আমার অনুভুতি তুমি পর্ব-০৪

0
500

#আমার_অনুভুতি_তুমি
#পর্ব_৪
#নুসাইবা_ইসলাম

ইফরাত মুখ গোমড়া করে গাড়ি চালাচ্ছে, কারণ ইশা তাকে ভদ্রভাবে অপমান করছে। ইশা বসে বসে ভাবছে কি কি খাবে ।

ভাইয়া আমার এক ফ্রেন্ড কল দিছে আমাকে ওরা সবাই নাকি মিট আপ প্ল্যান করছে। আমি বলছিলাম কি তুমি ইশুকে নিয়ে আলাদা ঘুরে আসো আর আমাকে আমার ফ্রেন্ডসদের ওখানে দিয়ে এসো। আবার যখন বাড়ি যাবা ওখান থেকে পিক করে নিও। (লামিয়া)

তাহলে ঠিক আছে যা,সাবধানে থাকবি আর আমি না আসা অবদি কোথাও যাবিনা। (ইফরাত)

আচ্ছা ভাইয়া তোমরাও খুব ইঞ্জয় কইরো, আর শুনো আমি তোমাদের সাথে যাওয়ার আগে ফুচকা খাবো তাই আগে খেয়ে ফেইলো না। (লামিয়া)

আচ্ছা সাবধানে থাকিস আর আমাকে কল দিস টাইম মতো। (ইফরাত)

আপু আমাকে নিবে না তোমার সাথে? আমি একা একা কি করবো? (ইশা)

আরে আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে তুই কি করবি? আর একা কোথায় ভাইয়া আছে না। আমি গেলাম টাটা। ( লামিয়া)

লামিয়া চলে যেতেই ইশা মুখ গোমড়া করে বসে আছে, কারণ সে একদম ই চুপচাপ থাকতে পারে না। যেহেতু লামিয়া নাই সে এবার কার সাথে কথা বলবে? ইফরাত এর সাথে সে তো ততোটা ইসি নয়।

অন্যদিকে

আপনার কথায় আমি ভাইয়া কে আর ইশু কে মিথ্যা বলে এসেছি, আপনি আমাকে কেনো ডাকছেন? আর আমার নাম্বার ই বা কোথায় পেলেন। ( লামিয়া)

দেখো আমি তোমার নাম্বার কোথায় পাইছি সেটা ম্যাটার করে না। আমার অনেক জরুরি কথা ছিলো তোমার সাথে তাই এখানে ডেকেছি। ( সূর্য)

সূর্য লামিয়াকে ফোন করে বলায় সে ইফরাত আর ইশুকে মিথ্যা বলে এসেছে। লামিয়া যে সূর্য কে ভালোবেসে ফেলেছে তা বলা ই যায়। তাই সূর্য ডাকায় সে চলে এসেছে।

কি বলবেন আপনি আমাকে? আপনাদের কথা আমার আব্বু বলে দিবে এই ছাড়া আপনার সাথে আমার কোনো কথা নাই। ( লামিয়া)

রেগে যাচ্ছো কেন তুমি? থামো চলো রেষ্টুরেন্ট এ গিয়ে বসে ঠান্ডা মাথায় কথা বলি এমনিও এখানে অনেক গরম। ( সূর্য)

না আপনার সাথে আমার আর কোনো কথা নাই আপনি এক কাজ করেন চলে যান, আর আমিও চলে যাচ্ছি আমার রাস্তায়। (লামিয়া)

দেখো এটা রাস্তা এভাবে কথা বললে লোকে কিভাবে তাকায় তুমি শুধু আমার অল্প কিছু কথা শুনবা। ( সূর্য)

লামিয়া অনেক ভেবে চিনতে সূর্যের সাথে হাটা দিলো। সূর্য হাফ ছেড়ে বাচলো ।

ইফরাত আর ইশা রেষ্টুরেন্ট থেকে খাবার খাওয়া শেষ করে বাহিরে হাটছে। ইশা আগে আগে আর ইফরাত তার পিছে পিছে।

ইশু চল তো সামনের পার্কে গিয়ে বসি খাবার বেশি খাওয়া হয়ে গেছে আর হাটতে পারছিনা। ( ইফরাত)

ইশু ইফরাত এর কথায় জোরে হাসা শুরু করলো,ইশু এর এমন হাসি দেখে আশেপাশের মানুষ অদ্ভুত ভবে তাকিয়ে আছে, তারা হয়তো ভাবছে মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেলো যে মাজ রাস্তায় এভাবে হাসছে। ইফরাত এর এবার রাগ হচ্ছে মেয়েটার কি বুদ্ধি নাই যে এভাবে জোরে হাসছে। ইফরাত এবার ইশার হাত টেনে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পার্কের দিকে।

আরে ছাড়ুন আপনি রাক্ষসের মতো গিলছেন আর পড়ে বলেন হাটতে পারবেন না? আবার বলেন হাটতে পারেন না আর আমি হাসলেও দোষ। (ইশু)

বলা শেষ করে আবারো হাসতে লাগলো ইশু। এইবার ইফরাত জোরে এক ধমক দিলো।

আরেকবার হাসলে আমি সবার সামনে থাপ্পর লাগাবো। ( ইফরাত)

আচ্ছা আর হাসবো না চলেন না অই লেক এর ধারে একটু বসি। ( ইশু)

ইফরাত আর ইশু গিয়ে লেক এর পাশে বসে, দুইজন ই নিরব কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না তারা। ইফরাত নিজের মনে জমানো সব কথা বলে দিতে চায়। কিন্তু কোথাও একটা বাধা আছে যার জন্য সে বলতে পাছে না হয়তো।

