আয়নায় বন্দী পরী পর্ব-০২

0
545

#আয়নায়_বন্দী_পরী
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_২

–যেই আমগাছটা ভেঙ্গে বাইকের উপরে পড়েছে,সেই আমগাছের গোড়ায় গতরাতের সেই আনহা নামক মেয়েটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।এই দৃশ্য দেকে আমার চোখ জোড়া মার্বেলের আকৃতি ধারণ করেছে!ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি সেই মেয়েটার দিকে!কিন্তু হুট করেই মুহূর্তের মধ্যে মেয়েটা অদৃশ্য হয়ে গেলো!তখনি অনামিকা আমাকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ডাকতে আরম্ভ করলো…

–এই আকাশ এদিকে আসো প্লিজ….

–অনামিকার ডাকে কদম পিছনে ঘুরিয়ে তার কাছে গেলাম।হুম কি হয়েছে বলো?
ডাকলে কেন আমায়?

–আকাশ আমার রাহুলের পায়ে অনেক চোট লেগেছে।প্লিজ ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে সাহায্য করো তুমি আমায়।

–বাহহ আপনার রাহুল..

–হুম আমার রাহুল।প্লিজ একটু সাহায্য করো।

–দুঃখিত মেডাম আমি আপনার রাহুলের জন্য কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারবো না।কারন আমার মতন ছোটলোক আপনার রাহুলের বাইক ধরাতেই আসমান জমিন এক হয়ে গিয়েছে।সেখানে আপনি বাইকের মালিকের গায়েই হাত দিতে বলছেন।নাহ বাপু এটা আমি পারবো না।আমার মতন ছোটলোক দ্বারা এতো বড় কাজ হবে না।আমি চললাম।আপনি আপনার রাহুলকে সামলান।তারপর অনামিকাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।
আমি চলে আসার সময় মেয়েটা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।কিন্তু কি আর করার,আমার হাতে কোনো কিছুই নেই।তার বাইক ধরাতেই যদি আমার জাত পাত নিয়ে টান দেয়।তাহলে সেই ব্যাক্তির মতন মহান মানুষের সাহায্য করা আমাকে দিয়ে সাজে না।সোজা কলেজে চলে আসলাম।কলেজে এসে নিজের ক্লাসে প্রবেশ করলাম।ক্লাসে বসে বসে আসার সময় ঘটে যাওয়া অলৌকিকতা ঘটনাটা নিয়ে ভাবছিলাম।তখনি স্যার ক্লাসে চলে আসলো।কিন্তু আমার চিন্তা-ভাবনায় কোনো ফের পড়লো না।আচ্ছা গতরাতের আগের রাতের বিষয়টা কি তাহলে সত্যি ছিলো!কিন্তু আমি তো সকালে উঠে চোখে সব কিছু দেখতে পেয়েছি।তাহলে কি করে সত্যি হয়!যদি সত্যই হতো,তাহলে আমার চোখর জ্যোতি তো চলে যেতো!তার মানে সত্যি নয়।কিন্তু আবার একটু আগে যে আমি সেই আনহা নামক মেয়েটাকেই গাছের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।আর তাছাড়া হটাৎ করে এতো মোটা গাছ কারোর ক্রিয়া ধারা ছাড়া রাহুলের বাইকের উপরে পড়লো কি করে!নাহ কিছু তো একটা গড়বড় হচ্ছে!আমার সেই জিনিসটাকে নিয়ে একটু জাস্টিফাই করা উচিৎ।কিন্তু কি ভাবে কি করবো!এসব নিয়ে ভাবছিলাম,তখনি স্যারের ডাক পড়লো….

–এই আকাশ কোন দুনিয়ায় আছো তুমি?

–স্যারের কথার উত্তরে নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম,স্যার পরীর দুনিয়ায়।আমার মুখে এমন উত্তর শুনে ক্লাসের সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!বিশেষ করে স্যার!তবে তিনি অবাক দৃষ্টিতে নয়,তিনি রাগান্বিত দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
স্যারের রাগান্বিত চেহারাটা দেখে মাথা নুইয়ে ফেললাম।তখন আবার স্যার বলে উঠলো….

–তুই পরীর দুনিয়ায় আছিস তাই না?
দাঁড়া তোকে পরীর দুনিয়ে থেকে টেনে হেঁচড়ে জমিনে আনছি।এই গতকাল ক্লাসে যেই টপিকের উপরে আলোচনা করে সবাইকে ছোটখাটো থিংকস দিয়ে বলেছিলাম,টপিকটা সম্পর্কে ইন্টারনেটের সাজেশন নিয়ে নিজেদের মতন করে শিখে আসতে,সেটা কি শিখা হয়েছে?

