আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-০২

0
352

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#২য়_পর্ব

অপমানিত হয়ে নতুন বসের কেবিন থেকে মাথা নিচু করে বের হয়ে আসলো জাহিন। জাহিন বের হওয়া মাত্রই তার এক কলিগ তাকে জিজ্ঞেস করলো- ম্যাম কি বললো?
– কি আর বলবে যেটা ওনাদের বৈশিষ্ট্যের সাথে যায়।
– খুব বকছে?
– কখনো বকা শুনতে হয়নি তো তাই আমার কাছে তো খুব মনে হচ্ছে। আচ্ছা আমি আমার কেবিনে যাই।

জাহিন তাড়াহুড়োয় মোবাইলটা ডেস্কের উপর রেখে গিয়েছিল । এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে দুইবার মিসডকল হয়ে আছে। অফিসের এমডি স্যার ।
জাহিন কল করতেই এমডি স্যার রিসিভ করলো।
– কোথায় তুমি?
– স্যার আমি তো অফিসে।
– কখন আসছো?
– আজ একটু লেইট হয়ে গেছে ।
– আমার মেয়ে কিন্তু একদম লেইট পছন্দ করে না। তোমায় কিছু বলছে নাকি লেইট করে আসার জন্য?
– তেমন কিছু বলেনি স্যার । এ-সব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। আপনি বাসায় বিশ্রাম করুন ।
– তুমি একটু আমার পাগলী মেয়েটাকে সাহায্য কইরো।
– এটা আমার দায়িত্ব স্যার ।

জাহিন এমডি স্যারের সাথে কথা বলে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে । প্রতিদিনের মতো আজও ২ টার সময় জাহিন অফিস থেকে বেরিয়ে মানহা কে স্কুল থেকে আনার জন্য বের হলো। কিন্তু সে বসের সামনে পড়ে গেলো।
– আপনি এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছেন?
– ম্যাম একটু বাইরে যাবো।
– বাইরে যাবেন কেন?
– আমার মেয়ের স্কুল ছুটি হয়েছে ওকে আনতে ।
– দেখুন কাজের সময় কাজ করুন আপনাকে অফিসের কাজ করার জন্য মাইনে দেওয়া হয় বাসার কাজ না।
– কিন্তু ম্যাম আমার মেয়ে খুব ছোট।
– সেটা তো আমি বুঝবো না। আমার সাথে আপনার সম্পর্ক কাজ নিয়ে সো আপনি যতক্ষণ না অফিস টাইম শেষ হচ্ছে ততক্ষণ বের হতে পারবেন না।

জাহিনকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ম্যাম ওকে ওর ডেস্কে পাঠিয়ে দিলো।
জাহিন ডেস্কে চলে যাবার পর পাশের একজন কলিগ কে জিজ্ঞেস করলো- উনি কি রোজ এমন করে?
– জ্বি ম্যাম।।
– বুঝি না আব্বু এসব লোক কে কেন চাকরিতে রাখছে ।

জাহিনের মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মানহা এতক্ষণ কি করছে । জাহিন হেডম্যাম কে কল দিলো।
– হ্যালো
– ম্যাম আমি মানহার বাপি বলছিলাম ।।
– জ্বি বলুন।
– স্কুল কি ছুটি হয়ে গেছে?
– এখনই হলো। কেন?
– আমার অফিস থেকে ছুটি দিচ্ছে না তাই মানহাকে নিতে যেতে পাচ্ছি না। আপনি যদি দয়া করে ওকে আপনার সাথে রাখতেন তবে খুব উপকার হতো।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।
– ধন্যবাদ ম্যাম।

কল কেটে দিলো জাহিন। এতক্ষণে মাথা থেকে আকাশ সমান টেনশন দূর হয়ে গেলো।

ঘড়িতে পাঁচটা বাজা মাত্রই জাহিন অফিসে থেকে বেরিয়ে আসলো। অফিসের গেইটেই হেডম্যাম কে কল দিলো।
– ম্যাম মানহা কোথায়?
– মানহাকে নিয়ে আমাদের একজন টিচার আপনাদের বাসায় গেছে । আপনি সোজা বাসায় চলে যান।
– ধন্যবাদ ম্যাম ।

জাহিন বাইক স্টার্ড করে দ্রুত বাসায় চলে আসলো। দুই বার কলিং বাজানোর পর মানহা এসে দরজা খুলে দিলো। মানহার চাঁদ মুখ দেখে জাহিনের মনটা সিক্ত হয়ে গেলো। এতক্ষণ মরুভূমির মতো ধূসর হয়ে ছিলো। মানহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বুকে টেনে নিলো।
– আম্মু তুমি ঠিক আছো?
– হুম । কিন্তু তুমি আজ আসোনি কেন?
– অনেক কাজ ছিলো মা আজ।
– ওহ আচ্ছা । নতুন বস কি খুব কাজ দিছে?
– হুম অনেক কাজ দিছে।
– বাপি আসো তোমায় পরিচয় করিয়ে দেই।

