আমার অনূভুতি তুমি পর্ব-০৫

0
449

#আমার_অনূভুতি_তুমি
#পর্বঃ৫
#নুসাইবা_ইসলাম

ইফরাত আএ ইশু অনেকটা সময় এসেছে ফুসকার দোকানে। ইশুতো তিন প্লেট ফুচকা অর্ডার করে দিছে। ইফরাত বসে বসে ইশুর কান্ড দেখছে আর হাসছে।

ইফরাত ভাইয়া আপুকে কল দিন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন কখন আসবে আমার আর ভাল্লাগছেনা। ( ইশু)

ইফরাত ফোন বের করছে আর অই মূহুর্তে লামিয়া চলে আসছে, লামিয়া
কে দেখে ইফরাত আবার ফোন পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো।

তুমি এতো লেট করছো কেন লামিয়া আপু, জানো আমি তোমাকে অনেক মিস করছি? আর আমার একা একা কতো বোরিং ফিল হচ্ছিলো। ( ইশা)

আরে আমি আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে ছিলাম তাই,আর ওদের থেকে তারাতাড়ি আসলাম তোদের জন্য। ( লামিয়া)

লামিয়া খুব সুন্দরভাবে সবাইকে মিথ্যা বলে বুঝিয়ে নিলো, এরপর ওরা সবাই একসাথে ফুচকা খেয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো। বাড়ি ফিরার পর ইফরাত নিজের রুমে আর লামিয়া ইশা লামিয়ার রুনে চলে গেলো। ইফরাত রুমে ঢুকে শুয়ে পড়লো ওর হিসাব কিছুতেই মিলছে না। লামিয়া ফ্রেস হয়ে শুয়ে মুচকি মুচকি হাসছে, ব্যাপারটা ইশা ঠিক ই খেয়াল করলো।

আপু তুমি একা একা হাসছো কেনো? কি হইছে তোমার.? ( ইশা)

আমার আবার কি হবে আমি ঠিক আছি আর তুই তুই ভুল দেখছিস আমি হাসি নাই। ( লামিয়া)

আচ্ছা তাহলে তুমি তুতলাচ্ছো কেনো হ্যাঁ? (ইশা)

বেশি কথা না বলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড় যা, আর শোন পিচ্চি পিচ্চির মতো থাকবি বড়দের মতো বিহেভ করবি না। ( লামিয়া)

লামিয়ার এই ব্যাবহার এ ইশা কষ্ট পেলো অনেক,সে ভাবতে লাগলো লামিয়া তো কখোনোই আগে এমন ব্যাবহার করে নাই তার সাথে। আজ হঠাৎ কি হলো লামিয়া এইভাবে কথা বললো ওর সাথে। ইশা লামিয়া কে নিজের খারাপ লাগা টা বুঝতে দিলো না, এবং সে খুব সুন্দর ভাবে শুয়ে পড়লো ঘুমের উদ্দেশ্য।

সবাই ঘুমাচ্ছে শুধু ইফরাতের চোখে ঘুম নাই। রাতের আকাশ দেখছে সে একাএকা, আকাশের চাঁদটা এতো সুন্দর কেন? এভাবে একা একা বসে চন্দ্রবিলাস কর‍তে খারাপ লাগছেনা ইফরাতের। সে বসেবসে তার প্রিয়তমার কথা ভাবছে কিভাবে সে আপন করে নিবে তার প্রিয়তমা কে। আচ্ছা সে যে এতো ভালোবাসে ইশু কে ইশু কি তা বুঝবে? ইশুকে তার সব খুলে বলতে ইচ্ছা করে মনে হয় নিজের মনের লুকানো সব অনুভুতির কথা বলে দিতে। কিন্তু খুব ভয় হয় তার যদি ইশাকে সে হারিয়ে ফেলে। আচ্ছা এভাবে আর কতোদিন ভয়ে থাকবে সে? কিছু একটা ভাবলো আর ভেবে একা একা ই হাসলো৷

সকালের রোদ্রতাপ যখন ইশা এর মুখের উপর পড়ে তখন চোখ মুখ কুচকে ফেলে সে। বিরক্ত হয়ে অন্যপাশে ফিরে শুয়ে পড়ে আবার। এবার সে অনুভব করলো কেউ তার পায়ের তালুতে চি*ম*টি কাটছে,তখন হাল্কা ব্যাথা অনুভব হতেই উঠে বসে পড়ে। হাত দিয়ে চোখ কচলে আবার তাকিয়ে দেখে সে ব্যাক্তি আর কেউ নয় ইরফাত। ইশু ক্ষেপে গেছে ইফরাতের এহেন কাজে,সকাল সকাল কেই এসব করে না কি? আল্লাহ জানে এই ছেলে আর কতো জালাবে তাকে।

আপনি এরকম করলেন কেন? আমি কি ক্ষতি করছি আমার যে পায়ের তালুতে আপনি চি*ম*টি কাটবেন। আর এতো জলদি আমার ঘুম ভাঙানোর ই বা কি ছিলো? ( ইশা)

এতো বেলা অবদি কোন মেয়ে-মানুষ ই বা তোর মতো নাক ডেকে কুম্ভকর্ণ এর মতো ঘুমায় বলোদ? আর কি ঘুমের বাহার তার, আর কি বললি এতো তাড়াতাড়ি ১১ টার বেশি বাজে আর তুই এখোনো ঘুমাস? (ইফরাত)

