আজকে শহর তোমার আমার পর্ব-০৫

0
646

#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৫

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে নামায পড়ে নেয় রুপ্সিতা।এটা ওর প্রতিদিনের রুটিন।সকালে নামায পড়ে আবার ঘুমাবে ঘুম না আসলে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে।
আলিফ এখনো ঘুমাচ্ছে।রুপ্সিতা ভ্রু কুচকে ভাবছে, লোকটা কি প্রতিদিন এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমায়?নামায পড়ে না?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো সময় আছে নামাযের।আগে পড়তো কি না রুপ্সিতার জানা নেই এখন পড়তে হবে।

আলিফের মাথার কাছে গিয়ে রুপ্সিতা ডাকতে লাগলো,শুনছেন!
এই যে শুনছেন?উঠুন!নামাযটা পড়ে নিয়ে পরে ঘুমাবেন।
আলিফের উঠার কোনো নাম নেই।সে তো ঘুমিয়ে কাঁদা।
রুপ্সিতা বেশ কয়েকবার ডাকার পরেও যখন আলিফ উঠলো না তখন আলিফের বাহু ধরে ধাক্কা দিলো।
আলিফ চোখ খুলে তাকায়।কি হচ্ছে বুঝতে পারছেনা।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রুপ্সিতার দিকে।এখনো চোখে ঘুমের রেশ।

আলিফকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুপ্সিতা ভ্রু কুচকে বলল,কি?
আলিফ আবার চোখ বুঝতে গেলেই রুপ্সিতা আরেকটা ধাক্কা মারে।এবার আলিফের ঘুম ছুটে যায়।রেগে গিয়ে বলে,
সমস্যা কি তোমার?মাঝরাতে এরকম করছো কেন?জিন পরী আছর করেছে নাকি?

রুপ্সিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,জিন পরী আপনাকে আছর করেছে।দেখেন এখন সকাল মাঝ রাত না।তাড়াতাড়ি নামায পড়ে নিন।আপনি নামায পড়েন না?

আলিফ দমে গিয়ে মুখটা ছোট করে বলল,মাঝে মাঝে পড়ি আবার গ্যাপ যায়।

রুপ্সিতা বলল,আচ্ছা ঠিক আছে আপনি তাড়াতাড়ি ওযু করে নামায পড়ে নিন।সময় কিন্তু বেশি নেই।একটু পরেই হয়তো সূয্যি মামা উঁকি দিবে তখন নামায পড়া যাবেনা।
আলিফ আর কথা না বাড়িয়ে ওযু করে নামায পড়ে নেয়।নামায শেষে আবারো শুয়ে পড়ে।সাড়ে সাতটা বাজলেই উঠে পড়বে।অফিস যেতে হবে।

—————
দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই ভাতঘুম দিয়েছে।রুপ্সিতার ঘুম আসছেনা।এই বাড়ির কিছুই ও চেনেনা।বিয়ের পর থেকে বাড়ির ভেতরেই ছিলো।তাই এখন ভাবলো একটু ছাদে যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।ছাদে গিয়ে বোকা বনে গেলো।পুরো ছাদে খা খা করা রোদ।মাত্রতো দুপুর এখনতো রোদ থাকবেই।কিন্তু রুপ্সিতার এতকিছু মনে ছিলোনা।অগত্যা ছাদ থেকে নেমে রুমে এসেছে।

মুঠোফোন হাতে নিয়ে ওর একমাত্র বান্ধবী তিন্নিকে কল দিলো।
কল রিসিভ করে রুপ্সিতাকে কিছু বলতে না দিয়েই তিন্নি বলতে শুরু করলো,

হারামি!তোর তিনচারদিন কোনো খোজ নাই কেন?কল দি ফোন বন্ধ।মরছিলি নাকি?
নাকি বিয়েসাদি হয়ে গেছে জামাই আর সংসার নিয়া ব্যস্ত তাই আমার খবর নিতে পারতাছস না।

রুপ্সিতা শুকনো ঢোক গিলে।তিন্নিকে কিভাবে বলবে ওর বিয়ে হয়ে গেছে।তিন্নি ওকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।

তিন্নি আবারো ধমক দিয়ে বলে,ওই বেডি কথা কছনা কেন?আমার কথার উত্তর দে।

রুপ্সিতা মিনমিনে কন্ঠে বলে,আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
তিন্নি বলে,মজা করার আর মানুষ পাইলিনা।
রুপ্সিতা অসহায় কন্ঠে বলে,আমি সত্যি বলছি।একটুও মজা করছিনা।
রুপ্সিতার কন্ঠ শুনে তিন্নির মনে হচ্ছে মেয়েটা সত্যি বলছে।

চমকে উঠে তিন্নি বলল,কবে বিয়ে হইছে?কিভাবে হইছে?আমি তোর একমাত্র বেষ্টু আমাকে দাওয়াত দিলিনা।অভিশাপ দিলাম একশ বাচ্চার জননী হবি তুই।

