আলোকবর্ষ পেরিয়ে পর্ব-০৯

0
421

#আলোকবর্ষ_পেরিয়ে ( নবম পর্ব )
<১৯>
কারোর মুখ ফিরিয়ে থাকা, নিঃশব্দে চলে যাওয়া যে এতটা ভয়ংকর যন্ত্রণার হয়, সেটা অভীকের এর আগে জানা ছিল না। হয়ত জানা ছিল না বলেই সেই পুরনো দিনগুলোতে ঐশীর সাথে অতোটা খারাপ ব্যাবহার করেছে! অযত্নে, অবহেলায় শেষ করেছে প্রত্যেকদিন সম্পর্কটাকে। আজকাল বার বার শুধু এই কথাটাই মনে হয় ওর, আর চারিদিকটা কেমন ঝাপসা কুয়াশার ঢেকে যায় রোজ। মনে হয় আর একটু যদি নিজের অযৌক্তিক রাগটা কমাতে পারতো, একটু মাথা ঠাণ্ডা করে পরিস্থিতিটা বিচার করতো, ঐশীর সঙ্গে যদি নিজের বাঁধনটা এতটা আলগা না করে একটু শক্ত করে ধরে রাখতো ওকে, তাহলে এই অন্ধকার রাতগুলো আসতো না কখনো অভীকের জীবনে।
আজকাল কিছুতেই যেন রাতে ঠিক করে ঘুম আসে না! ঘরটা ঐশীকে ছাড়া ভীষণ ফাঁকা লাগে। আলমারির খালি তাকগুলো কেমন মনে করিয়ে দেয় একজনের অনুপস্থিতি কে। পুরনো সময় গুলো কারণে অকারণে ভিড় করে চোখের সামনে। ঐশীর সকালগুলোতে আলতো করে ওকে ঘুম থেকে তোলা, নিজের নরম স্পর্শে অভীক কে ছুঁয়ে দেয়া, ওর খুব যত্নে বানানো রান্না গুলো, অনেক অগোছালো রোজের কথার ভিড়, সব কিছু যেন তাড়া করে বেড়ায় অভীক কে! মনে হয় কতটা দামী সময় হারিয়ে ফেলেছে জীবন থেকে।
এই সময়গুলোতে ঐশীকে দেখতে ইচ্ছে করে খুব। মনে হয় যখন ঐশী একই বাড়িতে ছিল, তখন তো অভীক সারাক্ষণ ভুল বুঝে এড়িয়ে চলতো ওকে, আর আজ যখন কাছে নেই, তখন চোখ শুধু সেই একজনকেই খোঁজে দিন রাত। তাই অভীক রোজই অফিসের পর যায় ঐশীদের বাড়ি। আগে যদিও কলিং বেল বাজানোর মতনও মনের জোর হতো না ওর। ঐশীর বাবার চোখাচোখি হতেও কেমন লজ্জা লাগতো যেন। যার মেয়েকে অকারণে এত হার্ট করেছে, অপমান করেছে, তার সামনে দাঁড়াতে কেমন ইতঃস্তত লাগতো অভীকের। তাই ও বাড়ির বাইরেটায়ই দাঁড়িয়ে থাকতো রোজ। ঐশী ঘরের জানলার সামনে যদি কখনো আসতো, অভীক দেখতো ওকে এক পলক। মনে হতো শুধুমাত্র নিজের ভুলের জন্য আজ এতটা দূরত্ব, এতটা অভিমানের পাহাড় ওদের মধ্যে। আজ ঐশীর সাথে দুটো কথা বলারও যেন অধিকার নেই ওর।
তবে কিছুদিন বাদে এইভাবে ওকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল ঐশীর বাবা। সেদিন উনি অভীকের কাছে না এসে থাকতে পারেনি। ছেলেটার চোখ মুখ এমনিই কেমন বসে গেছে, একদিন খুব ক্লান্ত চেহারা হয়ে গেছে অভীকের। তাই আর আগের দিনের মতন কঠিন গলায় কথা বলতে পারেননি উনি। বরং কিছুটা আলতো স্বরেই বলেছিল,
——” অভীক, তুমি এখানে? আর এইভাবে বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো কেন! আমি বাজারে যাওয়ার জন্য দরজা না খুললে তো দেখতেই পেতাম না তোমাকে!”
