আজকে শহর তোমার আমার পর্ব-০৪

0
657

#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৪

সানির সাথে কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করে রুপ্সিতা ঘরে এসে খাটের উপর তিনটে ব্যাগ দেখলো।পাশে আলিফের ফোন আর অফিসের ব্যাগ ও আছে।বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসছে।নিশ্চয়ই আলিফ ভেতরে।কখন এলো?রুপ্সিতা টেরই পেলো না।

এতকিছুতে মাথা না ঘামিয়ে রুপ্সিতা ব্যাগ গুলো চেইক করে দেখলো একটাতে দুটো পেটিকোট আর ব্লাউজ।আর দুটোতে আলাদা দুটো শাড়ী।শাড়ীগুলো সুন্দরই আছে খারাপ না।উল্টে পাল্টে দেখার মাঝেই আলিফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে।
রুপ্সিতার হাতে শাড়ী দেখে মুখটাকে গম্ভীর করে বলল,আপাতত দুটো শাড়ি এনেছি।আর যা লাগবে ভাবিকে নিয়ে তুমি পছন্দ করে নিয়ে এসো।

রুপ্সিতা আলিফকে আগা থেকে গোড়া একবার স্ক্যান করে নিলো।একদম হিরো হিরো ভাব নয়।একদম সাদামাটা সাধারণ একটা ছেলে।তবে নিজেকে পরিপাটি করে রাখে সবসময়।
একটা মানুষ যেমনই হোক সে যখন নিজেকে পরিপাটি করে গুছিয়ে তোলে তখন না চাইতেও তাকে ভালো লাগে।যে মানুষটাকে প্রথমবার দেখলেই তার চেহারা ভালো লেগে যায়?দিন যেতে যেতে সেই মানুষটার প্রতি ভালোলাগাটাও কমতে থাকে।আবার একজন মানুষকে আপনার প্রথম দেখাতেই ভালো লাগলো না।কিন্তু তার সাথে চলতে চলতে সখ্যতা গড়ে উঠবে।তখন আপনা আপনিই তাকে আপনার ভালো লাগবে।তার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগবে মোট কথা তার সব কিছুই তখন আপনার ভালোলাগবে।হয়তো প্রথম দেখায় সে আপনাকে রূপ দিয়ে মুগ্ধ করতে পারবেনা ঠিকই কিন্তু তার আচরণ,ব্যবহারে আপনাকে মুগ্ধ করতে পারবে।

আলিফ হালকা গলা ঝেড়ে বলল,সকালে তুমি আমাকে কি যেন বলেছিলে?
আর এখন তুমিই আমার দিকে তাকিয়ে আছো।স্ট্রেঞ্জ না?

রুপ্সিতা আলিফের উপর থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,আপনি কোন হিরো নয় যে আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো।একটা জলজ্যান্ত মানুষ চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কতক্ষণ দৃষ্টি নিচের দিকে রাখা যায়?

আলিফ এক ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,হিরো হলে তাকিয়ে থাকতে বুঝি?

রুপ্সিতা বিরক্ত হয়ে বলল,আপনার সাথে ফালতু বকার টাইম নাই আমার।

আলিফ ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,তোমার বাসা থেকে বই পত্র আনার ব্যবস্থা করো।কতদিন আর পড়ালেখায় গ্যাপ দিবে?

রুপ্সিতা ভ্রু কুচকে বলল,বই কি আজকেই লাগবে?

আলিফ খাটে এসে বসে বলল,নাহ দু’তিন মাস পরে হলেও চলবে।
রুপ্সিতা বিড়বিড় করে বলল,আস্ত একটা ত্যাড়া।সুন্দর করে কথা বলতেই জানেনা।
আলিফ রুপ্সিতার দিকে নিজের মুঠোফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,তোমার বাসায় ফোন করে জানিয়ে দাও বই রেডি করে রাখতে।আমি একটু পর গিয়ে নিয়ে আসবো।
রুপ্সিতা হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।মায়ের নাম্বারে কল দিলো রিং হওয়ার কিছুক্ষণ পরই রিসিভ হলো।

রুপ্সিতার মা জুলেখা বেগম কল রিসিভ করেই সালাম দিলো।
রুপ্সিতা সালামের উত্তর দিয়েই বলল,কেমন আছো?

রুপ্সিতার কন্ঠ শুনে জুলেখা বেগম পানশে মুখে জবাব দিলেন ভালো।তুই কেমন আছিস?ওই বাড়িতে সব ঠিকঠাক আছেতো?

