আঁধারে আলো পর্ব-০২

0
341

#আঁধারে_আলো
[২য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ (সবুজ)

নিশান নিলীমার দিকে তাকিয়ে রইল। নিশান এখনও জানেনা নিলীমা যে বিধবা একটা মেয়ে। নিশান নিলীমার দিকে মনে মনে ভাবতে থাকে এতো সুন্দরী মেয়ে আজ প্রথম দেখলাম। অন্য দিকে নিলীমা মাথা নিচু করে বসে রইল। নিশানের বাবা-মা নিলীমাকে অনেক রকম প্রশ্ন করতে থাকে। আর সে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে।

নিলীমাকে সবার খুব পছন্দ হয়। নিশান কোনো কথা বলছেনা। নিশান কে দেখে মনে হচ্ছে নিশান এই বিয়েটা করার জন্য প্রস্তুতনা। নিশান কে কিছু জিজ্ঞেস না করেই বিয়ের দিন ঠিক করা হলো আগামী শুক্রবার।

তারপর নিলীমা উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে মেয়েটা আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে সবাই চলে গেলো। একটু পরে জামসেদ আলী নিলীমার রুমে এসে দেখে নিলীমা মন খারাপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। জামসেদ আলী মেয়ের কাধের উপরে হার রাখতেই মেয়েটা চমকে উঠল। আর তাকিয়ে দেখে তার বাবা। নিলীমা কিছু না বলে আবার বাহিরে তাকিয়ে রইল।

জামসেদ আলী বলল — মা যা হইছে সব ভুলে যা। মন খারাপ করে থাকিস না। আমি তোর ভালোর জন্য বিয়েটা দিচ্ছি। তোর তো একটা ভবিষ্যৎ আছে। এই ভাবে ভেঙে পড়লে হবেনা মা। নতুন সংসার নিয়ে ভাব এবার।

নিলীমা কিছু না বলে চুপ হয়ে রইল। তারপর জামসেদ আলী মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। অন্য দিকে নিশান নিজের রুমে শুয়ে আছে হঠাৎ তার বাবা মা রুমে আসলো।

— নিশান বাবা তোর সাথে আমাদের কিছু কথা আছে। (বাবা)

— কি কথা?

— তোকে কিছু না জিজ্ঞেস করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেললাম।

— তোমাদের যা ভালো মনে হইছে তাই করছো। সব সময় তো এটাই করে আসছ তাই না? আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা সব কিছুই তো তোমরা ঠিক করো। এখানে আমার কি করার আছে?

— তুই এই ভাবে কথা বলিস কেন?

— কি ভাবে বলব আমি? আমি তো তোমাদের হাতের পুতুল মাত্র। তোমরা আমাকে যেভাবে নাচাও আমি ঠিক সেই ভাবেই নাচি।

— বাবার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় তুই কি সেটাও ভুলে গিয়েছিস নিশান? এই জন্য কি তোকে আমরা পড়াশোনা শিখিয়েছি? (মা)

— মা আর বাবা আমি তোমাদের খুব সম্মান করি। আর এটাও জানি মা-বাবা কখনো সন্তানের খারাপ চায়না। কিন্তু তোমাদের ও বুঝা উচিৎ সন্তান কিসে খুশি থাকবে। তার তো একটা সিদ্ধান্ত আছে তাইনা?

— তুই কি এই বিয়েতে রাজি না?

— তোমরা যেহেতু বিয়ে ঠিক করছো। আমিও বিয়ে করব। এটা নিয়ে আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করবেনা।

নিশানের বাবা-মা আর কিছু না বলে তারা নিজেদের রুমে চলে গেলো। আর দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো আর বিয়ে টাও হয়ে গেলো।

বাসর ঘরে বঁধু সাজে বসে আছে নিলীমা। এটা নিলীমার দ্বিতীয় বাসর ঘর। এইবারের টা ভিন্ন পুরোটাই আলাদা। মেয়েটা বাসর ঘরে বসেও কান্না করছে।

হঠাৎ করেই নিলীমার চোখে ভেসে উঠে রাজের কথা। (রাজ নিলীমার আগের হাসবেন্ড) রাজের সাথে নিলীমার বিয়েটা কাকতালীয় ভাবে হলেও তাদের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলনা। রাজ নিলীমাকে অনেক ভালোবাসতো। নিলীমা অতীতের কথা গুলো ভাবতে থাকে।

ফ্ল্যাশব্যাক
______________

বাসর ঘরে বসে আছে নিলীমা। অপেক্ষা করছে তার স্বামী রাজের জন্য। নিলীমার মনের ভিতরে এক দিকে যেমন ভয় কাজ করছে অন্যদিকে চিন্তা ও কাজ করছে। ঘড়িতে তখন রাত বারোটা। কিন্তু রাজ এখনো আসছেনা। সব অপেক্ষার কাটিয়ে রাজ বাসর ঘরে প্রবেশ করল। নিলীমা উঠে রাজের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। সালাম করে নিলীমা আবার তার যায়গায় গিয়ে বসে পড়ে। রাজ গিয়ে নিলীমার পাশে বসে আর তার ঘোমটা সরিয়ে নিলীমার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে অনেক্ষন।

— কি দেখছেন এভাবে?