কথাগুলো শুনে অভীক ঠিক কি বলবে বুঝতে না পেরে একটু এলোমেলো হয়ে উত্তর দিয়েছিল,
—–” না, মানে ! এমনি এসেছি। আমি ভেতরে যাবো না। আমি চলে যাচ্ছি।”
কথাটা বলেই অভীক সেই মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে যেতে যাচ্ছিল, কিন্তু পারলো না। ঐশীর বাবা ওকে আটকে দিল নিজের কথায়। কেমন জোর দেখিয়েই বললো,
—–” একদম না। ভেতরে এসো তুমি। এত হেজিটেট করার কিছু নেই। এসো।”
কথাটা বলে দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল উনি। অভীক এরপর আর না বলতে পারেনি নিজে। আস্তে আস্তে কিছুটা ইতঃস্তত হয়েই ভিতরে এসেছিল বাড়ির। ঐশীর বাবা এবার ওকে বসিয়ে জল মিষ্টি দিয়েছিল। অভীক এর যদিও সেই সময় কিছুই গলা দিয়ে নামছিল না। এলোমেলো চোখে ও শুধুই ঐশীকে খুঁজছিল। ব্যাপারটা ঐশীর বাবা খেয়াল করে নিজে থেকেই বলেছিল,
——” তুমি যাকে খুঁজছো, সে নেই বাড়িতে। একটা বন্ধুর বাড়ি গেছে। ফিরবে কিছুক্ষণের মধ্যে। তুমি বসো একটু, চলে আসবে।”
কথাটা শুনে অভীক আর কিছু বলেনি ঠিক। নিশ্চুপ ভাবে শুধু অপেক্ষা করছিল ঐশীর। এরপর অল্প সময়ের ভিড়ে কলিংবেলটা বেজে ছিল বাড়ির। ঐশীর বাবা এবার তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলতেই মুখোমুখি হয়ে ছিল দুজন আরেকবার। অভীক সেই মুহূর্তে ঐশীকে দেখে উঠে দাঁড়িয়েছিল নিস্পলক ভাবে। ঐশী ও বাড়িতে ঢুকেই এইভাবে অভীক কে দেখে থমকে ছিল কিছুক্ষণ। ও এখানে কি করছে! কথাটা মনে আসতেই বাবা বলে উঠেছিল,
—–” অভীক তোর সাথে দেখা করতে এসেছে। ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল! আমি দেখে ভেতরে নিয়ে এলাম। যাইহোক, তোরা কথা বল। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি।”
কথাটা বলেই ঐশীর বাবা যেতে যাচ্ছিল, কিন্তু থমকে দাঁড়ালো হঠাৎ ঐশীর কথায়। ও খুব কঠিন গলায় বলে ছিল সেই মুহূর্তে,
—–” আমার আর কোন কথা নেই ওর সাথে বাবা। আমি আগেও বলেছি তোমাকে। যদি ডিভোর্স নিয়ে কিছু কথা থাকে, তাহলে সেটা উকিলের সামনে হবে।”
কথাটা শেষ করেই ঐশী আর দাঁড়ালো না। অভীক কে প্রায় অদেখা করেই চলে গেল নিজের ঘরে।
অভীক তবে ঠিক কিছু বলতে পারলো না এখন। মনে হলো হয়ত নিজের পুরনো ব্যাবহার টা ই ফেরৎ পেল এইভাবে! একটা সময় তো একই বাড়িতে থেকেও অভীক চিনতো না ঐশীকে। কথা বলতো না, কাছে আসতো না! আজ ঐশী ও তাই এইভাবে চলে গেল দুজনের মধ্যে একটা নিঃস্তব্ধতার পাহাড় তৈরি করে।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কেমন পাথরের মূর্তির মতন স্থির হয়ে ছিল অভীক। সেই সময় ঐশীর বাবা কাছে এসেছিল ওর, কিন্তু ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছিল না! তখন অভীক ই শান্ত গলায় বলেছিল,
—–” বাবা, আমি কি ঐশীর খোঁজ খবর নেয়ার জন্য মাঝে মাঝে এখানে আসতে পারি? আমি দেখা করার জন্য কখনো ওকে জোর করবো না। কোনভাবে ওকে ডিস্টার্ব করবো না! শুধু যদি দূর থেকেও একবার দেখতে পারি ওকে!”
