আমাদের কুঁড়েঘর পর্ব-১০

0
211

#আমাদের কুঁড়েঘর
Sumon Al-Farabi
#১০তম_পর্ব

আব্বু চাচ্চু দুজনেই মাথা নিচু করে বসে আছে। আব্বু আর চুপ না থেকে বললো- মানহা নতুন করে মায়ের আদর নিয়ে বড় হয়ে উঠুক এটাকি তুই চাস না?
– আব্বু কেন বুঝতে পারছো না কেউ অন্যের মেয়েকে কেউ নিজের মেয়ের মতো করে ভালোবাসবে না। আমি চাই না আমার মেয়ে কারে অবহেলা সহ্য করে বেরে উঠুক ।
– মেয়েটার চোখে আমি মানহার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
– মানে কি! তোমরা মেয়েও দেখে ফেলেছো?
– মেয়েটাকে তুই ও চিনিস।
– আমি চিনি! কে সে?
– মানহা যার সাথে গেছে ।
– আব্বু তুমি ঠিক আছো তো?
– কেন? মেয়েটা ভালো আছে দেখতেও অনেক সুন্দরী । আচার ব্যবহার ও অনেক ভালো আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে সে মানহাকে অনেক ভালোবাসে।
– দুই একদিনের জন্য ভালোবাসা আর সারাজীবনের জন্য ভালোবেসে যত্ন করে রাখা এক নয়। তাছাড়া তুমি কি কখনো চাইবে তোমার শিক্ষিত সুন্দর মেয়েটি একটা বিবাহিত পুরুষ কে বিয়ে করুক যার একটা মেয়ে আছে । অবশ্যই চাইবে না। যেটা তুমি নিজের হয়ে চাইবে না সেটা অন্য কেউ চাইবে এটা কি করে ভাবো তোমরা। সারাদিন অনেক প্রেসার গেছে একদম ভালো লাগছে না। তোমরা প্লিজ গিয়ে ঘুমিয়ে পড় ।

আবারও কিছুক্ষণ নিরবতা। তারপর আব্বু চাচ্চু উঠে চলে গেলো।

শুয়ে পড়লাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। গেমস খেলতেও ইচ্ছে করছে না। অনেক দিন আগে একটা ফেসবুক আইডি ক্রিয়েট করেছিলো জাহিন। কি যেন মনে করে ফেসবুকে লগ ইন করলো। সচরাচর ফেসবুকে সে আসে না। অনেক দিন পর হঠাৎই অমাবস্যার চাঁদের মতো তার আইডি একটিভ দেখায়। সেখানে শুধুই অফিসের কলিগ আছে । মেসেঞ্জারে লগ ইন করতেই অনেক গুলো নোটিফিকেশন আসলো।
জাহিন নোটিফিকেশন দেখে থ এতগুলো ম্যাসেজ আমায় কে দিলো?
জাহিন কে অফিসের একটা গ্রুপে এড করছে । সবাই সেখানে আড্ডা দেয়। শুধু মাত্র জাহিন ছাড়া ।
জাহিন অফিসের সবার কাছেই নিরব শ্রোতা মাত্র । কিন্তু এই জাহিন এক সময় পুরো পারা মাতিয়ে রাখতো। জাহিন মাঝে মাঝে ভাবে হয়তো নেহার সাথে তার পরিচয়টা না হলেই বুঝি বেশি ভালো হতো। কিন্তু কি করার কষ্ট ছাড়া তো জীবন পানসে হয়ে যায়। তাই হয়তো জাহিন নিজে থেকেই কষ্ট বয়ে নিয়ে আসছে নিজের জীবনে ।