রুপ্সিতা বলল,বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেছে।তাই তোকে জানাতে পারিনি।কালকে আমাদের বাড়ি থেকে মোবাইল নিয়ে এসে এখন তোকে কল দিলাম।
শোভনের ব্যপারটা আর জানালো না তিন্নিকে।এখন ফোনে এসব বলা সম্ভব নয়।কথা বললে আরো বাড়বে।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো রুপ্সতা।একা একা সময় কাটছেনা।রোদ ও এখনো পড়েনি।তাহলে ছাদে গেলে সময় কাটতো।কোনো উপায় না পেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।অনেক্ষণ পর দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে এলো।

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসেছে।বাবা,মা,ইরিন ভাবি,আরিফ ভাইয়া,সানি,আলিফ সবাই একসাথে।খাবার খেতে খেতে আলিফের বাবা আলিফকে বলে উঠলো,
তোর বড়মামা নাকি ফোন করেছে বউমাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে আসতে?

আলিফ মুখে এক লোকমা ভাত দিয়ে বলল,বাবা এখন আমার অফিস থেকে ছুটি পাওয়া যাবেনা।কিছুদিন অফিসে কাজের চাপ বেশি।
চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা শুনে রুপ্সিতা খুশি হয়ে গেছে কিন্তু সবার সামনে প্রকাশ করছেনা।আলিফের কথা শুনে হাসি খুশি মনটা বিষিয়ে গেছে।
আরিফ বলল,অফিসের কাজ সারাজীবনই থাকবে।তাই বলে বউকে নিয়ে ঘুরতে যাবিনা?রুপ্সিতা তুমি কি বল?ঘুরতে যাবে তুমি?

আরিফের কথায় রুপ্সিতা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে রইলো।যার মানে ও চট্রগ্রাম যেতে চায়।
আরিফ বলল,দেখেছিস রুপ্সিতা ও যেতে রাজি আছে।এবার তুই যেভাবে হোক বসকে রাজি করিয়ে ছুটি নে।
আলিফ পড়লো বিপাকে।এদিকে ফ্যামিলির ঠেলা ওই দিকে এখন ছুটি চাইলে বস দিবে ঝাড়ি।কোনরকম খাওয়া শেষ করে রুমে গেলো।ওর আগেই রুপ্সিতা খেয়ে রুমে চলে এসেছে।
আলিফ রুমে গিয়ে দেখে রুপ্সিতা খাটের উপর বসে পা দোলাচ্ছে।আলিফকে দেখে বলল,আমরা যে চট্টগ্রাম যাবো আমার ড্রেস কিনতে হবে তো।আমি কি পড়ে যাবো?

আলিফ বিরক্তি কন্ঠে বলল,এত লাফালাফি করে লাভ নেই।বস এখনো ছুটি দেয়নি আমাকে।ছুটি না দেওয়ার চান্স বেশি তাই এত খুশি হইওনা।

রুপ্সিতা গাছাড়া ভাব নিয়ে বলল,ছুটি কিভাবে নিবেন সেটা আপনার দায়িত্ব।আর শপিং কিভাবে করবো,কোথায় কোথায় ঘুরবো সেসকল দায়িত্ব আমার।
মেয়েটার আগ্রহ দেখে আলিফ সিদ্ধান্ত নিলো কালকেই বসের সাথে ছুটির ব্যাপারে কথা বলবে।

রুপ্সিতা বিছানা ঝেড়ে বালিশ ঠিক করে কাঁথা নিয়ে শুয়ে পড়েছে।আলিফ কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তুমি প্রতিদিন কাঁথা নিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে রাখো।আমার কাঁথা গায়ে দিতে মন চায় না?

রুপ্সিতা ভেংচি কেটে বলল,আপনি অন্য আরেকটা কাঁথা নেন।এটা আমার লাগবে ছোট বেলা থেকেই আমার এই অভ্যাস।কাঁথা ছাড়া ঘুমাতে পারিনা।
আলিফ বলল,আমি এখন আরেকটা কাঁথা পাবো কই?আমার রুমে এই একটাই কাঁথা।

রুপ্সিতা ভাবলেসহীনভাবে বলল,তো আমি কি করতাম?কাঁথা একটা আপনার রুমে সেটা আপনার দোষ।
আলিফ ধৈর্য হারিয়ে বলে,হইছে আমাকে কাঁথা দিতে হবেনা।তারপরেও কথা পেঁচিয়ে না।আলিফ খাটের এক প্রান্তে রুপ্সিতা অন্যপ্রান্তে।মাঝখানে কোনো বর্ডার নেই তারপরও মনে হচ্ছে দুজন দু দেশের নাগরিক।