মানহা জাহিনের হাত ধরে টেনে রান্নাঘরের দিকে নিয়ে আসলো। জাহিন মানহার সাথে আসলো। রান্না ঘরে একটা মেয়ে রান্না করছে । খুব ভালো করে দেখলো কিন্তু মেয়েটাকে আগে কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না তার।
– বাপি উনি আমার নতুন টিচার।
– ওহ আচ্ছা । কিন্তু আপনাকে তো কোনো দিন স্কুলে দেখিনি।
– বাপি তুমি সত্যি বোকা। তোমায় তো আমি বলেই দিলাম উনি নতুন টিচার তো তুমি ওনাকে কিভাবে আগে দেখবা!
– ওহ সেটাই তো। আমার আম্মু দেখি অনেক চালাক হয়ে গেছে ।
– আমি আজকেই নতুন জয়েন করছি।
– ওহ আচ্ছা। ধন্যবাদ আপনাকে আমার কলিজাটাকে দেখে রাখার জন্য ।
– ইটস ওকে।
– আপনি এসব করছেন কেন? তাছাড়া আপনার বাসায় হয়তো টেনশন করছে সবাই। আপনি মানহা কে বাসায় নামিয়ে দিলেই হতো । যদিও বা থেকে গিয়ে অনেক ভালো করেছেন ।
– আমি এখানে একটা হোস্টেলে থাকি । পড়ালেখা এখানেই করছি। তাই পরিবার কেউ টেনশন করার প্রশ্নই আসে না।
– জানো বাপি আমি ম্যামের হোস্টেলে গেছলাম।
– তাই?
– হুম । খুব ছোট ঘর। ম্যাম কে বললাম আমাদের বাসায় থাকতে আমাদের তো অনেক বড় বাসা তাই না।
– হুম মা।
– আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমার রান্না শেষ ।
– আপনি আমাদের বাসার অতিথি কোথাও আমি রান্না করে খাওয়াবো কিন্তু তা না উল্টো আপনি আমাদের রান্না করে খাওয়াচ্ছেন।
– এসব বাদ দিন তো আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন ।
– কি রান্না করলেন?
– ফ্রিজে যা ছিলো সেটাই।
– ওহ আচ্ছা ।

জাহিন ফ্রেশ হয়ে এসে তিনজন মিলে খেতে বসলো। খাওয়া মাঝেই হঠাৎ ম্যাম বললো- আপনার মেয়েটি কিন্তু অনেক কিউট যদিও একটু দুষ্ট আছে।
– ম্যামের সাথে দুষ্টুমি করছো তুমি?
মানহা কিছু না বলে শুধু মুচকি হেঁসে দিলো।
– আমাদের হোস্টেল এর সব মেয়েই ওকে হোস্টেলে রাখতে বলছে আমায়।
– ওহ আচ্ছা । তাহলে ও হোস্টেলে গিয়েও দুষ্টুমী করছে।
মানহা আর ম্যাম এক অন্যজনের দিকে তাকাচ্ছে ।
– আপনার তো নামটাই জানা হলো না!
– আমি প্রিয়ন্তী।
– বাহ অনেক সুন্দর নাম।

গল্প করতেই খাওয়া শেষ হয়ে গেলো। প্রিয়ন্তী হোস্টেল যাওয়ার জন্য বের হলো।
– ম্যাম থেকে যান আমাদের বাসায়।
– ম্যাম যদি এখানে থাকে তবে ম্যাম এর বন্ধুরা তাকে অনেক বাজে কথা শেনাবে তুমি কি চাও ম্যাম কে বাজে কথা শুনতে হোক?
মানহা মাথা নাড়িয়ে না বললো।
– বাপি চলো আমরা ম্যাম কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
– আমরা?
– হ্যাঁ । তোমার বাইকে করে ।
জাহিন প্রিয়ন্তীর দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ প্রিয়ন্তী জাহিনের দিকে তাকিয়ে থাকে বললো – আচ্ছা ঠিক আছে চলুন। তাছাড়া এখন রিকশাও তেমন একটা পাওয়া যাবে না।

মাঝ রাস্তায় একটা আইসক্রিমের দোকান দেখে মানহার বায়না আইসক্রিম খাবে। মাঝে মাঝে জাহিন মানহার মাঝে ওর মা কে খুঁজে পায়। মেয়েটা ঠিক মায়ের মতো হয়েছে সে ও আইসক্রিম দেখলে এক পা সামনে এগোতে দিতো না।

To be continue….