জাহিন সবার কনভারসেশন গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আর মিটমিট করে হাসছে । নতুন বসকে সে যতটা রসকস হীন মানুষ ভাবতো সে আসলে ততটা নয়। বেশ কিছু রিকুয়েষ্ট আসছে তার মাঝে একটা কিছুক্ষণ আগেই আসছে । আইডিটা কলিগের কারে নয়। কারে হলে হয়তো জাহিন জানতো। নামটাও একদম অজানা আর অদ্ভুত ‘অতৃপ্ত প্রণয়’। নামটা বলেই হেঁসে দিলো জাহিন। এমন ও নাম হয় বুঝি আইডির। আর কিছুক্ষণ ফেসবুকে ঘেরঘুরি করে বেরিয়ে আসলো। কিন্তু দুচোখে ঘুমের ছিটে ফোটাও নেই ।

ঘড়িতে তখন দু’টো বাজে।
একটু ছাঁদে হাটাহাটি করলে হয়তো কিছুটা সময় ভালো লাগবে। তাছাড়া এখন আবহাওয়া টা ও খুব মিষ্টি। শিরশির বাতাস বইবে চারদিকে কোলাহল থাকবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু ছাঁদে এসেই অদ্ভুত এক শব্দ কানে এসে বাঁধলো । কেউ কান্না করছে হয়তো । কিন্তু এতো রাতে ছাঁদে কে আসবে? বাসার কেউ তো এতো রাতে ছাঁদে আসার কথা নয়। চারদিকে খুঁজতে লাগলো। এক কোনায় দালানের সাথে হেলান দিয়ে কেউ একজন কান্না করছে । জাহিন কিছুটা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো- কে ওখানে?
জাহিনের কথা শোনা মাত্রই মেয়েটি তাড়াহুড়ো করে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো ।
মেয়েটি কোনো কথা না বলেই হনহন করে হেঁটে চলে যাচ্ছে ।
– এই যে কে আপনি?
কিন্তু মেয়েটি শুনেও শুনছে না।
– কি হলো কথা বলছেন না যে! কে আপনি, আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
এবার মেয়েটি দাঁড়ালো । জাহিন মেয়েটির কাছে গিয়ে ফোনের আলোয় দেখলো চিনতে পারে কি না।
– আপনি মাইসা না! চাচির বড় ভাইয়ের মেয়ে?
– হুম ।
– আমায় চিনেছেন?
– হুম।
– এতো রাতে এখানে বসে কান্না করছেন কেন?
– এমনি।
– কষ্ট শেয়ার করলে কমে আর আমি কিন্তু খুব সুন্দর একজন শ্রোতা আর আমায় যদি বলেন তাহলে আমি কাউকে বলবো ও না।
– কিছু না বললাম তো।

– আচ্ছা । বলতে চাচ্ছেন না যখন তখন জোর করা ঠিক হবে না। আপনি বরং গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন অনেক রাত হইছে। শুনেছি কান্না করলে নাকি চোখ পরিস্কার হয় আর তাড়াতাড়ি ঘুম আসে । শুভ রাত্রি ।