রুপ্সিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,ওসব নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবেনা।চিন্তা করোনা আমার জন্য তোমাদের কাছে এবাড়ি থেকে নালিশ যাবেনা।

জুলেখা বেগম চুপসে গেলেন।আবারো মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন ও বাড়ির সবাই,জামাই ভালো আছেতো?
রুপ্সিতা শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো,সবাই ভালো আছে।আমি ফোন দিয়েছি যেকারণে সেটাই বলা হলোনা।
আমার বইগুলো গুছিয়ে রেখো।উনি কিছুক্ষণ পরে গিয়ে নিয়ে আসবেন।রাখছি বলেই রুপ্সিতা দেরি না করে লাইন কেটে দেয়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
ফোনটা আলিফের হাতে দিয়ে বলে বই নিয়ে আসার সময় আমার ড্রয়ারে মোবাইল রাখা আছে ওটা নিয়ে আসবেন।

আলিফ মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,আমি এখন তোমার ড্রয়ার হাতাতে যাবো?
রুপ্সিতা বলল,আরে বুকশেলফের ড্রয়ারেই আছে।খুললেই পেয়ে যাবেন।

আলিফ মোবাইলটা হাতে নিয়ে কাবার্ড খুলে একটা শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।রুপ্সিতার বইগুলো এনে দিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবে।চাকরির কারনে সচরাচর দেখা করা হয় না।

রুপ্সিতাদের ড্রইংরুমে বসে আছে আলিফ।রুপ্সিতার মা জামাই আসবে শুনে আগেই হরেকরকম নাস্তার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।আলিফ আসার দেরি কিন্তু উনার নাস্তা সামনে আনতে দেরি হয়নি।আলিফ কোনোরকম হাসিমুখে একটুকরো আপেল মুখে দিয়ে বলল,আমাকে রুপ্সিতার রুমটা দেখিয়ে দিন।আমাকে বই নিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

জুলেখা বেগম বললেন,সে কি কথা।তুমিকি বই নিয়ে এখনই যাবে নাকি?তোমার শশুর আসলে একেবারে ডিনার করে তারপর যাবে।

আলিফ কোনোভাবে উনাকে মেনেজ করে রুপ্সিতার বইগুলো একে একে বেঁধে নিলো।সব বুকশেলফের উপরই ছিলো তাই আর এদিক সেদিক খুজতে হয়নি।বই বাঁধা শেষে রুপ্সিতার কথা অনুযায়ী ড্রয়ার খুলতেই একটা এন্ড্রয়েড সেট পেয়ে সেটা পকেটে পুড়ে নেয়।আর দেরি না করে জুলেখা বেগমকে বিদায় জানিয়ে বই গুলো গাড়িতে তুলে বাসায় রওনা হয়।

রুমে ঢুকেই প্রথমে আলিফের চোখ পড়ে রুপ্সিতার উপর।আগের শাড়ীটা পাল্টে ওর আনা একটা সুতি শাড়ী গায়ে জড়িয়েছে।
আসলে দুপুরে পরা শাড়ীটা জর্জেট ছিলো তাই সেটা পাল্টে সুতি শাড়ীটা পড়েছে।
মেয়েদের যতই দামী জামাকাপড় থাকুক সে কিন্তু কমদামি সুতি জামাকাপড় পড়েই কমপোর্ট ফিল করে।এখন রুপ্সিতার ও হয়েছে সেরকম।

আলিফকে রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুপ্সিতা এগিয়ে গিয়ে এক বান্ডেল বই আলিফের হাত থেকে টেনে নেয়।আলিফের হুস আসতেই নিজের দৃষ্টি সংযত করে নেয়।রুমে ঢুকে হাতে থাকা বাকি বইগুলো খাটের উপর রাখে।নিজের রুমের টেবিলটা খালি করে দিয়ে রুপ্সিতাকে বলল,এবার তুমি বইগুলো গুছিয়ে রাখো।পকেটে হাত দিয়ে বলে ও হ্যাঁ তোমার ফোন।
রুপ্সিতা হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো।

