আজকে শহর তোমার আমার পর্ব-০৬

0
600

#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৬

রুপ্সিতার কথা শুনে আলিফ চোখ বড় বড় করে বলল,তুমি দু’আঙ্গুলের পুচকি মেয়ে হয়ে আমাকে পাতিল দিয়ে পিটাবে?এতো সাহস আছে তোমার?

রুপ্সিতা ঘাড় বেকিয়ে আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল,আগে পিটাবো পরে যা হওয়ার হবে।এখন এখান থেকে বের হন।পরে রান্না খারাপ হলে রাতে না খেয়ে থাকতে হবে।
আলিফ কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।কারণ রাতে না খেলে ওর অর্ধেক রাতই এপাশ ওপাশ করতে করতে কাটে।সহজে ঘুম আসেনা।

রুপ্সিতা রান্না শেষ করে ওয়াশরুমে গিয়েছে।ফ্রেশ হওয়া দরকার।রান্না করে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।আলিফ ল্যাপটপে কাজ করছে মনযোগ দিয়ে।
এখন রাত ৮ টা বাজে।এত তাড়াতাড়ি ডিনার করবেনা।আরো পরে ডিনার করবে।রুপ্সিতা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে খাটের একপাশে বসেছে।হঠাৎ রুমের লাইট সব অফ হয়ে গেছে।রুপ্সিতা অন্ধকারের মধ্যেই আলিফকে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে?লাইট অফ হয়ে গেছে কেন?

আলিফ ল্যাপটপ বন্ধ করে বলল,কারেন্ট চলে গেছে তাই লাইট অফ হয়ে গেছে।এই ইজি ব্যাপার তোমার মাথায় ঢুকে না?
রুপ্সিতা মুখ ছোট করে বলল,তাহলে মোম জ্বালাচ্ছেন না কেন?
আলিফ ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে ড্রয়ার থেকে মোম খুজে রান্না ঘরে গেছে মোম জ্বালাতে।রুপ্সিতা ও পিছু পিছু এসেছে।একলা অন্ধকারে বসে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।নিজের বাড়ি হলে থাকা যেত।
আলিফ মোম জ্বালিয়ে নিয়ে মোবাইলের ফ্ল্যাশ অফ করে দিয়েছে।দুজনে রুমে ফিরে আসতেই রুপ্সিতা চেঁচিয়ে উঠে বলল,ঐ দেখেন পাশের বিল্ডিং এ আলো জ্বলছে।তারমানে কারেন্ট আছে।
আলিফ তাকিয়ে দেখলো সত্যিই আশেপাশের বিল্ডিং গুলোতে আলো জ্বলছে।তাই বলল,মনে হয় আমাদের মেইন সুইচে প্রবলেম হইছে।
রুপ্সিতা বলল,ঠিক আছে এখন মোম নিয়ে আমার সাথে আসুন।

আলিফ ভ্রু কুচকে বলল,কোথায় যাবো?
রুপ্সিতা পেছন ঘুরে বলল,আরে মেইন সুইচে কি হয়েছে ঠিক করতে হবেনা?

আলিফ ব্যঙ্গ করে হেসে বলল,তুমি ঠিক করবে মেইন সুইচের প্রবলেম।সব কিছুতেই নিজেকে এক্সপার্ট মনে করো কেন?

রুপ্সিতা বিরুক্তি আর রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,আর একটা কথা বললে মোমের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবো।
আলিফ এগিয়ে এসে বলল,এই মেয়ে তোমার দেখি আজ সাহস বেড়েছে।একবার বলছো পাতিল দিয়ে পিটাবে।এখন বলছো মোম দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে।

