আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-০১

0
589

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#১ম_পর্ব

– বাপি ঐ দেখো আম্মু।
একটা বাচ্চাকে রেখে পরপুরুষের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়া প্রাক্তন স্ত্রীকে তার নতুন স্বামীর সাথে দেখে মেয়ে মানহাকে কিছুটা আড়ালে রাখার চেষ্টা করছে জাহিন। যাতে করে মানহা কিছুতেই তার মা কে দেখতে না পায়। কিন্তু তবুও মানহার চোখ দেখে ফেলে।

মানহা এতটুকু বলেই থেকে গেলো। মানহা আর কিছু বলছে না জন্য জাহিন খুবই অবাক চোখে মানহার দিকে তাকালো। কারণ জাহিন ভেবেই রেখেছিল মানহা এখন বলবে – বাপি আমি আম্মুর কাছে যাবো আম্মুকে ডাকো না।
এরপর আম্মু আম্মু বলে ডাকতো। কিন্তু মানহা তো আজ কিছুই বললো না। বরং মানহার কথায় জাহিনের চোখ কপালে উঠে গেলো।
– বাপি চলো বাসায় যাবো আজ আর শপিং করবো না।
– তোমার তো কিছুই কিনলে না।
– আমার কিছু লাগবে না বাপি। আমি এখানে থাকবো না তুমি বাসায় চলো।
যে মেয়ে একবার শপিং করতে আসলে থামার নাম নেয় না সে নাকি আজ শপিং করবে না। জাহিন বিষয়টা খুব ভালো করে লক্ষ করলো মানহা বার বার ওর আম্মুর দিকে তাকাচ্ছে । যদিও সে মানহার দৃষ্টিসীমা পেরিয়ে গেছে।

জাহিন মানহাকে নিয়ে বাসায় আসার পথে জিজ্ঞেস করলো- আম্মু বাইরে থেকে খেয়ে যাই?
– না বাপি বাইরে খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি বরং বাসায় গিয়ে আমায় নুডলস রেঁধে দিও।
– আচ্ছা আম্মু।

বাসায় এসে খাওয়া শেষ করে যখন ঘুমাতে যাবে তখন জাহিন অনেক কথার ভীড়ে মানহাকে জিজ্ঞেস করলো- আজ আম্মুর কাছে যেতে ইচ্ছে করেনি তোমার?
– একদম না।
– কেন?
– আম্মু অনেক বাজে।
– ছিঃ মা এভাবে বলতে হয় না। আম্মু কখনো বাজে হয় না।
– তাহলে আম্মুর কেন আমার কাছে আসতে ইচ্ছে করে না।
– তোমার আম্মু তো সংসার নিয়ে অনেক বিজি তাই হয়তো আসতে পারে না।
– আম্মু অনেক পঁচা তোমায় অনেক কষ্ট দেয়।
– কোথায় আমায় কষ্ট দিলো!
– আমি জানি তো তুমি মাঝে মাঝে আলমারিতে থাকা আম্মুর ছবি বের করে দেখো আর কান্না করো।

জাহিন এবার আর কিছু বলতে পারছে না।
– রাত অনেক হয়ে গেছে আম্মু তুমি এখন ঘুমিয়ে পড় ।

লাইট বন্ধ করার কিছুক্ষণ পরেই মানহা ঘুমিয়ে গেলো। জাহিন দেখলো মানহা ঘুমিয়ে গেছে সে উঠে খুব গোপনে রাখা সিগারেটের প্যাকেট টা নিয়ে ছাঁদে চলে আসলো।
এটা তার নিত্য দিনের অভ্যাস। প্রতিদিন সিগারেট ধরানোর সময় ভাবে যদি মানহার কাছে ধরা পড়ে যায় তবে সে কি বলবে?