আলিফ আবার বেরিয়ে গেলো।উদ্দেশ্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া।রুপ্সিতা কাবার্ড খুলে নিজের শাড়ী রাখতে গিয়ে দেখলো সব জায়গা আলিফের শার্ট আর টি-শার্ট দিয়ে ভরপুর।এগুলে একপাশে ঠেলে রেখে নিজের তিনটে শাড়ি গুছিয়ে রাখলো।কাবার্ড আটকাতে গিয়ে একটা নীল রঙের টি-শার্টের দিকে চোখ আটকে গেলো।হাত বাড়িয়ে টি-শার্ট টি নিয়ে গায়ের উপর দিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে।পরতে পারলে মনের শখ মিটতো।দরজায় উঁকি দিয়ে দেখলো কেউ নেই।একবার পড়ে দেখা যাক।টি-শার্ট টা পড়তে না পড়তেই দরজা ঠেলে আলিফ রুমে প্রবেশ করে।

ও যাওয়ার সময় ওয়ালেট ভুলে রেখে গেছিলো।সেটা নিতে এসে দেখে রুপ্সিতা ওর টি-শার্ট পড়ে আয়নায় একবার এক পোজ দিচ্ছে।আবার বলছে,উফ!আমি কি যে জোস,আয়নার সামনে দাঁড়াই মারি জোস জোস পোজ।
আলিফকে অসময়ে এখানে দেখে রুপ্সিতা থতমত খেয়ে গেলো।ওর গায়ের দিকে একবার নজর দিচ্ছেতো একবার আলিফের দিকে নজর দিচ্ছে।ঝট করে টি-শার্ট খুলতে হাত দিলেই আলিফ মুখ বাঁকিয়ে বলে,খুলতে হবে না।যার কাছ থেকে লুকানোর জন্য খুলতেছো সে অলরেডি দেখে ফেলেছে।

লজ্জায় রুপ্সিতার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।মাথ উঁচু করতেও কেমন দিধা হচ্ছে।
রুপ্সিতাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে আলিফ মিটিমিটি হাসছে।আরেকটু লজ্জা বাড়ানোর জন্য জড়ানো কন্ঠে ডেকে উঠলো,রুপ্সি!

আলিফের কন্ঠ যেন রুপ্সিতার গায়ে হিম ধরিয়ে দেওয়ার মতো।এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।দৌঁড়ে বারান্দায় চলে গেলো।
এদিকে আলিফ হাসছে।এইটুকুতেই এত লজ্জা?সামান্য ব্যাপারেও কেউ লজ্জায় নুইয়ে পড়তে পারে যা আজ দেখলো আলিফ।তারপর মায়ার কথা ভাবে।মায়া কখনো এসব ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে লজ্জা পেত না।আজ যদি রুপ্সিতার জায়গায় মায়া থাকতো তাহলে ব্যাপারটা অন্যরকম হতো।এই লজ্জা রাঙা গাল দুটো ছুয়ে দিতো।কিন্তু হুট করেতো আর রুপ্সিতার গাল দুটো ছুয়ে দিতে পারবেনা।
আলিফ আবারো বেরিয়ে গেলো।

রাত এগারোটায় বাসার সামনে এসে কলিংবেল বাজাতেই ওর মা দরজা খুলে দিয়ে বলে,নতুন বিয়ে করেছিস কোথায় বউকে একটু সময় দিবি তা না করে রাত করে বাসায় ফিরছিস?

আলিফ কানে হাত দিয়ে বলল,সরি মা!অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হলোতো তাই দেরি হয়ে গেছে।

আলিফের মা বললেন অফিস থেকে সপ্তাহ খানেকের ছুটি নিয়ে নিস।তোর বড় মামা ফোন করেছে।বলেছে রুপ্সিতাকে নিয়ে চট্টগ্রাম যেতে।সেখানে গেলে মামার বাসায় থাকা ও হবে সাথে ঘুরাও হয়ে যাবে।

আলিফ বলল,এখন আমি কোথাও যেতে পারবোনা।তাছাড়া অফিস থেকেও ছুটি দিবেনা এক সপ্তাহের জন্য।
আলিফের মা বলল,আমি এত কিছু জানিনা।তুই তোর মামাকে কিভাবে মানাবি সেটা তুই জানিস।এখন খাবার বেড়ে দিচ্ছি খেয়ে নে।

আলিফ চুপচাপ খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ে।রুপ্সিতা কালকের মতো এখনো নিজেকে শাড়ী আর কাঁথা দিয়ে পেঁছিয়ে রেখেছে।আলিফের হঠাৎ মনে পড়লো সকালে রুপ্সিতার গায়ের দাগগুলোর কথা।মেয়েটার গায়ে এগুলো কিসের দাগ?দেখেতো মনে হলো লাঠির আঘাত।কিন্তু কে মারবে এতবড় মেয়ে কে?
#চলবে……..।

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)