কথাটার শেষ আর ঠিক ভাবে করতে পারেনি অভীক। গলাটা কেমন ধরে এসেছিল তার আগেই ওর, মন ভাঙার কষ্টে। কিন্তু ঐশীর বাবা এই মুহূর্তে কিছু না ভেবেই বলেছিল সহজভাবে,
—-” নিশ্চয়ই। তোমার যখন মনে হবে তুমি আসতে পারো এখানে। আমার পারমিশন নেওয়ার কিছু নেই। আসলে মাঝে মাঝে খারাপ লাগাগুলো এত বেশি হয় যে সেই পুরনো সময়গুলো ভুলতে সময় লাগে। কিন্তু তার মানে যে সারা জীবন কেউ মুখ ফিরিয়ে থাকবে, সেটাও নয়! আমি আমার মেয়েকে চিনি। ও এতটা কঠিন কখনো হতে পারবে না।”
শেষ কথাটা বেশ জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করেছিলেন উনি। হয়ত অভীক কে বোঝাতে চেয়েছিলেন এইভাবে। আসলে আজ কেন জানে না, ছেলেটাকে দেখে খারাপ লাগছে খুব। ঐশী কে ছাড়া ও যে ভালো নেই, সেটা অভীকের চেহারা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চোখের নিচে কালি, হালকা না কাটা দাঁড়ি, অনেকদিনের না ঘুম হওয়া ক্লান্ত মুখ চোখ, সব মিলিয়ে কেমন অন্য রকম লাগছে ছেলেটাকে। আগের দেখা বিজনেসম্যান অভীক সেনগুপ্তর সাথে এর যেন কোন মিলই নেই!

যাইহোক, সেদিন ঐশীর বাবার এসব ভাবনার ভিরেই অভীক বেরিয়ে এসেছিল ঐশীদের বাড়ি থেকে নিঃশব্দে। তবে একলা এই রাস্তায় যেন আর সামলাতে পারেনি নিজেকে। বৃষ্টির মধ্যেই শহরের এদিক ওদিক উদ্দেশ্য হীন ভাবে ড্রাইভ করেছিল অনেকক্ষণ। আসলে পুরনো স্মৃতিগুলো যেন কেমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে ওকে। আরেকবার ভীষণ ভাবে ইচ্ছে করছে ঐশীর বুকে মাথা রাখতে, ওর ভালোবাসার স্পর্শ টুকু পেতে, ওকে খুব শক্ত করে আঁকরে ধরতে। কিন্তু এটা যে আর সম্ভব না, এটা কিছুতেই মন মানতে চাইছে না আর। একই শহরে থেকেও যে ঐশী এক আলোকবর্ষ দূরে অভীকের থেকে, সেটা যেন আর সহ্য করতে পারছে না অভীক। তাই সেই কাছের মানুষটাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ ও, একটু একটু করে। এই রাতের অন্ধকার, প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে মিশে যাচ্ছে অভীক, ধীরে ধীরে।
<২০>
এরপর নটা মাস কেটে গেছে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে। অভীকের চেনা পৃথিবীতে অনেক বদল ঘটেছে এর মধ্যে। জীবনটা আজ একদম ছন্নছাড়া অগোছালো যেন। কিন্তু ঐশী এই ব্যাপারে জানে না যদিও কিছুই, আর জানতে চায়ও না কখনো। আসলে এই কমাসে যতবার অভীক ওদের বাড়িতে এসেছে, ঐশী বেরোয়নি ঘর থেকে। কথা বলা তো দূরে থাক, দেখাও করতে চাইনি কোনদিন। আসলে মেঘার এক্সিডেন্ট এর পর থেকে অভীকের পুরনো ব্যাবহার গুলো কাঁচের টুকরোর মতন বিঁধে আছে মনে ওর। সেইদিনগুলোর অপমানগুলো এতটাই তীব্র ছিল, যে ঐশী আর ভাবতেও পারে না অভীকের সামনে মুখোমুখি দাঁড়ানোর কথা, ওকে নিজের কাছে আসতে দেওয়ার কথা। এক সাথে জীবন কাটানো তো দূরে থাক, ঐশী একই ঘরে কিছুক্ষণের জন্যও ওই মানুষটার সাথে আর থাকতে পারবে না কোনদিন! আর এরকম একজনের কাছে ফিরে যাওয়ার তো কোন প্রশ্নই নেই যার কাছে ঐশী কোনদিন কাছের মানুষ হতেই পারেনি। অভীক তো মেঘা আর নিজের জীবনে ঐশীকে সব সময় একজন বাইরের লোকই ভাবতো! আর এক্সিডেন্ট এর পর সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছে বার বার। একই বাড়িতে কেমন ফার্নিচারের মতন পরে থাকতো ঐশী, যার দিকে অভীক রাগে ফিরেও তাকাতো না সেই সময়। তাহলে আজ ঐশী কেন দরজা খুলবে নিজের! কেন কথা শুরু করবে আর!
