আঁধারে আলো পর্ব-০৩

0
298

#আঁধারে_আলো
[৩য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ (সবুজ)

নিশানের এমন ব্যবহার দেখে নিলীমা উঠে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল। একটু পরে নিশান বলল,

— আমি তোমাকে বিয়ে করেছি তার মানে এই নয় তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেব। আমি তোমাকে বিয়ে করেছি আমার বাবা-মায়ের জন্য। তাদের কথায় আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। আমরা একি ছাদের তোলায় থাকলেও আমাদের মধ্যে কখনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠবে না। আমি তোমাকে কখনো নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা। কারণ আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।

নিলীমা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে কথা গুলো শুনেই যাচ্ছে। একটু পরে নিলীমা বলল — তাহলে আপনি তাকে বিয়ে না করে আমাকে করলেন কেন?

— আমার কিছুই করার ছিলনা। বাবা খুব অসুস্থ হয়ে যায় আর তার কথা রাখার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। আই সরি আমাকে ক্ষমা করবেন।

নিলীমা আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল। একটু পরে নিশান বলল অনেক রাত হইছে আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আর আমি নিচে ঘুমাচ্ছি।

— আপনি খাটের উপরে ঘুমান আমি নিচে ঘুমব কোনো সমস্যা হবেনা।

তারপর নিলীমা একটা বালিশ আর কাথা নিয়ে ফ্লোরের উপরে বিছানা করে শুয়ে রইল।

হঠাৎ করে নিশান নিলীমাকে ডাক দিয়ে বলল — একটা কথা বলা হয়নি।

— কি কথা?

— আমাদের মধ্যে যে কথা হয়েছে সে কথা যেনো আমারা ছাড়া কেউ না জানে। আমার বাবা-মা যেনো কিছু জানতে না পারে। তারা জানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে। আর প্লিজ আমরা তাদের সামনে স্বামী স্ত্রীর অভিনয় করব। প্লিজ আমার কথাটা একটু রাখবেন।

— ওটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা। আমি মা-বাবাকে কোনো কিছুই বুঝতে দেবোনা চিন্তা করবেন না।

— ধন্যবাদ।

— ঠিক আছে।

— আর হে এই অভিনয় বেশিদিন করতে হবেনা। আমি আপনাকে কিছুদিনের মধ্যে ডিভোর্স দিয়ে রাইসাকে বিয়ে করে ফেলব। তখন আর কোনো সমস্যা হবেনা। আপনি শুধু কিছুদিন অভিনয় করে যাবেন।

ডিভোর্স এর কথাটা শুনে নিলীমার বুকের ভিতর টা কেপে উঠল। নিলীমা কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে রইল। নিশান আবার বলল — আপনাকে চিন্তা করতে হবেনা। আমি আপনার জন্য একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবো।

তারপর তারা দুইজনেই শুয়ে পড়লো। নিশান একটু পরেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো। অন্য দিকে নিলীমা কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা। মেয়েটার জীবনে কি ভালো কিছু কখনোই হবেনা?
নিলীমা শব্দহীন কান্না করতে থাকে। কান্না করতে করতে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে খুব তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠে গেলো নিলীমা, ঘুম থেকে উঠে কাথা আর বালিশ খাটের উপরে নিয়ে রাখল। একটু পরে সে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। এসে দেখে নিশান এখনও ঘুমিয়ে আছে। এবার নিলীমা নিশান কে ডাকতে থাকে।

— উঠন অনেক বেলা হয়েছে। আর কতো ঘুমাবেন?নাস্তা করবেন না?

নিশান রেগে গিয়ে বলল — আমি এতো সকালে ঘুম থেকে উঠিনা। তুমি গিয়ে নাস্তা করে নাও। আর ডিস্টার্ব করবে না আমাকে।

নিলীমা কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। বাহিরে এসে দেখে নিলীমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি নাস্তা নিয়ে বসে আছে।

— নিশান কি এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই মা? (শ্বাশুড়ি)

— না মা উনি এখনো ঘুমচ্ছে।

— ছেলেটা এখনও সেই আগের মতই আছে।

নিলীমা ঠোঁটের কোণে একটা হাসি নিয়ে বলল — চিন্তা করবেন না মা আমি ঠিক করে দেবো।

তারপর সবাই নাস্তা খেয়ে নিল। আর যে যার রুমে চলে গেলো। নিলীমা নিশানের জন্য এককাপ চা নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে নিশান এখনো ঘুমিয়ে আছে।

— ওনেক বেলা হয়ে গেছে উঠে চা খেয়ে নিন, আর কতো ঘুমাবেন আপনি?