ইশু সত্যি করে আমাকে কিছু বলবি? যা জিজ্ঞেস করবো তার সঠিক জবাব দিতে পারবি? ( ইফরাত)

কি জিজ্ঞেস করবে ভাইয়া প্রশ্ন গুলো সঠিক হলে তার উত্তর ও সঠিক পাবেন ( ইশু)

সূর্য কে নিয়ে তোর চিন্তা ভাবনা কি?তোদের ছোটবেলায় বিয়ে ঠিক হয়েছিলো এটা নিয়ে তোর মনে কোনো ফিলিংস জন্মায়নি? ( ইফরাত)

ইশু একটু অবাক হলো যে আজ হঠাৎ ইফরাত থাকে এসব কেনো জিজ্ঞেস করছে।

সত্যি বলতে আমি বুঝতাম না অই সময় তারা এসব ঠিক করে। প্রথম প্রথম আত্মীয়রা আমাকে সূর্য এর বউ বললে আমার অনেক রাগ হতো। আমি চুপচাপ হজম করতাম আর ততোই আমি সূর্য ভাইয়ার থেকে দূরে থাকতাম। আমার মনের মধ্যে শুধু ঘুড়তো তিনি আমার বড় ভাই উনাকে আমার ভাই ছাড়া আর কিছুই মনে হতো না। আমি তার থেকে সবসময় দূড়ে থাকতাম এটা ওনার পছন্দ হতো না তাই আমাকে মাঝে মাঝে অনেক বকা দিতো। যতোই বড় হয়ে লাগলাম আর কাকা-কাকির আসোল রূপ বেরিয়ে আসতে শুরু করলো। আমার বাবাকে ঠকানোর জন্য তাদের প্রতি ঘৃনা ছাড়া আর আমার কিছু আসেনা। আমি তাদের প্রচন্ড ঘৃনা করা শুরু করি, তবে সূর্য ভাইয়াকে তার পরিবারের বিরুদ্ধে কখোনো কথা বলতে দেখি নাই আর এরপর থেকে আমি একেবারব ভাইয়ার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই। সূর্য ভাইয়ার জন্য আমার মনে কোনো ভালোবাসা নাই আর না আছে শ্রদ্ধা।
(ইশা)

অনেক মনোযোগ দিয়ে ইফরাত ইশুর কথা শুনছিলো,ইশু অনেকটা ম্যাচিউরড স্বভাবের। সে নিজেকে সামলাতে পারে, নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা সব কান্ট্রোল কর‍তে পারে। তবে মেয়েটা খুব বাবা ভক্ত, বাবা বলতে সে অজ্ঞান। হয়তো প্রতিটা মেয়েই বাবার পাগল হয়,বাবাকে তো তারা খুব ভালোবাসে। চারোদিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা নামাছে ব্যাস্ত নগরীর সবাই খুব ব্যাস্ততায় যাওয়া-আসা করছে। পার্ক থেকে এবার তাদের বেরোনো উচিত আবার লামিয়া কে পিক করবে তার ও একটা ব্যাপার আছে।

ইশু চল এগোনো যাক সন্ধ্যা হচ্ছে,আবার লামিয়াকে নিয়ে আসতে হবে আমাদের। ( ইফরাত)

হ্যাঁ ভাইয়া চলো অনেক দেরি হয়ে গেছে। ( ইশা)

তুই আমাকে এতো ভাইয়া ভাইয়া ডাকোস কেন হ্যাঁ এক কথায় একশোবার ভাইয়া ডেকে বুঝানো লাগে আমি তোর মামাতো ভাই?, ( ইফরাত)

ইশু হাসলো সে তো ইফরাত কে রাগাতেই চায়, ইফরাত কে রাগাতে তার বেশ লাগে। ইফরাত রাগলে সেই সময় টা খুব উপভোগ করে ইশু।

লামিয়া চুপচাপ সূর্যের কথা শুনছে মন দিয়ে। তার মোবাইলের রিংটোন এ ধ্যান ফিরলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো তার ভাই কল দিছে।

হ্যালো ভাইয়া, হ্যাঁ আমার তো হয়ে গেছে তোমরা কোথায়? ( লামিয়া)

আমাদের ও হয়েছে অনেক আগেই তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তুই কল দিচ্ছিলিস না তাই আমিই দিয়ে দিলাম। শোন কই আছোস এড্রেস দে। ( ইফরাত)

আরে তোমার আশা লাগবে না শুনো তোমার হানিফ মামার ফুচকার দোকানে গিয়ে ওয়েট করো আমি আসছি। ( লামিয়া)

আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু আমি অপেক্ষা করবো। ( ইফরাত)

লামিয়া কল কেটে সূর্য এর দিকে তাকিয়ে বিদায় নিলো,আসার সময় লামিয়ার মধ্যে যেই রাগ ছিলো যাওয়ার এইসময় তার ছিটেফোঁটা ও নাই। সে মুচকি হেসে সূর্য থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো। লামিয়া চলে যেতেই সূর্য শয়তানি হাসি দিলো,যা বলার সে তো লামিয়া কে বলেছেই।

কি ভেবেছিলিস তুই ইশু আমাকে বিয়ে করতে তুই অসম্মতি জানাবি আর আমাকে অপমান করবি আমি তা সহযে মেনে নিবো? তা কখোনোই হবে না। বি প্রিপেয়ার্ড ইশু এখন তোর লাইফে আমি আসছি সূর্য আসছে যে তোর লাইফের প্রতিটা মূহুর্ত বিষিয়ে তুলবে।

চলবে..?