–স্যার গতকাল তো আমি ক্লাসে ছিলাম না।

–বাহ স্যার তো দেখি গতকাল ক্লাসেই আসেনি,
কিন্তু স্যার আমি এতো কিছু শুনতে চাই না।আমার যাস্ট পড়াটা চাই।সো আপনি সকলের সামনেই দাঁড়িয়ে সেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেন।

–স্যারের কথায় উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম।কারন আমি জানি,যে আমি বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে পারবো না।কিন্তু তাও দাঁড়িয়ে গেলাম।কারন না হয়তো বেয়াদবি করা হবে স্যারের সাথে।

–জ্বি এবার শুরু করেন।না হয়তো ক্লাস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে আপনাকে।

–লজ্জায় মাথা নুইয়ে রেখেছি।তখনি হুট করে আমার নজর আমারই টুলের পাশে কিছুটা জায়গা খালি জায়গা আছে বসার,সেখানে গিয়ে আঁটকে গেলো।কারন সেখানে সেই মেয়েটাই বসে আছে,যে কিনা গতরাতের আগের রাত পাহাড়ে এসে আমার সাথে কথা বলেছে।যে কিনা কলেজে আসার পথে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলো।তার মানে কি সত্যিই এই মেয়েটা পরী!হা করে তাকিয়ে আছি টুলের দিকে!অপরদিকে স্যার আমার চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা দেখে আরো রেগে গেলো।কিন্তু আমার কোনো হুঁশ নেই স্যারের দিকে।আমি আবারো অন্য মনস্ক হয়ে যাওয়ায় স্যার এবার রাগান্বিত কন্ঠে চেঁচিয়ে বলতে আরম্ভ করলো….

–এই বেয়াদব ছেলে তুই কি করতে ক্লাসে এসেছিস?
যা বের হ ক্লাস থেকে।

–স্যারের কথায় থতমত খেয়ে গেলাম।যার দরুন আমার হুঁশ ও ফিরে এসেছে।স্যার দেখি আমার দিকে রক্তচোষার মতন তাকিয়ে আছে!পরিস্থিতি পুরো নিজের কন্ট্রোলের বাহিরে চলে গিয়েছে।এই অবস্থায় কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।তাই স্যারকে বললাম স্যার বলছি।তারপরেই টপিক টা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিলাম।আবারো আমার সাথে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে বসলো!আমি যেই টপিক সম্পর্কে জানিই না,সেই টপিক নিয়ে আলোচনা করে পুরো ক্লাসকে তাক লাগিয়ে দিয়েছি!সবাই হাতে তালি দিতে আরম্ভ করলো আমার আলোচনা দেখে।স্যার ও বেশ অবাক!তবে শুধু স্যার এই নয়,আমি নিজেও অবাক যে কি ভাবে কি বলেছি!আমি এতোটা সময় কি বলেছি তা আমি নিজেও জানি না!কিন্তু সবাই হাত তালি দিচ্ছে।তখনি স্যার এসে হাসিখুশি ভাবে বলতে আরম্ভ করলো….

–আকাশ তুমি অনেক জ্ঞানী একজন স্টুডেন্ট।সো প্লিজ ক্লাসে মনযোগ দাও।তুমি এখন টপিক টাকে নিয়ে যেই ভাবে সবার সামনে আলোচনা করেছো,সেই ভাবে আমি শতবার চেষ্টা করলেও হয়তো পারবো না।তাছাড়া তোমার আলোচনা শুনেই হয়তো অনেকের বিষয়টা নিয়ে জড়তা কেটে গেছে।সবাই আশা করি তোমার এক্সপ্লেনেশনে ক্লিয়ার করে বুঝে গিয়েছে টপিক টা।সো মন লাগাও ক্লাসে।