রুপ্সিতা আবারো বলল,আপনি এতো কথা কেন বলছেন?আমার সাথে আসলে আপনার কি হয়?নাকি অন্ধকারে বসে থাকতে ভালো লাগে।রুপ্সিতা নিজের মোবাইল নিয়েই হাটা ধরলো।অগত্যা আলিফকে ও পিছু পিছু যেতে হলো।
ভালো করে মেইন সুইচ দেখে রুপ্সিতা দেখলো কেউ মেইন সুইচ অফ করে দিয়েছে।রুপ্সিতা মেইন সুইচ অন করতেই লাইট সব জ্বলে উঠলো।আলিফের দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে হাত দিয়ে বাতাশ ঝাড়ার মতো করে হেটে রুমে চলে গেছে।
আলিফ সেখানে দাঁড়িয়ে রুপ্সিতার যাওয়া দেখছে।মেয়েটা কি ভাব দেখাচ্ছে ও কে।যেন ও মেইন সুইচ অন করতে জানেনা।

আলিফের বাবা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন উনারা আজ আর ফিরবেনা।ইরিনের মা বাবা আসতে দিচ্ছেনা।উনারা কালকে সকালে ফিরবেন।দুজনে মিলে ডিনার সেরে নেয়।

রুপ্সিতা মোবাইল হাতে নিয়ে একমনে কিছু দেখে চলেছে।আলিফ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বলল,মুভি দেখবে?
রুপ্সিতা আড় চোখে আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল,কি মুভি?
আলিফ ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ভাবুক হয়ে বলল,চলো আমরা আজ হরর মুভি দেখবো।

রুপ্সিতা সিটকে দূরে সরে বলল,জীবনেও না।আমি দেখবোনা।পরে রাতে আমার ঘুম আসবেনা।
রুপ্সিতাকে ভয় পেতে দেখে আলিফ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,আজ তো তোমাকে আমি হরর মুভি দেখাবোই।
রুপ্সিতা বলল,আমি দেখবোনা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকবো।
আলিফ এদিক ওদিক খুজে কিছু না পেয়ে কাবার্ড থেকে রুপ্সিতার একটা শাড়ী বের করে সোফায় রাখে।
রুপ্সিতা চোখ ছোট ছোট করে বোঝার চেষ্টা করছে আলিফ কি করতে চায়।
হুট করে রুপ্সিতাকে কোলে তুলে সোফায় নিয়ে ছেড়ে দেয়।এরপর শাড়ী দিয়ে সোফার সাথে ওর হাত দুটো বেঁধে ল্যাপটপে হরর মুভি অন করে।
রুপ্সিতা ছুটার জন্য ছটপট করছে আর বলছে ও হরর মুভি দেখবেনা ওর হাতের বাঁধন খুলে দিতে।কিন্তু কে শুনে কার কথা।আলিফ রুপ্সিতার কথায় কান না দিয়ে মুভি দেখতে থাকে।
ভূত আসলেই রুপ্সিতা এক চিৎকার দিয়ে ওঠে।আর আলিফ হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়।অনেক্ষণ পর রুপ্সিতার কোনো সাড়া না পেয়ে আলিফ তাকিয়ে দেখে রুপ্সিতা ঘুমিয়ে গেছে।মুভি অফ করে রুপ্সিতাকে ডাকে কিন্তু রুপ্সিতা সাড়া দেয়না।অনেক্ষণ ডাকাডাকির পরও যখন রুপ্সিতা সাড়া দিলোনা তখন আলিফ ঘাবড়ে গেলো।মেয়েটা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে হয়।হাতের বাধন খুলে।গ্লাসে পানি ঢেলে রুপ্সিতার মুখে ছিটা দেওয়ার আগেই রুপ্সিতা চোখ মেলে আলিফের পিঠের মাঝখানে একটা কিল বসিয়ে দিলো।
আলিফের পিঠ মনে হয় বাঁকা হয়ে গেছে।এই চিকন মেয়ের গায়ে এত শক্তি?
এই তুমি না অজ্ঞান হয়ে গেছিলে ভূতের ভয়ে?