নিশান আর কিছু না বলে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে চা খেলো। তারপর দুজনেই এক সাথে বের হয়ে খাবার খেতে চলে গেলো। তারা দুই জনেই সবার সাথে খুব ভালো ভাবে আচরণ করতে থাকে কেউ কিছুই বুঝতে পারেনি।

বিকালে নিশান রাইসার সাথে দেখা করতে গেল। নিশান যায়গা মতে গিয়ে দেখে রাইসা নিশানের আগেই এসে দাঁড়িয়ে আছে।

নিশান — আজ তুমি আমার আগে এসে পৌছে গেলে! বাহ।

রাইসা — আমি টাইম মতেই আসছি। আপনার তো আর বউ রেখে আসতে ইচ্ছে করছিলোনা। তা বাসর ঘর কেমন কাটলো আপনার?

— তুমি এই ভাবে কথা বলছ কেন? আর হে কাল আমাদের বাসর ছিল কিন্তু আমাদের মাঝে কোনো কিছুই হয়নি। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি অন্য কাওকে না।

— একি রুমে থেকে যদি এসব বলো কেউ কি বিশ্বাস করবে?

— বিশ্বাস করা না করা একান্তই তোমার ব্যাপার কিন্তু আমি সত্যি কথা বলছি আমি ওই মেয়েকে ছুয়েও দেখিনি। আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাওকে বউ বলে মেনে নেবোনা কোনো দিন। আর আমি নিলীমাকে তোমার ব্যাপারে বলছি। আর এটাও বলছিযে আমি তোমাকে বিয়ে করব কিছুদিন পরে আর ওঁকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।

হঠাৎ করেই নিশানের ফোন বেজে উঠল। নাম্বার টা ছিলো নিলীমার।

নিশান — হ্যালো!

নিলীমা — আপনি কাওকে না বলে কোথায় চলে গিয়েছেন?

— আমি রাইসার সাথে দেখা করতে আসছি। আমার বাসায় ফিরতে দেরি হবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে আসবেন।

তারপর নিশান কল কেটে দিয়ে রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখে রাইসা রেগে আছে।

— কি হলো তোমার?

— কিছু হয়নি, ভালোবাসা দেখলাম আর কি। কি প্রেম আবার বলে কাল রাতে নাকি কিছুই হয়নি। শুনো আমার সাথে তুমি আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না বলে দিলাম। আমাকে আর কল দিবেনা।

— আরে তুমি শুধু শুধুই রাগ করছ বিশ্বাস করো আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি আমারা সারা রাত আলাদা ঘুমিয়ে ছিলাম। আমারা এক ঘরে থাকলেও এক খাটে ছিলাম না।

— এসব আমাকে না বলে অন্য কাওলে বলেন। সব ছেলেদের চেনা আছে আমার। রুমে একটা একা মেয়ে পেয়ে নাকি কিছুই করে নাই হাস্যকর।

— রাইসা চুপ করো বেশি বলছ তুমি এবার। আমি কাল নিলীমাকে এখানে নিয়ে আসবো। তখন ওর থেকেই শুনবে সব কিছু।

রাইসা আর কিছু না বলে এখান থেকে চলে গেলো। নিশান পিছন থেকে অনেক বার ডাকার পরেও রাইসা পিছনে ফিরে একবার ও তাকালো। নিশান ও একটু পরে বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে নিশান। নিলীমা নিশানের মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করলো — কি হইছে আপনার? মন খারাপ কেন? ওখানে কি কোনো সমস্যা হইছে?

— না এমনি ভালো লাগছেনা আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

তারপর নিলীমা ওখান থেকে চলে গেলো। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে এসে শুয়ে পড়ল। নিশান নিলীমাকে ডাক দিয়ে বলল — নিলীমা কাল তোমাকে আমার সাথে এক যায়গায় যেতে হবে।

— কোথায় যেতে হবে?

— রাইসার সাথে দেখা করতে। রাইসা আমাকে ভুল বুঝতাছে। তাই আমি ঠিক করছি তুমি আর আমি এক সাথে যাবো।

— আমাকে যেতে হবে?

— হুম। কাল বিকালে যাবো আমরা মা-বাবা জিজ্ঞেস করলে বলবে শপিং-এ যাবো। আর এমনি তোমার জন্য শপিং ও করতে হবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— হুম।

— একটা প্রশ্ন করতে পারি?

— হুম!

–আপনাদের সম্পর্ক কতোদিনের?

— দিন না আজ ৫ বছরের।

— এতো দিন তাহলে ওনাকে বিয়ে করেন নাই কেন? আর মেয়েটার সন্দেহ করাটাই সাবা ভিক। আমি হলেও করতাম। চিন্তা করবেন না আমি আপনাদের মাঝে বাধা হয়ে দাড়াবোনা।

— তোমাকে তো সবি বলছি আর কিছু তো বলার বাকি নেই।

— আচ্ছা ঠিক আছে এখন ঘুমান। রাত অনেক হয়েছে।

— হুম শুভ রাত্রি।

তারপর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে নিলীমার ঘুম ভেঙে গেলো। সে কাথা আর বালিশ খাটের উপরে না রেখেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখে নিলীমার শ্বাশুড়ি রুমে এসে দাঁড়িয়ে আছে। কাথা আর বালিশ এখনো ফ্লোরের উপরেই পড়ে আছে।

চলবে,,,