–জ্বি স্যার।
তারপর স্যার স্যারের জায়গায় গিয়ে ক্লাস নিতে আরম্ভ করলো।আর আমি পাশে ফিরে দেখি সেই মেয়েটা নাই।
যে কিনা একটু আগেও আমার পাশে বসে ছিলো।মনের ভিতরে কৌতূহলের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেলো।কিন্তু নাহ কৌতূহল টাকে আপাতত সাইডে রেখে ক্লাসে মন দেই।না হয় স্যার আবারো এটা সেটা বলতে আরম্ভ করবে।যেই ভাবা সেই কাজ।স্যারের ক্লাস পুরোটা শেষ করলাম।দেখতে দেখতে বাকি ক্লাস গুলাও শেষ হয়ে গেলো।ক্লাস থেকে বের হয়ে এবার সেই কৌতূহল টাকে মেটানোর চেষ্টা করলাম।বাসার দিকে হেঁটে হেঁটে রওয়ানা হয়েছি।আর সেই বিষয়টা নিয়ে ভাবছি।
আচ্ছা আমি একে একে মেয়েটাকে তিনবার দেখলাম।তার মানে হয়তো সেই মেয়েটা সত্যিই পরী।কিন্তু কথা হলো সে তো ক্লাসে আমার সাথেই কিছুটা সময় বসে ছিলো।তাহলে বাকিরা তাঁকে দেখলো না কেন!
এসব নিয়ে ভাবছিলাম,তখনি দেখি সেই মেয়েটা হুট করে কোথা থেকে এসে যেনো আমার সাথে হাঁটা শুরু করেছে!তাই হাঁটা বাদ দিয়ে রেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি সেই মেয়েটার দিকে!সে আমার তাকানো দেখে জিগ্যেস করলো…

–আরেহ এতো অবাক হচ্ছো কেন?আমি তো তোমায় সেদিন রাতেই বলেছিলাম যে আমি পরী।আমার সেদিনকার কথাটা কি তোমার বিশ্বাস হয়নি?

–হয়েছে তবে পুরোপুরি না।

–সমস্যা নেই আস্তে আস্তে হয়ে যাবে।আচ্ছা তিন সেকেন্ড পর আবার ফিরে আসছি আমি।তুমি হাঁটতে থাকো।

–মেয়েটা হুট করেই আবার কোথায় উধাও হয়ে গেলো!
কিন্তু তিন সেকেন্ড যেতে না যেতেই সে আবার ফিরে এসেছে।তার এমন আচরণ দেখে তাঁকে জিগ্যেস করলাম।আচ্ছা কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি আবার?

–দেখো আমি দিনের বেলায় তিন সেকেন্ড খালি তোমার সামনে আসতে পারবো।তারপর তিন সেকেন্ডে আবার পরী-পালকে চলে যেতে হবে।এমন করে যতো বার ইচ্ছে আমি তোমার সামনে আসতে পারবো।

–আচ্ছা আপনি আজকে সেই আমগাছটার নিচে কি করছিলেন?মেয়েটাকে এই প্রশ্ন করতেই সে আবার উধাও।বুঝে গেলাম যে তিন সেকেন্ড হয়ে গিয়েছে।আবারো তিন সেকেন্ড যেতে না যেতেই সে আবার ফিরে আসলো।সে ফিরে এসেই আমাকে উত্তর দিলো…

–তোমাকে সেই ছেলে অপমান করেছে।তাই প্রতিশোধ নিয়েছি তার উপরে।

–কিহহহ….

–হুম…

–তার মানে ক্লাসেও আমার অলৌকিক ঘটনা টা আপনার জন্য ঘটেছে?

–এই তো বুদ্ধিমান ছেলে।হুম আমিই তোমায় সাহায্য করেছি ক্লাসে।আর এই সাহায্য টা সব সময় এই করে যাবো।তবে সেটা তিন সেকেন্ডের মধ্যেই।কারন জমিনে দিনের বেলায় তিন সেকেন্ড বেশি সময় থাকলে আমি জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাবো।তাছাড়া আমার পরী-পালকের লোকেরাও জেনে যাবে,যে আমি পরী-পালক থেকে জমিনে নেমে এসেছি।তাই দিনের বেলায় জমিনে তিন সেকেন্ড থেকে তার মধ্যেই পরী-পালকে আবার ফিরে যেতে হবে।তারপর পরী-পালকে তিন সেকেন্ড অতিবাহিত হলে আমি আবার চাইলে জমিনে আসতে পারবো।

–ওহহ আচ্ছা…
কিন্তু আপনি যে এখন আসলেন,আপনার আলোকরশ্মি যে দেখতে পেলাম না?

