জামসেদ আলী তার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। নীলিমা গিয়ে তার পাশের চেয়ারে বসল। আর চুপচাপ খাওয়া শুরু করে দিল সবাই।
হঠাৎ করে জামসেদ আলীর কথা শুনে নীলিমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো।

জামসেদ আলী বলল — নীলিমা মা, বিকালে ছেলে পক্ষ তোকে দেখতে আসবে। আর আজকেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলবো।

জামসেদ আলীর কথা শুনে নীলিমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করল। নীলিমা এক হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে খাবার না খেয়েই উঠে গেলো।

রহিমা বেগম নীলিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। রহিমা বেগম মেয়ের কষ্টটা বুঝলেও তার কোনো কিছুই করার নেই। তার আসল কারণ হলো উনি জামসেদ আলীকে খুব ভয় পায়। তার উপরে কথা বলার মতো সাহস রহিমা বেগমের নেই। আর রহিমা বেগম ও চায় তার মেয়েটা ভালো থাকুক। কিন্তু সে মেয়ের এমন কষ্ট যেনো রহিমা বেগম সহ্য করতে পারছেনা। কি করেই বা করবে! উনি তো একজন মা। আর মা কখনো তার সন্তানদের কষ্ট মেনে নিতে পারেনা। রাত রহিমা বেগমের কাছে মনে হচ্ছে তার হাত পা কেউ লোহার শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে।

রহিমা বেগম তার স্বামী জামসেদ আলীকে বলল — এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে টা কি না দিলে হয়না? কিছুদিন আগে মেয়েটার স্বামী মারা গেছে এখন এসব কি ভাবে মেনে নিবে মেয়েটা? এতো বড় একটা এক্সিডেন্ট ঘটেছে। মেয়েটা কি এখন বিয়ে করার পরিস্থিতিতে আছে?

— তুমি চুপ থাকো। বেশি বোঝো কেন? আমি যা করছি ওর ভালোর জন্য করছি। দেখবে বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

— ভালোর জন্য তো আগেও বিয়ে দিয়েছিলেন শেষে কি হলো? আপনি বিয়েটা পেচিয়ে নিন। মেয়েটাকে একটু সময় দিন। মেয়েটা এই সিচুয়েশন থেকে বের হয়ে আসুক। এই অবস্থায় মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা। মেয়েটার মনের অবস্থাও তো ভালোনা। এমন অবস্থায় কি ভাবে সে অন্য কারোর সংসার করবে?

রহিমা বেগমের কোনো কথা কানেই তুলে নাই জামসেদ আলী। তিনিও রাগ করে খাবার পুরোটা না খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে যাওয়ার সময় রহিমা বেগমকে বলল — নীলিমাকে ভালো করে সাজিয়ে রাখবে। আর ওকে বলবে ও যেনো আর সাদা শাড়ি পড়ে না থাকে।

কথাটা বলেই জামসেদ আলী বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

অন্য দিকে নীলিমা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। মেয়েটার চোখ মুখ ফুলে উঠছে। একটু পরে রহিমা বেগম নীলিমার রুমে আসলো। হাতে একটা লাল শাড়ি নিয়ে।

রহিমা বেগম নীলিমাকে ডাক দিতেই নীলিমা পিছনে তাকিয়ে দেখে তার মা একটা লাল রঙের শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলিমা রহিমা বেগম কে জিজ্ঞেস করল — মা এটা কার জন্য নিয়ে আসলে?

— তোর জন্য। এটা পড়ে নে, সাদা শাড়ি পড়ে তো আর তাদের সামনে গেলে তারা পছন্দ করবেনা। তুই এই শাড়ি টা পড়ে রেডি হয়ে নে।

— মা কি বলছ এসব? আমি বুঝতে পারছিনা তোমারা আসলে কি চাও? আমি মরে গেলেই তোমরা বেশি খুশি হবে তাইনা? আমার অবস্থা টা তোমরা কেউ বুঝতে পারলেনা। আমি যখন তোমাদের কাছে এতোটাই বোজা হয়ে গেছি তাহলে আমি এই বাড়ি ছেড়েই চলে যাই। তাহলে তো তোমরা অন্তত ভালো থাকবে।

— চুপ কর তুই। তোর বাবা তোর ভালোর জন্য এসব করছে। তুই আর কথা বাড়াস না মা। রেডি হয়ে থাকিস।

এই কথা বলে রহিমা বেগম উঠে চলে গেলো। নীলিমা লাল শাড়িটির দিকে তাকিয়ে কান্না করতে থাকে। মেয়েটার কাজল ধোয়া চোখে পানি গাল বেয়ে পড়ছে। নীলিমার চোখের পানি আজ বড্ড অসহায়। লাল শাড়ি টার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে। কিছুক্ষণ পরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নীলিমা লাল শাড়িটা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর তার চোখ থেকে টপপট করে পানি পড়ছে। মেয়েটা কিছুতেই এসব মেনে নিতে পারছেনা। একটু পরে রহিমা বেগম নীলিমার রুমে এসে দেখে নীলিমা কান্না করছে আয়নার সামনে বসে বসে। রহিমা বেগম নীলিমার পাশে এসে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — মা আমি তোকে রেডি করে দিচ্ছি।

তারপর রহিমা বেগম নীলিমাকে সাজাতে থাকে। হালকা গোলাপি কালারের লিপস্টিক লাগিয়ে দিল ঠোঁটে। আর কপালে একটা কালো টিপ পড়িয়ে দিল। মেয়েটাকে হালকা সাজেও খুব সুন্দরী লাগছে। হালকা সাজে রুমের ভিতরে বসে রইলো নীলিমা। কিছুক্ষণ পরে ছেলে পক্ষ বাসায় আসলো। জামসেদ আলী মেহমান দের ভিতরে এনে বসালো।

জামসেদ আলী ছেলের বাবাকে জিজ্ঞেস করলো – আসতে আপনাদের কোনো সমস্যা হয়নি তো?

— না ওইরকম কোনো সমস্যা হয়নি। এটা আমার ছেলে নিশান আহামেদ।

নিশান জামসেদ আলীকে সালাম দিয়ে পরিচয় হয়ে নিল।

নিশানের পরিচয় টা দিয়ে দেই। নিশানের পুরো নাম নিশান আহামেদ। নিশান অফিসে জব করে। নিশান ও দেখেতে খুব স্মার্ট। গায়ের রং ফর্সা, উচ্চতা ৫ফিট১০।

একটু পরে নিশানের আম্মু বলল — মেয়েকে নিয়ে আসুন। মেয়ে আমাদের যদি পছন্দ হয় তাহলে আমরা আজকেই বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করে যাবো।

(একটা ব্যাপার জানিয়ে রাখি। নিশান কিন্তু এখনো জানেনা নীলিমা যে বিধবা)

একটু পরেই রহিমা বেগম নীলিমাকে নিয়ে সবার সামনে আসলো। নীলিমার হাতে সর্বতের গ্লাস ছিল।তারপর নীলিমা সবাইকে সর্বত দিয়ে তাদের সামনে বসে রইলো। এই ভাবে বসে থাকতে মেয়েটার খুব খারাপ লাগছিলো। সে এক প্রকার বাদ্য হয়ে বসে রইল।

নীলিমাকে সবাই দেখতে চাইল। তখন নীলিমার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো নিশান।

চলবে,,,