রুপ্সিতা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,আমি এরকম অজ্ঞানের ভান না করলে তো আপনি মুভি অফ করতেন না আর না আমার হাতের বাঁধন খুলতেন।
সোফা থেকে ধপাধপ পা ফেলে খাটে এসে শুয়ে পড়ে রুপ্সিতা।আলিফ ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।

পরেরদিন সকাল সকাল আলিফের বাবা মা চলে এসেছে।আলিফ অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।

ইরিন আসেনি সারাদিন রুপ্সিতার একা একাই কেটেছে।দুপুরের খাবার খেয়ে আজ আর শাশুড়ীকে ঘুমাতে দিলোনা রুপ্সিতা।বউ শাশুড়ী মিলে কিছুক্ষণ গল্প করলো।
বিকালে আলিফ তাড়াতাড়ি ফিরেছে।রুপ্সিতাকে নিয়ে শপিং এ যেতে হবে।দুটো সুতি শাড়ি পড়েতো আর চট্টগ্রাম যাবে না।আলিফ ফ্রেশ হয়ে অফিসে পরে যাওয়া শার্ট চেঞ্জ করে অন্য একটা শার্ট পড়ে নিয়েছে।রুপ্সিতা রেডি হয়ে নিলে দুজনেই বেরিয়ে পড়লো।
শপিং মলে এসে রুপ্সিতা সব ঘুরে ঘুরেই দেখছে কিন্তু কিছু পছন্দ করে কিনতে পারছেনা।আলিফের বিরক্ত লাগছে।বিরক্ত লাগারই কথা সারাদিন অফিসে গাধার খাটুনি খেটে এখন আবার শপিংমলে ঘুরতে হচ্ছে।

আলিফ হালকা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,সমস্যা কি?কিছু কিনছো না।শুধু ঘুরে ঘুরেই দেখছো।
রুপ্সিতা কিছু বলতে নিলেই আলিফ চোখ রাঙিয়ে তাকায়।তারপর তিনটা জামা আর তিনটা শাড়ি দোকানির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,এগুলো প্যাক করেন।

রুপ্সিতা কটমট চোখে তাকিয়ে আছে আলিফের দিকে।আলিফের এত কিছু যায় আসে না।শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে রুপ্সিতাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।রুপ্সিতাকে কিছু খাবে কি না জিজ্ঞেস করতেই ও না করে দেয়।ওকে জামা কাপড় পছন্দ করে কিনতে দেয়নি কেন সেই জন্য রেগে আছে।
অবশ্য আলিফ যদি জামাকাপড় গুলো না কিনে রুপ্সিতার পছন্দের কিনতো তাহলে আজ সন্ধ্যা কেন সারারাত কেটে গেলেও ওর ঠিকমতো পছন্দ হতো না।এই জামাটা সুন্দর তো ওড়না সুন্দর না।একশ একটা খুত ধরে।
রুপ্সিতা কিছু খাবেনা জানাতেই আলিফ গাড়ি দেখতে লাগলো।রুপ্সিতার রাগ আরো বেড়ে গেলো।ও খাবেনা বলেছে তো কি হয়েছে জোর করে খাওয়াতে পারলো না?
এই জন্যই লোকে বলে মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়।

বাসায় এসেই আলিফ শুয়ে পড়েছে।সারাদিন অনেক ধকল গেছে।রুপ্সিতা ধপধপ পা ফেলে হাটছে।ও বোঝাতে চায় ও রেগে আছে কিন্তু আলিফ পাত্তাই দিচ্ছেনা।চোখের উপর ডান হাত দিয়ে শুয়ে আছে।ফ্রেশ হয়ে এসে রুপ্সিতা জামাকাপড় গুলো খুলে খুলে দেখছে।এখন এই জামাগুলো ভালো লাগছে।যদি ও নিজে পছন্দ করে আনতো তখন বাসায় আনার পর আর ভালো লাগতো না।এই জন্য মায়ের কাছে অনেক বকা শুনতে হতো।কিন্তু এখন আর শুনতে হয়না।
দুবোন মিলে কত দুষ্টুমি করতো।সেজন্য ও মা অনেক বকতো বাবার কাছে বিচার দিতো।কিন্তু বাবা কখনো তাদের দুবোনকে কিছু বলতো না।কথা গুলো মনে করেই চোখ দুটো সিক্ত হয়ে উঠলো রুপ্সিতার।
#চলবে………।

(রিচেইক করা হয়নি।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)