–সে তুমি দিনের বেলায় বেশি একটা দেখতে পাবে না।কারন আমরা রাতেই জমিনে নেমে আসি বেশিরভাগ সময়।কারন তখন জমিনে নেমে শান্তি।আর তাছাড়া তিন সেকেন্ড জমিনে থেকে বেশি কিছু একটা করা সম্ভব হয় না।তাই দিনের বেলায় জমিনে আসলে তিন সেকেন্ড থাকি।আর রাতে আসলে অনেকটা সময় নিয়ে থাকি।কিন্তু তার জন্য আমাদেরকে একটা নহরের পানি পান করতে হয়।যেই পানিতে পরী-পালকের জাদুগর বা অলৌকিক ক্ষমতার পন্ডিত বা মাস্টাররা স্পেল পড়ে রাখে।মানে হলো মন্ত্র পড়ে সেই নহরটাকে জাদুগরি শুরা বানিয়ে দেয়।যেটা পান করলেই পরীরা এসে জমিনে অনেকটা সময় থাকতে পারে।শুরাটা পান করে কোনো পরী যখন জমিনে নেমে এসে সময় কাটিয়ে পরে আবার ফিরে যায়,তখনি আলোকরশ্মির আলোকপাত হয়।

–ওহ তার মানে কোনো পরী শুরা পান করে অনেক সময়ের জন্য জমিনে এসে ঘুরে গেলে তখন আলোকরশ্মি হয়।

–হুম….

–আচ্ছা সব কিছুই বুঝলাম।কিন্তু আপনারা জমিনে আসেন কেন?আর আপনারা জমিনে নেমে আসলে কেউ কিছু বলে না?

–আপনারা বলতে কেউ জমিনে এসে সময় কাটানোর মতন অনুমতি পায় না।জমিনে খালি পরী-পালকে থাকা রাজার বংশের মানুষরাই জমিনে নামতে পারে।আর আমিও রাজার বংশের লোক।তাই আমিও শুরা পান করে জমিনে নেমে এসেছি।

–ওহ আচ্ছা।
কিন্তু আপনি যে তাহলে পরশুদিন হুট করেই ভয় পেয়ে চলে গেলেন?আপনি না রাজ বংশের লোক?

–কারনটা হলো কোনো পরী মানুষের স্পর্শে গেলে পরী-পালকে ভুমিকম্প হয়।আর তাছাড়া রাজ বংশের মানুষরা পৃথিবীতে আসতে পারলেও অনেক কয়টা নিয়ম মেনে আসতে হয়।যার মধ্যে প্রথমটা নিয়মটা হলো,কেউ জমিনে আসতে চাইলে অন্যদের অগোচরে আসতে হবে।জমিনে নামার সময় কেউ যেনো তাঁকে দেখতে না পায় সেটার খেয়াল রেখে জমিনে নামতে হবে।তাই পরশুদিন চলে গিয়েছি।

–ওহহ..
কিন্তু কেউ যদি দেখে ফেলে নামার সময়,তখন কি তাঁকে সাজা দেওয়া হয়?

–সাজা দেওয়া হয়না,কিন্তু তাঁকে অনেক অপমান অপদস্ত হতে হয়।এবং তার থেকে শুরাটা নিয়ে নেওয়া হয়।যার ফলে সে আর কখনোই জমিনের বুকে নামতে পারবে না।

–এমন কঠোর নিয়ম কেন?

–কারন একের দেখায় বাকিরাও জমিনে নামতে চাইবে সেই জন্য।আর এই শুরার পানিটা খালি পরী-পালকের পন্ডিত রা রাজ দরবারের মানুষের জন্যই রানিয়েছে।
এই শুরার কথা পরী-পালকের রাজ দরবারের মানুষ এবং পরী-পালকের পন্ডিতরা ছাড়া অন্য কেউ এই জানে না।কারন তারা জানতে পারলে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রূপ করবে।কারন এটা একদম বেআইনী কাজ।
আমাদের পরী-পালকের আইন মোতাবেক কেউ জমিনে নামতে পারবে না।কিন্তু রাজ দরবারের মানুষরা বেআইনী ভাবে শুরা ব্যবহার করে জমিনে নামে ঘোরাফেরা করার জন্য।

–হুম সব কিছুই বুঝলাম।কিন্তু সত্যিকারত্বে আমার এখনো পুরোপুরি ভাবে বিশ্বাস হচ্ছে না যে আপনি পরী।এবং আপনি আমাকে যেই সমস্ত কাহিনী শুনিয়েছেন সেসব কিছুই সত্য।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সব কিছুই আমার মনের ভ্রম।

–আচ্ছা দাঁড়াও তোমার মনের সন্দেহ আমি দূর করছি।
তুমি চোখ বুঝে নিজের শরীরে একটা চিমটি কেটে কিছু একটা কল্পনা করো।কারন চিমটি কাটলে মনের ভ্রম দূর হয়ে যায়।তারপর সমস্ত কল্পনা শেষে চোখ খুলবে।

–ঠিক আছে।
মেয়েটার কথা মতন চোখ বন্ধ করে নিজের শরীরে চিমটি কেটে মনে মনে কল্পনা করলাম,যেই স্যার আজকে আমাকে পুরো ক্লাসের স্টুডেন্টের সামনে এটা সেটা বলেছে,আমি সেই স্যার এবং তার ঘরবাড়িকে উঠিয়ে এনে একটা গাছের উপরে ঝুলিয়ে রেখেছি।এমন এক অদ্ভুত কল্পনা করে চোখ খুলতেই দেখি আমার ঠিক সামনে বরাবর একটা বটগাছ আছে,সেই গাছের উপরে স্যারের পুরো বাড়িটা ঝুলছে!যেটা দেখে মাথা পুরোপুরি আউলে গেছে!চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি!তখনি সে আমাকে বললো…

–কি বিশ্বাস হয়েছে তো?