কি বলেন ১১ টা? আরে আজকে আমার ৮ টায় প্রথম ক্লাস ছিলো আল্লাহ শেষ আমি। ঘুম থেকে যতোক্ষন এ উঠালেন ই আমাকে আরেকটু আগেই উঠাতেন তাহলে তো কলেজ এ যেতে পারতাম। ( ইশা)

আহারে আমাকে উনি উনার কাজের লোক বানাই রাখছে না সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠাবো.। ( ইফরাত)

ভাইয়া আপনি শুধু মেয়েদের মতো ঝ/গ/ড়া করার সুযোগ খুজেন কেন? হায় মেয়েরাও এতো ঝ/গ/ড়া করে না যতোটা আপনি আমার সাথে করেন। ( ইশা)

কি বললি তুই? এই কি বললিই তুই আমি ঝ/গ/ড়া করি আমাকে ঝ/গ/রা/ই/ট্টা বললি? তুই শেষ আজকে ইশুই। (ইফরাত)

ভাইয়া আমি তো মজক করছি আমাকে মাফ করে দেও তোমার হাতে মা*ই*র খাইলে আমি ম*রে যাবো। তাই আমার মতো নিষ্পাপ বাচ্চাকে ছেড়ে দেও। ( ইশা)

ইশা এর এমন বাচ্চামি কথায় ইশা কে ছেড়ে দেয় ইফরাত। হেসে বলে ইশুকে ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে যাইতে নাস্তা করে। ইশা ফ্রেস হতে গেলে ইফরাত ও নিচে চলে যায়। নিচে ওর মা-বাবা লামিয়া সোফায় বসে গল্প করছে। তখন সে তাদের মাঝখানে বসে পড়ে আর গলা ঝেড়ে বলে।

আব্বু- আম্মু তোমাদের খুব ই জরুরি কথা বলার ছিলো তোমরা শুনবা? (ইফরাত)

কি বলবে তুমি ইফরাত সোজাভাবে বলো। ( ইফরাতের বাবা)

ইফরাত এবার তার বাবার হাত নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে বললো, বাবা আমি একজন মেয়েকে খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারিনা, ওকে হারানোর ভয় আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দেয় আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। ( ইফরাত)

মেয়েটা কে ইফরাত তার নাম আর ঠিকানা বলো আমরা গিয়ে তার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো, তোমার কোনো ইচ্ছা আমরা কখোনো অপূর্ণ রাখি নাই। ( ইফরাতের বাবা)

বাবা ইউ আর লাইক মাই বেষ্ট ফ্রেন্ড সব সেয়ার করলেও এটা সেয়ার করার সাহস আমি কখোনোই পাই নাই। মেয়েটা হলো ইশু, একদিন যখন লামিয়ার সাথে ভিডিও কলে কথা বলি সেদিন ইশুকে দেখতে পাই লামিয়ার সাইড এ বসে ছিলো অই সময়টা যেনো ওখানেই থমকে যায়। এরপর সব লামিয়াকে বলায় সে সবসময় ইশুর আপডেট আমাকে দিতো। লামিয়া সব জানতো শুধু তোমাদের আমি বলতে পারিনাই আব্বু আম্মু। ( ইফরাত)

কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে তাকিয়ে থাকে ফ্লোরের দিকে। লামিয়া ও বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করলো তাদের রিয়াকশন। কিন্তু লামিয়া ব্যার্থ সে বুঝতে পারলো না কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পড় ইফরাতের বাবা-মা উচ্চস্বরে হেসে উঠেন।

এ কথা আগে বললেই হতো আমাদের আচ্ছা যাইহোক এখন ইশু এসে নাস্তা শেষ করলেই আমরা ওদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হবো। আর ওদের রাজি করিয়ে আংটি পডিয়ে রেখে আসবো, কি বলো তুমি ইফরাত। ( ইফরাতের মা)

ইফরায় ভাবতেও পারে নাই তার বাব- মক ব্যাপার টা এতোটা সহজ ভাবে নিবে। সে খুশিও হয় বিষয়ে খুশি হয় যে ইশুকে পেয়ে যাবে নিজের করে। ইশুকে আসতে দেখে সবাই চুপ করে যায়। ইশু আসায় সবাই কথা থামাই ফেলছে এটা দেখে ইশু বলে উঠে।

আমাকে ছাড়া সবাই আড্ডা দিচ্ছে আবার আমাকে দেখে চুপ হয়ে গেলা বাহ । যাও আমি কারো সাথেই কোনো কথা বলবো না। (ইশু)

হইছে এবার যা খাবারের টেবিলে দেখ নাস্তা দেওয়া আছে গিয়ে খেয়ে নে। তারপর আবার আমরা তোদের বাসায় যাবো তোকে দিয়া আসতে। ( মামি)

সত্যি মামি তুমি যাবে আমাদের বাসায়? (ইশু)

আমি একা না সবাই যাবে, এবার খেয়ে নে। (মামি)

ইশু খেতে বসলে ইফরাত ও তার পাশে বসে পড়ে। দুজন চুপচাপ খাচ্ছে,ইফরায় ফিসফিস করে ইশু কে বলছে,আমাকে অনেক জালাইছোস আজকে এমন ব্যাবস্থা করবো যে এরপর থেকে আমার জালানো সহ্য করবি তুই।

ইশু মুখে খাবার নিয়ে হা করে ইফরাতের দিকে তাকিয়া আছে আর ইফরাত মনের শুখে নিজের মতো করে খাচ্ছে।

চলবে..???