কথাগুলো প্রত্যেকবার অভীক এই বাড়িতে এলে মনে হয় ওর, আর মনটা যেন পাথরের মতন কঠিন হয়ে যায় ঐশীর! সেই মুহূর্তে ও শুধু নিজের ঘরের দরজাই না, মনের দরজাও বন্ধ করে দেয় অভীকের জন্য, ভীষণ শক্ত ভাবে।
তবে এর মধ্যে ঐশী নিজের জন্য একটা চাকরি জোগাড় করে ফেলেছে আবার। মেঘার ট্রিটমেন্টের জন্য সেই সময় চাকরিটা ছাড়তে হয়েছিল ওকে। দিনের বেলা গুলো ফাঁকা না রাখলে অভীক কে লুকিয়ে তো কখনোই নিজের চেনা ফিজিওথেরাপিস্ট কে দিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো যেত না মেঘার! যাইহোক, এরপর ভীষণ চিন্তা ছিল ওর, এই বাজারে নতুন চাকরি পাওয়া তো বেশ কঠিন! ভাঙা সংসার, ভাঙা সম্পর্ক নিয়ে এরপর যখন বাড়ি ফিরেছিল একা ঐশী, তখন শুধু এই একটাই চিন্তা ঘুরত মাথায়, একটা কাজ পাওয়ার চিন্তা। একটা চাকরির চিন্তা। আসলে পুরনো সব কিছু ভুলে থাকার জন্য কোন একটা কাজের মধ্যে হারিয়ে যেতে চেয়েছিল ও। শুধু অনেক ব্যস্ততা চেয়েছিল জীবনে। আর অবশেষে বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউ দেওয়ার পর জে.কে এন্টারপ্রাইজ থেকে একাউন্টেন্ট এর চাকরির অফারটা চলেই এলো ঐশীর কাছে। এরপর আর ‘ না ‘ বলার কোন প্রশ্নই ছিল না ওর। এক সপ্তাহের মধ্যেই সব ফর্মালিটিজ কমপ্লিট করে চাকরিতে জয়েন করেছিল ঐশী। আর তারপর ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছিল জীবনের ব্যস্ততায়, কাজের ভিড়ে। যেন জোর করেই নিজেকে কঠিন করে, আস্তে আস্তে আবছা করে ফেলেছিল অভীকের স্মৃতিগুলো ঐশী। অস্পষ্ট কুয়াশায় মুড়ে ফেলেছিল পুরনো দিন, পুরনো সময়কে। কিন্তু ঐশী জানতো না, এই আবছা ছবি হঠাৎ একদিন স্পষ্ট হবে আবার। আরেকবার না চাইতেও মুখোমুখি হতেই হবে দুজনকে। দরজাটা ঐশীকে খুলতেই হবে নিজের।

সেদিনটা ছিল ঐশীর বাবার জন্মদিন। ঐশী সকাল থেকে ছুটি নিয়েছিল তাই। নিজের হাতে বাজার করে এনে রান্না করেছিল বাবার জন্য। তবে সকাল থেকেই বাবার মুখে একটা কথা ছিল, সন্ধ্যে বেলা না কি কোন এক বন্ধুকে ইনভাইট করেছে জন্মদিনের জন্য! ঐশী জানতো শুধু উকিল কাকু আসবে প্রত্যেকবারের মতন। কিন্তু আর কে আসবে বুঝতে পারছিল না ঠিক! তবে বাবাকে এই বন্ধুর নাম জিজ্ঞেস করতে গেলেই বাবা যেন কেমন এড়িয়ে যাচ্ছিল বার বার! যাইহোক, ঐশী আর বেশি মাথা ঘামায়নি এরপর। সন্ধ্যেবেলার জন্য