———————

আলিফ অফিসে বসের থেকে অনেক কষ্টে ছুটি নিয়েছে।বস এখন ছুটি দিতে চাইছিলেন না।তারপরও সাতদিনের ছুটি নিয়েছে পরশু থেকে টাইম শুরু।এর মাঝে বস যদি ফোন করে চট্টগ্রামে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে অফিসে আসতে হবে।আলিফ রাজি হয়ে যায় বসের শর্তে।নয়তো ছুটি দিবে না।
বিকালে বাসায় গিয়ে আগে শাওয়ার নিয়ে নেয় আলিফ।আজকে যা গরম পড়েছে ঘামে পুরো শরীর চুপচুপে হয়ে গেছে।
রুপ্সিতা ঘরে নেই।অফিস থেকে এসে নিচে দেখে এসেছে সবার সাথে।

আলিফের মা এসে বলল,তুই আজ আর কোথাও যাস না।ইরিনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।তোর ভাইয়া,ইরিন,আমি আর তোর বাবা সেখানেই যাচ্ছি।আমি আর তোর বাবা রাতেই ফিরবো।ইরিন আর আরিফ থাকবে।
আলিফ ঠিক আছে বলে বারান্দায় চলে যায়।

সবাই চলে গেছে ইরিনের বাবার বাসায়।এখন শুধু রুপ্সিতা আর আলিফ বাসায় আছে।বিকালে মেয়েটাকে নিচে দেখেছে এখন সন্ধ্যা অথচ এর মাঝে একবার ও রুপ্সিতার দেখা মিলে নি।এসব ভাবনার মাঝেই রুপ্সিতা রুমে ঢুকে হাতে ট্রে।সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে পাকোড়া আর চা বানিয়েছে।আলিফ এক কাপ চা হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিয়ে বলে বাহ বেশ ভালো চা বানাওতো তুমি।
আমার মা ও অনেক ভালো চা বানায়।তোমার আর মায়ের দুজনের বানানো চা ভালো।তবে দুটোর স্বাদই আলাদা।

রুপ্সিতা পাকোড়া খাচ্ছে আর আলিফের পেটের দিকে তাকাচ্ছে।রুপ্সিতার দৃষ্টি লক্ষ্য করে আলিফ নিজেও এবার নিজের পেটের দিকে তাকালো।কিছু দেখতে না পেয়ে বলল,কি?এভাবে আমার পেটের দিকে কি দেখো?

রুপ্সিতা ভাবুক হয়ে বলল,আপনি কি জীম করেন?আপনার পেট দেখি একেবারে স্লিম কোনো ভূড়ি নাই।

আলিফ ভ্রু কুচকে বলল,কেন?তোমার কি ভুড়িওয়ালা ছেলে পছন্দ নাকি?
রুপ্সিতা নাক মুখ কুচকে বলল,ছ্যাহ!

আলিফ পাকোড়ায় কামড় বসিয়ে বলল,জীম করা ছেলেদের পেটই কি শুধু স্লিম থাকে?আশেপাশে তাকিয়ে দেখো অনেক ছেলে আছে জীম না করেও আমার মতো পেট স্লিম।
আলিফের কথা শুনে রুপ্সিতা চারদিকে তাকানো শুরু করে দিয়েছে।কই ওতো আশেপাশে কোনো ছেলেকে দেখছেনা আলিফকে ছাড়া।

আলিফ রুপ্সিতার তাকানো দেখে ওর মাথায় গাট্রা মেরে বলল,আমি তোমাকে এভাবে তাকাতে বলিনি।কথার কথা বলেছি।

চা খাওয়া শেষে রুপ্সিতা কাপ আর ট্রে হাতে তুলে রান্নাঘরে পা বাড়ালো।
এখন আর কি করবে কোন কাজ নেই।তারচেয়ে বরং রাতের রান্নাটা সেরে ফেলা যাক।ফ্রিজ থেকে মাছ নামিয়ে ভিজিয়ে রেখেছে।

অনেক্ষণ যাবত রুপ্সিতাকে রুমে না আসতে দেখে আলিফ নিচে নেমে এলো রুপ্সিতা কি করছে দেখতে।রান্নাঘরে খুট খুট আওয়াজে সেদিকে গিয়ে দেখলো রুপ্সিতা রান্না করছে।আলিফ গলা উঁচিয়ে বলল,তোমার পড়ালেখা নেই?এখানে কি করো?

রুপ্সিতা পেছনে আলিফকে দেখে বলল,একেবারে চট্টগ্রাম থেকে এসে পড়তে বসবো।আর এখন রাতের রান্না করছি।
আলিফ উঁকি মেরে বলল,কি রান্না করছো?

রুপ্সিতা কাজ করতে করতে বলল,ভাত,মাছ ভাজা,ডাল আর আলু ভর্তা।এগুলো ছাড়া আমি আর তেমন রান্না জানিনা।যদি খাবার খেয়ে উল্টাপাল্টা কমপ্লিমেন্ট দিছেন তো পাতিল দিয়ে পিটিয়ে আপনাকে সোজা করে দেবো।
আলিফ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।এই মেয়ে বলে কি?ওকে নাকি পাতিল দিয়ে পিটাবে।
#চলবে…….।