— একটা লাল পরি দেখি।

— এখানে আপনি লাল পরি কোথায় দেখেন?

— তুমি পরির থেকে কম কিসে?

কথাটা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে। নিলীমা আর কিছু বলতে না পেরে চুপচাপ বসে রইল। নিলীমার মনে একটা ভয় কাজ করছে সেটা হলো বাসর রাতে স্বামী যা চাইবে তাই নাকি দিতে হবে।কথাটা ভাবিরা বলছিল। কিন্তু নিলীমা চায় তার স্বামী তার সাথে সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিক। এই রাতটা তাদের কাছে অন্যরকম হয়ে উঠুক।

নিলীমার সব ভয় কাটিয়ে দিয়ে রাজ বলল — নিলীমা আমি জর করে কোনো কিছু পেতে চাইনা। আজকে রাত টা তোমার মতো হবে। তুমি যেভাবে চাইবে ওই ভাবেই হবে।

রাজের মুখে এমন কথা শুনে নিলীমার ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটে উঠে।

রাজ আবার বলল – এই রাত নিয়ে তোমার কোনো স্বপ্ন আছে?

— হুম, এই রাত নিয়ে প্রতিটি মেয়ের অনেক স্বপ্ন থাকে। আমার ও আছে।

— বলো কি স্বপ্ন তোমার?

— আমি চাই আজকের এই রাত আমাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা আজ সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দিতে চাই। আপনি আমাকে সংসারের সব কিছু বুঝিয়ে দিবেন। আর আমি আমার সব ইচ্ছের কথা আপনাকে বলতে চাই।

— নিলীমা তুমি কি জানো একটা পরিবার সামলাতে হলে অনেক গুণ থাকতে হয়! একটা মেয়ে একটা পরিবারের বউ হয়ে আসে। এটা তোমার জন্য একটা নতুন লড়াই, আর এই লড়াইয়ের মধ্যে তুমি আমাকে সব সময় তোমার পাশে পাবে। আমাদের পরিবারের সদস্য বলতে আমার বাবা-মা ছাড়া আর কেই নেই। আমার বাবা-মা খুব ভালো। তুমি শুধু৷ তাদের মনযোগীয়ে চলতে হবে। এমন কোনো ব্যবহার কমবেনা তাদের সাথে যে ব্যনারে তারা কষ্ট পায়। তারা আমাকে তাদের ভালোবাসা দিয়ে বড় করছেন। আমি চাইনা তারা কখনো কোনো কষ্ট পাক।তুমি তাদের ভালোবাসা অর্জন করতে পারলেই দেখবে তারা তোমাকে আপন করে দিয়েছে। আর আমি তো আছি সব সময় তোমার পাশে। আমি শুধু একজন স্বামী নয় আমি তোমার একজন ভালো বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে চাই। আমাদের মধ্যে যতই ঝড়তুফান আসুক আমি তোমাকে আমার বুকে আগলে রাখবো।
আমি ছায়ার মতো তোমার পাশে থাকব। কখনো তোমাকে মনে করতে দেবো না তুমি শ্বশুর বাড়িতে আছো। এবার তোমার কথা বলো।

— প্রথম কথা আপনার মতো একজন স্বামী পেয়ে আমি সত্যি অনেক খুশি। আমি এমন কাওকে চেয়েছিলাম যে মানুষটা আমাকে বুঝবে আমার সব আবদার রাখবে। আমি এমন একজন মানুষকে নিয়ে আমার স্বপ্ন সাজিয়েছি সেই মানুষ টা আপনি।
আমার আপনার থেজে তেমন বেশি কিছু চাইনা। আমার সামান্য কিছু আবদার আছে।

— কি সেটা?

— প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় আমার জন্য ফুল নিয়ে আসতে হবে। প্রতিমাসে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে একবার করে। আমার যখন ফুচকা খেতে ইচ্ছে করবে আমার জন্য নিয়ে আসতে হবে। আর সব আপদে বিপদে আমার পাশে থাকতে হবে। আপনার বুকে আমাকে মাথা রেখে ঘুমতে দিতে হবে। আমাদের মধ্যে যতই ঝগড়া হোক আমাকে একা রেখে চলে যেতে পারবেন না। ভুল করলে ভুল ধরিয়ে দিবেন৷ যেনো এই সংসার টা আমি নিজের মতো করে গড়ে তুলতে পারি। আর আমি এই পরিবারের একজন হয়ে উঠতে পারি। আমার এই টুকু চাওয়া আপনার কাছে।

হঠাৎ দরজার শব্দে নিলীমা বাস্তবে ফিরে আসলো। একটু সামনের দিকে তাকাতেই দেখে নিশান বাসর ঘরে প্রবেশ করছে। নিলীমা নিশান কে দেখে উঠে নিশানের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে এমন সময় নিশান পা সরিয়ে নিয়ে একটু দূরে সরে আসলো। এটা দেখে নিলীমা খানিকটা অবাক হলো আর মাথা নিছু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।

চলবে,,,,,