নিজেই একটা কেক বেক করতে ব্যস্ত হয়ে গেছিল বিকেল থেকে। কিন্তু এরপর ঘড়ির কাঁটা যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে সাড়ে সাতটার ঘরে পৌঁছলো, তখন কলিং বেলটা বেজে উঠলো বাড়ির। ঐশী তখন সেজে গুজে রেডি। নিশ্চয়ই উকিল কাকু এসেছে! কথাটা ভেবেই দরজাটা খুলেছিল ও হাসি মুখে, কিন্তু দরজার ওপারে মানুষটাকে দেখেই ঐশীর মুখের হাসি মিলিয়ে গেছিল এক মহুর্তে। অভীক! এখানে কেন এসেছে আজ উকিল কাকুর সাথে! কথাটা ভেবেই কেমন থমকে গেছিল ও। তবে অভীকও সেই সময় কেমন নিস্পলক ভাবে তাকিয়ে ছিল ঐশীর দিকে। বুঝতে পারছিল ওকে দেখে ঐশীর একটুও ভালো লাগেনি আজকের দিনে। আসলে ঐশীর বাবা এতবার করে বলেছিল তাই! নইলে আজকে ঐশীর দিনটা এইভাবে নষ্ট করতো না ও এখানে এসে। কথাটা ভাবতেই ঐশীর বাবা ঐশীর পেছন থেকে হাসি মুখে এগিয়ে এসেছিল ওদের দিকে, তারপর খুব সহজ গলায় বলেছিল, ——-” আরে, বাইরে দাঁড়িয়ে কেন ! ভেতরে এস তোমরা। আমি জানতাম তোরা একসাথেই ঢুকবি আজ।”
শেষ কথাটা বাবা উকিল কাকুর উদ্দেশ্যেই বলেছে, এটা ঐশীর বুঝতে অসুবিধা হলো না কোন। কিন্তু ঐশী অবাক হয়ে গেছিল সেই মুহূর্তে! বাবা কি করে এটা করতে পারলো! নিজের জন্মদিনে এই ছেলেটাকে ডাকার মানেটা কি! কথাটা ভাবতেই অভীক রা ভেতরে ঢুকে পড়েছিল এর মধ্যে। কিন্তু ঐশী এবার ড্রয়িং রুমে এসে সবার সামনেই বললো বাবাকে খুব কঠিন গলায়,
——” তুমি কি চাইছিলে না যে এই জন্মদিনে আমি তোমার সঙ্গে থাকি? তাহলে সেটা মুখেই বলে দিলে পারতে! এরকম ভাবে অভীক কে ডেকে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে তো এটা বোঝানোর দরকার ছিল না!”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিল ঐশী। কিন্তু অভীকের মুখটা এইসব শুনে ছোট হয়ে গেছিল খুব এক মুহূর্তে! কিন্তু ঐশীর এই কথার উত্তরে ওর বাবা খুব শান্ত গলায় ই বলেছিল,
—–” মাথাটা ঠান্ডা কর একটু। অনেকদিন হয়ে গেছে ঐশী! এই ছেলেটা এতগুলো মাস ধরে প্রত্যেক সপ্তাহে তিন চারদিন করে আসে শুধু তোর সাথে একবার কথা বলার আশায়! রোজ ফোন করে আমার কাছে তোর খোঁজ খবর নিতে! এতদিন বাদে এবার অন্তত তুই পুরনো ঘটনা গুলোকে ভুলে অভীকের সাথে একবার কথা বল! এতটা শাস্তি ও কাউকে দেওয়া উচিত না!”
কথাটা বেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন উনি।

চলবে।