জাহিন এসে রেলিঙের উপর বসলো। দুচোখ বন্ধ করে দুহাত ডানার মতো মেলে দিয়ে শিরশির বাতাসটাকে সে গভীর ভাবে অনুভব করছে ।
– আপনি এতো রাতে এখানে কেন?
হঠাৎই মেয়েটির কথায় চোখ খুললো। মেয়েটি ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি এখনো ঘুমাতে যান নি?
– না। ঘুম আসবে না আমার।
– কেন? কি হয়েছে?
– একজন কে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারি না যে তাকে কতটা ভালোবাসি। এই বুঝি মনে হয় সে আমার আবার মনে হয় সে অন্যকারো।
– One side Love তাই না?
– অনেকটা এমনই। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার জন্ম বুঝি কষ্ট পাওয়ার জন্যই হয়েছে ।
– আপনার পরিবার থেকে আপনাকে ঠিক কি কি কষ্ট দেয়?
– পরিবার থেকে কেন কষ্ট দিবে?
– আপনি তো এই মাত্র বললেন আপনার জন্ম হয়েছে কষ্ট পাওয়ার জন্য ।
– পরিবারে তো ঠিক আছি কিন্তু ভালোবাসায় অসুখী। যখন তাকে বোঝাতে ব্যার্থ হই তখন খুব কান্না পায়।
– জানেন আল্লাহ যাকে বেশি ভালোবাসে তাকে সব সময় কষ্টে রাখে।
– তারমানে আমাকেও বুঝি আল্লাহ ভালোবাসে।
– আমার পুরো কথাটা এখনও শেষ হয়নি।
– আচ্ছা বলুন ।
– আল্লাহ যাকে বেশি ভালোবাসে তাকে সব সময় কষ্টে রাখে কিন্তু কিছু কিছু কষ্ট আমরা নিজেদের পাকনামির জন্য ইনভাইট করে নিজের জীবনে নিয়ে আসি তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে এই প্রেম ভালোবাসা। সবাই জানে এটাতে কষ্ট আছে কিন্তু তবুও আমাদের প্রেম করতে হবে অন্য কে ভালোবাসতেই হবে ।
– আপনি ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়েছেন তো তাই এমন বলছেন ।
– আমি পেয়েছি জন্যই তো বলছি কারণ আমার অভিজ্ঞতা আছে । তুমি যাকে যত বেশি গুরুত্ব দিবে সে তোমার গুরুত্বের ততবেশি অবহেলা করবে । একটা কথা আছে না রতনে রতন চিনে কিন্তু সত্যিকার অর্থে মানুষ জাতী কখনোই আসল ভালোবাসা চেনে না। তারা সব সময় ফেইক ভালোবাসার পিছনে দৌড়াবে। সারাটি জীবন ভালোই ভিক্ষা করবে কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন নিজের ভিক্ষার ঝুলি খুলে দেখবেন সেখানে ভালোবাসার শেষ চিহ্ন মাত্র নেই । কারণ ফেইক ভালোবাসাগুলো অনেকটা হাওয়াই মিঠাই এর মতো এই আছে আবার এই নেই । যদি খুুব যত্ন করে রাখতে পারেন তবে এর স্হায়ীত্ব হয়তো কিছু সময় বাড়ে কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেই হাওয়াই মিলিয়ে যাবে।

– আপনি এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কি করে কথা বলেন?
– আমার কথা বলার স্টাইলের দিকে ফোকাস না করে আমার কথাগুলোর দিকে ফোকাস করেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
– সব তো বুঝি কিন্তু মনকে কি করে বোঝাই?
– এর উত্তর আপনাকে কি দিবো আমি নিজেই তো সেটা পারি না।

হঠাৎই সামিহার মেবাইলে কল আসে ।
– এই দেখুন ও কল করছে । কথা বলতে শুরু করলে খুব আনন্দ হয় কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু কথা বলবে ইচ্ছে করে সুইসাইড করি।
– আপনি বরং এক কাজ করতে পারেন তাকে কিছু দিন ইগনোর করতে পারেন।
– এতে যদি ও আমার থেকে দূরে চলে যায়?
– যেটা দূরে চলে যায় সেটা আবার আপনার কবে ছিলো। তাকে ইগনোর করবেন কিন্তু যখন তার আপনাকে খুব করে দরকার পড়বে তখন যেন আপনাকে তার পাশে পায়।
– এটা কিভাবে করবো! আপনার কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।
– রাত অনেক হয়েছে আপনি বরং রুমে গিয়ে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করুন । আমি আসি একটু ঘুমাতে হবে । আল্লাহ হাফিজ।

মাইসা কে বিদায় জানিয়ে জাহিন রুমে চলে আসলো। মাঝে মাঝে কথা বলার একজন মানুষ পেলে মন্দ হয় না। সময়টাও কেটে যায় কথার ছলে কিছুটা হাসাও হয়। আর হাসলে নাকি হৃদয় ভালো থাকে।

To be continue…..