–নাহ আমার এখনো বিশ্বাস হয়নি।কারন আপনার এখনের কর্মকান্ডটা আমার কাছে আরো বড় ভ্রম মনে হচ্ছে।
.
আকাশের কথা শুনে পরীটা এবার চরম পরিমাণে রেগে যায়।যার কারনে সে রেগে গিয়ে আকাশকে বলে…

–তুই বেটা আসলেই মাথামোটা।এই আমি চললাম।রাতে আমি তোর বাসায় আসবো।তখন তোর ভ্রম পুরোপুরি দূর করে দিব।কারন এখন আমার চরম পরিমাণে রাগ উঠছে তোর উপরে।আমি যদি আর কিছু সময় জমিনে থাকি,তাহলে হয়তো তোকে আছড়ে তোর নাড়িভুড়ি সব বের করে ফেলবো।তাই যেতে হবে আমাকে।বায় রাতে দেখা হবে আবার।
.
তারপর পরীটা চলে যায়।আর আকাশও কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসে।তারপর বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে জমপেশ একটা ঘুম দেয়।কারন ঘুমটা তার দৈনিক রুটিনে মধ্যে একটা।বিকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে কিছুটা সময় বাহির থেকে ঘুরাঘুরি করে মাগরিবের সময় ঘরে আসে।তারপর হালকা পাতলা নাস্তা খেয়ে বই নিয়ে বসে পড়ার জন্য।এক বসায় পড়ার টেবিল থেকে রাত দশটায় উঠে।তারপর রাতের খাওয়া খেয়ে শুয়ে পড়ে।বিছানায় শুতেই তার অনামিকার কথা মনে পড়ে।এতোটা সময় এটা সেটা নিয়ে বিজি থাকায় অনামিকার কথা এতো একটা মনে পড়েনি।কিন্তু এখন খুব বেশি মনে পড়ছে অনামিকার কথা।যার কারনে তার চোখ থেকে আবারো টুপটুপ করে পানি পড়তে আরম্ভ করে।আসলে এটাই হয়তো সত্যি,যে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষের কথা যখন কারোর মনে পরে,তখন পৃথিবীর হাজারো সুখ আর তাঁকে সুখে রাখতে পারে না।আকাশের বেলায় ও এমনটা হয়েছে।
সে কান্না করতে করতে সারাটা বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে।তার কান্নার ইতি ঘটে ঘুমের মধ্যে দিয়ে।সে কান্না করতে করতে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
তখনি আনহা নহর দ্বারা তৈরী করা শুরা পান করে পরী-পালক থেকে নেমে আকাছের কাছে আসে।তারপর সে এসে দেখতে পায় আকাশ ঘুমিয়ে পড়েছে,আর তার চোখের কোনে ফোটা ফোটা পানি জমে আছে।যেটা দেখে আনহার বুঝতে বাকি নেই যে আকাশ কান্না করেছে।তাই সে কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা ছাড়াই আকাশের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে আরম্ভ করে।যার কারনে আকাশ ঘুম থেকে উঠে যায়।আকাশ ঘুম থেকে উঠে দেখে তার ঠোঁটের মধ্যে আনহা তার নিজের ঠোঁটের উষ্ণতা বিলাচ্ছে।যেটা দেখে সে চমকে উঠে!আর সজোড়ে এক ধাক্কা দিয়ে আনহাকে খাট থেকে নিচে ফেলে দেয়।যার কারনে আনহা ব্যথা পেয়ে ছোট বাচ্চার মতন নিচে বসে কান্না করতে আরম্ভ করে।আনহার এমন আচরণ দেখে আকাশ মনে মনে বলে উঠে…..

–সে যদি পরী হয় তাহলে ব্যথা পায় কি করে!
তাঁদের কাছে এতো’এতো অলৌকিক শক্তি,তারা নাকি বলে খাট থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথায় কান্না করে……

চলবে……

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।