মানহার আম্মুর সাথে দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো এরপর পালিয়ে বিয়ে করে এই শহরে এসে ছোট একটা বাবুই পাখির বাসা বাঁধে। বিয়ের তিন বছরের মাথায় ঘর আলো করে মানহার জন্ম হয়। দেখতে দেখতে মানহার বয়স পাঁচ। সময়গুলো কেমন তাড়াতাড়ি কেটে যাচ্ছে।
মানহার বয়স যখন চার তখন একদিন অফিসে থেকে এসে জাহিন দেখে মানহা বাসায় একাই ঘুমোচ্ছে। মানহাকে না ডেকে মানহার আম্মুকে খুঁজলো কিন্তু বাসায় কোথাও পেলো না। এরমাঝেই মানহা জেগে যায়। মানহাকে কোলে নিতে যাবে তখন দেখলো মানহার পাশে একটা চিরকুট। সেখানে শুধুই কয়েকটা লাইন লেখা ছিলো।
” রিয়াদের সাথে একবছর আগে আমি একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। তাকে ছাড়া থাকাটা আমার একধরনের অসম্ভব হয়ে পড়ছে এখন । তাই সব ছেড়ে আমি তার কাছে চলে গেলাম। আশা করছি আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনে তুমি কোনো বাঁধার সৃষ্টি করবে না আর হ্যাঁ পারলে ক্ষমা করে দিও।

জাহিন চিঠি পড়ে একনজরে মানহার দিকে তাকিয়ে ছিলো আর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছিলো। জাহিনের হাতে এখন সেই চিঠিটা। যার নিচে সুন্দর করে লেখা আছে তুমি কোনো দিন ভালো মা হতে পারবেনা। এই লাইটা জাহিনের লেখা । রিয়াদ ছেলেটাকে নিজের ভাইয়ের মতোই ভালোবাসতো জাহিন। কিন্তু সে তখনও বুঝতে পারেনি যাকে আপন ভাবা যার সব থেকে বড় ক্ষতি সেই মানুষটি করে । এরপর চলার পথে অনেক সময় দেখা হয়ে যায় তাদের সাথে কিন্তু জাহিন কখনো তাদের দিকে ঘুরেও তাকায় নি।

হঠাৎ হাতের আঙ্গুলে টান পড়লে চমকে উঠে জাহিন। মানহা জাহিনের আঙুল ধরে জাহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । জাহিন তাড়াহুড়ো করে সিগারেট ফেলে দিয়ে হাত দিয়ে ধোঁয়া গুলো চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে ।
– বাপি তুমি কি করছো এখানে?
জাহিন মানহা কে কোলে তুলে নিলো।
– কিছুই না আম্মু ।
– তোমার চোখে পানি কেন? তুমি কান্না করছো!
– কই না তো আম্মু। আমি কেন কান্না করবো? যার এতো সুন্দর একটা পরী আছে সে কি কখনো কান্না করতে পারে তুমি বলো?
– এখানে এতো ধোঁয়া কেন বাপি?
– কই ধোঁয়া? এখানে তো কোনো ধোঁয়া নেই। তুমি ঘুমাওনি কেন?
– ঘুম আসছিলো না।
– রাস্তায় হাঁটবে?
– আচ্ছা ।

জাহিন মানহা কে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো। দুজনেই রাস্তায় হাঁটছে । একটু পরপরই জাহিন মানহাকে জিজ্ঞেস করছে – আম্মু কোলে উঠবা?
– কোলে কেন উঠবো! আমরা তো হাঁটতে বের হইছি তাই আমিও হাঁটবো ।

পরের দিন সকাল বেলা জাহিন মানহাকে তার স্কুলে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে আসলো। আজ অফিসে নতুন বস আসার কথা। কিন্তু জাহিন আজকেই দেরী করে অফিসে আসছে ।
অফিসে আসার পর তার এক কলিগ জানালো নতুন বস এসে গেছে । জাহিনকে দেখা করতে বলছে ।
জাহিন তাড়াহুড়ো করে বসের কেবিনে আসলো। তাড়াহুড়োয় নক না করেই ভিতরে আসলো।
– এক্সকিউজ মি। আপনি কে আর নক না করেই ভিতরে আসলেন কেন?
– সরি ম্যাম তাড়াহুড়োয় গুলিয়ে ফেলেছি।
– আপনি কে?
– আমি জাহিন। আপনাদের ম্যানেজার।
– যেখানে আপনার সব কিছু ম্যানেজ করার কথা সেখানে আপনার নিজেরই তো কোনো ম্যানার নেই।
জাহিন কিছু বলছে না চুপচাপ মাথা নিচু করে শুনে যাচ্ছে।

চলবে,,